নারী নির্যাতন প্রসঙ্গ : সমাধান কোথায়?
ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব 2558 বার পঠিত
মানবজাতি পৃথিবীর শুরুকাল থেকে যে প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয়েছে, তা খুব একটা ব্যতিক্রম ছাড়া একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলেছে। আর তা হল সমাজের একদল মানুষ মন্দ, অকল্যাণ ও অসত্যের পথে প্রলুব্ধ হয়। অপর এক দল মানুষ এই পথভ্রষ্টদেরকে সুপথ প্রদর্শন করে যায়, যদিও এই দলটি সংখ্যায় অতি স্বল্প। আল্লাহ রাববুল আলামীন যুগে যুগে নবী-রাসূলদেরকে এই সুপথপ্রদর্শনের দায়িত্ব দিয়েই প্রেরণ করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য পথপ্রদর্শক রয়েছে’ (রা‘দ ১৩/৭)। কোন সমাজে যদি এমন সংস্কারক দল না থাকে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো শক্তি না থাকে, তবে সে সমাজ নিঃসন্দেহে পতনোন্মুখ হবে। এ জন্য আল্লাহ রাববুল আলামীন মুমিনদেরকে লক্ষ্য করে এ জন্য বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিৎ, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই প্রকৃত সফলকাম’ (আলে ইমরান ৩/১০৪)। আমরা ব্যক্তিগতভাবে যতই সৎ বা ন্যায়নিষ্ঠ হই না কেন, যদি অপরকে সৎ বা ন্যায়নিষ্ঠ বানানোর প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ না করি, তবে সমাজে প্রকৃতার্থে সংস্কার আসে না। এজন্য আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না; যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে’ (রা‘দ ১৩/১১)। সমাজ সংশোধনের এই প্রচেষ্টা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা কোন না কোন ভাবে চলমান থাকবেই এবং আল্লাহ কাউকে না কাউকে দিয়ে তা করিয়ে নেবেনই। তবে একজন দায়িত্বশীল ও জান্নাতপিয়াসী মুমিনের অবশ্য কর্তব্য হল এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা। আল্লাহ বলেন, তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে; যতক্ষণ না তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ তথা আল্লাহ্র পথে সংগ্রাম করেছে এবং কে ধৈর্যশীল তা না জানছেন? (আলে-ইমরান ৩/১৪২)। যদি সুযোগ ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আমরা স্বীয় দায়িত্ব পালনে অবহেলা প্রদর্শন করি, তবে তা নিঃসন্দেহে আল্লাহকে ক্রুদ্ধ করবে। আল্লাহ হুঁশিয়ারী বাণী উচ্চারণ করে বলেন, ‘যদি তোমরা বিমুখ হয়, তাহলে তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন; অতঃপর তারা তোমাদের মত হবে না (মুহাম্মাদ ৪৭/৩৮)। এর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে নিরন্তর পরীক্ষার মধ্যে রেখেছেন যে কারা আমরা প্রকৃত বিশ্বাসী আর কারা কপট। আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যতক্ষণ না আমি তোমাদের মধ্যে মুজাহিদ ও ধৈর্যশীলদের জেনে নিই এবং আমি তোমাদের কর্মকান্ড পরীক্ষা করি (মুহাম্মাদ ৪৭/৩১)। এই পরীক্ষায় যে যত বেশী অগ্রগামী হতে পারবে, সে ততবেশী সফল হবে এবং আল্লাহ্র নৈকট্যশীল বান্দাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে (আন‘আম ৬/১৩২)।
আজ মুসলিম উম্মাহ যে বিপর্যয় ও অধঃপতনের মধ্যে অতিক্রম করছে তার পিছনে একটি বৃহত্তম কারণ হল মুসলিম সমাজের সংস্কার চেতনা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের মানসিকতা হারিয়ে ফেলা। অজ্ঞতা, কুসংস্কারচ্ছন্নতা, দুনিয়ার প্রতি আসক্তি, মাল ও মর্যাদার লোভ তাদেরকে এমনভাবে গ্রাস করে ফেলেছে যে, উম্মাহ্র প্রতি দায়বোধ, মানবতার জন্য বৃহত্তর কল্যাণচিন্তা, আত্মমর্যাদাবোধ, সর্বোপরি আল্লাহ্র দ্বীনকে আল্লাহ্র যমীনে বিজয়ী করার সদিচ্ছা, দৃড়চিত্ততা সবকিছুই হারিয়ে ফেলেছে তারা। রাসূল (ছাঃ) এ সম্পর্কে বহুপূর্বেই আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমরা ‘ঈনা তথা প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বাকিতে অধিক মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করবে, গরুর লেজ ধারণ করবে এবং কৃষিকাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে (তথা দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে) এবং জিহাদ তথা আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামকে পরিত্যাগ করবে, তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা ও অবমাননাকর অবস্থা চাপিয়ে দেবেন। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি এই লাঞ্ছনা ও অপমান দূরীভূত করবেন না যতক্ষণ না তোমরা পুনরায় দ্বীনের প্রতি ফিরে আস’ (আবূদাউদ হা/৩৪৬২, সনদ ছহীহ)।
সুতরাং সচেতন ও ঈমানদার যুবসমাজের প্রতি আমাদের বিনীত আহবান থাকবে, মুসলিম উম্মাহ্র এই অধঃপতিত ও লাঞ্ছনাকর অবস্থার পুনর্মূল্যায়ন করা এবং সেই মোতাবেক নিজেদের কর্তব্য-করণীয় নির্ধারণ করা। যদি প্রকৃতই আমরা মুসলিম উম্মাহ্র প্রতি আমাদের দায় পূরণ করতে চাই এবং আল্লাহ্র নৈকট্যশীল বান্দাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে চাই, তাহলে অবশ্যই খালেছ অন্তরে আল্লাহ্র পথে সংগ্রামের পথকে বেছে নেয়া ছাড়া আমাদের বিকল্প কোন পথ নেই। ইসলামের বিজয় নিহিত রয়েছে একমাত্র এ পথেই। মনে রাখতে হবে, এ সংগ্রামের পথ মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ নয়। বরং হাযারো বাধা নানামুখীভাবে আমাদেরকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে। শয়তানী চক্রান্ত আমাদেরকে কখনো দিশেহারা করে তুলবে। হয়তবা অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেবে, গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে হারিয়ে যাবে কিংবা দুনিয়ার মোহে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বে। তবুও প্রকৃত সত্যসেবী একদল লোক দৃঢ়চিত্তভাবে দাঁতে দাঁত চেপে হক্বকে বিজয়ী করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবে। আর চূড়ান্ত বিচারে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম তারাই। ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ এ পথেই এদেশের যুবসমাজকে আহবান করছে। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের এই মহত্তম সংগ্রামের পথে অবিচল রাখুন এবং সমাজ সংস্কারের আন্দোলনে যথাসাধ্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।