একজন আদর্শবান ব্যক্তির গুণাবলী

এ. এইচ. এম. রায়হানুল ইসলাম 10921 বার পঠিত

ভূমিকাঃ মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা আশরাফুল মাখলূক্বাত হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। আদর্শিক ও সৃষ্টিগতভাবেই মানুষ শ্রেষ্ঠ। একজন আদর্শ ব্যক্তি হওয়ার জন্য যেসব গুণাবলী বা যোগ্যতা অর্জন করতে হবে সে সম্পর্কে নিম্নে সবিস্তারে আলোচনা করা হ’ল।

(১) আল্লাহভীতি :

একজন আদর্শ ব্যক্তি হতে গেলে সর্বপ্রথম যে যোগ্যতা অর্জন করা প্রয়োজন, তা হ’ল আল্লাহভীতি। কেননা আল্লাহর ভয় যদি মানুষের অন্তরে না থাকে। তাহ’লে সে যে কোন নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হবে। ফলে সে আদর্শ ব্যক্তি বা মানুষ হওয়ার পথ হ’তে ছিটকে পড়বে। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যথার্থভাবে আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা অবশ্যই (প্রকৃত) মুসলমান না হয়ে মরো না’ (আলে ইমরান ৩/১০২)

আল্লাহকে কেমন ভয় করা উচিৎ সে সম্পর্কে তাফসীর ইবনু কাছীরে উল্লেখ আছে যে, ‘আল্লাহকে পূর্ণ ভয় করার অর্থ এই যে, তার আনুগত্য স্বীকার করতে হবে, অবাধ্য হওয়া যাবে না। তাঁকে সর্বদা স্মরণ করতে হবে। কোন সময়ই তাঁকে ভুলে যাওয়া চলবে না। তাঁর কৃতজ্ঞতা সর্বদা প্রকাশ করতে হবে। অকৃতজ্ঞ হ’তে পারবে না। হযরত আনাস (রাঃ)-এর উক্তি মানুষ আল্লাহকে ভয় করার দাবী পূরণ করতে পারবে না যে পর্যন্ত না সে স্বীয় জিহবাকে সংযত করে। অতঃপর আল্লাহ বলেন, আর তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। অর্থাৎ সারা জীবন ইসলামের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাক, যাতে মৃত্যুও তার উপরই হয়। মানুষ স্বীয় জীবন যেভাবে চালিত করে ঐ ভাবেই তার মৃত্যু দিয়ে থাকেন মহান প্রভু। তার উপরই ক্বিয়ামতের দিন উত্থিত করবেন। আল্লাহ তা‘আলা (ইসলামী জীবনাচরণের) বিপরীত হতে আমাদেরকে আশ্রয় দান করুন’ (ইবনু কাছীর ৪/২৩০পৃঃ)

মহান আল্লাহ আরো বলেন,فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ   ‘অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ৬৪/১৬)। অর্থাৎ তোমরা তোমাদের শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর। কেননা আল্লাহ তা‘আলা কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু চাপিয়ে  দেন না। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ- يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ- ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। নিশ্চয় ক্বিয়ামতের প্রকম্পন অতীব ভয়ংকর বিষয়। যেদিন তোমরা দেখবে দুগ্ধদায়িনী মা তার স্তন্যপায়ী সন্তানকে ভুলে যাবে এবং গর্ভবতীর গর্ভ খালাস হয়ে যাবে। আর তোমরা মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ। অথচ তারা মাতাল নয়। বস্ত্ততঃ আল্লাহর শাস্তি অতীব কঠিন’ (হাজ্জ ২২/১-২)। তিনি আরো বলেন,  وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ- ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্যে উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না’ (তালাক্ব ৬৫/২-৩)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি শরী‘আতের বিধি-বিধান পালন করবেন এবং আল্লাহ যে সমস্ত জিনিস হারাম করেছেন তা হ’তে দূরে থাকবে, আল্লাহ তার মুক্তির পথ বের করে দেবেন। আর তিনি তাকে তার ধারনাতীত উৎস হ’তে দান করবেন।

তাক্বওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, إِنْ تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ  ‘যদি তোমরা আল্লাহভীরু হও, তাহ’লে তিনি তোমাদের জন্য সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার পথ বের করে দিবেন এবং এর ফলে তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন ও তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ হ’লেন মহা অনুগ্রহশীল’ (আনফাল ৮/২৯)। অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক (রহঃ) বলেছেন, যে فُرْقَانًا (ফুরকানান) দ্বারা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য বা ফায়ছালা বুঝানো হয়েছে।

কেননা যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং তাঁর নিষেধকৃত বিষয় থেকে দূরে থাকবে, সে সত্য ও মিথ্যার পরিচয় লাভের তাওফীক্ব প্রাপ্ত হবে। এটা হবে তার মুক্তি ও সাহায্য লাভের কারণ। তার পাপরাশি ক্ষমা করে দেয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা বড়ই ক্ষমাশীল ও দোষক্রটি গোপনকারী হয়ে যাবেন। আল্লাহর কাছে সে বড় পুরস্কার পাওয়ার হকদার হয়ে যাবে।

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَنْ أَكْرَمُ النَّاسِ قَالَ أَتْقَاهُمْ. فَقَالُوا لَيْسَ عَنْ هَذَا نَسْأَلُكَ. قَالَ فَيُوسُفُ نَبِىُّ اللَّهِ ابْنُ نَبِىِّ اللَّهِ ابْنِ نَبِىِّ اللَّهِ ابْنِ خَلِيلِ اللَّهِ. قَالُوا لَيْسَ عَنْ هَذَا نَسْأَلُكَ. قَالَ فَعَنْ مَعَادِنِ الْعَرَبِ تَسْأَلُونَ خِيَارُهُمْ فِى الْجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ فِى الإِسْلاَمِ إِذَا فَقُهُوا-  হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে বলা হ’ল সবচেয়ে সম্মানী লোক কে? তিনি বললেন, সবচেয়ে অধিক আল্লাহভীরু যে। ছাহাবীগণ বললেন, আমরা এ সম্পর্কে প্রশ্ন করছিনা। তিনি বললেন, তাহ’লে আল্লাহ্ নবী ইউসুফ (আঃ), যার পিতা আল্লাহর নবী এবং তাঁর পিতা ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আঃ)। ছাহাবীগণ বললেন, আপনাকে আমরা এটা নিয়েও প্রশ্ন করছি না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা আরবের বিভিন্ন বংশের কথা জানতে চাইছ? জেনে রাখ! তাদের মধ্যে যারা জাহিলিয়াতের যামানায় ভাল ছিল ইসলামের যুগেও তারাই ভাল, তারা যদি বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী হয়ে থাকে’।[1]

অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ  إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللَّهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِى إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِى النِّسَاءِ-   

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই পৃথিবী সবুজ, মিষ্টি ও আকর্ষণীয়। আল্লাহ তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করছেন যাতে তিনি দেখে নিতে পারেন যে, তোমরা কিরূপ কাজ কর? সুতরাং তোমরা দুনিয়া হ’তে সতর্ক থাক এবং নারীদের (ফিৎনা) হ’তে সাবধান থাক। কেননা বনী ইসরাঈলের প্রথম ফিৎনা নারীদের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছিল’।[2]  হাদীছে আরো এসেছে, عَنْ عَبْدِ اللَّهِ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ  اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলতেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট হেদায়াত, তাক্বওয়া, পবিত্রতা ও স্বয়ং সম্পূর্ণতা চাই’।[3]

রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ ثُمَّ رَأَى أَتْقَى لِلَّهِ مِنْهَا فَلْيَأْتِ التَّقْوَى- ‘যে লোক কোন ব্যাপারে শপথ করার পর অধিকতর আল্লাহভীতির কাজ দেখাল, এমনতাবস্থায় সে যেন তাক্বওয়ার কাজটিই করে’।[4]  হাদীছে এসেছে, عن أبي أُمَامَةَ صُدَيّ بنِ عجلانَ الباهِلِيِّ رضي الله عنه قَالَ : سَمِعتُ رسولَ الله صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ في حجةِ الوداعِ، فَقَالَ : اتَّقُوا الله وَصلُّوا خَمْسَكُمْ، وَصُومُوا شَهْرَكُمْ، وَأَدُّوا زَكاةَ أَمْوَالِكُمْ، وَأَطِيعُوا أُمَرَاءكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ- আবু উমামা ইবনু আজলান বাহেলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় কর, রামাযানের ছিয়াম রাখ, তোমাদের সম্পদের যাকাত আদায় কর, তোমাদের শাসকবর্গের আনুগত্য কর আর তোমরা তোমাদের প্রভুর জান্নাতে প্রবেশ কর’।[5] 

উপরোক্ত কুরআন ও হাদীছের ভিত্তিতে জানা যায় যে আদর্শ ব্যক্তি হওয়ার জন্য তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করা অপরিহার্য কর্তব্য।

(২) সত্যবাদিতা :

নিঃসন্দেহে মিথ্যা বড় পাপ সমূহের মধ্যে অন্যতম। আর এটি সকল পাপের জননীও বটে। মহান আল্লাহ তা‘আলা মিথ্যা বলা ও মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করাকে হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং আদর্শবান মানুষ হ’তে হলে সর্বাগ্রে মিথ্যা পরিহার করতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তাওবাহ ৯/১১৯)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, فَلَوْ صَدَقُوا اللَّهَ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ ‘যদি তারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা সত্যে পরিণত করত তবে তা তাদের জন্যে কল্যাণকর হত’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২১)

হাদীছে এসেছে, عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم  قَالَ إِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِى إِلَى الْبِرِّ، وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِى إِلَى الْجَنَّةِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَصْدُقُ حَتَّى يَكُونَ صِدِّيقًا، وَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِى إِلَى الْفُجُورِ، وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِى إِلَى النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ، حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সততা পুণ্য ও কল্যাণের পথ প্রদর্শন করে। আর পুণ্য ও কল্যাণ জান্নাতের পথ প্রদর্শন করে। মানুষ সত্যের অনুসরণ করতে করতে অবশেষে আল্লাহর নিকট ছিদ্দীক্ব বা পরম সত্যবাদী হিসাবে অভিহিত হয়। আর মিথ্যা পাপ কাজের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপকর্ম জাহান্নামের আগুনের দিকে নিয়ে যায়। মিথ্যার অনুসরণ করতে করতে মানুষ শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে চরম মিথ্যাবাদী হিসাবে পরিগণিত হয়’।[6]  অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى الْحَوْرَاءِ السَّعْدِىِّ قَالَ قُلْتُ لِلْحَسَنِ بْنِ عَلِىٍّ مَا حَفِظْتَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِينَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيبَةٌ- হাসান বিন আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এ কথাগুলি আমি রাসূল (ছাঃ) থেকে কণ্ঠস্থ করেছি; তোমাকে যা সন্দেহে ফেলে দেয় তা বর্জন কর, যা সন্দেহে ফেলে না তা গ্রহণ কর। সত্য অবশ্যই প্রশান্তিদায়ক আর মিথ্যা সন্দেহ সৃষ্টিকারী’।[7] অন্যত্র এসেছে, عن حكيم بن حزام رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا أَوْ قَالَ حَتَّى يَتَفَرَّقَا  فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُورِكَ لَهُمَا فِى بَيْعِهِمَا ، وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا-  হাকিম ইবনু হিযাম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ক্রেতা ও বিক্রেতা একে অন্যের থেকে আলাদা হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাদের ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করে দেয়ার অধিকার থাকে। তারা উভয়ে যদি পণ্যের প্রকৃত গুণাগুণ বর্ণনা করে এবং সত্য কথা বলে তাহ’লে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হয় এবং যদি পণ্যের দোষ গোপন করে ও মিথ্যা বলে তাহ’লে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত নষ্ট করে দেয়া হয়’।[8]

অতএব উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হলে অবশ্যই সত্যবাদী হতে হবে। কেননা সত্যবাদীকে সবাই বিশ্বাস, ভক্তি ও শ্রদ্ধা করে।

পিতা-মাতার অনুগত্য :

পিতা-মাতার মাধ্যমে একটি সন্তান পৃথিবীতে আসে। তাদের মাধ্যমে এই পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখতে ও উপভোগ করতে পারে। ফলে পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণ বা পিতা-মাতার অনুগত হওয়া যরূরী। কেননা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পরেই পিতা-মাতার আনুগত্য করার কথা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। তাদের অবাধ্য হওয়া কোন ক্রমেই সম্ভব নয়।  কেননা তাদের অবাধ্য হওয়া পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম পাপ। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণ সম্পর্কে বলেন, وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না। তোমরা পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর’ (নিসা ৪/৩৬)

তাওহীদের আলোচনার পরই মহান আল্লাহ সমস্ত আত্মীয়-স্বজন আপনজন ও সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বপ্রথম পিতা-মাতার অধিকার সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। তাঁর অধিকারের পরই পিতা-মাতার অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করে এই ইঙ্গিত করেছেন যে, প্রকৃত পক্ষে সমস্ত নে‘মত ও আনুগ্রহ একমাত্র আল্লাহর পক্ষ হ’তে। জন্ম হতে শুরু করে যৌবন প্রাপ্তি পর্যন্ত যে সকল কঠিন বন্ধুর পথ ও স্তর রয়েছে, তাতে মূলত পিতা-মাতাই তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখেন। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে তাঁর ইবাদতের সাথে সাথে পিতা-মাতার আনুগত্যের কথা বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

‘(আল্লাহ বলেন,) আর আমরা মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করেছে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। অতএব তুমি আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (মনে রেখ, তোমার) প্রত্যাবর্তন আমার কাছেই। আর যদি পিতা-মাতা তোমাকে চাপ দেয় আমার সাথে কাউকে শরীক করার জন্য, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহ’লে তুমি তাদের কথা মানবে না। তবে পার্থিব জীবনে তাদের সাথে সদ্ভাব রেখে বসবাস করবে। আর যে ব্যক্তি আমার অভিমুখী হয়েছে, তুমি তার রাস্তা অবলম্বন কর। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকটে। অতঃপর আমি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করব’ (লোকমান ৩১/১৪-১৫)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا- وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا- ‘আর তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারু উপাসনা করো না এবং তোমরা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহ’লে তুমি তাদের প্রতি ‘উহ’ শব্দটিও করো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। আর তাদের সাথে নরমভাবে কথা বল। আর তাদের প্রতি মমতাবশে নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর যেমন তারা আমাকে ছোটকালে দয়াবশে প্রতিপালন করেছিলেন’ (বানী ইসরাঈল ১৭/২৩-২৪)

হাদীছে এসেছে,  عن عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ سَأَلْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ قَالَ الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا. قَالَ ثُمَّ أَىُّ قَالَ ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ. قَالَ ثُمَّ أَىُّ قَالَ الْجِهَادُ فِى سَبِيلِ اللَّهِ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহর নিকট কোন কাজটি বেশী প্রিয়? তিনি বললেন, সময়মত ছালাত আদায় করা। আমি বললাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করা। আমি আবার জানতে চাইলাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা’।[9]

অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يَجْزِى وَلَدٌ وَالِدًا إِلاَّ أَنْ يَجِدَهُ مَمْلُوكًا فَيَشْتَرِيَهُ فَيُعْتِقَه-  হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, পিতামাতার প্রতিদান আদায় করা কোন সন্তানের পক্ষেই সম্ভব নয়। কিন্তু যদি সে তাকে দাস অবস্থায় পেয়ে ক্রয় করে মুক্ত করে দেয় (তবে কিছুটা প্রতিদান আদায় হবে)’।[10]

অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِى قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ  أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أَبُوكَ-   

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার নিকট হ’তে উত্তম ব্যবহার ও সৎ সঙ্গ পাওয়ার সবচেয়ে বেশী অধিকারী কে? তিনি বললেন, তোমার মা; সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা; সে বলল এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা; সে আবার বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার বাবা। অপর এক বর্ণনায় আছে হে রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) আমার নিকট হ’তে উত্তম ব্যবহার ও সৎসঙ্গ পাওয়ার অধিক হকদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা; এরপর তোমার মা; এরপর তোমার মা; এরপর তোমার বাবা; এরপর তোমার নিকট আত্মীয়; এরপর তোমার নিকট আত্মীয়’।[11]

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ  رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ. قِيلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ  مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ- হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঐ ব্যক্তির নাক ধূলায় ধূসরিত হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধূলায় ধূসরিত হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধূলায় ধূসরিত হোক যে তার পিতা-মাতার কোন একজনকে অথবা উভয়কে বৃদ্ধাবস্থায় পেল অথচ (তাদের সেবা-যত্ন করে) জান্নাতে যেতে পারল না’।[12]

অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِى بَكْرٍ رضى الله عنهما قَالَتْ قَدِمَتْ عَلَىَّ أُمِّى وَهْىَ مُشْرِكَةٌ، فِى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، فَاسْتَفْتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قُلْتُ إِنَّ أُمِّى قَدِمَتْ وَهْىَ رَاغِبَةٌ، أَفَأَصِلُ أُمِّى قَالَ نَعَمْ صِلِى أُمَّك-  হযরত আসমা বিনতু আবু বকর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জীবিত থাকাবস্থায় আমার নিকট আমার মা কিছু চাওয়ার জন্য আসলেন, তিনি তখন মুশরিক ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আমার কাছে আমার মা এসেছে অথচ তিনি অমুসলিম। আমি কি আমার মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ; তার সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ কর’।[13] অপর এক হাদীছে এসেছে, عَنِ الْحَارِثِ عَنْ حَمْزَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَتْ تَحْتِى امْرَأَةٌ أُحِبُّهَا وَكَانَ أَبِى يَكْرَهُهَا فَأَمَرَنِى أَنْ أُطَلِّقَهَا فَأَبَيْتُ فَأَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ فَأَرْسَلَ إِلَىَّ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللَّهِ طَلِّقِ امْرَأَتَكَ فَطَلَّقْتُهَ- আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমার এক স্ত্রী ছিল। তাকে আমি খুব ভালবাসতাম। কিন্তু তাকে (আমার পিতা) উমর (রাঃ) পসন্দ করতেন না। আমাকে তিনি বললেন, তাকে ত্যাগ কর। এই প্রস্তাবে আমি প্রত্যাখ্যান করলাম। তখন উমর (রাঃ) নবী (ছাঃ)-এর  নিকট এসে এই বিষয়টি অবহিত করলেন। এরপর রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন, তাকে তালাক দাও’।[14]

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى الدَّرْدَاءِ أَنَّ رَجُلاً أَتَاهُ فَقَالَ إِنَّ لِى امْرَأَةً وَإِنَّ أُمِّى تَأْمُرُنِى بِطَلاَقِهَا. قَالَ أَبُو الدَّرْدَاءِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ الْوَالِدُ أَوْسَطُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ فَإِنْ شِئْتَ فَأَضِعْ ذَلِكَ الْبَابَ أَوِ احْفَظْه-ُ আবু দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তার নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, আমার একজন স্ত্রী আছে। তাকে ত্যাগ করার জন্য আমার মা আমাকে আদেশ করেছেন। তিনি (আবু দারদা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, পিতা-মাতা জান্নাতের দরজাগুলির মাঝে একটি শক্ত দরজা এখন তুমি চাইলে দরজাটি ভাঙ্গতে পার অথবা রক্ষাও করতে পার’।[15]

সুতরাং একজন আদর্শবান ও জান্নাতী মানুষ হ’তে হলে পিতা-মাতার সাথে সম্মানজনক আচরণ করা অত্যাবশ্যক।

সুনণাতে অনুসরণ ও তদনুযায়ী আমল :

আল্লাহ তা‘আলা সরাসরি মানুষের নিকট তাঁর দ্বীন প্রেরণ করেননি। বরং নবী ও রাসূলগণের মাধ্যমে তাঁর বাণী মানব সমাজের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। সুতরাং রাসূলের অনুসরণ করা অর্থাৎ দ্বীন বিষয়ে তাঁরা যে দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন সে অনুযায়ী নিজেকে পরিচালনা করা অত্যাবশ্যক। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ‘রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর’ (হাশর ৫৯/৭)

আল্লাহ বলেন,  قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ- قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ - ‘তুমি বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহ’লে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন ও তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান। তুমি বল, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। যদি তারা এতে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহ’লে (তারা জেনে রাখুক যে) আল্লাহ কাফিরদের ভালবাসেন না’ (আলে ইমরান ৩/৩১-৩২)

ভালোবাসা একটি গোপন বিষয়। কারো প্রতি কারো ভালোবাসা আছে কি না? অল্প আছে না বেশী আছে? তা জানার জন্য একমাত্র মাপকাঠি হ’ল পারস্পারিক ব্যবহার দেখে অনুমান করা বা ভালবাসার চিহ্ন বা লক্ষণাদি দেখে জেনে নেয়া। যারা আল্লাহর প্রতি ভালবাসার দাবীদার ও তাঁর ভালবাসা পাওয়ার আকাঙ্খী, আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় ভালবাসার মাপকাঠি বলে দিয়েছেন। অর্থাৎ কেউ যদি আল্লাহর প্রতি ভালবাসার দাবী করে তবে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর কষ্টি পাথরে তা যাচাই করে দেখা আবশ্যক। এতে আসল ও নকল ধরা পড়বে। যার দাবী যতটুকু সত্য সে রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণের প্রতি ততটুকু যত্নশীল হবে এবং তার শিক্ষার আলোকে পথের মশাল গ্রহণ করবে। পক্ষান্তরে যার দাবী দুর্বল হবে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি আনুগত্যে তার অলসতা ও দুর্বলতা তত বেশী পরিলক্ষিত হবে। আমি যদি শুধু দাবী করি যে আল্লাহকে মনে প্রাণে ভালবাসি। কিন্তু আমার আক্বীদা ও আমল যদি রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশের অনুরূপ না হয়, তবে আমার দাবীতে আমি অবশ্যই মিথ্যাবাদী। মহান আল্লাহ রববুল আলামীন আরো এরশাদ করেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসকে কামনা করে ও অধিকহারে আল্লাহকে স্মরণ করে’ (আহযাব ৩৩/২১)। এ আয়াত দ্বারা রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী সমূহ ও কার্যাবলী উভয়ই অনুসরণের আদেশ রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ يَقْنُتْ مِنْكُنَّ لِلَّهِ وَرَسُولِهِ وَتَعْمَلْ صَالِحًا نُؤْتِهَا أَجْرَهَا مَرَّتَيْنِ وَأَعْتَدْنَا لَهَا رِزْقًا كَرِيمًا ‘পক্ষান্তরে তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অনুগত হবে ও সৎকর্ম করবে, আমরা তাকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেব। আর আমরা তার জন্য উত্তম রিযিক প্রস্ত্তত করে রেখেছি’ (আহযাব ৩৩/৩১)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ‘অতএব আপনার পালনকর্তার শপথ! তারা কখনো মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়ে আপনাকে ফায়ছালা দানকারী হিসাবে মেনে নেবে। অতঃপর আপনার দেওয়া ফায়ছালার ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনরূপ দ্বিধা না রাখবে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নিবে’ (নিসা ৪/৬৫)। মহান আল্লাহর বানী : يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা বাক-বিতন্ডা কর, তাহ’লে বিষয়টি আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম’ (নিসা ৪/৫৯)

তিনি আরো বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا ‘আমরা রাসূল পাঠিয়েছি কেবল এই উদ্দেশ্যে যে, আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী তার আনুগত্য করা হবে। আর যদি তারা নিজেদের জীবনের উপর যুলুম করার পর আপনার নিকটে আসে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তাহ’লে তারা আল্লাহকে তওবা কবুলকারী ও দয়াশীলরূপে পেত’ (নিসা ৪/৬৪)। তিনি আরো বলেন, وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا ‘বস্ত্ততঃ যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা নবী, ছিদ্দীক্ব, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। আর এরাই হলেন সর্বোত্তম সঙ্গী’ (নিসা ৪/৬৯)। তিনি আরো বলেন, مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের উপর আমরা আপনাকে রক্ষকরূপে প্রেরণ করিনি’ (নিসা ৪/৮০)

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ دَعُونِى مَا تَرَكْتُكُمْ ، إِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِسُؤَالِهِمْ وَاخْتِلاَفِهِمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ ، فَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَىْءٍ فَاجْتَنِبُوهُ ، وَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ- আবু হুরায়রা হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি যেসব বিষয় তোমাদের নিকট বর্ণনা করিনি সে সব ব্যাপারে আমাকে ত্যাগ কর। অত্যাধিক প্রশ্ন করা ও নবীদের ব্যাপারে মত পাথ্যর্কের কারণে তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে। কাজেই যখন কোন কিছু আমি নিষেধ করি তখন তোমরা তা ত্যাগ কর। আর যখন আমি তোমাদেরকে কিছু আদেশ করি  তখন সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা কর’।[16]

অন্য হাদীছে এসেছে, আবু নাজিহ ইবনু ইরবাজ সারিয়াহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জ্বালাময়ী ভাষায় আমাদেরকে উপদেশ দিলেন, আমাদের সকলের এত অন্তর এত নরম হ’ল এবং চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকল। আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এটিতো বিদায়ী উপদেশের মত। কাজেই আমাদেরকে আরো নির্দেশ দিন। তিনি বলেন,  আমরা তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি আল্লাহকে ভয় করার জন্য। আর তোমাদের উপর হাবশী দাস শাসকর্তা নিযুক্ত হলেও তার কথা শোনার ও আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি। আর তোমাদের মধ্যে কেউ জীবিত থাকলে সে বহু মতপার্থক্য দেখতে পাবে। তখন তোমাদের অপরিহায্য কর্তব্য হবে আমার সুন্নাত এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের অনুসরণ করা। এ সুন্নাতকে খুব শক্ত করে অাঁকড়ে ধর এবং সমস্ত বিদ‘আত হ’তে দূরে থাক। কেননা প্রতিটি বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা’।[17]

অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ كُلُّ أُمَّتِى يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ، إِلاَّ مَنْ أَبَى. قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِى دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ أَبَى- হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার সকল উম্মত জান্নাতে যাবে, তারা ব্যতীত যারা অস্বীকার করে। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে লোক আমার আনুগত্য করে সে জান্নাতে যাবে; আর যে লোক আমার বিরেধিতা করে সে অস্বীকার করে’।[18]

অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ عَمَّارٍ حَدَّثَنِى إِيَاسُ بْنُ سَلَمَةَ بْنِ الأَكْوَعِ أَنَّ أَبَاهُ حَدَّثَهُ أَنَّ رَجُلاً أَكَلَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِشِمَالِهِ فَقَالَ كُلْ بِيَمِينِكَ. قَالَ لاَ أَسْتَطِيعُ قَالَ لاَ اسْتَطَعْتَ. مَا مَنَعَهُ إِلاَّ الْكِبْرُ. قَالَ فَمَا رَفَعَهَا إِلَى فِيهِ- আবু মুসলিম (যাকে বলা হয়) আবু ইয়াস সালামা ইবনু আমর ইবনু আকওয়া (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সামনে বাম হাতে খাবার খেতে লাগল। তিনি বললেন, ডান হাত দিয়ে খাও। সে বলল, আমি (ডান হাত দিয়ে খাবার খেতে) পারছিনা। তিনি বললেন, তুমি আর পারবেও না। এ আদেশ পালনে তাকে অহংকারই বাঁধা দিয়েছিল। তারপর সে আর কখনই তার হাত মুখের উঠাতে পারে নি’।[19]

অপর এক হাদীছে  এসেছে, عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَثَلِى وَمَثَلُكُمْ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَوْقَدَ نَارًا فَجَعَلَ الْجَنَادِبُ وَالْفَرَاشُ يَقَعْنَ فِيهَا وَهُوَ يَذُبُّهُنَّ عَنْهَا وَأَنَا آخِذٌ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ وَأَنْتُمْ تَفَلَّتُونَ مِنْ يَدِى-  জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার ও তোমাদের মধ্যেকার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ লোকের মত যে আগুন জ্বালানোর পর ফড়িং ও অন্যান্য পতঙ্গ তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর প্রাণীগুলিকে সে বাধা দিতে থাকে। আর তোমাদের কোমর ধরে আমিও তোমাদের বাঁধা দিচ্ছি আগুনে পতিত হওয়া থেকে। কিন্তু তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে তাতে পতিত হচ্ছো’।[20]

হাদীছে এসেছে, عَنْ عُمَرَ رضى الله عنه أَنَّهُ جَاءَ إِلَى الْحَجَرِ الأَسْوَدِ فَقَبَّلَهُ، فَقَالَ إِنِّى أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ لاَ تَضُرُّ وَلاَ تَنْفَعُ، وَلَوْلاَ أَنِّى رَأَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ-  ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি হাজরে আসওয়াদের নিকটে আসলেন, চুমু দিলেন আর বললেন, আমি জানি যে তুমি এক টুকরো পাথর মাত্র। তুমি কোন উপকারও করতে পার না; ক্ষতিও করতে পার না। আমি যদি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে তোমায় চুমু দিতে না দেখতাম, তাহ’লে তোমাকে আমি চুমু দিতাম না’।[21] 

অতএব আসুন আমরা উপরোক্ত নির্দেশনাবলী পুংখনাপুংখ অনুসরণ করি এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে একজন আদর্শবান আল্লাহর বান্দা হওয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন!

[লেখক : সভাপতি, দিনাজপুর সাংগঠনিক যেলা]


[1]. বুখারী হা/৩৩৫৩; মুসলিম হা/২৩৭৮,২৫২৬।

[2]. মুসলিম হা/২৭৪২।

[3]. মুসলিম হা/২৭২১; তিরিমিযী হা/৩৪৮৯।

[4]. মুসলিম হা/৪৩৬৪।

[5]. তিরমিযী হা/ ৬১৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৬৭।

[6]. বুখারী হা/৬০৯৪; মুসলিম হা/২৬০৭।

[7]. তিরিমিযী হা/২৫১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৭৭, ৩৩৭৮।

[8]. বুখারী হা/৩০৭৯; মুসলিম হা/১৫৩২।

[9]. বুখারী হা/৫২৭; মুসলিম হা/৮৫।

[10]. মুসলিম হা/১৫১০।

[11]. বুখারী হা/৫৯৭১; মুসলিম হা/২৫৪৮।

[12]. মুসলিম হা/২৫৫১।

[13]. বুখারী হা/২৬২০; মুসলিম হা/১০০৩।

[14]. আবু দাঊদ হা/৫৩১৮; সহীহ তিরমিযী হা/১১৮৯; ইবনু মাজাহ হা/১৬৯৮।

[15]. তিরমিযী হা/১৯০০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯১৪; ইবনু মাজাহ হা/১৬৯৯।

[16]. বুখারী হা/৭২৮৮; মুসলিম হা/১৩৩৭।

[17]. আবুদাউদ হা/৪৬০৭; তিরমিযী হা/২৬৭৬; সিলসিলা ছহীহা হা/৯৩৭; ইরওয়া হা/২৪৫৫।

[18]. বুখারী হা/৭২৮০।

[19]. মুসলিম হা/২০২১।

[20]. মুসলিম হা/২২৮৫।

[21]. বুখারী হা/১৫৯৭; মুসলিম হা/১২৭০।



আরও