আরব বিশ্বে গণতন্ত্রের কি হ’ল!
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 1445 বার পঠিত
ভয়াবহ
খাদ্য সংকটের মুখে পড়েছে আফ্রিকার তিন দেশ দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া ও
নাইজেরিয়া। একই পরিস্থিতি যুদ্ধপীড়িত ইয়েমেনেরও। জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্য
বলছে, ওই চার দেশের তিন কোটি মানুষ রয়েছেন ভয়াবহ খাদ্য সংকটে।
দুর্ভিক্ষজনিত মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে এক কোটি মানুষ। যাদের অধিকাংশই
মুসলমান। বিশ্বজুড়ে এই খাদ্য সংকটের কারণ প্রাকৃতিক নয়, মানুষের সৃষ্টি।
একদিকে গৃহযুদ্ধের কারণ ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট। আরেকদিকে মার্কিন আগ্রাসন। দুইয়ে মিলে এই সংকট তৈরী করেছে। আফ্রিকার সোমালিয়া আর মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেনে চলছে মার্কিন আগ্রাসন। নাইজেরিয়া আর দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা ও মার্কিন আগ্রাসন। এর বাইরে রয়েছে খরার প্রকোপ। দুর্ভিক্ষের কারণ হিসেবে খরা আর এল নিনোকেও দায়ী করা হচ্ছে। তবে এই কথিত প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর নেপথ্যেও রয়েছে মানুষের ভূমিকা, শিল্পোন্নত দুনিয়ার কার্বন পোড়ানোর মুনাফাবাজী।
চার দেশের দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি
মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেনে দুই বছরের চলমান গৃহযুদ্ধ থামছে না কোনওভাবেই। মার্কিন নেতৃত্বাধীন সৌদি জোটের বিমান হামলাও অব্যাহত। জাতিসংঘের মতে, দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দেশটি। দুর্ভিক্ষের হুমকিতে রয়েছে দেশটির অন্তত ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। ২১ লাখ শিশুসহ অন্তত ৩৩ লাখ মানুষ ভুগছেন অপুষ্টিতে। ৫ বছরের নিচের ৪ লাখ ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। মোট নাগরিকের ৫৫ শতাংশই ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। যত দিন যাচ্ছে, অবস্থা ততই শোচনীয় হয়ে পড়ছে।
দক্ষিণ সুদানের ইউনিটি স্টেটের ২টি কাউন্টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির সরকার ও জাতিসংঘের তিনটি সংস্থা মিলিতভাবে এ ঘোষণা দেয়। জাতিসংঘ বলছে, দক্ষিণ সুদানে এক লাখ মানুষ খাদ্যাভাবের মধ্যে রয়েছেন। আরও এক লাখ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। জাতিসংঘের মতে, দেশটির ৪০ লাখ লোকের যরূরী খাদ্য, কৃষি ও পুষ্টি সহায়তা প্রয়োজন। যা দেশটির জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ।
নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল সবচেয়ে বেশী মানবিক বিপর্যয়ে রয়েছে। হাযারও মানুষ সেখানে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিতে রয়েছেন। তাদেরও যরূরী সহায়তা প্রয়োজন। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ডিসেম্বর মাসে ৭৫ হাজার শিশু খাদ্যাভাবজনিত মৃত্যুঝুঁকিতে ছিল। নাইজেরিয়া ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আরও ৭০ লাখ মানুষ খাদ্য অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, সমগ্র শাদ হরদ অঞ্চলকে সংকট থেকে উদ্ধার করতে অন্তত ১৫০ কোটি ডলার প্রয়োজন। যার অর্ধেকের বেশিই প্রয়োজন ধুঁকতে থাকা নাইজেরিয়ার জন্য। নয়তো স্রেফ খাদ্যাভাবে মারা যাবেন কয়েক লাখ মানুষ।
আর সোমালিয়া গত ২৫ বছরের মধ্যে টানা তৃতীয়বারের মতো দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ল। সবশেষ ছয় বছর আগে ২০১১ সালের দুর্ভিক্ষে দেশটিতে অন্তত ২ লাখ ৬০ হাযার মানুষ মারা যায়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর হিসাব বলছে, সোমালিয়ার ২ কোটি ৯০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি। পানি সংকটে আছেন প্রায় ৬২ লাখ মানুষ।
দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির কারণে আফ্রিকার ওই তিনটি দেশ ও ইয়ামনে প্রায় দু’কোটি মানুষের মৃত্যু হ’তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ওব্রেইন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে তিনি এমন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।
ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ১০ শতাংশ অর্থ পাওয়া গেছে।
দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির নেপথ্য কারণ
চার দেশের এই ভয়াবহ খাদ্য সংকটের নেপথ্যে প্রকৃতি নয়, রয়েছে মানুষ-সৃষ্ট কারণ। আটলান্টিক কাউন্সিলে আফ্রিকা সেন্টারের প্রধান জে পিটার ফাম বলেন, ‘নাইজেরিয়া, সোমালিয়া ও দক্ষিণ সুদানের ক্ষুধা সংকট আরও বেশি বেদনাদায়ক, কারণ এগুলো মনুষ্যসৃষ্ট। যদিও জলবায়ু পরিবর্তন সোমালিয়া ও নাইজেরিয়ার পরিস্থিতিতে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে’। ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া ও নাইজেরিয়ায় দীর্ঘ লড়াই ও যুদ্ধ পরিস্থিতিকে দুর্ভিক্ষের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
দুর্ভিক্ষপীড়িত সব দেশেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সংশ্লিষ্টতা
ব্যাপক বিপর্যয়ের পরও হর্ন অব আফ্রিকান অঞ্চলে সামরিক অভিযান জোরালো করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলো। গৃহযুদ্ধ ও মার্কিন আগ্রাসনের সম্মিলিত অভিঘাতে ভয়াবহ বিপন্নতায় সেখানকার মানুষ। ২৯ জানুয়ারি নাইরোবী ঘোষণা দেয়, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত দক্ষিণ সুদান সরকারকে সহায়তার জন্য তারা শিগগির সেনা পাঠাবে।
একই বাস্তবতা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনেও। গৃহযুদ্ধে বাড়তি উসকানি তৈরি করেছে মার্কিন অস্ত্র এবং তাদের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের বিমান হামলা। হামলার কারণে দেশটির নাগরিক ছাড়াও পালিয়ে আসা সোমালিয়ানরাও আটকা পড়েছে। এদিকে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানান, এটি তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট। তবে মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায়ীরা ঠিকই বিভিন্ন দেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে।
নাইজেরিয়া ও সোমালিয়ায় চরমপন্থী গ্রুপ বোকো হারাম ও আল-শাবাব পরাজয়ে অনমনীয় তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে এবং এখনও এই উভয় সংগঠনের দখলে অনেক অঞ্চল রয়েছে; যা সহায়তা প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করেছে। পাশাপাশি তাদের দমন করতে রয়েছে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ। ত্রাণ সহায়তা নিয়েও রয়েছে আইনি জটিলতা। আল-শাবাব গোষ্ঠীর কারও হাতে ভুল করে ত্রাণ দিয়ে ফেললেও ত্রাণকর্মীকে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাভোগ করতে হতে পারে। তাই ত্রাণ কার্যক্রম স্বতস্ফূর্ত থাকে না।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, আফ্রিকার ক্রমবর্ধমান দুর্ভিক্ষ সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলবে। নতুন করে অভিবাসীদের মিছিল ইউরোপে ধাবিত হবে। শঙ্কা বাড়বে আরও বেশী মানুষের জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার।
প্রচারের অভাবে নিভৃতে আয়ারল্যান্ডের মুসলমানরা
আয়ারল্যান্ডে মুসলমানদের অনেক ইতিবাচক বিষয় থাকার পরও তারা ভুগছেন মিডিয়ার অভাবে। ক্যাথলিক গির্জার দেশ বলা হয় আয়ারল্যান্ডকে। দেশটিতে দ্রুত বিকাশমান ধর্ম হিসেবে ইতোমধ্যেই ইসলাম জায়গা করে নিয়েছে। আয়ারল্যান্ডে ৫০ হাযারের মতো মুসলমান বসবাস করেন। এটা মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ। তবে মুসলমানদের সংখ্যা ২০২০ সালে এক লাখে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। আয়ারল্যান্ডের প্রায় প্রত্যেক শহরেই মসজিদ ও মক্তব রয়েছে।
আয়ারল্যান্ডের মুসলিম ছাত্রীরা হিজাব পরে স্কুলে যেতে পারে। সেখানে রয়েছে ইসলামী পোশাকের প্রচুর চাহিদা। সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডের লিমেরিক শহরে এক বাংলাদেশী প্রথম ইসলামী পোশাকের দোকান খুলে বেশ নাম কামিয়েছেন। লিমেরিকে প্রায় দুই হাযারের অধিক মুসলমানের বাস। শহরটিতে ৪টি মসজিদ আছে।
বর্তমানে আইরিশ বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের পসন্দের গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের মুসলিম ছাত্র সংগঠনগুলো ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর ‘ইসলামিক অ্যাওয়ারনেস উইক’ পালন করে। আয়ারল্যান্ডের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলমান শিক্ষার্থীদের জন্য ছালাতের ঘর রয়েছে।
আয়ারল্যান্ডে মুসলমানদের এমন অনেক ইতিবাচক বিষয় থাকার পরও তারা ভুগছেন মিডিয়ার অভাবে। সম্প্রতি আইরিশ অভিবাসী কাউন্সিল জানিয়েছে, আয়ারল্যান্ডের মুসলমানদের নিজেকে পরিচয় করানোর জন্য আরও বেশী মিডিয়া প্রয়োজন। কেননা সত্য ও মানবতার ধর্ম ইসলাম প্রচারের জন্য মিডিয়া থাকা একান্ত যরূরী।
আইরিশ অভিবাসী কাউন্সিলের ছাত্রনেতা রানিম সালেহা ছয় বছর ধরে আয়ারল্যান্ডে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, আমরা চাই, ইসলামের আসল বিষয় সম্পর্কে মানুষ জানুক। আর এ জন্যই আমাদের দরকার মিডিয়া।
অনলাইনে দাওয়াত পেয়ে ২১০ জনের ইসলাম গ্রহণ
কুয়েতের জামঈয়্যাতুন নাজাত আল-খায়রিয়াহ-এর ইলেক্ট্রনিক দাওয়াত কমিটির আন্তরিক প্রচেষ্টায় ৪৪টি দেশের ২১০ জন ব্যক্তি ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। উক্ত কমিটির সাথে যুক্ত ড. জামাল আশ-শাত্বী বলেন, আমাদের লক্ষ্য এমন ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যারা ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। এ সংস্থার দাঈরা তাদেরকে ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে অবগত করেন এবং তাদের মনে ইসলাম সম্পর্কে সৃষ্ট সন্দেহ-সংশয় নিরসন করে থাকেন। সূত্র মতে গত বছর ২২৮৪ জন ব্যক্তির সাথে অনলাইনে যোগাযোগ করা হয়। তন্মধ্যে ২১০ জন ব্যক্তি চিন্তা-গবেষণা করে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেন। ড. শাতীর তথ্য মতে দু’বছর পূর্বে ইসলাম অন লাইন সার্ভিস চালু করা হয়। এ বিভাগে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় দক্ষ এবং বিভিন্ন দেশের তাহযীব-তামাদ্দুন ও স্থানীয় ধর্ম সমূহ সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। যাতে ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে তারা তাদের ভাষায় ইসলামকে বুঝাতে পারে (মাসিক মা‘আরিফ, ইউপি, ভারত, মার্চ’১৭, পৃঃ ২২৪; ছিরাতে মুস্তাকীম, বার্মিংহাম, লন্ডন, জানুয়ারী ’১৭)।