জঙ্গীবাদ প্রতিকারের উপায়

কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী 9114 বার পঠিত

ভূমিকা : 

হাযারো সমস্যার ঘূর্ণাবর্তে নিপতিত আধুনিক বিশ্বের অন্যতম সমস্যা হ’ল জঙ্গীবাদ। যা সংক্রামক ব্যাধির ন্যায় অতি অল্প সময়ে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সমাজদেহের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এক শ্রেণীর আবেগপ্রবণ, অতিউৎসাহী, অপরিণামদর্শী, গোঁড়া ও চরমপন্থী মুসলিমের জিহাদের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে শান্তি, সম্প্রীতি, উদারতা ও পরমসহিষ্ণুতার ধর্ম  ইসলাম বিশ্ববাসীর নিকট সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদী ধর্ম হিসাবে চিহ্নিত ও চিত্রিত হচ্ছে। জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলাম কায়েমের মানসে এ ধরনের কার্যকলাপ করলেও কোথাও ইসলাম কায়েম হয়নি বরং ইসলাম ও মুসলিমদের সীমাহীন ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে লাভবান হচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষীরা। তারা জঙ্গীবাদের দোহাই দিয়ে বিভিন্ন দেশে মুসলিম নিধন করে চলেছে প্রতিনিয়ত এবং ধর্মপ্রাণ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ বাংলাদেশে আক্রমণের জন্য ওঁৎপেতে মোক্ষম সময়ের প্রতীক্ষায় আছে। গুলশান, শোলাকিয়াসহ বাংলাদেশে এযাবৎ যত জঙ্গী আক্রমণ হয়েছে সেগুলো এদেশীয় জঙ্গীগোষ্ঠী জামা‘আতুল মুজাহিদীন, আনছারুল্লাহ বাংলা টীম, আনছারুল ইসলাম ও হিযবুত তাহরীর করলেও মিডিয়াতে দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী ‘আই এস’। এর কারণ হ’ল বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী আছে একথা প্রমাণ করতে পারলেই বিদেশী পরাশক্তিদের বাংলাদেশে আক্রমণের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হবে। জঙ্গীবাদীদের দৃষ্টান্ত- প্রভুভক্ত ঐ বানরের ন্যায়,  ‘যে বানর তার ঘুমন্ত মনিবের নাকের ডগায় বসা ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী মাছিকে তাড়ানোর মানসে ছুরি দ্বারা সজোরে আঘাত করে। ছোট্ট মাছি আঘাতপ্রাপ্তির পূর্বেই উড়ে যায় এবং আঘাতে মনিবের করুণ মৃত্যু ঘটে’। অর্থাৎ জঙ্গীরা দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে করলেও যে প্রক্রিয়ায় তারা এটি করতে চেষ্টা করছে তা সঠিক নয়। বরং তা তাদের কপোল কল্পিত মতবাদ, খামখেয়ালী, প্রবৃত্তির তাড়না ও অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। দ্বীন কায়েমের সঠিক পথ ও পদ্ধতির সাথে তার দূরতম সম্পর্কও নেই। তাই তারা দ্বীন কায়েম করতে চাইলেও প্রকারান্তরে এদের জন্যই দ্বীন ধ্বংস হচ্ছে, আর সেটা জিহাদ না হয়ে হচ্ছে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ। আলোচ্য প্রবন্ধে জঙ্গীবাদ প্রতিকারের উপায় সমূহ আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

১. সঠিক আক্বীদা শিক্ষাদান :

মানুষের সকল কর্মকান্ডের মূলভিত্তি হ’ল তার আক্বীদা বিশ্বাস ও শিক্ষা। এগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষ তার ভাল-মন্দ যাবতীয় কর্মকান্ড সম্পাদান করে থাকে। ভুল আক্বীদা-বিশ্বাস ও শিক্ষার কারণে চরমপন্থী খারেজীগণ দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসবাংদ প্রাপ্ত ছাহাবী এবং মুসলিম জাহানের তিন খলীফা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ), ওছমান ইবনু আফফান (রাঃ), আলী (রাঃ) সহ অনেক ছাহাবীকে হত্য করেছিল।  সুতরাং আক্বীদা বিশ্বাসে বিভ্রান্তি থাকলে শান্ত, সুশৃঙ্খল দেশ ও জনপদ অশান্ত ও ফেতনা-ফাসাদে পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে এটাই স্বাভাবিক। আক্বীদায় বিভ্রান্তির  কারণে মুসলিম হয়েও আরেক মুসলিমকে হত্যা করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না। বরং ছওয়াবের কাজ মনে করে। আর আক্বীদা-বিশ্বাস সঠিক হ’লে কোন মুসলিম অন্য মুসলিমকে হত্যা তো দূরের কথা কোন প্রকার হুমকি-ধমকিও দিতে পারে না। তিনটি অপরাধ ব্যতীত কোন মুসলিম হত্যাযোগ্য হয় না। ১. ক্বিছাছ তথা হত্যার কারণে হত্যা ২. বিবাহিত  ব্যভিচারীকে রজম করা ৩. মুরতাদ তথা ইসলাম ত্যাগকারীকে হত্যা। তবে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের দায়িত্ব সরকারের। কোন সাধারণ মানুষের নয়।

অনুরূপভাবে কোন অমুসলিম যদি শান্তিপূর্ণভাবে মুসলমানদের পাশাপাশি আবস্থান করে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা যুদ্ধের ষড়যন্ত্র না করে এবং মুসলমানদেরকে তাদের বাড়ী-ঘর থেকে বের করে না দেয় তবে তাদের সাথেও যুদ্ধ করা যাবে না বা তাদেরকে হত্যা করা যাবে না। (মুমতাহিনা ৬০/৮)। উল্লেখিত সঠিক আক্বীদা শিক্ষা প্রদান ও প্রচার-প্রসারের ব্যবস্থা করলে জঙ্গীবাদ থেকে  অনেকটাই উত্তোরণ করা যাবে।

২. দ্বীন কায়েমের সঠিক পথ ও পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া :

আধুনিক বিশ্বে জঙ্গীবাদ উত্থানের অন্যতম কারণ হ’ল- দ্বীন কায়েমের সঠিক ও পথ পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা। জঙ্গীরা মনে করে ‘ইক্বামতে দ্বীন’ অর্থ রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম কায়েম করা। তাই তারা বৈধ-অবৈধভাবে যে কোনভাবে মসনদ দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। যদ্দরুন সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ নির্ভরযোগ্য সবগুলো তাফসীরে গ্রন্থে ইক্বামতে দ্বীন এর অর্থ করা হয়েছে ইক্বামতে তাওহীদ। জঙ্গীবাদের বিষবাষ্প থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে দ্বীন কায়েমের সঠিক পথ ও পদ্ধতি জানা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তাবনা নিম্নরূপ:

ক.  শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার :

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সঠিক আক্বীদা বিশ্বাস ও দ্বীন কায়েমের সঠিক পথ ও পদ্ধতি সম্পর্কে কোনই আলোচনা নেই। জিহাদ, ক্বিতাল ও জঙ্গীবাদের মাঝে যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান রয়েছে। এ ব্যাপারে জানার কোনই ব্যবস্থা নেই। বিধায় উঠতি বয়সের তরুণ-যুবকেরা বিভিন্ন প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছে। তারা জঙ্গীবাদকেই ইসলামী জিহাদ  মনে করছে। জিহাদ সম্পর্কে মাদরাসা সিলেবাসে যৎ সামান্য যে আলোচনা রয়েছে সে ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান ও ধারণা না থাকায় এদেশের বুদ্ধিজীবির লেবাস পরিহিত ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ ও নিরেট মূর্খরা জিহাদ সম্পর্কে বিষোদগার করে চলছে। তারা মনে করছে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় জিহাদ সম্পর্কে যে আলোচনা রয়েছে, সেখানে থেকেই জঙ্গীরা অনুপ্রাণিত হচ্ছে। মূলত এটা তাদের অজ্ঞতা ও দীনতা। যার বাস্তব প্রমাণ হ’ল- এ যাবৎ জঙ্গীবাদের সাথে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে হাতে গোনা ২/১জন ছাড়া কোন আলেম নেই। তাদের ৮০% হ’ল সাধারণ শিক্ষিত। বাকি ২০% মাদরাসায় লেখাপড়া করলেও কামিল বা দাওরা পাশ নয়। তারা অর্ধ শিক্ষিত বা শিক্ষিত মূর্খ। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, `A Little Learning is a Dangerous Things' ‘অল্প বিদ্যা ভয়ংকারী’। সুতরাং জঙ্গীবাদ প্রতিকারের সবচেয়ে বড় ও মোক্ষম হাতিয়ার হ’ল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, টেকনিক্যাল সহ সব শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। সেই সিলেবাসে সঠিক ইসলামী আক্বীদা, দ্বীন কায়েমের সঠিক পথ ও পদ্ধতি, জিহাদ, ক্বিতাল কখন কিভাবে কার সাথে করতে হয় এবং জিহাদ, ক্বিতাল ও সন্ত্রাসবাদ জঙ্গীবাদের মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে প্রামাণ্য দলীল ভিত্তিক আলোচনা থাকা। এ  ক্ষেত্রে সিলেবাস কমিটিতে এবং লেখক প্যানেলে উল্লেখিত বিষয়ে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ মুহাকিক্ব আলেমদেরকে অর্ন্তভুক্ত করা।

খ. মুহাক্বিক্ব আলেমদের বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার করা : 

আধুনিক বিশ্বে কোন বিষয় প্রচার ও প্রসারের অন্যতম মাধ্যম হ’ল ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়া। বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে ও সহজে কোন বিষয়কে প্রচার ও প্রসার করা যায়। তাই জঙ্গীবাদ প্রতিকারের স্বার্থে দেশবরেণ্য মুহাকিক্ব আলেমদের সমন্বয়ে প্রতিটি টিভি চ্যানেলে প্রতিদিন অন্তত এক ঘন্টা করে ইসলামী সঠিক আক্বীদা-বিশ্বাস দ্বীন কায়েমের সঠিক পথ ও পদ্ধতি জিহাদ, ক্বিতাল ও সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের মধ্যে প্রার্থক্য ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য ও তত্ত্ববহুল আলোচনা করা উচিত। আশা করা যায় এর মাধ্যমে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ অনেকটাই কমে আসবে ইনশাআল্লাহ। অথচ এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বরং ইসলাম সম্পর্কে ও ইসলাম বিদ্বেষীদের সমন্বয়ে টিভি চ্যানেলগুলোতে ‘টকশো’র আয়োজন করে। জঙ্গীবাদের উত্থানের কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে তাদের সঠিক জ্ঞান না থাকায় তারা তাদের স্বভাব সুলভভাবে জঙ্গীবাদের কারণ হিসাবে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ও আলেমগণকে দায়ী করে। তারা জঙ্গীবাদ থেকে নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য বেশী বেশী রবীন্দ্র সঙ্গীত চর্চা ও সংস্কৃতির নামে বেহায়াপনার প্রসার ঘটাতে পরামর্শ দেয়। এভাবে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ হবে না বরং আরোও সম্প্রসারিত হবে। জঙ্গীবাদীরা যেহেতু ইসলামের নামে জঙ্গীপনা করে সেহেতু সঠিক ইসলামী আক্বীদা-বিশ্বাস, দ্বীন ক্বায়েমের সঠিক পথ ও পদ্ধতি জিহাদ ও জঙ্গীবাদের মধ্যকার পার্থক্য ইত্যাদি প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমেই জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ সম্ভব। ডান্ডা মেরে হয়ত সাময়িকভাবে জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রন হবে। কিন্তু স্থায়ীভাবে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ করতে চাইলে আক্বীদা ও আমলে পরিবর্তন আনতে হবে। যা কেবল পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মাধ্যমে সম্ভব।

গ. আলেম-ওলামার দায়িত্ব ও কর্তব্য :

জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে আলেম-ওলামার দায়িত্ব, কর্তব্য ও ভূমিকা অপরিসীম। আলেম সমাজ প্রতি শুক্রবারের জুম‘আর খুৎবায় এবং ইসলামী জালসায় ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা  ও বুঝ প্রদানের মাধ্যমে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে বিশেষ অবদান রাখতে পারেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কতৃপক্ষ সম্প্রতি জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ কল্পে নির্ধারিত খুৎবা দেশের বিভিন্ন মসজিদে সরবরাহ করেছিল এবং সেই অনুযায়ী খুৎবা প্রদানের জন্য খতীবদেরকে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু দুঃখজনক হ’লেও সত্য যে সরবারহকৃত সে সমস্ত খুৎবা জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে যথোপযুক্ত দিকনির্দেশনা ছিল না এবং জঙ্গীদের দলীলের জবাব ছিল না। বরং জঙ্গীবাদ প্রতিরোধের দোহাই দিয়ে মাযহাবী আলেমগণ মীলাদ, কিয়াম, মীলাদুন্নবীসহ  তাদের উদ্ভট মতাদর্শ চাপিয়ে দিয়েছিল। এ যেন ধান বানতে বিয়ের গীত। সুতরাং সকল সংকীর্ণতা পরিহার করে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে  আলেম সমাজের যথাযথ ভূমিকা রাখা কর্তব্য।

ঘ. পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি :

পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ জঙ্গীবাদের যারা জড়িয়ে পড়েছে তারা কেউই ভুঁই ফেড়ে উঠেনি, তারা কোন না কোন পরিবারের ও সমাজের সদস্য। একজন মানুষকে সবচেয়ে নিকট থেকে দেখে ও জানে তার পরিবারের সদস্যগণ, অতঃপর সমাজবাসী। যদি পরিবারের কোন সদস্য এ পথে পা বাড়ায় তবে পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ কোনা কোন ভাবে টের পাবেই। কেননা সে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে, তার সাথে কে দেখা করতে আসছে ইত্যাদি পরিবারের সদস্যগণ বেশী জানে। কেউই জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়লে রাতারাতি তার আচার-ব্যবহার, চলাফেরা, কথাবার্তা ইত্যাদিতে পরিবর্তন আসবেই। আর যা সর্বপ্রথম চোখে পড়বে পরিবারে সদস্যদের। অতঃপর সমাজবাসীর তাই পরিবারের সদস্যদের উচিত অন্যান্য সদস্যদের প্রতি খেয়াল রাখা। পরিবারের কেউ জঙ্গীবাদের সাথে জড়িয়ে পড়ছে এমনটি বুঝতে পারলে পরিবারের অন্যান্য সকল সদস্যের উচিত তাকে সে ভ্রান্ত পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক  চেষ্টা করা। এতে সকলের জন্য মঙ্গল নিহিত আছে। নচেৎ সকলকেই সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হবে এটা সুনিশ্চিত। এমনও পরিবার আছে যাদের পুরো পারিবারই জঙ্গীবাদের সাথে সম্পৃক্ত এক্ষেত্রে সমাজের লোকদের উল্লেখিত দায়িত্ব পালন করা উচিত।

ঙ. বাড়ী ওয়ালাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য :

বর্তমানে বাড়িওয়ালাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য উল্লেখযোগ্য। প্রশিক্ষিত ও আত্মঘাতি জঙ্গীগণ বর্তমানে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছে। আর তাদের আত্মগোপনের জায়গা হ’ল ভাড়া বাড়ি। ছাত্র মেস বা বাসাভাড়া করে সংগোপনে তারা নাশকতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচেছ। এ যাবৎ যতগুলো জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মিলেছে তার সবগুলোই ভাড়াবাড়ি। বাড়ি ওয়ালাদের কেউ জেনে শুনেই তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে। আবার অনেকেই না জেনে বা জানার চেষ্টা না করেই বাড়িভাড়া দিয়েছে। এক্ষেত্রে বাড়িওয়ালাগণ যদি একটু সচেতন হয়ে বাড়ি ভাড়া দেয়ার পূর্বেই ভাড়াটিয়াদের পরিচয়, কমস্থল, সদস্য সংখ্যা, তাদের পরস্পরের সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক তথ্য জানার পর বাড়ি ভাড়া দিলে হয়ত এভাবে ভাড়া বাড়িতে জঙ্গী আস্তনা গড়ে উঠবে না। ভাড়াটিয়াদের গ্রামের বাড়ি গিয়ে সরেযমীনে তদন্ত করা হয়ত সম্ভব হবে না। তবে তাদের কর্মস্থল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশপাশেই হবে, তাই তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী তাদের কর্মস্থল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তথ্যের সত্যতা যাচাই করে বাড়ি ভাড়া দেয়া উচিত। কেউ এতে গাফলতি করলে বা জেনে শুনেই জঙ্গীদেরকে বাড়ি ভাড়া দিলে বাড়িওয়ালদের কেও আইনের আওতায় আনা উচিত। তবেই জঙ্গীবাদ অনেকাংশেই হ্রাস পাবে। ভাড়াটিয়াদের বাসায় সন্দেহজনক কোন কিছু চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো উচিত।

চ. সহপাঠীসহকর্মীকর্মকর্তাশিক্ষক প্রমুখের দায়িত্ব ও কর্তব্য :

জঙ্গীদের অনেকেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ততার বিষয়টি তার অনেক সহপাঠি বা শিক্ষক হয়ত জানেন। সুতরাং এক্ষেত্রেও দেশের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে জঙ্গীনির্মূলে তারা অবদান রাখতে পারেন। অনুরূপভাবে জঙ্গীদের অনেকে চাকুরীরত রয়েছে সহকর্মীগণ তাকে অনেক নিকট থেকে দেখেও জানে। জঙ্গীবাদে কেউ সম্পৃক্ত হ’লে তার চালচলন কথা-বার্তা, আচার-আচারণ মেজায ইত্যাদিতে পরিবর্তন আসে, যা কারো না কারো চোখে পড়া অস্বাভাবিক নয়। কারো চোখে এমন সন্দেহজনক কিছু পরিলক্ষিত হ’লে সহকর্মী বন্ধুটিকে ফিরে আসার জন্য বুঝানো উচিত। এতে ফিরে না আসলে দেশের স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনীকে অবহিত করা উচিত।

ছ. জঙ্গীদের সাথে মুক্ত আলোচনা :

আলোচনা পর্যালোচনা ও যুক্তিপূর্ব বিতর্কের মাধ্যমে পথভ্রান্তদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ-

 ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দর পন্থায়। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক ভালভাবেই জানেন কে তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনি ভালভাবেই জানেন কে সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে’ (নাহল১৬/১২৫)

আলী (রাঃ) তৎকালীন খারেজী চরমপন্থীদের ফিরিয়ে আনার জন্য মুফাসসিরকুল শিরোমণি আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)-কে প্রেরণ করেন । তিনি কুরআন ও হাদীছের প্রামাণ্য দলীলের মাধ্যমে তাদের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করে তাদের মধ্যকার চার হাযার লোককে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন।[1]  বর্তমান জঙ্গীবাদী চরমপন্থীদের সাথেও আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কেননা তারা যে প্রক্রিয়ায় ইসলাম কায়েম করতে চাচ্ছে তার স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল নেই।

জ. মুক্তমনা ব্লগার ও ইসলাম বিদ্বেষীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা :

সম্প্রতিকালে জঙ্গীবাদী মাথাচাড়া দিয়ে উঠার অন্যতম কারণ হ’ল বাক স্বাধীনতার নামে তথাকথিত ব্লগারদের ইসলাম বিদ্বেষী কার্যক্রম ও অশালীন উক্তি। তারা আল্লাহ তা‘আলা, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ইসলাম সম্পর্কে একের পর এক কুৎসিত, অশালীন কূটক্তি করার কারণে তাদেরকে সমুচিত শাস্তি   দেয়ার মানসে জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তাই সরকারের উচিত এ ধরনের নাস্তিক-ব্লগারদের লাগাম টেনে ধরা ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা। তাহ’লে জঙ্গীপনা অনেকটাই কমে যাবে।

ঝ. গোয়েন্দা তৎপরতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি :

গোয়েন্দা তৎপরতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জঙ্গীবাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বর্তমানে যেভাবে গোয়েন্দা নযরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে এমনটি যদি আগে থেকেই করা হ’ত তাহ’লে হয়ত হলিআর্টিজান, শোলাকিয়া হামলার মত মর্মান্তিক ঘটনার অবতারণা হ’ত না। জঙ্গীবাদী সর্বাধুানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনায়াসেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিধায় স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে তাহ’লে কি জঙ্গীরা গোয়েন্দা বাহিনীর চেয়েও প্রশিক্ষিত সর্বাধুনিক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ? যদি এটাই সত্য হয় তবে জঙ্গীবাদ প্রতিকার কঠিনই বটে। আর যদি সরকারী গোয়েন্দা বাহিনীকে তাদের চেয়েও প্রশিক্ষিত ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলা হয়, তাহ’লে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। অনেক সময় দেখা যায় গোয়েন্দাদের ভুল তথ্যের ভিত্তিতে নিরপরাধ ও নিরীহ মানুষকে গ্রেফতার ও অযথা হয়রানি করা হয় যা  মোটেই কাম্য নয়।

ঞ. জঙ্গীদের জীবিত গ্রেফতার :

ইদানীং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সংস্কৃতি হয়ে গেছে জঙ্গী আস্তানায় অভিযানে সকল জঙ্গীকে মেরে ফেলা হয়। কল্যাণপুর, মিরপুর, নারায়ণগঞ্জ, হাড়িনালপাতারটেক, কাঘমারী প্রভৃতি অভিযানে একই দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকগণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জবাবে তারা বলেন, জঙ্গী আস্তানায় অভিযান কালে জঙ্গী অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত থাকে বিধায় তাদেরকে জীবিত গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। এক্ষণে আমাদের জিজ্ঞাসা হ’ল জঙ্গী বিরোধী প্রতিটি অভিযানে অত্যাধুনিক স্নাইপার  রাইফেল ব্যবহার করে থাকেন। স্নাইপার রাইফেলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হ’ল এর সাহায্যে ঘরের দেয়ালের ভেতর অবস্থানরত লোককে সরাসরি দেখা যায় এবং গুলি দেয়াল ভেদ করে নির্ভুল নিশানায় আঘাত করে। ফলশ্রুতিতে ঘরের দেয়ালের ভেতর অবস্থানরত জঙ্গী বা সন্ত্রাসীদেরকে হত্যা করা সহজতর হয়। যেহেতু এ রাইফেলের সাহায্যে জঙ্গীদেরকে সরাসরি দেখা যায় সেহেতু সবাইকে না হ’লেও অন্তত দুই একজনকে উরুর নিচে বা হাতে আঘাত করে আহত অবস্থায় তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারলে তাদের মাধ্যমে হয়তো আরোও চাঞ্চল্যকর তথ্য বা জঙ্গী আস্তানার ঠিকানা পাওয়া যেত। বিশেষ করে তামীম চৌধুরী ও মেজর মুরাদ প্রমুখ শীর্ষস্থানীয় জঙ্গীদেরকে যদি জীবিত পাকড়াও করা যেত তাহ’লে হয়ত অর্থ-অস্ত্র যোগানদাতাসহ নেপথ্য নায়কদের পরিচয় পাওয়া যেত। আর এতে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ নয় জঙ্গীবাদ নির্মূল করা যেত।

ট. সাধারণ ক্ষমা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা :

জঙ্গীবাদেরকে ফিরিয়ে আনার অন্যতম একটি পন্থা হ’ল তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা এবং যারা সাড়া দেবে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। যেমন বাংলায় প্রবাদ আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। ইতিমধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জঙ্গীদের আত্মসমর্পণ ও আইনী সহায়তার ঘোষণা দেয়ার স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে বেশ কয়েকজন জঙ্গী আত্নসমর্পণ করেছেন। অভিজ্ঞ মহলের অভিমত হ’ল, যদি জঙ্গীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা ও কর্মহীনদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় তাহ’লে হয়ত অনেক জঙ্গী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। তবে তাদেরকে গোয়েন্দা নযরদারীতে রাখতে হবে, যাতে পুনরায় তারা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়তে না পারে। এ প্রক্রিয়ায় জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে শান্তিপূর্ণ ও অবিস্মরণীয় সাফল্য পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। আশা করি সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

ঠ. ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা :

জঙ্গীবাদ প্রতিকার, প্রতিরোধ নয় বরং একবারে শিকড় থেকে নির্মূলের একমাত্র পথ ও পন্থা হ’ল- দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। এতে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ নিহিত রয়েছে। বর্তমানে এদেশের কিছু কিছু আইন ইসলামী শরী‘আতের অনুকূলেই রয়েছে। যেমন- উত্তরাধিকার আইন, হত্যার বিনিময়ে হত্যা ইত্যাদি। তবে ‘নারী উন্নয়ন নীতিমালা’ ২০১১ উত্তরাধিকার আইনে কিছুটা ধূম্রহাল সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন ২৩ (৫) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সম্পদ, কর্মসংস্থান, বাজার ও ব্যবসায় নারীকে সমান সুযোগ ও অংশীদারিত্ব দেওয়া। ২৫ (২) ধারায় বলা হয়েছে, উপার্জন, উত্তারাধিকার, ঋণ, ভূমি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করা। উক্ত ধূম্রজাল  ও চাতুর্যপূর্ণ কথার প্যাচ পরিহার করে ২০১১ সালের পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেলে উত্তরাধিকার আইনে ইসলামী শরী‘আত পরিপন্থী কোন কিছু থাকবে না। হত্যার বিনিময়ে হত্যা করা হয় বটে, কিন্তু সে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় অত্যন্ত সংগোপনে। ইসলামী শরী‘আত মতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হয় খোলা ময়দানে যাতে মানুষ সে করুণ দৃশ্য অবলোকন করে ঐ ধরনের অপরাধ থেকে বিরত থাকে। আর এজন্যই আল্লাহ বলেছেন, وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ- ‘আর হে জ্ঞানীগণ! হত্যার বদলে হত্যার মধ্যে তোমাদের জীবন নিহিত রয়েছে। যাতে তোমরা সাবধান হ’তে পার’  (সূরা- বাক্বারাহ ২/ ১৭৯)

বাকী আইনগুলো ইসলামীকরণ করলেই ইসলামী শাসন ব্যবস্থা চালু হবে। যেমন, বিবাহিত ব্যাভিচারীর শাস্তি রজম তথা বুক পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা, মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়া।[2]  অবিবাহিত ব্যাভিচারীকে একশ’ বেত্রাঘাত করা (আন-নূর ২৪/২)। ব্যাভিচারীর অপবাদ দানকারীকে আশিটি বেত্রাঘাত করা (আন-নূর ২৪/৪) চোরের হাত কেটে দেয়া (মায়েদাহ ৫/৩৮)। হাতের বিনিময়ে হাত চোখের বিনিময়ে চোখ, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এভাবে অনুরূপ শাস্তি দেয়া (মায়েদাহ ৫/৪৫)। ইত্যাদি। সরকারের জন্য একেবারেই সহজসাধ্য কাজ। সংবিধান সংশোধন পূর্বক বাংলাদেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা অসম্ভব নয়।  শুধু প্রয়োজনে ঈমানী দৃঢ়তা, আল্লাহভীরুতা ও পরকালীন জবাবদিহিতার ভয়। এতে প্রয়োজন হবে না আলাদা কোন অফিস-আদালতও আলাদা কোন বাহিনী বরং যে যে অবস্থানে আছে, সে সেই অবস্থানেই থাকবে, পরিবর্তন হবে শুধু কিছু কিছু আইন। যে আইনের মাধ্যমে মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সকলের মাঝে নেমে আসবে জান্নাতি প্রশান্তি। যেখানে থাকবে না কোন বিরোধী দল। হরতাল অবরোধের নামে চলবে না মারামারি, খুনোখুনি, বিশৃঙ্খলা। বনু আদমের রক্তে রঞ্জিত হবে না রাজপথ। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর নির্বাচনের নামে চলবে না দলবাজি, মারামারি, অর্থ বাণিজ্য ও প্রহসন। সরকার বহাল তাবিয়তে থাকবে যতদিন তারা ইসলামী বিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনা ও শাসন করবে। ৯০% মুসলিম অধ্যুষিত এ দেশের হাতে  গোনা কিছু লোক ছাড়া অধিকাংশই ধর্মপাণ মুসলিম। সুতরাং ইসলামী শাসনব্যবস্থা চালু করলে সরকাররের প্রতি জনসর্মথনেরও কোন অভাব হবে না। দরিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দিতে হবে না। কেননা বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে বিত্তশালীদের যে টাকা অলস পড়ে  আছে। ইসলামী শরী‘আত অনুযায়ী তা ২.৫ অংশ হারে বাধ্যতামূলক ভাবে সরকার যাকাত আদায় করলে সে টাকা দিয়েই দারিদ্র বিমোচন ও বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি জনকল্যাণমূলক যাবতীয় কাজ করা সম্ভব । এতে সরকার ইহকালেও যেমন নিশ্চিন্তে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্টিত থাকতে পারবে, পরকালীন জীবনেও চিরকালীন শান্তি নিবাস জান্নাতের অফুরন্ত নি‘আমত লাভের গ্যারান্টি পাবে। আর দেশের সর্বত্র নেমে আসবে শান্তির ফল্গুধারা। হে আল্লাহ! তুমি সরকারকে হেদায়াত দান কর এবং বাংলাদেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা চালুর তাওফীক দান কর- আমীন!

কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী

লেখক : প্রধান মুহাদ্দিছ, বেলটিয়া কামিল মাদরাসা, জামালপুর।

[1]. ইমাম আব্দুল ক্বাহের ইবনু তাহের আল-বাগদাদী, আল-ফারাকু বায়নাল ফিরাক্ব (বৈরূত : দারুল ইফক্ব আল-জাদীদাহ, ৫ম প্রকাশ ১৪০২হিঃ/১৯৮২ ইং), পৃ. ৬১; আল-বিদায়াহওয়ান নিহায়াহ৭/২৯১-২৯২ পৃ.।

[2]. বুখারী হা/৬৮৭৮; মুসলিম হা/১৬৭৬; মিশকাত হা/৩৪৪৬।




বিষয়সমূহ: রাজনীতি
আরও