মুহাম্মাদ মুখতার আশ-শানক্বীতী
ফরীদুল ইসলাম
মুখতারুল ইসলাম 1415 বার পঠিত
জন্ম, বংশ ও জ্ঞানার্জন :
মধ্যপ্রাচ্যের প্রখ্যাত আহলেহাদীছ বিদ্বান এবং শায়খ আলবানীর অন্যতম ছাত্র মাশহুর বিন হাসান বিন মাহমূদ আলে সালমান। তাঁর উপনাম হলো আবূ উবাইদা। বর্তমান যুগে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিশেষ করে মূল্যবান তাহক্বীকসমূহ এবং দুর্লভ রচনাবলীতে সরব পদচারণায় তিনি সর্বশীর্ষে। তিনি ১৩৮০ হিজরীতে ফিলিস্তীনের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আরব-ইসরাঈল যুদ্ধে দুর্বিষহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ১৩৮৭ হিজরী মোতাবেক ১৯৬৭ সালে তাঁরা সপরিবারে ফিলিস্তিন থেকে জর্ডানে হিজরত করেন। অতঃপর তিনি ও তাঁর পরিবার জর্ডানের রাজধানী আম্মানে বিচিত্র হিজরতী জীবনযাপন করতে থাকেন এবং সেখানেই উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা দিয়েই তার নতুন জীবন শুরু হয়। তিনি ১৪০০ হিজরীতে জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয়ের কুল্লিয়াতুশ শারীআহ-তে ফিকহ ও উছুলে ফিকহ বিভাগে ভর্তি হন এবং শারঈ জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করেন। এসময় তিনি ইমাম নববীর ‘আল-মাজমু‘, ইবনু কুদামার ‘আল-মুগনী’, আবুল ফিদা ইবনু কাছীরের ‘তাফসীরে ইবনু কাছীর’, ইমাম কুরতুবীর ‘তাফসীরে কুরতুবী’, হাফেয ইবনু হাযার আসক্বালানীর ছহীহ বুখারীর শারহ ‘ফাৎহুল বারী’, ইমাম নববীর ‘শারহে মুসলিম’সহ অসংখ্য বইয়ের বৃহদাংশ পড়ে ফেলেন। এছাড়া তিনি জগদ্বিখ্যাত মুহাক্কিক, আলেম-ওলামা জ্ঞানীগুণীদের সংস্পর্শে আসেন এবং তাদের জ্ঞানের আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে সমর্থ হন। খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন শায়খুল ইসলাম আবুল আববাস আহমাদ ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) এবং তাঁর কৃতি ছাত্র ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওযীয়াহর দ্বারাও তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হন। ।
শিক্ষকমন্ডলী : তিনি যে সকল শিক্ষকমন্ডলী থেকে জ্ঞানার্জন করেছিলেন তন্মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ হলেন- আল্লামা শায়খ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ), শায়খ মুছত্বফা যারক্বা প্রমুখ।
দাওয়াতী কর্মকান্ড : দাওয়াতী কর্মকান্ডের অংশ হিসাবে তাঁর সম্পাদনায় ‘আল-আছালাহ’ নামে জর্ডান থেকে একটি পত্রিকা বের হয়। এতদ্ব্যতীত তিনি ‘মারকাযুল ইমাম আলবানী লিদ-দিরাসাতিল মানহাজিয়াহ ওয়াল আবহাছিল ইলমিয়্যাহ’ প্রতিষ্ঠা করেন। দেশে-বিদেশে বহু দাওয়াতী ও ইলমী সেমিনারেও তিনি অংশগ্রহণ করেছেন এবং আয়োজক হিসাবে সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেছেন।
সমকালীন আলেমদের অভিমত :
১. শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) : শায়েখ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) তাঁর ব্যাপারে একাধিক মজলিসে একাধিক স্থানে ভুঁয়সী প্রশংসা করেছেন। যেমনভাবে তিনি ‘সিলসিলাতুছ ছহীহাহ’-এর ১ম খন্ডের ৯০৩ পৃষ্ঠায় বলেন, ‘আমি আমার এই বইয়ে সম্মানিত ভাই মাশহুর হাসান তাহক্বীককৃত ‘আল-খিলাফিয়্যাত’ বইয়ের তা‘লীক থেকে পুরোদস্ত্তর ফায়দা নিয়েছি।
২. শায়খ বকর আবূ যায়েদ : হাসান মাশহুর তাহক্বীককৃত ইমাম শাত্বেবীর ‘আল-মুওয়াফাক্বাত’ গ্রন্থ সম্পর্কে শায়খ বকর আবূ যায়েদ বলেন, কতবারই না আমি এই বইটির মুদ্রিত কপি ও তাহক্বীক দেখেছি। অবশেষে মহান আল্লাহ আমার ভাই মুহাক্কিক আল্লামা শায়খ মাশহুর বিন হাসান আলে-সালমানের হাতে এই কাজটি সহজভাবে করিয়ে নিয়েছেন।
৩. শায়খ মুকবিল ইবন হাদী ওয়াদেঈ (রহঃ) : শায়খের লিখিত কিতাব ‘তুহফাতুল মুজীব আলা আসইলাতিল হাযের ওয়াল গারীব’ গ্রন্থে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কোন কোন আলেমের বই পড়াশোনা এবং বক্তব্য শোনার পরামর্শ দিবেন? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, আমি এ বিষয়ে শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী এবং তাঁর স্বনামধন্য ছাত্রগণ যেমন আলী ইবন হাসান ইবন আব্দুল হামীদ, সালিম হেলালী, মাশহুর ইবন হাসানের কথা বলব।
৪. আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ : তিনি তাঁর লিখিত কিতাব ‘আন-নাফে‘ আল-মাতে‘ গ্রন্থে তাঁর ব্যাপারে ভুয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর নিকট থেকে ইলমী ফায়েদা গ্রহণের জন্য ছাত্রদেরকে উপদেশ দেন।
শিক্ষকতা :
প্রতি বৃহস্পতিবারে বাদ মাগরিব আম্মানের ‘মসজিদ ইবরাহীম আল-হাজ্জ হাসান’-এ তিনি শারহ ছহীহ মুসলিম-এর উপর তথ্যবহুল দারস প্রদান করেন এবং শুক্রবারে বাদ ফজর মাসজিদুর রহমাহসহ বিভিন্ন মসজিদে মাসআলা-মাসায়েল সংক্রান্ত আলোচনা করে থাকেন। উল্লেখ্য যে, সরাসরি তার বক্তব্য শুনতে ও তার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে http://meshhoor.com ভিজিট করুন।