অশ্লীলতার নানামুখ : প্রতিরোধ কীভাবে?
মুহাম্মাদ আবু হুরায়রা ছিফাত
মানুষ মাত্রই ধারণাপ্রবণ। কারো প্রতি সুধারণা বা কুধারণার পোষণ করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। প্রথম দেখাতেই একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে মনের গহীনে লুক্কায়িত চিন্তা-ফিকির ও ধারণার গন্ডি দ্বারা বেঁধে ফেলে। মানুষের প্রতি সুধারণা পোষণ শান্তির সমাজ গঠনের ভিত রচনা করে। অপরপক্ষে কুধারণা ধবংসাত্মক ও মারাত্মক পরিনতি বয়ে নিয়ে আসে। সৃষ্টিগত গুণ হিসাবে পরস্পরের প্রতি ধারণা পোষণ ক্রিয়া-প্রক্রিয়াটিও মানুষের প্রতি চ্যালেঞ্জ ও পরীক্ষা স্বরূপ। বক্ষমান আলোচনায় কুধারণা সম্পর্কে সবিস্তারে আলোচনার প্রয়াস পাব।
(سوء الظن) তথা কুধারণার পরিচয় :
الظن শব্দটির কয়েকটি অর্থ হতে পারে। যেমন -
১. সন্দেহ, সংশয় ইত্যাদি। যেমন কোন ব্যক্তি একটি কূপ সম্পর্কে বলল যে, এই কূপে পানি আছে কিনা তা তার জানা নেই অর্থাৎ সে সন্দেহ করল, থাকতেও পারে অথবা না থাকতে পারে। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
مَنْ كَانَ يَظُنُّ أَنْ لَنْ يَنْصُرَهُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ فَلْيَمْدُدْ بِسَبَبٍ إِلَى السَّمَاءِ ثُمَّ لْيَقْطَعْ فَلْيَنْظُرْ هَلْ يُذْهِبَنَّ كَيْدُهُ مَا يَغِيظُ-
‘যে ব্যক্তি মনে করে (ধারণা) যে, আল্লাহ তাকে (রাসূলকে) কখনোই দুনিয়া ও আখেরাতে সাহায্য করবেন না, সে ব্যক্তি আকাশ পর্যন্ত একটা রশি টেনে নিক। অতঃপর সেটা বিচ্ছিন্ন করুক। অতঃপর সে দেখুক তার এই কৌশল (রাসূলের ব্যাপারে) তার আক্রোশ দূর করে কি-না’ (হাজ্জ ২২/১৫)।
২. মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। যেমন- তুমি কারো মানহানী করার উদ্দেশ্যে বললে যে, মানুষ তাকে সন্দেহ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِذْ جَاءُوكُمْ مِنْ فَوْقِكُمْ وَمِنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَإِذْ زَاغَتِ الْأَبْصَارُ وَبَلَغَتِ الْقُلُوبُ الْحَنَاجِرَ وَتَظُنُّونَ بِاللَّهِ الظُّنُونَا ‘যখন তারা তোমাদের প্রতি আপতিত হয়েছিল তোমাদের উচ্চ ভূমি থেকে ও নিম্নভূমি থেকে। আর যখন (ভয়ে চক্ষু ছানাবড়া হয়ে) তোমাদের দৃষ্টিভ্রম হচ্ছিল ও প্রাণ ওষ্ঠাগত হচ্ছিল এবং তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা বিরূপ ধারণা পোষণ করতে শুরু করছিলে (যে, তিনি তার দ্বীনকে সাহায্য করবেন না)’ (আহযাব ৩৩/১০)।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা অধিক ধারণা হ’তে বিরত থাক। নিশ্চয়ই কিছু কিছু ধারণা পাপ’ (হুজুরাত ৪৯/১২)।
৩. ধারণা ও অনিশ্চিত জ্ঞান : যেমন- কেউ বলল, আমার মনে হয় সূর্য উদয় হয়েছে। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَذَا النُّونِ إِذْ ذَهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَنْ لَنْ نَقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَى فِي الظُّلُمَاتِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ-
‘আর স্মরণ কর মাছওয়ালা (ইউনুস)-এর কথা। যখন সে ক্রুদ্ধ অবস্থায় চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল (ধারণা) যে, আমরা তার উপর কোনরূপ কষ্ট দানের সিদ্ধান্ত নেব না। অতঃপর সে (মাছের পেটে) ঘন অন্ধকারের মধ্যে আহবান করল (হে আল্লাহ!) তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র। আমি সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত’ (আম্বিয়া ২১/৮৭)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই কিতাবধারীদের মধ্যকার কাফেরদের তাদের বাড়ী-ঘর থেকে প্রথমবারের মত একত্রিতভাবে বহিষ্কার করেছেন। তোমরা ধারণা করতে পারনি যে, তারা বের হয়ে যাবে। অথচ তারা ভেবেছিল যে, তাদের দুর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা করবে। অতঃপর আল্লাহর শাস্তি তাদের উপর এমন দিক থেকে আপতিত হ’ল যে, তারা তা কল্পনাও করেনি। আল্লাহ তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করে দিলেন যে, তারা তাদের বাড়ী-ঘর নিজেদের হাতে ও মুসলমানদের হাতে ধ্বংস করতে লাগল। অতএব হে দূরদর্শী ব্যক্তিগণ! তোমরা উপদেশ হাছিল কর’ (হাশর ৫৯/ ২)।
মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا ‘অথচ এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল ধারণার অনুসরণ করে। আর সত্যের মুকাবিলায় ধারণার কোন মূল্য নেই’ (নাজম ৫৩/২৮)।
৪. নিশ্চিত হওয়া : যেমন- কেউ বলল, ‘অমুকে এটা ধারণা করেছে’ অর্থাৎ সে নিশ্চিত হয়েছে।
যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ- الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُمْ مُلَاقُو رَبِّهِمْ وَأَنَّهُمْ إِلَيْهِ رَاجِعُونَ- ‘তোমরা আল্লাহর সাহায্য কামনা কর ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে। আর তা অবশ্যই কঠিন কাজ, তবে বিনীত বান্দাগণ ব্যতীত। যারা দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে যে, তারা তাদের প্রভুর সাথে মুলাক্বাত করবে এবং তারা তঁার কাছেই ফিরে যাবে’ (বাকবারাহ ২/৪৫-৪৬)।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَيَقُولُ هَاؤُمُ اقْرَءُوا كِتَابِيَهْ- إِنِّي ظَنَنْتُ أَنِّي مُلَاقٍ حِسَابِيَهْ- ‘যার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে সে (অন্যদেরকে) বলবে, এই নাও আমার আমলনামা পড়ে দেখ, আমি জানতাম যে আমাকে আমার হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে’ (হাক্কাহ-৬৯/৪৫-৪৬)।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِينَ-الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ-وَإِذَا كَالُوهُمْ أَوْ وَزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ-أَلَا يَظُنُّ أُولَئِكَ أَنَّهُمْ مَبْعُوثُونَ- لِيَوْمٍ عَظِيمٍ- ‘দূর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে ও ওযনে কম দেয়, যারা মানুষের কাছ থেকে যখন মেপে নেয় তখন পুরোপুরি নেয়; আর যখন তাদেরকে মেপে কিংবা ওযন করে দেয় তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদেরকে আবার কবর থেকে উঠানো হবে এক মহা দিবসে’ (মুতাফ্ফিফীন ৮৩/-১-৫)।
উপরুল্লেলখিত অর্থগুলো কোনটিই পরস্পরে সাংঘর্ষিক নয়। বরং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একেকটি আরেকটির পরিপূরক বা প্রতিবিম্ব।
মূলতঃ ‘ধারণা’ শুধুমাত্র এমন কিছু অনুমান বা চিন্তার নাম, যা বাহ্যিক কিছু নিদর্শন ও প্রকাশ্য কিছু ইঙ্গিতের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। অতএব যদি কোন ব্যক্তির ধারণা মযবুত হয় ও এ সমস্ত নিদর্শন ও আকার-ইঙ্গিতগুলোর উপর সুদৃঢ় হয়, তাহলে সে নিশ্চিত জ্ঞান ও অকাট্য সত্যের ফায়দা পায়। আর যদি ব্যক্তির ধারণা মযবুত এবং সুদৃঢ় না হয় তাহ’লে সমস্ত সন্দেহ ও ধারণা এবং অনিশ্চিত জ্ঞান ছাড়া সে আর কোন ফল বা ফায়েদা লাভ করতে পারে না।
আর سوء শব্দটি সাধারণত দু’টি অর্থ দিয়ে থাকে। যথা-
১. سوء শব্দটির অর্থ ঘৃণিত বা ঘৃণ্য। অথবা এভাবে বলা যায় যে, যে সকল বিষয় ভালোর বিরুদ্ধে যায়, সেটিই মন্দ বা سوء। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا وَمَنْ جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَى إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ- ‘যে ব্যক্তি একটি ভালো কাজ করবে, সে দশগুণ ছওয়াব পাবে। আর যে কোন খারাপ কাজ করবে তাকে শুধু তার সমপরিমাণ প্রতিফলই দেয়া হবে। আর তারা অত্যাচারিত হবে না’ (আন‘আম ৬/১৬০)।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,ثُمَّ بَدَّلْنَا مَكَانَ السَّيِّئَةِ الْحَسَنَةَ حَتَّى عَفَوْا وَقَالُوا قَدْ مَسَّ آبَاءَنَا الضَّرَّاءُ وَالسَّرَّاءُ فَأَخَذْنَاهُمْ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ ‘তারপর ভালো অবস্থা দ্বারা (তাদের) খারাপ অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছি। অবশেষে তারা প্রাচুর্যের অধিকারী হয়েছে এবং বলেছে, আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবনেও দুঃখ-কষ্ট, সুখ-সমৃদ্ধি এসেছিল। অতঃপর আকস্মাৎ আমি তাদের পাকড়াও করি, কিন্তু তারা উপলব্ধি করতে পারে না’ (আ‘রাফ ৭/৯৫)।
অন্যত্র বলা হয়েছে, وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِالسَّيِّئَةِ قَبْلَ الْحَسَنَةِ وَقَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِمُ الْمَثُلَاتُ وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو مَغْفِرَةٍ لِلنَّاسِ عَلَى ظُلْمِهِمْ وَإِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيدُ الْعِقَابِ ‘ওরা (ঈমান আনার) কল্যাণের পূর্বেই তোমার কাছে শাস্তি ত্বরান্বিত করার দাবী জানায়। অথচ তাদের পূর্বে বহু ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির দৃষ্টান্ত গত হয়েছে। মানুষের যুলুম সত্ত্বেও তোমার পালনকর্তা তাদের প্রতি ক্ষমাশীল। আর নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে কঠোর’ (রা‘দ ১৩/৬)।
২. سوء শব্দ দ্বারা এমন একটি বিষয়কে বুঝানো হয়, যা মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন রাখে। এমনটা নিজের ক্ষেত্রে হতে পারে অথবা অন্যদের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
এ দু’টি অর্থের মাঝে কোন ধরণের সাংঘর্ষিকতা নেই। কেননা মন্দ কাজ ও অসৎ কাজ নিজের উপরই বিপদ বয়ে আনে। মহান আল্লাহ বলেন, لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ وَمَنْ يُعْرِضْ عَنْ ذِكْرِ رَبِّهِ يَسْلُكْهُ عَذَابًا صَعَدًا ‘যাতে আমরা তাদেরকে এর দ্বারা পরীক্ষা করতে পারি। কিন্তু যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের স্মরণ হ’তে বিমুখ হবে, তিনি তাকে কঠিন শাস্তির মধ্যে প্রবেশ করাবেন’ (জিন ৭২/১৭)।
মহান আল্লাহ বলেন, وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى ‘আর যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবন-জীবিকা সংকুচিত হবে এবং আমরা তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ করে উঠাব’ (ত্বোয়াহা ২০/১২৪)।
যেহেতু আমরা আলাদা আলাদা ভাবে سوء এবং ظن উভয়টি সম্পর্কে আলোচনা করেছি, তাই বলা যায় যে,سوء الظن তথা কুধারণা বলা হয় এমন আন্দাজ বা অনুমানকে যা অন্যের ভালো গুণে গুণান্বিত হওয়াকে নাকচ করে।
কুধারণার রকমফের :
ক. আল্লাহর দ্বীনের পথে প্রচেষ্টা না চালিয়ে বসে থাকার এই ধারণায় যে, আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও তার ওলি। এমন ধারণাকারীরা নিঃসন্দেহে ভুল ধারণায় নিমজ্জিত। আল্লাহ এরূপ ধারণার নিন্দা করেছেন। যেমন তিনি উহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একদল মুনাফিকের সম্পর্কে বলেন, ‘তারপর তিনি তোমাদের উপর দুশ্চিন্তার পর নাযিল করলেন প্রশান্ত তন্দ্রা, যা তোমাদের মধ্য থেকে একদলকে ঢেকে ফেলেছিল, আর অপরদল নিজেরাই নিজেদেরকে চিন্তাগ্রস্ত করেছিল। তারা আল্লাহ সম্পর্কে জাহিলী ধারণার ন্যায় অসত্য ধারণা পোষণ করছিল। তারা বলছিল, আমাদের কি কোন বিষয়ে অধিকার আছে? বল, নিশ্চয় সব বিষয় আল্লাহর। তারা তাদের অন্তরে লুকিয়ে রাখে এমন বিষয় যা তোমার কাছে প্রকাশ করে না। তারা বলে, যদি কোন বিষয়ে আমাদের অধিকার থাকত, আমাদেরকে এখানে হত্যা করা হ’ত না। বল, তোমরা যদি তোমাদের ঘরে থাকতে তাহলেও যাদের ব্যাপারে নিহত হওয়া অবধারিত রয়েছে, অবশ্যই তারা তাদের নিহত হওয়ার স্থলের দিকে বের হয়ে যেত। আর যাতে তোমাদের মনে যা আছে আল্লাহ তা পরীক্ষা করেন এবং তোমাদের অন্তরসমূহে যা আছে তা পরিষ্কার করেন। আর আল্লাহ তোমাদের অন্তরের বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত’ (আলে-ইমরান ৩/১৫৪)।
খ. গুণাহ এবং পাপাচারে লিপ্ত হওয়া অনেক ব্যক্তি এমন ধারণা করে যে, আল্লাহ কিছুই দেখেন না এবং বুঝেন না। যেমন আল্লাহ বলেন, وَذَلِكُمْ ظَنُّكُمُ الَّذِي ظَنَنْتُمْ بِرَبِّكُمْ أَرْدَاكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ مِنَ الْخَاسِرِينَ ‘তোমাদের পালনকর্তা সম্পর্কে তোমাদের এ ধারণাই তোমাদেরকে ধ্বংস করেছে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছ’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/২৩)।
গ. অথবা তারা এই ধারণা করে যে, পুনরুত্থান এবং হিসাব বলতে কিছুই নেই। যেমন-আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَأَنَّهُمْ ظَنُّوا كَمَا ظَنَنْتُمْ أَنْ لَنْ يَبْعَثَ اللَّهُ أَحَدًا-
‘তারা মনে করেছিল যেমন তোমরাও মনে কর যে, আল্লাহ কাউকে পুনরুত্থিত করবেন না’ (জিন-৭২/৭)।
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَدَخَلَ جَنَّتَهُ وَهُوَ ظَالِمٌ لِنَفْسِهِ قَالَ مَا أَظُنُّ أَنْ تَبِيدَ هَذِهِ أَبَدًا-وَمَا أَظُنُّ السَّاعَةَ قَائِمَةً وَلَئِنْ رُدِدْتُ إِلَى رَبِّي لَأَجِدَنَّ خَيْرًا مِنْهَا مُنْقَلَبًا ‘আর সে তার বাগানে প্রবেশ করল, নিজের প্রতি যুলমরত অবস্থায়। সে বলল, আমি মনে করি না যে, এটি কখনো ধ্বংস হবে। আর আমি মনে করি না যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর আমাকে যদি ফিরিয়ে নেয়া হয় আমার রবের কাছে, তবে নিশ্চয় আমি এর চেয়ে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল পাব’ (কাহাফ ১৮/৩৫,৩৬)।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,وَلَئِنْ أَذَقْنَاهُ رَحْمَةً مِنَّا مِنْ بَعْدِ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُ لَيَقُولَنَّ هَذَا لِي وَمَا أَظُنُّ السَّاعَةَ قَائِمَةً وَلَئِنْ رُجِعْتُ إِلَى رَبِّي إِنَّ لِي عِنْدَهُ لَلْحُسْنَى فَلَنُنَبِّئَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِمَا عَمِلُوا وَلَنُذِيقَنَّهُمْ مِنْ عَذَابٍ غَلِيظٍ ‘আর যদি আমরা তাদের কষ্টের পর অনুগ্রহের স্বাদ আস্বাদন করাই, যা তাদের স্পর্শ করেছিল, তখন তারা অবশ্যই বলবে, এটা তো আমারই প্রাপ্য। আর আমি মনে করি না যে, ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। তবে যদি আমাকে আমার প্রতিপালকের নিকট ফিরিয়ে নেওয়াও হয়, তাহ’লে অবশ্যই সেখানে আমার জন্য কল্যাণ থাকবে। অতএব অবশ্যই আমরা অবিশ্বাসীদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করব এবং অবশ্যই তাদেরকে কঠিন শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবো’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৫০)।
ঘ. মু’মিনদের ধ্বংসের কামনা করা এবং তাদের ব্যাপারে কুধারণা পোষণ করা। যেমন আল্লাহ হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন মুসলমান নামধারী মুনাফিকদের ব্যাপারে বলেন, بَلْ ظَنَنْتُمْ أَنْ لَنْ يَنْقَلِبَ الرَّسُولُ وَالْمُؤْمِنُونَ إِلَى أَهْلِيهِمْ أَبَدًا وَزُيِّنَ ذَلِكَ فِي قُلُوبِكُمْ وَظَنَنْتُمْ ظَنَّ السَّوْءِ وَكُنْتُمْ قَوْمًا بُورًا ‘বরং তোমরা ভেবেছিলে যে, রাসূল ও মুমিনগণ আর কখনোই তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে আসতে পারবে না। আর এই ধারণা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত ছিল এবং তোমরা মন্দ ধারণার বশবর্তী ছিলে। আসলে তোমরা একটি ধ্বংসশীল সম্প্রদায়’ (ফাৎহ ৪৮/১২)।
ঘ. সৃষ্টিজীবকে ভয় করা এই ধারণার বশবর্তী হয়ে যে, তারা কোন কিছু দিতে পারে কিংবা আটকেও রাখতে পারে। তারা উপকার করতে পারে বা ক্ষতিও করতে পারে।
ঙ. কোন ব্যক্তির নেক আমল করার ক্ষেত্রে ক্রটি থাকা। যেমন- রোগীর সেবা করা, জানাযায় উপস্থিত হওয়া, অভাবীকে সহযোগিতা করা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত দূর করা ইত্যাদি। অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে বিশেষ কোন কারণে যেমন সফর, অসুস্থতা অথবা অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকা অথবা অজ্ঞতার কারণে কোন কাজে ক্রটি হ’লে কুধারণাকারী ভেবে নেয় যে, সে বুঝি অহংকার, বড়ত্ব, হিংসা, গুরুত্বহীনতা, কৃপণতা বা এরূপ কোন সমস্যার কারণে তার কাজে ক্রটি রয়েছে ।
চ. সমাজে কোন ভালো কাজ করা যেমন-সৎ কাজের আদেশ আর অসৎ কাজের নিষেধ করা, ছাদাকবাহ্ করা, মানুষকে পথ দেখানো, তাদেরকে শিক্ষা দেওয়া, দুই শত্রুর মাঝে মীমাংসা করে দেওয়া ইত্যাদি কাজ। কুধারণাকারী মনে করে যে, এই কাজগুলো করা হয় লোক দেখানো বা প্রসিদ্ধি লাভের উদ্দেশ্যে। অথচ প্রকৃতপক্ষে একজন সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি কাজগুলো করেছে এই ভেবে যে, তা যেহেতু আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত কাজ, অতএব যাতে কোন প্রকার ত্রুটি না হয়। কিন্তু মুনাফিকরা মুসলমানদের সম্পর্কে ধারণা করে যে, মুসলমানরা সবকিছু লোক দেখানো ও প্রসিদ্ধি লাভের জন্য করে থাকে। আল্লাহ এই মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেন,
الَّذِينَ يَلْمِزُونَ الْمُطَّوِّعِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِينَ لَا يَجِدُونَ إِلَّا جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُونَ مِنْهُمْ سَخِرَ اللَّهُ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ-
‘যারা স্বেচ্ছায় ছাদাক্বা দানকারী মুমিনদের প্রতি বিদ্রূপ করে এবং যাদের স্বীয় পরিশ্রমলব্ধ বস্ত্ত ছাড়া কিছুই নেই তাদেরকে উপহাস করে, আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন এবং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (তওবা ৯/৭৯)।
শেষকথা :
এছাড়াও কুধারনার প্রতি ইঙ্গিতকারী আরো অনেক বিষয় রয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও তার রাসূল এবং মুমিনদের প্রতি কুধারণাকে ইসলামে হারাম করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, أَلَا إِنَّ لِلَّهِ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَمَا يَتَّبِعُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ شُرَكَاءَ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ ‘মনে রেখ, আসমান ও যমীনে (পূজারী ও পূজ্য) যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর মালিকানায় রয়েছে। আর যারা আল্লাহকে ছেড়ে শরীকদের আহবান করে, তারা কিছুরই অনুসরণ করে না। তারা কেবল ধারণার অনুসরণ করে এবং তারা কেবল কল্পনাপ্রসূত কথা বলে’ (ইউনূস ১০/৬৬)।
অন্যত্র বলেন, وَمَا يَتَّبِعُ أَكْثَرُهُمْ إِلَّا ظَنًّا إِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا يَفْعَلُونَ ‘ওদের অধিকাংশ কেবল ধারণার অনুসরণ করে। অথচ সত্যের মুকাবিলায় ধারণা কোন কাজে আসে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে, সকল বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত’ (ইউনূস ১০/৩৬)।
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক অনুমান থেকে বিরত থেকো। নিশ্চয়ই কোন কোন অনুমান পাপ (হুজুরাত ৪৯/১২)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ
الْحَدِيثِ، وَلاَ تَجَسَّسُوا، وَلاَ تَحَسَّسُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا،
وَكُونُوا إِخْوَانًا ‘তোমরা কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করো না। কেননা,
খারাপ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। একে অপরের ছিদ্রান্বেষণ করো না, একে অন্যের
ব্যাপারে মন্দ কথায় কান দিও না এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা রেখ না বরং
পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও’।[1]
হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه
وسلم يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِى بِى، وَأَنَا
مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِى، فَإِنْ ذَكَرَنِى فِى نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِى
نَفْسِى، وَإِنْ ذَكَرَنِى فِى مَلأٍ ذَكَرْتُهُ فِى مَلأٍ خَيْرٍ مِنْهُمْ
، وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَىَّ بِشِبْرٍ تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا ،
وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَىَّ ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ بَاعًا، وَإِنْ
أَتَانِى يَمْشِى أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً. আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ ঘোষণা করেন, আমি সে রকমই, যে
রকম বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি বান্দার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে
স্মরণ করে। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে; আমিও তাকে নিজে স্মরণ করি। আর
যদি সে জন-সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে
তাকে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে, তবে আমি তার দিকে এক
হাত এগিয়ে যাই, যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়; আমি তার দিকে দু’হাত
এগিয়ে যাই। আর সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই’।[2]
রাসূল
(ছাঃ) অন্যত্র বলেন, لاَ يَمُوتَنَّ أَحَدُكُمْ إِلاَّ وَهُوَ يُحْسِنُ
الظَّنَّ بِاللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ ‘তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর প্রতি ভাল
ধারণা ব্যতীত মৃত্যুবরণ না করে’।[3]
আল্লাহ তা‘আলার শত্রু লানতপ্রাপ্ত কাফেরের কুফরীর কারণে তার প্রতি কুধারনা রাখা আবশ্যক, যদিও সে কোন সৎ বা নেক কাজ সম্পাদন করে। কেননা যে ব্যক্তির উপর থেকে নিচ পর্যন্ত আল্লাহর নেয়ামতে পরিপূর্ণ থাকার পরও আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্ববাদকে অসী^কার করতে পারে সে কিভাবে আমাদের আস্থাভাজন কিংবা বন্ধু হতে পারে? মহান আল্লাহ রববুল আলামীন অন্তর ও তার গোপনীয়তা সম্পর্কে সত্যই বলেছেন।
মহান আল্লাহ আরো বলেন,كَيْفَ وَإِنْ يَظْهَرُوا عَلَيْكُمْ لَا يَرْقُبُوا فِيكُمْ إِلًّا وَلَا ذِمَّةً يُرْضُونَكُمْ بِأَفْوَاهِهِمْ وَتَأْبَى قُلُوبُهُمْ وَأَكْثَرُهُمْ فَاسِقُونَ ‘আল্লাহ ও তার রাসূলের নিকট মুশরিকদের চুক্তি কিভাবে বলবৎ থাকবে? তবে যাদের সাথে তোমরা মাসজিদুল হারামের নিকটে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছ, তারা ব্যতীত; অতএব যতক্ষণ তারা চুক্তিতে দৃঢ় থাকে, ততক্ষণ তোমরাও দৃঢ় থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাক্বীদের ভালবাসেন’ (তাওবা ৯/৭ )।
তিনি অন্যত্র বলেন,وَلِيَعْلَمَ الَّذِينَ نَافَقُوا وَقِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا قَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوِ ادْفَعُوا قَالُوا لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًا لَاتَّبَعْنَاكُمْ هُمْ لِلْكُفْرِ يَوْمَئِذٍ أَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلْإِيمَانِ يَقُولُونَ بِأَفْوَاهِهِمْ مَا لَيْسَ فِي قُلُوبِهِمْ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُونَ ‘আর যাতে তিনি জেনে নেন মুনাফিকদেরকে। আর তাদেরকে বলা হয়েছিল, এস, আল্লাহর পথে লড়াই কর অথবা প্রতিরোধ কর। তারা বলেছিল, যদি আমরা লড়াই জানতাম তবে অবশ্যই তোমাদেরকে অনুসরণ করতাম। সেদিন তারা কুফরীর বেশি কাছাকাছি ছিল তাদের ঈমানের তুলনায়। তারা তাদের মুখে বলে, যা তাদের অন্তরসমূহে নেই। আর তারা যা গোপন করে সে সম্পর্কে আল্লাহ অধিক অবগত’ (আলে-ইমরান ৩/১৬৭)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন, هَاأَنْتُمْ أُولَاءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِالْكِتَابِ كُلِّهِ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا عَضُّوا عَلَيْكُمُ الْأَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِ قُلْ مُوتُوا بِغَيْظِكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ ‘দেখ, তোমরা ওদের ভালোবাসো। কিন্তু ওরা তোমাদের ভালোবাসে না। অথচ তোমরা আল্লাহর সকল কিতাবে বিশ্বাস রাখো (কিন্তু ওরা কুরআনে বিশ্বাস করে না)। যখন ওরা তোমাদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আর যখন পৃথক হয়, তখন তোমাদের উপর ক্রোধে আঙ্গুল কামড়ায়। তুমি বল! তোমরা তোমাদের ক্রোধে জ্বলে-পুড়ে মরো। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের অন্তরের কথা সম্যক অবগত’ (আলে-ইমরান ৩/১১৯)।
[লেখক : ছানাবিয়্যাহ ২য় বর্ষ, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদা পাড়া, রাজশাহী ]
[1]. বুখারী হা/৫১৪৩; মিশকাত হা/৫০২৮।
[2]. বুখারী হা/৭৪০৫; মিশকাত হা/২২৬৪।
[3]. মুসলিম হা/২৮৭৭; মিশকাত হা/১৬০৫।