খলীফা বা আমীর নিযুক্ত করা কি যরূরী?
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 651 বার পঠিত
প্রশ্ন : আমীর নিযুক্ত করা কি যরূরী এবং এর প্রমাণ কি?
উত্তর : প্রথমে একথা স্মরণ রাখা উচিত যে, সেই দলীলগুলিই গ্রহণযোগ্য এবং শক্তিশালী হয়, যার প্রমাণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈন থেকে পাওয়া যায়। আর কুরআন মাজীদ সে বিষয়ে কথা বলে।
সামনে স্পষ্ট হবে যে, যে ব্যক্তি এই দলীলগুলিকে পেশ করে এবং আমল করে, সে যথাযথভাবে এবং পুরাপুরিভাবে আমল করার সামর্থ্য রাখে না। অথবা তার উপরে আমল করার ব্যাপারে অলসতা এসে যায়। অথবা ঐ কাজটি যে গতিতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম করতেন, সেই গতিতে করতে পারে না। তবে অবশ্যই করে। তার যতটুকু ক্ষমতা আছে, তাতে হিম্মত হারায় না। এখন যদি কেউ ঐ ব্যক্তিকে বলে যে, মিয়াঁ! হয় তুমি ঐ গতিতে আমল করো যে গতিতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) করতেন। অথবা ছেড়ে দাও। তাহ’লে এই ব্যক্তি কঠিন ভুলের মধ্যে আছে। বরং সে পাগল। এমন শক্তি কার আছে যে, ছাহাবীদের মতো হুবহু আমল করবে?
যেমন একজন ব্যক্তি ছালাত আদায় করছে। কিন্তু তার খুশূ-খুযূ ঐরূপ নয়, যেমনটা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছিল। তার ছালাত আদায়ের দলীল কুরআন ও হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত। এখন যদি কোন ব্যক্তি বলে যে, ভাই তোমার কাছে তো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দলীল রয়েছে। কিন্তু তোমার ছালাত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খুশূ-খুযূর মতো নয় কেন?
তাহলে বলুন যে, কারো ছালাত যদি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাতের মতো না হয়, তাহ’লে কি সে ছালাতও আদায় করবে না? না; বরং আমরা এটা বলব যে, আমাদের কাছে দলীল রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাত আদায় করেছেন। আমরাও ঐ দলীল অনুযায়ী ছালাত আদায় করি।
এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, সকল শারঈ মাসআলার স্বরূপ এর উপরেই রয়েছে যে, শরী‘আতে দলীল মওজুদ রয়েছে। কিন্তু আমল করার ক্ষেত্রে কিছু কমবেশী হয়ে থাকে।
ঠিক এভাবেই ইমারত ও খেলাফতের দলীল ঐগুলিই, যেগুলি ছাহাবীদের ইমারত ও খেলাফতের দলীল ছিল। কিন্তু আমাদের ইমারত ও খেলাফত ঐ শক্তি ও ঐ রূহানিয়াতের মতো নয়। এতে আমাদের জন্য কোন নিন্দা নেই। কারণ হল আমাদের ঈমানী শক্তি প্রকৃতিগতভাবেই দুর্বল। যার অনিবার্য ফল এই যে, আমাদের সব আমল ছাহাবী ও তাবেঈদের আমল থেকে অনেক কম। কিন্তু এই দুর্বলতা সত্ত্বেও আমরা ঐ দলীল সমূহ থেকেই দলীল গ্রহণ করি এবং তার উপরে চলেই নিজেদের আমীর ও খলীফা নির্বাচন করি। এই ভূমিকার পর আমি প্রশ্নের জবাবের দিকে আসছি।
ইমারত ও খেলাফত :
ইমারত ও খেলাফতের প্রয়োজন ও গুরুত্ব এত বেশী যে, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মৃত্যু বরণ করেন তখন সর্বপ্রথম ছাহাবায়ে কেরাম চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পরে কোন ব্যক্তি আছেন যিনি এই শরী‘আতের দায়-দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিবেন?
এজন্য দ্রুত আনছার ছাহাবীগণ সা‘দ বিন উবাদাহ (রাঃ)-এর নিকটে বনু সা‘এদায় বৈঠকে মিলিত হন এবং পরামর্শ শুরু করেন। যখন এই সংবাদ আবুবকর ছিদ্দীক ও ওমর ফারূক (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছল, তখন তাঁরা দ্রুত তাদের নিকট গেলেন। আর এখানেই ইমারতের ঝগড়া শুরু হল যে, কে আমীর হবেন? আসলে প্রত্যেক সম্প্রদায় এই কামনা করত যে, আমাদের আমীর আমাদের মধ্য থেকেই হোক। আর তারা অন্যদের নেতৃত্বের ব্যাপারে কবে খুশী হ’ত? ফলে আনছাররা এ কথা বলল যে, একজন আমীর আমাদের হোক এবং একজন আমীর তোমাদের হোক। এতে দ্বন্দ্বও থাকবে না। আনছারদের আমীর আনছারী হোক এবং মুহাজির কুরায়েশদের আমীর কুরায়শী হোক। তখন আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) বলেন যে, এভাবে কখনই হবে না। বরং আমরা হব আমীর এবং তোমরা হবে উযীর। এর জবাবে হুবাব ইবনুল মুনযির বলেন, কখনই নয়। বরং আমাদের একজন আমীর এবং তোমাদের একজন আমীর হোক। তিনি কসম করেন যে, আমরা এটা কখনই মানব না যে, তোমরা আমীর হবে আর আমরা উযীর হয়ে থাকব। এর জবাবে আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) বলেন যে, ‘না, আমরা আমীর হব এবং তোমরা উযীর থাকো। অবশেষে সবাই আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ)-এর হাতে এখানেই বায়‘আত করেন এবং দ্বন্দ্বের অবসান ঘটান। অতঃপর সকলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাফন-দাফনে মনোনিবেশ করেন।
ঘটনাটি ছহীহ বুখারীর ১ম খন্ডের ৫১৮ পৃষ্ঠায় মওজুদ রয়েছে।لَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيلاً ‘যদি আমি কাউকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতাম’ অনুচ্ছেদের অধীনে এবং ‘আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ)-এর মর্যাদা’ অধ্যায়ে (বুখারী হা/৬৮৩০)।
দ্বিতীয় ঘটনা : যখন ওমর ফারূক (রাঃ)-এর মৃত্যু আসন্ন হ’ল, তখন লোকেরা বলল, আপনি কি আপনার পরবর্তী খলীফা কাউকে মনোনীত করবেন না? তখন তিনি বললেন,إِنْ أَسْتَخْلِفْ فَقَدِ اسْتَخْلَفَ مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّى أَبُو بَكْرٍ، وَإِنْ أَتْرُكْ فَقَدْ تَرَكَ مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‘যদি আমি খলীফা মনোনীত করি, তাহলে আমার চেয়ে যিনি শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ আবুবকর তিনি (আমাকে) খলীফা মনোনীত করেছিলেন। আর যদি আমি মনোনীত না করি তাহলে আমার চেয়ে যিনি শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খলীফা মনোনীত করে যাননি’।[1] মূলতঃ আমীর থাকা এতটাই যরূরী যে, আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) নিজের জীবদ্দশাতেই ওমর (রাঃ)-কে খলীফা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। আর এই আকাঙ্ক্ষাই সকলে ওমর ফারূক (রাঃ)-এর কাছে ব্যক্ত করেন যে, আপনিও কাউকে আমীর মনোনীত করে যান। তখন ওমর ফারূক (রাঃ) বলেন, যদি আমি আমীর নিযুক্ত করে যাই তবুও কোন মতানৈক্যের কারণ নেই। এজন্য যে, আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) আমাকে নিযুক্ত করে গিয়েছিলেন। আর যদি নাও করি বরং লোকদের পরামর্শের উপরে ছেড়ে যাই, তবুও মতভেদের কোন কারণ নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর পরে প্রকাশ্যভাবে কাউকে নিযুক্ত করে যাননি। বরং মুসলমানদের পরামর্শের উপরে ছেড়ে দেন।
মোদ্দাকথা, তাঁর পরে ওছমান (রাঃ)-এর খলীফা হওয়ার ঘটনা ঐ বুখারীতেই মওজুদ রয়েছে। আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ (রাঃ)-এর পরামর্শে তাকে খলীফা নির্বাচন করা হয় (বুখারী হা/৩৭০০ ‘ওছমানের বায়‘আত-এর ঘটনা’ অনুচ্ছেদ)। বেশী দলীল বর্ণনার প্রয়োজন নেই। কেননা এটা মুসলমানদের সর্বসম্মত ফৎওয়া ও বিশ্বাস যে, প্রত্যেক যুগে মুসলমানদের আমীরের প্রয়োজন রয়েছে, ছিল এবং থাকবে।
সামনে গিয়ে আল্লামা তাঁর প্রবন্ধে বায়‘আত এবং আমীরের কথা শোনা ও মানার প্রমাণে নিম্নোক্ত হাদীছগুলি উল্লেখ করেছেন :
১. উবাদাহ বিন ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে আহবান জানালেন অতঃপর আমরা তাঁর হাতে এই মর্মে বায়‘আত করলাম যে, আমরা পসন্দে-অপসন্দে, দুঃখে-সুখে এবং আমাদের উপর অন্যকে প্রাধান্য দেয়ার ক্ষেত্রে আমীরের কথা শুনব ও মানব। আর আমরা নেতৃত্ব নিয়ে পরস্পরে ঝগড়া করব না’। তিনি বলেন, তবে যদি তোমরা (আমীরের মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরী দেখতে পাও, যে বিষয়ে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হ’তে প্রমাণ মওজুদ থাকে’।[2]
চিন্তা করো, এই হাদীছে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমার উপর অন্যকে প্রাধান্য দিলেও তুমি তার বায়‘আত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারো না।
২. قَالَ حُذَيْفَةُ بْنُ الْيَمَانِ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّا كُنَّا بِشَرٍّ فَجَاءَ اللهُ بِخَيْرٍ فَنَحْنُ فِيهِ فَهَلْ مِنْ وَرَاءِ هَذَا الْخَيْرِ شَرٌّ قَالَ نَعَمْ. قُلْتُ هَلْ وَرَاءَ ذَلِكَ الشَّرِّ خَيْرٌ قَالَ نَعَمْ. قُلْتُ فَهَلْ وَرَاءَ ذَلِكَ الْخَيْرِ شَرٌّ قَالَ نَعَمْ. قُلْتُ كَيْفَ قَالَ يَكُونُ بَعْدِى أَئِمَّةٌ لاَ يَهْتَدُونَ بِهُدَاىَ وَلاَ يَسْتَنُّونَ بِسُنَّتِى وَسَيَقُومُ فِيهِمْ رِجَالٌ قُلُوبُهُمْ قُلُوبُ الشَّيَاطِيْنِ فِى جُثْمَانِ إِنْسٍ. قَالَ قُلْتُ كَيْفَ أَصْنَعُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنْ أَدْرَكْتُ ذَلِكَ قَالَ تَسْمَعُ وَتُطِيعُ لِلأَمِيرِ وَإِنْ ضُرِبَ ظَهْرُكَ وَأُخِذَ مَالُكَ فَاسْمَعْ وَأَطِعْ- رَوَاهُ مُسْلِمٌ-
২. হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো অকল্যাণের মাঝে ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কল্যাণ দান করলেন। ফলে আমরা তাতেই রয়েছি। এ কল্যাণের পর আবারও কি অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, সেই অকল্যাণের পর কি আবার কল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, সেই কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, সেটা কিভাবে? তিনি বললেন, আমার পরে এমন একদল শাসক হবে, যারা আমার হেদায়াত অনুযায়ী চলবে না এবং আমার সুন্নাত অনুযায়ী আমল করবে না। তাদের মধ্যে এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যাদের হৃদয়গুলো হবে মানুষের দেহে শয়তানের অন্তর। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি সেই অবস্থার সম্মুখীন হই তাহ’লে কি করব? তিনি বললেন, ‘তুমি আমীরের কথা শুনবে এবং তার আনুগত্য করবে। যদিও তোমার পিঠে প্রহার করা হয় এবং তোমার সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া হয়। তবুও তার কথা শুনবে ও তার আনুগত্য করবে’।[3]
এই হাদীছটি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে যে, ইমাম ফাসেক হ’লেও তার আনুগত্য থেকে পৃথক হওয়া যাবে না।...
৩. ‘আওফ বিন মালেক আল-আশজা‘ঈ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম নেতা তারাই যাদেরকে তোমরা ভালবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালবাসে। তারা তোমাদের জন্য দো‘আ করে এবং তোমরাও তাদের জন্য দো‘আ কর। পক্ষান্তরে তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্ট নেতা তারাই যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ দাও এবং তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ দেয়। বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাদেরকে তরবারি দ্বারা প্রতিহত করব না? তিনি বললেন, না। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে ছালাত কায়েম রাখবে। আর যখন তোমাদের শাসকদের মধ্যে কোন অপসন্দনীয় কাজ দেখবে, তখন তোমরা তাদের সে কাজকে অপসন্দ করবে। কিন্তু আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিবে না’।[4]
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে আল্লামা বলেন, হ্যাঁ ছহীহ হাদীছ সমূহে এসেছে যে, বায়‘আত আবশ্যিক ও অপরিহার্য বিষয়। যে বায়‘আত করে না সে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করে এবং সে তার গর্দান থেকে ইসলামের রশিকে দূরে নিক্ষেপ করে। যেমন-
৪. ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘আর যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল এমন অবস্থায় যে, তার গর্দানে (আমীরের আনুগত্যের) বায়‘আত নেই। সে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করল’।[5]
৫. আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ رَأىَ مِنْ أَمِيْرِهِ شَيْئًا يَكْرَهُهُ فَلْيَصْبِرْ فَإِنَّهُ لَيْسَ أَحَدٌ يُفَارِقُ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَيَمُوْتُ إِلاَّ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً- ‘যে ব্যক্তি তার আমীরের মধ্যে এমন কিছু দেখে যা সে অপসন্দ করে, সে যেন ধৈর্য ধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল অতঃপর মৃত্যু বরণ করল, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করল’।[6]
৬. ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَنْ كَرِهَ مِنْ أَمِيرِهِ شَيْئًا فَلْيَصْبِرْ عَلَيْهِ فَإِنَّهُ لَيْسَ أَحَدٌ مِنَ النَّاسِ خَرَجَ مِنَ السُّلْطَانِ شِبْرًا فَمَاتَ عَلَيْهِ إِلاَّ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً-
‘যে ব্যক্তি তার আমীরের কোন কিছু অপসন্দ করবে, সে যেন তাতে ধৈর্য ধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি শাসকের আনুগত্য থেকে এক বিঘত পরিমাণ বের হয়ে গেল এবং ঐ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করল, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করল’।[7]
আল্লাহ আল্লাহ! কত বড় ধমকি এবং কত বড় তাকীদ যে, কোন ব্যক্তি বিনা বায়‘আতে মারা গেলে তার মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু হবে।...
বেরাদারানে ইসলাম!
এ হাদীছগুলি কি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নয়? হে আহলেহাদীছ জামা‘আত! এগুলি কি ছহীহ মুসলিমের হাদীছ নয়? এগুলির মর্যাদা কি ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ, আমীন জোরে বলা ও রাফ‘উল ইয়াদায়েন-এর চেয়ে কম?
মনে রেখ, আমীন ও রাফ‘উল ইয়াদায়েন তো সুন্নাত। আর ইমামের আনুগত্য করা ফরয। আল্লাহ সকল মুসলমানকে বিশেষ করে আহলেহাদীছদেরকে তাওফীক দিন!
ইমামের আনুগত্য আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য এবং তাঁর অবাধ্যতা আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ)-এর অবাধ্যতার শামিল :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَنْ أَطَاعَنِى فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمَنْ أَطَاعَ أَمِيرِى فَقَدْ أَطَاعَنِى وَمَنْ عَصَى أَمِيرِى فَقَدْ عَصَانِى- مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ-
‘যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। যে আমার আমীরের আনুগত্য করল, সে আমার আনুগত্য করল। আর যে আমার আমীরের অবাধ্যতা করল, সে আমার অবাধ্যতা করল’।[8] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেন, ‘যদি তোমাদের উপর একজন নাক-কান কাটা কৃষ্ণকায় গোলামকেও আমীর নিযুক্ত করা হয়, যিনি তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী পরিচালনা করেন, তোমরা তার কথা শোন ও মান্য কর’।[9] এ ব্যাপারে ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে বহু হাদীছ এসেছে। কিন্তু আমি কয়েকটি বর্ণনা করলাম। যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি সব বিষয়ের দু’একটি হাদীছ মনে রাখে।
আল্লাহর অবাধ্যতায় আনুগত্য করবে না :
আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ إِلاَّ أَنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍ فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ- مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ-
‘প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উপর পসন্দনীয় ও অপসন্দনীয় সব বিষয়ে (নেতার আদেশ) শ্রবণ করা ও তার আনুগত্য করা অপরিহার্য। যতক্ষণ না আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ দেয়া হয়। যখন আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ দেয়া হবে, তখন আমীরের কথা শ্রবণ ও তার কোন আনুগত্য নেই’।[10]
আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ طَاعَةَ فِى مَعْصِيَةٍ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوف ‘আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবল সৎকর্মে’।[11]
দুর্বল ব্যক্তি কি ইমাম হ’তে পারে?
বর্তমানে এ প্রশ্নটাও ঘুরপাক খাচ্ছে যে, যে ইমাম ব্যভিচারীকে পাথর মারতে পারে না এবং চোরের হাত কাটতে পারে না, সে ব্যক্তি ইমাম হ’তে পারে না। এ ব্যাপারে ত্বাবারাণীর একটি হাদীছ তারা পেশ করে থাকেন যে, اَلْإِمَامُ الضَّعِيْفُ مَلْعُوْنٌ ‘দুর্বল ইমাম অভিশপ্ত’।[12] স্মরণ রাখা উচিত যে, এই হাদীছটি বিশুদ্ধ সনদে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে প্রমাণিত নয়।... তাছাড়া এ হাদীছটি বাস্তবতারও পরিপন্থী।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ১৩ বছর মক্কায় ছিলেন। অবশেষে তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়। তিনি অনেক দুর্বল ছিলেন। অবস্থা অত্যন্ত নাযুক ছিল। হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ যার ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন,إِنِّيْ جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا ‘আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করব’ (বাক্বারাহ ২/১২৪)। অবশেষে তিনিও জন্মভূমিকে বিদায় জানান (ছাফ্ফাত ৩৭/৯৯)। হযরত লূত (আঃ)-এর নিকটে যখন তাঁর বদমাশ সম্প্রদায় শয়তানী করার জন্য আসে, সে সময় তাঁর বাড়ীতে ফেরেশতারা মেহমান ছিলেন। লূত (আঃ) তখন আফসোস করে বলেন, لَوْ أَنَّ لِي بِكُمْ قُوَّةً أَوْ آوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ ‘হায়! যদি তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোন শক্তি থাকত অথবা আমি যদি কোন দৃঢ় স্তম্ভের আশ্রয় পেতাম!’ (হূদ ১১/৮০)। একইভাবে নূহ (আঃ) নিজের দুর্বলতা স্বীকার করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, فَدَعَا رَبَّهُ أَنِّي مَغْلُوبٌ فَانْتَصِرْ ‘অতঃপর সে তার পালনকর্তাকে আহবান করল, হে প্রভু! আমি পরাজিত। অতএব তুমি ওদের থেকে প্রতিশোধ নাও’ (ক্বামার ৫৪/১০)।
উপরোক্ত ঘটনাসমূহের উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, অধিকাংশ নবীই দুর্বল ছিলেন এবং মুকাবিলা করতে পারেননি। তাহ’লে কি এঁরা সবাই অভিশপ্ত ছিলেন? আস্তাগফিরুল্লাহ! আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।...
এজন্য সত্য-সত্যই বলা হয়,
نيم ملاّ خطرۂ ايمان + نيم حكيم خطرۂ جان
‘আধা মৌলভী ঈমানের জন্য বিপদ। আর হাতুড়ে ডাক্তার জীবনের জন্য বিপদ’। বর্তমানের অবস্থা এরকমই।
যদি ইমাম না থাকে তাহ’লে কি করবে?
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُوْنَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْخَيْرِ، وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنِ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِىْ فَقُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنَّا كُنَّا فِىْ جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللهُ بِهَذَا الْخَيْرِ، فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ: نَعَمْ. قُلْتُ: وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، وَفِيْهِ دَخَنٌ؟ قُلْتُ: وَمَا دَخَنُهُ؟ قَالَ: قَوْمٌ يَهْدُوْنَ بِغَيْرِ هَدْيِيْ، تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ. قُلْتُ: فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ: نَعَمْ، دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ، مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوْهُ فِيْهَا. قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! صِفْهُمْ لَنَا. قَالَ: هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا، وَيَتَكَلَّمُوْنَ بِأَلْسِنَتِنَا. قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِىْ إِنْ أَدْرَكَنِىْ ذَلِكَ؟ قَالَ: تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِيْنَ وَإِمَامَهُمْ. قُلْتُ : فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلاَ إِمَامٌ؟ قَالَ: فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا، وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ، حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ، وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ- مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ-
হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে কল্যাণ বিষয়ে জিজ্ঞেস করত, আর আমি তাঁকে অকল্যাণ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম, অমঙ্গল আমাকে পেয়ে বসার ভয়ে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো অজ্ঞতা ও অকল্যাণের মধ্যে ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমাদের এ কল্যাণ দান করেছেন। এ কল্যাণের পর আবারও কি অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, সেই অকল্যাণের পর কি আবার কল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে তার মধ্যে মন্দ মিশ্রিত থাকবে। আমি বললাম, তার মন্দটা কি? তিনি বললেন, তারা এমন এক সম্প্রদায় হবে, যারা আমার দেখানো পথ ব্যতীত অন্য পথে চলবে। তাদের কাজে ভাল ও মন্দ দু’টিই থাকবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন জাহান্নামের দরজায় দাঁড়ানো কিছু দাঈর আবির্ভাব ঘটবে। যে ব্যক্তি তাদের আহবানে সাড়া দিবে তারা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের কাছে তাদের পরিচয় বলুন। তিনি বললেন, তারা আমাদেরই সম্প্রদায়ভুক্ত হবে এবং আমাদের ভাষাতেই কথা বলবে। আমি বললাম, যদি আমি এমন অবস্থার সম্মুখীন হই তাহ’লে আপনি আমাকে কি করার নির্দেশ দিচ্ছেন? তিনি বললেন, তুমি মুসলমানদের জামা‘আত ও তাদের ইমামকে অাঁকড়ে ধরবে। আমি বললাম, যদি মুসলমানদের কোন জামা‘আত ও ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, ‘সকল দল-উপদল ত্যাগ করবে। এমনকি মৃত্যু অবধি যদি গাছের শিকড় কামড়িয়ে পড়ে থাকতে হয় তবুও তাই করবে’।[13]
এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হুযায়ফা (রাঃ)-কে যেন বললেন যে, যদি আমীর ও মুসলমানদের জামা‘আত থাকে, তাহ’লে তাকে অাঁকড়ে ধরো। নতুবা জঙ্গলে গিয়ে বাস করো। সেখানেই থাকো এবং গাছের ছাল-পাতা খাও। যতক্ষণ না মৃত্যু এসে যায়।
আমীরের কাজ :
কম বুঝের অধিকারী কিছু লোক এটা বুঝে রেখেছেন যে, যদি আমীর যুদ্ধ-জিহাদ না করেন, তাহ’লে তিনি আমীরই নন। আরإِنَّمَا الْإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ ‘ইমাম হ’লেন ঢালস্বরূপ। তাঁর পিছনে থেকে যুদ্ধ করা হয়’[14] হাদীছটি পেশ করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে জামা‘আত থেকে বাধা দেন যে, মিয়াঁ! ইনি কেমন ইমাম যিনি জিহাদ করেন না? আমাদের এমন ইমামের কি প্রয়োজন, যিনি যুদ্ধ করেন না?
আসলে ..তারা এটা বুঝে রেখেছেন যে, ইমামকে মেনে নেয়ার শর্ত হ’ল, তিনি জিহাদ করবেন এবং তার কাজ দেখে তারপর তাঁকে মেনে নেয়া হবে। এ কথা এমন ধোঁকাবাজি ও বাস্তবতা বিবর্জিত যে, ইলমে হাদীছ ও ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে সামান্য জানা ব্যক্তিও বুঝতে পারেন যে, খলীফাগণ কি নিযুক্ত হয়েই লড়াই করতেন? (কখনও নয়)। লোকজন কি তাদের ব্যাপারে আপত্তি করত যে, প্রথমে যুদ্ধ-জিহাদ করো। তারপর আমরা তোমার হাতে বায়‘আত করব। কখনই নয়। বরং প্রথমে বায়‘আত করত। অতঃপর যখন নির্দেশ আসত এবং পরিস্থিতি ও সময় তৈরী হ’ত, তখন যুদ্ধও করত।
তারা কি জানেন না যে, যেদিন আবুবকর ছিদ্দীক, ওমর ফারূক ও অন্যান্য খলীফাগণকে আমীর নিযুক্ত করা হয়, তখন কেউ কি এ শর্ত করেছিল যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা জিহাদ না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আপনাদেরকে মানব না। কোন একজনও তো এমন আপত্তি করেননি।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মাক্কী জীবন কি ঐ সকল আলেমের সামনে নেই? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কি তখন ইমাম ছিলেন না? (অবশ্যই ছিলেন)। তাহ’লে কেন তিনি ১৩ বছর যুদ্ধ করেননি?
এসো আমি বলছি :
إِنَّمَا الْإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ ‘ইমাম ঢাল স্বরূপ’ এর মর্মার্থ কি?।[15] এর অর্থ যেভাবে ঢালের নীচে থেকে মানুষ যুদ্ধ করে, তদ্রূপ ইমামের অধীনে থেকে যুদ্ধ করা হয়। ব্যস, এতটুকুই।...
কিন্তু এখানে তো তোমাদের জান কবয হয়ে যায় :
যখন যুদ্ধ ও জিহাদের নাম আসে, তখন তোমাদের জ্বর আসে। আজ বলো তোমরা কোন মুখে কাদিয়ানীদেরকে বলো যে, তোমরা জিহাদ মানসূখ বা রহিত করে দিয়েছ। তোমরা কাফের হয়ে গেছ। কিন্তু তোমরাও তো সেটা রহিত করে দিয়েছ। তারা বিশ্বাসগতভাবে রহিত করে দিয়েছে আর তোমরা কর্মগতভাবে মিটিয়ে দিয়েছ...। যদি তোমরা এটা বলো যে, আমরা তো জিহাদের প্রবক্তা, অস্বীকারকারী নই। আর কাদিয়ানীরা তো অস্বীকারকারী।
তাহ’লে শোন :
যদি কোন বেছালাতীকে বলা হয়, ভাই ছালাত আদায় করো। এটা আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ। তাহ’লে সে কখনো অস্বীকার করে না। বরং কেউ তখন বলে, হুযুর কাপড় পরিষ্কার করে পড়ব। কেউ বলে, মাওলানা ছাহেব জুম‘আর দিন পড়ব এবং শুরু করব। কিন্তু অস্বীকার করে না। তাহ’লে তোমরা সব মৌলভী তাকে কাফের বলো।
সে কি অস্বীকার করেছে? সে কি অস্বীকারকারী? (কখনোই নয়)। শুধু আমল না করার কারণেই তোমরা তাকে কাফের বলেছ। তাহ’লে কি কারণ রয়েছে যে, তোমরা মুসলমান আর বেছালাতী কাফের। (আমীর না মানার ব্যাপারে) তোমাদের কর্মগত অস্বীকারও তো বেছালাতীর মতোই পাওয়া গেল। সুতরাং যে ফৎওয়া বেছালাতীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সেই ফৎওয়া তোমাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কেননা ইসলাম তো সমতারই নাম।
স্মরণ রাখো :
হে মুসলমানগণ! যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা একজন আমীরকে মেনে নিবে, ততক্ষণ তোমরা লাঞ্ছনার জীবন যাপন করবে। যেদিন তোমরা মেনে নিতে পারবে, ইনশাআল্লাহ সেদিন তোমরা নিজেদের জীবনের স্বাদ পাবে। এসো সবাই মিলে এবং নিজেদের সকল শক্তিকে একত্রিত করে গোলামীর অভিশাপকে মিটিয়ে দেই। আমীন!
‘ইসলাম হয় না জামা‘আত ছাড়া,
জামা‘আত হয় না আমীর ছাড়া;
ইমারত হয় না আনুগত্য ছাড়া’ (ওমর (রাঃ)।
[হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত ‘শারঈ ইমারত’ বই থেকে সংকলিত, পৃষ্ঠা ২১-৩৩]
[1]. বুখারী হা/৭২১৮ ‘আহকাম’ অধ্যায়, ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে।
[2]. মুসলিম হা/১৭০৯; বুখারী হা/৭০৫৫-৫৬; মিশকাত হা/৩৬৬৬।
[3]. মুসলিম হা/১৮৪৭ (৫২); ছহীহাহ হা/২৭৩৯; মিশকাত হা/৫৩৮২।
[4]. মুসলিম ২/১২৯ পৃ. হা/১৮৫৫; মিশকাত হা/৩৬৭০।
[5]. মুসলিম হা/১৮৫১; মিশকাত হা/৩৬৭৪। অত্র হাদীছের প্রথমাংশে বলা হয়েছে,مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِىَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ حُجَّةَ لَهُ ‘যে ব্যক্তি আনুগত্যের হাত ছিনিয়ে নিল। সে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে, তার কোন প্রমাণ (অর্থাৎ বাঁচার জন্য কোন ওযর) থাকবে না’। -(সম্পাদক)।
[6]. বুখারী হা/৭০৫৪; মুসলিম হা/১৮৪৯ (৫৫); মিশকাত হা/৩৬৬৮।
[7]. বুখারী হা/৭০৫৩; মুসলিম হা/১৮৪৯ (৫৬)।
[8]. মুসলিম হা/১৮৩৫; বুখারী হা/২৯৫৭, ৭১৩৭; মিশকাত হা/৩৬৬১।
[9]. মুসলিম হা/১২৯৮, ১৮৩৮; মিশকাত হা/৩৬৬২।
[10]. বুখারী হা/৭১৪৪; মুসলিম হা/১৮৩৯; মিশকাত হা/৩৬৬৪।
[11]. বুখারী হা/৭২৫৭; মুসলিম হা/১৮৪০; মিশকাত হা/৩৬৬৫।
[12]. মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৯০৫৯; যঈফুল জামে‘ হা/২২৯২, সনদ যঈফ।
[13]. বুখারী হা/৩৬০৬; মুসলিম হা/১৮৪৭ (৫১); মিশকাত হা/৫৩৮২।
এটা হ’ল ধমকিমূলক বক্তব্য। কেননা ক্বিয়ামত পর্যন্ত হকপন্থী জামা‘আত থাকবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِىَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَلِكَ ‘আমার উম্মতের মধ্যে ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি দল হক-এর উপরে বিজয়ী থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না’ (মুসলিম হা/১৯২০;)। নিঃসন্দেহে সে দলটিই হ’ল ফিরক্বা নাজিয়াহ বা মুক্তিপ্রাপ্ত দল (তিরমিযী হা/২৬৪১; মিশকাত হা/১৭১)। তাদেরকে খুঁজে নিয়ে তাদের সাথেই থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তওবা ৯/১১৯)।-(সম্পাদক)।
[14]. বুখারী হা/২৯৫৭; মুসলিম হা/১৮৪১; মিশকাত হা/৩৬৬১।
[15]. বুখারী হা/২৯৫৭; মুসলিম হা/১৮৪১; মিশকাত হা/৩৬৬১।