অধ্যাপক আব্দুল লতীফ

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 997 বার পঠিত

[আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল লতীফ (৬৩)। দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর যাবৎ তিনি এই সংগঠনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছেন এবং উচ্চপর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সদাহাস্য এবং অন্তঃপ্রাণ মানুষ হিসাবে তিনি সুপরিচিত। সরকারী কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি মৃদুভাষী ও নিভৃতচারী এই মানুষটি দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রেখে চলেছেন সাধ্যমত। সংগঠনের প্রকাশনা সংস্থা হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর সচিব হিসাবে হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় শুরু থেকেই। বিগত প্রায় দশ বছর যাবৎ তিনি বাংলাদেশে আহলেহাদীছদের সবচেয়ে বড় জমায়েত নওদাপাড়ার বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমায় আহবায়কের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তঁার কর্মময় জীবন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার করেন তাওহীদের ডাক সহকারী সম্পাদক মুখতারুল ইসলাম। সাক্ষাৎকারটি তাওহীদের ডাক পাঠকদের খেদমতে পেশ করা হল] 

তাওহীদের ডাক : আপনার জন্মকাল ও জন্মস্থান সম্পর্কে জানতে চাই।

অধ্যাপক আব্দুল লতীফ : আমার জন্ম ১৯৫৬ সালের ২রা আগষ্ট চঁাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানধীন ৬নং কানসাট  ইউনিয়নের অর্ন্তগত ঐতিহ্যবাহী শিবনগর (জায়গীরগ্রাম) গ্রামে। ঐতিহ্যবাহী গ্রাম এ জন্য বলছি যে, আমাদের এলাকায় ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে বৃটিশ শাসনামল থেকে বিজ্ঞান শাখা সম্বলিত হাইস্কুল, পাকিস্তান আমলে থেকে আমাদের নিজ গ্রামে মহিলা দাখিল মাদরাসা এবং শিবনগর ‘ইসলামী আদর্শ পাঠাগার’ নামে একটি লাইব্রেরী চালু ছিল। বিশেষতঃ উক্ত হাইস্কুলের কারণে দূর-দূরান্ত হতে প্রচুর ছাত্র আমাদের গ্রামে আসত এবং গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই জায়গীর থাকত।

তাওহীদের ডাক : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?

অধ্যাপক আব্দুল লতীফ : আমার শিক্ষাজীবনটা একটু ভিন্ন ধরণের। আমি খুব ছোটকাল থেকেই আমার চেয়ে পাঁচ বছরের বড় ছোট চাচার সঙ্গে আমাদের গ্রামের স্কুলে যাওয়া-আসা শুরু করি এবং তার সহপাঠীতে পরিণত হই। উক্ত স্কুলটি ‘ভিলেজ এইড’ সংস্থার মাধ্যমে (আমেরিকান অর্থায়নে) নির্মিত হয়। এখান থেকে প্রাইমারীর গন্ডি পেরিয়ে আমি কানসাট হাইস্কুলে ভর্তি হই। হাইস্কুলের গন্ডি পার না হ’তেই অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় মাদরাসায় পড়ার ইচ্ছা আমার মনে প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে আমি আমার চাচাত চাচা হাফেয আব্দুছ ছামাদের শরণাপন্ন হই। কিন্তু তিনি আমাকে বলেন, এমতাবস্থায় মাদরাসায় ভর্তি হলে তোমাকে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হ’তে হবে। তিনি সময় নষ্টের ভয়ে আমাকে নিরুৎসাহিত করেন। তিনি মত ব্যক্ত করলেন যে, আমি আর মাত্র তিন বছর পড়লে তথা এসএসসি পাশ করলেই ছোট-খাট চাকরীর মাধ্যমে রুটি-রুযির ব্যবস্থা হবে। ফলে মাদরাসায় পড়ার সদিচ্ছা থাকলেও পরিবেশ ও বয়স আমার বঁাধ সাধে। অতঃপর ১৯৭৩ সালে আমি হাইস্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কানসাট সোলেমান ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হই। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৭৯ সনে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অনার্স এবং একই সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে মাষ্টার্স শেষ করি।

তাওহীদের ডাক : আপনার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন?

অধ্যাপক আব্দুল লতীফ : আমার পূর্ব-পুরুষদের একটি অংশ খুবই শিক্ষানুরাগী ও ধার্মিক ছিল। আরেকটি অংশ অর্থাৎ আমার প্রপিতামহও ধার্মিক ছিলেন, তবে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ একটু কম ছিল। ছোট থাকার কারণে ভয় পাব বলে আমার মা আমাকে এশার ছালাতের সময় রাতে মসজিদের সামনে চেরাগ নিয়ে দঁাড়িয়ে থাকতেন। তখন আমার বুঝ এত কম ছিল যে, খালি গায়ে আসর ছালাত আদায়ের পর মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় মাঠে কর্মরত আমার গ্রামের কিছু লোক জিজ্ঞেস করেন যে, তুমি মসজিদে কি করছিলে? যখন আমি তাদেরকে ছালাতের কথা বলি, তখন তারা হতভম্ব হয়ে যান এবং বলেন যে, ছালাতের সময় গায়ে জামা দিতে হয় না? যাইহোক, আমার দাদারা দুই ভাই এবং আমার বাপ-চাচারা চার ভাই এবং আমরা সহোদর নয় ভাইবোন। আমি সবার বড়। আমাদের পরিবারে ভাইয়ের মধ্যে শুধু আমার ও আমার চতুর্থ ভাই পড়াশোনা শেষ করতে সক্ষম হই। আর আমার নিজের তিন ছেলে। তারা পড়াশোনা শেষে সকলেই বিভিন্ন পেশায় জড়িত রয়েছে।

তাওহীদের ডাক : ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর আমীর প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব স্যারের সাথে কীভাবে আপনার পরিচয় ঘটে এবং কখন আপনি সংগঠনের সান্নিধ্যে আসেন?

অধ্যাপক আব্দুল লতীফ : ১৯৭৮ সালে আমি যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তখন আমি ইউওটিসি (যা বর্তমানে বিএনিসসি)-এর সদস্য হওয়ার সুবাদে ঢাকার মৌচাকে একটি বাৎসরিক জাম্বুরীতে যাই। তখন সেখানে রাবির ভুগোলের ছাত্র রাজশাহী কাজলার নাজিমুদ্দীন নামে এক আহলেহাদীছ ছাত্রভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়। তিনি আমাকে তৎকালে আহলেহাদীছদের একটি কেন্দ্র যাত্রাবাড়ি মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় নিয়ে যান। এখানেই সর্বপ্রথম আমার সাথে আমীরে জামা‘আতের সাক্ষাৎ ঘটে। এরপর আরও অনেক দিন কেটে যায়। শিক্ষাজীবন শেষ করে আমি ১৯৮২ সালের ১লা নভেম্বর মানিকগঞ্জের এক বেসরকারী কলেজে কর্মজীবন শুরু করি। অতঃপর ১৯৮৪ সালে নভেম্বর মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করি। ঐ বছরের ২২শে ডিসেম্বর ধর্মঘট চলাকালে জাসদের ছাত্র নেতা শাহজাহান সিরাজ সেনাবাহিনীর গুলিতে মারা গেলে আমি এবং ‘যুবসংঘ’-এর তৎকালীন দায়িত্বশীল মনিরুল ইসলাম (যশোর) আমীরে জামা‘আতের রাজশাহী সাধুর মোড়ের বাসায় গিয়ে উঠি। এসময় তঁার আমার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে এবং ১৯৮৫ সাল থেকে আমি যুবসংঘের সাথে পুরোদমে জড়িয়ে পড়ি এবং আহলেহাদীছ আক্বীদা ও মানহাজ সম্পর্কে আমার সঠিক বুঝ আসে। যদিও আহলেহাদীছ পরিবারে আমার জন্ম; কিন্তু আক্বীদা ও মানহাজ নিয়ে আমি ইতিপূর্বে কখনই সচেতন ছিলাম না। যুবসংঘে যোগদানের পর ১৯৮৬/৮৭ সালে আমি নিয়মতান্ত্রিকভাবে কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। এসময় রাজশাহী রাণীবাজার যুবসংঘ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মাঝে মাঝেই রাত্রিযাপন করতাম।    

তাওহীদের ডাক : আমরা জানি দীর্ঘদিন যাবৎ আপনি প্রকাশনা সংস্থা ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর সচিব হিসাবে দায়িত্বরত আছেন। কবে, কিভাবে এই সংস্থার সাথে যুক্ত হ’লেন? 

অধ্যাপক আব্দুল লতীফ : ১৯৯২ সালে চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজে বদলী হয়ে আসি। সেই সময়ে আমীরে জামা‘আত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুকরণে একটি ছহীহ আক্বীদা ভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং একটি কুয়েতী সংস্থার অর্থায়নে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলায় হাদীছ ফাউন্ডেশন ভবন গড়ে তোলেন। সংস্থাটির কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরপরই তিনি আমাকে এর সচিবের দায়িত্ব প্রদান করেন। তখন থেকেই এই সংস্থার দায়িত্বে রয়েছি এবং প্রশাসনিক দায়িত্বসমূহ আঞ্জাম দিয়ে আসছি। ফালিল্লাহিল হামদ।

তাওহীদের ডাক : আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া মাদরাসার বর্তমান নির্বাহী সভাপতিও আপনি। কখন থেকে এই দায়িত্বে এসেছেন?

অধ্যাপক আব্দুল লতীফ : আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী মাদরাসা স্থাপিত হওয়ার পর থেকে আমীরে জামা‘আত মাদরাসার সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯৫-৯৬ সনের দিকে আমাকে তিনি সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব প্রদান করেন। পরবর্তীতে সাংগঠনিক ব্যস্ততার কারণে তিনি তঁার প্রতিনিধি হিসাবে আমাকে মাদরাসার নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব দেন। তখন থেকে অদ্যবধি সাধ্যমত মাদরাসার আভ্যন্তরীণ এবং অফিসিয়াল বিভিন্ন কার্যক্রম তদারকি করে আসছি। ফালিল্লাহিল হামদ। 

তাওহীদের ডাক : আপনার দীর্ঘ সাংগঠনিক জীবনের বিশেষ কোন স্মৃতি সম্পর্কে জানতে চাই?

অধ্যাপক আব্দুল লতীফ : সাংগঠনিক জীবনে আমার বহু স্মৃতি রয়েছে। তবে সবকিছুর উপর আমি যেটি মনে করি তা হ’ল সংগঠনের কর্মীদের অফুরন্ত ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ। যখনই কোন এলাকায় সাংগঠনিক প্রোগ্রামে যাই, কর্মীরা আমাদেরকে প্রাপ্যের চাইতেও বেশী কিছু উজাড় করে দেন। তাদের এই আন্তরিক দ্বীনী ভালবাসা ও শ্রদ্ধা কোন স্মৃতিকথার চাইতে কোন অংশেই কম নয়।

তাওহীদের ডাক : শিক্ষকতা পেশায় আপনার দীর্ঘ জীবন অতিবাহিত করেছেন। পেশাজীবনের দু‘একটি স্মৃতি যদি বলতেন?

অধ্যাপক আব্দুল লতীফ : কয়েকটি ঘটনা মনে পড়ে। যেমন :

ক. আমি ১৯৮৫ সনে ৭ম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হই এবং সরকারী চাকুরীতে যোগ দেই। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় ৩ বছর লেগে যায় এবং ১৯৮৮ সালের জানুয়ারী মাসে প্রথম চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজে আমার পদায়ন হয়। তখন আমি চুয়াডাঙ্গা যাওয়ার জন্য আমার স্ত্রীসহ রাজশাহীতে আমীরে জামা‘আতের বাসায় উঠি। বাসায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় রাতে ঘুমানোর সময় হ’লে আমীরে জামা‘আত আমাকে বললেন, মেয়েরা অন্দর মহলে থাক আর আমি-আপনি এই ঘরে থাকি। সেই ঘরে একটি খাট ছিল। আমীরে জামা‘আত তার বড় ছেলে আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিবকে নিয়ে ঘরের মেঝেতেই বিছানা করে শুয়ে পড়েন। কোনভাবেই তিনি আমাকে নীচে নামতে দিলেন না। বললেন, ‘আপনি আমার বাড়ির মেহমান। অতএব আপনাকে উপরেই শুতে হবে’।

খ. আমি চুয়াডাঙ্গায় গিয়ে আহলেহাদীছ আক্বীদা মোতাবেক ছালাত আদায় করি। কলেজে অধ্যায়নরত দামুড়হুদা থানার শিবনগর গ্রামের ৫/৬ জন ছাত্র আমার ছালাত দেখে কৌতুহলী হয়ে উঠে এবং তারা খুবই খুশী হয়। তারা আমাকে বলে, স্যার আপনি তো বুখারীর বর্ণিত ছালাত আদায় করেন। ছাত্রগুলো মূলত হক-অনুসন্ধিসু ছিল এবং তারা চুয়াডাঙ্গা শহরে ছহীহভাবে ছালাত আদায় করায় মুরববীদের বঁাধার সম্মুখীন হয় এবং এক পর্যায়ে বিষয়টি প্রকট আকার ধারণ করে। অতঃপর সেখানকার বুজরুগ গড়গড়ি গ্রামের আবুল কাশেম নামের একজন আলেম আমাকে ডেকে পাঠান এবং বাহাছ-মুনাযারা আয়োজনে করে আমাকে অপদস্ত করার চেষ্টা করেন। অথচ আমি সে ব্যাপারে মোটেও প্রস্ত্তত ছিলাম না। তাছাড়া আমার মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ড ছিলনা। তবুও সংগঠনের সাহচর্যে থেকে যতটুকু শিখেছিলাম, তা-ই দিয়ে তাদের মোকাবেলা করি। আলহামদুলিল্লাহ, এখন সেই শিবনগর গ্রামে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর শাখা হয়েছে এবং সেই ছাত্রদের মাধ্যমে আহলেহাদীছ মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যারা এতে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছিল তন্মধ্যে জামাল, তমাল, তাদের বড় ভাই কামাল, আব্দুল ওয়াহিদ, নযরুল ইসলাম প্রমুখ।  

তাওহীদের ডাক : জাতি গঠনের কারিগর আদর্শ শিক্ষক হতে গেলে কী কী গুণ অর্জন করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক আব্দুল লতীফ : ছাত্রদের মাঝে আদর্শ ছড়িয়ে দেয়া এবং নিজে আর্দশিকভাবে দৃঢ় হওয়া একজন আদর্শবান শিক্ষকের জন্য খুবই যরূরী বিষয়। আমি সাধারণত ক্লাসে আরব জাতির ইতিহাস তথা মহানবী (ছাঃ)-এর জীবনী ও খোলাফায়ে রাশেদাহ অধ্যায়টি বেশী পড়াতাম এবং তাদের সামনে খোলাফায়ে রাশেদাহ্র আদর্শে আদর্শিত মনীষীদের জীবন্ত উদাহরণ তুলে ধরতাম। শুধু তাই নয়, সুযোগ পেলে ক্লাসের বাইরেও আমাদের তাক্বলীদী সমাজ ব্যবস্থার বিপরীতে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অমীয় বাণী তুলে ধরতাম। ফলে আমি আমার জীবনে এর সুফলও পেয়েছি। কখনো কোনদিনও কোন প্রিন্সিপ্যাল বা দায়িত্বশীল আমাকে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া বা বিভিন্ন দিবস পালনের মত জাহেলী প্রথা পালনের জন্য কখনো আদেশ করেননি। অথচ সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীজীবীদের জন্য তা অত্যন্ত কঠিন যা সহজেই অনুমেয়। বিশেষ করে আজ আমার খুব মনে পড়ছে ২০০৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারীর কথা। আমীরে জামা‘আতকে কারান্তরীণ করা হলে আমার প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছ থেকে যে সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছি, তা অকল্পনীয়। আমি এগুলিকে গায়েবী মদদ বলে মনে করি। ফালিল্লাহিল হামদ। 

তাওহীদের ডাক : ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর মুখপত্র ‘তাওহীদের ডাক’ পত্রিকার পাঠকদের উদ্দেশ্যে নছীহতমূলক যদি কিছু বলতেন?

অধ্যাপক আব্দুল লতীফ : আমরা বংশগত আহলেহাদীছ এবং শৈশবকাল থেকেই জমঈয়তে আহলেহাদীছ সংগঠনের নাম শুনে আসছি। শুধু তাই নয়, সাপ্তাহিক আরাফাত পত্রিকাও তখন ছিল। কিন্তু বংশগত আহলেহাদীছ হওয়ার কারণে আমরা চেতনাগতভাবে ছিলাম খুবই দুর্বল। সেই সময় ১৯৮৫ সালের সালের জানুয়ারীতে অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত ‘তাওহীদের ডাক’ আমাদের আক্বীদার জগতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। ইতিপূর্বে সাহিত্য বলতে আহলেহাদীছদের তেমন কিছু ছিলনা। ব্যক্তিগত কয়েকজন আহলেহাদীছ বক্তার দু’চারটি বই ছিল মাত্র। আলহামদুলিল্লাহ এখন বাংলা ভাষাভাষী আহলেহাদীছদের জন্য ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর প্রকাশিত সাহিত্যসমূহ সেই শূণ্যতা পূরণ করেছে। আমি পাঠকদের উদ্দেশ্যে শুধু এটুকুই বলব যে, কুরআন পড়লে প্রতি হরফে দশটি করে নেকী পাওয়া যায়। আর সেই কুরআন অনুধাবনে তাওহীদের ডাকের মত পত্রিকার অবদান মোটেও ছোট করে দেখার মত নয়।

তাওহীদের ডাক : আমাদেরকে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে ও তাওহীদের ডাকের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও মুবারকবাদ জানাই। জাযাকাল্লাহ খাইরান।

অধ্যাপক আব্দুল লতীফ : তোমাদেরকেও ধন্যবাদ।




বিষয়সমূহ: সাক্ষাৎকার তানযীম
আরও