কৃপণতা
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 862 বার পঠিত
আল-কুরআনুল কারীম :
1- وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا-
(১) ‘আর তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছ না? অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা ফরিয়াদ করে বলছে, হে আমাদের প্রতিপালক! এই অত্যাচারী জনপদ থেকে আমাদের বের করে নাও এবং তোমার পক্ষ হ’তে আমাদের জন্য অভিভাবক নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ হ’তে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও’ (নিসা ৪/৭৫)।
2- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا - وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ عُدْوَانًا وَظُلْمًا فَسَوْفَ نُصْلِيهِ نَارًا وَكَانَ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرًا-
(২) ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না, তোমাদের পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা ব্যতীত। আর তোমরা একে অপরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল। যে কেউ সীমালংঘন ও যুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে শীঘ্রই আমরা জাহান্নামে প্রবেশ করাবো। আর সেটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ’(নিসা ৪/২৯-৩০)।
3- إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِين، إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَظْلِمُونَ النَّاسَ وَيَبْغُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ-
(৩) ‘নিশ্চয় আল্লাহ যালিমদের পসন্দ করেন না। কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে যারা মানুষের উপর যুলুম করে এবং যমীনে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (শূরা ৪২/৪০+৪২)।
4- وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُونَ-
(৪) ‘যারা যুলুম করে তোমরা তাদের দিকে ঝুঁকে পড় না। পড়লে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে। এমতাবস্থায় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না এবং তোমাদের সাহায্য করা হবে না’ (হূদ ১১/১১৩)।
5- فَدَعَا رَبَّهُ أَنِّي مَغْلُوبٌ فَانْتَصِرْ- وَيَنْصُرَكَ اللَّهُ نَصْرًا عَزِيزًا-أَلَا لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ-
(৫) ‘অতঃপর সে তার রবকে আহবান করল যে, নিশ্চয়ই আমি পরাজিত, অতএব তুমিই প্রতিশোধ গ্রহণ কর। তোমাকে দাপুটে বিজয় দান করে। মনে রেখ, যালেমদের উপরেই রয়েছে আল্লাহর অভিসম্পাৎ’ (ক্বমার ৫৪/১০; ফাতহ ৪৮/৩; হূদ১১/১৮)।
6- فَالْيَوْمَ لَا يَمْلِكُ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ نَفْعًا وَلَا ضَرًّا وَنَقُولُ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا ذُوقُوا عَذَابَ النَّارِ الَّتِي كُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُونَ-
(৬) ‘ফলে আজ তোমাদের একে অপরের কোন উপকার কিংবা অপকার করার ক্ষমতা কেউ রাখবে না। আর আমি যালিমদের উদ্দেশ্যে বলব, ‘তোমরা আগুনের আযাব আস্বাদন কর যা তোমরা অস্বীকার করতে (সাবা ৩৪/৪২)।
হাদীছে নববী :
7- عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ اتَّقُوا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ِ-
(৭) জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা যুলুম থেকে বেঁচে থাক। কেননা যুলুম ক্বিয়ামতের দিন ঘন অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে’(মুসলিম হা/৬৭৪১; মিশকাত হা/১৮৬৫)।
8- عَنْ أَنَسٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا- قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا نَنْصُرُهُ مَظْلُومًا فَكَيْفَ نَنْصُرُهُ ظَالِمًا قَالَ تَأْخُذُ فَوْقَ يَدَيْهِ-
(৮) আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে যালিম হোক অথবা মাযলূম। তিনি (আনাস) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মযলুমকে সাহায্য করব, তা তো বুঝলাম। কিন্তু যালিমকে কি করে সাহায্য করব? তিনি বললেন, তুমি তার হাত ধরে তাকে বিরত রাখবে’ (বুখারী হা/২৪৪৪; মিশকাত হা/৪৯৫৭)।
9- عَنْ أَبِى ذَرٍّ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فِيمَا رَوَى عَنِ اللَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَّهُ قَالَ يَا عِبَادِى إِنِّى حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِى وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلاَ تَظَالَمُوا-
(৯) ‘আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের জন্য যুলুমকে হারাম করেছি এবং তোমাদের মধ্যেও সেটিকে হারাম গণ্য করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম কর না’(মুসলিম হা/৬৭৩৭; মিশকাত হা/২৩২৬)।
١٠- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لاَ شَكَّ فِيهِنَّ دَعْوَةُ الْوَالِدِ وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ-
(১০) ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দো‘আ নিঃসন্দেহে কবূল হয় পিতা-মাতার দো‘আ (সন্তানের জন্য), মুসাফিরের দো‘আ এবং ময্লুম (নির্যাতিত) ব্যক্তির দো‘আ’ (আবু দাউদ হা/১৫৩৬ মিশকাত হা/২২৫০)।
١১- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهماأَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم بَعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ اتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهَا لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ-
(১১) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) মু‘আয (রাঃ)-কে ইয়ামেনে পাঠিয়ে তিনি বললেন, ‘তুমি মাযলূমের বদদো‘আ থেকে বেঁচে থাক। কেননা মায লূমের বদদো‘আ ও আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই’ (বুখারী হা/২৪৪৮; মিশকাত হা/২২২৯ )।
١2- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ.قَالُوا الْمُفْلِسُ فِينَا مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ وَلاَ مَتَاعَ. فَقَالَ إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِى يَأْتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَةٍ وَصِيَامٍ وَزَكَاةٍ وَيَأْتِى قَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا وَأَكَلَ مَالَ هَذَا وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِى النَّارِ-
(১২) ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা কি বলতে পার, দরিদ্র (দেউলিয়া) কে? তারা বললেন, আমাদের মধ্যে যার দিরহাম (টাকা কড়ি) ও আসবাপত্র (ধন-সম্পদ) নেই সেই তো দরিদ্র। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে সেই প্রকৃত অভাবগ্রস্ত, যে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন ছালাত, ছিয়াম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এই অবস্থায় আসবে যে, একে গালি দিয়েছে, একে অপবাদ দিয়েছে, এর সম্পদ ভোগ করেছে, একে হত্যা করেছে ও একে মেরেছে। এরপর একে তার নেক আমল থেকে দেওয়া হবে, একে নেক আমল থেকে দেওয়া হবে। এরপর তার কাছে (পাওনাদারের) প্রাপ্য তার নেক আমল থেকে পূরণ করা না গেলে ঋণের বিনিময়ে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’ (মুসলিম হা/ ৬৭৪৪ মিশকাত হা/৫১২৭) ।
মনীষীদের বক্তব্য :
১. ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) (৬৬১-৭২৮ হিঃ) বলেন, ‘যদি কাফের রাষ্ট্রে ন্যায়-ইনছাফ থাকে তবুও আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন। আর যদি মুসলিম রাষ্ট্র হয়, কিন্তু সেখানে ন্যায়-ইনছাফ না থাকে তবুও সেখানে আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হয় না’ (মাজমূ‘ ফাতওয়া ২৮/৬২-৬৩)।
২. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) (৬৯১-৭৫১ হিঃ) বলেন, ‘মানুষ মূলত যুলুম ও মূর্খতা দ্বারা সৃষ্ট এবং তা থেকে ক্ষান্ত নয়। আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে তিনি কল্যাণের জ্ঞান দেন এবং তিনি তাকে যুলুম ও মূর্খতা থেকে বের করে নিয়ে আসেন। আর যার মধ্যে কল্যাণের জ্ঞান থাকে না সে যুলম ও মূর্খতার মধ্যেই পড়ে থাকে। বস্ত্তত জ্ঞান ও ন্যায়বিচার সমস্ত কল্যাণের চাবিকাঠি অপরপক্ষে সমস্ত অকল্যাণের মূল হ’ল যুলম ও মূর্খতা’ (ইগাছাতুল লাহফান ২/১৩৬-১৩৭)।
৩. মাহমূদ ওররাক্ব (রহঃ) (মৃত-২৩০ হিঃ) বলেন, ‘যালেমকে থামাও, সাহায্য করো না। যালেমের যুলুমকে না বল। আল্লাহর নিকট কেউই মাযলূম নয়। আর আল্লাহ যালেমদের ব্যাপারে ঘুমন্ত সত্ত্বাও নন’ (আদাবুশ শারই‘য়্যাহ ১/১৮১)।
সারবস্ত্ত :
১. যালেমরা রাসূলের শাফা‘আত থেকে বঞ্চিত হবে।
২. যালেমরা আল্লাহর নিকট লাঞ্ছিত ও হেয় প্রতিপন্ন হবে।
৩. যালেমের যুলুম আল্লাহকে ত্রেুাধান্বিত করে এবং যালেমের নানাবিধ শাস্তির পরিধিকে প্রলম্বিত করে।
৪. মাযলূমের বদ দো‘আকে আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না।
৫. অন্যের প্রতি যুলুম যালেমকে সীমালংঘনকারী পাপী বানায়।
৬. যুলুম নিষ্ঠুর ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হৃদয়ের প্রমাণ।