নারীর তিনটি ভূমিকা
লিলবর আল-বারাদী
মুখতারুল ইসলাম 9242 বার পঠিত
(খ) আল-কুরআনুল কারীম :
কাদিয়ানীরা
বিশ্বাস করে যে, গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর কাছে জিবরাঈল (আ.) অহি নিয়ে আসেন,
যেমনভাবে মুহাম্মাদ (ছা.)-এর নিকট অহি নিয়ে আসতেন। কুরআনের মতই প্রত্যেককে
তার উপর ঈমান আনা আবশ্যক।[1]
তাদের ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদাসমূহ নিমণরূপ :
১.
কাযী মুহাম্মাদ ইউসুফ কাদিয়ানীর বক্তব্য- ‘গোলাম আহমাদ আদিষ্ট হয়েছে যে,
তার কাছে যে অহী আসে তা তার জামা‘আতকে শুনাবেন। অনুরূপভাবে উহার উপর
বিশ্বাস করা ও ঈমান আনা কাদিয়ানীদের আবশ্যিক কর্তব্য (মুহাম্মাদ ইউসুফ রচিত ‘আন-নবুঅত ফিল ইসলাম’ ২৮ পৃ.)।[2]
২.
সে আরো বলে, إن جبريل جاء إلي واختارني وأدار إصبعه و أشار الي بأن الله
يحفظك من الأعداء অর্থাৎ জিব্রাঈল (আ.) আগমন করে আমাকে পসন্দ করলেন এবং তার
আঙুল ঘুরিয়ে আমার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে শক্র হতে
রক্ষা করবেন’ (গোলাম আহমাদ রচিত ‘মাওয়াহিবুর রহমান’ ৪৩ পৃ.)।[3]
৩. সে আরো বলে, ‘মহান আল্লাহর শপথ! আমি আমার অহীতে বিশ্বাস করি, যেমন কুরআন ও অন্যান্য আসমানী কিতাবে বিশ্বাস রাখি (গোলাম আহমাদ রচিত ‘হাকীকাতুল অহী’ ২১১ পৃ.)।[4]
৩.
ভন্ড গোলাম আহমাদের উপর যে তথাকথিত ইলহাম হয়েছে সেগুলোকে কাদিয়ানীরা
কুরআনের মত মূল্যায়ন করে। মুহাম্মাদ ইউসুফ কাদিয়ানী বলে, إن الله سمي
مجموعة إلهامات غلام أحمد "الكتاب المبين" অর্থাৎ ‘আল্লাহ তা‘আলা গোলাম
আহমাদের ইলহামাতের সমষ্টিকে ‘আল-কিতাবুল মুবীন’ নামে অভিহিত করেছেন’ (মুহাম্মদ ইউসুফ কাদিয়ানী রচিত ‘আন-নবুঅত ফিল ইসলাম’ ৪৩ পৃ.)।[5]
৪. সে আরো বলে, ‘আল-কিতাবুল মুবীন’ বিশ খন্ডে সমাপ্ত (আল-ফযল, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯১৯ খ্রি.)।[6]
৫.
গোলাম আহমদ আরো বলে, ‘শরী'আত কি? তা তোমরা বুঝে নাও। আদেশ নিষেধের বর্ণনা
করার নাম শরী'আত। যে ব্যক্তি এ কাজ করবে এবং তার উম্মতের জন্য আইন-কানূন
নির্ধারণ করবে, সেই হ'ল ছাহেবে শরীআত। সুতরাং আমিই ছাহেবে শরীআত। কেননা
আমার কাছে আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে অহী আসে। আর শরী‘আতের জন্য এটা যরূরী নয় যে,
তা নতুন নতুন আহকাম সম্বলিত হবে। কেননা কুরআনে যে সমস্ত শিক্ষা রয়েছে
তাওরাতেও তা বর্তমান’ (গোলাম আহমাদ রচিত ‘আরবাঈন’ ৭ পৃ.)।[7]
পর্যালোচনা ও জবাব
তাদের
উপরোক্ত নিকৃষ্টতম আক্বীদা-বিশ্বাসসমূহ প্রমান করে যে, তারা একটি ভিন্ন ও
স্বতন্ত্র ধর্মের অনুসারী। ইসলামের সাথে তাদের দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। অথচ
কেন তারা এমন লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের অনুসারী হ’তে চাইছে, এটা
আমাদের বোধগম্য নয়। রং, ঢং, সুরতে-চেহারায়, চলনে ও বলনে এমনকি তাদের নাম
মুসলমানদের মত হ’লেও তারা মূলতঃ আবু জাহলের অনুসারী। তারা কখনো মুসলমান নয়,
মুসলমান হ’তে পারে না। বরং তারা মুসলমানদের দুশমন। ইহসান ইলাহী যহীর তাদের
কুরআন বিষয়ক আক্বীদা খন্ডনে বলেন, ‘কাদিয়ানীরা আরো বিশ্বাস করে যে, তারা
স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ধর্মের অধিকারী এবং তাদের শরী‘আত একটা স্বতন্ত্র বিষয়।
গোলাম আহমাদের সঙ্গী-সাথী ছাহাবীগণের মতই এবং তার উম্মত একটি নতুন উম্মত’।[8]
মহান
আল্লাহ বলেন, الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ
عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا অর্থাৎ আজ আমি
তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার
নে‘মতকে সম্পূর্ণ করলাম। আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত
করলাম।[9]
রাসূল (ছা.)
বলেন, لاَ نُبُوَّةَ بَعْدِى إِلاَّ الْمُبَشِّرَاتِ. قَالَ قِيلَ وَمَا
الْمُبَشِّرَاتُ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ الرُّؤْيَا الْحَسَنَةُ. أَوْ
قَالَ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ- অর্থাৎ আমার পর আর কোন নবী নেই সু-সংবাদ
ব্যতীত। তিনি বলেন, বলা হল মুবাশি্শরাত কি হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন,
ভাল স্বপ্ন অথবা বলেছেন সত্য স্বপ্ন।[10]
(গ) হাদীছে নববী ও খতমে নবুঅত :
কাদিয়ানীরা
মির্যা গোলাম আহমাদের হাস্যকর প্রলাপকে হাদীছ হিসাবে বিশ্বাস করে। তারা
মনে করে অন্যান্য নবীদের মত তার কথাও হাদীছ। আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর
বলেন, যেহেতু কাদিয়ানীরা গোলাম আহমাদের প্রলাপসমূহকে কুরআনের মতই মনে করে
তাই তারা বলে যে, যে সকল হাদীছে গোলাম আহমাদের উক্তির বিপরীত হবে, উহা
প্রত্যাখ্যাত; যদিও তা প্রকৃত পক্ষে বিশুদ্ধ হাদীছ হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে যে
সকল হাদীছ গোলাম আহমাদের উক্তির মুতাবেক তা বিশুদ্ধ। যদিও তা প্রকৃতপক্ষে
মওযু (জাল) বা মিথ্যা হয়ে থাকে।[11]
তাদের ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদাসমূহ নিমণরূপ :
১. কাদিয়ানীদের খলীফা মাহমুদ আহমাদ[12] বলেছে, গোলাম আহমাদের কথা নির্ভরযোগ্য। এর উপর নির্ভর করা যায়।
কিন্তু
হাদীছ সমূহের অবস্থা এর বিপরীত। কেননা হাদীছ সমূহ তো আমরা রাসূলুল্লাহর
মুখ থেকে শুনিনি, আর গোলাম আহমাদের কথা আমরা তার মুখ থেকেই শুনেছি। কাজেই
হাদীছ ছহীহ হ’লে তা গোলাম আহমদের উক্তির বিপরীত হওয়া সম্ভব নহে (গোলাম আহমাদ পুত্র মাহমুদ আহমাদের উক্তি, যা কাদিয়ানী পত্রিকা ‘আল-ফযল’-এ উদ্ধৃত হয়েছে, ২৯ এপ্রিল ১৯১৫ খ্রি.)।[13]
২.
এ পত্রিকাটি আরো প্রচার করেছে- ‘এক বেআদব লিখেছে, গোলামের যে সকল উক্তি
বিশুদ্ধ হাদীছের বিপরীত তা প্রত্যাখ্যান করা উচিত। এ নির্বোধ বুঝতে পারেনি
যে, এর দ্বারা গোলাম আহমাদের সত্য দাবীগুলো অস্বীকার করা অপরিহার্য হয়ে
পড়তে পারে। পক্ষান্তরে কোন কোন হাদীছ এমনও রয়েছে, যেগুলোকে আলেমগণ দুর্বল
সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু আমাদের নবী গোলাম আহমাদ বলেন যে, ইহা বিশুদ্ধ।
সুতরাং আমরা তার কথা বিশ্বাস করব, ওদের কথা নয়। তিনি যে হাদীছকে বিশুদ্ধ
বলেন, আমরাও তাকে বিশুদ্ধ বলব। আর যে হাদীছকে তিনি দুর্বল বলেন, আমরাও তাকে
দুর্বল বলব। কেননা হাদীছসমূহ রাবীদের মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। আমরা
সরাসরি রাসূলুল্লাহ (ছা.) থেকে শুনিনি। তবে গোলাম আহমাদের কথার উপর আমরা এ
জন্য নির্ভর করি যে, তিনি আল্লাহর নিকট থেকে অবহিত হওয়ার পর আমাদেরকে সংবাদ
দিয়েছেন। আর তিনি হলেন একজন জীবন্ত নবী। মোটকথা, যে হাদীছ গোলাম আহমদের
উক্তির বিপরীত হবে, হয়তো তা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ অথবা তা বিশুদ্ধ নয় (আল-ফযল, ২৯ এপ্রিল, ১৯১৫ খ্রি.)।[14]
৩.
কাদিয়ানীদের খলীফা ও তাদের নেতা মাহমূদ আহমাদ বলেছে, ‘মসীহে মাওঊদ’ (গোলাম
আহমাদ) যে কুরআন পেশ করেছেন তা ভিন্ন আর কোন কুরআন নেই। যে হাদীছ গোলাম
আহমাদের শিক্ষার আলোকে হবে, তা ভিন্ন আর কোন হাদীছ নেই। গোলাম আহমাদের
নেতৃত্ব বহির্ভূত কোন নবী নেই। যে ব্যক্তি মুহাম্মদ (ছাঃ)-কে দেখতে চায়,
সে যেন গোলাম আহমাদের প্রতিচ্ছবি দেখে নেয়। কেননা যে ব্যক্তি তার মাধ্যম
ছাড়া মুহাম্মাদকে দেখতে চায়, তার পক্ষে তা সম্ভব নহে। অনুরূপভাবে কেউ যদি
তার মাধ্যম ছাড়া কুরআন দেখতে চায়, তবে এই কুরআন সেই কুরআন নয়। যা যাকে
ইচ্ছা তাকে পথপ্রদর্শন করে, বরং তা সেই কুরআন হবে, যা যাকে ইচ্ছা তাকে
পথভ্রষ্ট করে। অনুরূপভাবে গোলাম আহমাদের ব্যাখ্যা ছাড়া হাদীছের কোন মূল্য
নেই। কেননা প্রত্যেকে এ থেকে যা ইচ্ছা তা বের করতে পারে (জুম‘আর খুতবা যা মাহমুদ আহমাদ কাদিয়ানে প্রদান করেছিল, দ্র. ‘আল-ফযল‘ পত্রিকা, ১৫ জুলাই ১৯২৪ খ্রি. )।[15]
৪.
মাহমূদ আহমাদ লিখেছে যে, ‘আমরা (কাদিয়ানীরা) বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ
তা‘আলা প্রয়োজন অনুসারে এ উম্মতের সংশোধন ও হেদায়াতের জন্য নবীগণ প্রেরণ
করতে থাকবেন’ (মাহমূদ আহমাদের প্রবন্ধ, দ্র. ‘আল-ফযল’ পত্রিকা, ১৪ই মে, ১৯২৫ খ্রি.)।[16]
৫.
সে আরো লিখেছে, ‘তারা কি মনে করে আল্লাহর ভান্ডার নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাদের এ
ধারণা ভ্রান্ত। কেননা আল্লাহর কুদরত সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। তা না
হ’লে কোথায় এক নবী, বরং আমি বলি, অচিরেই হাযার হাযার নবীর আগমন ঘটবে’ (মাহমূদ আহমাদ রচিত ‘আনওয়ারুল খিলাফাত’ ৬২ পৃঃ)।[17]
৬.
মাহমূদ আহমাদকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয় যে, ভবিষ্যতে নবীগণের আগমন কি
সম্ভব? তখন সে উত্তর দিল, হ্যাঁ, নবীগণ কিয়ামত পর্যন্ত আসতে থাকবেন। কারণ
পৃথিবীতে যতক্ষণ পর্যন্ত ফ্যাসাদ বিদ্যমান থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নবীগণের
আগমন অপরিহার্য (‘আল-ফযল’ ২৭শে ফেব্রুয়ারী, ১৯২৭ খ্রি.)।[18]
৭. গোলাম আহমাদ নিজেও তার শিষ্যদের সুরে সুর মিলিয়ে বলেছে, ‘নিশ্চয়ই নবীগণের আগমন আল্লাহর একটা অনুগ্রহ এবং তাদের ধারাবাহিকতা কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না। এটা আল্লাহর বিধান। তোমরা এটাকে ঠেকাতে পারবে না’ (গোলাম আহমাদের ‘কিতাবে শিয়ালকোট’-এর সার সংক্ষেপ, ২২ পৃ.)।[19] এ ধরণের হাযারো ভ্রান্ত কথা সে বলেছে। শুধু তাই নয় সে নিজেকে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম ও রাসূলগণের চেয়ে উত্তম বলে দাবী করেছে। সে এটা বলতে কুণ্ঠিত হয়নি যে, সে হলো পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামের গর্ব। এমনকি সে নাকি নবীকুল শিরোমণি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এরও গর্ব (নাঊযুবিল্লাহ)।
৮.
কাদিয়ানীরা বিশ্বাস করে গোলাম আহমাদ নবী ও রাসূল। গোলাম আহমাদ নিজেই
নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছে, ‘আমি ঐ আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার
প্রাণ, তিনি আমাকে রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন এবং নবী নামে অভিহিত করেছেন। আর
আমাকে মাসীহ মাওঊদ বলে আহবান করেছেন এবং আমার দাবীর সমর্থনে তিন হাযার
নিদর্শন অবতীর্ণ করেছেন’ (গোলাম আহমাদ রচিত ‘তাতমিয়াতু হাকীকাতিল অহি’ ৬৮ পৃ.)।[20]
৯.
সে আরো বলে, তিনিই সত্য প্রভু, যিনি কাদিয়ানে তার রাসূল পাঠিয়েছেন। আল্লাহ
তা‘আলা কাদিয়ানকে হিফাযত করবেন এবং প্লেগ রোগ থেকে রক্ষা করবেন। এ সুরক্ষা
অব্যাহত থাকবে যদিও তা সত্তর বছর পর্যন্ত হয়। কেননা এটি তার নবীর
আবাসভূমি। আর তা সমস্ত উম্মতের জন্য নির্দশন স্বরূপ’ (গোলাম আহমাদ রচিত ‘দাফেঊল বালা’ ১০-১১ পৃ.)।[21]
অথচ তার জীবদ্দশাতেই কাদিয়ানে প্লেগ রোগে অনেক মানুষের প্রাণ গেছে। সে
নিজেই তার গ্রাম কাদিয়ান-এ প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার মর্মান্তিক খবর দিয়ে স্বীয়
শশুর মশাইয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল।[22]
১০.
সে আরো বলে, আমার রিসালাত প্রমাণ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা এত বেশী সংখ্যক
নিদর্শন প্রেরণ করেছেন, যদি তা এক হাযার নবীর মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়, তবে
এতেই তাদের রিসালাত প্রমাণিত হয়ে যাবে। কিন্তু মানব শয়তানরা এটা বিশ্বাস
করে না’ (গোলাম আহমাদ রচিত ‘আইনুল মা‘রেফাহ’ ৩১৭ পৃ.)।[23]
১১. সে আরো বলে ‘যে অর্থে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণকে নবী রাসূল বলা হত সেই অর্থে গোলাম আহমদও নবী এবং রাসূল (আল-ফযল, ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১৪ খ্রি.)। [24]
১২.
মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী নিজেকে সমস্ত নবী-রাসূলের চেয়ে উত্তম মনে
করে। এমনকি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের গর্ব বলে বিশ্বাস করে। গোলাম বলে,
‘আমাকে যা কিছু আল্লাহ দিয়েছেন, তা জগদ্বাসীর মধ্যে আর কাউকে দেননি’ (গোলাম আহমাদ রচিত ‘যমীমাতু হাকীকাতে অহি, ৮৭ পৃ.)।[25]
১৩. সে আরো বলে, সকল নবীগণকে যা কিছু দেয়া হয়েছে, তা একাই আমাকে দেয়া হয়েছে’ (গোলাম আহমাদের ‘দুররে ছামীন’ ২৮৭ পৃ.)।[26]
পর্যালোচনা ও জবাব
ইহসান
ইলাহী যহীর কাদিয়ানীদের খতমে নবুঅত সম্পর্কে বাজে আক্বীদাগুলো অত্যন্ত
দক্ষতার সাথে রদ করেছেন। কাদিয়ানীদের খতমে নবুঅত সম্পর্কে বিশ্বাস হলো যে,
নবুঅতের সিলসিলা এখনো শেষ হয়নি বরং তা কিয়ামত পর্যন্ত বজায় থাকবে। তারা
বলে, আরবীয় নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর দ্বারা নবুঅত শেষ হয়নি বরং নবুঅত চলতে
থাকবে।[27] ইহসান ইলাহী যহীর বলেন, মুসলমানরা
বিশ্বাস করেন যে, মুহাম্মাদ (ছা.) শেষ নবী ও রাসূল। তারপর আর কোন নবী নেই।
তাঁর উপরই রেসালাতের ধারাবাহিকতা শেষ হয়েছে এবং তাঁর দ্বারাই অহীর সিলসিলা
বন্ধ হয়ে গেছে, তাঁর কিতাবই শেষ কিতাব, তাঁর উম্মতই শেষ উম্মত এবং তাঁর
ধর্মই শেষ ধর্ম। তারপরে যে কেউ নবুঅতের দাবী করবে সে হবে মহা মিথ্যুক এবং
আল্লাহর উপর অপবাদ আরোপকারী। কারণ মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘মুহাম্মাদ (ছা.)
তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নহেন বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী’।[28]
মুহাম্মাদ
(ছা.) হলেন আখেরী যামানার শেষ নবী ও রাসূল। যে এতে সামান্য পরিমাণ সন্দেহ
করবে এবং তাঁর খতমে রিসালাতের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হবে সে যিন্দীক, মুরতাদ
কাফের। কেননা সকল সালাফে ছালেহীন বিদ্বানগণ এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।
মুহাম্মাদ (ছা.) ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন যে, তার পরে আরো ত্রিশ জন ভন্ড নবী
দুনিয়ায় আগমন করবে। তিনি এ কথাও বলে গেছেন যে, তিনিই শেষ নবী। তার পরে আরো
কোন নবী নেই। তাঁর মাধ্যমে নবুঅতের সিলাসিলা শেষ হয়ে গেছে।[29]
নিম্নে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে রাসূল (ছাঃ)-এর নবুওত এবং তাঁর শেষ নবী হওয়ার প্রমাণসমূহ উপস্থাপন করা হল।-
১. মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا
يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى- إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىঅর্থাৎ ‘তিনি নিজ
খেয়াল-খুশীমত কোন কথা বলেন না। এটি কেবল তাই যা তার নিকট অহি করা হয়’।[30]
২.
মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِلنَّاسِ
بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ অর্থাৎ
‘আর আমরা তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য (জান্নাতের) সুসংবাদদাতা ও
(জাহান্নামের) ভয় প্রদর্শনকারী হিসাবে প্রেরণ করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ
তা জানে না’।[31]
৩. মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ অর্থাৎ ‘মুহাম্মাদ (ছাঃ) তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নহেন বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী’।[32]
৪. মহান আল্লাহ বলেন,
قُلْ يَاأَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا
অর্থাৎ ‘তুমি বল, হে মানবজাতি! আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত
রাসূল’।[33]
৫. মহান
আল্লাহ বলেন, أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا فَإِنْ
يَشَإِ اللَّهُ يَخْتِمْ عَلَى قَلْبِكَ وَيَمْحُ اللَّهُ الْبَاطِلَ
وَيُحِقُّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُور-
‘নাকি তারা বলে যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা করছে? অথচ যদি
আল্লাহ চাইতেন তাহলে (হে মুহাম্মাদ) তোমার অন্তরে মোহর মেরে দিতেন।
বস্ত্ততঃ আল্লাহ বাতিলকে মিটিয়ে দেন ও নিজ কালেমাসমূহ (কুরআন) দ্বারা
সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিশ্চয়ই তিনি অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে সম্যক
অবহিত’।[34]
৭. মহান
আল্লাহ বলেন, أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ
اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَى
بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَنْ يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللَّهِ أَفَلَا
تَذَكَّرُونَ- অর্থাৎ ‘তুমি কি তাকে দেখেছ যে তার খেয়াল-খুশীকে তার উপাস্য
বানিয়েছে? আল্লাহ জেনে-শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন। তার কানে ও অন্তরে মোহর
মেরে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর আবরণ টেনে দিয়েছেন। অতএব আল্লাহর পরে কে
তাকে সুপথ প্রদর্শন করবে? এরপরেও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না’।[35]
৮.
মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِالذِّكْرِ لَمَّا جَاءَهُمْ
وَإِنَّهُ لَكِتَابٌ عَزِيز- لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ
يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنْزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ- ‘নিশ্চয়ই
যারা তাদের নিকট কুরআন আসার পর তা প্রত্যাখ্যান করে (তারা ধ্বংস হবে)।
নিঃসন্দেহে এটি মহা পরাক্রান্ত এক কিতাব। সামনে বা পিছনে কোন দিক থেকেই এতে
কোন মিথ্যা প্রবেশ করে না। এটি মহা প্রজ্ঞাময় ও মহা প্রশংসিত (আল্লাহর)
পক্ষ হ’তে অবতীর্ণ’।[36]
৯.
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَثَلِي وَمَثَلُ الْأَنْبِيَاءِ كَمَثَلِ قَصْرٍ
أُحْسِنَ بُنْيَانُهُ تُرِكَ فِيهِ مَوْضِعُ لَبِنَةٍ، فَطَافَ بِهِ
النُّظَّارُ، يَتَعَجَّبُونَ مِنْ حُسْنِ بِنَائِهِ، إِلَّا مَوْضِعَ
تِلْكَ اللَّبِنَةِ، فَكُنْتُ أَنَا سَدَدْتُ مَوْضِعَ اللَّبِنَةِ، خُتِمَ
بِيَ الْبُنْيَانُ وَخُتِمَ بِي الرُّسُلُ وَفِي رِوَايَةٍ: فَأَنَا
اللَّبِنَةُ، وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ- অর্থাৎ ‘আমার এবং অপর নবীগনের
দৃষ্টান্ত এক প্রসাদের মত যাকে খুব সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু
উহাতে একটি ইটের জায়গা খালি রাখা হয়। দর্শকরা এটা প্রত্যক্ষ করে এবং এর
সুন্দর নির্মাণে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়, তবে,একটি ইটের জায়গা খালি থাকার কারণে
আশ্চার্যবোধ করে। আমার দ্বারা দালানের নির্মাণ কাজ শেষ হল এবং রাসূলগণের
আগমনও আমার দ্বারা সমাপ্ত হল। অন্য রেওয়ায়েতে আছে- আমিই সেই ইট এবং আমিই
শেষ নবী। আর এক বর্ণনায় রয়েছে- ‘আমি শেষ নবী এবং তোমরা শেষ উম্মত’।[37]
১০.
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, فَإِنِّى آخِرُ الأَنْبِيَاءِ وَإِنَّ مَسْجِدِى
آخِرُ الْمَسَاجِدِ-و في رواية أخري : وَأَنَا خَاتَمُ الأَنْبِيَاءِ
وَمَسْجِدِى خَاتَم ْمَسَاجِدِ الأَنْبِيَاءِ- ‘অর্থাৎ অবশ্যই আমি নবীগণের
সমাপ্তি এবং আমার মসজিদ সর্বশেষ মসজিদ। অন্য রেওয়ায়াতে আছে, আমি নবীগণের
সমাপ্তি আর আমার মসজিদ নবীগণের শেষ মসজিদ’।[38]
১১.
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ تَسُوسُهُمُ
الأَنْبِيَاءُ ، كُلَّمَا هَلَكَ نَبِىٌّ خَلَفَهُ نَبِىٌّ ، وَإِنَّهُ لاَ
نَبِىَّ بَعْدِى ، وَسَيَكُونُ خُلَفَاءُ فَيَكْثُرُونَ অর্থাৎ ‘বনী
ইসরাঈলের নবীগণ তাদের উম্মাতদের শাসন করতেন। যখন কোন একজন নবী মারা যেতেন,
তখন অন্য একজন নবী তার স্থলাভিসিক্ত হ’তেন। আর আমার পরে কোন নবী নেই। বরং
খলীফাগণ হবেন এবং তারা সংখ্যায় প্রচুর হবেন’।[39]
১২.
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُبْعَثَ
دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ قَرِيبٌ مِنْ ثَلاَثِينَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ
أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ অর্থাৎ ত্রিশজন দাজ্জাল আবির্ভূত না হওয়া পর্যন্ত
কিয়ামত সংঘটিত হবে না। তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর রাসূল বলে দাবী
করবে।[40]
১৩. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, فُضِّلْتُ عَلَى الأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأُحِلَّتْ لِىَ الْغَنَائِمُ وَجُعِلَتْ لِىَ الأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِىَ النَّبِيُّونَ- রাসূল (ছা.) বলেন, ‘অন্য সব নবীদের চেয়ে আমাকে ছয়টি বিশেষ মর্যাদা দান করা হয়েছে। আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমাকে অত্যন্ত প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। আমার জন্য গণীমতের অর্থ সম্পদ হালাল করা হয়েছে। আমার জন্য গোটা পৃথিবীর ভূমি বা মাটি পবিত্রতা হাসিলকারী বা মসজিদ করা করা হয়েছে। আমাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য নবী করে পাঠানো হয়েছে। আর আমাকে দিয়ে নবীদের আগমন ধারা সমাপ্ত করা হয়েছে।[41]
১৪.
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, فَيَقُولُ عِيسَى إِنَّ رَبِّى قَدْ غَضِبَ
الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ ، وَلَنْ يَغْضَبَ
بَعْدَهُ مِثْلَهُ وَلَمْ يَذْكُرْ ذَنْبًا نَفْسِى نَفْسِى نَفْسِى،
اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِى اذْهَبُوا إِلَى مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم
فَيَأْتُونَ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَيَقُولُونَ يَا مُحَمَّدُ
أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ وَخَاتَمُ الأَنْبِيَاءِ، وَقَدْ غَفَرَ اللَّهُ
لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى
رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ ؟ ঈসা (আ.) বলবেন, আমার রব এত
রাগান্বিত যে, এর আগেএরূপ রাগান্বিত হননি এবং এর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন
না। তিনি নিজের কোন গুনাহের কথা বলবেন না। নাফসী, নাফসী, নাফসী তোমরা অন্য
কারো কাছে যাও। যাও মুহাম্মাদ (ছা.)-এর কাছে। তারা মুহাম্মাদ (ছা.)-এর কাছে
এসে বলবে, হে মুহাম্মাদ (ছা.)! আপনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ
তা‘আলা আপনার আগের, পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য
আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কিসের মধ্যে আছি? [42]
১৫.
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَمْ يَبْقَ مِنَ النُّبُوَّةِ إِلاَّ
الْمُبَشِّرَاتُ. قَالُوا وَمَا الْمُبَشِّرَاتُ قَالَ الرُّؤْيَا
الصَّالِحَةُ. ‘সু-সংবাদ বহনকারী বিষয়াদি ব্যতীত নবুঅতের আর কিছু অবশিষ্ট
নেই। ছাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, সু-সংবাদ বহনকারী বিষয়াদি কি? তিনি বললেন,
ভাল স্বপ্ন’।[43]
১৬.
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ لِى أَسْمَاءً أَنَا مُحَمَّدٌ وَأَنَا
أَحْمَدُ وَأَنَا الْحَاشِرُ الَّذِى يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى قَدَمِى
وَأَنَا الْمَاحِى الَّذِى يُمْحَى بِىَ الْكُفْرُ وَأَنَا الْعَاقِبُ.
وَالْعَاقِبُ الَّذِى لَيْسَ بَعْدَهُ نَبِىٌّ- ‘আমার (প্রসিদ্ধ) অনেকগুলো
নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ, আমি আল-হাশির, আমার চারপাশে মানব
জাতিকে একত্রিত করা হবে। আমি আল-মাহী, আমার দ্বারা আল্লাহ কুফর ও শিরককে
নিশ্চিহৃ করে দেবেন। আমি আল-আক্বিব (সর্বশেষ আগমনকারী) আমার পরে আর কোন নবী
নেই।[44]
১৭.
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُسَمِّى
لَنَا نَفْسَهُ أَسْمَاءً فَقَالَ أَنَا مُحَمَّدٌ وَأَحْمَدُ
وَالْمُقَفِّى وَالْحَاشِرُ وَنَبِىُّ التَّوْبَةِ وَنَبِىُّ الرَّحْمَةِ-
রাসূল (ছা.) আমাদের নিকট তাঁর নিজের নামগুলো বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন,
আমি মুহাম্মাদ, আহমাদ, আল-মুক্বাফফী (সর্বশেষ), আল-হাশির (একত্রকারী), তওবা
ও রহমতের নবী।[45]
১৮.
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ بَيْنَ يَدَىِ السَّاعَةِ كَذَّابِينَ
فَاحْذَرُوهُمْ কিয়ামতের আগে কতক মিথ্যাবাদী ব্যক্তির আগমন ঘটবে। অতত্রব
তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে।[46]
১৯.
হাদীছে এসেছে, حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ قُلْتُ لاِبْنِ أَبِى أَوْفَى
رَأَيْتَ إِبْرَاهِيمَ ابْنَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَاتَ
صَغِيرًا، وَلَوْ قُضِىَ أَنْ يَكُونَ بَعْدَ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم
نَبِىٌّ عَاشَ ابْنُهُ، وَلَكِنْ لاَ نَبِىَّ بَعْدَهُ- ইসমাঈল (রা.) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবন আবু আওফা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি নবী
করীম (ছা.)-এর পুত্র ইবরাহীম (রা.)-কে দেখেছেন? তিনি বললেন, তিনি তো
বাল্যাবস্থায় মারা গেছেন। যদি মুহাম্মাদ (ছা.)-এর পরে অন্য কেউ নবী হওয়ার
বিধান থাকত তবে তাঁর পুত্র জীবিত থাকতেন। কিন্তু তাঁর পরে কোন নবী নেই।[47]
২০.
৯ম হিজরীতে তাবূক অভিযানে বের হওয়ার সময় হযরত আলীকে তাঁর পরিবারের
দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়ে যান। কিন্তু মুনাফিকরা তাকে সম্ভবতঃ ভীতু, কাপুরুষ
ইত্যাদি বলে ঠাট্টা করায় ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি পুনরায় গিয়ে পথিমধ্যে সেনাদলে
যোগ দেন। তখন সেনাদল দু’তিন মনযিল অতিক্রম করে গেছে। আল্লাহর রাসূল (ছা.)
তাকে ভালবেসে কাছে ডেকে বলেন, أَلاَ تَرْضَى أَنْ تَكُوْنَ مِنِّيْ
بِمَنْزِلَةِ هَارُوْنَ مِنْ مُوْسَى؟ إلاَّ أَنَّهُ لاَ نَبِيَّ بَعْدِيْ
‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি আমার নিকটে অনুরূপ হও যেমন হারূণ ছিলেন
মূসার নিকটে? তবে পার্থক্য এই যে, আমার পরে আর কোন নবী নেই’।[48]
তিনি আরো বলেন, আমি আশা করি যে, তুমি যেন আমাদের সঙ্গে যুদ্ধেই আছ। আমি
তোমার মান-মর্যাদা খাটো করছিনা। দেখ, আমি তোমাকে মদীনা দেখভাল করার জন্য
রেখে যাচ্ছি যেমনভাবে হযরত মূসা (আ.) আল্লাহর সঙ্গে তূর পাহাড়ে সাক্ষাৎ
করতে গেলে হারূণ (আ.)-কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন। আর মনে রেখ, হারূণ
(আ.) তাঁর অবর্তমানে নবুঅতের মহান দায়িত্ব পালন করেছিল। কিন্তু তুমি তেমনটি
নও। কেননা নবুঅতের সিলসিলা শেষ হয়ে গেছে। আমার পরে কোন নবী নেই।[49]
ইহসান ইলাহী যহীর (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীছটি রাসূল পরবর্তী কোন নবীর অস্তিত্ব না থাকার প্রমাণ বহন করে।[50] এ সমস্ত দলীল পেশ করে শায়েখ তাদের খতমে নবুঅত সম্পর্কে সন্দেহ-সংশয় ও বিকৃত আচরণের জবাব দিয়েছেন।[51] শুধু তাই নয় এতদ্ব্যতীত তিনি বিভিন্ন আলেম-ওলামা, মুফাসি্সরদের প্রামাণ্য গ্রন্থ থেকেও বিভিন্ন উদ্ধৃতি পেশ করেছেন। তিনি ইবনু কাছীর, জারীর ত্বাবারী, খাযেন, নাসাফী, রাযী প্রমুখ জগদ্বিখ্যাত মুফাসসিরদের তাফসীরের থেকে বাণী চিরন্তন উল্লেখ করেছেন। মুহাম্মাদ (ছা.)-ই একমাত্র শেষ নবী, তিনি ভিন্ন কোন নবী নেই তা তিনি অকাট্যভাবে প্রমান করেছেন।[52] (চলবে)
[1]. ইহসান ইলাহী যহীর, আল-কাদিয়ানিয়্যাহ : দিরাসাত ওয়া তাহলীল, প্রাগুক্ত, পৃ. ১০৬।
[2]. তদেব, পৃ. ১০১।
[3]. তদেব, পৃ. ১০২।
[4]. তদেব, পৃ. ৯৮।
[5]. তদেব, পৃ. ১০৯।
[6]. তদেব, পৃ. ১০০।
[7]. তদেব, পৃ. ১১১।
[8]. তদেব, পৃ. ১১০।
[9]. আল-কুরআন, সূরা মায়েদাহ, আয়াত, ৫/৩।
[10]. আহমাদ হা/২৪৫২৪, ৫২তম খন্ড ১১২ পৃ.; মুসলিম হা/৩২ (২৪০৪) ‘ছাহাবাগণের মর্যাদা’ অধ্যায় ‘ আলী ইবন আবী তালিব (রা.)-এর মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ ৪র্থ খন্ড ১৮৭০ পৃ.।
[11]. আল-কাদিয়ানিয়্যাহ : দিরাসাত ওয়া তাহলীল, প্রাগুক্ত, পৃ. ১০০।
[12]. মাহমূদ বিন আহমাদ ‘খলীফাতুছ ছানী, তথা কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফা। কাদিয়ানীদের প্রথম খলীফা নূরুদ্দীন ১৯১২ সালে মারা গেলে সে নিজেকে কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফা হিসাবে যাহির করে এবং সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ প্রভুর এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাদের আরাধনা শুরু করে। যা তার মৃত্যু অবধি অর্থাৎ ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে।
[13]. তদেব ।
[13]. তদেব ।
[14]. তদেব ।
[15]. তদেব ।
[16]. তদেব, পৃ. ১০২।
[17]. তদেব ।
[18]. তদেব ।
[19]. তদেব, পৃ. ১০৩।
[20]. তদেব ।
[21]. তদেব ।
[22]. তদেব ।
[23]. তদেব ।
[24]. তদেব, পৃ. ৯৭।
[25]. তদেব, পৃ. ১০৫।
[26]. তদেব।
[27]. তদেব, পৃ. ১০২।
[28]. তদেব, পৃ. ১০০।
[29]. আল-কাদিয়ানিয়্যাহ : দিরাসাত ওয়া তাহলীল, পৃ. ১০৫।
[30]. সূরা নাজম ৫৩/৩-৪।
[31]. সূরা সাবা ৩৪/২৭।
[32]. সূরা আহযাব ৩৩/৪০।
[33]. সূরা আ‘রাফ ৭/১৫৮।
[34]. আল-কুরআন, সূরা শূরা, আয়াত-৪২/২৪।
[35]. আল-কুরআন, সূরা জাছিয়া, আয়াত-৪৫/২৩।
[36]. আল-কুরআন, সূরা হা-মীম সাজদাহ, আয়াত-৪১/৪১-৪২।
[37]. বুখারী হা/৩৫৩৫, ৬৪, ৬৫; মুসলিম হা/২২৮৬; মিশকাত হা/৫৭৪৫।
[38]. মুসলিম হা/১৩৯৪।
[39]. বুখারী হা/৩৪৫৫, ১৬০৪; মুসলিম হা/১৮৪২।
[40]. বুখারী হা/ ৩৬০৯,৭১২১; মুসলিম হা/১৫৭।
[41]. মুসলিম হা/৫২৩; মিশকাত হা/৫৭৪৮।
[42]. বুখারী হা/৪৭১২; মুসলিম হা/১৯৪।
[43]. বুখারী হা/৬৯৯০; মুসলিম হা/৪৭৯।
[44]. বুখারী হা/৩৫৩২; মুসলিম হা/২৩৫৪।
[45]. মুসলিম হা/২৩৫৫।
[46]. মুসলিম হা/২৯২৩।
[47]. বুখারী হা/৬১৯৪।
[48]. বুখারী হা/২২৫।
[49]. আল-কাদিয়ানিয়্যাহ : দিরাসাত ওয়া তাহলীল, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৮৯-২৯০ ।
[50]. তদেব ।
[51]. তদেব, পৃ. ২৬৮ ।
[52]. তদেব, পৃ. ২৭২ ।