ইসলামের প্রথম সমাচার
আসাদ বিন আব্দুল আযীয
ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম 11018 বার পঠিত
১৯. নিজ বংশ পরিবর্তন করা :
বিনা কারণে নিজের বংশ পরিবর্তন করা বা গোপন করা অন্যায়। অর্থাৎ নিজের পিতামাতার পরিচয় গোপন করে অন্যকে পিতামাতা বলে পরিচয় দিলে জান্নাত থেকে মাহরূম হ’তে হবে। এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيْهِ، وَهْوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ أَبِيْهِ، فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ. ‘যে ব্যক্তি অন্যকে পিতা দাবী করে, অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম’।[1]
২০. জিহবার অপব্যবহার :
জিহবা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর কারণে দুনিয়াতে যেমন বিভিন্ন বিপর্যয় ও বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়, তেমনি পরকালীন জীবনে জাহান্নামে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল,
مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ، وَسُئِلَ عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ-
‘কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তিনি বলেন, তা হচ্ছে- আল্লাহভীতি ও উত্তম চরিত্র। আর জিজ্ঞেস করা হ’ল, মানুষকে কোন জিনিস সবচেয়ে বেশী জাহান্নামে প্রবেশ করাবে? তিনি বললেন, তা হচ্ছে- মুখ বা জিহবা ও অপরটি লজ্জাস্থান’।[2]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ يَضْمَنْ لِيْ مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ- ‘যে ব্যক্তি আমার কাছে (এই অঙ্গীকার করবে যে, সে) তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্ত্তর এবং তার দু’পায়ের মধ্যস্থিত বস্ত্তর যিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের যিম্মাদার হব’।[3]
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, উকবা বিন আমির (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম,يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا النَّجَاةُ قَالَ أَمْسِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلَى خَطِيْئَتِكَ- ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! নাজাতের উপায় কি? তিনি বললেন, ‘নিজের জিহবা আয়ত্তে রাখ, নিজের ঘরে পড়ে থাক এবং নিজের পাপের জন্য রোদন কর’।[4]
২১. অনর্থক কথা বলা :
বিনা প্রয়োজনে অধিক কথা বলা আল্লাহ পসন্দ করেন না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَيَكْرَهُ لَكُمْ قِيْلَ وَقَالَ وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ ‘আর তিনি তোমাদের জন্য অপসন্দ করেন অতিরিক্ত কথা বলা, বেশী বেশী প্রশ্ন করা ও সম্পদ বিনষ্ট করা’।[5] আর অনর্থক অধিক কথা বলা মানুষকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللهِ لاَ يُلْقِيْ لَهَا بَالاً يَرْفَعُهُ اللهُ بِهَا دَرَجَاتٍ وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ لَا يُلْقِيْ لَهَا بَالًا يَهْوِيْ بِهَا فِيْ جَهَنَّمَ، وَفِيْ رِوَايَةٍ لَهُمَا يَهْوِيْ بِهَا فِي النَّارِ أَبْعَدَ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ-
‘নিশ্চয়ই বান্দা কখনও এমন কথা বলে যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিদ্যমান। অথচ সে তার গুরুত্ব জানে না। আল্লাহ এর দ্বারা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। পক্ষান্তরে বান্দা এমন কথা বলে, যাতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি বিদ্যমান। অথচ সে তার অনিষ্ট সম্পর্কে অবগত নয়। আর এ কথাই তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। বুখারী ও মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, এই কথাই তাকে জাহান্নামের এত গভীরে পৌঁছে দেয়, যার পরিধি পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্ব পরিমাণ’।[6]
২২. গীবত করা :
গীবত বা পরনিন্দা ভ্রাতৃত্ব বিনষ্টের কারণ এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যম। এর জন্য পরকালীন জীবনে রয়েছে কঠিন শাস্তি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لَمَّا عُرِجَ بِيْ رَبِّيْ مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ أظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمِشُوْنَ وُجُوْهَهُمْ وَصُدُوْرَهُمْ فَقُلْتُ مَنْ هؤُلاَءِ يَا جِبْرِيْلُ؟ قَالَ هؤُلاَءِ الَّذِيْنَ يَأكُلُوْنَ لُحُوْمَ النَّاسِ وَيَقَعُوْنَ فِيْ أعْرَاضِهِمْ-
‘আমার পরওয়ারদেগার যখন আমাকে মি‘রাজে নিয়ে গেলেন, তখন আমি কতিপয় লোকের নিকট দিয়ে গমন করলাম, যাদের তামার নখ ছিল। তা দ্বারা তারা নিজেদের মুখমন্ডল ও বক্ষ অাঁচড়াচ্ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল! এরা কারা? তিনি বললেন, ঐ সকল লোক যারা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের ইয্যত-আব্রুর হানি করত’।[7] অর্থাৎ গীবত বা দোষ চর্চা। অপর একটি হাদীছে এসেছে, আবু বকরা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) একদা দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন,
إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِيْ كَبِيْرٍ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَيُعَذَّبُ فِي الْبَوْلِ وَأَمَّا الْآخَرُ فَيُعَذَّبُ فِي الْغَيْبَةِ-
‘নিশ্চয়ই এই দুই কবরের অধিবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আর তাদেরকে বড় কোন গোনাহের কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের একজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে পেশাবের কারণে। অপরজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে গীবত বা পরনিন্দা করার কারণে’।[8]
২৩. চোগলখুরী করা :
চোগলখুরী অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। যার কারণে ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব-কলহ লেগে থাকে। সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। এ নিন্দিত স্বভাব যার মাঝে পাওয়া যায়, সে জান্নাতে যেতে পারবে না। এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[9] অন্যত্র তিনি বলেন,تَجِدُوْنَ شَرَّ النَّاسِ ذَا الْوَجْهَيْنِ الَّذِيْ يَأْتِيْ هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ وَيَأْتِيْ هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ- ‘তোমরা ক্বিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক ঐ ব্যক্তিকে পাবে, যে দ্বিমুখী। সে এক মুখ নিয়ে এদের কাছে আসে এবং আরেক মুখ নিয়ে তাদের কাছে যায়’।[10] তিনি আরো বলেন,مَنْ كَانَ ذَا وَجْهَيْنِ فِي الدُّنْيَا كَانَ لَهُ لِسَانَانِ مِنْ نَّارٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে দ্বিমুখী, ক্বিয়ামতের দিন তার (মুখে) আগুনের দু’টি জিহবা হবে’।[11]
২৪. কর্কশভাষা ও বদমেজায :
নম্রতা-ভদ্রতা ও মিষ্টভাষা মুমিন চরিত্রের অন্যতম বিশেষণ। পক্ষান্তরে কঠোরতা, কর্কশ ভাষা ও বদমেজায নিন্দনীয় স্বভাব। যার কারণে মানুষকে জাহান্নামে যেতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ وَلاَ الْجَعْظَرِيُّ. ‘কঠোর ও রুক্ষ্ম স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[12] তিনি আরো বলেন,اَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِاَهْلِ الْجَنَّةِ الضُّعَفَاءُ الْمَظْلُوْمُوْنَ وَاَهْلُ النَّارِ كُلُّ شَدِيْدٍ جَعْظَرِىٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ. ‘আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতের অধিবাসীদের সংবাদ দিব না? যারা দুর্বল, অত্যাচারিত তারাই জান্নাতের অধিবাসী। আর জাহান্নামের অধিবাসী হচ্ছে প্রত্যেক যারা কঠোর, কর্কশ ভাষী ও অহংকারী’।[13]
২৫. টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা :
টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা অহংকারের নামান্তর। যার পরিণতি জাহান্নাম। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَا أَسْفَلَ مِنْ الْكَعْبَيْنِ مِنْ الْإِزَارِ فِي النَّارِ. ‘পায়ের টাখনুর নীচে কাপড় যতটুকু ঝুলে যাবে সেটুকু জাহান্নামে যাবে’।[14] অন্যত্র তিনি বলেন,بَيْنَمَا رَجُلٌ يَجُرُّ إِزَارَهُ مِنَ الْخُيَلاَءِ خُسِفَ بِهِ فَهُوَ يَتَجَلْجَلُ فِي الْأَرْضِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ- ‘কোন এক সময়ে এক ব্যক্তি অহংকার করে টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে কাপড় পরিধান করত। তাই তাকে যমীনে ধসিয়ে দেয়া হয়েছে। ক্বিয়ামত পর্যন্ত সে যমীনের মধ্যে ধসে যেতে থাকবে’।[15]
২৬. পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা :
স্বর্ণের জিনিস বা স্বর্ণ ব্যবহার করা পুরুষের জন্য হারাম। এর পরিণতি জাহান্নাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ هَذَيْنِ حَرَامٌ عَلَى ذُكُوْرِ أُمَّتِيْ حِلٌّ لِإِنَاثِهِمْ ‘নিশ্চয়ই এ দু’টি (স্বর্ণালংকার ও রেশমী বস্ত্র) আমার উম্মতের পুরুষের জন্য হারাম এবং নারীদের জন্য হালাল’।[16] অপর একটি হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে,أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَأَى خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ فِىْ يَدِ رَجُلٍ فَنَزَعَهُ فَطَرَحَهُ وَقَالَ يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِّنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِىْ يَدِهِ. ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈক লোকের হাতে একটি স্বর্ণের আংটি দেখে সেটি খুলে ফেলে দিলেন এবং বললেন, ‘তোমাদের মাঝে কেউ কেউ আগুনের টুকরা জোগাড় করে তার হাতে রাখে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সে স্থান ত্যাগ করলে লোকটিকে বলা হ’ল, তোমার আংটিটি উঠিয়ে নাও। এটি দিয়ে উপকার হাছিল কর। সে বলল, না, আল্লাহর কসম! আমি কখনো ওটা নেব না। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেটা ফেলে দিয়েছেন’।[17]
২৭. খ্যাতির পোশাক পরিধান করা :
যশ-খ্যাতি ও প্রসিদ্ধির পোশাক পরিধান করা অহংকারের পরিচায়ক। যার পরিণাম জাহান্নাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ لَّبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ فِى الدُّنْيَا أَلْبَسَهُ اللهُ ثَوْبَ مَذَلَّةٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ أَلْهَبَ فِيْهِ نَارًا. ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে খ্যাতির পোশাক পরিধান করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরিধান করাবেন। অতঃপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে’।[18] অন্য বর্ণনায় এসেছে, مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ أَلْبَسَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَوْبَ مَذَلَّةٍ ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে খ্যাতির পোশাক পরিধান করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন’।[19]
২৮. স্বর্ণের পাত্রে পানাহার করা :
স্বর্ণ-রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করতে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন,نَهَانَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَّشْرَبَ فِيْ آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَأَنْ نَأْكُلَ فِيْهَا وَعَنْ لُبْسِ الْحَرِيْرِ وَالدِّيْبَاجِ وَأَنْ نَجْلِسَ عَلَيْهِ ‘রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে নিষেধ করেছেন স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করতে, রেশমের তৈরি বস্ত্র ব্যবহার করতে এবং তার উপর বসতে’।[20] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الَّذِى يَشْرَبُ فِىْ إِنَاءِ الْفِضَّةِ إِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِىْ بَطْنِهِ نَارَ جَهَنَّمَ. ‘যে ব্যক্তি রৌপ্যের পাত্রে পান করে সে জাহান্নামের অগ্নি তার উদরে প্রবেশ করায়’।[21]
২৯. কালো খিযাব ব্যবহার করা :
চুল পেকে সাদা হয়ে গেলে কালো ব্যতীত অন্য খেযাব ব্যবহার করা মুস্তাহাব। কিন্তু কালো খেযাব ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। এর জন্য জান্নাত থেকে বঞ্চিত হ’তে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,يَكُوْنُ قَوْمٌ يَخْضِبُوْنَ فِىْ آخِرِ الزَّمَانِ بِالسَّوَادِ كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ لاَ يَرِيْحُوْنَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ. ‘শেষ যামানায় এমন কিছু লোক হবে, যারা কবুতরের বুকের ন্যায় কালো খেযাব ব্যবহার করবে, তারা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না’।[22]
৩০. পুরুষের বেশ ধারণকারিণী নারী :
মহিলাদের জন্য পুরুষের বেশ ধারণ করা হারাম। এটা যেমন নির্লজ্জতা তেমনি এর পরিণাম জাহান্নাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন,ثَلاَثَةٌ لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ وَالدَّيُّوْثُ وَرَّجْلَةُ النِّسَاءِ. ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না- (১) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (২) বাড়ীতে বেহায়াপনার সুযোগ প্রদানকারী (৩) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী’।[23]
৩১. স্বামীর অকৃতজ্ঞ হওয়া :
মহিলাদের নিকটে স্বামী সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় ও আনুগত্য পাওয়ার হকদার। স্বামী অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্ত্রীর ভরণ-পোষণ, আশ্রয়-বাসস্থান, নিরাপত্তা ও ইয্যত-আব্রু রক্ষার সার্বিক ব্যবস্থা করে থাকে। এতদসত্ত্বেও স্বামীর প্রতি অনেক মহিলার অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়। যা অত্যন্ত অন্যায় ও পাপ। এর জন্য ঐ মহিলার পরিণতি হবে ভয়াবহ। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,لاَ يَنْظُرُ اللهُ إلَى امْرَأَةٍ، لاَ تَشْكُرُ لِزَوْجِهَا. ‘আল্লাহ ঐ মহিলার দিকে তাকাবেন না, যে তার স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না’।[24]
৩২. স্ত্রী কর্তৃক বিনা কারণে তালাক চাওয়া :
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এক সুদৃঢ় ও মযবূত বন্ধন, যা সহজে ছিন্ন হওয়ার নয়। এটা ছিন্ন হয় তালাকের মাধ্যমে। কোন মহিলা তার স্বামীর কাছে বিনা কারণে তালাক চাইতে পারে না। এরূপ করলে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلاَقًا مِنْ غَيْرِ بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْجَنَّةِ. ‘যে নারী বিনা কারণে স্বামীর নিকটে তালাক চায়, তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধিও হারাম’।[25]
৩৩. মহিলাদের পাতলা পোষাক পরা :
পর্দা পালনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلاَ يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ-
‘হে নবী! তুমি ঈমানদার নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান থাকে তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তাদের গ্রীবা ও গলদেশ চাদর দ্বারা ঢেকে রাখে’ (নূর ২৪/৩১)।
আল্লাহ্ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلأَبِيْبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلاَ يُؤْذَيْنَ-
‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বলে দাও যে, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না’ (আহযাব ৩৩/৫৯)। তিনি আরো বলেন,
وَإِذَا سَأَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوْهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِهِنَّ-
‘তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এটা তোমাদের এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ’ (আহযাব ৩৩/৫৩)। এসব আয়াতে মহিলাদেরকে এমন পোশাক পরিধান করতে বলা হয়েছে, যাতে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না পায়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُوْنَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيْلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوْسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيْحَهَا وَإِنَّ رِيْحَهَا لَيُوْجَدُ مِنْ مَسِيْرَةِ كَذَا وَكَذَا.
‘দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী রয়েছে যাদেরকে এখনও আমি দেখিনি। (প্রথম শ্রেণী) এমন সম্প্রদায় যাদের হাতে গরু পরিচালনা করা লাঠি থাকবে যা দ্বারা তারা মানুষকে প্রহার করবে। (দ্বিতীয় শ্রেণী) নগ্ন পোষাক পরিধানকারী নারী যারা পুরুষদেরকে নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের ন্যায় হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি তারা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ জান্নাতের সেই সুগন্ধি এত এতদূর হ’তে পাওয়া যায়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘এক মাসের পথের দূরত্ব হ’তে পাওয়া যায়’।[26]
৩৪. কৃপণতা করা :
কৃপণতা মানব চরিত্রের এক নিকৃষ্ট গুণ। এটা ইহকালীন জীবনে রক্তপাতে উদ্বুদ্ধ করে। তাই এত্থেকে বেঁচে থাকা যরূরী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,وَاتَّقُوْا الشُّحَّ فَإِنَّ الشُّحَّ أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَمَلَهُمْ عَلَى أَنْ سَفَكُوْا دِمَاءَهُمْ وَاسْتَحَلُّوْا مَحَارِمَهُمْ- ‘আর কৃপণতা হ’তে বেঁচে থাকবে। কেননা কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করেছে। কৃপণতা তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছে রক্তপাতের প্রতি এবং হারামকে হালাল করার প্রতি’।[27] তিনি আরো বলেন,إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوْقَ الْأُمَّهَاتِ. وَوَادَ الْبَنَاتِ وَمَنْعَ وَهَاتٍ. ‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর তোমাদের মাতাদের অবাধ্যতা, কন্যাদের জীবন্ত পুঁতে দেওয়া এবং কৃপণতা হারাম করেছেন’।[28]
৩৫. দান করে খোটা দেওয়া :
দান করা একটি মহৎ কাজ। যার বিনিময়ে অশেষ ছওয়াব অর্জিত হয়। কিন্তু দান করে খোটা দিলে ছওয়াব বাতিল হয়ে যায়। আর পরিণতিতে সে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنَّانٌ وَلَا عَاقٌّ وَلَا مُدْمِنُ خَمْرٍ- ‘দান করে খোঁটাদানকারী, মাতা-পিতার বিরুদ্ধাচরণকারী ও মদ্যপানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[29]
৩৬. দ্বীনী ইলম গোপন করা :
ইলম মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া আলেমের কর্তব্য। কিন্তু ইলম গোপন করা গোনাহের কাজ। এর পরিণাম জাহান্নাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ عَلِمَهُ ثُمَّ كَتَمَهُ أُلْجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِّنْ نَّارٍ. ‘যাকে কোন ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, যা সে জানে অতঃপর সে তা গোপন করল, ক্বিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেওয়া হবে’।[30]
৩৭. দুনিয়াবী সম্মান ও প্রতিপত্তি লাভের জন্য ইলম শিক্ষা করা :
দ্বীনী ইলম শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে পরকালীন মুক্তি লাভ। কিন্তু কেউ যদি তা পার্থিব সুযোগ-সুবিধা, সম্মান-মর্যাদা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি লাভের জন্য শিক্ষা করে তাহ’লে পরকালে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِيَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أوْ يُصَرِّفَ بِهِ وُجُوْهَ النَّاسِ إلَيْهِ أدْخَلَهُ اللهُ النَّارَ. ‘যে ব্যক্তি আলেমদের সাথে বিতর্কে জয় লাভের জন্য কিংবা অজ্ঞ-মূর্খদের সাথে বাক-বিতন্ডা করার জন্য অথবা সাধারণ মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য ইলম শিক্ষা করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’।[31] অন্যত্র এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,
لَوْ أنَّ أهْلَ الْعِلْمِ صَانُوْا الْعِلْمَ وَ وَضَعُوْهُ عِنْدَ أهْلِهِ لَسَادُوْا بِهِ أهْلَ زَمَانِهِمْ وَلَكِنَّهُمْ بَذَلُوْهُ لِأَهْلِ الدُّنِيَا لِيَنَالُوْا بِهِ مِنْ دُنْيَاهُمْ فَهَانُوْا عَلَيْهِمْ سَمِعْتُ نَبِيَّكُمْ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ مَنْ جَعَلَ الْهُمُوْمَ هَمًّا وَاحِدًا هَمَّ آخِرَتِهِ كَفَاهُ اللهُ هَمَّ دُنْيَاهُ وَمَنْ تَشَعَّبَتْ بِهِ الْهُمُوْمُ فِيْ أحْوَالِ الدُّنْيَا لَمْ يُبَالِ اللهُ فِيْ أيِّ أوْدِيَتِهَا هَلَكَ.
‘যদি আলেমগণ ইলমের হিফাযত করতেন এবং উপযুক্ত ব্যক্তিদের হাতে তা সমর্পণ করতেন, তবে নিশ্চয়ই তারা ইলমের বদৌলতে নিজেদের যামানার লোকদের নেতৃত্ব দিতেন। কিন্তু তারা তা দুনিয়াদারদেরকে বিলিয়ে দিয়েছেন, যাতে তারা ইলমের মাধ্যমে দুনিয়াদারদের নিকট হ’তে দুনিয়া উপার্জন করতে পারেন। ফলে তারা দুনিয়াদারদের কাছে লাঞ্ছিত হয়ে পড়েছেন। আমি তোমাদের নবীকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার সকল চিন্তাকে একই চিন্তায় পরিণত করবে আর তা হবে একমাত্র আখেরাতের চিন্তা, তাহ’লে আল্লাহ তার দুনিয়ার যাবতীয় চিন্তার জন্য যথেষ্ট হবেন। পক্ষান্তরে যাকে দুনিয়ার নানা উদ্দেশ্য, নানা চিন্তা ব্যতিব্যস্ত করে রাখে, তার জন্য আল্লাহ কোন চিন্তা বা পরোয়া করেন না। সে দুনিয়ার যে কোন স্থানে ধ্বংস হ’তে পারে’।[32]
৩৮. ধোঁকা দেওয়া ও প্রতারণা করা :
মানুষকে ধোঁকা দেওয়া এবং তাদের সাথে শঠতা ও প্রতারণা করা বড় ধরনের পাপ। যার কারণে পরকালে জাহান্নামে যেতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,الْخَدِيْعَةُ فِي النَّارِ ‘ধোঁকাবাজ জাহান্নামে যাবে’।[33] অন্য বর্ণনায় এসেছে, اَلْمَكَرُ وَالْخَدِيْعَةُ فِي النَّارِ ‘চালবাজী ও ধোঁকাবাজী জাহান্নামে নিয়ে যায়’।[34] অপর এক বর্ণনায় এসেছে,مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا وَالْمَكَرُ وَالْخِدَاعُ فِي النَّارِ ‘যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়। আর প্রতারণা ও ধোঁকা উভয়ই জাহান্নামী’।[35]
৩৯. জনগণকে ধোঁকা দানকারী শাসক :
শাসক তার অধীনস্ত জনগণের উপরে দায়িত্বশীল। তিনি জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করবেন। এটা তার প্রধান কর্তব্য। কিন্তু তিনি যদি জনগণের সাথে ধোঁকা ও প্রতারণামূলক কাজ করেন, তাহ’লে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ وَالٍ يَلِي رَعِيَّةً مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ فَيَمُوْتُ وَهُوَ غَاشٌّ لَهُمْ إِلاَّ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ. ‘কোন ব্যক্তি মুসলমানের দায়িত্ব গ্রহণের পর খিয়ানত করা অবস্থায় মারা গেলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন’।[36] অন্যত্র তিনি বলেন,مَا مِنْ عَبْدٍ اسْتَرْعَاهُ اللهُ رَعِيَّةً فَلَمْ يَحُطْهَا بِنَصِيْحَةٍ إِلاَّ لَمْ يَجِدْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ. ‘যে কোন বান্দার প্রতি আল্লাহ কোন দায়িত্ব অর্পণ করেন, অতঃপর সে সুষ্ঠুভাবে তা পালন করে না, সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না’।[37]
৪০. দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনাকে পসন্দ করা :
কারো সম্মানে দাঁড়ানো বা কাউকে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানানো ইসলামী রীতি নয়। ইসলামী শরী‘আতে এটা নিষিদ্ধ। আর এর পরিণাম জাহান্নাম। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ مِجْلَزٍ قَالَ خَرَجَ مُعَاوِيَةُ فَقَامَ عَبْدُ اللهِ بْنُ الزُّبَيْرِ وَابْنُ صَفْوَانَ حِيْنَ رَأَوْهُ. فَقَالَ اجْلِسَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَتَمَثَّلَ لَهُ الرِّجَالُ قِيَامًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.
আবু মিজলায হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু‘আবিয়া (রাঃ) বের হ’লে তাকে দেখে আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের ও ইবনে ছাফওয়ান উঠে দাঁড়ালেন। তখন তিনি (মু‘আবিয়া) বললেন, তোমরা দু’জনে বসে যাও, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট হয় যে, মানুষ তার জন্য মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকুক, তাহ’লে সে যেন নিজ বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নিল’।[38]
৪১. উত্তমরূপে ওযূ না করা :
ছালাত, তাওয়াফ প্রভৃতি ইবাদতের জন্য ওযূ শর্ত। ওযূ ঠিক না হ’লে এসব ইবাদত কবুল হয় না। আর উত্তম রূপে ওযূ না করলে পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
رَجَعْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ مَكَّةَ إِلَى الْمَدِيْنَةِ حَتَّى إِذَا كُنَّا بِمَاءٍ بِالطَّرِيْقِ تَعَجَّلَ قَوْمٌ عِنْدَ الْعَصْرِ فَتَوَضَّئُوْا وَهُمْ عِجَالٌ فَانْتَهَيْنَا إِلَيْهِمْ وَأَعْقَابُهُمْ تَلُوْحُ لَمْ يَمَسَّهَا الْمَاءُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَيْلٌ لِّلأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ أَسْبِغُوا الْوُضُوءَ.
‘এক সময় আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সঙ্গে মক্কা থেকে মদীনায় ফিরে আসছিলাম। পথিমধ্যে আমরা যখন এক জায়গায় পানির কাছে পৌঁছলাম, তখন কিছু সংখ্যক লোক আছরের ছালাতের সময় তাড়াহুড়া করল। এরা ওযূও করল দ্রুততার সাথে। আমরা যখন তাদের কাছে পৌঁছলাম, তখন তাদের পায়ের গোড়ালিসমূহ এমনভাবে প্রকাশ পাচ্ছে যে, তাতে পানি পৌঁছেনি। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ওযূ করার সময় পায়ের গোড়ালির যেসব স্থানে পানি পৌঁছেনি, সেগুলোর জন্য জাহান্নাম। সুতরাং তোমরা ভালভাবে ওযূ কর’।[39]
ওযূ না করে ছালাত আদায় করার শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
أُمِرَ بِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ أَنْ يُضْرَبَ فِيْ قَبْرِهِ مِائَةَ جَلْدَةٍ، فَلَمْ يَزَلْ يَسْأَلُ وَيَدْعُو حَتَّى صَارَتْ جَلْدَةً وَاحِدَةً، فَجُلِدَ جَلْدَةً وَاحِدَةً، فَامْتَلَأَ قَبْرُهُ عَلَيْهِ نَارًا، فَلَمَّا ارْتَفَعَ وَأَفَاقَ قَالَ: عَلَامَ جَلَدْتُمُونِيْ؟ قَالُوا: إِنَّكَ صَلَّيْتَ صَلَاةً وَاحِدَةً بِغَيْرِ طُهُوْرٍ، وَمَرَرْتَ عَلَى مَظْلُوْمٍ فَلَمْ تَنْصُرْهُ-
‘আল্লাহর জনৈক বান্দাকে কবরে একশ’ কশাঘাতের আদেশ দেওয়া হ’ল। তখন সে তা কমানোর জন্য বার বার আবেদন-নিবেদন করতে থাকল। শেষ পর্যন্ত এক কশাঘাত অবশিষ্ট থাকল। তাকে একটি মাত্র কশাঘাতই করা হ’ল। তাতেই তার কবর আগুনে ভরে গেল। তারপর যখন তার থেকে শাস্তি তুলে নেওয়া হ’ল এবং সে হুঁশ ফিরে পেল তখন সে বলল, তোমরা আমাকে কেন কশাঘাত করলে? তারা বলল, তুমি এক ওয়াক্ত ছালাত বিনা ওযূতে পড়েছিলে আর এক মযলূম বান্দার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলে কিন্তু তাকে তুমি সাহায্য করনি’।[40]
৪২. প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা :
প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা, মূর্তি, প্রতিকৃতি, ভাষ্কর্য ইত্যাদি তৈরী করা পাপকাজ। যার কারণে ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُوْنَ- ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ছবি-মূর্তি অংকনকারীর সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে’।[41] তিনি আরো বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ يَصْنَعُوْنَ هَذِهِ الصُّوَرَ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ. ‘নিশ্চয়ই যারা এসব ছবি-মূর্তি তৈরি করে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদের বলা হবে, তোমরা যেসব ছবি-মূর্তি তৈরি করেছ তাতে আত্মা দান কর’।[42]
অন্যত্র তিনি বলেন,مَنْ صَوَّرَ صُوْرَةً عُذِّبَ وَكُلِّفَ اَنْ يَنْفُخَ فِيْهَا وَلَيْسَ بِنَافِخِ. ‘যে ব্যক্তি মাত্র একটি ছবি-মূর্তিও তৈরি করবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে এবং তাতে আত্মা দান করতে বাধ্য করা হবে। কিন্তু তার পক্ষে কখনোই তা সম্ভব হবে না’।[43]
৪৩. জন্তু-জানোয়ারের উপরে যুলুম করা :
পোষা প্রাণীদের বন্দী রেখে কষ্ট দেওয়া এবং তাদের প্রতি দয়া না করার কারণে কবরে শাস্তি দেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,وَحَتَّى رَأَيْتُ فِيْهَا صَاحِبَةَ الْهِرَّةِ الَّتِيْ رَبَطَتْهَا فَلَمْ تُطْعِمْهَا وَلَمْ تَدَعْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الْأَرْضِ حَتَّى مَاتَتْ جُوْعًا- ‘আর সেখানে দেখলাম, বিড়ালের মালিক এক মহিলাকে, যে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। সে তাকে খেতেও দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নি যাতে সেটি যমীনের পোকা-মাকড় খেতে পারে। অবশেষে সেটি ক্ষুধায় মারা গেল’।[44]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَعُرِضَتْ عَلَيَّ النَّارُ فَرَأَيْتُ فِيْهَا امْرَأَةً مٍّنْ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ تُعَذَّبُ فِيْ هِرَّةٍ لَهَا رَبَطَتْهَا فَلَمْ تُطْعِمْهَا وَلَمْ تَدَعْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الْأَرْضِ- ‘আমার সম্মুখে জাহান্নাম পেশ করা হয়েছিল। সেখানে বনী ইসরাঈলের এক মহিলাকে দেখতে পেলাম। তাকে একটি বিড়ালের কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। সে বিড়ালটি বেঁধে রেখেছিল, তাকে খাদ্য দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে যমীনের পোকামাকড় খেতে পারে’।[45] তিনি আরো বলেন,
عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِى هِرَّةٍ حَبَسَتْهَا، حَتَّى مَاتَتْ جُوْعًا، فَدَخَلَتْ فِيْهَا النَّارَ قَالَ فَقَالَ وَاللهُ أَعْلَمُ لاَ أَنْتِ أَطْعَمْتِهَا وَلاَ سَقَيْتِهَا حِيْنَ حَبَسْتِيْهَا، وَلاَ أَنْتِ أَرْسَلْتِيْهَا فَأَكَلَتْ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ.
‘জনৈক মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে শাস্তি দেয়া হয়। সে বিড়ালটি বেঁধে রেখেছিল, অবশেষে বিড়ালটি ক্ষুধায় মারা যায়। এ কারণে মহিলা জাহান্নামে প্রবেশ করল। রাবী বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ ভাল জানেন, বাঁধা থাকাকালীন তুমি তাকে না খেতে দিয়েছিলে, না পান করতে দিয়েছিলে এবং না তুমি তাকে ছেড়ে দিয়েছিলে, তাহ’লে সে যমীনের পোকা-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত’।[46]
পরিশেষে বলা যায় যে, ঈমানের পরে ইসলামের অন্যান্য মৌলিক ইবাদত সমূহ পালন করতেই হবে। যা তার মুমিন হওয়ার পরিচায়ক। সেই সাথে উপরোক্ত কাজগুলি পরিহার করাও যরূরী। অন্যথা এসব করার কারণে বান্দাকে জাহান্নামে যেতে হবে। তাই উপরোক্ত কাজগুলি সহ সকল প্রকার গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা যরূরী। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন- আমীন!!
লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ; সহকারী সম্পাদক, মাসিক আত-তাহরীক।
[1]. বুখারী হা/৬৭৬৬; মিশকাত হা/৩৩১৪।
[2]. তিরমিযী হা/২০০৪, মিশকাত হা/৪৬২১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭৭।
[3]. বুখারী হা/৬৪৭৪; মিশকাত হা/৪৮১২।
[4]. আহমাদ, তিরমিযী হা/২৪০৬; মিশকাত হা/৪৮৩৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৮৮, সনদ হাসান।
[5]. মুসলিম হা/১৭১৫; ছহীহুল জামে‘ হা/১৮১৫।
[6]. বুখারী হা/৬৪৭৮; মুসলিম হা/২৯৮৮; মিশকাত হা/৪৮১৩ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়।
[7]. আবুদাউদ হা/৪৮৭৪; মিশকাত হা/৫০৪৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৩৩।
[8]. আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/৩১৫; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৫৪, সনদ হাসান ছহীহ।
[9]. বুখারী হা/৬০৫৬; মুসলিম হা/১০৫; মিশকাত হা/৪৮২৩।
[10]. বুখারী হা/৬০৫৮; মুসলিম ২৫২৬; মিশকাত হা/৪৮২২।
[11]. দারেমী, মিশকাত হা/৪৮৪৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৯২. সনদ হাসান।
[12]. আবুদাঊদ হা৪৮০১; মিশকাত হা/৫০৮০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭৪১।
[13]. সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৪৪; ছহীহুল জামে‘ হা/২৫৯৪।
[14]. বুখারী হা/৫৭৮৭; মিশকাত হা/৪৩১৪ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়।
[15]. বুখারী হা/৩৪৮৫; মিশকাত হা/৪৩১৩।
[16]. ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/২৯১২, হাদীছ ছহীহ।
[17]. মুসলিম হা/২০৯০; মিশকাত হা/৪৩৮৫।
[18]. ইবনু মাজাহ হা/৩৬০৭, সনদ হাসান।
[19]. ইবনু মাজাহ হা/৩৬০৬, মিশকাত হা/৪৩৪৬, সনদ হাসান।
[20]. বুখারী হা/৫৮৩৭; মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩২১।
[21]. বুখারী হা/৫৬৩৪; মুসলিম হা/২০৬৫।
[22]. আবু দাউদ হা/৪২১৪; নাসাঈ হা/৫০৭৫; মিশকাত হা/৪৪৫২।
[23]. নাসাঈ, ছহীহ তারগীব হা/২০৭০, সনদ হাসান ছহীহ।
[24]. ছহীহ আত-তারগীব হা/১৯৪৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৮৯।
[25]. তিরমিযী হা/১১৮৬-৮৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৩৩।
[26]. মুসলিম, মিশকত হা/৩৫২৪।
[27]. আহমাদ হা/৭৮৮১; মুসলিম, হা/২৫৭৮; মিশকাত হা/১৮৬৫।
[28]. বুখারী হা/৫৯৭৫; মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯১৫।
[29]. নাসাঈ হা৫৬৭২; মিশকাত হা/৩৬৫৩; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৭০।
[30]. আবুদাউদ হা/৩৬৫৮; ইবনু মাজাহ হা/২৬৪; মিশকাত হা/২২৩, সনদ ছহীহ।
[31]. তিরমিযী হা/২৬৫৪; ইবনু মাজাহ হা/২৫৩; মিশকাত হা/২২৫, হাদীছ ছহীহ।
[32]. ইবনু মাজাহ হা/২৫৭; মিশকাত হা/২৬৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৮৯, সনদ হাসান।
[33]. বুখারী ‘তরজমাতুল বাব’ ৬০।
[34]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৫৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭২৫, সনদ ছহীহ।
[35]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/১১০৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৫৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪০৮।
[36]. বুখারী হা/৭১৫১; মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৮৬।
[37]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৮৭।
[38]. তিরমিযী হা/২৭৫৫, মিশকাত হা/৪৬৯৯, সনদ ছহীহ।
[39]. বুখারী হা/১৬৫; মুসলিম হা/২৪১; মিশকাত হা/৩৯৮।
[40]. শারহু মুশকীলিল আছার হা/৩১৮৫, ২৬৯০; ছহীহ আত-তারগীব ওয়া তারহীব হা/২২৩৪; ছহীহাহ হা/২৭৭৪।
[41]. বুখারী হা/৫৯৫০; মুসলিম হা/২১০৯; মিশকাত হা/৪৪৯৭।
[42]. বুখারী হা/৫৯৫১।
[43]. বুখারী হা/২২২৫, ৫৯৬৩; মিশকাত হা/৪৪৯৯, ‘পোষাক’ অধ্যায়।
[44]. মুসলিম হা/(৯০৪) ১৫০৮।
[45]. মুসলিম হা/(৯০৪) ১৯৯৯।
[46]. বুখারী হা/২৩৬৫, ৩৪৮২; মুসলিম হা/২২৪২; মিশকাত হা/১৯০৩।