ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার

ফায়ছাল মাহমূদ 10328 বার পঠিত

চলমান অশান্ত ও হানাহানিকর পৃথিবীতে সকল মানুষ শান্তি চায় এবং শান্তির রাজ  কায়েম করতে চায়। কিন্তু কোত্থেকে আসবে শান্তি এবং কোন আদর্শ শোনাতে পারে শান্তির বাণী? কোন আদর্শ অনুসরণে মানুষ পেতে পারে শান্তি ও সুখময় পৃথিবী? জী, হ্যাঁ, সে আদর্শের নাম ইসলাম তথা শান্তি, যা বিভীষিকাময় অশান্ত পৃথিবীতে শান্তির আলো জ্বেলে দূর করতে পারে সকল অশান্তির অমানিশা, গ্লানি ও অবিশ্বাস।

ইসলাম মানুষের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর নিকট পসন্দনীয় সর্বশেষ ও চুড়ান্ত ধর্ম। আল্লাহ বলেন, إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ الله الإِسْلاَمِ  ‘নিশ্চয় ইসলাম আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম’ (আলে ইমরান ৩/১৯)। ইসলামের গাইড বুক আল কুরআন দ্বারা নবীকুল সম্রাট এবং শেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) অশান্ত ও অশান্তিময় আরব সমাজকে শান্তিময় সমাজে পরিণত করে জগৎদ্বাসীর সামনে অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন  وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلاَّ رَحْمَةً لِّلْعَالَمِين ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি’ (আম্বিয়া ২১/১০৭)।

ইসলাম এমন চুড়ান্ত জীবন বিধান যার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানে পাবে সম্মান, শান্তি ও সমৃদ্ধি, সর্বোপরি চিরসুখময় আবাসস্থল জান্নাত। যেমন কুরআনে এসেছেإِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُمْ بِإِيمَانِهِمْ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ ‘অবশ্য যেসব লোক ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে হেদায়াত দান করবেন তাদের পালনকর্তা, তাদের ঈমানের মাধ্যমে। এমন সুখময় জান্নাতের প্রতি, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় ঝরণাসুমহ’ (ইউনূস ১০/৯)। আর এজন্যই ইসলামী জীবন যাপনে আকাঙ্খী মুসলিমগণ তাদের মহান প্রভু আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে এভাবে যে, وَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ  ‘আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দুনিয়াতে ও আখিরাতে কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর’ (বাক্বারাহ ২/২০১)।

মানুষের আত্মার সুষ্ঠু গঠন ও সংশোধন এবং অনুপম চরিত্র বিনির্মাণে নবুয়তী ও রিসালাতী আদব তথা ইসলামের প্রদর্শিত শিষ্টাচারসমূহের একটি সুন্দর ও সুদূর প্রসারী প্রভাব রয়েছে। ইসলামী শিষ্টাচার তথা সততা, আমানত, ব্যক্তিগত সৌন্দর্যবোধ ও চারিত্রিক নিষ্কলুষতা, পবিত্রতা, আদল-ইনসাফ তথা ন্যায়পরায়ণতা, লজ্জাশীলতা, দয়া ও পারস্পরিক সহযোগিতা প্রভৃতি বিশ্ব মানবতার জন্য এক চিরন্তন উপহার। নিম্নে ইসলামী শিষ্টাচারের স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

(১) সততা

এটা এমন এক গুণ যা মানুষকে মহৎ ও সৎ পথে পরিচালিত করে। সততার উৎসাহ প্রদানে মহান আল্লাহ বলেন, يَآ أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُولُوا قَوْلاً سَدِيدًا يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا- ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য কথা বল, তিনি তোমাদের আমলসমূহ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে’ (আহযাব ৩৩/৭০-৭১)। প্রিয় পাঠক! উল্লেখিত আয়াতদ্বয় বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখব যে, আল্লাহভীতি অর্জন করলে এবং সত্য কথা বললে আমাদের আমলসমূহের ঘাটতি বা ত্রুটিসমূহ স্বয়ং আল্লাহই সংশোধন করে দিবেন। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُونُوا مَع الصَّادِقِينَ ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তাওবাহ ৯/১১৯)

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ‘তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, عَنْ عَبْدِ اللهَ - رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ  صلى الله عليه وسلم  قَالَ إِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِى إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِى إِلَى الْجَنَّةِ ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَصْدُقُ حَتَّى يَكُونَ صِدِّيقًا ، وَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِى إِلَى الْفُجُورِ ، وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِى إِلَى النَّارِ ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ ، حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا ‘নিশ্চয় সত্য পুণ্যের পথ দেখায় এবং পুণ্য জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ যখন অবিরত সত্য বলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তাকে সত্যবাদী বলে লেখা হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা পাপের পথ দেখায় এবং পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ যখন সর্বদা মিথ্যা বলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকটে তাকে মহা মিথ্যাবাদী বলে লিপিবদ্ধ করা হয়’।[1]

আর সততার বিপরীত হল মিথ্যা, যা পাপের মূল। মিথ্যার কারণে অনেক সময় সমাজের মানুষের দ্বারা অন্য মানুষের মাঝে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। যারা মানুষের মাঝে ফিৎনার বা অশান্তির উদ্দ্যেশে মিথ্যা প্রচার করে, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূল (ছাঃ) কঠিন হুশিয়ারীর বাণী উচ্চারণ করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ ‘এবং ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ’ (বাক্বারাহ-২/১৯১)

(২) আমানতদারিতা :

আমানত আরবী শব্দ যার শাব্দিক অর্থ-বিশ্বস্ততা, আস্থা, নিরাপত্তা, আশ্রয় ও তত্ত্বাবধান ইত্যাদি।[2] আর পরিভাষিক অর্থে ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেন, الأَمَانَةُ مَصْدَرٌ سُمِّىَ بِهِ الشيءُ الَّذِى فِي الذِّمَّةِ ‘আমানত ঐ বিষয়কে বলে যা সংরক্ষিত থাকে’।[3] আমরা সহজভাবে বলতে পারি, কারো কাছে কোন অর্থসম্পদ, বস্ত্তসামগ্রী বা জিনিস গচ্ছিত রাখাকে আমানত বলে। আর যিনি গচ্ছিত বস্ত্তকে বিশ্বস্ততার সাথে যথাযথভাবে হেফাযত বা সংরক্ষণ করেন এবং চাওয়ামাত্র কোন টাল-বাহানা ছাড়া ফেরত দেন, তাকে আল-আমীন তথা বিশ্বস্ত আমানতদার বলা হয়। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মহানবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)। আরবের ঘোর অমানিশার মধ্যেও যিনি আল-আমীন লক্বব অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন।

ইসলাম মুসলমানদেরকে আমানতদারিতার প্রতি সর্বদা উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করে। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهِ إِنَّ اللهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرً ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসূমহ প্রাপকদের নিকট পৌঁছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা করতে আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদিগকে সদূপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী’ (নিসা ৪/৫৮)

আর প্রকৃত মু‘মিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো সে হবে আমানতদার। যেমন কুরআনে আল্লাহ বলেন, وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ  ‘এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে’ (মূ‘মিনূন ২৩/৮)

ইসলামে যে ব্যক্তি অর্থসম্পদ, বস্ত্তসামগ্রী বা কথার আমানত রক্ষা করেনা সে ব্যক্তি মুনাফিক বা কপট। হাদীছে এসেছে, عَنْ عَبْدِ اللهَِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আম্র (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে খাঁটি মুনাফিক্ব এবং যার মধ্যে তার একটি দেখা যাবে তার মধ্যে মুনাফিক্বের একটি স্বভাব থাকবে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করবে (১) যখন তার নিকট কোন আমানাত রাখা হয় সে তা খেয়ানত করে, (২) যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, (৩) যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে এবং (৪) যখন কারো সাথে ঝগড়া- বিবাদ করে, তখন সে অশ্লীলভাষী হয়’। [4]  

আমানতদার ব্যক্তির জন্য রাসূল (ছাঃ) নিজেই জান্নাতের যামীনদার হবেন। যেমন হাদীছে এসেছে, عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ اضْمَنُوا لِى سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَضْمَنْ لَكُمُ الْجَنَّةَ اصْدُقُوا إِذَا حَدَّثْتُمْ وَأَوْفُوا إِذَا وَعَدْتُمْ وَأَدُّوا إِذَا ائْتُمِنْتُمْ وَاحْفَظُوا فُرُوجَكُمْ وَغُضُّوا أَبْصَارَكُمْ وَكُفُّوا أَيْدِيَكُمْ হযরত উবাদা ইবনে ছামেত (রাঃ) হ‘তে বর্ণিত, রাসূলুল­াহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের পক্ষ হতে আমাকে ছয়টি বিষয়ের যামানত দাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের যামীনদার হব। ১.তোমরা যখন কথা বল, তখন সত্য বল; ২. যখন ওয়াদা কর, তখন পূর্ণ কর; ৩. যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হয়, তা আদায় কর; ৪. নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত কর; ৫. নিজ দৃষ্টিকে অবনমিত রাখ এবং ৬. নিজ হাতকে অন্যায় কাজ হ‘তে বিরত রাখ’।[5] এছাড়াও ঈমানদার হওয়ার জন্য আমানতদার হওয়া আবশ্যিক শর্ত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَلَّمَا خَطَبَنَا رَسُولُ اللهَ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ قَالَ لاَ إِيمَانَ لِمَنْ لاَ أَمَانَةَ لَهُ وَلاَ دِينَ لِمَنْ لاَ عَهْدَ لَهُ ‘আনাস (রা) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরূপ খুৎবা খুব কমই দিয়েছেন  যাতে এ কথা বলেননি যে, যার আমানতদারিতা নেই তার ঈমান নেই এবং যার ওয়াদা- অঙ্গীকারের মূল্য নেই তার দ্বীন নেই।[6]

(৩) ব্যক্তিগত সৌন্দর্যবোধ ও চারিত্রিক নিষ্কলুষতা :

ধারাবাহিকভাবে ব্যক্তি ভালো হ‘লে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা দেশ ভালো হওয়া সম্ভব। আর ব্যক্তি বা মানুষ তার নিজের মাঝে কিভাবে সৌন্দর্যবোধকে জাগিয়ে তুলবে তার রূপরেখা প্রদান করেছে ইসলাম। মহান আল্লাহ বলেন, صِبْغَةَ الله وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ الله ِ صِبْغَةً وَنَحْنُ لَهُ عَابِدُونَ  ‘আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করেছি, আল্লাহর রং এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে? আমরা তারই এবাদত করি’ (বাক্বারাহ ২/১৩৮)

অতএব মানুষ ইসলামকে জেনে নিলে তার ব্যক্তিগত জীবন সৌন্দর্যে ভরে উঠবে। সাথে সাথে চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ যা নষ্ট হলে সে সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতা হারায় এবং সর্বদিক থেকে ধিক্কার পেতে থাকে। যেমন একটি বহুল প্রচলিত ইংরেজী প্রবাদে বলা হয়েছে যে, when wealth is lost, nothing is lost; when health is lost, something is lost; when character is lost, all is lost. ‘মানুষের যখন সম্পদ হারিয়ে যায় তখন কিছুই হারায় না; যখন স্বাস্থ্যের হানি হয় তখন কিছু ক্ষতিগ্রস্থ হয়; আর যখন চরিত্র হারিয়ে যায় তখন সবকিছুই হারিয়ে যায়।

মানবজাতির হেদায়াতের জন্য এ পৃথিবীতে যত নবী-রাসূল এসেছিলেন তারা সকলেই উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। যার সর্বোত্তম ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)। এ ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ কুরআনে সত্যায়ন করেছেন যে, وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ  ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী’। যেমন হাদীছে এসেছে, عَبْدِ الله ِ بْنِ عَمْرٍو حِينَ قَدِمَ مُعَاوِيَةُ إِلَى الْكُوفَةِ فَذَكَرَ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَمْ يَكُنْ فَاحِشًا وَلاَ مُتَفَحِّشًا. وَقَالَ قَالَ رَسُولُ الله -صلى الله عليه وسلم إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحَاسِنَكُمْ أَخْلاَقًا ‘আব্দুল্লাহ ইবনে আমর বিন আছ (রা) হ‘তে বর্ণিত, যখন মু‘আবিয়া (রাঃ) কূফায় আগমন করলেন তখন তিনি রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) (স্বভাবগতভাবে কথায় ও কাজে) অশ্লীল ছিলেন না এবং (ইচ্ছাকৃতভাবেও) অশ্লীল ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তোমাদের মধ্যে সুন্দরতম চরিত্রের অধিকারী’।[7]

উত্তম চরিত্রবান মানুষ তার সচ্চরিত্রের বদৌলতে কঠিনতম ক্বিয়ামত দিবসে মীযানের পাল্লা নেকী দ্বারা পরিপূর্ণ পাবে, যা অতীব সৌভাগ্যের। যেমন হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى الدَّرْدَاءِ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم- قَالَ مَا شَىْءٌ أَثْقَلُ فِى مِيزَانِ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ خُلُقٍ حَسَنٍ وَإِنَّ الله لَيَبْغَضُ الْفَاحِشَ الْبَذِىءَ ‘আবু দারদা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামত দিবসে মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় সচ্চরিত্র ও সদাচারের চেয়ে বেশী ওযনের আর কোন জিনিস হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীল কটুভাষীকেও ঘৃণা করেন’।[8] রাসূল (ছাঃ) আরও বলেন,عَنْ أَبِى الدَّرْدَاءِ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم يَقُولُ مَا مِنْ شَىْءٍ يُوضَعُ فِى الْمِيزَانِ أَثْقَلُ مِنْ حُسْنِ الْخُلُقِ وَإِنَّ صَاحِبَ حُسْنِ الْخُلُقِ لَيَبْلُغُ بِهِ دَرَجَةَ صَاحِبِ الصَّوْمِ وَالصَّلاَةِ  ‘আবু দারদা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, সচ্চরিত্র ও সদাচারই দাঁড়িপাল্লায় মধ্যে সবচাইতে ভারী হবে। সচ্চরিত্রবান ও সদাচারী ব্যক্তি তার সদাচার ও চারিত্রিক মাধূর্য দ্বারা অবশ্যই ছায়েম ও মুছল্লীর পর্যায়ে পৌছে যায়’।[9] 

উত্তম চরিত্র দিয়েই মানুষ জান্নাত ক্রয় করতে পারে, যা সবচেয়ে বড় সাফল্য এবং মানব জীবনের প্রধান কাম্য। যেমন ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ سُئِلَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ تَقْوَى الله وَحُسْنُ الْخُلُقِ  وَسُئِلَ عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করা হ‘ল, কোন কর্মটি সবচাইতে বেশী পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তিনি বললেন, আল্লাহ্ভীতি, সদাচার ও উত্তম চরিত্র। আবার তাকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচাইতে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তিনি বললেন, মুখ ও লজ্জাস্থান। [10]

 (চলবে)

 [ লেখক : কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক, আল-‘আওন ]

[1]বুখারী হা/৬০৯৪; মুসলিম হা/২৬০৬; তিরমিযী হা/১৯৭১; আবু দাঊদ হা/ ৪৯৮৯।

[2]ড. ফযলুর রহমান, আল-মু‘জামুল ওয়াফী, আরবী-বাংলা অভিধান, পৃ. ১৫৪।

[3]তাফসীরে কুরতুবী- ৩/৩৮৬ পৃ.।

[4]বুখারী হা/৩৪; মিশকাত হা/৫৬।

[5]. আহমাদ হা/২২৮০৯; সিলসিলাহ ছহীহাহ হা/১৪৭০; মিশকাত হা/৪৮৭০।

[6]আহমাদ হা/ ১২৪০৬; মিশকাত হা/৩৫।

[7]বুখারী হা/৩৭৫৮; মুসলিম হা/২৩২১।

[8]তিরমিযী হা/২০০২।

[9]তিরমিযি হা/২০০৩।

[10]তিরমিযী হা/২০০৪।





আরও