বিভাগীয় যুবসমাবেশ
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 8857 বার পঠিত
ধর্মীয় অনুশাসন ছাড়া ধর্ষণ-মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়
-মুহতারাম আমীরে জামা‘আত
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন, রমনা, ঢাকা ১৯শে জুলাই শুক্রবার : অদ্য সকাল ৯-টা হ’তে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনব্যাপী রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর বার্ষিক কর্মী সম্মেলনে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত কথা বলেন। তিনি বলেন, কোন আল্লাহ কোন জাতিকে পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদরকে নিজেরা পরিবর্তন করে। তিনি বলেন, পৃথিবীতে দু’দল মানুষ আছে। একদল মানুষের লক্ষ্য হ’ল দুনিয়া। তাদের পথপ্রদর্শক হ’লেন তারাই যারা দুনিয়াতে বড় হয়েছেন তথা নমরূদ, ফেরাউন, কারূণ, হামান প্রমুখ লোকেরা। আরেকদল মানুষের লক্ষ্য হ’ল আখেরাত। ক্ষণস্থায়ী জীবনের বিনিময়ে তারা চিরস্থায়ী জীবনকে সমৃদ্ধ ও শান্তিময় করতে চান। নবী-রাসূলগণ হ’লেন তাদের পথপ্রর্দশক। তিনি আরো বলেন, দু’টি কারণে আমরা আহলেহাদীছ আন্দোলন করি। ১. ক্বিয়ামতের দিন পথভ্রষ্টরা যেন বলতে না পারে যে, এরা আহলেহাদীছ আন্দোলন করত। অথচ আমাদের কখনো দাওয়াত দেয়নি। ২. দাওয়াত না দেওয়ার কারণে আল্লাহ যেন আমাদেরকে পাকড়াও না করেন।
তিনি বলেন, আহলেহাদীছ হওয়ার জন্য বিশেষত ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ বা ‘যুবসংঘে’র কর্মী হওয়ার জন্য প্রধান শর্ত হ’ল শিরকবিমুক্ত নির্ভেজাল তাওহীদে বিশ্বাস এবং বিদ‘আতমুক্ত নির্ভেজাল সুন্নাতের অনুসারী হওয়া।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে কিশোর অপরাধ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল, কিশোরদের বন্ধুরা শয়তানমুখী হওয়া। অতএব কেবল হুমকি-ধমকি ও শাসনের মাধ্যমে সামাজিক অনাচার, দুর্নীতি, সুদ-ঘুষ, খুন-ধর্ষণ ও মাদকের সয়লাব বন্ধ করা যাবে না। আইনের দ্রুত ও নিরপেক্ষ প্রয়োগের সাথে সাথে ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমেই কেবল এগুলি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র ছেলেরা কখনো চরমপন্থী নয় বা শৈথিল্যবাদী নয়। বরং তারা সর্বদা মধ্যপন্থী। সবশেষে তিনি বলেন, তোমরা আখেরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান নয়।
‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিবের সভাপতিত্বে আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা এবং ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও বেক্সিমকো গ্রুপ-এর ভাইস চেয়ারম্যান জনাব সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ দেশ থেকে শিরক ও বিদ‘আত উৎখাতে এবং মাদক ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে অবদান রেখে চলেছে। তিনি বলেন, ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ আমার খুব কাছের।
সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব বলেন, ‘যুবসংঘে’র প্রত্যেক কর্মীকে সর্বাগ্রে স্ব স্ব ক্ষেত্রে ‘আদর্শ’ হতে হবে। তিনি প্রত্যেককে স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে একনিষ্ঠ থাকার জন্য কর্মীদের প্রতি আহবান জানান। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ পেশ করেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুস্তাকীম আহমাদ।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য রাখেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন, শিক্ষা ও সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা দুররুল হুদা, যুববিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আমীনুল ইসলাম, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশীদ আখতার, দফতর সম্পাদক ও আত-তাহরীক অনলাইন টিভির পরিচালক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক জালালুদ্দীন, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ ওলামা ও ইমাম সমিতির সহ-সভাপতি মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী, ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়ার ভাইস প্রিন্সিপাল ড. নূরুল ইসলাম, ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম, ‘আল-‘আওন’-এর সভাপতি ডা. আব্দুল মতীন, ঢাকা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি আলহাজ্জ মুহাম্মাদ আহসান, ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামূন, ঢাকা-দক্ষিণ সাংগঠনিক যেলার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ, ঢাকা-উত্তর যেলার আহবায়ক আল-আমীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক ফেরদাঊস হোসাইন, রাজশাহী-পূর্ব যেলা ‘যুবসংঘে’র সভাপতি যিল্লুর রহমান, বরিশাল যেলা সভাপতি কায়েদ মাহমূদ ইমরান, কুমিল্লা যেলা সভাপতি আহমাদুল্লাহ, সাতক্ষীরা যেলা সভাপতি মুজাহিদুর রহমান ও বগুড়া যেলা সভাপতি আল-আমীন।
অনুষ্ঠানে অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত করেন ‘আল-‘আওন’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির ও ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করেন আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য মীযানুর রহমান (জয়পুরহাট), আব্দুল্লাহ আল-মারূফ (বগুড়া) ও কেরামত আলী (পাবনা)। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম (জয়পুরহাট)।
সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব সমূহ :
‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম সরকারের নিকট নিম্নোক্ত প্রস্তাব ও দাবী সমূহ পেশ করেন এবং উপস্থিত সকলে হাত তুলে সমস্বরে সেগুলির প্রতি জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেন।-
১. এ সম্মেলন পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে দেশের আইন, বিচার ও শাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে।
২. ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ব্যতীত সামাজিক অনাচার, দুর্নীতি, সূদ, ঘুষ, খুন, মাদক, ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। সেকারণ প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং সহ শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য এই সম্মেলন জোর আবেদন জানাচ্ছে।
৩. এই সম্মেলন স্কুল-মাদরাসার সিলেবাস প্রণয়ন কমিটিতে এবং ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর পরিচালনা কমিটিতে ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর মনোনীত প্রতিনিধি রাখার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানাচ্ছে।
৪. এই সম্মেলন জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকারের ভূমিকাকে স্বাগত জানাচ্ছে। সাথে সাথে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগঠন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ এবং তার অঙ্গ সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সমূহের দাওয়াতী ও সামাজিক কর্মসূচী সমূহ অবাধে পরিচালনার সুযোগ প্রদানের জোর দাবী জানাচ্ছে।
৫. এই সম্মেলন খুন ও ধর্ষণের ব্যাপারে স্বীকারোক্তিদানকারী অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করার আহবান জানাচ্ছে। সেই সাথে বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েদের ১৮ বছর বয়সের ইসলাম বিরোধী শর্ত এবং তালাকের ক্ষেত্রে ‘হিল্লা প্রথা’ বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে।
৬. এ সম্মেলন মাদক প্রতিরোধে সরকারের ভূমিকাকে স্বাগত জানাচ্ছে এবং উক্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সহযোগী হিসাবে দেশের একমাত্র মাদকমুক্ত রক্তদান সংগঠন ‘আল-আওন স্বেচ্ছাসেবী মাদকমুক্ত রক্তদান সংস্থা’কে সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা দানের আহবান জানাচ্ছে।
৭. এ সম্মেলন দেশের বিভিন্ন স্থানে আহলেহাদীছ মসজিদসমূহ ভাঙ্গা, জবরদখল করা এবং আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে মহলবিশেষের আক্রমণাত্মক অবস্থানের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপ দাবী করছে।
৮. এ সম্মেলন ইভটিজিংসহ নারী নির্যাতন প্রতিরোধের জন্য ছেলে ও মেয়েদের সহশিক্ষা বাতিল করা এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শালীন পোষাক ও পর্দাপ্রথা নিশ্চিত করার আহবান জানাচ্ছে। সেই সাথে নারীদের পর্দা পালনে বাধাসৃষ্টিকারীদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবী জানাচ্ছে।
৯. এই সম্মেলন বিনোদন ও সংস্কৃতির নামে টিভি-সিনেমা থেকে অশ্লীলতা ও বেলেল্লাপনা বন্ধ করার এবং ইন্টারনেট থেকে অশ্লীল কন্টেন্টসমূহ অপসারণ করার দাবী জানাচ্ছে। সেই সাথে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে এবং বিশুদ্ধ ইসলামের প্রচার ও প্রসারে পিস টিভি পুনরায় চালু করা এবং আত-তাহরীক অন-লাইন টিভিসহ অন্যান্য সুস্থ গণমাধ্যমকে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা দানের আহবান জানাচ্ছে।
১০. এই সম্মেলন রোহিঙ্গাদেরকে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে তাদেরকে সসম্মানে দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক ভূমিকাকে স্বাগত জানাচ্ছে। সেই সাথে ভারত, মিয়ানমার, চীন, সিরিয়া, ইয়েমেন, ফিলিস্তীনসহ বিশ্বব্যাপী মুসলিম নির্যাতন বন্ধের জন্য জাতিসংঘ এবং ওআইসি সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন যেলায় বন্যার বিভীষিকা শুরু হওয়া সত্ত্বেও দেশের প্রায় সকল যেলা থেকে প্রায় তিন হাযারের মত কর্মী ও সুধী উক্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। মূল অডিটোরিয়ামসহ পৃথকভাবে বাহিরে দুই হাযার বর্গফুটের একটি বৃহৎ প্যান্ডেল করা হয় এবং সেখানে প্রজেক্টরের ব্যবস্থা রাখা হয়। এছাড়া মিলনায়তনের বাইরে আল-‘আওন কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ব্লাড গ্রুপিং ও রক্তদাতা সদস্য সংগ্রহ ক্যাম্পিং অনুষ্ঠিত হয়। আল-‘আওনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা.আব্দুল মতীন-এর পরিচালনায় উক্ত ক্যাম্পিংয়ে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ জাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির, অর্থ সম্পাদক ফয়ছাল মাহমূদ, প্রশিক্ষণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামূন, দফতর সম্পাদক আব্দুল বাছীর প্রমুখ। এ সময় বিভিন্ন যেলা থেকে আগত আল-‘আওন-এর যেলা দায়িত্বশীলগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করেন। উক্ত ক্যাম্পিংয়ে ১২৬ জন রক্তদাতা সদস্য বা ‘ডোনার’ তালিকাভুক্ত করা হয়।
টিভি ও পত্রিকা সমূহের রিপোর্ট :
ঢাকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিতে সম্মেলনের রিপোর্ট সোয়া দু’মিনিট প্রচার করা হয়। এছাড়া কয়েকটি পত্রিকায় সচিত্র রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। যেমন : ১. প্রথম আলো ২০শে জুলাই, পৃ. ৪ কলাম ৩-৪। ছবিসহ শিরোনাম : ‘সর্বস্তরে ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি- আহলেহাদীছ যুবসংঘ। সহশিক্ষা বাতিল এবং কোরআন ও হাদিসের আলোকে শাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি’।
রিপোর্টে বলা হয়- সম্মেলনে ১০টি প্রস্তাব গৃহীত হয়। সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আসা প্রায় দুই হাজার কর্মী ও সংগঠক কন্ঠভোট ও হাত তুলে প্রস্তাবগুলোর প্রতি সমর্থন জানান। ...এক প্রস্তাবে মাদক ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সরকারের ভূমিকাকে স্বাগত জানানো হয়। একইসঙ্গে খুন ও ধর্ষণ প্রসঙ্গে স্বীকারোক্তি দানকারী অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করার আহবান জানানো হয়। প্রস্তাবে বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের ১৮ বছর বয়সের শর্ত এবং তালাকের ক্ষেত্রে হিল্লা প্রথা বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।
ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া সামাজিক অনাচার, দুর্নীতি, ঘুষ, খুন, মাদক ও ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব নয় উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয়, এই সম্মেলন ইভটিজিং সহ নারী নির্যাতন প্রতিরোধের জন্য ছেলে ও মেয়েদের সহশিক্ষা বাতিল করা এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শালীন পোষাক ও পর্দাপ্রথা নিশ্চিতের আহবান জানাচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমি আজকের প্রস্তাবগুলো দেখেছি। আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাতে চাই। কারণ আপনারা মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের মাদক প্রতিরোধ করতে হবে। সবাইকে ইসলামের সঠিক শিক্ষা দিতে পারলে মাদকের দিকে কেউ যাবেনা’। তিনি বলেন, আহলেহাদীছ আন্দোলনের ব্যাপারে অনেক অপপ্রচার করা হয়েছে। অধ্যাপক গালিবের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তারপর আমি প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়েছি। আহলেহাদীছ সম্বন্ধে যে অপপ্রচার, তা ঠিক নয়। যে ভুল বোঝাবুঝি, তা ঠিক করা দরকার এবং সেটা ঠিক হয়েছেও।
২. The Independent ২০শে জুলাই ২০১৯, পৃ. ৩ কলাম ২-৫। ছবিসহ শিরোনাম : Divisions in Muslims benefiting enemies: Salman F Rahman.
৩. যুগান্তর ২০শে জুলাই ২০১৯, পৃ. ২ কলাম ১-৪। শিরোনাম : ‘আহলে হাদিসের কর্মী সম্মেলন : ধর্মীয় অনুশাসন ছাড়া ধর্ষণ-মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
৪. ইনকিলাব ২০শে জুলাই ২০১৯, পৃ. ১১ কলাম ৪-৫।
শিরোনাম : শিরক, বিদ‘আত ও জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ গঠনে অবদান রাখব : সালমান এফ রহমান। ধর্মীয় অনুশাসন ছাড়া খুন, ধর্ষণ-মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় কর্মী সম্মেলনে প্রফেসর আসাদুল্লাহ আল-গালিব।
রিপোর্টে বলা হয়- দেশকে শির্ক, বিদ’আত ও জঙ্গিবাদ মুক্ত করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি আহলে হাদীস আন্দোলন ও আহলেহাদীস যুব সংঘের কর্মসূচির প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করে পাশে থাকার অঙ্গিকার করেছেন।
৫. বাংলাদেশ প্রতিদিন ২০শে জুলাই ২০১৯, পৃ. ৩ কলাম ৫। শিরোনাম - আলোচনা সভায় অভিমত ‘ধর্মীয় অনুশাসন ব্যতীত খুন-ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
রিপোর্টে বলা হয়- বাংলাদেশ আহলে হাদিস যুব সংঘের বার্ষিক সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ছাড়া সামাজিক অনাচার-দুর্নীতি, সুদ-ঘুষ, খুন-ধর্ষণ ও মাদক বন্ধ করা সম্ভব নয়।
কেন্দ্রীয় দাঈ প্রশিক্ষণ ২০১৯
নওদাপাড়া, রাজশাহী, ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ : অদ্য সকাল ৬টায় আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী মিলনায়তনে বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ-এর কেন্দ্রীয় দাঈ প্রশিক্ষণ ২০১৯ অনুষ্ঠিত হয়। ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিবের সভাপতিত্বে আয়োজিত উক্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। এতে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, দফতর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মাওলানা দূর্রুল হূদা, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়ার ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ও বাংলাদেশ আহলেহাদীছ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. নূরুল ইসলাম, যুবসংঘ-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুস্তাফিযুর রহমান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম, প্রচার সম্পাদক ইহসান ইলাহী যহীর প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন যুবসংঘ-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুস্তাকীম আহমাদ। এছাড়া বিভিন্ন অধিবেশন পরিচালনা করেন প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুখতারুল ইসলাম। প্রশিক্ষণের শেষ অধিবেশনে ‘বর্তমান দ্বন্দ্বমুখর সমাজে দাঈদের ভূমিকা’ শীর্ষক প্যানেল ডিসকাশন ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্যানেলিস্ট হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, সহকারী সম্পাদক ড. কাবীরুল ইসলাম এবং পিস টিভির আলোচক মাওলানা মুখলেছুর রহমান মাদানী। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন ‘যুবসংঘ’ কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব। উল্লেখ্য যে, ১৭ যেলা থেকে মোট ৪৫ জন বাছাইকৃত ইমাম, খত্বীব ও দাঈগণ উক্ত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীদেরকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
যেলা সংবাদ
সারিয়াকান্দি, বগুড়া ২৯শে জুলাই সোমবার : অদ্য দুপুর ১-টায় ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে বগুড়া যেলার সারিয়াকান্দি উপযেলার যমুনা নদীর বন্যাউপদ্রুত চর দিঘাপাড়া ও বেনীপুর, চর করমজাপাড়া ও চর নয়াপাড়ার ২১০টি বন্যা দুর্গত পরিবারকে ত্রাণ সাহায্য হিসাবে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। উক্ত ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, অর্থ সম্পাদক আব্দুল্লাহিল কাফী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামূন, মাওলানা মুখলেছুর রহমান মাদানী, যেলা ‘যুবসংঘে’র সভাপতি আল-আমীন এবং অন্যান্য কর্মীগণ। এ সময় তঁারা বানভাসি মানুষের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত নছীহত করেন এবং তাদেরকে ছালাত ও তওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনার উপদেশ দেন।
গাইবান্ধা ৩০শে জুলাই মঙ্গলবার : অদ্য সকাল সাড়ে ৯-টায় ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপযেলাধীন মহিমাগঞ্জ এলাকার ধুন্দিয়া ও বালুয়া চরপাড়া, সাঘাটা উপযেলার পাচিয়ারপুর ও ডাকবাংলা এবং ফুলছড়ি উপযেলার চর ঝানঝাইর গ্রামের মোট ৪০৫টি বন্যা দুর্গত পরিবারকে ত্রাণ সাহায্য হিসাবে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। অবশিষ্ট কিছু ত্রাণ পরদিন গাইবান্ধা সদরে খামারবোয়ালী আহলেহাদীছ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে ৬০টি পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়। উক্ত ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, অর্থ সম্পাদক আব্দুল্লাহিল কাফী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামূন, মাওলানা মুখলেছুর রহমান মাদানী, গাইবান্ধা-পূর্ব যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি মশিউর রহমান, গাইবান্ধা-পশ্চিম যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মামূন ও অন্যান্য কর্মীগণ। ত্রাণ বিতরণকালে অনেকের গলার তাবীয, হাতের বিশেষ আংটি ইত্যাদি খুলে নেওয়া হয় এবং সকলকে যাবতীয় শিরক ও বিদ‘আত থেকে দূরে থাকার উপদেশ প্রদান করা হয়।
উক্ত গ্রামগুলো বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও আজো সেখানে কোন সরকারী সাহায্য পৌঁছেনি। কেবল গোবিন্দগঞ্জ উপযেলাধীন মহিমাগঞ্জ এলাকার ধুন্দিয়া গ্রামে স্থানীয় চেয়ারম্যান পরিবার পিছু মাত্র হাফ কেজি চিড়া ও ২৫০ গ্রাম চিনি ত্রাণ দিয়েছেন। এতে গ্রামবাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। উল্লেখ্য, গাইবান্ধা যেলাধীন ফুলছড়ি উপযেলার ঝানঝাইর গ্রামে নবপ্রতিষ্ঠিত আত-তাওহীদ সালাফিইয়াহ মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব ও তঁার সফরসঙ্গীদের আতিথেয়তা প্রদান করেন। এসময় তিনি মাদরাসার পরিচালক জনাব শফীকুল ইসলামের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন। মাদরাসাটি ২০১৫ সালে জনাব শফীকুল ইসলামের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় যমুনা নদীর এই প্রত্যন্ত চরে প্রায় ৫ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে সেখানে ঝানঝাইর চর এবং অন্যান্য এলাকার প্রায় ২৫০ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে। চরাঞ্চলে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলো ছড়ানোর ক্ষেত্রে মাদরাসাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
কাযীপুর, সিরাজগঞ্জ ৩১শে জুলাই বুধবার : অদ্য দুপুর ১২-টায় ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে সিরাজগঞ্জ যেলার কাযীপুর উপযেলার যমুনা নদীর বন্যাউপদ্রুত দক্ষিণ সিংড়াবাড়ী ও চর দুবলাইয়ের বন্যা দুর্গত ৬৯টি পরিবারকে ত্রাণ সাহায্য হিসাবে চাউল-ডাউল, চিনি-লবণ ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। উক্ত ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক শামীম আহমাদ, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর শিক্ষক শামসুল আলম, যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ মুর্তাযা, ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল বিন আকবর, যেলা ‘যুবসংঘে’র সাধারণ সম্পাদক জামালুদ্দীন ও অন্যান্য কর্মীগণ। এ সময় তঁারা বানভাসি মানুষের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত নছীহত করেন এবং তাদেরকে বিপদে ধৈর্যধারণ ও তওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনার উপদেশ দেন।