ইসলামী পাঠদানের পদ্ধতি (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

আব্দুল্লাহ 768 বার পঠিত

আক্বীদা শিক্ষাদানের পাঠপদ্ধতি :

আমাদের সন্তানদের অন্তরে তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ, ঈমান ও ছহীহ আক্বীদা (বীজ বপনের) শিক্ষার জন্য মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের অনুসৃত পাঠপদ্ধতি অনুসরণ আবশ্যক। যেমন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও যুক্তিনির্ভর দলীলসমূহ উপস্থাপন করা। এটাকে ওলামায়ে কেরাম প্রধানত তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। পারিপার্শ্বিকতা ও আল্লাহ প্রদত্ত অনুভূতির মতই  আল্লাহর ভয়, ভালবাসা ও তাঁর রহমতের আশাও আমাদের নাড়া দেয়।

আক্বলী দলীলের মাধ্যমে আক্বীদা শিক্ষা :

১. সৃষ্টির প্রমাণসমূহ : মহান রাববুল আলামীন বৃক্ষলতা, উদ্ভিদরাজি, মানব-দানব সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। এ সকল সৃষ্টিজগতকে আমরা অবলোকন করছি, এক সময় যার কোন অস্তিত্ব ছিল না। তাহ’লে কি এসব কিছু এমনিতেই সৃষ্টি হ’ল? কখনো না, এভাবে একাকী সৃষ্টি জগতের উদ্ভব হওয়া অসম্ভব। তাহ’লে কি পৃথিবী কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে? এটা অসম্ভব, বিবেক এতে কখনোই সাড়া দেয় না। এটাই প্রমাণ করে যে, এই সৃষ্টিজগতের একজন মহান সৃষ্টিকর্তা রয়েছে, যিনি পরিকল্পিত ভাবে এ ধরাকে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করেছেন। তাই একজন শিক্ষক হিসাবে আপনার উচিৎ হবে ছাত্রদের দৃষ্টিকে সেসব সৃষ্টিকর্মের গ্রীষ্ম ও বসন্তের ঋতু বৈচিত্যের যথার্থ প্রসঙ্গ উল্লেখ করা। যাতে করে প্রমাণ হয় এ গুলোরও একজন সৃষ্টিকর্তা আছে।

(২) হিকমাহ ও অনুগ্রহের প্রমাণসমূহ : আমরা রাত-দিন, সূর্য-চন্দ্রকে দেখি, তাদের প্রত্যেকের সময় ও উপকারীতা রয়েছে। কে তাদের এভাবে পরিপাটি করে সাজালেন? আর কেইবা এই বিশাল সৃষ্টিজগতকে এত সুন্দর করে সুশৃঙ্খলিত করেছেন? এখানে বৃষ্টির জন্য নির্ধারিত ঋতু রয়েছে, ফসল ফলনের জন্য নির্দিষ্ট ঋতু রয়েছে ও সমুদ্রের বিশাল উপকারীতা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নদী, জলজপ্রাণী, এসব কিছুই মানুষের বশে করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও চতুষ্পদ প্রাণী, বাতাস, মেঘমালা প্রভৃতি সৃষ্টিকে মানুষের বশে  করে দেয়া হয়েছে। এই বিশাল পৃথিবীর সকল সৃষ্টি আল্লাহর হিকমাহ ও মানুষ জাতির প্রতি তার বিশেষ ভালবাসা ও অনুগ্রহকে প্রমাণ করে। তাই আমাদের উচিৎ হবে, আমরা আক্বীদার দারস এ সকল প্রমাণের আলোকে উপস্থাপন করবো, যাতে বিবেক ও অন্তরসমূহ এ সকল কিছুর মাধ্যমে দয়াময় সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পায় এবং বিনয় ও ভয়ের সাথে তাঁর শরী‘আতের আদেশ-নিষেধ মেনে চলে। যেমন কুরআনের আয়াতসমূহ এ সকল সৃষ্টিজগতের বাহ্যিকতার উপর প্রমাণ বহন করে।

(৩) আল্লাহর কুদরতের প্রমাণসমূহ :

এই মহান সৃষ্টিজগতে মানুষের সাধ্যের বাইরে অনেক আকস্মিক ভীতিকর বিষয় রয়েছে। যেমন ভূমিকম্প, প্রবল ঝড়, বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমকানোর মত যা মহান শক্তিধর আল্লাহর মহা শক্তির প্রমাণ বহন করে। অতএব আমাদের শিক্ষকদের উচিত হবে, ছাত্রদের দৃষ্টিকে এ সকল বিষয়ের দিকে ফিরানো। আর তাদের সামনে ভয়ংকর আওয়াজসহ আগ্নেয়গিরির চিত্র শিক্ষামূলক শর্ট ফিল্মের মাধ্যমে তুলে ধরা। পাশাপাশি কুরআনের যে সকল আয়াত আল্লাহর মহান শক্তির উপর প্রমাণ করে সেগুলো তার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে ছাত্রদের সামনে উপস্থাপন করা।

বিশুদ্ধ আক্বীদার প্রমাণপঞ্জী :

যদি আক্বলী দলীল আক্বীদা বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম যা দ্বারা মহান আল্লাহর অস্তিত্ব, মহা ক্ষমতা ও অনুগ্রহের উপর প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করি। তাহ’লে আক্বীদার বিশদ বিবরণ ও আরকান সমূহ কুরআন ও সুন্নাহর আলোকেই গ্রহণ করতে হবে। তাই মহান আল্লাহ নিজেকে যে গুণে গুনান্বিত করেছেন বা তাঁর রাসূল (ছাঃ) তাঁকে যে গুণে গুনান্বিত করেছেন, এর বাইরে আমাদের বুঝ অনুযায়ী ইচ্ছা মত তাঁকে যে কোন গুণে গুনান্বিত করা বৈধ নয়। যেমন মহান আল্লাহর সুনদর সুন্দর নামসমূহ, তাঁর ফেরেশতামন্ডলীর গুণাবলী, তাঁর কিতাব, রাসূল (আঃ), পরকালের বর্ণনা, জান্নাত-জাহান্নামের বৈশিষ্ট্য, পৃথিবীর সৃষ্টি ও তার নিঃশেষ হয়ে যাওয়া প্রভৃতি বিষয়গুলো আল্লাহ যেভাবে বর্ণনা করেছেন ঠিক সেভাবেই আমরা তা সাব্যস্ত করব। তাই আমরা যখন আক্বীদা ও তাওহীদের কিতাবগুলো পড়াশোনা করব, তখন পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দলীলভিত্তিক নির্ভরযোগ্য গ্রন্থগুলো গ্রহণ করব। আহমাদ বিন হাম্বাল, শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া‎, ইমাম ত্বাহাবী, মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রহঃ) প্রমুখ সালাফী বিদ্বানগণের আক্বীদা ও তাওহীদ বিষয়ে লিখিত গ্রন্থগুলো। এছাড়াও এঁদের মতো যারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদার জন্য সংগ্রাম করেছেন। যারা মু‘তাযেলাদের মত ভ্রষ্টদলগুলোর ভ্রান্ত আক্বীদা ও আমাদের যুগের নাছারা ও অগ্নিপূজকদের আক্বীদা দ্বারা প্রভাবিত দলগুলোর আক্বীদা থেকে মুক্ত ছিলেন।

অতঃপর আক্বীদার প্রতিটি দারসের জন্য শিক্ষককে কুরআনুল কারীমের আক্বীদা বিষয়ক আয়াত দ্বারা সহযোগিতা নেওয়া প্রয়োজন। এ সকল আয়াতের দারস তাফসীরসহ উল্লেখ করা যরূরী, যাতে আমাদের নিকট দারসের তাৎপর্য ফুটে উঠে। যেমন কুরআনের কিছু আয়াত যেগুলো ফেরেশতাদের অস্তিত্বকে প্রমাণ করে। কিছু আয়াত যেগুলো আল্লাহর বড়ত্বের উপর প্রমাণ করে। আবার কিছু আয়াত যেগুলো সৃষ্টিজগত ও আমাদের সম্পর্কে আলোকপাত করে। কিছু আয়াত যেগুলো পরকাল, মানুষ সৃষ্টির সূচনা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে প্রমাণ করে। এ ধরণের আরো অন্য সকল আয়াত ছাত্রদের জন্য বর্ণনা করতে হবে এবং তাদের মেধানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা করে দিতে হবে।

আক্বীদা পাঠ দানের পদক্ষেপ সমূহ :

আক্বীদা পাঠদানের স্বার্থকতা অর্জনের জন্য উত্তমভাবে দারস উপস্থাপনের পর নিমেণাক্ত পরিকল্পনাসমূহ গ্রহন করা উচিৎ। আক্বীদা অধ্যয়নের কিছু পদক্ষেপ:

১. ভূমিকা পেশ করা :

(ক) আক্বীদার পাঠদানের জন্য আশেপাশের বিদ্যমান মহান আল্লাহর বিভিন্ন নিদর্শনের বর্ণনা দেওয়া, যাতে ছাত্রদের দৃষ্টি সেদিকে ফিরে। যেমন রাত-দিন, তারকারাজী, পাহাড়-পর্বতের বর্ণনা উল্লেখ করা।

(খ) গতদিনের পাঠকে আবার সংক্ষেপে পূনরাবৃত্তি করা, যদি বর্তমান পাঠের সাথে সম্পৃক্ত বিষয় হয়।

(গ) আল্লাহর মহাশক্তির উপর প্রমাণ করে এধরনের প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কুরআনী ঘটনা উল্লেখ করা। যেমন আছহাবে কাহফের ঘটনা, একশত বছর মৃত রাখার পর আবার মহান আল্লাহর আদেশে জীবিত হওয়ার ঘটনা ইত্যাদি। এভাবে নির্দিষ্ট নতুন দারসের বিষয়বস্ত্তর সাথে সম্পৃক্ত ঘটনাগুলো ছাত্রদের চাহিদার আলোকে একজন শিক্ষক তুলে ধরবেন।

২. মূল বিষয়বস্ত্ত পেশ করা :

পাঠের বিষয়বস্ত্তর শিরোনাম লিখার পর তার বিষয়বস্ত্তর সাথে সম্পৃক্ত আয়াতগুলো ব্লাকবোর্ডে শিক্ষক লিখে দিবেন। এরপর তিনি সুন্দরভাবে আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা করে দিবেন যাতে উদ্দিষ্ট আক্বীদার আলোচনা স্পষ্ট হয়ে যায়। এটা এভাবে যে, শিক্ষক নিজে ভূমিকার আলোকে আয়াতের অর্থ জিজ্ঞেস করবেন এবং প্রত্যেক উত্তরের ক্ষেত্রে শিক্ষক মন্তব্য পেশ করবেন, যাতে পূর্ণভাবে দারসের ব্যাখ্যা আদায় হয়ে যায়। ছাত্রদের মনোযোগ ও ব্রেইনের উপর চাপ সৃষ্টি করবে না।

৩. সারাংশ পেশ করা :

শিক্ষক ছাত্রদের দেয়া উত্তরগুলো প্রশ্নাকারে বার বার উপস্থাপন করবেন। যাতে সেই উত্তরগুলোই দারসের সারাংশের কতগুলো অনুচ্ছেদ হয়ে যায়। আর শিক্ষক সারাংশের বিভিন্ন অনুচ্ছেদের মধ্য থেকে একটি ছাত্রদের জন্য লিখে দিবেন, যখনই তিনি ছাত্রদের কাছ থেকে উত্তর শুনবেন। অতঃপর সারাংশের পড়া আবার ফিরাবেন, অথবা ছাত্রদের কাছ থেকে পড়িয়ে নিবেন।

৪. সামঞ্জস্যতা বিধান এবং উপসংহার পেশ করা :

 (ক) আপনি জীবনের বাস্তবতা থেকে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে একটি প্রশ্ন রাখুন, যা বিশুদ্ধ আক্বীদার আলোকে সমাধান করা সম্ভব। যেমন- গাইরুল্লাহর নামে যবেহ করা, যাদু করা, বিভিন্ন উদ্দেশ্য হাছিলের অসীলা মানা।

(খ) আপনি ছাত্রদের কাছ থেকে এ মর্মে অঙ্গীকার গ্রহণ করবেন যে, তারা তাদের প্রাত্যহিক জীবনে তা বাস্তবায়ন করবে।

العبادات পাঠদানের কিছু মৌলিক মূলনীতি :

العبادة এর সংজ্ঞা: মহান আল্লাহ মানবজাতিকে একমাত্র তাঁর দাসত্ব করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। যাতে তারা চলার পথে আল্লাহর আদেশ নিষেধ তথা শরী‘আত মেনে চলে। একইভাবে তাদের সকল লেনদেন, চলাফেরা, ক্রয়-বিক্রয় প্রভৃতি কাজে একমাত্র মহান আল্লাহকেই অনুসরণ করে চলে। আল্লহ তা‘আলা এরশাদ করেন- وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ‘আমি মানব ও জিন জাতীকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’ (যারিয়াত ৫১/৫৬)। অনুরূপভাবে তারা ছালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে, সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করবে, রামাযান মাসে ছিয়াম রাখবে। ইবাদত হ’ল মূলতঃ আরকানুল ইসলামকে বাস্তবায়ন করা। একইভাবে মানুষের চলার পথে যাবতীয় কাজকর্ম একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সম্পাদন করা। মানুষের প্রতিটি কাজ ও অবস্থাই ইবাদত হওয়া চাই। তার ক্রয়-বিক্রয়, কাজকর্ম, তার বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে। মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ‘আপনি বলুন! আমার ছালাত আমার কুরবানী, আমার জন্ম আমার মৃত্যু সব কিছুই বিশ্বপ্রতিপালক মহান আল্লহর জন্য নিবেদিত’।

العبادات পাঠদানের উদ্দেশ্য :

 হে সম্মানিত শিক্ষক জেনে রাখুন! আপনি নিশ্চয় নিমেণাক্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যে পাঠদান করবেন।

(১) ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমাদের যাবতীয় আমল ও কুরবানী দ্বারা আল্লাহর প্রতি বিনয় নম্রতা ও আনুগত্য প্রকাশ করা এবং আমাদের জীবন, চলাফেরা সব কিছু এমন ধাঁচে আদায় করা যাতে মহান আল্লাহ খুশী হন। এই উদ্দেশ্যটির আরো কিছু শাখা-প্রশাখাগত উদ্দেশ্য রয়েছে।

(২) ইবাদত আমাদের জীবনকে রাববুল আলামীনের প্রভুত্বের প্রতি সুশংঙ্খলিত করে তোলে। যেমন-

(ক) ছালাত আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে শৃংঙ্খলিত করে। জীবনকে প্রত্যেহ পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে বিভক্ত করে। এই ছালাত আমাদের সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে, ঘুমাতে অভ্যস্ত করে। আমাদের সকল কাজকে শৃংঙ্খলিত করে এবং আমাদের হৃদয়গুলোকে আমাদের সৃষ্টিকর্তার জন্য নিবেদন করে।

(খ) ছিয়াম আমাদের প্রবৃত্তিকে শৃঙ্খলিত করে এবং হারাম কাজ থেকে বাঁধা দিয়ে আল্লাহ ভীতির আলোকে গড়ে তোলে। অসহায়ের প্রতি নিরাপত্তা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা। ছিয়ামের মাসে আমরা একইসাথে আহার করি, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত একই সাথে আহার থেকে বিরত থাকি, প্রত্যেকে আমরা আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করি, এটাই শৃংঙ্খলা।

(গ) হজ্জ আমাদের সামাজিক জীবনকে সুশৃংঙ্খলিত করে। এটি গোটা মুসলিম জাতির ঐক্যকে পরিচ্ছন্ন ও প্রশান্ত হৃদয়ে একই ইবাদতের দ্বারা, একটি নির্দিষ্ট জায়গাতে, একই শ্লোগান ও আমলের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করে। যার লক্ষ্য ও আশা থাকে একটাই।

(ঘ) যাকাত আমাদের অর্থনৈতিক জীবনে শৃঙ্খলা ফিরে আনে। যাকাত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সকল সম্পদ একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য। তিনি আমাদের আদেশ করেছেন যে, কোন বাড়াবাড়ি ও অপচয় ছাড়াই মাল-সম্পদ থেকে কিছু অংশ গরীব অসহায়দের জন্য খরচ করব, কিছু অংশ আমাদের নিজেদের ও নিকটাত্মীয়দের প্রয়োজনে খরচ করব। আর কারো সম্পদ হক্ব ব্যতীত অন্যায়ভাবে গ্রহণ করব না। মহান আল্লহ বলেন, وَآتُوهُمْ مِنْ مَالِ اللَّهِ الَّذِي آتَاكُمْ ‘মহান আল্লাহ তোমাদের যে অর্থ-সম্পদ দান করেছেন, তা থেকে তাদের দান কর’ (আন-নূর- ২৪/৩৩)।

(ঙ) শাহাদাতাইনকে স্বীকৃতি দেওয়া। অর্থাৎ এ সকল ইবাদত ও আল্লাহর আদেশসমূহের সামনে আত্মসমর্পণ করা এবং আমাদের প্রতিটি কাজ এই ভিত্তিমূলের উপরে সুশৃঙ্খলিত করা। আর এটাই হ’ল ইসলামে প্রবেশের মর্ম কথা। মহান আল্লাহ বলেন, فَإِنْ حَاجُّوكَ فَقُلْ أَسْلَمْتُ وَجْهِيَ لِلَّهِ وَمَنِ اتَّبَعَنِ ‘যদি তারা তোমার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হয় তবে বলে দাও, ‘আমি এবং আমার অনুসরণকারীগণ আল্লহর প্রতি আত্মসমর্পণ করেছি’ (আলে ইমরান-৩/২০)।

৩. একজন সম্মানিত শিক্ষকের জন্য আবশ্যক হল তিনি তাঁর ছাত্রদের মাঝে ছালাতের আগ্রহ সৃষ্টি করবেন এবং ছালাত পরিত্যাগের জন্য ভীতি প্রদর্শন করাবেন। এটা হবে আল্লাহর জন্য ভালবাসা ও একমাত্র তাকে ভয় করা থেকে। এভাবেই যাকাত, ছিয়ামসহ সকল ইবাদতের ক্ষেত্রে আগ্রহ সৃষ্টি করাতে হবে। এবং এসকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে, মানুষের প্রসিদ্ধি লাভের জন্য নয়।

৪. একজন সম্মানিত শিক্ষকের জন্য যরূরী হ’ল, তিনি ছাত্রদের ইবাদতের সঠিক পদ্ধতি শিখাবেন। তাদেরকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে সঠিক ইবাদতে অভ্যস্ত করাবে। যাতে তারা কোন ত্রুটি ছাড়াই যথাযথভাবে তা আদায় করতে পারে এবং তা মহান আল্লাহর নিকট গ্রহনযোগ্য হয়। এছাড়া ছাত্রদেরকে তাদের স্তর অনুযায়ী সকল ইবাদতের শর্তসমূহ, দো‘আ আযকার ও সঠিক নিয়ত শিক্ষা দিবেন।

৫. একজন শিক্ষক তাঁর ছাত্রদেরকে সকল ইবাদত হাতে কলমে শিক্ষা দিবে। তাদের সাথে নিয়ে তিনি ছালাত আদায় করবেন। তাদের সাথে নিয়ে ধনীদের থেকে যাকাত উত্তোলন করে তা সাধারণভাবে সকল গরীবদের মাঝে অথবা নিজ জনপদের গরীবদের মাঝে বন্টন করবেন। এ মর্মে ছাত্রদের থেকে অঙ্গীকার নিবেন। এভাবে তারা যখন পাঠ শেষে বের হবে তখন তারা তা তাদের জীবনের চলার পথে বাস্তবায়ন করবে মর্মে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিবে।

ইবাদত শিক্ষা দেওয়া এবং তার পাঠ পরিকল্পনার মূল ভিত্তিসমূহ :

হে সম্মানিত শিক্ষক! ইবাদত বিষয়ে পাঠদানের লক্ষ্য অর্জন ও আপনার প্রভূর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিমেণাক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করুন।

১. ভূমিকা উপস্থাপন করা :

(ক) আপনি আপনার পাঠ দান আল্লাহর বড়ত্ব, সাহায্য ও তাঁর মর্যাদা বর্ণনার মাধ্যমে শুরু করুন। এই পাঠের শিক্ষা থেকে যা উদ্দেশ্য করা হয়েছে তা ছাত্রদের স্মরণ করিয়ে দিন, যাতে তারা ইবাদতে মনোযোগী হয় এবং তা একনিষ্টভাবে আল্লাহর জন্য আদায় করে।

(খ) প্রাত্যহিক জীবন থেকে কিছু বাস্তবতা উল্লেখ করুন যাতে ছালাত বা অন্য কোন ইবাদতের তাতে প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। যেমন একজন বিক্রেতা মানুষকে উপদেশ দিবে যাতে আল্লাহ তার ছালাত কবুল করেন। অথবা কোন কর্মচারী সে তার সকল কাজ আল্লাহকে খুশী করার জন্য একনিষ্টভাবে তার জন্য আদায় করবে। এভাবেই আরো অন্যান্য বিষয়গুলোর ব্যাপারে বাস্তবতা থেকে আলোকপাত করবেন।

(গ) আপনার জানা থাকলে ছাত্রদেরকে এই ইবাদতের বিধানটি কবে কিভাবে শারঈ বিধান হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে সে প্রসঙ্গটি আলোচনা করুন। যেমন- ইসরা ও মি‘রাজের ঘটনা। যখন মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে (ছাঃ) আসমানে মি‘রাজে গমন করালেন, তখন সেখানে কিভাবে প্রথম ছালাত ফরয করা হ’ল সে বিষয়ে আলোকপাত করা। অথবা এই ইবাদতের গুরত্বের উপর প্রমাণ হিসাবে কিছু আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করা।

২. উপস্থাপনা পেশ করা :

(ক) ছাত্রদের সামনে রাসূলুল্লহর (ছাঃ) ইবাদতের বাস্তব প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলুন যে, তিনি কিভাবে ছালাতে আদায় করতেন। (যা আপনার পাঠের মূল বিষয়বস্ত্ত)। অথবা কিভাবে তা তিনি ছাহাবাদের উদ্দেশ্যে বর্ণনা করেছেন এবং কিভাবেই বা তাদের আদায় করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। এবং ছাহাবাগণ রাসূলুল্লহ (ছাঃ)-কে যেভাবে আদায় করতে দেখেছেন তা কিভাবে আমাদের জন্য বর্ণনা করেছেন।

(খ) তাদের সামনে ফিকহী ধারাবাহিকতায় অথবা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচী অনুযায়ী ইবাদতের রূকুন, শর্ত, ফরয ও পদ্ধতি পাঠ্য অনুযায়ী উপস্থাপন করুন। এগুলো বর্ণনার ক্ষেত্রে সামর্থ্যানুযায়ী রাসূলুল্লাহর (ছাঃ)-এর আমল ও তাঁর হাদীছসমূহের উপর নির্ভর করুন, যা ইতিপূর্বের শিক্ষা স্তরেই শিখে এসেছ।

(গ) ছাত্রদের সাথে নিয়ে ছালাত ও ওযূর মতো মৌলিক ইবাদতের প্র্যাকটিকেল অনুশীলন করান। অথবা তাদের সামনে এর একটি দৃষ্টান্ত পেশ করুন। যেমন যাকাতের দৃষ্টান্ত পেশ করা। ছাত্রদের পারিপার্শ্বিক ও বাস্তবিক জীবন থেকে তাদের সামনে দৃষ্টান্ত পেশ করুন। সবশেষে ছাত্রদের কাছ থেকে এ মর্মে অঙ্গীকার নিন যে, তারা তাদের জীবনে সকল ইবাদত বাস্তবায়ন করবে। তাদের বাসস্থান ও বাড়ীর নিকটবর্তী মসজিদে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করবে মর্মে অঙ্গীকার নিন। তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবেন এবং তাদের এলাকা অথবা মসজিদে গিয়ে তাদের পরিবারের সাথে সাক্ষাত করবেন।

নাহু ও ছরফ পাঠদানের পদ্ধতি :

নাহু ও ছরফ পাঠদানের উদ্দেশ্য :

(১) বাকশক্তিকে নিরাপদ রাখা এবং ভাষাকে ভুল থেকে শক্তিশালী করা।

(২) শব্দের শেষ বর্ণকে হারাকাত ও সাকীন সহ আয়ত্ব করা। এবং ছরফের নিয়ম অনুযায়ী যে হরফে দাখিলিয়্যাহগুলো আরবী শব্দে প্রবেশ করেছে তা আয়ত্ব করা।

(৩) ছাত্রদেরকে ক্রমান্বয়ে মাতৃভাষা ও অনারবী ভাষা থেকে মুক্ত রেখে বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত করা।

(৪) বক্তব্য-লিখনীতে বিশুদ্ধ ভাষা ব্যবহার করা এবং একজন শিক্ষক তার ছাত্র ও পাঠে অংশগ্রহনকারী অন্যান্যদের জন্য আরবী একক শব্দগুলোর ত্রুটি উল্লেখ করে দিবেন, যা তাদের বক্তব্য লিখনীতে সহায়ক হবে।

(৫) আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের (ছাঃ) সুন্নাহ বুঝার জন্য আরবী ভাষা শিক্ষা করা ছাত্রদের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।

(৬) ছাত্রদের এটা বুঝানো যে, দ্বীনের উসূল বুঝতে এবং তাদের ছালাত ও যাবতীয় ইবাদত বিশুদ্ধভাবে আদায়ের জন্য আরবী ভাষা আয়ত্ব করার বিকল্প নেই। কেননা অধিকাংশ ইবাদত আরবী ভাষা ছাড়া কবুল হয় না।

(৭) ছাত্রদের সামনে এই বিষয়টি উপস্থাপন করা যে, আরবী ভাষা সকল মুসলমানের জন্য । তাই তাদের জন্য উত্তমভাবে আরবী ভাষা শিক্ষা করা যরূরী। কেননা আরবী ভাষা কুরআনের ভাষা, এ ভাষাতেই কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। এটা তাঁর নবীর ভাষা, যাকে তিনি গুরম্নত্ব আরোপ করেছেন। এটি ইসলামের প্রতীক এবং দ্বীন ও ইসলামী আক্বীদার ভাষাও বটে।

পাঠ পরিকল্পনা :

(১) ভূমিকা উল্লেখ করা : শিক্ষক তাঁর প্রতিটি পাঠে একটি কারে আলাদা ভূমিকা পেশ করবেন। যাতে তিনি ছাত্রদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন এবং পূর্বের পাঠের মাসলা-মাসায়েল, হুকুম আহকাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিবেন যাতে তা তারা যা বুঝেছে তা তাদের মনে গেঁথে যায়। এরপর পাঠের যে অনুশীলনীগুলো বাকী ছিল তা শেষ করবেন।

(২) উপস্থাপনা পেশ করা : শিক্ষক আলোচ্য বিষয়কে ছাত্রদের সামনে আরো প্রানবন্ত করতে ব্লাকবোর্ডে নির্দিষ্ট অধ্যায়ের একটি উদাহরণ উল্লেখ করবেন, যাতে তাদের সামনে পাঠের একটি বাস্তবচিত্র ফুটে উঠে এবং পাঠটি বুঝতে সহায়ক হয়।

(৩) আপোসে আলোচনা করা : শিক্ষক নির্দিষ্ট অধ্যায়ের উদাহরণ নিয়ে ছাত্রদের সাথে খোলাখুলি আলোচনা প্রশ্নোত্তর করবেন এবং উদাহরণটিতে যেটির ব্যাখ্যার প্রয়োজন তা ব্যাখ্যা করে দিবেন। এবং নিয়মকানুন উলেস্নখের সময় উদাহরণ উল্লেখ করবেন। যাতে ছাত্ররা তাদের ভুল বুঝতে পারে এবং তাদের ব্রেইনগুলো এভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।

(৪) সারাংশ উপস্থাপন করা : এটি হবে পাঠের পরিসমাপ্তিমূলক আলোচনা। এখানে শিক্ষক ব্লাকবোর্ডে লেখা উদাহরণের কায়েদাহগুলো বের করে ছাত্রদের বুঝে দিবেন।

(৫) সামঞ্জস্যতা বিধান পেশ করাঃ শিক্ষক ছাত্রদের সামনে অধ্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল নিয়ে দ্রুত পাঠটিকে আরেকবার পুনরাবৃত্তি করবেন। যাতে তা তাদের বুঝকে আরেকটু শানিত করবে। এরপর ছাত্রদের সামনে অধ্যায়ের কিছু সামঞ্জস্যতা তুলে ধরবেন, যাতে তারা তার অবস্থা নিয়ে বাড়ীতে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে।

বিভিন্ন نص বা উদ্ধৃতাংশের পাঠদান :

১. উদ্দেশ্য সমূহ :

(ক) পাঠের নির্দিষ্ট নছের উপর একটি বিষয়ভিত্তিক শিরোনাম দাঁড় করানো উচিৎ। নছের  বাস্তবতা, সত্যতা ও প্রয়োগের উপর হুকুম লাগানো।

(খ) নছ  বা উদ্ধৃতির বিশাল শব্দ ভান্ডার থেকে উপকার লাভ করা।

(গ) নাহু ও সরফের কায়েদাগুলোর মাঝে বিদ্যমান পরস্পর সামঞ্জস্যতা তুলে ধরা। যাতে তা ছাত্রদের ছাত্রদের  মেধা-মননে গেঁথে যায়। 

(ঘ) নছের  মধ্যে যদি বর্ণনামূলক কিছু মূলনীতি পাওয়া যায়, তা থেকে উপকৃত হওয়া।

২. ভূমিকা পেশ করা : শিক্ষক নছ উল্লেখের পূর্বে আলোচ্য বিষয় থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি ভূমিকা উপস্থাপন করবেন। এতে নছটির লিখকের জীবনী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকবে এবং সাহিত্যিক মূল্যায়নও থাকবে। এছাড়া সম্ভব হলে পঠিত বিষয়ে একটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করবেন।

৩. উপস্থাপনা পেশ করা :

(ক) শিক্ষক আদবের নির্দিষ্ট নছটি পাঠদানের ক্ষেত্রে স্পষ্ট ভাষা ও উচ্চারণের সাথে মৃদু আওয়াজে নির্দিষ্ট মূলনীতি অনুসরণ করে উপস্থাপনা শুরু করবেন। যেমন নছের  মধ্যকার استفهام  ও فعل التعجب  এর মধ্যকার পরস্পর সংযুক্তি আলোচনা করবেন।

(খ) শিক্ষক ছাত্রদের থেকে মৃদু স্বরে নছটি পাঠ করে নিবেন। দুর্বোধ্য শব্দগুলোর নিচে দাগ টেনে তাদের বুঝিয়ে দিবেন। প্রয়োজনে কঠিন বাক্যগুলোর তারকীব করে দিবেন।

(গ) শিক্ষক ক্লাসের বিভিন্ন স্তরের ছাত্রদের কাছ থেকে নাসটির অনুর্ধ চার লাইন উচ্চ স্বরে পাঠ করে নিবেন। কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষন ছাড়াই শুধু ক্বেরাতের উচ্চারণগত ভুলগুলো সংশোধন করে দিবেন।

৪. ব্যাখ্যা পেশ করা :

(ক) শিক্ষক নছের  মধ্যকার দুর্বোধ্য শব্দগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা উপস্থাপন করবেন। যেমন প্রয়োজনে বাক্যের তারকীবের ব্যাখ্যা পেশ করবেন। ছাত্রদের মাধ্যে যারা শব্দের অর্থ বুঝতে পারবে না, তাদেরকে ব্যাখ্যা ও তারকীবের সময় শিক্ষক সাথে অংশ নেওয়াবেন। এছাড়া তিনি পঠিত পাঠ ও কবিতার পঙক্তিগুলোর অর্থের ব্যাখ্যা করে দিবেন।

(খ) নছের  মধ্যে সাদৃশ্যপূর্ণ ও বিপরীত যে শব্দগুলো আছে সে সম্পর্কে শিক্ষক ছাত্রদের সতর্ক করবেন।

(গ) নছের  নাহু ও ছরফের কায়েদাহগুলোর মাঝে সামঞ্জস্যতা বিধান করে দিবেন, যাতে তা ছাত্রদের স্মৃতিতে গেঁথে যায়।

(ঘ) শিক্ষক নছের  মধ্যকার বর্ণনামূলক তারকীব করে দিবেন এবং অর্থের মধ্যে বালাগাত সম্পর্কিত কিছু পাওয়া গেলে তা ছাত্রদের জানিয়ে দিবেন।

৫. সমাপনী বক্তব্য পেশ করা : সবশেষে ছাত্রদের ভালভাবে উপলব্ধির জন্য শিক্ষক নছ সম্পর্কে সাধারণ একটি আলোচনা রাখবেন।

তেলাওয়াত ও গবেষণা সম্পর্কে পাঠ দান :

المطالعة বা গবেষণার আলোচনায় القرأة বা তেলাওয়াতকে নিমেণাক্ত উদ্দেশ্যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন-

(১) ভাষার ত্রুটি থেকে মুক্ত রাখাঃ প্রতিটি অক্ষরকে তার স্ব স্ব উচ্চারণস্থল থেকে উচ্চারণ করা। বিভিন্ন নছের  ছেদ ও বিরতিতে ওয়াক্বফ ও শুরুর ভারসাম্য রক্ষা করা।

(২) শব্দের শেষ বর্ণের অবস্থা আয়ত্ব করা। এবং নাহু ও সারফের নিয়মানুযায়ী শব্দের মধ্যকার হরফে দাখিলিয়্যাহগুলো মুখস্থ করা।

(৩) ক্বিরাতের সংক্ষেপ প্রসঙ্গ উল্লেখ করা। যাতে নছের মূল উদ্দেশ্য সহজেই ছাত্রদের বুঝে আসে।

(৪) সুন্দরভাবে ক্বিরআত করা। একবার উচ্চ স্বরে ক্বিরাত পাঠ করা এবং অন্যবার নিমণ স্বরে পাঠ করা। নছের  মূলনীতি অনুযায়ী বাক্যকে একবার ইনশাইয়্যাহ হিসাবে ব্যবহার করা, আরেকবার খাবরিয়্যাহ হিসাবে ব্যবহার করা।

(৫) অর্থকে আরো স্পষ্ট করে বুঝা।  নছের  মধ্যে ব্যবহৃত ফায়েদা অর্জন করা।

পাঠ পরিকল্পনাসমূহ :

উপস্থাপনা পেশ করা :

১. নির্ধারিত পাঠ্যসূচী থেকে নির্দিষ্ট একটি নছের চয়ন করা এবং সংক্ষিপ্তাকারে সেই পাঠের মূল বিষয়বস্ত্ত তুলে ধরা, যাতে করে ছাত্রদের ব্রেইনগুলো পরিপক্ক হয়।

(২) পাঠের মুল আলোচ্য বিষয় ব্লাকবোর্ডে লিখে দেওয়া

(৩) নছের  মূলনীতি, নাহু-ছরফের নিয়ম-কানুন, ইদগাম ইযহারের ইখফা, মাখরাজের মত তাজবীদের মৌলিক নিয়মগুলো অনুসরণ করে শিক্ষক একটি নমুনা পাঠ উপস্থাপন করবেন।

(৪) ছাত্রদের কাছ থেকে ইবারত পড়ে নেওয়া। এক্ষেত্রে শিক্ষক ক্লাসের বিভিন্ন স্তরের ছাত্রদের মনোনয়ন করবেন। ক্বিরাতের বিভিন্ন উদাহরণের মূলনীতির দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরাবেন। যেমন তাদের নছের  বিভিন্ন শব্দ ও তারকীব নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এখানে যা উহ্য আছে তা ব্যাখ্যা করে দিবেন। এভাবে তাদেরকে নছের  উপরকারীতা, ফিকহী বিষয়, আক্বীদা, ভাষা, ও ইতিহাস, সামাজিক শিষ্টাচার ইত্যাদি বিষয়গুলো বের করার ব্যাপারে শিক্ষক ছাত্রদের অভ্যস্ত করে তুলবেন।

[লেখক : আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।]

 



আরও