ঈমানের মহান মর্যাদা

শরীফুল ইসলাম 10019 বার পঠিত

ভুমিকা :

ঈমান মুমিনের আসল সম্বল। ঈমানের আলোকরশ্মিতে মুমিন দুনিয়ার যাবতীয় চাকচিক্য, সৌন্দর্য, মিথ্যা মায়া ও অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে নিজেকে রক্ষা করে। ঈমানের মর্যাদার বদৌলতে মুমিন প্রকৃত ঈমানের স্বাদ পেয়ে থাকে। আর ঈমানের সুমিষ্ট স্বাদ গ্রহণ করলে মুমিন সমস্ত কৃপ্রবৃত্তি হ’তে নিজেকে রক্ষা করতে সমর্থ হয়। যার দরুণ ঈমানের জোশে মুমিন ইহজগত ও পরজগতে অপার মর্যাদার অধিকারী হয় এবং সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে সক্ষম হয়।

ঈমানের মর্যাদা ও ফযীলত :

ঈমান নামের অমীয় সুধা মুমিনগণ লাভ করে যার দরুণ তারা ঈমানের মহান মর্যাদা ও ফযীলত পেয়ে থাক। ঈমানের সোহাগমাখা ছোঁয়ায় মুমিন জীবন ফুলে-ফলে সুশোভিত হয় এবং এর ফলাফল মুমিন ইহজগতে প্রতিটি পদক্ষেপে অাঁচ করতে পারে। নিম্নে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর আলোকে ঈমানের মর্যাদা ও ফযীলত বর্ণনা করা হ’ল।

আল্লাহর উপর ঈমান আনায়ন সর্বোত্তম আমল :

মহান আল্লাহর নিকট বান্দার সর্বোত্তম আমল হ’ল তার বক্ষমূলে ঈমানের বীজ বপণ করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ সম্পর্কে বলেন, أَفْضَلُ الأَعْمَالِ عِنْدَ اللَّهِ إِيمَانٌ لاَ شَكَّ فِيهِ ‘আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম আমল হ’ল ঈমান আনয়ন করা’।[1]

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سُئِلَ أَىُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ فَقَالَ إِيمَانٌ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ. قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ الْجِهَادُ فِى سَبِيلِ اللَّهِ. قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجٌّ مَبْرُورٌ আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করা। তাকে বলা হ’ল তারপর কি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করা। আবার তাকে বলা হ’ল তারপর কি? তিনি বললেন, কবুল হজ্জ’।[2]

অত্র হাদীছের মাধ্যমে ইমাম বুখারী (রহঃ) প্রমাণ পেশ করেছেন যে, বান্দার সর্বোত্তম আমল হ’ল ঈমান। আর ঈমানটাই আমল। কেননা মানুষের অন্তরের বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়িত হয় থাকে। তাইতো রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কোন আমল সর্বোত্তম? উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করা। অতঃপর ধারাবাহিকভাবে জিহাদ ও হজ্জের কথা উল্লেখ করলেন। সুতরাং জিহাদ ও হজ্জ আমল দু’টি সংযুক্ত রয়েছে ঈমানের (বিশ্বাসের) সাথে। এ কারণেই আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীছ ইমাম বুখারী (রঃ) ছহীহ বুখারীতে পরিচ্ছেদ চয়ন করেছেন, إِنَّ الإِيمَانَ هُوَ الْعَمَلُ ‘নিশ্চয় ঈমানটাই আমল’।

ঈমানের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ধন্য করেছেন :

বান্দাকে আল্লাহ প্রদত্ত যত নে’মত প্রদান করা হয়েছে তার মধ্যে সর্বোত্তম দান হ’ল ঈমান। বান্দার উপর আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতরণের যোগসূত্র হ’ল ঈমান। ঈমানের মাধ্যমেই আল্লাহ বান্দার উপর দয়াপরবশ হয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, يَمُنُّونَ عَلَيْكَ أَنْ أَسْلَمُوا قُلْ لَا تَمُنُّوا عَلَيَّ إِسْلَامَكُمْ بَلِ اللَّهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ أَنْ هَدَاكُمْ لِلْإِيمَانِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ‘(তারা মনে করে) তারা ইসলাম গ্রহণ করে তোমাকে ধন্য করেছে। তুমি বল, তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমাকে ধন্য করেছ মনে কর না। বরং আল্লাহই তোমাদেরকে ঈমানের দিকে পরিচালিত করে তোমাদেরকে ধন্য করেছেন, তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক’ (হুজুরাত  ৪৯/১৭)

অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় জগদ্বিখ্যাত মুফাসসির ইবনে কাছীর (রঃ) তার তাফসীরে বলেন, অর্থাৎ অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্ট করে বলেন যে, আরবগণ মনে করত যে, তারা এর মাধ্যমে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে উপকার করছে, তার স্বার্থে ইসলাম গ্রহণ করছে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের এই ভ্রান্ত ধারণাকে অবসান করে অবতরণ করেন, قُلْ لَا تَمُنُّوا عَلَيَّ إِسْلامَكُمْ। আর রাসূল (ছাঃ) হোনায়েনের যুদ্ধের দিন আনছার-মুহাজিরদেরকে সে কথা স্মরণ করে বলেছিলেন যে, হে আনছারগণ! আমি কি তোমাদেরকে ভ্রষ্টতার মধ্যে পাইনি? অতঃপর আমার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদেরকে হেদায়াত দান করেছেন। আর তোমরা ছিলে বিচ্ছিনণ আর আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে জুড়ে দিয়েছেন। আর তোমরা ছিলে দরিদ্র আমার মাধ্যমে তোমাদের অভাব মোচন করেছেন। এভাবে যখনই তিনি কোন কথা বলেছেন, তখন আনছাররা বলেছেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই আমাদের উপর অধিক ইহসানকারী’।[3] 

অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের নিকট ঈমানকে প্রিয়তর করে ভালবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং ঈমানের মাধ্যমে যাবতীয় কুফরী, ফাসেকী, অবাধ্যতাকে ঘৃণিত করে দেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُولَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ ‘কিন্তু আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের অন্তরসমূহে সুশোভিত করেছেন। আর তোমাদের নিকট কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে অপসন্দনীয় করে দিয়েছেন। তারাইতো সত্য পথপ্রাপ্ত’ (হুজুরাত ৪৯/৭)

মানুষ ঈমানের মাধ্যমেই আত্মার তৃপ্তি পেয়ে থাকে এবং অন্তরকে ঈমানের দ্বারাই সুসজ্জিত করে। এভাবেই বান্দা তার আত্মার মাঝে ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করে। যার কারণে মুমিন তার অন্তরে ঈমানের পরিতৃপ্তি লাভ করে এবং বাহ্যিকভাবে ইবাদতে মশগুল থাকে।

আমল কবুলের পূর্বশর্ত ঈমান :

আল্লাহ তা‘আলা নেক আমলের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টির পথ উন্মুক্ত করেছেন। আর ঈমানকে নেক আমল কবুলের পূর্বশর্ত হিসেবে মানদন্ড করেছেন। ঈমান ব্যতীত কোন নেক আমল করে পারলৌকিক জীবনে কোন সফলতা আসবে না। পরকালে সফলতার জন্য সর্বাগ্রে মযবুত ঈমান প্রয়োজন। ইহাই ঈমানের সর্ববৃহৎ মর্যাদা। মুমিনগণ ঈমানের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে উপকার লাভ করবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُورًا ‘আর যে ব্যক্তি আখেরাত কামনা করে এবং ছওয়াব লাভে দৃঢ় বিশ্বাসী অবস্থায় তার জন্য যথার্থ প্রচেষ্টা চালায়, তাদের প্রচেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে’ (বানী ইসরাঈল ১৭/১৯)। মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, فَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا كُفْرَانَ لِسَعْيِهِ وَإِنَّا لَهُ كَاتِبُونَ ‘অতএব যে ব্যক্তি বিশ্বাসী অবস্থায় সৎকর্ম করে, তার কোন কর্মই অস্বীকৃত হবে না। আর আমরা তা লিপিবদ্ধ করে থাকি’ (আম্বিয়া ২১/৯৪)। এ আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা ঈমানকে পরকালীন মহান সফলতার জন্য শর্তযুক্ত করেছেন।

বান্দা ঈমানশূন্য হলে তার সমস্ত আমল বিনষ্ট হয় যায় :

আমলসমূহ সংরক্ষিত ও ফলপ্রসূ হয় ঈমানের মাধ্যমেই। বান্দার ঈমান হরণ করা হ’লে তার সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যায়, যার ফলে সে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ ব্যাপারে সবাই সমান। সাধারণ মানুষ তো বটেই এমনকি নবী-রাসূলগণও। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ ‘অথচ নিশ্চিতভাবে তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের (নবীদের) প্রতি (তাওহীদের) প্রত্যাদেশ করা হয়েছে। অতএব যদি তুমি শিরক কর, তাহ’লে তোমার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (যুমার ৩৯/৬৫)। মহান আল্লাহ তাঁর নবী-রাসূলদেরকে খাছ করে বলার পর আমভাবে বলেন,ذَلِكَ هُدَى اللَّهِ يَهْدِي بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ‘এটাই আল্লাহর হেদায়াত। তিনি স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে চান এ পথে পরিচালিত করেন। তবে যদি তারা শিরক করত, তাহ’লে তাদের সব কাজকর্ম নিস্ফল হয়ে যেত’ (আন‘আম ৬/৮৮)। অত্র আয়াতদ্বয় থেকে স্পষ্ট প্রমাণ হয় যে, শিরক সমস্ত আমলসমূহকে বিনষ্ট করে দেয়, ঈমান আমলসমূহকে রক্ষা করে এবং এর মাধ্যমেই মুমিন মহান সফলতার মাধ্যমে মর্যাদাবান হয়।

ঈমানের দৃষ্টান্ত এক উত্তম ফলবান বৃক্ষের ন্যায় :

মহান আল্লাহ ঈমানের পবিত্র বাণীকে উপমা হিসেবে পেশ করছেন এক ফলবান বৃক্ষের সাথে। মহান আল্লাহ বলেন,

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ - تُؤْتِي أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ-

‘তুমি দেখ না আল্লাহ কিভাবে উপমা বর্ণনা করেন? পবিত্র বাক্য হল পবিত্র বৃক্ষের মত। যার মূল সুদৃঢ় ও শাখা আকাশে উত্থিত। যা সর্বদা ফলদান করে তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। আর আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত সমূহ বর্ণনা করেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে’ (ইবরাহীম ১৪/২৪-২৫)। আল্লাহ তা‘আলা ঈমানকে বৃক্ষের সাথে উপমা হিসেবে পেশ করছেন, যে বৃক্ষ উত্তম বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ফলপ্রসূ। যার শিকড় (আমল) স্থায়িত্বপূর্ণ এবং ডালপালা ছড়িয়ে আছে মানব কল্যাণে। মুমিন হবে অপরের হিতাকাংক্ষী। একজন ঈমানদার সর্বদা অপর মুমিনের জন্য হবে সহায়ক। সকল মুমিন একটি দেহের মত।

ঈমানদারগণ সৃষ্টির সেরা :

সমস্ত সৃষ্টির মাঝে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারগণকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তাদের জন্য জান্নাতে মর্যাদার স্থান নির্বাচন করেছেন। বান্দার মাঝে ঈমানদারগণের মর্যাদাই উর্ধ্বে। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করে, তারাই হ’ল সৃষ্টির সেরা’ (বাইয়েনাহ ৯৮/৭)। তাদের শেষ শুভ পরিণাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, زَاؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهُ  ‘তাদের জন্য প্রতিদান রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকটে চিরস্থায়ী বসবাসের বাগিচাসমূহ; যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীসমূহ। যেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর উপরে সন্তুষ্ট। এটা তার জন্য যে তার পালনকর্তাকে ভয় করে’ (বাইয়েনাহ ৯৮/৮)। তিনি আরো বলেন, وَأُدْخِلَ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ  خَالِدِينَ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ تَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ ‘আর যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। সেখানে তাদের সম্ভাষণ হবে ‘সালাম’ (ইবরাহীম /২৩)

ঈমানদার কখনও জাহান্নামে যাবে না : 

যে অন্তরে ঈমানের বীজ বোপিত হয়েছে সে অন্তর জাহান্নামের (স্থায়ী) বাসিন্দা হবে না। তার জন্য জাহান্নাম হারাম করা হয়েছে। সরিষা পরিমাণ ঈমান অন্তরে থাকলেও সে জাহান্নামের অধিকারী হবেনা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ. يَبْتَغِى بِذَلِكَ وَجْهَ اللَّهِ ‘যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই বলে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত ইলাহ নেই, মহান আল্লাহ তাঁর জন্য জাহান্নামকে হারাম করে দিয়েছেন’।[4] মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللَّهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ وَإِنْ تَكُ حَسَنَةً يُضَاعِفْهَا وَيُؤْتِ مِنْ لَدُنْهُ أَجْرًا عَظِيمًا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কণা পরিমাণ যুলুম করেন না। যদি কোন সৎকর্ম থাকে, তাহ’লে তিনি ওটা দ্বিগুণ করে দেন। আর আল্লাহ তাঁর তরফ থেকে মহা প্রতিদান দিয়ে থাকেন’ (নিসা ৪/৪০)। অপর হাদীছে বলা হয়েছে, يَدْخُلُ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، وَأَهْلُ النَّارِ النَّارَ، ثُمَّ يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى أَخْرِجُوا مَنْ كَانَ فِى قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ. ‘জান্নাতীরা জান্নাতে আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতঃপর মহান আল্লাহ বলবেন, যার অন্তরে সরিষা পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনো’।[5]

সুতরাং বান্দা তার আমলের কমতির কারণে সাময়িক জাহান্নামী হলেও তার বক্ষে সুপ্ত ঈমানী দৃঢ়চিত্ততা থাকার কারণে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু কাফের, মুশরিক যাদের অন্তরে ঈমানের ছোঁয়া নেই তারা কস্মিনকালেও জান্নাতে প্রবেশের আশা করতে পারে না। কেননা তাদের জন্য জান্নাতকে হারাম করা হয়েছে।

শয়তান ঈমানদারদেরকে করায়ত্ব করতে পারে না :

শয়তানের ফাঁদে মুমিন কখনই আবদ্ধ হয় না। যদিও শয়তান আদম সন্তানের রগে রগে বিচরণ করে কিন্তু ঈমানদার তার ঈমানের শক্তিতে সমস্ত শয়তানী কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করে। একমাত্র ঈমানই তাকে টিকিয়ে রাখে শয়তানের কুপ্রবৃত্তি মোকাবেলায়। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ - إِنَّمَا سُلْطَانُهُ عَلَى الَّذِينَ يَتَوَلَّوْنَهُ وَالَّذِينَ هُمْ بِهِ مُشْرِكُونَ 

তার (শয়তানের) কোন আধিপত্য চলে না তাদের উপর, যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে। তার আধিপত্য তো কেবল তাদের উপরেই চলে, যারা তাকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে এবং যারা তার কারণে মুশরিক হয়েছে (নাহল ১৬/৯৯-১০০)। অন্যত্র বলা হয়েছে, إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ وَكَفَى بِرَبِّكَ وَكِيلًا  ‘নিশ্চয়ই আমার (অনুগত) বান্দাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই। আর তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৬৫)

সকল মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত কেবল ঈমানদারগণ ব্যতীত :

পৃথিবীর সকল মানুষ ক্ষতির মধ্যে হাবুডুবু খায় একমাত্র ঈমানদার ব্যতীত। এটা হয় একমাত্র শূন্যতার কারণেই। কেননা ঈমানই একমাত্র শ্রেষ্ঠ সম্বল যা তাকে সমস্ত ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। ঈমান হ’ল মুমিনের রক্ষাকবয। আর ঈমানের মর্যাদা তো এটাই। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ- إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْ ‘নিশ্চয়ই সকল মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তারা ব্যতীত যারা (জেনে-বুঝে) ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম সম্পাদন করেছে এবং পরস্পরকে ‘হক’-এর উপদেশ দিয়েছে ও পরস্পরকে ধৈর্য্যের উপদেশ দিয়েছে’ (আসর ১০৩/২-৩)

আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারগণ উত্তম প্রতিদান দিবেন :

মহান আল্লাহ ঈমানের মজবুত রশিকে আকড়ে ধরার জন্য মুমিনদেরকে উত্তম ও সম্মানজনক পুরস্কার ভূষিত করবেন। যার সর্বশেষ ধাপ হ’ল জান্নাতের অফুরন্ত নে‘মত লাভ। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, وَسَوْفَ يُؤْتِ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ أَجْرًا عَظِيمًا ‘সত্বর আল্লাহ মুমিনদের মহা পুরস্কার দান করবেন’ (নিসা ৪/১৪৬)। মহান আল্লাহ বলেন, وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ بِأَنَّ لَهُمْ مِنَ اللَّهِ فَضْلًا كَبِيرًا ‘তুমি মুমিনদের সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে মহা অনুগ্রহ’ (আহযাব ৩৩/৪৭)। পরিশেষে আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবো যে মহান আল্লাহ যেন আমাদেরকে ঈমানের মাধ্যমে প্রকৃত মুমিনদের কাতারে শামিল হওয়ার তাওফীক দান করেন। যার ঘোষণা হয়েছে এভাবে وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ غَيْرَ بَعِيدٍ  ‘আর জান্নাতকে মুত্তাকীদের দূরে না রেখে কাছে আনা হবে’ (ক্বাফ ৫০/৩১)।

[লেখক : ৪র্থ বর্ষ, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া]


[1]. আহমাদ হা/৭৫০২ ।

[2]. বুখারী হা/২৬।

[3]. তাফসীর ইবনু কাছীর ৭/৩৯০ পৃঃ।

[4]. বুখারী হা/৪২৫; মুসলিম হা/১৫২৮।

[5]. বুখারী হা/২২, ৪৫৮১।



বিষয়সমূহ: বিশ্বাস
আরও