আহলেহাদীছ-এর রাজনীতি : ইমারত ও খেলাফত

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 1478 বার পঠিত

[অধ্যাপক হাফেয আব্দুল্লাহ বাহাওয়ালপুরী পাকিস্তানের একজন খ্যাতিমান আলেম, মাসলাকে আহলেহাদীছ-এর অনেক বড় দাঈ ও মুবাল্লিগ ছিলেনতিনি ১৯২৪ সালের দিকে পূর্ব পাঞ্জাবের আম্বালা যেলার রোপাড় তহসিলের ডুগরী নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেনতাঁর পিতা মৌলভী নূর মুহাম্মাদ অত্যন্ত সৎ ও আল্লাহভীরু ব্যক্তি ছিলেনদেশ বিভাগের অনেক আগেই বাহাওয়ালপুরী জামেআ তালীমুল ইসলাম (মামূঁকাঞ্জন)-এর খ্যাতিমান শিক্ষকদের নিকট থেকে ইলমে দ্বীন হাছিল করেনহাফেয আব্দুল্লাহ রোপড়ী এবং মাওলানা মুহাম্মাদ হুসাইন রোপড়ী তাঁর বিশিষ্ট উস্তাদগণের অন্যতম ছিলেনআলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি গ্রাজুয়েশন করেনপরবর্তীতে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামিক স্টাডিজে এম.এ. করেনতিনি ইংরেজী, আরবী, উর্দূ ও ফার্সী ভাষায় দক্ষ ছিলেনদেশ বিভাগের সময় তিনি ৯০ হাযার লোকের বিশাল কাফেলা নিয়ে পাকিস্তানে হিজরত করেনএ সময় তিনি একশ গ্রামের আমীর ছিলেন১৯৫৩ সালে তিনি বাহাওয়ালপুরের এস.ই. কলেজে লেকচারার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেনতিনি হিজরত করে পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে এসে মুহাজির কলোনীতে তার বাড়ীর একটা অংশকে মসজিদের জন্য ওয়াকফ করে দেন এবং সেখানে জুমআ ও জামাআত কায়েম করেনএভাবে তিনি যেখানেই গেছেন সেখানেই আহলেহাদীছ মসজিদ তৈরী করেছেন এবং জামাআত কায়েম করেছেনতিনি মন-মেযাজে, মেধা-মননে, চিন্তা-চেতনায়, গোপনে-প্রকাশ্যে একজন সাচ্চা আহলেহাদীছ ছিলেনবাহাওয়ালপুর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা সমূহে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রচার ও প্রসারে তিনি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেনতাঁর দাওয়াতে হাযার হাযার মানুষ সঠিক পথের দিশা পেয়েছেবহু মানুষ তাক্বলীদের বন্ধন ছিন্ন করে কুরআন ও হাদীছের অনুসারী হয়েছেপাকিস্তানের প্রফেসর যাফর ইকবাল সালাফী তাঁর দাওয়াতেই ব্রেলভী ও নকশবন্দী তরীকা ছেড়ে আহলেহাদীছ হনআহলেহাদীছ মাসলাকের প্রচার-প্রসারের জন্য তিনি সরকারী কলেজের প্রিন্সিপ্যাল হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ অবলীলায় হাতছাড়া করেন

অত্যন্ত সাধাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত হাফেয আব্দুল্লাহ বাহাওয়ালপুরী ১৪১১ হিজরীর ৬ই শাওয়াল মোতাবেক ১৯৯১ সালের ২১শে এপ্রিল রবিবার দুপুর ১২-টার দিকে ৬৭ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেনপাকিস্তানের খ্যাতিমান আহলেহাদীছ আলেম ও মুহাক্কিক মাওলানা এরশাদুল হক আছারী তাঁর জানাযার ছালাতে ইমামতি করেনবহু মানুষ তাঁর জানাযায় অংশগ্রহণ করেনবাহাওয়ালপুরে তাঁকে দাফন করা হয়তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৫০টিতন্মধ্যে তাক্বলীদ কে খওফনাক নাতায়েজ, আহলেহাদীছ কে লিয়ে দাওয়াতে ফিকর ওয়া আমল, হাম নামায মে রাফঊল ইয়াদায়েন কিঁউ করতে হ্যাঁয়, খুতবাতে বাহাওয়ালপুরী (৫ খন্ড), রাসাইলে বাহাওয়ালপুরী অন্যতম {প্রফেসর হাফেয আব্দুল্লাহ বাহাওয়ালপুরী, খুত্ববাতে বাহাওয়ালপুরী (ফায়ছালাবাদ, পাকিস্তান : মাকতাবায়ে ইসলামিয়াহ, ৩য় সংস্করণ, সেপ্টেম্বর ১৯৯৭), ১২-৩০ পৃ.}]

ইসলামী সমাজে আমীর থাকা দ্বীনের ওয়াজিব বিষয় সমূহের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,

يَجِبُ أَنْ يُعْرَفَ أَنَّ وِلاَيَةَ أَمْرِ النَّاسِ مِنْ أَعْظَمِ وَاجِبَاتِ الدِّينِ، بَلْ لاَ قِيَامَ لِلدِّيْنِ وَلاَ لِلدُّنْيَا إِلاَّ بِهَا، فَإِنَّ بَنِي آدَمَ لاَ تَتِمُّ مَصْلَحَتُهُمْ إلاَّ بِالْاِجْتِمَاعِ لِحَاجَةِ بَعْضِهِمْ إلَى بَعْضٍ وَلَا بُدَّ لَهُمْ عِنْدَ الِاجْتِمَاعِ مِنْ رَأْسٍ حَتَّى قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إذَا خَرَجَ ثَلاَثَةٌ فِي سَفَرٍ فَلْيُؤَمِّرُوا أَحَدَهُمْ- وَقَالَ : لاَ يَحِلُّ لِثَلاَثَةٍ يَكُونُونَ بِفَلاَةِ مِنْ الْأَرْضِ إلاَّ أَمَّرُوا عَلَيْهِمْ أَحَدَهُمْ- فَأَوْجَبَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَأْمِيرَ الْوَاحِدِ فِي الِاجْتِمَاعِ الْقَلِيلِ الْعَارِضِ فِي السَّفَرِ تَنْبِيهًا بِذَلِكَ عَلَى سَائِرِ أَنْوَاعِ الِاجْتِمَاعِ-  

‘এটি জেনে রাখা ওয়াজিব যে, আমীর নির্ধারণ করা দ্বীনের বড় ওয়াজিব সমূহের অন্যতম। বরং ইমারত ছাড়া দ্বীন ও দুনিয়ার কোন অস্তিত্বই থাকে না। কেননা মানব সম্প্রদায় তাদের পরস্পরের প্রয়োজন সমূহ পূর্ণ করতে পারে না, সমাজ ব্যতীত। আর অবশ্যই সমাজের জন্য একজন নেতা প্রয়োজন। সেকারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের তিনজন যখন সফরে বের হবে, তখন তাদের মধ্যে একজনকে যেন নেতা নির্বাচন করে’ (আবুদাঊদ হা/২৬০৮)। তিনি আরও বলেন, ‘কোন তিনজন ব্যক্তির জন্যেও কোন নির্জন ভূমিতে অবস্থান করা হালাল নয় তাদের মধ্যে একজনকে ‘আমীর’ নিযুক্ত না করা পর্যন্ত’ (আহমাদ হা/৬৬৪৭)। সফরের সাময়িক ও অল্প সংখ্যক সাথীদের মধ্যে একজনকে নেতা নির্বাচনের আদেশ দানের মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ) সমাজের অন্য সকল ক্ষেত্রে নেতা নির্বাচন ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে উম্মতকে তাকীদ করেছেন।[1] 

আর ইক্বামতে দ্বীন ব্যতীত মুসলমান মুসলমান নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلَى شَيْءٍ حَتَّى تُقِيمُوا التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ- (المائدة 68)-

‘তুমি বলে দাও, হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা কোন কিছুর উপরেই প্রতিষ্ঠিত নও, যে পর্যন্ত না তোমরা তাওরাত, ইনজীল ও যে কিতাব (কুরআন) তোমাদের প্রভুর পক্ষ হ’তে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, তা কায়েম করবে’ (মায়েদাহ ৫/৬৮)। অর্থাৎ তোমাদের কোন দ্বীন ঈমান নয়, যতক্ষণ না তোমরা দ্বীন কায়েম করবে।

মানুষ স্বভাবগতভাবে সামাজিক জীব। সমাজ ছাড়া তার জীবন যাপন করা কঠিন। আর মানুষের সংঘবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমেই সমাজ গড়ে ওঠে। যেখানেই কিছু মানুষ একত্রিত হবে, সেখানে তাদের একজনের আরেকজনের নিকট প্রয়োজন পড়বে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে। যার জন্য ইমারতের নিয়ম-নীতি যরূরী। এজন্যই তিনজন ব্যক্তি যখন সফরে থাকবে তখনও তাদের মধ্যে আমীর নির্ধারণের জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন।

বরং মুসনাদে আহমাদে তো এ পর্যন্ত বলা হয়েছে যে, ‘কোন তিনজন ব্যক্তির জন্যেও কোন নির্জন ভূমিতে অবস্থান করা হালাল নয় তাদের মধ্যে একজনকে ‘আমীর’ নিযুক্ত না করা পর্যন্ত’ (আহমাদ হা/৬৬৪৭)। অর্থাৎ জঙ্গলে ও সফরেও তিনজন ব্যক্তির আমীর বিহীন থাকা নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর তিনজন ব্যক্তির মধ্য থেকেও একজনকে আমীর নির্ধারণ করাকে ওয়াজিব আখ্যা দেয়া প্রমাণ করে যে, (সফরে হৌক বা মুক্বীম অবস্থায় হৌক) যেখানেই কিছু মুসলমান থাকবে, সেখানেই তারা অবশ্যই তাদের জন্য একজনকে ‘আমীর’ নির্ধারণ করবে। সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ যেটি দ্বীনের অন্যতম ওয়াজিব বিষয় সমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, সেটাও আমীর ব্যতীত হতে পারে না। জিহাদ যেটা ইসলামের রূহ বা প্রাণ, এটাও আমীর ব্যতীত সম্ভব নয়। মোটকথা আমীর মুসলিম সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গআমীর ব্যতীত সঠিক ইসলামী সমাজ কায়েমই হতে পারে নাযে জামাআতে আমীর নেই সেই জামাআতের উদাহরণ হল ঐ লাশের মতো যার মাথা নেইমাথা ছাড়া যেমন দেহ থাকে, সেরূপই অবস্থা আমীর বিহীন জামাআতেরইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী তো মুসলমানদের একদিনও আমীর বিহীন জীবন অতিবাহিত করা উচিত নয়

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যু হ’লে সর্বাগ্রে খলীফা নির্বাচন করা হয়। এরপর অন্য কাজ হয়। এমনকি তাঁর কাফন-দাফনও হযরত আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পরে হয়। এদিকে ছাহাবীদের যারা আমাদের পূর্বসূরী ও প্রথম আহলেহাদীছ তাদের অবস্থা এই যে, তাঁরা আমীর বিহীন একটি রাতও অতিবাহিত করতেন নাঅন্যদিকে আমাদের অবস্থা এই যে, আমরা আমীর ছাড়াই সারা জীবন অতিবাহিত করছি এজন্যই তো বলা হয়, আহলেহাদীছ তো ছাহাবীগণ ছিলেন। যাদের প্রত্যেকটা আমল হাদীছ অনুযায়ী ছিল। যাদের নিকটে ইমারতের নিয়ম-নীতি এত যরূরী ছিল যে, আমীর ব্যতীত একদিন অতিবাহিত করাকে তারা হারাম মনে করতেন। এজন্য আমরা যদি আহলেহাদীছ হ’তে চাই, তাহ’লে আমাদেরকেও ছাহাবীগণের আদর্শের উপর চলে যেখানেই আমরা থাকি দ্রুত আমাদের আমীর নির্ধারণ করা উচিত। যাতে আমাদের জীবন হারাম না হয়ে যায় এবং আমীরের অধীনে জীবন অতিবাহিত হয়। যেমনটা শরী‘আতের নির্দেশ। 

যেমন আমীর নির্ধারণ করা ফরয এবং আমীর ব্যতীত কোন জামা‘আতী যিন্দেগী নেই। তেমনি আমীরের আনুগত্য করা ফরয। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অত্যন্ত তাকীদ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করল, সে আমার আনুগত্য করল। আর যে আমীরের অবাধ্যতা করল, সে আমার অবাধ্যতা করল’।[2] তিনি আমীরের আনুগত্যকে নিজের আনুগত্য এবং আমীরের অবাধ্যতাকে নিজের অবাধ্যতা বলে অভিহিত করেছেন (মুসলিম হা/১৮৩৫)। তিনি বলেছেন, ‘যদি তোমাদের উপর একজন নাক-কান কাটা কৃষ্ণকায় গোলামকেও আমীর নিযুক্ত করা হয়, যিনি তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী পরিচালনা করেন, তোমরা তার কথা শোন ও মান্য কর’ (মুসলিম হা/১২৯৮)

তিনি আরও বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উপর পসন্দনীয় ও অপসন্দনীয় সব বিষয়ে (নেতার আদেশ) শ্রবণ করা ও তার আনুগত্য করা অপরিহার্য। যতক্ষণ না আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ দেয়া হয়। যখন আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ দেয়া হবে, তখন আমীরের কথা শ্রবণ ও তার কোন আনুগত্য নেই’ (বুখারী হা/৭১৪৪)

আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবল সৎকর্মে’।[3] নাওয়াস বিন সাম‘আন (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لاَ طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِى مَعْصِيَةِ الخَالِقِِ ‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির প্রতি কোন আনুগত্য নেই’।[4]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমীরের আনুগত্যের উপর জোর দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার আমীরের মধ্যে এমন কিছু দেখে যা সে অপসন্দ করে, তখন সে যেন ধৈর্য ধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল অতঃপর মৃত্যু বরণ করল, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করল’।[5]

তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি (আমীরের) আনুগত্য হ’তে বেরিয়ে যায় ও জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, অতঃপর মারা যায়, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করে’।[6]

আমীরের আনুগত্য এত যরূরী যে, তিনি বলেছেন,أَلاَ مَنْ وَلِىَ عَلَيْهِ وَالٍ، فَرَآهُ يَأْتِى شَيْئًا مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ فَلْيَكْرَهْ مَا يَأْتِى مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ، وَلاَ يَنْزِعَنَّ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ- ‘সাবধান! কারো উপর যদি কোন শাসক নিযুক্ত হয়। অতঃপর সে যদি শাসককে আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কোন কাজ করতে দেখে, তখন সে যেন তার আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজকে ঘৃণা করে এবং অবশ্যই আনুগত্যের হাত গুটিয়ে না নেয়’।[7] এর দ্বারা প্রমাণিত হ’ল যে, আমীর যদি খারাপও হয় তবুও প্রত্যেক নেকীর কাজে তার নির্দেশ মানতে হবে। অবশ্যই তার গোনাহকে খারাপ জানতে হবে এবং গোনাহের কাজ সমূহে তার আনুগত্য করা যাবে না। এছাড়া তার অন্য সব নির্দেশ মেনে নিতে হবে।

আফসোস তো এই যে, গণতন্ত্রপন্থী আহলেহাদীছরাও নিজেদের সংগঠনে সভাপতিকে আমীরের নাম দিয়েছেযেটা সরাসরি ধোঁকাআসলে সে আমীর হয় নাকোথায় শারঈ সংগঠনের আমীর আর কোথায় গণতন্ত্রের সভাপতিকোথায় আল্লাহ প্রদত্ত ইমারত আর কোথায় দুনিয়াবী সভাপতি শারঈ সংগঠনের আমীরের আনুগত্যকে তো কুরআন মাজীদও ফরয আখ্যা দেয়। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের আনুগত্য কর’ (নিসা ৪/৫৯)। কিন্তু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সভাপতির আনুগত্যকে স্বয়ং গণতন্ত্র এবং তার সভাপতি যরূরী আখ্যা দেয় নাগণতন্ত্রের সভাপতির সম্পর্ক স্রেফ দল বা রাজনীতির সাথে হয়তিনি শুধু রাজনীতির ময়দানেই আমীর হনজীবনের অন্যান্য দিক ও বিভাগের সাথে তার কোন সম্পর্ক থাকে নাকিন্তু শারঈ আমীর পুরা জীবনের তত্ত্বাবধায়ক হন তার জন্য ফরয হ’ল, ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী নিজের জামা‘আতের এমন চরিত্র গড়ে তোলা, যার মাধ্যমে তাদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ই ঠিক হয়ে যায়।

গণতান্ত্রিক নিয়মে প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাসম্পন্ন হন না। কেননা তার দলের সকল সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসেন। ফলে তারা প্রেসিডেন্টের অনুগত হন না। বরং তারা সর্বদা প্রেসিডেন্টের জন্য মাথাব্যথা হয়ে থাকেন। কারণ সকল ক্ষমতা সেক্রেটারী অথবা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকে। প্রেসিডেন্ট বেচারা তো একজন অক্ষম সদস্যের মতো হয়ে থাকেন।

পক্ষান্তরে শারঈ আমীর সম্পূর্ণরূপে নিজেই কর্তৃত্বশীল হনতিনি পরামর্শ করে যাকে ইচ্ছা পদ দেনএ ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকেন কারো অনুগত হন না। হযরত আবুবকর ছিদ্দীক ও হযরত ওমর (রাঃ) খলীফা হ’লে কেউ তাদের সেক্রেটারী বা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। তারা যাকে ইচ্ছা নেতা বানাতেন। যাকে ইচ্ছা সরিয়ে দিতেন। শারঈ আমীরের পরে কারো কোন মতামত থাকত না। সব পদাধিকারী তার নিয়োগপ্রাপ্ত এবং তার অনুসারী হয়। এজন্য আহলেহাদীছদের বর্তমান আমীরদেরকে শারঈ আমীর বলতে পারি না। আর না তাদের আনুগত্য ফরয। কেননা তারা কুফরী গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অধীনে আমীর হয়েছেন। তাদের সংগঠনও শরী‘আতসম্মত নয়, গঠনতন্ত্রও শরী‘আতসম্মত নয়। যেটা একজন প্রকৃত আহলেহাদীছের কাছেও গ্রহণযোগ্য হ’তে পারে না।[8]

হে আহলেহাদীছগণ! এটা কি আফসোসের বিষয় নয় যে, ছাহাবীগণও আহলেহাদীছ ছিলেন এবং আমরাও আহলেহাদীছকিন্তু আমাদের ও তাদের মাঝে পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বছাহাবীগণের মাঝে আত্মসম্মানবোধ ছিল, দ্বীনী আগ্রহ ছিলআমরা এসকল গুণ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তছাহাবায়ে কেরাম দ্বীনী জোশে পাগলপারা ছিলেনতারা ইসলামের জন্য জীবন দিতেনআমরা দুনিয়াদারআমরা গদির জন্য মরি এবং বাতিলের কাছে মাথা নত করিএ সকল পার্থক্য স্রেফ এ কারণে যে, ছাহাবায়ে কেরাম ইসলামের ফসল ছিলেনআর আমরা গণতন্ত্রের ফসল[9]

এখন হিজরী চতুর্দশ শতক শেষ হয়ে গেছে। অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে। ইসলাম বিকশিত হচ্ছে এবং শেষাবধি তাকে বিকাশমান থাকতে হবে। আমরা যদি এখনো না জাগি এবং নিজেদের মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ না রাখি, তাহ’লে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য অপেক্ষা করবেন না। আল্লাহ এই কাজ অন্য কারো দ্বারা নিবেন। আর তখন আমরা আফসোস করতে থাকব। মহান আল্লাহ বলেন,وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لاَ يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ ‘যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহ’লে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। এরপর তারা তোমাদের মত হবে না’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৩৮)

বাগদাদের পতনের পর আল্লাহ ইসলামকে নিশ্চিহ্নকারীদের দ্বারাই ইসলামের কাজ নিয়েছেন। তাতার যারা ইসলামের দুশমন ছিল, তারাই ইসলামের পাহারাদার হয়ে গেছে। এজন্য হে আমার ভাই! উঠো। নিজের মর্যাদাকে বুঝ। নিজের দায়িত্বকে পুরা কর। আহলেহাদীছ হওয়ার কারণে তোমার মর্যাদা হ’ল রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতিনিধি হওয়া। তুমি রাসূল (ছাঃ)-এর উত্তরাধিকারী। নিজের আমল দ্বারা প্রমাণ করো যে, আহলেহাদীছরাই প্রকৃতপক্ষে রাসূল (ছাঃ)-এর উত্তরাধিকারী। এরাই বিশুদ্ধভাবে ইসলামের উপর আমলকারী।

ইক্বামতে দ্বীন আমাদের কাজ। এজন্য তাবলীগও করো, জিহাদও করো। এটাই আহলেহাদীছদের ফরয দায়িত্ব। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে প্রকৃত আহলেহাদীছ হওয়ার তাওফীক দিন এবং কুফরীর ফিতনা সমূহ থেকে বাঁচান। -আমীন ইয়া রববাল ‘আলামীন!

\ অমা ‘আলায়না ইল্লাল বালাগ \

[হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত শারঈ ইমারত বই থেকে সংকলিত, পৃষ্ঠা ৩৪-৪১]


[1]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৮/৩৯০।

[2]. বুখারী হা/২৯৫৭; মুসলিম হা/১৮৩৫; মিশকাত হা/৩৬৬১।

[3]. বুখারী হা/৭২৫৭; মুসলিম হা/১৮৪০; মিশকাত হা/৩৬৬৫।

[4]. শারহুস সুন্নাহ হা/২৪৫৫; আহমাদ হা/১০৯৫; মিশকাত হা/৩৬৯৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫২০।

[5]. বুখারী হা/৭০৫৪; মুসলিম হা/১৮৪৯; মিশকাত হা/৩৬৬৮।

[6]. মুসলিম হা/১৮৪৮; মিশকাত হা/৩৬৬৯।

[7]. মুসলিম হা/১৮৫৫; মিশকাত হা/৩৬৭০।

[8]. কথাটি সর্বাংশে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা খলীফাগণ স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। তাঁদের অত্যন্ত যোগ্য ও আল্লাহভীরু একটি করে মজলিসে শূরা ছিল। যাদের পরামর্শক্রমে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতেন। আধুনিক পরিভাষায় তাদের মধ্য থেকে কাউকে সাধারণ সম্পাদক বা অন্য কোন নামে দায়িত্ব বণ্টন করা হয় মাত্র। এর মধ্যে ইসলাম ও কুফরের কোন সম্পর্ক নেই। -(সম্পাদক)।   

[9]. ফিরক্বা নাজিয়াহ ছেড়ে হক-বাতিল না বুঝে বিভিন্ন দলে যোগ দেয়া বা নতুন দল গড়ার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারী মূলক নিম্নোক্ত হাদীছটি স্মরণ রাখুন! আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً وَمَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عُمِّيَّةٍ يَغْضَبُ لِعَصَبَةٍ أَوْ يَدْعُو إِلَى عَصَبَةٍ أَوْ يَنْصُرُ عَصَبَةً فَقُتِلَ فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ...  ‘যে ব্যক্তি আনুগত্য হ’তে বেরিয়ে যায় ও জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, অতঃপর মারা যায়, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করে। আর যে ব্যক্তি এমন পতাকাতলে যুদ্ধ করে, যার হক ও বাতিল হওয়া সম্পর্কে তার স্পষ্ট জ্ঞান নেই। বরং সে দলীয় প্রেরণায় ক্রুদ্ধ হয়, দলীয় প্রেরণায় লোকদের আহবান করে ও দলীয় প্রেরণায় মানুষকে সাহায্য করে, অতঃপর নিহত হয়। এমতাবস্থায় সে জাহেলিয়াতের উপর নিহত হয়’... (মুসলিম হা/১৮৪৮; মিশকাত হা/৩৬৬৯)

যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয় ও অন্যকে পথভ্রষ্ট করে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالاً مَعَ أَثْقَالِهِمْ وَلَيُسْأَلُنَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَمَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ ‘তারা নিজেদের পাপভার বহন করবে এবং নিজেদের বোঝার সাথে অন্যদের পাপের বোঝা। আর তারা যেসব মিথ্যা উদ্ভাবন করে সে বিষয়ে ক্বিয়ামত দিবসে অবশ্যই তাদের প্রশ্ন করা হবে’ (আনকাবূত ২৯/১৩)। -(সম্পাদক)

  

[অধ্যাপক হাফেয আব্দুল্লাহ বাহাওয়ালপুরী পাকিস্তানের একজন খ্যাতিমান আলেম, মাসলাকে আহলেহাদীছ-এর অনেক বড় দাঈ ও মুবাল্লিগ ছিলেনতিনি ১৯২৪ সালের দিকে পূর্ব পাঞ্জাবের আম্বালা যেলার রোপাড় তহসিলের ডুগরী নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেনতাঁর পিতা মৌলভী নূর মুহাম্মাদ অত্যন্ত সৎ ও আল্লাহভীরু ব্যক্তি ছিলেনদেশ বিভাগের অনেক আগেই বাহাওয়ালপুরী জামেআ তালীমুল ইসলাম (মামূঁকাঞ্জন)-এর খ্যাতিমান শিক্ষকদের নিকট থেকে ইলমে দ্বীন হাছিল করেনহাফেয আব্দুল্লাহ রোপড়ী এবং মাওলানা মুহাম্মাদ হুসাইন রোপড়ী তাঁর বিশিষ্ট উস্তাদগণের অন্যতম ছিলেনআলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি গ্রাজুয়েশন করেনপরবর্তীতে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামিক স্টাডিজে এম.এ. করেনতিনি ইংরেজী, আরবী, উর্দূ ও ফার্সী ভাষায় দক্ষ ছিলেনদেশ বিভাগের সময় তিনি ৯০ হাযার লোকের বিশাল কাফেলা নিয়ে পাকিস্তানে হিজরত করেনএ সময় তিনি একশ গ্রামের আমীর ছিলেন১৯৫৩ সালে তিনি বাহাওয়ালপুরের এস.ই. কলেজে লেকচারার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেনতিনি হিজরত করে পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে এসে মুহাজির কলোনীতে তার বাড়ীর একটা অংশকে মসজিদের জন্য ওয়াকফ করে দেন এবং সেখানে জুমআ ও জামাআত কায়েম করেনএভাবে তিনি যেখানেই গেছেন সেখানেই আহলেহাদীছ মসজিদ তৈরী করেছেন এবং জামাআত কায়েম করেছেনতিনি মন-মেযাজে, মেধা-মননে, চিন্তা-চেতনায়, গোপনে-প্রকাশ্যে একজন সাচ্চা আহলেহাদীছ ছিলেনবাহাওয়ালপুর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা সমূহে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রচার ও প্রসারে তিনি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেনতাঁর দাওয়াতে হাযার হাযার মানুষ সঠিক পথের দিশা পেয়েছেবহু মানুষ তাক্বলীদের বন্ধন ছিন্ন করে কুরআন ও হাদীছের অনুসারী হয়েছেপাকিস্তানের প্রফেসর যাফর ইকবাল সালাফী তাঁর দাওয়াতেই ব্রেলভী ও নকশবন্দী তরীকা ছেড়ে আহলেহাদীছ হনআহলেহাদীছ মাসলাকের প্রচার-প্রসারের জন্য তিনি সরকারী কলেজের প্রিন্সিপ্যাল হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ অবলীলায় হাতছাড়া করেন

অত্যন্ত সাধাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত হাফেয আব্দুল্লাহ বাহাওয়ালপুরী ১৪১১ হিজরীর ৬ই শাওয়াল মোতাবেক ১৯৯১ সালের ২১শে এপ্রিল রবিবার দুপুর ১২-টার দিকে ৬৭ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেনপাকিস্তানের খ্যাতিমান আহলেহাদীছ আলেম ও মুহাক্কিক মাওলানা এরশাদুল হক আছারী তাঁর জানাযার ছালাতে ইমামতি করেনবহু মানুষ তাঁর জানাযায় অংশগ্রহণ করেনবাহাওয়ালপুরে তাঁকে দাফন করা হয়তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৫০টিতন্মধ্যে তাক্বলীদ কে খওফনাক নাতায়েজ, আহলেহাদীছ কে লিয়ে দাওয়াতে ফিকর ওয়া আমল, হাম নামায মে রাফঊল ইয়াদায়েন কিঁউ করতে হ্যাঁয়, খুতবাতে বাহাওয়ালপুরী (৫ খন্ড), রাসাইলে বাহাওয়ালপুরী অন্যতম {প্রফেসর হাফেয আব্দুল্লাহ বাহাওয়ালপুরী, খুত্ববাতে বাহাওয়ালপুরী (ফায়ছালাবাদ, পাকিস্তান : মাকতাবায়ে ইসলামিয়াহ, ৩য় সংস্করণ, সেপ্টেম্বর ১৯৯৭), ১২-৩০ পৃ.}]

ইসলামী সমাজে আমীর থাকা দ্বীনের ওয়াজিব বিষয় সমূহের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,

يَجِبُ أَنْ يُعْرَفَ أَنَّ وِلاَيَةَ أَمْرِ النَّاسِ مِنْ أَعْظَمِ وَاجِبَاتِ الدِّينِ، بَلْ لاَ قِيَامَ لِلدِّيْنِ وَلاَ لِلدُّنْيَا إِلاَّ بِهَا، فَإِنَّ بَنِي آدَمَ لاَ تَتِمُّ مَصْلَحَتُهُمْ إلاَّ بِالْاِجْتِمَاعِ لِحَاجَةِ بَعْضِهِمْ إلَى بَعْضٍ وَلَا بُدَّ لَهُمْ عِنْدَ الِاجْتِمَاعِ مِنْ رَأْسٍ حَتَّى قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إذَا خَرَجَ ثَلاَثَةٌ فِي سَفَرٍ فَلْيُؤَمِّرُوا أَحَدَهُمْ- وَقَالَ : لاَ يَحِلُّ لِثَلاَثَةٍ يَكُونُونَ بِفَلاَةِ مِنْ الْأَرْضِ إلاَّ أَمَّرُوا عَلَيْهِمْ أَحَدَهُمْ- فَأَوْجَبَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَأْمِيرَ الْوَاحِدِ فِي الِاجْتِمَاعِ الْقَلِيلِ الْعَارِضِ فِي السَّفَرِ تَنْبِيهًا بِذَلِكَ عَلَى سَائِرِ أَنْوَاعِ الِاجْتِمَاعِ-  

‘এটি জেনে রাখা ওয়াজিব যে, আমীর নির্ধারণ করা দ্বীনের বড় ওয়াজিব সমূহের অন্যতম। বরং ইমারত ছাড়া দ্বীন ও দুনিয়ার কোন অস্তিত্বই থাকে না। কেননা মানব সম্প্রদায় তাদের পরস্পরের প্রয়োজন সমূহ পূর্ণ করতে পারে না, সমাজ ব্যতীত। আর অবশ্যই সমাজের জন্য একজন নেতা প্রয়োজন। সেকারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের তিনজন যখন সফরে বের হবে, তখন তাদের মধ্যে একজনকে যেন নেতা নির্বাচন করে’ (আবুদাঊদ হা/২৬০৮)। তিনি আরও বলেন, ‘কোন তিনজন ব্যক্তির জন্যেও কোন নির্জন ভূমিতে অবস্থান করা হালাল নয় তাদের মধ্যে একজনকে ‘আমীর’ নিযুক্ত না করা পর্যন্ত’ (আহমাদ হা/৬৬৪৭)। সফরের সাময়িক ও অল্প সংখ্যক সাথীদের মধ্যে একজনকে নেতা নির্বাচনের আদেশ দানের মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ) সমাজের অন্য সকল ক্ষেত্রে নেতা নির্বাচন ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে উম্মতকে তাকীদ করেছেন।[1] 

আর ইক্বামতে দ্বীন ব্যতীত মুসলমান মুসলমান নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلَى شَيْءٍ حَتَّى تُقِيمُوا التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ- (المائدة 68)-

‘তুমি বলে দাও, হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা কোন কিছুর উপরেই প্রতিষ্ঠিত নও, যে পর্যন্ত না তোমরা তাওরাত, ইনজীল ও যে কিতাব (কুরআন) তোমাদের প্রভুর পক্ষ হ’তে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, তা কায়েম করবে’ (মায়েদাহ ৫/৬৮)। অর্থাৎ তোমাদের কোন দ্বীন ঈমান নয়, যতক্ষণ না তোমরা দ্বীন কায়েম করবে।

মানুষ স্বভাবগতভাবে সামাজিক জীব। সমাজ ছাড়া তার জীবন যাপন করা কঠিন। আর মানুষের সংঘবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমেই সমাজ গড়ে ওঠে। যেখানেই কিছু মানুষ একত্রিত হবে, সেখানে তাদের একজনের আরেকজনের নিকট প্রয়োজন পড়বে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে। যার জন্য ইমারতের নিয়ম-নীতি যরূরী। এজন্যই তিনজন ব্যক্তি যখন সফরে থাকবে তখনও তাদের মধ্যে আমীর নির্ধারণের জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন।

বরং মুসনাদে আহমাদে তো এ পর্যন্ত বলা হয়েছে যে, ‘কোন তিনজন ব্যক্তির জন্যেও কোন নির্জন ভূমিতে অবস্থান করা হালাল নয় তাদের মধ্যে একজনকে ‘আমীর’ নিযুক্ত না করা পর্যন্ত’ (আহমাদ হা/৬৬৪৭)। অর্থাৎ জঙ্গলে ও সফরেও তিনজন ব্যক্তির আমীর বিহীন থাকা নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর তিনজন ব্যক্তির মধ্য থেকেও একজনকে আমীর নির্ধারণ করাকে ওয়াজিব আখ্যা দেয়া প্রমাণ করে যে, (সফরে হৌক বা মুক্বীম অবস্থায় হৌক) যেখানেই কিছু মুসলমান থাকবে, সেখানেই তারা অবশ্যই তাদের জন্য একজনকে ‘আমীর’ নির্ধারণ করবে। সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ যেটি দ্বীনের অন্যতম ওয়াজিব বিষয় সমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, সেটাও আমীর ব্যতীত হতে পারে না। জিহাদ যেটা ইসলামের রূহ বা প্রাণ, এটাও আমীর ব্যতীত সম্ভব নয়। মোটকথা আমীর মুসলিম সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গআমীর ব্যতীত সঠিক ইসলামী সমাজ কায়েমই হতে পারে নাযে জামাআতে আমীর নেই সেই জামাআতের উদাহরণ হল ঐ লাশের মতো যার মাথা নেইমাথা ছাড়া যেমন দেহ থাকে, সেরূপই অবস্থা আমীর বিহীন জামাআতেরইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী তো মুসলমানদের একদিনও আমীর বিহীন জীবন অতিবাহিত করা উচিত নয়

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যু হ’লে সর্বাগ্রে খলীফা নির্বাচন করা হয়। এরপর অন্য কাজ হয়। এমনকি তাঁর কাফন-দাফনও হযরত আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পরে হয়। এদিকে ছাহাবীদের যারা আমাদের পূর্বসূরী ও প্রথম আহলেহাদীছ তাদের অবস্থা এই যে, তাঁরা আমীর বিহীন একটি রাতও অতিবাহিত করতেন নাঅন্যদিকে আমাদের অবস্থা এই যে, আমরা আমীর ছাড়াই সারা জীবন অতিবাহিত করছি এজন্যই তো বলা হয়, আহলেহাদীছ তো ছাহাবীগণ ছিলেন। যাদের প্রত্যেকটা আমল হাদীছ অনুযায়ী ছিল। যাদের নিকটে ইমারতের নিয়ম-নীতি এত যরূরী ছিল যে, আমীর ব্যতীত একদিন অতিবাহিত করাকে তারা হারাম মনে করতেন। এজন্য আমরা যদি আহলেহাদীছ হ’তে চাই, তাহ’লে আমাদেরকেও ছাহাবীগণের আদর্শের উপর চলে যেখানেই আমরা থাকি দ্রুত আমাদের আমীর নির্ধারণ করা উচিত। যাতে আমাদের জীবন হারাম না হয়ে যায় এবং আমীরের অধীনে জীবন অতিবাহিত হয়। যেমনটা শরী‘আতের নির্দেশ। 

যেমন আমীর নির্ধারণ করা ফরয এবং আমীর ব্যতীত কোন জামা‘আতী যিন্দেগী নেই। তেমনি আমীরের আনুগত্য করা ফরয। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অত্যন্ত তাকীদ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করল, সে আমার আনুগত্য করল। আর যে আমীরের অবাধ্যতা করল, সে আমার অবাধ্যতা করল’।[2] তিনি আমীরের আনুগত্যকে নিজের আনুগত্য এবং আমীরের অবাধ্যতাকে নিজের অবাধ্যতা বলে অভিহিত করেছেন (মুসলিম হা/১৮৩৫)। তিনি বলেছেন, ‘যদি তোমাদের উপর একজন নাক-কান কাটা কৃষ্ণকায় গোলামকেও আমীর নিযুক্ত করা হয়, যিনি তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী পরিচালনা করেন, তোমরা তার কথা শোন ও মান্য কর’ (মুসলিম হা/১২৯৮)

তিনি আরও বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উপর পসন্দনীয় ও অপসন্দনীয় সব বিষয়ে (নেতার আদেশ) শ্রবণ করা ও তার আনুগত্য করা অপরিহার্য। যতক্ষণ না আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ দেয়া হয়। যখন আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ দেয়া হবে, তখন আমীরের কথা শ্রবণ ও তার কোন আনুগত্য নেই’ (বুখারী হা/৭১৪৪)

আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবল সৎকর্মে’।[3] নাওয়াস বিন সাম‘আন (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لاَ طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِى مَعْصِيَةِ الخَالِقِِ ‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির প্রতি কোন আনুগত্য নেই’।[4]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমীরের আনুগত্যের উপর জোর দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার আমীরের মধ্যে এমন কিছু দেখে যা সে অপসন্দ করে, তখন সে যেন ধৈর্য ধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল অতঃপর মৃত্যু বরণ করল, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করল’।[5]

তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি (আমীরের) আনুগত্য হ’তে বেরিয়ে যায় ও জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, অতঃপর মারা যায়, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করে’।[6]

আমীরের আনুগত্য এত যরূরী যে, তিনি বলেছেন,أَلاَ مَنْ وَلِىَ عَلَيْهِ وَالٍ، فَرَآهُ يَأْتِى شَيْئًا مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ فَلْيَكْرَهْ مَا يَأْتِى مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ، وَلاَ يَنْزِعَنَّ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ- ‘সাবধান! কারো উপর যদি কোন শাসক নিযুক্ত হয়। অতঃপর সে যদি শাসককে আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কোন কাজ করতে দেখে, তখন সে যেন তার আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজকে ঘৃণা করে এবং অবশ্যই আনুগত্যের হাত গুটিয়ে না নেয়’।[7] এর দ্বারা প্রমাণিত হ’ল যে, আমীর যদি খারাপও হয় তবুও প্রত্যেক নেকীর কাজে তার নির্দেশ মানতে হবে। অবশ্যই তার গোনাহকে খারাপ জানতে হবে এবং গোনাহের কাজ সমূহে তার আনুগত্য করা যাবে না। এছাড়া তার অন্য সব নির্দেশ মেনে নিতে হবে।

আফসোস তো এই যে, গণতন্ত্রপন্থী আহলেহাদীছরাও নিজেদের সংগঠনে সভাপতিকে আমীরের নাম দিয়েছেযেটা সরাসরি ধোঁকাআসলে সে আমীর হয় নাকোথায় শারঈ সংগঠনের আমীর আর কোথায় গণতন্ত্রের সভাপতিকোথায় আল্লাহ প্রদত্ত ইমারত আর কোথায় দুনিয়াবী সভাপতি শারঈ সংগঠনের আমীরের আনুগত্যকে তো কুরআন মাজীদও ফরয আখ্যা দেয়। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের আনুগত্য কর’ (নিসা ৪/৫৯)। কিন্তু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সভাপতির আনুগত্যকে স্বয়ং গণতন্ত্র এবং তার সভাপতি যরূরী আখ্যা দেয় নাগণতন্ত্রের সভাপতির সম্পর্ক স্রেফ দল বা রাজনীতির সাথে হয়তিনি শুধু রাজনীতির ময়দানেই আমীর হনজীবনের অন্যান্য দিক ও বিভাগের সাথে তার কোন সম্পর্ক থাকে নাকিন্তু শারঈ আমীর পুরা জীবনের তত্ত্বাবধায়ক হন তার জন্য ফরয হ’ল, ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী নিজের জামা‘আতের এমন চরিত্র গড়ে তোলা, যার মাধ্যমে তাদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ই ঠিক হয়ে যায়।

গণতান্ত্রিক নিয়মে প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাসম্পন্ন হন না। কেননা তার দলের সকল সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসেন। ফলে তারা প্রেসিডেন্টের অনুগত হন না। বরং তারা সর্বদা প্রেসিডেন্টের জন্য মাথাব্যথা হয়ে থাকেন। কারণ সকল ক্ষমতা সেক্রেটারী অথবা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকে। প্রেসিডেন্ট বেচারা তো একজন অক্ষম সদস্যের মতো হয়ে থাকেন।

পক্ষান্তরে শারঈ আমীর সম্পূর্ণরূপে নিজেই কর্তৃত্বশীল হনতিনি পরামর্শ করে যাকে ইচ্ছা পদ দেনএ ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকেন কারো অনুগত হন না। হযরত আবুবকর ছিদ্দীক ও হযরত ওমর (রাঃ) খলীফা হ’লে কেউ তাদের সেক্রেটারী বা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। তারা যাকে ইচ্ছা নেতা বানাতেন। যাকে ইচ্ছা সরিয়ে দিতেন। শারঈ আমীরের পরে কারো কোন মতামত থাকত না। সব পদাধিকারী তার নিয়োগপ্রাপ্ত এবং তার অনুসারী হয়। এজন্য আহলেহাদীছদের বর্তমান আমীরদেরকে শারঈ আমীর বলতে পারি না। আর না তাদের আনুগত্য ফরয। কেননা তারা কুফরী গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অধীনে আমীর হয়েছেন। তাদের সংগঠনও শরী‘আতসম্মত নয়, গঠনতন্ত্রও শরী‘আতসম্মত নয়। যেটা একজন প্রকৃত আহলেহাদীছের কাছেও গ্রহণযোগ্য হ’তে পারে না।[8]

হে আহলেহাদীছগণ! এটা কি আফসোসের বিষয় নয় যে, ছাহাবীগণও আহলেহাদীছ ছিলেন এবং আমরাও আহলেহাদীছকিন্তু আমাদের ও তাদের মাঝে পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বছাহাবীগণের মাঝে আত্মসম্মানবোধ ছিল, দ্বীনী আগ্রহ ছিলআমরা এসকল গুণ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তছাহাবায়ে কেরাম দ্বীনী জোশে পাগলপারা ছিলেনতারা ইসলামের জন্য জীবন দিতেনআমরা দুনিয়াদারআমরা গদির জন্য মরি এবং বাতিলের কাছে মাথা নত করিএ সকল পার্থক্য স্রেফ এ কারণে যে, ছাহাবায়ে কেরাম ইসলামের ফসল ছিলেনআর আমরা গণতন্ত্রের ফসল[9]

এখন হিজরী চতুর্দশ শতক শেষ হয়ে গেছে। অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে। ইসলাম বিকশিত হচ্ছে এবং শেষাবধি তাকে বিকাশমান থাকতে হবে। আমরা যদি এখনো না জাগি এবং নিজেদের মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ না রাখি, তাহ’লে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য অপেক্ষা করবেন না। আল্লাহ এই কাজ অন্য কারো দ্বারা নিবেন। আর তখন আমরা আফসোস করতে থাকব। মহান আল্লাহ বলেন,وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لاَ يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ ‘যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহ’লে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। এরপর তারা তোমাদের মত হবে না’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৩৮)

বাগদাদের পতনের পর আল্লাহ ইসলামকে নিশ্চিহ্নকারীদের দ্বারাই ইসলামের কাজ নিয়েছেন। তাতার যারা ইসলামের দুশমন ছিল, তারাই ইসলামের পাহারাদার হয়ে গেছে। এজন্য হে আমার ভাই! উঠো। নিজের মর্যাদাকে বুঝ। নিজের দায়িত্বকে পুরা কর। আহলেহাদীছ হওয়ার কারণে তোমার মর্যাদা হ’ল রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতিনিধি হওয়া। তুমি রাসূল (ছাঃ)-এর উত্তরাধিকারী। নিজের আমল দ্বারা প্রমাণ করো যে, আহলেহাদীছরাই প্রকৃতপক্ষে রাসূল (ছাঃ)-এর উত্তরাধিকারী। এরাই বিশুদ্ধভাবে ইসলামের উপর আমলকারী।

ইক্বামতে দ্বীন আমাদের কাজ। এজন্য তাবলীগও করো, জিহাদও করো। এটাই আহলেহাদীছদের ফরয দায়িত্ব। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে প্রকৃত আহলেহাদীছ হওয়ার তাওফীক দিন এবং কুফরীর ফিতনা সমূহ থেকে বাঁচান। -আমীন ইয়া রববাল ‘আলামীন!

\ অমা ‘আলায়না ইল্লাল বালাগ \

[হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত শারঈ ইমারত বই থেকে সংকলিত, পৃষ্ঠা ৩৪-৪১]


[1]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৮/৩৯০।

[2]. বুখারী হা/২৯৫৭; মুসলিম হা/১৮৩৫; মিশকাত হা/৩৬৬১।

[3]. বুখারী হা/৭২৫৭; মুসলিম হা/১৮৪০; মিশকাত হা/৩৬৬৫।

[4]. শারহুস সুন্নাহ হা/২৪৫৫; আহমাদ হা/১০৯৫; মিশকাত হা/৩৬৯৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫২০।

[5]. বুখারী হা/৭০৫৪; মুসলিম হা/১৮৪৯; মিশকাত হা/৩৬৬৮।

[6]. মুসলিম হা/১৮৪৮; মিশকাত হা/৩৬৬৯।

[7]. মুসলিম হা/১৮৫৫; মিশকাত হা/৩৬৭০।

[8]. কথাটি সর্বাংশে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা খলীফাগণ স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। তাঁদের অত্যন্ত যোগ্য ও আল্লাহভীরু একটি করে মজলিসে শূরা ছিল। যাদের পরামর্শক্রমে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতেন। আধুনিক পরিভাষায় তাদের মধ্য থেকে কাউকে সাধারণ সম্পাদক বা অন্য কোন নামে দায়িত্ব বণ্টন করা হয় মাত্র। এর মধ্যে ইসলাম ও কুফরের কোন সম্পর্ক নেই। -(সম্পাদক)।   

[9]. ফিরক্বা নাজিয়াহ ছেড়ে হক-বাতিল না বুঝে বিভিন্ন দলে যোগ দেয়া বা নতুন দল গড়ার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারী মূলক নিম্নোক্ত হাদীছটি স্মরণ রাখুন! আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً وَمَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عُمِّيَّةٍ يَغْضَبُ لِعَصَبَةٍ أَوْ يَدْعُو إِلَى عَصَبَةٍ أَوْ يَنْصُرُ عَصَبَةً فَقُتِلَ فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ...  ‘যে ব্যক্তি আনুগত্য হ’তে বেরিয়ে যায় ও জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, অতঃপর মারা যায়, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করে। আর যে ব্যক্তি এমন পতাকাতলে যুদ্ধ করে, যার হক ও বাতিল হওয়া সম্পর্কে তার স্পষ্ট জ্ঞান নেই। বরং সে দলীয় প্রেরণায় ক্রুদ্ধ হয়, দলীয় প্রেরণায় লোকদের আহবান করে ও দলীয় প্রেরণায় মানুষকে সাহায্য করে, অতঃপর নিহত হয়। এমতাবস্থায় সে জাহেলিয়াতের উপর নিহত হয়’... (মুসলিম হা/১৮৪৮; মিশকাত হা/৩৬৬৯)

যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয় ও অন্যকে পথভ্রষ্ট করে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالاً مَعَ أَثْقَالِهِمْ وَلَيُسْأَلُنَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَمَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ ‘তারা নিজেদের পাপভার বহন করবে এবং নিজেদের বোঝার সাথে অন্যদের পাপের বোঝা। আর তারা যেসব মিথ্যা উদ্ভাবন করে সে বিষয়ে ক্বিয়ামত দিবসে অবশ্যই তাদের প্রশ্ন করা হবে’ (আনকাবূত ২৯/১৩)। -(সম্পাদক)



বিষয়সমূহ: রাজনীতি
আরও