মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রতি ঈমান (২য় কিস্তি)
আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আসাদুল্লাহ আল-গালিব 9636 বার পঠিত
শিঙ্গায় ফুঁকদান :
النفخশব্দটি نفخ ينفخ نفخا থেকে উৎকলিত যার অর্থ ফুঁক দেয়া বা যেখান থেকে বাতাস বের হয়’।[1] আর الصّور শব্দটির শাব্দিক অর্থ এমন সিঙ্গা যেখানে ফুঁক দেওয়া হয়। যেমন হাদীছে এসেছে, قَرْنٌ يُنْفَخُ فِيهِ ‘এটা একটি শিং যাতে ফুঁৎকার দেওয়া হবে’।[2] মুজাহিদ বলেন, শিঙ্গা হ’ল নলের ন্যায়। সুতরাং শিঙ্গায় ফুঁকদান বলতে একজন ফুঁকদানকারী ব্যক্তি যিনি ফুঁকদানের অনুমতির পর শিঙ্গায় ফুঁক দিবেন।
শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেওয়ার বিষয়টি পবিত্র কুরআনে বিভিন্নভাবে এসেছে। যেমন :
(১) الصيحة :
মহান আল্লাহ বলেন, إِنْ كَانَتْ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً فَإِذَا هُمْ
جَمِيعٌ لَدَيْنَا مُحْضَرُونَ ‘এটা তো হবে কেবল একটি মহা নিনাদ। অতঃপর
তখনই সবাইকে আমাদের সামনে উপস্থিত করা হবে’ (ইয়াছিন ৩৬/৫৩)। ইমাম বাগাবী إِلَّا صَيْحَةً এর ব্যাখ্যা বলেছেন, সেটা হলো আখেরাতের ফুৎকার’।[3]
(২) زجرة (প্রচন্ড শব্দ) :
মহান আল্লাহ বলেন, فَإِنَّمَا هِيَ زَجْرَةٌ وَاحِدَةٌ فَإِذَا هُمْ
يَنْظُرُونَ ‘ওটা একটি মাত্র প্রচন্ড শব্দ। আর তখনই তারা প্রত্যক্ষ করবে’ (ছফফাত ৩৭/১৯)। ইমাম তাবারী (রহঃ) এ আয়াত সম্পর্কে বলেন, নিশ্চয় সেটা হ’ল একটি মাত্র ফুৎকার’।[4]
(৩) النقور : মহান আল্লাহ বলেন, فَإِذَا نُقِرَ فِي النَّاقُورِ ‘যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে’ (মুদ্দাছ&&ছর ৭৪/৮)।
(৪+৫) الراجفة والرادفة
মহান আল্লাহ বলেন, يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ- تَتْبَعُهَا
الرَّادِفَةُ (ক্বিয়ামত অবশ্যই আসবে) যেদিন প্রকম্পিত করবে প্রকম্পিতকারী’।
‘যার পিছে পিছে আসবে আরেকটি নিনাদ’ (নাযে‘আত ৭৯/৬-৭)। হাসান বছরী বলেন, আর তা হ’লে দু’টি ফুৎকার’।[5]
সিঙ্গায় ফুৎকার সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছের দলীল সমূহ :
মহান আল্লাহ বলেন, وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ وَيَوْمَ يَقُولُ كُنْ فَيَكُونُ قَوْلُهُ الْحَقُّ وَلَهُ الْمُلْكُ يَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ ‘তিনিই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন সত্য সহকারে এবং সেদিন তিনি বলবেন হও, অতঃপর হয়ে যাবে (অর্থাৎ ক্বিয়ামত)। তার কথাই সত্য। আর তাঁরই জন্য রাজত্ব, যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সবকিছুরই খবর রাখেন। তিনি প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ (আন‘আম ৬/৭৩)।
অপর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ ‘আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। অতঃপর আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সবই ধ্বংস হবে, তবে যাকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন। অতঃপর শিঙ্গায় আরেকটি ফুঁক দেওয়া হবে। তখন তারা সবাই দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে’ (যুমার ৩৯/৬৮)।
হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ بَيْنَمَا يَهُودِىٌّ يَعْرِضُ سِلْعَتَهُ أُعْطِىَ بِهَا شَيْئًا كَرِهَهُ . فَقَالَ لاَ وَالَّذِى اصْطَفَى مُوسَى عَلَى الْبَشَرِ فَسَمِعَهُ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَقَامَ فَلَطَمَ وَجْهَهُ وَقَالَ تَقُولُ وَالَّذِى اصْطَفَى مُوسَى عَلَى الْبَشَرِ وَالنَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ أَظْهُرِنَا فَذَهَبَ إِلَيْهِ فَقَالَ أَبَا الْقَاسِمِ إِنَّ لِى ذِمَّةً وَعَهْدًا فَمَا بَالُ فُلاَنٍ لَطَمَ وَجْهِى فَقَالَ لِمَ لَطَمْتَ وَجْهَهُ فَذَكَرَهُ فَغَضِبَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم حَتَّى رُئِىَ فِى وَجْهِهِ ثُمَّ قَالَ لاَ تُفَضِّلُوا بَيْنَ أَنْبِيَاءِ اللَّهِ فَإِنَّهُ يُنْفَخُ فِى الصُّورِ فَيَصْعَقُ مَنْ فِى السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِى الأَرْضِ إِلاَّ مَنْ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ يُنْفَخُ فِيهِ أُخْرَى ، فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ بُعِثَ فَإِذَا مُوسَى آخِذٌ بِالْعَرْشِ ، فَلاَ أَدْرِى أَحُوسِبَ بِصَعْقَتِهِ يَوْمَ الطُّورِ أَمْ بُعِثَ قَبْلِى-
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার এক ইহুদী তার কিছু দ্রব্য সামগ্রী কিক্রির জন্য পেশ করছিল। তার বিনিময়ে তাকে এমন কিছু দেওয়া হলো যা সে পসন্দ করল না । তখন সে বলল, না! সেই সত্তার কসম, যে মূসা (আঃ) কে মানব জাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন। এ কথাটি একজন আনছারী শুনলেন, তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। আর তার মুখের উপর এক চড় মারলেন। আর বললেন, তুমি বলছো, সেই সত্তার কসম! যিনি মূসাকে মানব জাতির উপর মার্যাদা দান করেছেন অথচ নবী (ছাঃ) আমাদের মধ্যে অবস্থান করছেন। তখন সেই ইয়াহূদী লোকটি নবী (ছাঃ)-এর নিকট গেল এবং বলল, হে আবুল কাসিম! নিশ্চয়ই আমার জন্য নিরাপত্তা এবং অঙ্গীকার রয়েছে অর্থাৎ আমি একজন যিম্মী। অমুক ব্যক্তি কী কারণে আমার মুখে চড় মারলো? তখন নবী (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন তুমি তার মুখে চড় মারলে? আনছারী লোকটি ঘটনা বর্ণনা করলো। তখন নবী (ছাঃ) রাগান্বিত হলেন। এমনকি তাঁর চেহারয় তা দেখা গেল।
অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহ্র নবীগণের মধ্যে কাউকে কারো উপর
মর্যাদা দান করো না। কেননা কিয়ামতের দিন যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন
আল্লাহ যাকে চাইবেন সে ছাড়া আসমান ও যমীনের বাকী সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে।
অতঃপর দ্বিতীয়বার তাতে ফুঁক দেয়া হবে। তখন সর্বপ্রথম আমাকেই উঠানো হবে।
তখনই আমি দেখতে পাব মুসা (আঃ) আরশ ধরে রয়েছেন। আমি জানি না, তুর পর্বতের
ঘটনার দিন তিনি যে বেহুশ হয়েছিলেন, এটা তারই বিনিময়, না আমার আগেই তাঁকে
বেহুঁশ থেকে উঠানো হয়েছে’।[6]
. . .ثُمَّ يُنْفَخُ فِى الصُّورِ فَلاَ يَسْمَعُهُ أَحَدٌ إِلاَّ أَصْغَى لِيتًا وَرَفَعَ لِيتًا - قَالَ - وَأَوَّلُ مَنْ يَسْمَعُهُ رَجُلٌ يَلُوطُ حَوْضَ إِبِلِهِ - قَالَ - فَيَصْعَقُ وَيَصْعَقُ النَّاسُ ثُمَّ يُرْسِلُ اللَّهُ - أَوْ قَالَ يُنْزِلُ اللَّهُ - مَطَرًا كَأَنَّهُ الطَّلُّ أَوِ الظِّلُّ - نُعْمَانُ الشَّاكُّ - فَتَنْبُتُ مِنْهُ أَجْسَادُ النَّاسِ ثُمَّ يُنْفَخُ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ . . .
‘তখনই শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে। যে এ আওয়াজ শুনবে
সে তার ঘাড় একদিকে অবনমিত করবে এবং অন্যদিকে উত্তোলন করবে। এ আওয়াজ
সর্বপ্রথম ঐ লোকই শুনতে পাবে যে তার উটের জন্য তাওয সংস্করণের কাজে নিযুক্ত
থাকবে। আওয়াজ শুনামাত্রই সে অজ্ঞান হয়ে লুটে পড়বে। সাথে সাথে অন্যান্য
লোকেরাও অজ্ঞান হয়ে যাবে। অতঃপর মহান আল্লাহ শুক্র ফোঁটার অথবা ছায়ার ন্যায়
বৃষ্টি বর্ষণ করবেন (বর্ণনাকারী নু‘মান (রহঃ) সন্দেহ প্রকাশ করেছেন)। এতে
মানুষের শরীর পরিবর্ধিত হবে। আবার শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে। আকস্মাৎ তারা
দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে’।[7]
শিঙ্গায় ফুৎকারে বর্ণনা :
শিঙ্গায় ফুৎকারদানকারী ব্যক্তি অনুমতি লাভের পর যখন তিনি ফুঁক দিবেন তখন আসমান ও যমীনের মাঝে যারা আছে তারা সকলই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ যাদের চান তারা ব্যতীত। আর এই ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়ার ফলে তারা বেহুঁশ হয়ে পড়বে এবং মারা যাবে।
তারপর যমীন ও পাহাড় কেঁপে উঠবে। পাহাড় চলতে থাকবে। ফলে তা মরীচিকার ন্যয় হয়ে পড়বে। আর পৃথিবী প্রকম্পিত হতে থাকবে। অতঃপর দ্বিতীয় ফুৎকার দেওয়া হবে। তখন প্রথম ফুৎকারে যারা বেহুঁশ হয়েছিল এবং অন্যরাও তাদের কবর থেকে উঠে দাঁড়াবে। আর তাদের প্রভুর দিকে ধাবমান হবে।
শিঙ্গায় ফুঁকদানের সংখ্যা :
শিঙ্গায় কতটি ফুৎকার দেওয়া হবে সে বিষয়ে আলেম সমাজের নিকট মতনৈক্য রয়েছে।
প্রথম মত :
ইবনু আববাস, হাসান বাছরী, ক্বাতাদাহ, আবু আব্দুল্লাহ কুরতুবী, ইবনু হাজার
প্রমূখ বিদ্বানগণের নিকট শিঙ্গায় ফুৎকারের সংখ্যা হবে দু’টি’।[8]
(১) ১ম ফুৎকার হলো ভীতি প্রদর্শন বা অজ্ঞান হওয়ার ফুৎকার। অর্থাৎ তারা এমনভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত হবে যার ফলে তারা মারা যাবে।
(২) ২য় ফুৎকার হলো পুনরুত্থান দিবসের ফুৎকার। আর তারা দলীল হিসাবে নিয়েছেন, يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ- تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ (ক্বিয়ামত অবশ্যই আসবে) যেদিন প্রকম্পিত করবে প্রকম্পিতকারী। যার পিছে পিছে আসবে আরেকটি নিনাদ’) (নাযে‘আত ৭৯/৬-৭)।
হাসান বাছরী বলেন, ফুৎকারের
সংখ্যা হবে দু’টি। ইবনু কাছীর বলেন, ইবনু আববাস বলেছেন, তা হবে দু’টি।
অনুরূপভাবে মুজাহিদ, হাসান, ক্বাতাদাহ, যাহহাক এবং অন্যরাও এর সংখ্যা
বলেছেন দু’টি। তাদের দলীল হলো রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, দুই ফুৎকারে ব্যবধান হবে
চল্লিশ’।[9]
দ্বিতীয় মত : ইবনু আরাবী, ইবনু তাইমিয়্যাহ, শাওকানীর নিকট শিঙ্গায় ফুকদানের সংখ্যা হবে ৩টি।
(১) ভীত-সন্ত্রস্ত করার ফুৎকার : যেমন মহান আল্লাহ বলেন, وَيَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ وَكُلٌّ أَتَوْهُ دَاخِرِينَ ‘আর যেদিন শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে, সেদিন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যারা আছে সবাই ভীত-বিহবল হয়ে পড়বে কেবল তারা ব্যতীত যাদেরকে আললাহ চাইবেন। আর সবাই তার কাছে আসবে বিনীত অবস্থায়’ (নামল ২৭/৭৮)।
(২) পুনরুত্থানের ফুৎকার : যেমন অপর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। অতঃপর আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সবই ধ্বংস হবে, তবে যাকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন। অতঃপর শিঙ্গায় আরেকটি ফুঁক দেওয়া হবে। তখন তারা সবাই দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে (যুমার ৩৯/৬৮)।
(৩) আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার ফুৎকার : যখন ১ম ফুৎকার দেওয়া হবে তখন মানুষ তা শুনে অজ্ঞান হয়ে পড়বে। অতঃপর যখন দ্বিতীয় ফুৎকার দেওয়া হবে তখন মানুষ তাদের কবর থেকে উঠে দাঁড়াবে। আর তৃতীয়বার ফুৎকারে তারা আল্লাহ্র প্রতি ধাবমান হবে।
প্রাধান্যযোগ্য মত :
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّورِ فَلَا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَلَا يَتَسَاءَلُونَ ‘অতঃপর যেদিন শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে, সেদিন তাদের মধ্যে কোন আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং কেউ কারু খোঁজ-খবরও নিবে না’ (মুমিনুন ২৩/১০১)। এ আয়াতটি হলো প্রথম ফুৎকারের প্রমাণ স্বরূপ। তখন সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়বে। আর এ সময় কেউ কাউকে চিনতে পারবে না। অতঃপর যখন আখেরাতের ফুৎকার দেওয়া হবে তখন পরস্পর পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করতে থাকবে। যেহেতু বুখারীর হাদীছে আছে যে, দুই ফুৎকারের মধ্যে ব্যবধান হবে চল্লিশ। কিন্তু এই চল্লিশের পরিসীমা দেওয়া হয়নি। সুতরাং এখান থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সিঙ্গায় দু’টি মাত্র ফুৎকার দেওয়া হবে।
দুই ফুৎকারে মাঝে ব্যবধান :
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, بَيْنَ النَّفْخَتَيْنِ
أَرْبَعُونَ قَالُوا يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَرْبَعُونَ يَوْمًا قَالَ
أَبَيْتُ قَالَ أَرْبَعُونَ سَنَةً قَالَ أَبَيْتُ قَالَ أَرْبَعُونَ
شَهْرًا ‘দু’বার ফুঁৎকারের মাঝে ব্যবধান চল্লিশ। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে
আবু হুরায়রা! চল্লিশ দিন? তিনি বললেন, আমার জানা নেই। তারপর তারা জিজ্ঞেস
করল, চল্লিশ বছর? তিনি বললেন, আমার জানা নেই। এরপর তাঁরা আবার জিজ্ঞেস
করলেন, তাহলে কি চল্লিশ মাস। তিনি বললেন, আমার জানা নেই’।[10]
আবু
হুরায়রা (রাঃ)-এর বারবার একই কথা দ্বারা বুঝা যায় যে, তিনি সতর্কতার জন্য
নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা হতে বিরত ছিলেন। কেননা তিনি নির্দিষ্ট সংখ্যা জানতেন
না। ফলে তিনি নিজস্ব মতামত দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন’।[11]
কারা অজ্ঞান হওয়া থেকে মুক্ত থাকবে? :
মহান আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং নিজে শিঙ্গায় ফুঁৎকারের দ্বারা কেউ কেউ যে ভীত-সন্ত্রস্ত ও অজ্ঞান হওয়া থেকে মুক্ত থাকবে তার বর্ণনা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ ‘আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। অতঃপর আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সবই ধ্বংস হবে, তবে যাকে আললাহ ইচ্ছা করেন। অতঃপর শিঙ্গায় আরেকটি ফুঁক দেওয়া হবে। তখন তারা সবাই দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে’ (যুমার ৩৯/৬৮)। অপর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, وَيَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ وَكُلٌّ أَتَوْهُ دَاخِرِينَ ‘আর যেদিন শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে, সেদিন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যারা আছে সবাই ভীত-বিহবল হয়ে পড়বে কেবল তারা ব্যতীত যাদেরকে আল্লাহ চাইবেন। আর সবাই তার কাছে আসবে বিনীত অবস্থায়’ (নামল ২৭/৮৭)। (চলবে)
[লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ]
[1]. লিসানুল আরব ৩/৬২ পৃ.।
[2]. আবু দাঊদ হা/৪৭৪২; তিরমিযী হা/ ২৪৩০, ৩২৪৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৮০।
[3]. তাফসীরে বাগাবী ৭/২১ ।
[4]. তাফসীরে তাবারী ২১/২৫।
[5]. তাফসীরে তাবারী ২৪/১৯১।
[6]. বুখারী হা/৩৪১৪।
[7]. মুসলিম হা/ ২৯৪০ (১৪০)।
[8]. মাজমু‘ ফাতওয়া ১৬/৩৫।
[9]. বুখারী হা/৪৮১৪।
[10]. বুখারী হা/৪৮১৪।
[11]. ফৎহুল বারী ১১/৩৭০।