জবাবদিহিতা
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 1007 বার পঠিত
আল-কুরআনুল কারীম :
1- وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُورًا -
(১) ‘আর যে ব্যক্তি আখেরাত কামনা করে এবং ছওয়াব লাভে দৃঢ় বিশ্বাসী অবস্থায় তার জন্য যথার্থ প্রচেষ্টা চালায়, তাদের প্রচেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে’ (বনী ইস্রাঈল ১৭/১৯)।
2- فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ-
(২) ‘আর আল্লাহ্র রহমতের কারণেই তুমি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমলহৃদয় হয়েছ। যদি তুমি কর্কশভাষী কঠোর হৃদয়ের হ’তে তাহ’লে তারা তোমার পাশ থেকে সরে যেত। কাজেই তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং যরূরী বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর যখন তুমি সংকল্পবদ্ধ হবে, তখন আল্লাহ্র উপর ভরসা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার উপর ভরসাকারীদের ভালবাসেন’ (আলে-ইমরান ৩/১৫৯)।
3- لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ وَمَا لَهُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَالٍ-
(৩) ‘প্রত্যেক মানুষের জন্য তার সামনে ও পিছনে পরপর আগত পাহারাদার ফেরেশতাগণ রয়েছে। যারা তাকে হেফাযত করে আল্লাহ্র হুকুমে। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর আল্লাহ যখন কোন জাতির প্রতি মন্দ কিছু ইচ্ছা করেন, তখন তাকে রদ করার কেউ নেই। আর আল্লাহ ব্যতীত তাদের কোন অভিভাবক নেই’ ( রা‘দ ১৩/১১)।
4- فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلَا تَسْتَعْجِلْ لَهُمْ كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ مَا يُوعَدُونَ لَمْ يَلْبَثُوا إِلَّا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ بَلَاغٌ فَهَلْ يُهْلَكُ إِلَّا الْقَوْمُ الْفَاسِقُونَ َ-
(৪) ‘অতএব তুমি ধৈর্য্য ধারণ কর, যেমন ধৈর্য্য ধারণ করেছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ এবং ওদের (শাস্তির) জন্য ব্যস্ত হয়ো না। যেদিন তারা তাদের প্রতিশ্রুত (শাস্তির) বিষয়টি প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে যেন তারা দিনের একটা মুহূর্ত ব্যতীত (দুনিয়াতে) অবস্থান করেনি। এটা স্রেফ সতর্কবাণী মাত্র। বস্ত্ততঃ পাপাচারী সম্প্রদায় ব্যতীত কেউ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় কি?’ (আহক্বাফ ৪৬/৩৫)।
5- لَتُبْلَوُنَّ فِي أَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا أَذًى كَثِيرًا وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ-
(৫) ‘অবশ্যই তোমরা পরীক্ষায় পতিত হবে তোমাদের ধন-সম্পদে ও তোমাদের নিজেদের জীবনে। আর তোমরা অবশ্যই শুনবে তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাব ও মুশরিকদের কাছ থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা। যদি তোমরা তাতে ধৈর্য্য ধারণ কর এবং আল্লাহভীরুতা অবলম্বন কর, তবে সেটাই হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ’ (আলে-ইমরান ৩/১৮৬) ।
হাদীছে নববী :
6- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمُؤْمِنُ الْقَوِىُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ وَفِى كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلاَ تَعْجِزْ وَإِنْ أَصَابَكَ شَىْءٌ فَلاَ تَقُلْ لَوْ أَنِّى فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا. وَلَكِنْ قُلْ قَدَرُ اللَّهِ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ-
(৬) আবু
হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সবল মুমিন আল্লাহ্র নিকট
দুর্বল মুমিন অপেক্ষা বেশী প্রিয়। আর প্রত্যেকের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। তুমি ঐ
জিনিসে যত্নবান হও, যাতে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহ্র কাছে সাহায্য
প্রার্থনা কর ও উৎসাহহীন হয়ো না। যদি তোমার কিছু ক্ষতি হয়, তাহলে এ কথা বলো
না যে, যদি আমি এ রকম করতাম, তাহলে এ রকম হত। বরং বলো, আল্লাহ্র (লিখিত)
ভাগ্য এবং তিনি যা চেয়েছেন তাই করেছেন। কারণ, ‘যদি’ (শব্দ) শয়তানের কাজের
দুয়ার খুলে দেয়’।[1]
7- عَنْ خَبَّابٍ قَالَ كَانَ لِى عَلَى الْعَاصِ بْنِ وَائِلٍ دَيْنٌ فَأَتَيْتُهُ أَتَقَاضَاهُ فَقَالَ لِى لَنْ أَقْضِيَكَ حَتَّى تَكْفُرَ بِمُحَمَّدٍ قَالَ فَقُلْتُ لَهُ إِنِّى لَنْ أَكْفُرَ بِمُحَمَّدٍ حَتَّى تَمُوتَ ثُمَّ تُبْعَثَ.قَالَ وَإِنِّى لَمَبْعُوثٌ مِنْ بَعْدِ الْمَوْتِ فَسَوْفَ أَقْضِيكَ إِذَا رَجَعْتُ إِلَى مَالٍ وَوَلَدٍ. قَالَ وَكِيعٌ كَذَا قَالَ الأَعْمَشُ قَالَ فَنَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ (أَفَرَأَيْتَ الَّذِى كَفَرَ بِآيَاتِنَا وَقَالَ لأُوتَيَنَّ مَالاً وَوَلَدًا) إِلَى قَوْلِهِ (وَيَأْتِينَا فَرْدًا) -
(৭) খাববাব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
তিনি বলেন, ‘আছ ইবনু ওয়াইল-এর কাছে আমার কিছু পাওনা ছিল। সেটা উসূলের জন্য
আমি তার নিকট গেলাম। সে বলল, যে পর্যন্ত তুমি মুহাম্মাদকে অস্বীকার না করবে
ততক্ষণ পর্যন্ত তেমার পাওনা দিব না। এ কথা শুনে আমি তাকে বললাম, আমি কখনো
মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে অস্বীকার করব না, তুমি মরার পর আবার জীবিত হয়ে আসলেও।
সে বলল, আমি কি মৃত্যুর পর আবার জীবিত হয়ে উঠব? তাহলে তখনই আমি আমার সম্পদ
এবং সন্তানাদি লাভ করে তোমার পাওনা পরিশোধ করব। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়,
আপনি কি দেখেছেন তাকে যে আমার আয়াতসমূহ উপেক্ষা করে এবং বলে আমাকে তো
ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি দেয়া হবে। আর সে আমার কাছে একাকী আসবে। তখন এ আয়াতটি
নাযিল হয়’।[2]
(৮)
আক্বীল ইবনু আবী তালিব হতে বর্ণিত তিনি বলেন, কুরায়েশ নেতৃবৃন্দ আবু
তালিবের নিকট এসে বলল, আপনার ভাতিজা আমাদের মজলিশে এবং মসজিদে কষ্ট দেয়।
আমাদের কষ্ট দেয়া থেকে তাকে বিরত রাখুন। আবু তালিব বললেন, হে আক্বীল!
মুহাম্মাদকে আমার নিকট নিয়ে আস। তিনি বলেন, আমি তার নিকট গেলাম এবং তাকে
নিয়ে হাযির হলাম। আবু তালিব তাকে বলল, হে ভাতিজা! তুমি নাকি তোমার চাচাদের
মজলিসে এবং মসজিদে কষ্ট দাও। তুমি তা থেকে বিরত হও। রাসূল (ছাঃ) আকাশের
দিকে চোখ উঠিয়ে চাচাদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আপনারা কি এই সূর্যকে দেখছেন?
তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমি আপনাদের কারণে আমার দাওয়াত পরিত্যাগ
করব না, যতক্ষণ না আপনারা ঐ সূর্য থেকে আমার জন্য একটা স্ফুলিঙ্গ এনে
দিবেন। তখন আবু ত্বালিব বললেন, আমার ভাতিজা কখনোই আমাদেরকে মিথ্যা বলে না।
অতএব তোমরা ফিরে যাও’।[3]
(৯)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ) যখন ইন্তিকাল
করলেন; আবু বকর (রাঃ) খলীফা নিযুক্ত হলেন এবং আরবের যারা কাফির হবার তারা
কাফির হয়ে গেল। তখন ওমর (রাঃ) আবু বকর (রাঃ)-কে বললেন, আপনি কি করে লোকদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন? অথচ রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি মানুষের সঙ্গে ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’ বলার পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত। অতএব যে
ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে, সে তার জান ও মালকে আমার থেকে নিরাপদ
করে নিল। তবে ইসলামী বিধানের আওতায় পড়লে আলাদা। তাদের প্রকৃত হিসাব
আল্লাহ্র নিকট। আবু বকর (রাঃ) বললেন, যারা ছালাত ও যাকাতের মধ্যে
প্রার্থক্য করে, আমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। কেননা যাকাত হলো মালের
হক। আল্লাহ্র শপথ! যদি তারা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট যা আদায় করত, এখন তা
সেভাবে দিতে অস্বীকার করে, তাহলে আমি তাদের সাথে অবশ্যই যুদ্ধ করব। ওমর
(রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র কসম! আমি দেখেছিলাম যে, যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ
তা‘আলা আবু বকরের সিনা খুলে দিয়েছিলেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম এ
সিদ্ধান্ত সঠিক’।[4]
10- عَنْ سُفْيَانَ بْنِ عَبْدِ اللهِ الثَّقَفِيِّ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، قُلْ لِي فِي الْإِسْلَامِ قَوْلًا لَا أَسْأَلُ عَنْهُ أَحَدًا بَعْدَكَ - وَفِي حَدِيثِ أَبِي أُسَامَةَ غَيْرَكَ - قَالَ: " قُلْ: آمَنْتُ بِاللهِ، فَاسْتَقِمْ
(১০) সুফিয়ান বিন আব্দুল্লাহ
আছ-ছাক্বাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ রাসূল! ইসলাম
সম্পর্কে আমাদের এমন একটি কথা বলুল যে বিষয়ে আমি আপনার পর আর কাউকে
জিজ্ঞাসা করব না। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি বল, আমি আল্লাহ্র প্রতি ঈমান
এনেছি। অতঃপর এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাক’।[5]
মনীষীদের বক্তব্য :
১. আত-তা‘রীফাত গ্রন্থপ্রণেতা বলেন, ইচ্ছাশক্তি এমন একটি ঝোঁক বা প্রক্রিয়া, যা মানুষকে কল্যাণের অনুগামী করে’।[6]
২.
জুরজানী (রহঃ) বলেন, ইচ্ছাশক্তি জীবিত মানুষের আবশ্যিক গুণাবলীর অন্যতম,
যা বিভিন্ন কাজ বাস্তবায়নে সহায়ক ভুমিকা পালন করে এবং মানুষের অর্জন ও
অস্তিত্বের সাথে বিশেষভাবে সম্বন্ধযুক্ত’।[7]
৩.
হাসান মায়দানী (রহঃ) বলেন, ইচ্ছাশক্তি মানুষকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে এমন
চেতনা জাগ্রত করে যা একজন ব্যক্তিকে ধৈর্যশীল, উত্তম প্রচেষ্টাকারীরূপে
বরিত করে এবং তার দৃঢ় কর্মকান্ড তাকে সফল বাস্তবায়নকারীর কাতারে শামিল
করে’।[8]
৪. ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, ইচ্ছাশক্তি ব্যক্তির সততার বিকাশ, কর্ম ত্বরান্বিতকরণ এবং প্রশান্তিময় সুবিশাল ক্ষেত্র প্রস্ত্তত করে’।[9]
সারবস্ত্ত :
১. ইচ্ছাশক্তি সকল কাজে সফলতার চাবিকাঠি ।
২. ইচ্ছাশক্তি ভাল কাজকে ত্বরান্বিত করে।
৩. ইচ্ছাশক্তির উপর ভিত্তি করে মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধিত হয়।
৪. ইচ্ছাশক্তি আল্লাহ্র অপার দান এবং ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।
৫. ইচ্ছাশক্তির গুণে মানুষ ইহকালে ও পরকালে সম্মানিত হয়।
[1]. মুসলিম হা/২৬৬৪; মিশকাত হা/৫২৯৮।
[2]. মুসলিম হা/৬৯৫৫।
[3]. হাকেম হা/৬৪৬৭; ছহীহাহ হা/৯২।
[4]. বুখারী হা/৭২৮৫।
[5]. মুসলিম হা/৬২।
[6]. আত-তা‘রীফাত, পৃ. ১৫।
[7] .তদেব ।
[8] .আল-আখলাকুল ইসলামিয়্যাহ, ২/১৮২ পৃ.।
[9] . আন-নাযরিয়া আল-খালক্বিয়াহ, পৃ. ১৭৪ ।