আফগানিস্তান : আরেক সাম্রাজ্যবাদের পতন
মুহাম্মাদ আবু হুরায়রা ছিফাত
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 1072 বার পঠিত
কর্মক্ষেত্রে নারীদের ঝুঁকির ব্যাপারে কিছু নীতিবচন ও স্বীকারোক্তি
প্রশংসা আল্লাহর নিমিত্তে। ছালাত ও সালাম বর্ষিত হৌক আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ), তাঁর পরিজন এবং ছাহাবীদের উপর। পশ্চিমা ও অন্যান্যদের আহবানে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে ড. সালিভান বলেন, ‘ইউরোপে দ্রুত অনৈতিকতা ছড়িয়ে পড়া এবং সকল পাপের প্রকৃত কারণ হ’ল পারিবারিক বিষয়ে নারীদের অবহেলা। অধিকন্তু পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কলকারখানা, গবেষণাগার, অফিসে কাজ করাও এর অন্যতম কারণ’।
আমেরিকার সমাজ বিশেষজ্ঞ, ড. ইডা এ্যালিন বলেন, ‘গবেষণায় প্রমাণিত একজন মায়ের গৃহে অবস্থান এবং বাচ্চাদের লালন-পালন করা উচিত। পূর্ববর্তী এবং এই প্রজন্মের নৈতিক অবস্থানের মধ্যে বড় পার্থক্যের কারণ হ’ল, মা তার গৃহ ত্যাগ করা এবং তার সন্তানকে এমন ব্যক্তিদের কাছে রেখে যাওয়া যারা তাকে সঠিকভাবে লালন-পালন করতে পারে না’।
বিখ্যাত লেখিকা এ্যানি রোয়ার্ড ‘দ্যা ইস্টার্ন মেইল’ পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর প্রবন্ধে বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের কোন গবেষণাগারে কাজ করার চেয়ে বাড়ীতে পরিচারিকারূপে কাজ করা অধিকতর ভাল এবং কম দুর্দশাপূর্ণ। সেখানে সে ধূলাবালিতে মলিন হয়ে যায়, যা তার সৌন্দর্যকে নষ্ট করে।
আমাদের দেশগুলো যদি মুসলিম দেশগুলোর মত হ’ত যেখানে নম্রতা, ভদ্রতা ও পবিত্রতা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটি ইংল্যান্ডের জন্য লজ্জার বিষয় যে, তারা তাদের মেয়েদেরকে পুরুষদের সাথে মেলামেশার মাধ্যমে তাদেরকে পাপের দৃষ্টান্তবানিয়ে দিয়েছে। কেন আমরা মেয়েদেরকে কাজ করার জন্য এমন স্থান খুঁজে দিচ্ছি না, যা তাদের প্রকৃতির সাথে খাপ খায়? কেন আমরা মেয়েদের তাদের বাড়ীতে কাজ করতে এবং তাদের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষার্থে শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য কর্মক্ষেত্র ছেড়ে দিচ্ছি না’?
এই সম্ভ্রান্ত রমণী এক শতাব্দী পূর্বে যা বলে গেছেন তা গভীরভাবে ভাবুন! ভেবে দেখুন লেখিকা যা বলেছেন এর চেয়ে পাশ্চাত্যে বর্তমান অবস্থা আরো করুণ।
বৃটেনের একটি অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করার পর তার বিদায় সম্ভাষণে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এখানে আমার ষাট বছর পার হ’ল। আমার জীবনের এই বছরগুলোতে আমি সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলাম, সফলতা লাভ করেছি এবং উন্নতি অর্জন করেছি। এছাড়াও সমাজের দৃষ্টিতে আমি বেশ ভাল ক্যারিয়ার গঠন করতে পেরেছি। যাহোক, প্রশ্নটি হ’ল, এতসব সফলতা লাভের পরেও কি আমি সুখী? প্রকৃতপক্ষে, না। নিশ্চয়ই একজন নারীর একমাত্র কাজ হ’ল একটি পরিবার গঠন করা এবং সেটা ছাড়া যদি সে অন্য কিছুতে প্রচেষ্টা চালায় তাহলে তার জীবনে তা মূল্যহীন হবে’।
প্রকৃতপক্ষেই, ইউরোপে পারিবারিক বিষয়ে নারীদের অবজ্ঞাই হ’ল সকল পাপ ও দ্রুত বিচ্ছিন্নতা ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ।
‘যুগশ্রেষ্ঠ নারীগ্রন্থ’ এই শিরোনামে বৃটিশ সংবাদপত্রে কিছু বিখ্যাত নারীর কর্মকান্ড বর্ণিত হয়। তারা তাদের সত্তাগত জীবনে ফিরে যেতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং লক্ষাধিক বেতনের চাকুরীর চেয়ে নারীত্ব ও মাতৃত্বকে প্রাধান্য দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, পেপসি কোলা কোম্পানীর নির্বাহী পরিচালক ব্রেনডা বার্নস চাকুরী ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং তার বাৎসরিক আয় ছিল আনুমানিক দুই লক্ষ ডলার। তিনি এতটাই দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন যে, তার নিকট লক্ষাধিক ডলার ও চাকুরীর চেয়ে তার স্বামী ও তিন সন্তান অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। তিনি তার মনকে বুঝালেন, গৃহই হচ্ছে তার জন্য স্বাভাবিক জায়গা, যা তার সত্তাগত বৈশিষ্ট্য ও স্বভাবের সাথে খাপ খায়। পেপসি কোলা কোম্পানীর পরিচালকের পূর্বে যুক্তরাজ্যের কোকা কোলা কোম্পানীর সিইও বেনী হ্যাগনেস একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি একটি সন্তানের মা হ’তে চেয়েছিলেন। আরেকটি দৃষ্টান্ত হ’ল লিন্ডা কেসলি। তিনি (এল) ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ছিলেন, যা নারীদের চাকুরীর ব্যাপারে সমর্থন দেওয়ার জন্য সুপিরিচিত ছিল। তিনি ঐসকল নারীদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেছেন যারা কর্মক্ষেত্রে উচ্চপদে ছিল এবং বেশ ভাল বেতন পেত। ব্রেনডা বার্নস সবার মাঝে একটি ঝোঁক সৃষ্টি করেছিল যখন সে ঘোষণা করে, ‘আমি আমার চাকুরী ছেড়ে দেইনি, কারণ আমার সন্তানদের এর প্রয়োজন আছে’।
আমাদের কতিপয় নারীরা এটা পড়ে দেখবে কি? আমাদের নারীগণ যারা ওয়েস্টার্ন নারীদের মনোভাব অনুসরণ করতে চায়, তারা গৃহ ত্যাগ করে চাকুরী করার জন্য পীড়াপীড়ি করা কমাবে কি; যদিও তারা পেপসি বা কোকা কোলা কোম্পানীর ম্যানেজার নয়?
প্রাতিষ্ঠানিক সামাজিক সংগঠন একটি নতুন জরিপ চালিয়েছে। এটা নমুনা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ২০টি প্রদেশের নর-নারীকে উপস্থাপন করেছে। জরিপে প্রতীয়মান হয় যে, প্রায় আশিভাগ আমেরিকান নারী সন্তান ও পারিবারের যত্ন নেওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়িতে অবস্থান করাকে প্রাধান্য দেয়।
ন্যাশনাল ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ এন্ড স্ট্যাটিসটিকসের সামাজিক গবেষণার ফলাফল নিশ্চিত করেছে, ইতালীয় নারীগণ কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের চেয়ে একজন গৃহিণী হ’তে অধিক পছন্দ করেন। এছাড়াও ইউরোপের পাঁচটি দেশ (ইতালী, ফ্রান্স, বৃটেন, জার্মানী ও স্পেন) কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় ঘোষিত হয়েছে, ইতালীয় নারীগণ কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি বা মন্ত্রীর পদ বা রাষ্ট্রদূত বা ব্যাংকের সভাপতি হওয়ার চেয়ে তার পরিবারের দেখাশোনা করায় অধিক খুশী ও আশাবাদী। এছাড়াও তারা সফল কর্মজীবি নারী হওয়ার চেয়ে ভাল মা হ’তে অধিক পসন্দ করেন। গবেষণা প্রকাশ করে যে, ইতালীর একজন কর্মজীবি নারী চাকুরী করাকে শুধুমাত্র জীবিকা অর্জনের একটি মাধ্যম মনে করে। প্রথমত, পারিবারিক সাক্ষাতকালীন অনুষ্ঠান বা যখন তার স্বামী পরিবারের জন্য সময় দিতে পারে, ঐ সময় সে তার চাকুরীকে উপেক্ষা করে। ইতালীর প্রায় ছত্রিশ শতাংশ কর্মজীবী নারী ঘোষণা করেছেন, তাদের কর্মদক্ষতার চেয়ে তারা চাকুরীক্ষেত্রে কম যোগদান করেন। কাজেই কিছুসংখ্যক নারী চাকুরী থেকে দূরে থাকে না, তবে এমন নারীদের হার ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে ১৯ শতাংশের বেশী নয়। অধিকন্তু ৩৮ ভাগ নারী কর্মক্ষেত্রে উত্ত্যক্ত হওয়ার ভয়ে থাকে এবং ৬৪ ভাগ নারী তাদের স্বামীদের বাৎসরিক আয়ের অর্ধেক পরিবারেই বের করে আনতে পারে। ইতালীর ৯৫ শতাংশেরও অধিক নারী নিশ্চিত করেছে, পারিবারিক মূল্যবোধে তাদের গভীর বিশ্বাস রয়েছে এবং চাকুরীর জন্য পীড়াপীড়ি করাটা হ’ল তাদের পরিবারের সমস্যাগুলো থেকে এক প্রকার পলায়ন করার নামান্তর।
ফার্ডিন্যান্ড পোর্টম্যান, জার্মান নারীদের ব্যাপারে দ্যা হেরল্ড ট্রিবিউন এ লিখেছেন, চাকুরী থেকে দূরে থাকার পিছনে জার্মান নারীদের কারণ হ’ল পুরুষ, সন্তান ও গৃহের প্রতি ঝোঁক। তিনি বলেন, সন্তান ও রন্ধনশালাই হ’ল জার্মান সমাজে নারীদের ঐতিহ্যগত অবস্থান। আমরা জার্মান সমাজে নারীদের ভূমিকা বর্ণনা করতে পারি। পাশ্চাত্যের জার্মান বাণিজ্যিক কেন্দ্রের সর্বোচ্চ পদগুলো যা দেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক শক্তির মূলে রয়েছে, যেখানে নারীদের ভূমিকা এককথায় এভাবে বিবৃত করতে পারি যে, সেখানে নারীদের কোন অবস্থান নেই।
জর্জ বলেন, ‘নারীগণ মা বা গৃহিণী হ’তে পসন্দ করার কারণে অনেক ভাল প্রশাসনিক দক্ষতা নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও কোম্পানী তাদেরকে একটি উচ্চপদে পদোন্নতি দিতে ইতঃস্তত বোধ করে। কারণ তারা হয়ত সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং এইভাবে চাকুরী ছেড়ে দিতে পারে’।
প্রাচ্যের কিছু মুসলিম দেশ ভ্রমণ করার পর ফ্রান্সের একজন উকিল ক্রিস্টিন বলেন, ‘আমি বৈরূত, দামেশক, আম্মান এবং বাগদাদে সাত সপ্তাহ ভ্রমণ করেছি। এখন প্যারিসে ফিরে এসেছি। আমি কি দেখেছি? প্রকৃতপক্ষে আমি দেখেছি একজন লোক সকালে কাজের জন্য বের হয় এবং কঠোর পরিশ্রম করে। তারপর সন্ধ্যায় তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিকট যত্ন, হৃদতা ও ভালোবাসা আর জীবিকা নিয়ে ফিরে আসে। এই দেশগুলোতে একজন নারীর সন্তান লালন-পালন করা ও স্বামীর যত্ন নেওয়া ছাড়া আর কোন কাজ নেই। প্রাচ্যে একজন নারী ঘুমায়, স্বপ্ন দেখে, সে যা চায় অর্জন করে। কারণ তার স্বামী তাকে খাদ্য, ভালবাসা, আরাম ও সুখ দেয়। অন্যদিকে আমাদের দেশের নারীগণ সমতার জন্য সংগ্রাম করে আসলে সে কি অর্জন করেছে?
পাশ্চাত্যে ইউরোপের নারীদের দিকে লক্ষ্য করুন! আপনি দেখতে পাবেন, একজন নারী পণ্যের চেয়ে বেশী কিছু নয়। পুরুষ তাকে বলে, ‘যাও তোমার জীবিকা অর্জন কর, কারণ তুমি সমতা চেয়েছ। তাই যেহেতু আমি কাজ করি, তোমারও কাজ করা উচিত যাতে আমরা একত্রে জীবিকা অর্জন করতে পারি’।
জীবিকা অর্জনের জন্য কাজ ও পরিশ্রম করার কারণে নারী তার নারীত্ব ভুলে যায় এবং পুরুষ ভুলে যায় তার জীবনসঙ্গীকে। তাই জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে।
মেরিলিন মনরো যিনি তার সময়ের বিখ্যাত আবেদনময়ী অভিনেত্রী ছিলেন। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। যে গোয়েন্দা কর্মকর্তা তার এই আত্মহত্যার কেসটি তদন্ত করেছিলেন তিনি নিউইয়র্কের ম্যানহ্যাটন ব্যাংকে মনরোর গচ্ছিত একটি চিঠি দেখতে পান। চিঠির খামে তিনি মনরোর উইল লক্ষ্য করেন, চিঠিটি যেন তার মৃত্যুর আগে খোলা না হয়।
গোয়েন্দা দেখতে পান, চিঠিটি মেরিলিন মনরোর হস্তলিখিত। চিঠিটি ঐসব মেয়েদের জন্য প্রযোজ্য যারা অভিনেত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে মনরোর উপদেশ অনুসন্ধিৎসু। তিনি তার চিঠিতে মেয়েদেরকে এবং যারা সিনেমায় অভিনেত্রী হ’তে ইচ্ছুক তাদের ব্যাপারে বলেন, ‘প্রসিদ্ধ হওয়ার আকাংখা ত্যাগ করুন! লাইমলাইটের আড়ালে যারা প্রতারণা করে তাদেরকে এড়িয়ে চলুন। আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্থ নারী। আমি মা হ’তে পারিনি যদিও আমি নিজ আলয় এবং পারিবারিক সম্মানজনক জীবন পছন্দ করি। পারিবারিক জীবনই হ’ল একজন নারীর বরং মনুষ্যজাতির সুখ-শান্তির প্রতীক’।
বিখ্যাত ইংরেজ বিদ্বান স্যামুয়েল স্মাইলস যিনি ইংরেজ রেনেসাঁর অন্যতম দৃঢ় সমর্থক ছিলেন, তিনি বলেছেন, ‘যে চলতি ধারার কারণে নারীকে চাকুরী করতে বাধ্য করা হয় তা মূলত পারিবারিক জীবনকে বিধ্বস্ত করে দেয়, তাতে এই চাকুরী অঢেল ধনদৌলত বয়ে আনুক না কেন। এই কারণে যে এটা পরিবারের মূল কাঠামোয় আঘাত হানে, সংসারের স্তম্ভ গুলো পৃথক করে দেয়, সামাজিক বন্ধন টুটে ফেলে এবং স্ত্রীকে স্বামী হ’তে ও শিশুদের আত্মীয়স্বজন হতে দূরে সরিয়ে নেয়। নারীদের কাজের ধরন বিশেষভাবে বদলে গেছে, যা কেবলমাত্র তাদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটিয়েছে। নারীদের প্রকৃত কাজ হ’ল গৃহস্থালির কাজে তদারকি করা যেমন গৃহ পরিচ্ছন্ন রাখা, সন্তানদের লালন করা, প্রয়োজন অনুযায়ী সতর্কভাবে তাদের আয় থেকে খরচ করা। অন্যদিকে চাকুরী তার এ সকল দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়। এইভাবে পরিবার দুর্দশাগ্রস্থ অবস্থায় পতিত হয় এবং ছেলেমেয়েরা ভাল স্বভাবের অধিকারী হয় না। যেহেতু তারা অবহেলায় বেড়ে উঠে। অধিকন্তু স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসা শেষ হয়ে যায় এবং নারী একজন চমৎকার স্ত্রী ও মনোহর দয়িতার পরিবর্তে স্বামীর কাজ ও কষ্টের সহকর্মীতে পরিণত হয়। সে বিভিন্ন চাপের বশীভূত হয় যা তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিনয়, স্বামীর প্রতি অনুরাগ প্রকাশ ও নীতি-নৈতিকতা ইত্যাদি যা মূলত সদগুণের ভিত্তি তা লোপ করে’।
লগস উইকলি রেকর্ড সংবাদপত্র লন্ডন থেকে একটি নথিপত্র প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ‘নারীদের গৃহ ত্যাগ করে পুরুষের কাজ করাতেই মূল বিপর্যয় নিহিত। এই বিষয়টি নারীদেরকে পরিবার থেকে বিপথগামী হওয়ার সংখ্যা এবং অবৈধ সন্তানের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। এভাবে তারা সমাজের জন্য বোঝা ও অবজ্ঞার পাত্র হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে পুরুষের বিপক্ষে নারীর প্রতিযোগিতা ধ্বংসের পথে পরিচালিত করছে। আপনি কি দেখেননি, যেভাবে নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা এটাই কি নির্দেশ করে না যে, নারীর যে দায়িত্ব রয়েছে তা পুরুষের উপর আরোপ করা হয়নি এবং পুরুষের যেসব দায়িত্ব রয়েছে যা নারীর উপর আরোপ করা হয়নি?
একটি নতুন গবেষণা পুরাতন ধারণাকে সত্যায়ন করেছে। তা হ’ল, পুরুষ অধিকতর সুখী হয় যদি তার স্ত্রী গৃহেই থাকে। গবেষণায় বিবৃত হয়েছে, চাকুরী পদ পুরুষের জন্য এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা পূর্বে ভাবা হ’ত, তার চেয়েও বেশী তাকে হতাশার দিকে ঠেলে দেয়। যাহোক যে পুরুষের স্ত্রী চাকুরী করে না সে অপেক্ষাকৃত কম বিষণ্ণতায় ভোগে। লন্ডনে কুইন মেরী কলেজের মনস্তাত্ত্বিক বিভাগের একটি দল এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষের স্ত্রী যে সীমিত সময়ের জন্য কাজ করে অথবা পরিবারের দেখাশোনা করার জন্য বাড়িতে থাকে, ঐ ব্যক্তি তাদের থেকে কম বিষণ্ণতায় ভোগে যাদের স্ত্রীরা পূর্ণ সময়ের চাকুরী করে। অধিকন্তু যখন স্ত্রী পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্ব ছেড়ে দেয় এবং পূর্ণ সময়ের চাকুরীজীবী হিসেবে কাজ করে তার স্বামী অন্যদের তুলনায় অধিক হতাশাগ্রস্থ হয়। কার্যক্রমটি একটি দীর্ঘ গবেষণার অংশ উচচপদস্থ সহকর্মীদের তুলনায় যারা নিম্নপদে কাজ করে তাদের ক্রমবর্ধমান মানসিক রোগের কারণ শনাক্ত করে। প্রফেসর স্টিফেন স্টানসফিল্ড যিনি এই কার্যক্রমের পরিচালক তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝতে চেষ্টা করেছি চাকুরী ও সামাজিক জীবন, বিভিন্ন পদ ও বিষণ্ণতার মাঝে যে সম্পর্ক আছে তা স্পষ্ট করে কিনা। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন ধরনের চাপের গুরুত্ব এবং সামাজিক আনুকূল্য ও মন্দা অবস্থার মাঝে যে সম্পর্ক আছে তা তদন্ত করেছি’।
গবেষকরা সবশেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে, যে ব্যক্তি কর্মক্ষেত্রে উচ্চপদে আসীন থাকে সে পুরুষ বা নারী হোক, তার প্রচুর অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংগতি থাকে যা জীবনমানের উপর সরাসরি অবদান রাখে এবং বিষণ্ণতা ও চাপ অবদমিত করতে সাহায্য করে। ব্যক্তি তার চাকুরীর উপর যে পরিসরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে, যোগ্যতা প্রদর্শনে যতটুকু সহজলভ্য সুযোগ পায় এবং কাজের ক্রমাগত পরিবর্তন ইত্যাদি উচচপদস্থ সহকর্মীদের তুলনায় যারা নিম্নপদে কাজ করে তাদের মাঝে ক্রমাগত হাতাশায় ভোগার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে।
ড. ভিকি কাতিল এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘সামাজিক নেটওয়ার্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে রমণী চাকুরী করবেনা বলে মনস্থ করে এবং বাড়ীতে থাকতে পসন্দ করে সে পরিবারের দায়িত্ব পালনে ও সামাজিক বন্ধন অটুট রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে’।
অন্যান্য উপাদানের মাঝে বিষণ্ণতা বৃদ্ধিতে যা কাজ করে তা হ’ল চাকুরীক্ষেত্রে নিম্নপদ। তারা বিষণ্ণতায় ভুগে। কারণ তারা উপলব্ধি করে, কর্মক্ষেত্রে তাদের পদোন্নতি হচ্ছে না অথবা প্রয়োজনীয় বস্ত্তর বোঝা সেই মুহূর্তে বাড়ছে যখন তাদের সেই প্রয়োজন মেটাতে তাদের পসন্দের স্বাধীনতা থাকছে না।
এছাড়াও গবেষণায় উদঘাটিত হয় যে, নারীরা নিম্ন বা মাঝারী যে পদেই থাকুক তারা অধিক হতোদম্যের স্বীকার হয়। এটা এ কারণে যে, বাড়ীতে বা কর্মস্থলে যেখানেই হোক তারা তাদের চারপাশের পরিবেশের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না। পুরুষের ক্ষেত্রে, যখন সে কর্মক্ষেত্রে মাঝারি পদে বহাল থাকে যেখানে মূলত তার পর্যাপ্ত কর্তৃত্ব থাকে না, তিনি অধিক বিষণ্ণতার স্বীকার হবেন। একই বিষয় পুরুষদের ক্ষেত্রেও ঘটে থাকে, যিনি উচ্চ বা মাঝারি পদে আসীন অনুভব করেন, বাড়িতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর তিনি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন না।
প্রফেসর স্টানসফিল্ড আরো বলেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্তেও উপনীত হয়েছি, যেসব নারীদের স্বামীগণ চাকুরীচ্যুত হন তারা অধিক মাত্রায় হতাশার স্বীকার হন। অন্যদিকে অবসরপ্রাপ্ত স্বামীদের ব্যাপারে তাদের মাঝে হতাশার উদ্রেক হয় না’ (বিবিসি)।
আরব্য নীতিবচন ও স্বীকারোক্তি :
ছবহী ইসমাঈল কুয়েতের রাজনৈতিক সংবাদপত্রে লিখেছেন, ‘তার (নারী) মাঝে প্রাণোচ্ছলতা, কর্মক্ষমতা ও উচ্চাকাঙ্খা আছে, যা অনেক পুরুষের মাঝেই থাকে না। যেহেতু তাদের উচ্চাকাঙ্খা স্নাতক ডিগ্রী অর্জন ও চাকুরী পাওয়ার পরই শেষ হয়ে যায়। অন্যদিকে সে তার পান্ডিত্যপূর্ণ পথে স্নাতকোত্তর ও পিএইচ.ডি. অর্জনের লক্ষ্যে সফলভাবে চলতে থাকে’।
ম্যানহল আস-সারাফ যিনি দর্শনে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছেন জোর দিয়ে এই কথাগুলো বিবৃত করেছিলেন।
যাহোক, চমকপ্রদ বিষয়টি তার নিশ্চয়তায় নিহিত, সেটা হ’ল একজন নারী এখনও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য প্রস্ত্তত নয়। একজন নারীর তার স্বামীর জন্য বাড়িতে থাকা যরূরী, কাজ থেকে বাড়ীতে ফেরার পর তার স্ত্রীর আব্যশকতা রয়েছে। এছাড়াও বাচ্চাদের লালন-পালন করা ও তাদের দেখাশোনা করার জন্য মায়ের দরকার আছে। আমি সবসময় এই ইঙ্গিত দেই যে, বর্তমান অবস্থা ভ্রমপূর্ণ। এটা কখনও যৌক্তিক নয় যে, একজন নারী অন্যকিছুর জন্য তার সন্তানদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবে তা আর যা কিছুই হোক না কেন। সন্তান ও পরিবারকে হারিয়ে কোন কিছু অর্জিত হ’তে পারে না। যদি নারী তার রাজ্য ও অধীনস্তদের ভালো না বাসে যা মূলত তারই অংশবিশেষ, তাহলে আমরা তাকে আমাদের স্বার্থ রক্ষায় কিরূপে বিশ্বাস করতে পারি?
আস-সারাফ বলেই যাচ্ছিলেন, ‘একজন নারীর ভোটদানের অধিকার পাওয়া সম্ভব এ উদ্দেশ্যে যে, তিনি এমন একজন প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন যিনি তার অধিকার আদায়ের বিষয়গুলো তত্ত্বাবধান করবেন। তারপর তিনি এসব বিষয় পরিচালনার ভার পুরুষের হাতে ছেড়ে দিবেন। তা এই জন্যই যে, দায়িত্বের সাথে প্রতিনিধির সঙ্গে পরামর্শ সভায় তার উপস্থিতি, তার নারীত্ব ও আব্রু কেড়ে নিতে পারে, এমনকি তিনি অবিবাহিত হ’লেও এই বিষয়টি তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমি মনে করি যারা নারীদের অধিকার আদায়ে ডাক দেয় তারা শুধুমাত্র খ্যাতির অন্বেষী ছাড়া কিছু নয়। তাদের উচিত প্রার্থীর ব্যাপারে কথা বলার পূর্বে নিজেদেরকে প্রশ্ন করা যে, আসলেই তাদের অধিকার প্রদান করার ক্ষমতা আছে না নেই? অধিকন্তু উত্তর প্রদানে তাদের সত্যনিষ্ঠ হওয়া উচিত। যা কোনরূপ সন্দেহ ছাড়াই তাদের পক্ষ থেকে নেতিবাচক জবাব বের হয়ে আসবে। এই দায়িত্ব সাধারণত একজন নারী যে দায়িত্ব পালন করে তার চেয়ে অনেক গুরুতর। এটা নারীদের অবস্থাকে খর্ব করা নয়, বরং এই জন্য যে, তাদেরকে এই দায়িত্বের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি; বরঞ্চ নিঃসন্দেহে তাদেরকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে’।
আস-সারাফ এর সাথে আরো যোগ করেন, যদি তার ভোটদানের অধিকার থাকে তিনি একজন নারীকে নয়, বরং পুরুষকে ভোট দিবেন। এই পরিস্থিতি নারীদের প্রতিকূলে নয়, বরঞ্চ নিঃসন্দেহে তার অনুকূলে। কারণ আমি চাই একজন নারী বাড়ীতেই অবস্থান করুক এবং আমি আশা করি আমার এই চিন্তাধারা পুরাতন বা সংকীর্ণ মনের বলে অভিযুক্ত হবে না। আমি আশা করি, নারীগণ অন্যদের মতামতও গ্রহণ করে। আর তা হ’ল নারীকে একজন প্রেমময়ী স্ত্রী ও মমতাপূর্ণ মা হিসেবে দরকার, যে তার পরিবারের দেখাশোনা করবে। সমাজের সমস্যাগুলো দূর করার জন্য নারীদের তাদের মিলনায়তনে বিষয়টি গভীরভাবে অনুসন্ধান করা উচিত। আস-সারাফ নারী রাজনৈতিক কর্মীদের কানে এভাবে গুঞ্জন সৃষ্টি করেছেন, এই পথ এখনও অনেক দীর্ঘ এবং নারীদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে যা তারা সম্পাদন করতে পারে। একজন নারীর তার সমস্যা সমাধানের জন্য অনুসন্ধান করা উচিত এবং সংসদীয় বিতর্কে সময় নষ্ট করা ঠিক নয়। যেখানে তার সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নেওয়া হ’তে পারে অথবা নাও হ’তে পারে।
এবারে একজন বিখ্যাত ঔপন্যাসিকের কথা বলব, ইহসান আব্দুল কুদ্দূস যিনি তার উপন্যাসের মাধ্যমে সাহিত্যিক মহলে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছিলেন। উপন্যাসটি হ’ল, নারীর বাহিরে যাওয়া, পুরুষদের সংসর্গে মেশা ও তাদের সাথে ক্লাব ও পার্টিতে নাচা। ১৮.০১.১৯৮৯ তারিখে উপন্যাসটির প্রকাশকালে কুয়েতী সংবাদপত্র ‘আল-আনবা’-এর সাথে সাক্ষাৎকার প্রদানকালে তিনি বলেন, ‘আমি কখনও একজন কর্মজীবী নারীকে বিয়ে করার ইচ্ছা পোষণ করি না। এটাই আমার নিকট প্রতিভাত হয়েছে। আমি প্রাথমিকভাবে এটাই বুঝতে পেরেছি নারীদের জন্য গৃহেই অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে’।
লায়লা আল-উসমান বলেন, ‘পারিবারিক চৌহদ্দি পেরিয়ে একজন নারীর কর্মজীবী হওয়াতে কোনো সমস্যা নেই। তবে আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে প্রথমেই আমার পরিবার, আমার পরিবার, এবং আমার পরিবার। সবশেষে অন্যান্য কর্মক্ষেত্রের কথা আসবে’। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন- আমীন।
তথ্যসূত্র : www.saaid.net ও www.islamway.net থেকে সংগৃহীত।