কাদিয়ানীদে ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস (৩য় কিস্তি)

মুখতারুল ইসলাম 1401 বার পঠিত

(ঘ) আম্বিয়ায়ে কেরাম ও ছাহাবীগণ সম্পর্কে গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর আক্বীদা :

ক. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সম্পর্কে তার আক্বীদা :

১. ভন্ড নবী গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী বলে, নবী (ছাঃ)-এর তিন হাজার মু‘জেযা ছিল, কিন্তু আমার মু‘জেযাসমূহ এক মিলিয়নেরও অধিক (গোলামের 'তুহফায়ে কুবরা' ৪০ পৃ.; 'তাযকেরাতুশ শাহাদাতাইন' ৪১ পৃ.)।[1]

২. সে বলে, রাসূল (ছাঃ)-এর কামালিয়াতের তাজাল্লী শেষ প্রান্তে উন্নীত হতে পারেনি, বরং এই তাজাল্লীসমূহ আমার যুগে এবং আমার ব্যক্তিত্বে চূড়ান্ত সীমায় পেঁŠছেছে ('খুতবায়ে ইলহামিয়া, ১৭৭ পৃঃ)।[2]

৩. তার ছেলে ও খলীফা মাহমুদ আহমাদ বলেছে, ‘প্রত্যেকের জন্য এটা সম্ভব যে, সে যে মর্যাদায় উন্নতি লাভ করতে বা পেঁŠছতে চায়, তা সে পেতে পারে। এমনকি যদি সে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মর্যাদা ও সম্মান থেকেও অগ্রগামী হতে চায়, তাতেও সে সফলকাম হতে পারে (মাহমুদ আহমাদের 'ইওমিয়াত' যা আল-ফযল পত্রিকায় ১৭ই জুলাই ১৯২২ সনে প্রকাশিত)।[3]

৪. এই ভন্ডনবী কাদিয়ানী অন্যত্র নবী করীম (ছাঃ)-এর উপর নিজেকে অধিক মর্যাদাবান দাবী করে বলেছে, তঁার (মুহাম্মাদ (ছা.)-এর জন্য চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল এবং আমার জন্য চন্দ্র ও সূর্য উভয়েরই গ্রহণ হয়। তুমি কি এটা অস্বীকার কর? অর্থাৎ নবী ছাঃ)-এর জন্য কেবল চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল, সে স্থলে আমার জন্য চন্দ্র ও সূর্য উভয়ের মধ্যে গ্রহণ লেগেছিল (গোলামের ই’জাযে আহমাদী ৭১ পৃ.)।[4]

পর্যালোচনা ও জবাব

মুরতাদ গোলাম আহমাদ সম্পর্কে শায়খ ইহসান এলাহী যহীর বলেন, আল্লাহ্র এ শত্রু নবী করীম (ছাঃ)-এর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করতে চেয়েছে। যার সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ- অর্থাৎ আমি আপনার খ্যাতিকে সুউচ্চ করেছি'।[5] তিনি আরও বলেন,الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ পূর্ণ করলাম, আর ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম’।[6]

মহান আল্লাহ্র এ বাণীকেও সে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। সে ইহুদীদের ন্যায় কুরআনকে পরিবর্তন করার ইচ্ছা করেছে।

তিনি আরো বলেন, কারো কাছে হাত পাতা ও কাকুতি মিনতি করা আল্লাহর রাসূলগণের অভ্যাস ছিল না; বরং তারা ছিলেন সবচেয়ে সাহসী ও সত্যবাদী। অনুরূপভাবে তারা ছিলেন সবচেয়ে বেশি অমুখাপেক্ষী এবং অপরের কাছে কিছু চাওয়া ও কারো সামনে হাত পাতা থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। এইতো আল্লাহর রাসূল মক্কার নেতাদের সামনে সুস্পষ্টভাবে এবং তাদেরকে কাফের নামে অভিহিত করে আল্লাহর বাণী ঘোষণা করছেন-

قُلْ يَاأَيُّهَا الْكَافِرُونَ-لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ-وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ-وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَا عَبَدْتُمْ-وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ-لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ-

অর্থাৎ আপনি বলুন, হে কাফেরগণ! তোমরা যার উপাসনা কর, আমি তার উপাসনা করি না। আর তোমরাও উপাসনা কর না আমি যার উপাসনা করি এবং ভবিষ্যতেও আমি তোমাদের মা'বুদগণের উপাসনা করব না। আর তোমরাও আমার মাবুদের উপাসনা করবে না। তোমাদের প্রতিদান তোমরা পাবে এবং আমার প্রতিদান আমরা পাব।[7]

কিন্তু এই ভন্ডনবীর অবস্থান হ’ল এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা, এই কাফের ইংরেজ সরকার সম্পর্কে বলে যে, আমি সেই পরিবারের লোক যার সম্পর্কে ইংরেজ সরকার স্বীকার করে যে, এ পরিবার সরকারের অতি বিশ্বস্ত। প্রশাসকরাও স্বীকৃতি দিয়েছে যে, আমার পিতা ও আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা মনেপ্রাণে পূর্ণ বিশ্বস্ততার সাথে সরকারের সেবা করেছে। এ সরকারের তত্ত্বাবধানে আমরা যে সুখ ও শান্তি পাচ্ছি, তজ্জন্য এ দয়াল সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের জন্য আমি কোন ভাষা খঁুজে পাচ্ছি না। এ জন্য আমি আমার পিতা ও আমার ভাই এ সরকারের অবদান ও উপকারসমূহ প্রকাশ করতে ও জনসাধারণকে এ সরকারের আনুগত্যের প্রতি বাধ্য করতে এবং তাদের অন্তরে এটিকে বদ্ধমূল করতে সর্বদা কঠোর পরিশ্রম করেছি (তাবলীগে রিসালাত, ৭ম খন্ড, ৮ও ৯ পৃ.)। অথচ নবীগণ শাহাদৎ বরণ করেছেন, অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন, নিজ ঘর-বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন এবং ধন-সম্পদ হতে বঞ্চিত হয়েছেন। তবুও আল্লাহর পথে দাওয়াত ত্যাগ করেননি এবং আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া কারো আনুগত্য গ্রহণ করেননি। তারা কোন রাজা বাদশাহর দাসত্ব স্বীকার করেননি এবং কোন স্বৈরাচার ও ফেরাউনের সম্মুখে মাথা নত করেননি। তারা মহান আল্লাহর এই বাণীর উপর অটল ছিলেন- فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ অর্থাৎ তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছে, তা প্রকাশ্যে প্রচার কর, এবং মুশরিকদেরকে উপেক্ষা করে চল।[8]

ভন্ডনবী কাদিয়ানীর মত তারা মানুষের উপর কাফেরদের আনুগত্য ওয়াজিব করেন নি। যদি এই তাদের লক্ষ্য হত, তবে তাদেরকে প্রেরণ করার কি সার্থকতা ছিল? গোলাম আহমদ অন্যত্র বলে, আমি আমার জীবনের অধিকাংশ সময় ইংরেজ সরকারের সাহায্যে এবং জিহাদের বিরোধিতায় ব্যয় করেছি। আর মুসলমানগণ এই সরকারের প্রতি অনুগত না হওয়া পর্যন্ত আমার এ চেষ্টা চালিয়ে যাব (তিরিয়াকুল কুলূব ১৫ পৃ.)। হ্যঁা, কার্যতঃ জিহাদের বিরোধিতায় সে তার জীবন পাত করেছে।[9]

খ. আম্বিয়ায়ে কেরাম সম্পর্কে কাদিয়ানীর আক্বীদা

১. সে দাবী করেছে যে, সে সকল নবী রাসূলের চেয়েও উত্তম (মালফূযাতে আহমাদিয়া ২/১৪২ পৃ. ও হামেশাতু হাক্বীকাতুল অহী ৭২ পৃ.)। [10]

২. সে আরো বলে, সমস্ত নবী-রাসূলগণকে যা দেওয়া হয়েছে, তাকে তার সমস্তটাই দেয়া হয়েছে (দুররে ছামীন ২৮৭, ২৮৮ পৃ.)।[11]

৩. সে নিজেকে আদম (আ.)-এর উপরও প্রাধান্য দিয়ে বলেছে  আল্লাহ তা‘য়ালা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে অনুসরণীয় সরদার বানিয়েছেন। আর তাকে প্রত্যেক প্রাণীর উপর প্রধান ও শাসক নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহর বাণী 'আদমকে তোমরা সেজদা কর' দ্বারা তা প্রমাণিত। অতঃপর শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করে জান্নাত থেকে বের করে ফেলে। তাই ক্ষমতা শয়তানের কাছে চলে যায়, আর আদম লাঞ্ছিত ও অপদস্ত হয়ে পড়েন। তারপর শয়তানকে পরাজিত করার জন্য আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন। কুরআনে আল্লাহ পাক এর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন (মালফারকু ফী আদম ওয়াল মাসীহুল মাওঊদ ও খুত্ববা ইলহামিয়্যাহ)।[12]

৪. সে বলে যে, আল্লাহ তা‘আলা আমার দাবীর সত্যতায় এত অধিক নিদর্শনাবলী ও দলীল প্রমাণ নাযিল করেছেন, যদি এগুলো নূহের (আঃ)-এর উপর নাযেল করা হত তবে তঁার কওমের কেউই ডুবে মরত না। কিন্তু এ সকল বিরুদ্ধবাদীদের উদাহরণ হ’ল ঐ অন্ধের ন্যায় যে উজ্জ্বল দিবসকে রাত বলে, দিন নয় (তাতিম্মাতু হাকীকাতুল অহী ১৩৭ পৃ.)।[13]

৫. হযরত ইউসুফ (আ.)-এর উপর নিজেকে প্রাধান্য দিয়ে সে বলে, আমি এই উম্মতের ইউসুফ অর্থাৎ আমি অক্ষম ও অধম বনী ইসরাইলের ইউসুফ হতে উত্তম। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা নিজে এবং অনেক নিদর্শনাবলী দ্বারা আমার পবিত্রতার সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। অথচ ইউসুফ (আঃ) নিজের পবিত্রতার জন্য মানুষের সাক্ষীর প্রতি মুখাপেক্ষী হয়েছেন (বারাহীনে আহমদিয়া)।[14]

৬. তার পুত্র মাহমূদ আহমাদ বলেছে, তার পিতা আহমাদ আদম, নূহ এবং ঈসার চেয়ে উত্তম। কেননা আদমকে শয়তান জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিল, কিন্তু তার পিতা আদম সন্তানকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। নূহের এক সন্তান আল্লাহর হেদায়েত থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, কিন্তু তার পিতার সন্তান হেদায়েত পেয়েছে। ঈসাকে ইহুদীরা ক্রশবিদ্ধ করেছিল, আর তার পিতা ক্রশ ভাঙবে (আল-ফাযল, ১৮ জুলাই, ১৯৩১)।[15]

পর্যালোচনা ও জবাব :

শায়েখ বলেন, এই মিথ্যুক গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী আম্বিয়াকেরাম আলাইুহমুস সালাম-এর ব্যাপারে মিথ্যাচার করেছে। আম্বিয়াকেরামকে গালি দেওয়া কুফরী। তাহলে কি কোন মুসলমানের এটা করা সম্ভব? তিনি আরো বলেন, অতঃপর, মুসলমানদের মধ্যে এমন কে আছে, যে এ কল্পনা করতে পারে যে, মুসলমানদের মধ্যে কোন ব্যক্তি নবী ও রাসূলকে গালি দিতে পারে, তঁাদের নিন্দা করতে পারে? [16]

এসকল নিকৃষ্ট বক্তব্যের মূলতঃ কোন জবাব হয় না। আল্লাহ এই লা‘নতপ্রাপ্ত ব্যক্তির হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করুন। আমীন!

গ. ছাহাবীগণ সম্পর্কে কাদিয়ানীদের আক্বীদা

১. কাদিয়ানীদের পত্রিকা একটি প্রবন্ধ প্রচার করেছে, গোলাম আহমাদের সঙ্গী-সাথী ছাহাবীদেরই মত এবং তার উম্মত একটি নতুন উম্মত। এতে আছে- ‘আল্লাহ এ রিসালাতকে কাদিয়ান নামক উজাড় বস্তিতে প্রকাশ করেছেন এবং এ গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য গোলাম আহমদকে নির্বাচিত করেছেন, যিনি পারস্য বংশোদ্ভুত। তাকে বলে দিয়েছেন, আমি তোমার নাম পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত পেঁŠছে দেব এবং শক্তি দিয়ে তোমাকে সাহায্য করব। তুমি যে ধর্ম নিয়ে আগমন করেছ, উহাকে সকল ধর্মের উপর বিজয়ী করব। আর এ বিজয় কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে (আল-ফযল পত্রিকা ৩রা ফেব্রুয়ারী ১৯৫৩ খ্রি.)। [17]

২. পত্রিকাটি আরো প্রচার করেছে যে, যে ব্যক্তি কাদিয়ানী ধর্ম গ্রহণ করা অবস্থায় গোলাম আহমদকে দেখেছে, তাকে ছাহাবী বলা হবে (আল-ফযল, ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩৬ খ্রি.)।[18]

৩. গোলাম আহমদ নিজেই এ মতের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, যে ব্যক্তি আমার জামা‘আতে প্রবেশ করবে, সে বাস্তবে সাইয়েদুল মুরসালীনের ছাহাবীগণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে (গোলামের ‘খুতবায়ে ইলহামিয়া’ ১৭১ পৃ.)। [19]

৪. কাদিয়ানী পত্রিকা আরো লিখেছে, গোলাম আহমাদের জামা‘আত প্রকৃতপক্ষে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ছাহাবীদের জামা‘আত। তাদের উপর যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর ফয়েয ও বরকত সমূহ জারী হয়, এমনিভাবে কোন পার্থক্য ছাড়াই তার জামা‘আতের উপর রাসূল (ছাঃ)-এর ফয়েজ ও বরকত জারী হয় (আল-ফযল ১ম জানুয়ারী ১৯১৪ খ্রি.)। [20]

৫. কাদিয়ানী খলীফা মাহমুদ আহমদ তার জামা‘আতকে ঐ সকল লোকের সাথে সাক্ষাতের উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছে যে, মসীহে মাওঊদের ছাহাবীদের সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ করা উচিত। এদের মধ্যে অনেকেই এমন আছে, যাদের চুল এলোমেলো এবং মলিন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা স্বয়ং তাদের প্রশংসা করেছেন (আল-ফযল, ৮ই জানুয়ারী ১৯৩২ খ্রি.)। [21]

৬. গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে বলেছে, ‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মুহাম্মদ (ছাঃ)-এর উম্মতের মধ্যে হাযার হাযার ওলী জন্ম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আমার সমান কেউ নেই (গোলামের ‘তাযকেরাতুশ শাহাদাতাইন’ ২৯ পৃ.)। [22]

৬. ইমাম হাসান ও হুসাইনের (রা.)-এর কথা উল্লেখ করে সে বলে যে, মুসলমানরা আমার উপর এ জন্য রাগান্বিত যে, আমি নিজেকে ইমাম হুসাইনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেই। অথচ কুরআনে তঁার নামের উল্লেখ নেই, বরং যায়েদের নাম আছে। হুসাইন যদি শ্রেষ্ঠ হতেন তবে, কুরআনে তঁার নামের উল্লেখ থাকত। আর পিতৃত্বের সম্বন্ধ তো আল্লাহর এ বাণী দ্বারা ছিন্ন হয়ে গেছে, মুহাম্মদ তোমাদের মধ্য হতে কোন পুরুষের পিতা নহেন, বরং তিনি আল্লাহর একজন রাসূল (মালফূযাতে আহমাদীয়া ১৯১-১৯২ পৃ.)।[23]

৭. কাদিয়ানী পুত্র মাহমূদ আহমাদ কাদিয়ানে এক জুম‘আর খুৎবায় বলেছিল, ‘আমার পিতা বলেছেন, একশত হুসাইন আমার পকেটে রয়েছে। মানুষ এর অর্থ এই বুঝে যে তিনি একশত হুসাইনের সমান। কিন্তু আমি আরো অধিক বলি যে, দ্বীনের খেদমতের জন্য আমার পিতার এক ঘন্টার কুরবাণী একশত হুসাইনের কুরবাণীর চেয়ে উত্তম (আল-ফযল, ২৬ জানুয়ারী, ১৯২৬খ্রি.)। কাদিয়ানী পত্রিকা আল-হিকামে প্রকাশিত হয়েছে যে, ‘পুরাতন খিলাফত নিয়ে দ্বন্দ্ব পরিহার কর এবং নতুন খেলাফত গ্রহণ কর। তোমাদের মধ্যে জীবিত আলী বিদ্যমান। তাকে ছেড়ে তোমরা মৃত আলীর অনুসন্ধান করছ’ (মালফূযাতে আহমাদিয়া ১ম খন্ড ১৩১ পৃ.)। [24]

৮. এ জঘন্য মিথ্যাবাদী ভন্ডনবী আরো অগ্রসর হয়ে নিজেকে নবী করীম (ছাঃ)-এর সবচেয়ে প্রিয় পাত্র ও নবীর পরে সর্বোত্তম ব্যক্তির উপর প্রাধান্য দিয়ে বলে যে, আমি ঐ মাহদী, যার সম্পর্কে ইবনে সীরীনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি কি আবু বকরের সমমর্যাদাসম্পন্ন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তার তুলনায় আবু বকরের অবস্থান কোথায়? বরং তিনি তো কোন কোন নবীর চেয়েও উত্তম (গোলাম কাদিয়ানী রচিত ‘মি‘ইয়ারুল আখবার’ যা তাবলীগে রেসালাতের ৯ম খন্ডের ৩০পৃষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত)।[25]

৯. তার পুত্র ও খলীফা মাহমূদ আহমাদ বলেছে, আবু বকরের মর্যাদা উম্মতে মুহাম্মদীর শত শত লোক অর্জন করেছে (মাহমুদ আহমাদ রচিত ‘হাকীকতে নবুঅত’ ১৫২ পৃ.)। [26]

১০. জনৈক কাদিয়ানী লিখেছে যে, সে কোন এক কাদিয়ানী ধর্ম প্রচারককে এই বলতে শুনেছে যে, সে বলেছে গোলাম আহমাদের তুলনায় আবু বকর ও ওমরের অবস্থান কোথায়? এরা  তো গোলাম আহমাদের জুতা বহনের যোগ্যতাও রাখে না (নাঊযুবিল্লাহ) (মুহাম্মদ হুসাইন আল কাদিয়ানী কর্তৃক রচিত ‘আল- মাহদী’, ৫৭ পৃ.)।[27]

১১. শুধু তাই নয় বরং এই ভন্ডনবী কোন কোন ছাহাবীকে বোকা বলত। সে বলত যে, আবু হুরায়রা (রা.) নির্বোধ ছিলেন, তার সঠিক বোধশক্তি ছিল না (গোলামের  ‘ই‘জাযে আহমাদী’ ১৮পৃ.)।[28] সে আরো বলেছে যে, কোন কোন ছাহাবী ছিলেন নির্বোধ। (‘যমীমাতু নাছরুল হক’ এর পরিশিষ্ট ১৪০ পৃ.)।[29]

পর্যালোচনা ও জবাব :

আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর গোলাম আহমাদ সম্পর্কে বলেন, সে সকল নবী-রাসূলের উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্বের দাবী করেছে এবং তঁাদের অবমাননা করে তঁাদের সম্মানের উপর আঘাত হেনেছে। কাউকে গালি দিয়েছে এবং কারো নিন্দা করেছে। অনুরূপভাবে সে জান্নাতবাসী যুবকদের নেতৃদ্বয় হাসান ও হুসাইর এবং রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি সহানুভূতিশীল আত্মীয় স্বজনের সম্মানের উপর আক্রমণ করেছে। ইসলামের পতাকাবাহী এবং রাসূলের সুন্নাতের প্রচারকারী পবিত্র ছাহাবীগণ (রা.) আয়িম্মাতুল মুজতাহিদীন, আউলিয়ায়ে উম্মত ও মনোনীত মনীষীগণকে সে অবলীলায় নির্বোধ আখ্যায়িত করেছে।[30]

তা সত্ত্বেও কাদিয়ানীরা নিজেদেরকে মুসলমান মনে করে এবং মুসলমানদের সাথী বলে ধারণা করে। আর মুসলমানরা যে ধর্ম বিশ্বাস রাখে, তারাও সে ধর্মে বিশ্বাস রাখে বলে দাবী করে। মুসলমানদের মধ্যে এমন কে আছে, যে হযরত আবু বকর,ওমর, ওসমান ও আলী (রা.) থেকে কাউকে শ্রেষ্ঠ বলে বিশ্বাস করতে পারে? মুসলমানদের এমন কোন ইমাম আছে যিনি বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহর দরবারে ইমাম হাসান ও হুসাইনের তুলনায় পরবর্তীদের মধ্যে অন্য কেউ অধিক উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন হবে? বিশ্ব মুসলিমের মধ্যে এমন কে আছে, যে, ধারণা করতে পারে যে, এমন কোন ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছে, যে মানবজাতির শ্রেষ্ঠ পুরুষ ও আদম সন্তানের সর্দার হ’তে অধিক মর্যাদাবান? না, এমন কেউ নেই। সুতরাং কে আছে এমন যে মুসলমান হয়ে এমন উক্তি করতে পারে?[31]

শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর ছাহাবীগণ সম্পর্কে মূর্খদের বক্তব্যসমূহ খন্ডন করতে গিয়ে বলেন, অতি আশ্চর্যের বিষয় এই যে, গোলাম আহমাদের মত একজন ইতর ব্যক্তি ঐ সকল পবিত্র ব্যক্তিবর্গের সাথে প্রতিযোগিতার দাবী করে যাদেরকে আল্লাহ এ পৃথিবীতে থাকা অবস্থাতেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।[32] যেমন-

১. আবু বকর (রা.) ও হযরত ওমর (রা.) সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, هَذَانِ سَيِّدَا كُهُولِ أَهْلِ الْجَنَّةِ مِنَ الأَوَّلِينَ وَالآخِرِينَ إِلاَّ النَّبِيِّينَ وَالْمُرْسَلِينَ ‘নবী ও রসূলগণ ব্যতীত পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের মধ্যে বয়স্ক জান্নাতবাসীদের সর্দার হলেন এরা দুইজন (আবু বকর ও ওমর)।[33]

২. নবী করীম (ছাঃ) আরো বলেছেন, ‘আল্লাহ তঁার এক বান্দাকে দুনিয়া ও আল্লাহ্র নিকট যা আছে- এতদুভয়ের মধ্যে একটি গ্রহণের ইখতিয়ার দিলেন। তিনি আল্লাহ্র নিকট যা আছে তা গ্রহণ করলেন। তখন আবু বকর (রা.) কঁাদতে লাগলেন। আমি (হাদীছের রাবী আবু সাঈদ) মনে মনে ভাবলাম, এই বৃদ্ধকে কোন বস্ত্তটি কঁাদাচ্ছে? আল্লাহ তঁার এক বান্দাকে দুনিয়া ও আল্লাহ্র নিকট যা রয়েছে তা গ্রহণ করেছেন (এতে কঁাদার কি আছে?)। মূলতঃ আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)-ই ছিলেন সেই বান্দা। আর আবু বকর (রা.) ছিলেন আমাদের মাঝে সর্বাধিক জ্ঞানী। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে আবু বকর! তুমি কঁাদবে না। নিজের সাহচর্য ও সম্পদ দিয়ে আমাকে যিনি সবচেয়ে অধিক ইহসান করেছেন তিনি আবু বকর। আমার কোন উম্মতকে যদি আমি অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতাম, তবে তিনি হতেন আবু বকর। কিন্তু তঁার সাথে রয়েছে ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য। আবু বকর (রা.)-এর দরজা ব্যতীত মসজিদের কোন দরজাই রাখা হবে না, সবই বন্ধ করা হবে।[34]

৩. নবী করীম (ছাঃ) আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় জোড়া বস্ত্ত ব্যয় করে, তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এ দরজাটি উত্তম (এদিকে এস)। সুতরাং যে ছালাত আদায়কারীদের দলভুক্ত হবে, তাকে ছালাতের দরজা থেকে ডাকা হবে। আর যে মুজাহিদদের দলভুক্ত হবে, তাকে জিহাদের দরজা থেকে আহবান করা হবে। আর দাতাকে দানের দরজা থেকে ডাকা হবে। এ সব শুনে আবু  বকর (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক, যাকে ডাকা হবে, তার ঐ সকল দরজার তো কোন প্রয়োজন নেই (কেননা মুখ্য উদ্দেশ্য হল কোনভাবে জান্নাতে প্রবেশ করা)। কিন্তু এমন কেউ হবে কি, যাকে উক্ত সকল দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আর আশা করি, তুমি তাদের দলভুক্ত হবে।[35]

৪. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللَّهَ جَعَلَ الْحَقَّ عَلَى لِسَانِ عُمَرَ وَقَلْبِهِ আল্লাহ তা‘আলা ওমর (রা.)-এর মুখে ও হৃদয়ে সত্যকে স্থাপন করেছেন।[36]

৫. রাসূল (ছা.) বলেন, وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ مَا لَقِيَكَ الشَّيْطَانُ قَطُّ سَالِكًا فَجًّا إِلاَّ سَلَكَ فَجًّا غَيْرَ فَجِّكَ অর্থাৎ সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, যখনই শয়তান পথ চলতে চলতে তোমার সামনে আসে, তখনই সে তোমার রাস্তা বাদ দিয়ে অন্য রাস্তা ধরে।[37]

৬. হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-এর শানে রাসূল (ছা.) বলেন, الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الْجَنَّةِ হাসান ও হুসাইন (রা.) প্রত্যেকেই জান্নাতী যুবকদের সরদার।[38]

তিনি বলেন, গোলাম আহমাদের মত নির্বোধ, কুরুচিপূর্ণ ব্যক্তি যখন নবী (ছাঃ)-এর ছাহাবীদের প্রতি অপমানসূচক কথা বলেন তখন তার ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার দাবী বাতুলতা মাত্র।[39]                                    (ক্রমশঃ)


[1]. ইহসান ইলাহী যহীর, আল-কাদিয়ানিয়্যাহ : দিরাসাত ওয়া তাহলীল, তদেব,  পৃ. ৭২।

[2]. তদেব, পৃ. ৭৯।

[3]. তদেব, পৃ. ৮৮-৮৯।

[4]. তদেব, পৃ. ৭৫। 

[5]. সূরা ইনশিরাহ, ৯৪/৪। 

[6]. সূরা মায়েদা ৫/০৩। 

[7]. আল-কুরআন, সূরা কাফেরূণ, ১০৯/১-৬।

[8]. আল-কুরআন, সূরা হিজর, ১৫/৯৪।

[9]. আল-কাদিয়ানিয়্যাহ : দিরাসাত ওয়া তাহলীল, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭৭।

[10]. তদেব, পৃ. ৭১।

[11]. তদেব।

[12]. তদেব, পৃ. ৫৭।

[13]. তদেব, পৃ. ৬০।

[14]. তদেব, পৃ. ৬২।

[15]. তদেব, পৃ. ৬৬।

[16]. তদেব, পৃ. ৫০।

[17]. তদেব, পৃ.  ৪৯-৫০।

[18]. তদেব ।

[19]. তদেব।

[20]. তদেব ।

[21]. তদেব।

[22]. তদেব,  পৃ. ৫০।

[23]. তদেব।

[24]. তদেব ।

[25]. তদেব,  পৃ. ৪৯-৫০।

[26]. তদেব,  পৃ. ৫১-৫২।

[27]. তদেব ।

[28]. তদেব,  পৃ. ৫৫-৫৬।

[29]. তদেব ।

[30]. তদেব,  পৃ. ৪৯-৫০।

[31]. তদেব ।

[32]. তদেব, পৃ. ৫২।

[33]. তদেব,  পৃ. ৪৯-৫০। আহমাদ হা/৬০২, ছহীহাহ হা/৮২৪; মিশকাত হা/৬০৫০।

[34]. বুখারী হা/৩৬৫৪, ৪৬৬; মুসলিম হা/২৩৮২।

[35]. বুখারী হা/১৮৯৭, ২৮৪১, ৩২১৬, ৩৬৬৬, ১৫৬, ১৮৯; মুসলিম হা/১০২৭।

[36]. তিরমিযী হা/৩৬৮২; মিশকাত হা/৬০৩৩।

[37]. বুখারী হা/৩২৯৪।

[38]. তিরমিযী হা/৩৭৬৮, ছহীহাহ হা/৭৯৬; মিশকাত হা/৬১৫৪।

[39]. তদেব ।



বিষয়সমূহ: আক্বীদা
আরও