রোহিঙ্গাদের প্রতি ভালবাসা

খাদীজা আমাতুল্লাহ 708 বার পঠিত

প্রিয় রোহিঙ্গা ভাই ও বোনেরা! আশাকরি এই চিঠি তোমাদের কাছে পৌঁছাবে এবং জানান দেবে যে, আমরা মিন্দানাওবাসীরা তোমাদের কষ্ট অনুভব করছি এবং অন্তঃপীড়ায় দগ্ধ হচ্ছি।

আমি তোমাদের জানাতে চাই যে, তোমরা একা নও। আমরা তোমাদের জন্য প্রতি ওয়াক্ত ছালাতে চোখের পানি ফেলি। কেননা তিনি সর্বশক্তিমান সবকিছু শোনেন। অত্যাচারীরা হয়ত তোমাদেরকে সবসময় মৃত্যুর হুমকিতে রেখেছে, কিন্তু তোমরা তো ঈমানদার। হয়ত তারা তোমাদের শরীর পুড়িয়ে দিতে পারে, কিন্তু তোমাদের অন্তরজগত তো দগ্ধিভূত করতে পারবে না। হয়ত তারা তোমাদেরকে বেঁচে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে, কিন্তু জান্নাতই যে তোমাদের চুড়ান্ত ঠিকানা, যদি তোমরা মুমিন হও।

জীবনের এই কঠিন মুহূর্তে এসে হয়তবা তোমরা নিজেদের পরাজিত, পরিত্যক্ত কিংবা বিস্মৃত ভাবতে পার। হয়ত তোমরা জিজ্ঞাসা করছ, কবে এই যুলুমের পরিসমাপ্তি হবে! কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য! কোথায় আমাদের মুসলিম ভাই ও বোনেরা! তারা কি আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না? তারা কি আমাদের রক্ষা করবে না?

বিশ্বাস কর প্রিয় রোহিঙ্গা ভাই ও বোনেরা! আমরা তোমাদেরকে সর্বান্তকরণে নিজেদের সাথে একাত্ম করে নিতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম সাধ্যমত তোমাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। কিন্তুু দূর্ভাগ্য। আমরাও যে আজ অসহায়। আমরা নিজেরাই এক যুদ্ধে জড়িয়ে গেছি। মারাওই সিটিতে এখন অস্ত্রের তুমুল ঝনঝনানি। জানিনা কবে এই যুদ্ধ শেষ হবে। আমরাও আমাদের মসজিদ, মাদরাসা হারিয়েছি। হারিয়েছি আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের। কিন্ত এ দুঃসময়ে আমরা তোমাদের ভুলতে পারিনি। বরং তোমাদের ওপর নির্যাতনের কথা জানতে পেরে আমাদের দুঃখ শতগুণ বেড়েছে। সত্যি বলছি, মনে হচ্ছে তোমাদের সকল দুঃখগুলো যদি বহন করে আমরা আমাদের কাঁধে নিয়ে নিতে পারতাম! তোমাদের কান্না দেখে আমরাও ক্রন্দিত। তোমাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে না পেরে আমরা ভগ্নহৃদয়। আমরাও তোমাদের সাথে তাই কাঁদছি, তোমাদের মতই কষ্ট বোধ করছি, তোমাদের মতই সারাবিশ্বের প্রতি আর্জি পেশ করছি। তোমাদের উদ্ধার করার সক্ষমতা আমাদের নেই, কিন্তু তোমাদের জন্য সম্ভব্য সকল সহযোগিতা করা এবং তোমাদের কাছে পৌঁছানোর সব চেষ্টাই আমরা করছি।

চিন্তিত হয়োনা বন্ধুরা। একজন আছেন, যিনি সত্যিই তোমাদের ভালবাসেন, তোমাদের খোঁজ রাখেন এবং তোমাদের বিপদ থেকে রক্ষা করেন। কখনও আমরা নিজেদেরকে জিজ্ঞাসা করি, কেনই বা তোমরা এই দূর্ভোগে নিক্ষিপ্ত হলে! উত্তরটা এমন পাই যে, তোমাদের ঈমান বোধহয় আমাদের চেয়ে বেশী এবং অধিকতর বিশুদ্ধ। তোমরা সবসময় মুসলিম হিসাবে মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্তত, যেটা বর্তমানকালের অধিকাংশ মুসলমানদের মধ্যে দেখা যায় না। জেনে রেখ, তোমাদের পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও সুহৃদজনরা নিরর্থক জীবন দেননি। তোমাদের উপর এই নির্মম অত্যাচার দেখে মুসলিম বিশ্ব আজ নিজেদের ঈমানী দূর্বলতা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো অবশেষে নতি স্বীকার করছে। মুসলিম উম্মাহ একত্রিত হওয়ার উপায় খুঁজছে। তোমরা আমাদের হৃদয়ে আলো দিয়েছে। তোমরা আমাদের শক্তি দিয়েছ। তোমরা ঈমানী দৃঢ়তার এক শ্রেষ্ঠ নযীর স্থাপন করেছ বর্তমান ও ভাবী প্রজন্মের জন্য। কখনও ভেব না যে, তোমরা আশীর্বাদপ্রাপ্ত নও। তোমাদের ঈমানী দৃঢ়তাকে আমরা কুর্নিশ করি। আমরা স্বাক্ষী যে, তোমরা কত আশীর্বাদপ্রাপ্ত। আল্লাহ তোমাদের এমন মহাবিপদে নিক্ষেপ করে নিশ্চয়ই তোমাদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউসের অধিবাসী হিসাবে দেখতে চেয়েছেন। সুতরাং যা-ই ঘটুক না কেন, আল্লাহ সম্পর্কে সবসময় ইতিবাচক ধারণা রাখ। আল্লাহ তোমাদেরকে নিশ্চয়ই ভালবাসেন এবং জান্নাতের উচ্চস্থলে আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দাদের মধ্যে তোমাদের রাখতে চান। তোমাদের উপর আল্লাহ পরীক্ষার উপর পরীক্ষা চাপিয়ে দিয়েছেন তোমাদেরকে পরিশুদ্ধ করে জান্নাতুল ফেরদাউসের উপযুক্ত বানাতে। তিনি নিশ্চিতভাবেই মহান ন্যায়বিচারক। তিনি যেটাই করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যই করেন এবং তিনি সঠিকই করেন। তিনি কখনও অন্যায়কারীদের পক্ষে নন। আল্লাহ সূরা বাক্বারা’র ২১৪ আয়াতে বলছেন, ‘তোমরা কি ধরে নিয়েছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ পূর্ববর্তীদের মত বিপদ-মুছিবত তোমাদের উপর এখনও আপতিত হয়নি? তাদের উপর দুঃখ-কষ্ট ও বিপর্যয় এসেছিল এবং তারা ভয়ানকভাবে প্রকম্পিত হয়েছিল। এতটাই যে, আল্লাহর নবী এবং তার ঈমানদার সহচররা বলেছিল, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।

সুতরাং আল্লাহর উপর বিশ্বাস ধরে রাখ। কখনও তার দয়ার ব্যাপারে আশা হারিও না, যদিও বিপদাপদ তোমাদের উপর ভয়ংকরভাবে চেপে বসে। যদি এই কষ্ট ও দুঃখ তোমাদের মৃত্যুও ডেকে আনে, তবুও তাকে ভালবেসে যাও, কখনও তার আনুগত্যের বাইরে যেও না। যিন্দেগী তোমাদেরকে যেদিকেই টেনে নিয়ে যাক না কেন, কখনও তাকে ভুলে যেও না। বরং সর্বদা আল্লাহর কাছে হেদায়েত কামনা কর। আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে থাক। সৎকর্ম কর। যিকর-আযকারে মশগুল থাক। সকাল-সন্ধার পঠিতব্য দোআগুলো মনে করে পড়। আল্লাহর কাছে বিপদমুক্তি কামনা কর। মনে রেখ আল্লাহর বাণী, ‘তোমরা যদি ধৈর্য ধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, এমতবস্থায় যদি আল্লাহর শত্রুরা তোমাদের উপর আক্রমণের জন্য এগিয়ে আসে; আল্লাহ তোমাদেরকে পাঁচ হাযার বিশেষভাবে চিহ্নিত ফেরেশতাদের দ্বারা সহযোগিতা করবেন (আলে ইমরান ১২৫)। আল্লাহর ওয়াদা মিথ্যা নয়।

সুতরাং আবারও বলছি, তোমরা হতাশ হয়ো না। আমরা তোমাদের পাশে আছি। আমরা তোমাদের অধিকারের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ। আমরা তোমাদের জন্য সবসময় কায়মনোবাক্যে দোআ করছি। আল্লাহর পক্ষ থেকে অজস্র শান্তি ও রহমত তোমাদের উপর বর্ষিত হতে থাকুক। আমীন!

-খাদীজা আমাতুল্লাহ

মারাওই সিটি, মিন্দানাও, ফিলিপাইন

 



বিষয়সমূহ: ভালোবাসা
আরও