মূল্যহীন দুনিয়ার প্রতি অনর্থক ভালোবাসা (৪র্থ কিস্তি)

আব্দুর রহীম 2091 বার পঠিত

দুনিয়ার মূল্যহীনতা বুঝাতে গিয়ে রাসূল (ছাঃ) সকলকে প্রয়োজন মাফিক বৈধ পথে সম্পদ আহরণের জন্য উৎসাহিত করেছেন। কিন্তু অবৈধভাবে মূল্যহীন দুনিয়ার সম্পদের পেছনে ছুটতে নিষেধ করেছেন। যেমন বিভিন্ন হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّكُمْ مَالُ وَارِثِهِ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ مَالِهِ؟ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا مِنَّا مِنْ أَحَدٍ إِلَّا مَالُهُ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ مَالِ وَارِثِهِ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اعْلَمُوا أَنَّهُ لَيْسَ مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا مَالُ وَارِثِهِ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ مَالِهِ، مَالُكَ مَا قَدَّمْتَ، وَمَالُ وَارِثِكَ مَا أَخَّرْتَ-

আব্দুল­াহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ‘তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লা­হ (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যার নিকট নিজ সম্পত্তির চেয়ে তার ওয়ারিছদের সম্পত্তিই অধিক প্রিয়? ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের প্রত্যেকের কাছে তার নিজের সম্পত্তি তার ওয়ারিছদের সম্পত্তির চেয়ে অধিক প্রিয়। তখন রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) বললেন, জেনে রেখো! তোমাদের মধ্য এমন কেউ নাই যার কাছে তার নিজ সম্পত্তি অপেক্ষা তার ওয়ারিছদের সম্পত্তি অধিক প্রিয় নয়। তোমার সম্পত্তি হ’ল যা তুমি অগ্রিম প্রেরণ করেছ। আর তোমার ওয়ারিছদের সম্পত্তি হ’ল যা তুমি রেখে দিয়েছে’।[1]  

মানুষের নেক আমল এমন এক স্থায়ী বন্ধু যে সর্বাবস্থায় সাথে থাকবে। আর অন্য সকল বন্ধুরা সময়মত ছেড়ে চলে যাবে। যেমন হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন," الْأَخِلَّاءُ ثَلَاثَةٌ: فَإِمَّا خَلِيلٌ فَيَقُولُ لَكَ: مَا أَعْطَيْتَ، وَمَا أَمْسَكْتَ فَلَيْسَ لَكَ فَذَلِكَ مَالُكَ، وَإِمَّا خَلِيلٌ فَيَقُولُ: أَنَا مَعَكَ حَتَّى تَأْتِيَ بَابَ الْمَلِكِ، ثُمَّ أَرْجِعُ وَأَتْرُكُكَ، فَذَلِكَ أَهْلُكَ وَعَشِيرَتُكَ يُشَيِّعُونَكَ حَتَّى تَأْتِيَ قَبْرَكَ، ثُمَّ يَرْجِعُونَ فَيَتْرُكُونَكَ، وَإِمَّا خَلِيلٌ فَيَقُولُ: أَنَا مَعَكَ حَيْثُ دَخَلْتَ وَحَيْثُ خَرَجْتَ فَذَلِكَ عَمَلُكَ فَيَقُولُ: وَاللَّهِ لَقَدْ كُنْتَ مِنْ أَهْوَنِ الثَّلَاثَةِ عَلِيَّ- ‘বন্ধু তিন প্রকারের। ১. তোমার এক বন্ধু তোমাকে বলে, তুমি যা দান করেছ ও যা জমা করে রেখেছ তা তোমার নয়। ঐটিই তোমার মাল। ২. অথবা বন্ধু বলবে, আমি তোমার সাথে থাকব যতক্ষণ না তুমি মালিকের দরজায় (কবরে) পৌঁছবে। এরপর আমি তোমাকে ছেড়ে ফিরে যাব। এরাই তোমার পরিবার-পরিজন। তোমার কবরে যাওয়া পর্যন্ত বিদায় জানাবে। এরপর তারা তোমাকে ছেড়ে ফিরে যাবে। ৩. অথবা বন্ধু বলবে, তুমি যেখানে প্রবেশ কর বা বের হও আমি তোমার সাথে আছি। আর এটিই তোমার আমল। তখন সে বলবে, আল্লাহর কসম, তুমিই আমার নিকট তিনটির মধ্যে সহজ ছিলে’।[2]  

ধন-সম্পদের প্রতি ভালোবাসা পরিহার করতে গিয়ে রাসূল (ছাঃ) তার কাছে থাকা সকল সম্পদ খরচ করে দিয়েছিলেন। তিনি লজ্জাবোধ করতেন যে, যদি তিনি কোন সম্পদ রেখে যাওয়া অবস্থায় মারা যান তাহলে আল্লাহ তার প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করতে পারেন। সেজন্য মূমুর্ষূ অবস্থায় যখনই জ্ঞান ফিরেছে তখনই তার কাছে থাকা সম্পত্তির হিসাব-নিকাশ নিয়ে দান করে দিতে বলেছেন। যেমন হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِى وَجَعِهِ الَّذِى مَاتَ فِيهِ  مَا فَعَلَتِ الذَّهَبُ. قَالَتْ قُلْتُ هِىَ عِنْدِى. قَالَ : ائْتِينِى بِهَا. فَجِئْتُ بِهَا وَهِىَ مَا بَيْنَ التِّسْعِ أَوِ الْخَمْسِ فَوَضَعَهَا فِى يَدِهِ ثُمَّ قَالَ بِهَا  وَأَشَارَ يَزِيدُ بِيَدِهِ مَا ظَنُّ مُحَمَّدٍ بِاللَّهِ لَوْ لَقِىَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَهَذِهِ عِنْدَهُ أَنْفِقِيهَا-

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) তাঁর যে রোগে মৃত্যু বরণ করেছিলেন সেই সময়ে বলেছিলেন, হে আয়েশা! তোমার সেই সোনা কী করেছ? আমি বললাম, আমার কাছেই আছে। তিনি বললেন, আমার নিকট নিয়ে এস। আমি (তাঁর নিকট) তা নিয়ে এলাম। তার পরিমাণ নয় অথবা পাঁচের মাঝামাঝি। তিনি সেগুলো তাঁর হাতে রাখলেন, তারপর তা দিয়ে ইশারা করে বললেন, (বর্ণনাকারী ইয়াযিদ তার হাত দিয়ে ইশারা করে দেখাল) যদি এই সোনা মুহাম্মাদের কাছে থাকে আর সে যদি এমতাবস্থায় আল্লাহ্র সঙ্গে মিলিত হয় তবে আল্লাহ্র প্রতি তার ধারণা কেমন দাঁড়াবে? তুমি এগুলো দান করে দাও।[3]   অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: كَانَتْ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبْعَةُ دَنَانِيرَ وَضَعَهَا عِنْدَ عَائِشَةَ، فَلَمَّا كَانَ عِنْدَ مَرَضِهِ، قَالَ: يَا عَائِشَةُ اذْهَبِي بِالذَّهَبِ إِلَى عَلِيٍّ، ثُمَّ أُغْمِيَ عَلَيْهِ، وَشَغَلَ عَائِشَةَ مَا بِهِ، حَتَّى قَالَ ذَلِكَ مِرَارًا، كُلَّ ذَلِكَ يُغْمَى عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ويَشْغَلُ عَائِشَةَ مَا بِهِ، فَبَعَثَ بِهِ إِلَى عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، فَتَصَدَّقَ بِهَا، وَأَمْسَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ الِاثْنَيْنِ فِي جَدِيدِ الْمَوْتِ، فَأَرْسَلَتْ عَائِشَةُ بِمِصْباحٍ لَهَا إِلَى امْرَأَةٍ مِنْ نِسَائِهَا، فَقَالَتْ: اهْدِي لَنَا فِي مِصْباحِنَا مِنْ عُكَكِ السَّمْنِ، فَإِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمْسَى فِي جَدِيدِ الْمَوْتِ-

সাহল বিন সা‘দ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর মালিকানায় সাতটি দীনার ছিল যা আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট রেখেছিলেন। অসুস্থতাকালে তিনি বললেন, স্বর্ণগুলো নিয়ে আলী (রাঃ)-এর নিকট নিয়ে যাও। এর মধ্যে তিনি বেহুঁশ হয়ে যান। আর আয়েশা (রাঃ) ও ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি একাধিকবার এই কথা বলেন এবং বারবারই বেহুঁশ হয়ে যান এবং আয়েশা (রাঃ) তাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে তা আলী (রাঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে দেন এবং তিনি তা ছাদাক্বা করে দেন। সোমবারের রাতে তিনি নতুনভাবে মৃত্যুর যন্ত্রনায় নিপতিত হন। আয়েশা (রাঃ) তার চেরাগটি তার গোত্রের জনৈক নারীর নিকট পাঠিয়ে বলেন, আমাদের চেরাগে একটু চর্বি হাদিয়া পাঠিয়ে দাও। কেননা রাসূল (ছাঃ) নতুনভাবে মৃত্যুর যন্ত্রনায় পড়েছেন’।[4] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমার নিকট সে সময় তাঁর সাতটি দিনার ছিল। আল্লাহ্র নবী (ছাঃ) আমাকে সেগুলো বন্টন করে দিতে আদেশ দিলেন। কিন্তু আল্লাহ্র নবী (ছাঃ)-এর অসুস্থতা আমাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। পরে আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দিলে তিনি সে সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বলেন, সেই ছয়টা অথবা সাতটা দিনার কী করেছ? আমি বললাম, আল্লাহ্র কসম, আপনার অসুস্থতা আমাকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল। তিনি সেগুলো চাইলেন। তারপর তিনি তাঁর হাতের তালুতে সেগুলো সাজিয়ে বললেন, এগুলো অর্থাৎ ছয় অথবা সাতটা দিনার আল্লাহ্র নবীর নিকট থাকা অবস্থায় যদি তিনি আল্লাহ্র সাথে মিলিত হন তাহলে আল্লাহ্র নবীর ধারণা (আল্লাহ্র প্রতি) কেমন দাঁড়াল? [5]

অন্যত্র এসেছে, রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا يَسُرُّنِى أَنَّ لِى أُحُدًا ذَهَبًا تَأْتِى عَلَىَّ ثَالِثَةٌ وَعِنْدِى مِنْهُ دِينَارٌ إِلاَّ دِينَارٌ أُرْصِدُهُ لِدَيْنٍ عَلَىَّ- ‘আমার জন্য উহুদের সমতূল্য স্বর্ণ যদি হয় আর এর কিয়দংশও তিনদিন অতীত হওয়ার পর আমার কাছে থাকবে না- তাতেই আমি সুখী হবো। তবে যদি আমার উপর থাকা ঋণ পরিশোধের জন্য হয় তা ব্যতিক্রম।[6]

অন্য হাদীছে এসেছে, আবু যার (রাঃ) বলেন, একবার আমি নবী (ছাঃ)-এর সঙ্গে মদিনার কংকরময় প্রান্তরে হেঁটে চলছিলাম। ইতোমধ্যে উহুদ আমাদের সামনে এলো। তখন তিনি বললেন, হে আবু যার! আমি বললাম, লাববাইকা, হে আল্লাহ্র রাসূল! তিনি বললেন, আমার নিকট এ ওহুদ পরিমাণ সোনা হোক, আর তা ঋণ পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে রেখে দেওয়া ব্যতীত একটি দীনারও তা থেকে আমার কাছে জমা থাকুক আর এ অবস্থায় তিন দিন অতিবাহিত হোক তা আমাকে আনন্দিত করবে না। তবে যদি আমি তা আল্লাহ র বান্দাদের মধ্যে এভাবে তাকে ডান দিকে, বাম দিকে ও পেছনের দিকে বিতরণ করে দেই তা স্বতস্ত্র। এরপর তিনি চললেন। কিছুক্ষণ পর আবার বললেন, জেনে রেখো, প্রাচুর্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন স্বল্পাধিকারী হবে। অবশ্য যারা এভাবে, এভাবে, এভাবে ডানে, বামে ও পেছনে ব্যয় করবে, তারা এর ব্যতিক্রম। কিন্তু এরকম লোক অতি অল্পই। তারপর আমাকে বললেন, তুমি এখানে থাক। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এখানেই অবস্থান কর।

অতঃপর তিনি রাতের অন্ধকারে চলে গেলেন। এমনকি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। এরপর আমি একটা উচ্চ শব্দ শুনলাম। এতে আমি শংকিত হয়ে পড়লাম যে, সম্ভবত তিনি কোন শক্রর সম্মুখীন হয়েছেন। এজন্য আমি তার কাছেই যেতে চাইলাম। কিন্তু তখনই আমার স্মরণ হলো যে, তিনি আমাকে বলে গিয়েছেন যে, আমি না আসা পর্যন্ত তুমি আর কোথাও যেয়ো না। তাই আমি সেদিকে আর গেলাম না। ইতোমধ্যে তিনি ফিরে এলেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল­াহ! আমি একটা শব্দ শুনে তো শংকিত হয়ে পড়েছিলাম। বাকী ঘটনা বর্ণনা করলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি শব্দ শুনেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ ইনি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তিনি আমার কাছে এসে বললেন, আপনার উম্মাতের কেউ যদি আল্লাহ্র সঙ্গে কাউকে শরীক না করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তবে সে জান্নাতে দাখিল হবে। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, যদি সে যিনা করে এবং যদি সে চুরি করে। তিনি বললেন, যদিও সে যিনা করে এবং যদিও চুরি করে।[7]

তিনি আরো বলেন, مَا أُحِبُّ أَنَّ لِيَ أُحُدًا ذَهَبًا وَفِضَّةً، أُنْفِقُهُ فِي سَبِيلِ اللهِ أَمُوتُ يَوْمَ أَمُوتُ، فَأَدَعُ مِنْهُ قِيرَاطًا قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ، قِنْطَارًا، قَالَ : يَا أَبَا ذَرٍّ، أَذْهَبُ إِلَى الأَقَلِّ وَتَذْهَبُ إِلَى الأَكْثَرِ، أُرِيدُ الآخِرَةَ وَتُرِيدُ الدُّنْيَا قِيرَاطًا فَأَعَادَهَا عَلَيَّ ثَلاثَ مَرَّاتٍ. ‘আমার জন্য এটি আনন্দদায়ক নয় যে, ওহুদ পাহাড় সমতুল্য আমার সোনা ও রূপা থাকবে তা আমি মৃত্যু অবধি আল্লাহ্র রাস্তায় খরচ করতে থাকব। অতঃপর তা থেকে এক কেরাত্ব রেখে যাব। বর্ণনকারী ছাহাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! তাহলে অগাধ সম্পদ রেখে যাওয়াকে পসন্দ করেন? তিনি বললেন, হে আবু যার! আমি অল্পের দিকে যাচ্ছি আর তুমি অধিকের দিকে যাচ্ছ। আমি পরকাল কামনা করছি, আর তুমি দুনিয়ার ক্বেরাত্ব কামনা করছ। তিনি এ কথা আমার নিকট তিনবার বললেন’।[8]

হাদীছে আরো এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم الْتَفَتَ إِلَى أُحُدٍ فَقَالَ : وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ مَا يَسُرُّنِى أَنَّ أُحُداً يُحَوَّلُ لآلِ مُحَمَّدٍ ذَهَباً أُنْفِقُهُ فِى سَبِيلِ اللَّهِ أَمُوتُ يَوْمَ أَمُوتُ أَدَعُ مِنْهُ دِينَارَيْنِ إِلاَّ دِينَارَيْنِ أُعِدُّهُمَا لِدَيْنٍ إِنْ كَانَ. فَمَاتَ وَمَا تَرَكَ دِينَاراً وَلاَ دِرْهَماً وَلاَ عَبْداً وَلاَ وَلِيدَةً وَتَرَكَ دِرْعَهُ مَرْهُونَةً عِنْدَ يَهُودِىٍّ عَلَى ثَلاَثِينَ صَاعاً مِنْ شَعِيرٍ-

ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) ওহুদ পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন তার কসম করে বলছি, আমাকে এটি আনন্দিত করে না যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরিবারের জন্য ওহুদ পাহাড় স্বর্ণের পাহাড়ে রুপান্তরিত হয়ে যাক। আর আমি তা থেকে আল্লাহ্র পথে মৃত্যু অবধি খরচ করে যাই। অতঃপর তা থেকে দুই দীনার রেখে যাই। তবে ঐ দুই দীনার ব্যতীত যা ঋণ পরিশোধের জন্য প্রস্ত্তত রাখি যদি ঋণ থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি মারা গেলেন অথচ তিনি একটি দীনার বা দিরহাম, দাস বা দাসী রেখে গেলেন না। কেবল রেখে গেলেন একটি বর্ম যেটি তিনি ষাট ছা‘ যবের বিনিময়ে জনৈক ইহুদীর নিকট বন্ধক রেখেছিলেন।[9]

ছাহাবীগণের সম্পদের প্রতি অনিহা :

ছাহাবায়ে কেরামও সম্পদ জমা রাখাকে চরম অপসন্দ করতেন। সেজন্য তারা তাদের কাছে থাকা সম্পদ নিয়ে চিন্তায় থাকতেন। তাদের কাছে থাকা সম্পদ আল্লাহ্র পথে খরচ করে দিতেন। ওমর (রাঃ) একবার সম্পদের প্রতি ভালোবাসা ও লোভের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর কয়েকজন ছাহাবীকে পরীক্ষা করেছিলেন। যেমন আছারে এসেছে, মালেকুদ্দার বলেন,أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، أَخَذَ أَرْبَعَمِائَةِ دِينَارٍ فَجَعَلَهَا فِي صُرَّةٍ، فَقَالَ لِلْغُلَامِ: اذْهَبْ بِهِمْ إِلَى أَبِي عُبَيْدَةَ بْنِ الْجَرَّاحِ، ثُمَّ تَلَّهُ سَاعَةً فِي الْبَيْتِ سَاعَةً حَتَّى تَنْظُرَ مَا يَصْنَعُ، فَذَهَبَ بِهَا الْغُلَامُ إِلَيْهِ فَقَالَ: يَقُولُ لَكَ أَمِيرُ الْمُؤْمِنِينَ: اجْعَلْ هَذِهِ فِي بَعْضِ حَاجَتِكَ، فَقَالَ: وَصَلَهُ اللهُ وَرَحِمَهُ، ثُمَّ قَالَ: تَعَالِي يَا جَارِيَةُ، اذْهَبِي بِهَذِهِ السَّبْعَةِ إِلَى فُلَانٍ، وَبِهَذِهِ الْخَمْسَةِ إِلَى فُلَانٍ، حَتَّى أَنْفَذَهَا، فَرَجَعَ الْغُلَامُ، وَأَخْبَرَهُ فَوَجَدَهُ قَدْ أَعَدَّ مِثْلَهَا إِلَى مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ فَقَالَ: اذْهَبْ بِهَذَا إِلَى مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ وَتَلَّهُ فِي الْبَيْتِ حَتَّى تَنْظُرَ مَا يَصْنَعُ، فَذَهَبَ بِهَا إِلَيْهِ فَقَالَ: يَقُولُ لَكَ أَمِيرُ الْمُؤْمِنِينَ: اجْعَلْ هَذَا فِي بَعْضِ حَاجَتِكَ، فَقَالَ: رَحِمَهُ اللهُ وَوَصَلَهُ، تَعَالِي يَا جَارِيَةُ، اذْهَبِي إِلَى بَيْتِ فُلَانٍ بِكَذَا، وَاذْهَبِي إِلَى بَيْتِ فُلَانٍ بِكَذَا، فَاطَّلَعَتِ امْرَأَةُ مُعَاذٍ فَقَالَتْ: نَحْنُ وَاللهِ مَسَاكِينُ، فَأَعْطِنَا، وَلَمْ يَبْقَ فِي الْخِرْقَةِ إِلَّا دِينَارَانِ، فَدَحَا بِهِمَا إِلَيْهَا، وَرَجَعَ الْغُلَامُ إِلَى عُمَرَ، فَأَخْبَرَهُ وَسُرَّ بِذَلِكَ، وَقَالَ: إِنَّهُمْ إِخْوَةٌ بَعْضُهُمْ مِنْ بَعْضٍ ‘একদিন ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) চারশ দীনার নিয়ে ব্যাগে রাখলেন। এরপর তিনি তার খাদেমকে বললেন, এটি নিয়ে আবু ওবায়দা ইবনুল জার্রাহ্র কাছে যাও এবং তার বাড়িতে কিছুক্ষণ অবস্থান করে দেখবে এগুলো দিয়ে সে কি করছে। খাদেম সেগুলো তার কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, আমীরুল মুমিনীন বলেছেন, যাতে এগুলো আপনি প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করেন। তখন সে বলল, আল্লাহ্র তার সাথে সুসস্পর্ক গড়ে তুলুন এবং তার প্রতি দয়া করুন। এরপর সে তার দাসীকে ডেকে বলল, এই সাতটি দীনার ওমুককে ও এই পাঁচটি ওমুককে দান করে দাও। এভাবে সবগুলো শেষ করে দিলেন। খাদেম ওমর (রাঃ)-এর নিকট ফিরে গিয়ে সংবাদ দিলেন এবং দেখলেন অনুরূপ ব্যাগ মু‘আয বিন জাবালের জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছেন। তিনি খাদেমকে বললেন, এটি নিয়ে মু‘আয বিন জাবালের কাছে যাও এবং তার বাড়িতে কিছুক্ষণ অবস্থান করে দেখবে এগুলো দিয়ে সে কি করছে। খাদেম সেগুলো তার কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, আমীরুল মুমিন বলেছেন, যাতে এগুলো আপনি প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করেন। তখন সে বলল, আল্লাহ্র তার সাথে সুসস্পর্ক গড়ে তুলুন এবং তার প্রতি দয়া করুন। এরপর সে তার দাসীকে ডেকে বলল, এগুলো ওমুকের বাড়িতে আর এগুলো ওমুকের বাড়িতে পৌঁছে দাও। তখন মু‘আযের স্ত্রী উঁকি মেরে বললেন, আল্লাহ্র কসম আমরাই তো মিসকীন, আমাদের দিন। থলেতে দু’টি দীনার ব্যতীত কিছুই ছিল না। সে দু’টো তিনি তার দিকে ছুড়ে ফেললেন। খাদেম ওমর (রাঃ)-এর নিকট ফিরে এসে সংবাদ দিলে তিনি আনন্দ পেলেন এবং বললেন, তারা পরস্পরে ভাই ভাই।[10]

অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হাদরাদ আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,أَنَّهُ أَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَسْتَعِينُهُ فِى مَهْرِ امْرَأَةٍ فَقَالَ : كَمْ أَمْهَرْتَهَا. قَالَ مِائَتَيْ دِرْهَمٍ. فَقَالَ: لَوْ كُنْتُمْ تَغْرِفُونَ مِنْ بَطَحَانَ مَا زِدْتُمْ- ‘তিনি (তার এক) স্ত্রীর মোহর পরিশোধে সাহায্য প্রার্থনা করতে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট আসেন। তিনি বললেন, তুমি তার মোহর কত ধার্য করেছ? তিনি বললেন, দুইশত দিরহাম। তখন তিনি বললেন, তোমাদের যদি পাথর কাটতে হ’ত তাহলে বেশী (মোহর) ধার্য করতে না।[11]  অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ سُعْدَى، قَالَتْ: دَخَلَ عَلَيَّ يَوْمًا طَلْحَةُ، فَرَأَيْتُ مِنْهُ ثِقَلًا، فَقُلْتُ: مَا لَكَ، لَعَلَّ رَابَكَ مِنَّا شَيْءٌ فَنُعْتِبَكَ؟ قَالَ: لَا، وَلَنِعْمَ حَلِيلَةِ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ أَنْتِ، وَلَكِنِ اجْتَمَعَ عِنْدِي مَالٌ وَلَا أَدْرِي كَيْفَ أَصْنَعُ بِهِ . قَالَتْ: وَمَا يَغُمُّكَ مِنْهُ؟ أُدْعُ قَوْمَكَ فَاقْسِمْهُ بَيْنَهُمْ، فَقَالَ: يَا غُلَامُ، عَلَيَّ قَوْمِي، فَسَأَلْتُ الْخَازِنَ: كَمْ قَسَمَ؟ قَالَ: أَرْبَعَمِائَةِ أَلْفٍ-

সু‘দা হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন তালহা (রাঃ) আমার কাছে আসলেন। স্বামীকে চিন্তাগ্রস্ত দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার? সম্ভবতঃ আমাদের ব্যাপারে আপনার কোন সন্দেহ হয়েছে; যার মাধ্যমে আমরা আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি? উত্তরে তালহা বললেন, না। তুমি কত উত্তমই না মুসলিমের স্ত্রী! আসলে আমার কাছে কিছু মাল জমা হয়ে গেছে। জানি না সেগুলো কি করব? স্ত্রী বললেন, সে ব্যাপারে আপনার দুশ্চিন্তা কিসের? আপনি আপনার গোত্রের লোককে ডেকে তা বিতরণ করে দিন! তালহা কিশোর খাদেমকে গোত্রের লোককে ডেকে হাযির করতে বললেন এবং সমস্ত মাল তাদের মাঝে বন্টন করে দিলেন। সে মাল ছিল ৪ লক্ষ (দিরহাম)! [12]  কি বিষ্ময়কর অবস্থা যে, যেখানে আমাদের সম্পদ না থাকলে চিন্তা করি সেখানে ছাহাবায়ে কেরাম তাদের জমা থাকা সম্পদ নিয়ে চিন্তা করছেন। কীভাবে সম্পদগুলো খরচ করা যায়। আর মহিলা ছাহাবীগণ ছিলেন আল্লাহ্র আদর্শ বান্দী যারা স্বামীকে আল্লাহ্র পথে খরচ করার প্রতি উৎসাহিত করতেন।

দরিদ্রতা বা অভাব-অনটন মুসলমানদের জন্য দোষণীয় নয়। কারণ যারা ইসলামের বিধান মনে চলবে তাদের দিকে দরিদ্রতা বন্যার পানির থেকেও দ্রুত এগিয়ে আসবে। যেমন হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِي سَعِيدٍ: أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ شَكَا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَاجَتَهُ، فَقَالَ: " اصْبِرْ أَبَا سَعِيدٍ، فَإِنَّ الْفَقْرَ إِلَى مَنْ يُحِبُّنِي أَسْرَعُ مِنَ السَّيْلِ مِنْ أَعَلَى الْوَادِي، أَوْ مِنْ أَعَلَى الْجَبَلِ إِلَى أَسْفَلِهُ- আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) কর্তৃক তার পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ)-এর নিকট তার অভাবের অভিযোগ করেন। তিনি বললেন, হে আবু সাঈদ, ধৈর্য ধরো। কেননা, তোমাদের মধ্যে যে আমাকে ভালবাসবে তার দিকে উপত্যকার উপরিভাগ থেকে এবং পাহাড়ের উপর থেকে নিচের দিকে বন্যার পানি যত দ্রুত নেমে আসে তার থেকেও অতি দ্রুত গতিতে দরিদ্রতা ধেয়ে আসবে।[13]  

আনাস (রাঃ) বলেন, أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  رَجُلٌ فَقَالَ: إِنِّي أُحِبُّكَ، فَقَالَ: اسْتَعِدَّ لِلْفَاقَةِ  ‘জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি আপনাকে ভালোবাসি। তখন তিনি বললেন, দরিদ্র জীবন-যাপনের জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করো। [14]

দুনিয়ার মূল্যহীনতা ও দুনিয়ার পরিসমাপ্তির ব্যাপারে অন্যত্র এসেছে, عن ابْنِ مَسْعُودٍ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى جَعَلَ الدُّنْيَا كُلَّهَا قَلِيلًا، وَمَا بَقِيَ مِنْهَا إِلَّا الْقَلِيلُ مِنَ الْقَلِيلِ، وَمَثَلُ مَا بَقِيَ مِنْهَا كَالثَّغْبِ- يَعْنِي الْغَدِيرَ  شُرِبَ صَفْوُهُ وَبَقِيَ كَدَرُهُ- ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ  তা‘আলা পুরো দুনিয়াকে অল্প বানিয়েছেন। সেই অল্প থেকেও এখন অল্পমাত্র অবশিষ্ট রয়েছে। দুনিয়ার যা অবশিষ্ট আছে তার উদাহরণ ঐ পুকুর বা দীঘির ন্যায় যার (উপরের) নির্মল পানিটুকু পান করা হয়ে গেছে এবং (নীচের) ঘোলা পানি পড়ে রয়েছে।[15]

অন্য হাদীছে এসেছে, মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, إِنَّ مَا بَقِىَ مِنَ الدُّنْيَا بَلاَءٌ وَفِتْنَةٌ وَإِنَّمَا مَثَلُ عَمِلِ أَحَدِكُمْ كَمَثَلِ الْوِعَاءِ إِذَا طَابَ أَعْلاَهُ طَابَ أَسْفَلُهُ وَإِذَا خَبُثَ أَعْلاَهُ خَبُثَ أَسْفَلُهُ ‘দুনিয়ার যা অবশিষ্ট আছে তা কেবল বালা-মুছিবত ও ফিৎনা-ফাসাদ। আর তোমাদের কারো আমলের উদাহরণ পাত্রের উদাহরণের ন্যায়; যখন পাত্রের (খাদ্যের) উপরিভাগ ভাল থাকে তখন নিচের দিকও ভাল থাকে। আর যখন উপরিভাগ নষ্ট হয়ে যায় তখন নিচের ভাগও নষ্ট হয়ে যায়’[16]

অবৈধ উপার্জন যে কোনভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ  তাতে বরকত দান করেন না। সেজন্য আল্লাহ্র নিকট মূল্যহীন সম্পদ উপার্জনের ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতে হবে। যেমন হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) বলেছেন, أَنَّ رَجُلاً كَانَ يَبِيعُ الْخَمْرَ فِى سَفِينَةٍ وَكَانَ يَشُوبُهُ بِالْمَاءِ وَكَانَ مَعَهُ فِى السَّفِينَةِ قِرْدٌ قَالَ: فَأَخَذَ الْكِيسَ وَفِيهِ الدَّنَانِيرُ  قَالَ  فَصَعِدَ الذَّرْوَ  يَعْنِى الدَّقَلَ فَفَتَحَ الْكِيسَ فَجَعَلَ يُلْقِى فِى الْبَحْرِ دِينَاراً وَفِى السَّفِينَةِ دِينَاراً حَتَّى لَمْ يَبْقَ فِيهِ شَىْءٌ  ‘এক লোক জাহাজে মদ বেচত। সে মদের সাথে পানি মিশাত। তার সাথে একটা বানর ছিল। একদিন বানরটা তার টাকার থলে নিয়ে মাস্ত্তলের মাথায় উঠে গেল। তারপর সে থলে থেকে এক দিনার সমুদ্রে এবং এক দিনার জাহাজে ফেলতে লাগল (এভাবে সে দিনারগুলো দু’ভাগ করে ফেলল)। অবশেষে থলেতে কিছুই অবশিষ্ট রইল না। [17]

عَنْ يَحْيَى بْنِ جَعْدَةَ قَالَ: عَادَ خَبَّابَ بْنَ الْأَرَتِّ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَقَالُوا لَهُ: أَبْشِرْ يَا عَبْدَ اللهِ، تَرِدُ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَوْضَ , فَقَالَ خَبَّابٌ: كَيْفَ بِهَذَا ؟ وَأَشَارَ إِلَى أَسْفَلَ بَيْتِهِ وَأَعْلَاهُ , وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّمَا يَكْفِي أَحَدَكُمْ مَا كَانَ فِي الدُّنْيَا مِثْلُ زَادِ الرَّاكِبِ -

ইয়াহইয়া ইবনু জা‘দা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কতিপয় ছাহাবী খাববাব (রাঃ)-এর রোগ পরিচর্যাকালে তাকে বলেন, হে আবু আব্দুল­াহ! সুসংবাদ শোনো। তুমি তো হাওযে কাওছারের তীরে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পাশে থাকবে। তিনি তখন তার বাড়ির উপরতলা ও নীচ তলার দিকে ইশারা করে বললেন, এটা ও ওটার কী হবে? এদিকে নবী করীম (ছাঃ) তো বলেছেন, দুনিয়ায় অবস্থানকালে তোমাদের যেকোন জনের জন্য একজন আরোহীর পাথেয় পরিমাণ সম্পদই যথেষ্ট।[18] 

আনাস (রাঃ) বলেন, اشْتَكَى سَلْمَانُ فَعَادَهُ سَعْدٌ فَرَآهُ يَبْكِى فَقَالَ لَهُ سَعْدٌ مَا يُبْكِيكَ يَا أَخِى أَلَيْسَ قَدْ صَحِبْتَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَلَيْسَ أَلَيْسَ قَالَ سَلْمَانُ مَا أَبْكِى وَاحِدَةً مِنَ اثْنَتَيْنِ مَا أَبْكِى صَبًّا لِلدُّنْيَا وَلاَ كَرَاهِيَةً لِلآخِرَةِ وَلَكِنْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَهِدَ إِلَىَّ عَهْدًا فَمَا أُرَانِى إِلاَّ قَدْ تَعَدَّيْتُ. قَالَ وَمَا عَهِدَ إِلَيْكَ قَالَ عَهِدَ إِلَىَّ أَنَّهُ يَكْفِى أَحَدَكُمْ مِثْلُ زَادِ الرَّاكِبِ وَلاَ أُرَانِى إِلاَّ قَدْ تَعَدَّيْتُ وَأَمَّا أَنْتَ يَا سَعْدُ فَاتَّقِ اللَّهَ عِنْدَ حُكْمِكَ إِذَا حَكَمْتَ وَعِنْدَ قَسْمِكَ إِذَا قَسَمْتَ وَعِنْدَ هَمِّكَ إِذَا هَمَمْتَ. قَالَ ثَابِتٌ فَبَلَغَنِى أَنَّهُ مَا تَرَكَ إِلاَّ بِضْعَةً وَعِشْرِينَ دِرْهَمًا مِنْ نَفَقَةٍ كَانَتْ عِنْدَهُ. ‘সালমান (রাঃ) অসুস্থ হয়ে পড়লে সা‘দ (রাঃ) তাকে দেখতে যান। তিনি তাকে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করেন, হে ভাই! আপনি কাঁদছেন কেন? আপনি কি রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেননি? আপনি কি এই এই (ভালো কাজ) করেননি। সালমান (রাঃ) বলেন, আমি এই দু’টির কোনটির জন্যই কাঁদছি না। আমি দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার আক্ষেপে বা আখেরাতের পরিণতির আশংকায় কাঁদছি না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার নিকট থেকে একটি প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন, কিন্তুু মনে হয় আমি তাতে সীমালংঘন করেছি। সাদ (রাঃ) বলেন, তিনি আপনার থেকে কী প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন? সালমান (রাঃ) বলেন, তিনি এই প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন যে, তোমাদের যে কোন ব্যক্তির একজন মুসাফিরের সমপরিমাণ পাথেয় যথেষ্ট। কিন্তু আমি লক্ষ্য করছি যে, আমি সীমালংঘন করে ফেলেছি। হে ভাই সা‘দ! যখন তুমি বিচার মীমাংসা করবে, ভাগ-বাঁটোয়ারা করবে এবং কোন কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করবে তখন আল্লাহকে ভয় করবে। ছাবিত (রাঃ) বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, (মৃত্যুর সময়) সালমান (রাঃ) তার ভরণপোষণের জন্য সঞ্চিত মাত্র বিশাধিক দিরহাম রেখে যান।[19]

 (চলবে)

 [লেখক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ]


[1]. বুখারী হা/৬৪৪২; মিশকাত হা/৫১৬৮।

[2]. হাকেম হা/২৪৮; ছহীহুত তারগীব হা/৯১৯।

[3]. আহমাদ হা/২৪২৬৮; ছহীহাহ হা/২৬৫৩।

[4]. তাবারানী কাবীর হা/৫৯৯০; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৪৬৮৫; ছহীহুত তারগীব হা/৯২৭।

[5]. আহমাদ হা/২৫৫৩১;  ছহীহাহ হা/২৬৫৩।

[6]. বুখারী হা/৬৪৪৫; মুসলিম হা/৯৯১; মিশকাত হা/১৮৫৯।

[7]. বুখারী হা/৬২৬৮; মুসলিম হা/৯৪।

[8]. মুসনাদে বাযযার হা/৩৩২১; ছহীহাহ হা/৩৪৯১; ছহীহুত তারগীব হা/৯৩২।

[9]. আহমাদ হা/২৭২৪; তাবারাণী কাবীর হা/১১৮৯৯; ছহীহুত তারগীব হা/৯৩৩।

[10].  তাবারাণী কাবীর হা/৪৬; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৪৬৮৭; ছহীহুত তারগীব হা/৯২৬।

[11].  হাকেম হা/২৭৩০; আহমাদ হা/১৫৭৪৪; ছহীহাহ হা/২১৭৩।

[12]. হাকেম হা/৫৬১৫; তাবারাণী কাবীর হা/১৯৫; ছহীহুত তারগীব হা/৯২৫।

[13].শু‘আবুল ঈমান হা/১৪৭৩; আহমাদ হা/১১৩৯৭; ছহীহাহ হা/২৮২৮।

[14]. বায্যার হা/৩৫৯৫; ছহীহাহ হা/২৮২৭; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৭৯৮৫।

[15]. হাকেম হা/৭৯০৬; ছহীহাহ হা/১৬২৫।

[16].আহমাদ হা/১৬৮৯৯;  তাবারাণী কাবীর হা/৮৬৬; ছহীহাহ হা/১৭৩৪

[17].আহমাদ হা/৮৪০৮; তাবারাণী আওসাত্ব হা/২৫০৭; ছহীহাহ হা/২৮৪৪।

[18] আবু ইয়া‘লা হা/৭২১৪; ছহীহুত তারগীব হা/৩৩১৭; ছহীহাহ হা/১৭১৬।

[19]. ইবনু মাজাহ হা/৪১০৪; ছহীহুত তারগীব হা/৩২২৫; আল-আছারুছ ছহীহাহ হা/৩৭৮।



আরও