পর্ণোগ্রাফীর আগ্রাসন ও তা থেকে মুক্তির উপায় (শেষ কিস্তি)
মফীযুল ইসলাম
ভূমিকা :
মাদকের নেশায় যুবসমাজ আজ ধ্বংসের অতলতলে নিমজ্জিত। যত দিন যাচ্ছে তত যেন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারো এ ব্যাপারে কোন যেন চিন্তা নেই। যুবসমাজ কোন পথে এগিয়ে যাচ্ছে, এটা দেখার যেন কেউ নেই। মাদক যেন সর্বত্র মহামারী আকার ধারণ করেছে। মাদকের করালগ্রাসে নিমজ্জিত বিশেষ করে যুবসমাজ। অথচ তাদের শক্তিমত্তা পৃথিবীর ইতিহাসে ঐতিহাসিক ঘটনা। পৃথিবীর সকল ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পিছনে তাদেরই অবদান সর্বাধিক।
মাদকের পরিচয় :
মাদককে আরবীতে خمر বলা হয়। এর শাব্দিক অর্থ ঢেলে ফেলা, আচ্ছন্ন করা, মিশে যাওয়া ইত্যাদি। মদ সেবনের ফলে মানুষের বিবেক-বুদ্ধি তমাশাচ্ছন্ন হয়ে যায় বলে তাকে خمر বলে।[1] পারিভাষিক অর্থ সর্ম্পকে ওমর (রাঃ) বলেন, الْخَمْرُ مَا خَامَرَ الْعَقْلَ ‘যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে ঢেকে ফেলে’।[2] মা‘মার ইবনু সুলায়মান (রহঃ) বলেন, مَا خَمَر العَقْلَ وَهُوَ الْمُسْكِرُ مِنَ الشَّرَابِ ‘যে সকল বস্ত্ত মাদকতা সৃষ্টি করে এবং বিবেক-বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে অথবা বোধশক্তির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে তাকে خمر বা মাদক বলে।[3] শায়খ উছায়মীন (১৩৪৭-১৪২১ হিঃ) বলেন,كل ما غطى العقل فهو خمر ‘যে সমস্ত বস্ত্ত জ্ঞানকে ঢেকে ফেলে তাকে মাদক বলে’।[4] পার্থিব ও পরকালীন মদের পার্থক্য সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে সঊদী আরবের গ্রান্ড মুফতী শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (১৩৩০-১৪২০ হিঃ) বলেন,
خمر الآخرة طيب ليس فيه إسكار ولا مضرة ولا أذى، أما خمر الدنيا ففيه المضرة والإسكار والأذى ، أي : إن خمر الآخرة ليس فيه غول ولا ينزف صاحبه وليس فيه ما يغتال العقول ولا ما يضر الأبدان ، أما خمر الدنيا فيضر العقول والأبدان جميعا، فكل الأضرار التي في خمر الدنيا منةفية عن خمر الآخرة.
‘আখেরাতের মদ হ’ল- পবিত্র, তাতে কোন মাতলামী নেই, অপকার নেই, কোন কষ্ট নেই। আর দুনিয়াবী মদে অনিষ্ট, মাতলামী ও কষ্ট রয়েছে’। অর্থাৎ পরকালের মদে কোন নেশা নেই, বিলাসিতাপূর্ণ, যা বিবেককে আচ্ছন্ন করে না এবং শরীরের কোন ক্ষতি করে না। আর দুনিয়ার মদে বিবেক ও শরীরের ক্ষতি করে। দুনিয়ার মদে ক্ষতি মারাত্মক পরকালীন মদে তা নেই’।[5]
ইসলামের দৃষ্টিতে মাদক :
ইসলামে মাদক হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنْصَابُ وَالأَزْلامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘হে বিশ্বাসীগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, বেদী ও শুভাশুভ নির্ণয়ের তীর সমূহ নাপাক ও শয়তানী কাজ। অতএব তোমরা এসব থেকে বিরত থাকো যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও’(মায়েদাহ ৫/৯০)। ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ ‘প্রত্যেক নেশা উদ্রেককারী জিনিসই মদ। আর প্রত্যেক মদই হারাম’।[6]
ইসলাম শুধু যে মদ্যপান হারাম করেছে তা নয়; বরং মদ্য উৎপাদন, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবেশন ও উপঢৌকন তথা মদকে কেন্দ্র করে যা কিছু করার হয় তার সবকিছুকেই হারাম ঘোষণা করেছে। হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ وَعْلَةَ السَّبَإِىِّ مِنْ أَهْلِ مِصْرَ أَنَّهُ سَأَلَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ عَمَّا يُعْصَرُ مِنَ الْعِنَبِ فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ إِنَّ رَجُلاً أَهْدَى لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَاوِيَةَ خَمْرٍ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم هَلْ عَلِمْتَ أَنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَهَا. قَالَ لاَ. فَسَارَّ إِنْسَانًا. فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِمَ سَارَرْتَهُ. فَقَالَ أَمَرْتُهُ بِبَيْعِهَا. فَقَالَ إِنَّ الَّذِى حَرَّمَ شُرْبَهَا حَرَّمَ بَيْعَهَا. قَالَ فَفَتَحَ الْمَزَادَةَ حَتَّى ذَهَبَ مَا فِيهَا.
‘আব্দুর রহমান ইবনু ওয়ালাতা আস-সাবাঈ মিছরী (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত যে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)-এর নিকট আঙ্গুরের রস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এক মশক মদ উপহার স্বরূপ নিয়ে আসে। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি কি জান না যে, আল্লাহ তা‘আলা সেটাকে হারাম করে দিয়েছেন? সে বলল, না। অতঃপর সে এক ব্যক্তির সাথে কানাকানি করল। রাসূল (ছাঃ) সেই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি গোপনে তাকে কি বললে? সে বলল আমি তাকে এটা বিক্রি করার পরামর্শ দিয়েছি। এরপর তিনি বললেন, যিনি এটা পান করা হারাম করেছেন, তিনি এটা বিক্রয় করাও হারাম করেছেন। রাবী বলেন এরপর সে মশকের মুখ খুলে দিল এবং তার মধ্যে যা কিছু ছিল সব পড়ে গেল।[7] অন্যত্র তিনি বলেন, لَعَنَ اللَّهُ الْخَمْرَ وَشَارِبَهَا وَسَاقِيَهَا وَبَائِعَهَا وَمُبْتَاعَهَا وَعَاصِرَهَا وَمُعْتَصِرَهَا وَحَامِلَهَا وَالْمَحْمُولَةَ إِلَيْهِ ‘আল্লাহ তা‘আলা অভিসম্পাত করেছেন মদের ওপর, মদ্যপায়ীর ওপর, মদ্য পরিবেশনকারীর ওপর, তার ক্রয়-বিক্রয়কারীর ওপর, তার উৎপাদনকারী ও যে উৎপাদন করায় তাদের ওপর, তার বহনকারী ও যার নিকট বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় তার ওপর’।[8] উল্লেখ্য, যে বস্ত্ত অধিক পরিমাণ গ্রহণে নেশার উদ্রেক হয় তার সামান্য গ্রহণ করাও হারাম। চাই তাতে নেশার উদ্রেক হোক বা না বা হোক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا أَسْكَرَ كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَامٌ ‘যে জিনিস অধিক পরিমাণ পান করলে নেশা সৃষ্টি করে তার অল্প পরিমাণও হারাম’।[9] রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ وَمَا أَسْكَرَ مِنْهُ الْفَرْقُ فَمِلْءُ الْكَفِّ مِنْهُ حَرَامٌ ‘প্রত্যেক নেশা উদ্রেককারী জিনিসই হারাম। আর যে জিনিস এক পাত্র পান করলে নেশা সৃষ্টি করে তার এক অঞ্জলি পরিমাণও হারাম’।[10] মাদক গ্রহণের পরিমাণ সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
ثَلاَثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِمُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَالْعَاقُّ وَالْدَّيُّوثُ الَّذِى يُقِرُّ فِى أَهْلِهِ الْخَبَثَ
‘তিন শ্রেণীর উপর আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন। যথা মদপানকারী, পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি, দায়ূছ, যে তার পরিবারে বেপর্দার সুযোগ দেয়’।[11]
মাদকতা ও যুবসমাজ :
বর্তমান বিশ্বে পারমাণবিক মারণাস্ত্রের চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে মাদকতা। যা প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের যুবসমাজকে। অকালে ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। দাম্পত্য জীবনের কলহের জের ধরে ভেঙ্গে যাচ্ছে অসংখ্য সুখের সংসার। নেশার করালগ্রাসে ধুঁকে ধুঁকে মরছে লক্ষ-কোটি তাযা প্রাণ। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সর্বনাশা এই মাদক দাবানলের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ছে। আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে বিজ্ঞানের উন্নতি ও অগ্রগতির সাথে সাথে মাদকদ্রব্যের বিভিন্ন রকমফের পরিলক্ষিত হচ্ছে। গাঁজা, আফিম, হেরোইন, মারিজুয়ানা, প্যাথেড্রিন, কোকেন, পপি, ক্যানাবিস, ইয়াবা, টাইগার, স্পীড, রয়াল ড্রিংক, শার্ক বিড়ি-সিগারেট ইত্যাদি। বিশ্বের প্রায় ৫০ কোটি মানুষ মাদকের শিকার।[12]
দেশের উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের একটি বড় অংশ ইয়াবা আসক্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ধনী পরিবারের অতি আদরের সন্তানরাই সর্বাধিক বেশী মাদকাসক্ত। ফলে তারুণ্যের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ক্রমান্বয়ে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত।
মাদকতার ক্ষতিকর দিক সমূহ :
মাদকের কুফলের পরিধি ব্যাপক। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে মাদকের কুফল অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির মধ্যে তন্দ্রাচ্ছন্নতা, মেজায পরিবর্তন, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, মূত্র হ্রাস, যৌন উত্তেজনা, স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তনসহ বহুবিধ অবাঞ্ছিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষমতায় বাধাসহ, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি সাধিত হয়। মাদকের প্রভাবে মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত হয়। ফলে তার মধ্যে পাগলামী, অমনোযোগিতা, দায়িত্বহীনতা, অলসতা, উদ্যমহীনতা, স্মরণশক্তি হ্রাস, অস্থিরতা, খিটখিটে মেজায, নিকটাত্মীয় ও আপনজনদের প্রতি অনাগ্রহ এবং স্নেহ-ভালবাসা কমে যাওয়া ইত্যাদি আচরণ পরিদৃষ্ট হয়। অনেক মাদক আছে, যা সেবন করলে শরীরের ফিল্টার সদৃশ কিডনী বিনষ্ট হয়। মস্তিষ্কের লাখ লাখ সেল ধ্বংস হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদক ও ভেজাল খাদ্যের কারণেই মরণব্যাধি লিভার ও ব্লাড ক্যান্সার মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে। ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারী মধ্যে এইচআইভির মত মারাত্মক ব্যাধি সংক্রমিত হতে পারে। এক পর্যায়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া মাদকাসক্ত ব্যক্তি নেশার টাকা সংগ্রহ করতে নানারকম অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ফিওদর উগলভ যথার্থই বলেছেন, ‘মানবজাতির জন্য মদ্যপান যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও প্লেগ রোগের প্রতিক্রিয়ার চেয়েও ভয়াবহ’। তাইতো পত্রিকা খুলতেই আমাদের চোখে পড়ে ‘নেশার টাকা না দেয়ায় ছেলের হাতে পিতা খুন’, কিংবা ‘পুত্র পিটিয়ে হত্যা করল মাকে’। এমনিভাবে মাদকাসক্ত সন্তানের নির্মমতার শিকার হয়ে অনেক মা-বাবা তাদের অতি আদরের সন্তানকে পুলিশের হাতে তুলে দিতেও দ্বিধা করছেন না। সম্প্রতি বহুল আলোচিত পুলিশ দম্পতির লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদেরই কিশোরী কন্যা সন্তান ঐশী। তদন্তে জানা গেছে যে, সে ছিল মাদকাসক্ত এবং প্রায়ই পুরুষ বন্ধুদের নিয়ে ক্লাবে গিয়ে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত সময় অতিবাহিত করত। এইতো কিছুদিন আগের কথা, এক মাদকাসক্ত ছেলে তার মা-বাবাকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এভাবে প্রতিনিয়ত কত যে মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। প্রেমে ব্যর্থতা, বেকারত্ব, সঙ্গদোষ, হঠাৎ প্রচুর টাকা হাতে আসা, পরকীয়া, নতুনত্বের প্রতি আগ্রহ, পারিবারিক জীবনে ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে মনের অজান্তেই মাদকদ্রব্য সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে আমাদের যুবসমাজ। যেখান থেকে বের হয়ে আসা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
সরকারি মাদক অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের মোট মাদকাসক্তের ৯০ শতাংশই কিশোর, যুবক ও ছাত্র-ছাত্রী। আসক্তদের ৫০ শতাংশের বয়স ২৬ থেকে ৩৭ বছরের মধ্যে। মাদকাসক্তের গড় বয়স কমতে কমতে এখন ১৩ বছরে এসে ঠেকেছে। শিশু-কিশোররাও এ থেকে পিছিয়ে নেই। শহরের বস্তি, রেল স্টেশন, ট্রাক-বাস স্টেশনসহ বিভিন্ন অলি-গলিতে তার গোপনে, কখনও বা প্রকাশ্যে মাদক সেবন করছে। এরাই একদিন বড় হয়ে কালা জাহাঙ্গীর, পিচ্চি হান্নান, মুরগী মিলনের মত শীর্ষ সন্ত্রাসী বনে যায়। দিন-মজুর, বাস-ট্রাক ও রিকশাচালকরাও আজ মদ্যপানে আসক্ত। বর্তমানে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতার পরিমাণ আরো অনেক গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ১০,০০০ লোকের মৃত্যু হয় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণের ফলে। মাদকদ্রব্য পাচারকারী ও আসক্তদের হাতে গত কয়েক বছর আগে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সিনেটর লু্ইস কার্লোস গ্যালেন। তার আগে নিহত হন আর এক বিচারপতি।[13]
এছাড়া মাদক দ্রব্য বিষয়ক একজন অমুসলিম গবেষক ‘মার্ক এস গোল্ড’ মদের বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন।
শারীরিক ক্ষতি : মদ বা মাদক দ্রব্যেও প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়া, মুখ ও নাক লাল হওয়া, পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়া ও মুখমন্ডল সহ শরীরে কালশির পড়া, মুখমন্ডল ফুলে উঠা কিংবা মারাত্মক কিছু হওয়া, হঠাৎ চোখে কম দেখা, নাসিকার ঝিল্লি ফুলে উঠা, ব্রংকাইটিস এবং হৃদযন্ত্রের চলাচল পরিবর্তন হওয়া, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া সহ বুক ও হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা, লিভার প্রসারিত হওয়া, মাঝে মাঝে বিভিন্ন সংক্রমক রোগে আক্রান্ত হওয়া, হজম জনিত সমস্যায় হওয়া, দীর্ঘ সময় ধরে ঠান্ডা লাগা, মাঝে মধ্যে জ্বরে ও অপুষ্টিতে আক্রান্ত হওয়া, হঠাৎ শিউরে উঠা ইত্যাদি।
মানসিক ক্ষতি : হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, মাথা ঘোরা, দ্বিধাগ্রস্থতা ও বোধশক্তি দুর্বল হয়ে পড়া, অসংলগ্ন কথা বলা, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, উদ্বিগ্ন বা হতাশাগ্রস্ত হওয়া, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া, অনিন্দ্রা, নপুংসকতা, মিষ্টির প্রতি অত্যধিক আকর্ষণ বা একেবারে অনিহা, ক্ষুধাহীনতা ইত্যাদি।
সামাজিক ক্ষতি : মাদকদ্রব্যের উপর তুলনামূলক অধিক নির্ভরতা, পারিবারিক সমস্যা, প্রায়ই চাকুরী পরিবর্তন, কর্মক্ষেত্রে দেরীতে উপস্থিত, চাকুরী সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা, গাড়ী দুর্ঘটনা, আচরণ বিষয়ক ও আইনগত সমস্যা, আত্মঘাতী আচরণ, ভয়ংকর আচরণ, সন্দেহ প্রবণতা, অস্বাভাবিকভাবে নিষ্ক্রিয় আচরণ, সণায়ু বৈকল্য ইত্যাদি।[14]
মাদকাসক্তির কারণ :
মাদকাসক্তি বর্তমানে একটা সামাজিক ব্যাধি। এর কারণ বহুবিধ। নিমেণ গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো উল্লেখ করা হ’ল;। (ক) ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হওয়া (খ) আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়া। (গ) অসৎ সঙ্গীদের আশ্রয় ও প্রভাব।[15] (ঘ) পিতা-মাতার সাহচর্য ও আদরের অভাব (ঙ) বেকারত্ব (চ) ব্যর্থতা (ছ) মাদক পাচারের ট্রানজিট রুট (জ) মাদক দ্রব্যের সহজলভ্যতা (ঝ) আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নিষ্ক্রিয়তা (ঞ) সাংস্কৃতিক বিপর্যয় (ট) রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা (ঠ) শিক্ষা ব্যবস্থা ও সেশনজট।[16]
মাদককে প্রতিরোধ করার উপায় :
১. দেশের সরকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শ্রমজীবী ও পেশাজীবীর সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকার সম্প্রদায়কে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তকরণের ব্যবস্থা করে তাদের হতাশা ও নৈরাশ্য দূর করা।
২. প্রতি স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতঃ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সকল প্রকার দলীয় রাজনীতি বন্ধকরণের মাধ্যমে ছাত্রদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার ব্যবস্থাকরণ। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সহ ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে প্রতিহিংসা মূলক স্বার্থান্ধ রাজনীতি ও অস্ত্রের বদলে কলম ও বইকে তথা শিক্ষাকে বেশী প্রধান্য দেয় সে পরিবেশ সৃষ্টি করা।
৩. মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে যুবক ও কিশোরদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য শিক্ষার সর্বস্তরে তথা স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রমে মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে প্রবন্ধ-নিবন্ধ সংযুক্ত করা। যাতে তরুণ-তরুণী ও যুব সমাজের মধ্যে মাদক সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়।
৪. মাদকদ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ। এজন্য বিভিন্ন প্রচার ও যোগাযোগ মাধ্যম যেমন- রেডিও, টিভি, সিনেমা, সংবাদ পত্র, সাপ্তাহিক ও মাসিক ম্যাগাজিন, লিফলেট, বুকলেট, আলোচনা সভা, ওয়ার্কশপ, সেমিনার প্রভৃতির মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।
৫. ‘ইসলামে মদ হারাম’ এই চরম সত্য ও কল্যাণকর উক্তি বাস্তবায়িত করার জন্য সকল শ্রেণীর মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত করার ব্যবস্থা করা। এ ক্ষেত্রে মসজিদের ইমাম ও আলেম সমাজ জুম‘আর খুৎবা, দুই ঈদের খুৎবা ও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বক্তব্যের মাধ্যমে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন।
৬. বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য চোরাচালান ও ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এজন্য সংশ্লিষ্ট আইনের যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে প্রণীত আইনের যথাযথ প্রয়োগ ছাড়া এ প্রবণতা হ্রাস করা সম্ভব নয়।
৭. সকল প্রকার মাদকদ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় ও উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা।
৮. মাদক চোরাচালানের সকল রুট বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৯. লাইসেন্সবিহীন ঔষধের দোকান বন্ধ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নেশা উৎপাদকারী ঔষধ বিক্রির উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারী করা।
১০. আমাদের দেশে বসবাসকারী এবং অনুপ্রবেশকারী মাদকাসক্তদের প্রতি কড়া নযর রাখা, যাতে তারা এদেশের কাউকে মাদকাসক্ত করতে না পারে। সাথে সাথে মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দেয়া উপদেশাবলী দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রচার মাধ্যমকে কাজে লাগানো।
১১. সারা দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর ও সিপাই মিলে ৮৫০ জন লোকবল থাকা সত্ত্বেও অবৈধ মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সিআইডি (Criminal Investigation Department) পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী পুরো দেশে দুই লাখ ট্রাক ড্রাইভার মাদক সেবনে অভ্যস্ত। তারা বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে নিত্য দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রতি ১০-টি দুর্ঘটনার মধ্যে ৬টি হচ্ছে উচ্চ মাত্রায় মাদক সেবনের ফল। এভাবে মাদকাসক্ত ড্রাইভাররা অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে নিয়মিত। অতএব ড্রাইভারদের ড্রাইভিং লাইসেন্সে এ শর্তারোপ করা যে, কোন ড্রাইভার যদি মাদকদ্রব্য সেবন করে আর সেটা শনাক্ত হয় তাহ’লে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল সহ মাদকদ্রব্য আইন অনুযায়ী শাস্তি ভোগ করবে।[17]
মাদকদ্রব্য অপব্যবহারের বিরুদ্ধে দেশে আইন রয়েছে। আইন প্রয়োগে সরকারের যথেষ্ট আন্তরিকতাও আছে। মাদক অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে ২৬ শে জুন পালন করা হচ্ছে। দেশব্যাপী র্যালি, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি এগুলোই যথেষ্ট নয়। মাদকের ব্যাপকতা প্রতিরোধে সরকার ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি প্রয়োজন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক উদ্যোগ, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ এবং মানবিক মূল্যবোধ সহ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন।
মহানবী (ছাঃ) প্রদত্ত মাদক বিরোধী শিক্ষার ফলে তৎকালীন সমাজে মাদক সেবন শূন্যের কোটায় নেমে আসে। তাঁর শিক্ষা পেয়ে ছাহাবীগণও হয়েছিলেন মাদক সেবনের কঠোরবিরোধী। ফলে মাদক উৎপাদন, বিপণন, পরিবহন, সেবন সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যায়। শুধু আরব দেশে নয়, বহির্বিশ্বেও মহানবী (ছাঃ)-এর শিক্ষা সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইংল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জ নিজে মদ পান পরিত্যাগ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্তমান মাদক উৎপাদনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আজ থেকে দেড় হাযার বছর আগে মহানবী (ছাঃ) মাদক বিরোধী যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন তার সূদূরপ্রসারী প্রভাব দুনিয়ার সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে।[18] মূলত মাদকতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা হ’ল, মানুষের মাঝে ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত করা এবং মাদক সেবনের পরকালীন শাস্তি সম্পর্কে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
উপসংহার :
মাদক একটি ভয়ংকর নেশা। এর খোরাকে পরিণত হয়েছে আমাদের দেশের তরুণ ও যুব সমাজ। অথচ এর ভবিষ্যৎ অত্যন্ত ভয়াবহ। মূলতঃ ইসলামী শিক্ষাই মাদকের সর্বনাশা অভিশাপ থেকে আমাদের সমাজকে ও আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারে। অতএব আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাদক উৎখাতে অবদান রাখার তাওফীক্ব দিন-আমীন!
লেখক : ছাত্র, ছানাবিয়াহ ১ম বর্ষ, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
[1]. ইবনু মানযূর, লিসানুল আরব (বৈরূত : দারু ছাদর, ৩য় সংস্করণ ১৪১৪ হিঃ) ৪/২৫৪-৫৫ পৃ.।
[2]. ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ), মাজমূ‘ ফাতাওয়া (দারুল ওয়াফা, ৩য় সংস্করণ ১৪২৬ হিঃ/২০০৫ খ্রিঃ) ৯/৬৬ পৃ.।
[3]. লিসানুল আরব ৪/২৫৫ পৃ.।
[4]. মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ আল-উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল (দারুল ওয়াত্বান, ১৪১৩ হিঃ) ৯/৫৯০ পৃ.।
[5]. আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৩/৬২ পৃ.।
[6]. ছহীহ মুসলিম হা/২০০৩; নাসাঈ হা/৫৫৮৫; ইবনু মাজাহ হা/৩৩৯০।
[7]. ছহীহ মুসলিম হা/১৫৭৯; নাসাঈ হা/৪৬৬৪; আহমাদ হা/২১৯০।
[8]. আবু দাউদ হা/৩৬৭৪; হাকিম হা/২২৩৫; মিশকাত হা/২৭৭৭, হাদীছ ছহীহ।
[9]. আবু দাউদ হা/৩৬৮১; তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩৬৪৫, হাদীছ ছহীহ।
[10]. আবু দাউদ হা/৩৬৮৭; তিরমিযী হা/১৮৬৬, হাদীছ ছহীহ।
[11]. আহমাদ হা/৫৩৭২; মিশকাত হা/৩৬৫৫; তারগীব হা/২৩৬৬, হাদীছ হাসান ।
[12]. সৈয়দ শওকাতুয্যামান, বাংলাদেশে সামাজিক সমস্যা : স্বরূপ ও সমাধান (ঢাকা : বাংলা একাডেমী, ১৯৯৩ খৃঃ), পৃ. ২৬৬।
[13]. আব্দুদ দাইন মুহাম্মাদ ইউনুস, সমাজগঠনে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি (ঢাকা : মুক্তমন প্রকাশন, ১৯৯৮ খৃঃ), পৃ. ১৯।
[14]. ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মাদক ও তামাক, পৃ. ৬২-৬৪।
[15]. মসজিদ সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ (যশোর : বাংলাদেশ মসজিদ মিশন, নভেম্বর ২০০৬), পৃ. ৪০-৪১; মাসিক আত-তাহরীক, ১০ম বর্ষ, ৭ম সংখ্যা, এপ্রিল ২০০৭, পৃ. ২৮।
[16]. মাসিক আত-তাহরীক, ১০ম বর্ষ, ৭ম সংখ্যা, এপ্রিল ২০০৭, পৃ. ২৮-২৯।
[17]. মাসিক আত-তাহরীক, ১০ম বর্ষ, ৮ম সংখ্যা, মে ২০০৭, পৃ. ২৫-২৬।
[18]. স্বাস্থ্য শিক্ষা ও ইসলাম, পৃ. ২০১-২০২।