ফযীলতপূর্ণ আমলসমূহ (৪র্থ কিস্তি)

মুহাম্মাদ আবুল কালাম 10156 বার পঠিত

১৮.   তাসবীহ ও দোয়া পাঠের ফযীলত :

আল্লাহকে স্মরণ করার  অন্যতম একটি মাধ্যম তাসবীহ পাঠ করা। তাসবীহ পাঠের মাধ্যমে জিহবা ও অন্তরকে সংযত রাখা যায়। সকাল-সন্ধ্যায় যে কোন সময় যে কোন তাসবীহ পাঠ করা যায়। আল্লাহ বলেন, وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا ‘সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহ পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর’ (আহযাব ৩৩/৪২)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ  ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ কর। আমিও  তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ো না’ (বাক্বারাহ ২/১৫২)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা  আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর’ (আহযাব ৩৩/৪১)

অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,وَاذْكُرْ رَبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ وَلَا تَكُنْ مِنَ الْغَافِلِينَ ‘আর তুমি তোমার  রবকে স্মরণ কর মনে মনে মিনতি ও ভীতি সহকারে অনুচ্চস্বরে সকালে ও সন্ধ্যায়। আর উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (আ‘রাফ ৭/২০৫)। সুতরাং তাসবীহ পাঠ ও দো‘আর মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করা যায় এবং তাকে ডাকা যায়। আল্লাহর নিকট দো’আ করলে আল্লাহ তা কবুল  করেন। তিনি বলেন, ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ‘তোমরা আমার নিকট দো’আ কর, আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব’ (মুমিন ৪০/৬০)

নিম্নে কতিপয়  ফযীলতপূর্ণ  তাসবীহ ও দো’আ  উল্লেখ  করা হলো।

(ক) سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيمِ : হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, كَلِمَتَانِ خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ ثَقِيلَتَانِ فِي الْمِيزَانِ حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمَنِ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ ‘দু’টি বাক্য রয়েছে যা বলতে খুব সহজ, মীযানের পাল্লায় খুব ভারি, আল্লাহ্র নিকট খুব প্রিয়। তা হলো ‘সুবহা-নাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম’।[1]

(খ) سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِه  : হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,  مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ غُرِسَتْ لَهُ نَخْلَةٌ فِي الْجَنَّةِ যে ব্যক্তি ‘সুবহা-নাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহী’ (অর্থাৎ মহান আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা করি তার প্রশংসার সাথে) পড়বে তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপন করা হবে’।[2]

(গ) سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ : যে ব্যক্তি দৈনিক একশত বার পাঠ করবে, সমুদ্রের ফেনার মত বেশী পরিমাণ পাপ থাকলেও আল্লাহ তা ক্ষমা করে দেবেন। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ قَالَ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ فِي يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ حُطَّتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ - ‘যে ব্যক্তি দৈনিক একশত বার পড়বে সুবহা-নাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী (অর্থাৎ আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা করি  তাঁর প্রশংসার সাথে) তাঁর গুনাহ যদি সমুদ্রের ফেনার মতো বেশী হয়, তবুও তা মাফ করে দেয়া হবে’।[3]

(ঘ) لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ : যে ব্যক্তি এই তাসবীহ দিনে একশতবার পড়বে তার দশটি  গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সমপরিমান সওয়াব হবে। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)  হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)  বলেছেন যে, من قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ فِي يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ وَكُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ وَكَانَتْ لَهُ حِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَهُ ذَلِكَ حَتَّى يُمْسِيَ وَلَمْ يَأْتِ أَحَدٌ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ إِلَّا رَجُلٌ عَمِلَ أَكْثَرَ مِنْهُ -  ‘ব্যক্তি দিনে একশতবার  পড়বে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর’  (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত পক্ষে কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই রাজত্ব  তারই  প্রশংসা এবং তিনি হচ্ছেন সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান) তার দশটি  গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সমপরিমান ছওয়াব হবে। তার জন্য একশত নেকী লেখা হবে, তার একশতটি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, তার জন্য এ দো’আ ঐ দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান হতে বেঁচে থাকার জন্য রক্ষাকবচ হবে এবং সে যে কাজ করেছে তার চেয়ে উত্তম কাজ অন্য কেউ করতে পারবে না, কেবল  ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে এ চেয়ে বেশী পড়বে।[4] 

অন্য হাদীসে এসেছে যে ব্যক্তি উক্ত তাসবীহটি  দশবার পাঠ করবে সে যেন ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশের  চারজন গোলামকে মুক্ত করে দিলেন।[5]

(ঙ) سُبْحَانَ اللهِ : হযরত সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَكْسِبَ كُلَّ يَوْمٍ أَلْفَ حَسَنَةٍ؟» فَسَأَلَهُ سَائِلٌ مِنْ جُلَسَائِهِ: كَيْفَ يَكْسِبُ أَحَدُنَا أَلْفَ حَسَنَةٍ؟ قَالَ: «يُسَبِّحُ مِائَةَ تَسْبِيحَةٍ فَيُكْتَبُ لَهُ أَلْفُ حَسَنَةٍ أَوْ يُحَطُّ عَنهُ ألفُ خطيئةٍ» ‘একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে ছিলাম। এ সময় তিনি (ছাঃ) বললেন, তোমাদের কেউ কি একদিনে এক হাজার নেকী আদায় করতে সক্ষম? তার সাথে বসা লোকদের কেউ বললেন, আমাদের কেউ কিভাবে একদিনে এক হাজার নেকী আদায় করতে সক্ষম হবেন? তখন রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, কেউ যদি একদিনে একশতবার ‘সুবহানাল্লাহ’ পড়ে তাহলে এতে তার জন্য একহাযার নেকী লেখা হবে অথবা এক হাজার গুনাহ মাফ করা হবে’।[6] 

(চ) لا اله الا الله ، الحمد لله ، وسبحان الله ، الله اكبر : এই চারটি বাক্য  পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাক্য। হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَأَنْ أَقُولَ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْس -  ‘সুবহানাল্লাহ (আল্লাহ পবিত্র) ওয়াল হামদুলিল্লাহ  (আল্লাহর জন্য প্রশংসা) ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহ  (আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবুদ নেই) ওয়াল্লাহু  আকবার  (আল্লাহ সর্বাপেক্ষা মহান)’ বলা আমার কাছে সমগ্র বিশ্ব অপেক্ষাও বেশি  প্রিয়।[7]

অপর হাদীছে এসেছে, হযরত সামুরাহ ইবনে জনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَفْضَلُ الْكَلَامِ أَرْبَعٌ: سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، لَا عَلَيْكَ بِأَيِّهِنَّ بَدَأْتَ ‘সর্বোত্তম (মর্যাদাপূর্ণ) কালাম বা বাক্য হলো চারটি- (১) সুবহানাল্লাহ (আল্লাহ পবিত্র) (২) ওয়াল হামদুলিল্লাহ (আল্লাহর জন্য প্রশংসা) (৩) ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত  পক্ষে কোন মাবুদ নেই) (৪) ওয়াল্লাহু আকবার (আল্লাহ সর্বাপেক্ষা মহান)’। অন্য এক  বর্ণনায় আছে, ‘আল্লাহ্র  নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় বাক্য চারটি (১) সুবহান আল্লাহ (২)  আল হামদুলিল্লাহ (৩) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (৪) ওয়াল্লাহু আকবার। এ চারটি কালেমার যে কোন একটি প্রথমে (আগ-পিছ করে) বললে তাতে তোমার  কোন ক্ষতি হবে না’।[8]

(ছ)سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَاءَ نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاته : উম্মুল মমিনীন জুওয়াইরিয়্যাহ হতে বণিত, তিনি বলেন, أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ مِنْ عِنْدِهَا بُكْرَةً حِينَ صَلَّى الصُّبْحَ وَهِيَ فِي مَسْجِدِهَا ثُمَّ رَجَعَ بَعْدَ أَنْ أَضْحَى وَهِيَ جَالِسَةٌ قَالَ: «مَا زِلْتِ عَلَى الْحَالِ الَّتِي فَارَقْتُكِ عَلَيْهَا؟» قَالَتْ: نَعَمْ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لَقَدْ قُلْتُ بَعْدَكِ أَرْبَعَ كَلِمَاتٍ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ لَوْ وُزِنَتْ بِمَا قُلْتِ مُنْذُ الْيَوْمِ لَوَزَنَتْهُنَّ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَاءَ نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاته - ‘একদিন নবী (ছাঃ) ফজরের ছালাতের পর খুব ভোরে তার নিকট হতে বের হলেন। তখন জুওয়াইরিয়্যাহ নিজ ছালাতের জায়গায় বসা। তারপর তিনি (ছাঃ) যখন ফিরে আসলেন তখন সূর্য বেশ উপরে উঠে এসেছে। আর জুওয়াইরিয়্যাহ তখনো ছালাতের জায়গায় বসে আছেন। তিনি (ছাঃ) তাকে বললেন, আমি তোমার কাছ থেকে চলে যাওয়ার সময় যে অবস্থায়  তুমি ছিলে, এখনো কি সে অবস্থায় আছ?  তিনি বললেন, হ্যাঁ।  তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি মাত্র চারটি বাক্য তিনবার পড়েছি। যদি তুমি এ  পর্যন্ত যা পড়েছ তার সাথে আমার পড়া বাক্য ওজন দেয়া হয় তাহলে এর ওযই বেশি হবে। (বাক্যগুলো হলো) ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী আদাদা খালক্বিহী, ওয়া রিয়া নাফসিহী, ওয়া যিনাতা আরশিহী, ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহী’। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার-পুত-পবিত্রতা বর্ণণা করি তাঁর প্রশংসার সাথে তাঁর সৃষ্টির সংখ্যা পরিমান, তাঁর সন্তুষ্টি পরিমান, তাঁর আরশের ওযন পরিমান, তাঁর বাক্য সমূহের সংখ্যা পরিমান।[9]

(জ) لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ : এটি জান্নাতের ভান্ডার সমূহের মধ্যে একটি ভান্ডার। যেমন হাদীছে এসেছে হযরত আবু মুসা আল আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَجَعَلَ النَّاسُ يَجْهَرُونَ بِالتَّكْبِيرِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ إِنَّكُمْ لَا تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا إِنَّكُمْ تَدْعُونَ سَمِيعًا بَصِيرًا وَهُوَ مَعَكُمْ وَالَّذِي تَدْعُونَهُ أَقْرَبُ إِلَى أَحَدِكُمْ مِنْ عُنُقِ رَاحِلَتِهِ» قَالَ أَبُو مُوسَى: وَأَنَا خَلْفَهُ أَقُولُ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ فِي نَفْسِي فَقَالَ: «يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ قَيْسٍ أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى كَنْزٍ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ؟» فَقُلْتُ: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ‘এক সফরে আমরা রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) এর সাথে ছিলাম। লোকেরা তখন উচ্চস্বরে তাকবীর বলছিল। (তাকবীর শুনে) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের  নফসের উপর রহম করো। কেননা তোমরা তাকবীরের মাধ্যমে কোন বধিরকে বা কোন অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছো না। বরং তোমরা ডাকছো এমন সত্তাকে যিনি তোমাদের সব কথা শুনেন ও দেখেন। তিনি তোমাদের সাথেই  আছেন। তোমরা যাকে ডাকছো তিনি তোমাদের প্রত্যেকের বাহনের গর্দান থেকেও বেশি নিকটে। আবু মুসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, আমি তখন রাসূলুল্লাহ (ছাছ-এর পিছনে চুপে চুপে বলছিলাম লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ (অর্থাৎ আল্লাহর সাহয্য ছাড়া আমার কোন উপায় নেই)। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আব্দুল্লাহ ইবনু ক্বায়স (আবু মুসার ডাক নাম) আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভান্ডারগুলোর মধ্যকার একটি ভান্ডারের সন্ধান দেব না? আমি বললাম,  অবশ্যই দেবেন, হে আল্লাহর রাসুল। তখন রাসূল (ছাঃ)  বললেন, সেটা হলো ‘লা-হাওলা ওয়ালা ক্যুওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ’।[10] 

বিভিন্ন দো‘আর ফযীলত

(১) اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا استعطت، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صنعتُ، أبوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي؛ فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ : এটি সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ। হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে সে জান্নাতী হবে।[11]

(২) بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ : এই দো‘আ যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়ে তার উপর আকস্মিক কোন বিপদ আপতিত হবে না। হাদীছে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্ধায় তিনবার বলবে, বিসমিল্লাহিল্লাহি লা ইয়াযুররু মাথা ইসমিহী শাইয়ুন ফিল আরযি ওয়ালা ফিসসামাই ওয়া হুয়াস সামীউল আলীম  (অর্থাৎ আমি ঐ আল্লাহর নামে শুরু করছি, যার নামে শুরু করলে আসমান ও যমীনের কোন বস্ত্তই কোন রূপ  ক্ষতিসাধন করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ)। সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোন হঠাৎ বিপদ আসবে না। আর যে ব্যক্তি তা সকালে  তিনবার বলবে সন্ধা পর্যন্ত তার উপর কোন হঠাৎ বিপদ আসবে না’।[12]

(৩)أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ : কাবা গৃহে প্রবেশের সময় যে ব্যক্তি এ দো‘আ পাঠ করবে সে সারা দিন শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা  পাবে। হাদীছে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)  মসজিদে প্রবেশ করার সময় বলতেন, ‘আমি আশ্রয় চাচ্ছি মহান আল্লাহ্র মর্যাদাপূর্ণ চেহারার ও তাঁর অফুরন্ত ক্ষমতায় বিতাড়িত শয়তান হতে’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘কেউ এ দো‘আ পাঠ করলে শয়তান বলে, আমার নিকট হতে সে সারা দিনের জন্য রক্ষা পেয়ে গেল’।[13]

(৪)اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি এ দো‘আ পাঠ করলে পাহাড়সম ঋণের বোঝা আল্লাহ পরিশোধের ব্যবস্থা করবেন। হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন তার কাছে একজন চুক্তিবদ্ধ দাস এসে বলল, আমি আমার কিতাবাতের তথা মুমিনের সাথে সম্পদের লিখিত চুক্তিপত্রের মূল্য পরিশোধ করতে পারছি না। আমাকে সাহায্য করুন। উত্তরে আলী (রাঃ) বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালাম (বাক্য) শিখিয়ে দেবো, যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে শিখিয়েছেন? যদি তোমার উপর বড় পাহাড়সম ঋণের বোঝা থাকে, তবে পড়বে- আল্লা হুম্মাকফিনী বিহালা লিকা আন হারা মিকা ওয়া আগনিনী বিফাযলিকা আম্মান সিওয়াক (অর্থাৎ হে আল্লাহ। তুমি  আমাকে হালাল (জিনিসের) সাহায্যে হারাম থেকে বেঁচে রাখ এবং তুমি আমাকে তোমার রহমতের মাধ্যমে পরমুখাপেক্ষিতা হতে রক্ষা কর।[14] 

(৫) ছালাতে ক্বওমার সময় দো‘আ পড়ার বিশেষ ফযীলত রয়েছে। এমর্মে হাদীছে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)

হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, إِذَا قَالَ الْإِمَامُ: سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَقُولُوا: اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تقدم من ذَنبه রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ইমাম যখন সামিআল্লাহ হুলিমান হামিদাহ বলবে, তখন তোমরা আল্লাহুম্মা রববানা লাকাল হামদ বলবে। কেননা যার কথা ফেরেশতার কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের (ছোট) গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে’।[15] হাদীছে এসেছে হযরত রিযাআহ ইবনু রাফি যুরাকী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী করীম (ছাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করলাম। তিনি যখন রুকু হতে মাথা উঠিয়ে سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বললেন, তখন পিছন হতে এক ছাহাবী رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ বললেন। ছালাত শেষ করে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে এরূপ বলেছিল? সে ছাহাবী বললেন, আমি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি দেখলাম ত্রিশজনের অধিক ফেরেশতা এর ছওয়াবকে আগে লিখবে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে।[16] 

(চলবে)

[লেখক : কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ]


[1]. বুখারী হা/৬৬৮২; মুসলিম হা/২৬৯৪; তিরমিযী হা/৩৪৬৭; ইবনুল মাজাহ হা/৩৮০৬; মিশকাত হা/২২৯৮।

[2]. তিরমিযী হা/৩৪৬৪; মিশকাত হা/২৩০৪।

[3]. বুখারী  হা/৬৪০৫; মুসলিম হা/২৬৯১; মিশকাত হা/২২৯৬।

[4]. বুখারী হা/৩২৯৩; মুসলিম হা/২৬৯১; তিরমিযী হা/৩৪৬৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৭৯৮; মিশকাত হা/২৩০২।

[5]. মুসলিম হা/২৬৯৩।

[6]. মুসলিম হা/২৬৯৮; তিরমিযী হা/৩৪৬৩; মিশকাত হা/২২৯৯।

[7]. মুসলিম হা/২৬৯৫; তিরমিযী হা/৩৫৯৭; মিশকাত হা/২২৯৫।

[8]. মুসলিম হা/২১৩৭; ইবনু  মাজাহ হা/৩৮১১; মিশকাত হা/২২৯৪।

[9]. মুসলিম হা/২৭২৬; মিশকাত হা/২৩০১।

[10]. বুখারী হা/৪২০৫; মুসলিম হা/২৭০৪; মিশকাত হা/২৩০৩।

[11]. বুখারী হা/৬৩০৬, মিশকাত হা/২৩৩৫।

[12]. আবু দাউদ হা/৫০৮৮; মিশকাত হা/২৩৯১।

[13]. আবু দাউদ হা/৪৬৬; মিশকাত হা/৭৪৯।

[14]. তিরমিযী হা/৩৫৬৩; আহমদ হা/১৩১৯; মিশকাত হা/২৪৪৯।

[15]. বুখারী হা/৭৯৬; মিশকাত হা/৮৭৪।

[16]. বুখারী হা/৭৯৯, মিশকাত হা/৮৭৭।




আরও