ইসলামের দৃষ্টিতে ভালবাসা
তামান্না-ই জান্নাত
ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম 11163 বার পঠিত
ভূমিকা :
আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে তাকে দু’টি পথ প্রদর্শন করেছেন (দাহর ৭৬/৩)। একটি জান্নাতের পথ, অপরটি জাহান্নামের। মানুষ আল্লাহর বিধান মেনে দুনিয়াতে চললে সে জান্নাতে যেতে পারবে। পক্ষান্তরে আল্লাহর বিধান মুতাবিক না চললে তাকে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হ’তে হবে। আর আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্যই যে, কে অধিক সৎ আমলকারী (মুলক ৬৭/২)। তাই আমলে ছালেহের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের চেষ্টা করা মুমিনের সতত সাধনা। কিন্তু ছালাত, ছিয়াম, দান-ছাদাক্বা প্রভৃতি সৎ আমল করার পরেও মানুষ এমন কিছু কাজ করে থাকে, যা তাকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। এই আমলগুলি সম্পর্কে জেনে তা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অত্যাবশ্যক। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হ’ল।-
জান্নাত থেকে মাহরূম হওয়ার কারণগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (ক) স্থায়ীভাবে মাহরূম হওয়া বা চিরস্থায়ী জাহান্নামী (খ) অস্থায়ীভাবে মাহরূম হওয়া অর্থাৎ প্রথমে কৃত পাপের কারণে জাহান্নামী হওয়া এবং পরবর্তীতে ঈমান ও অন্যান্য সৎ আমলের কারণে জান্নাতে যাওয়া।
(ক) স্থায়ীভাবে মাহরূম হওয়া :
১. শিরক করা : আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করলে জান্নাত হারাম হয়ে যায় এবং জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন,إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَار- ‘বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করে, আল্লাহ অবশ্যই তার উপরে জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই’ (মায়েদা ৫/৭২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা গেল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করে মারা গেল সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।[1]
২. কুফরী করা : আল্লাহর সাথে কুফরী করার পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম। আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاللهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيْدُوْنَ أَنْ يُفَرِّقُوْا بَيْنَ اللهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُوْلُوْنَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيْدُوْنَ أَنْ يَتَّخِذُوْا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيْلًا، أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُهِيْنًا، وَالَّذِيْنَ آمَنُوا بِاللهِ وَرُسُلِهِ وَلَمْ يُفَرِّقُوْا بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ أُولَئِكَ سَوْفَ يُؤْتِيْهِمْ أُجُوْرَهُمْ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَحِيْمًا- ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি অবিশ্বাস করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে (বিশ্বাসের ক্ষেত্রে) পার্থক্য করতে চায় এবং বলে যে, আমরা কতক নবীকে বিশ্বাস করি ও কতক নবীকে অবিশ্বাস করি, আর এভাবে তারা মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়। ওরাই হ’ল প্রকৃত কাফের। আর আমরা কাফেরদের জন্য অপমানজনক শাস্তি প্রস্ত্তত করে রেখেছি’ (নিসা ৪/১৫০-৫১)। তিনি আরো বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَظَلَمُوْا لَمْ يَكُنِ اللهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلاَ لِيَهْدِيَهُمْ طَرِيْقًا، إِلاَّ طَرِيْقَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَا أَبَدًا وَكَانَ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرًا ‘নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর রাস্তায় বাধা সৃষ্টি করেছে, তারা দূরতম ভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে। নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে এবং (শেষনবীর আগমনবার্তা গোপন করে) যুলুম করেছে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন না। জাহান্নামের পথ ব্যতীত। সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। আর এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ’ (নিসা ৪/১৬৭-৬৯)।
৩. মুনাফিকী : বাহ্যিকভাবে ঈমানের প্রকাশ করা এবং অন্তরে কুফর পোষণ করার নাম নিফাক বা মুনাফিকী। যার মধ্যে নিফাক পাওয়া যায় তাকে মুনাফিক বলা হয়। মুনাফিকের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। আল্লাহ বলেন,بَشِّرِ الْمُنَافِقِيْنَ بِأَنَّ لَهُمْ عَذَابًا أَلِيْمًا- ‘ঐসব মুনাফিকদের সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি নির্ধারিত আছে’ (নিসা ৪/১৩৮)। তিনি আরো বলেন,إِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا- ‘আল্লাহ মুনাফিক ও কাফেরদের জাহান্নামে একত্রিত করবেন’ (নিসা ৪/১৪০)। অন্যত্র তিনি বলেন,إِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيْرًا- ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে। আর তুমি কখনো তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না’ (নিসা ৪/১৪৫)।
৪. মুরতাদ হওয়া : কেউ ইসলাম থেকে কুফরীতে ফিরে গেলে তাকে মুরতাদ বলে। এর পরিণাম জাহান্নাম। আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولَئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ ‘আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বধর্ম ত্যাগ করবে, অতঃপর কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সকল কর্ম নিষ্ফল হবে। তারা জাহান্নামের অধিবাসী হবে এবং সেখানেই চিরকাল থাকবে’ (বাক্বারাহ ২/২১৭)।
খ. অস্থায়ী বা সাময়িকভাবে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়া :
ঈমান থাকা সত্ত্বেও মানুষের কিছু কর্মকান্ডের জন্য জাহান্নামে যেতে হবে। কিন্তু ঈমানের কারণে সে এক সময় জান্নাত লাভ করবে। ঐসব আমলগুলির মধ্যে কতিপয় উল্লেখ করা হ’ল।-
১. আত্মহত্যা করা :
আত্মহত্যা করা কবীরা গোনাহ। যার পরিণতি জাহান্নাম। আত্মহত্যাকারীকে জাহান্নামে ঐ শাস্তি দেওয়া হবে, যেভাবে সে ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছে। জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,كَانَ بِرَجُلٍ جِرَاحٌ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَقَالَ اللهُ بَدَرَنِىْ عَبْدِىْ بِنَفْسِهِ حَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ. ‘(তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে) এক ব্যক্তি আঘাতের ব্যথ্যা দুঃসহ বোধ করায় আত্মহত্যা করে। আল্লাহ তার সম্পর্কে বলেন, আমার বান্দা আমার নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করলাম’।[2]
তিনি আরো বলেন,مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيْدَةٍ عُذِّبَ بِهِ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ- ‘যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করবে। জাহান্নামে তাকে তা দ্বারা শাস্তি দেওয়া হবে’।[3] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,الَّذِيْ يَخْنُقُ نَفْسَهُ يَخْنُقُهَا فِي النَّارِ وَالَّذِيْ يَطْعُنُهَا يَطْعُنُهَا فِي النَّارِ- ‘যে ব্যক্তি শ্বাসরুদ্ধ করে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামে সর্বক্ষণ এভাবে আত্মহত্যা করবে। আর যে ব্যক্তি অস্ত্রের আঘাতে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামে সর্বক্ষণ এভাবে আত্মহত্যা করবে’।[4] রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,
مَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ يَتَرَدَّى فِيْهِ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا، وَمَنْ تَحَسَّى سُمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَسُمُّهُ فِيْ يَدِهِ يَتَحَسَّاهُ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا، وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيْدَةٍ فَحَدِيْدَتُهُ فِيْ يَدِهِ يَجَأُ بِهَا فِيْ بَطْنِهِ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا-
‘যে ব্যক্তি পাহাড় হ’তে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে লাফিয়ে পড়ে সর্বক্ষণ আত্মহত্যা করতে থাকবে এবং সেটাই হবে তার চিরন্তন বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সর্বক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে এবং জাহান্নাম হবে তার চিরস্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করবে, তার হাতে সেই লৌহাস্ত্রই থাকবে এবং জাহান্নামে সর্বক্ষণ নিজের পেটে সেটি ঢুকাতে থাকবে, জাহান্নাম হবে তার চিরস্থায়ী বাসস্থান’।[5]
উল্লেখ্য, হাদীছে উদ্ধৃত চিরস্থায়ী জাহান্নামী বলে কাফের-মুশরিকের মত চিরস্থায়ী বুঝানো হয়নি। বরং এটা দ্বারা তুলনা বুঝানো হয়েছে। কারণ কোন মানুষ আল্লাহর সাথে শিরক না করে মৃত্যুবরণ করলে তার বিষয়টি আল্লাহর আয়ত্তে হয়ে যায়। আল্লাহ তাকে শাস্তি দিলেও সেটা চিরস্থায়ী শাস্তি হবে না।[6]
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِشَىْءٍ فِى الدُّنْيَا عُذِّبَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ‘যে ব্যক্তি যে বস্তু দ্বারা পৃথিবীতে আত্মহত্যা করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে তা দ্বারা শাস্তি দেওয়া হবে’।[7]
২. মুমিনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা :
মানুষ হত্যা করা কবীরা গোনাহ বা মহাপাপ। আর মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করা আরো বড় পাপ। আল্লাহর নিকটে দুনিয়া ধ্বংস হওয়া অপেক্ষা মুমিন ব্যক্তি নিহত হওয়া কঠিনতর। মুমিনকে হত্যা করার পরিণতি জাহান্নাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لَوْ أَنَّ أَهْلَ السَّمَاءِ وَأَهْلَ الأَرْضِ اشْتَرَكُوْا فِىْ دَمِ مُؤْمِنٍ لأَكَبَّهُمُ اللهُ فِى النَّارِ. ‘আসমান ও যমীনবাসী যদি কোন মুমিনকে হত্যায় শরীক হয় তাহ’লে আল্লাহ অবশ্যই তাদের সকলকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’।[8]
৩. যিম্মীকে হত্যা করা :
ইসলামী রাষ্ট্রে যে সকল অমুসলিম নাগরিক জিযিয়া বা ট্যাক্স প্রদান করে বসবাস করে তাদেরকে যিম্মী বলা হয়। তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেশের সরকারের। বিনা কারণে তাদেরকে হত্যা করা পাপ। এ পাপের কারণে জান্নাত থেকে মাহরূম হ’তে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ قَتَلَ مُعَاهَدًا لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ، وَإِنَّ رِيْحَهَا تُوْجَدُ مِنْ مَسِيْرَةِ أَرْبَعِيْنَ عَامًا. ‘যে ব্যক্তি যিম্মীকে হত্যা করবে সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না, যদিও জান্নাতের সুগন্ধি ৪০ বছরের পথের দূরত্ব হ’তে পাওয়া যায়’।[9]
৪. হারাম খাদ্য খাওয়া :
ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত হ’ল হালাল খাদ্য ভক্ষণ করা। হারাম খাদ্য খেয়ে ইবাদত করলে তা যেমন কবুল হয় না, তেমনি হারাম খাদ্য দ্বারা পরিপুষ্ট দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بِالْحَرَامِ. ‘হারাম খাদ্য দ্বারা পরিপুষ্ট শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[10]
অন্যত্র তিনি বলেন,لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ لَحْمٌ نبَتَ منَ السُّحْتِ وكلُّ لَحْمٍ نبَتَ مِنَ السُّحْتِ كَانَتِ النَّارُ أَوْلَى بِهِ. ‘যে দেহের গোশত হারাম দ্বারা গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। শরীরের যতটুকু গোশত হারাম দ্বারা গঠিত তা জাহান্নামের জন্যই সর্বাধিক উপযুক্ত’।[11]
৫. সূদ খাওয়া :
ইসলামে সূদ লেন-দেন করা হারাম। এতে ভোক্তা হয় শোষণ ও যুলুমের শিকার। আর দাতা হয় আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ। অর্থনৈতিক শোষণের এ হাতিয়ার বন্ধের জন্য ইসলাম সূদকে হারাম করেছে। তদুপরি যারা সূদ লেন-দেন করে তাদের জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
وَأَمَّا الرَّجُلُ الَّذِىْ أَتَيْتَ عَلَيْهِ يَسْبَحُ فِى النَّهَرِ وَيُلْقَمُ الْحَجَرَ، فَإِنَّهُ آكِلُ الرِّبَا-
‘আর ঐ ব্যক্তি, যার কাছে পৌঁছে দেখেছিলেন যে, সে নদীতে সাঁতার কাটছে ও তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে সে হ’ল সূদখোর’।[12]
৬. মাদক ও নেশাদ্রব্য সেবন করা :
মাদকতা সকল পাপের মূল।[13] এর কারণে মানুষের ৪০ দিনের ছালাত কবুল হয় না।[14] আর এর জন্য পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ عَلَى اللهِ عَهْدًا لِمَنْ شَرِبَ الْمُسْكِرَ أَنْ يَسْقِيَهُ اللهُ فِيْ طِيْنَةِ الْخَبَالِ، قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا طِينَةُ الْخَبَالِ، قَالَ عَرَقُ أَهْلِ النَّارِ أَوْ عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ-
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা রয়েছে- নেশাদার দ্রব্য পানকারীদের আল্লাহ ‘ত্বীনাতে খাবাল’ পান করাবেন। জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল! ‘ত্বীনাতে খাবাল’ কি জিনিস? রাসূল (ছাঃ) বললেন, জাহান্নামীদের শরীর হ’তে নির্গত রক্তপুজ মিশ্রিত অত্যন্ত গরম তরল পদার্থ’।[15]
তিনি আরো বলেন, لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ خَمْرٍ. ‘সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[16]
৭. অবৈধভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ করা :
সম্পদের মূল মালিক মহান আল্লাহ। মানুষ পার্থিব জীবনে এগুলো ভোগ করার সুযোগ লাভ করে মাত্র। আবার এ সম্পদ মানুষকে দুনিয়াতেই রেখে যেতে হবে, কবরে নিয়ে যেতে পারবে না। অথচ মানুষ ইহকালের এ সাময়িক সময়ের জন্য অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করে; যা বড় গোনাহ। এই গোনাহের কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জাহান্নামে যেতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ رِجَالاً يَتَخَوَّضُوْنَ فِيْ مَالِ اللهِ بِغَيْرِ حَقٍّ فَلَهُمُ النَّارُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. ‘নিশ্চয়ই কিছু লোক আল্লাহর সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে। ক্বিয়ামতের দিন তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম’।[17]
৮. আত্মসাৎ করা :
আত্মসাৎ করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ كَانَ عَلَى ثَقَلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ كَرْكَرَةُ فَمَاتَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ فِي النَّارِ، فَذَهَبُوْا يَنْظُرُوْنَ إِلَيْهِ فَوَجَدُوْا عَبَاءَةً قَدْ غَلَّهَا.
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর গনীমতের মালের দায়িত্বশীল ছিল, যাকে কারকারা বলা হত। সে মারা গেলে রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘সে জাহান্নামী’। ছাহাবীগণ তার নিকট গিয়ে তার প্রতি লক্ষ্য করলেন, তারা একটি চাদর পেলেন, যা সে আত্মসাৎ করেছিল।[18] অপর একটি হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ حَدَّثَنِيْ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمُ خَيْبَرَ أَقْبَلَ نَفَرٌ مِّنْ صَحَابَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوْا فُلاَنٌ شَهِيْدٌ فُلاَنٌ شَهِيْدٌ حَتَّى مَرُّوْا عَلَى رَجُلٍ فَقَالُوْا فُلاَنٌ شَهِيْدٌ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَلاَّ إِنِّيْ رَأَيْتُهُ فِي النَّارِ فِيْ بُرْدَةٍ غَلَّهَا-
ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ওমর (রাঃ) আমাকে বললেন, ‘খায়বারের যুদ্ধের দিন ছাহাবীগণের একটি দল বাড়ী ফিরে আসছিলেন। ঐ সময় ছাহাবীগণ বললেন, অমুক অমুক শহীদ, শেষ পর্যন্ত এমন এক ব্যক্তিকে ছাহাবীগণ শহীদ বললেন, যার ব্যাপারে রাসূল বললেন, কখনো নয়, আমি তাকে জাহান্নামে দেখছি, একটি চাদরের কারণে যা সে আত্মসাৎ করেছিল’।[19] আরেকটি হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ أَهْدَى رَجُلٌ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غُلاَمًا يُقَالُ لَهُ مِدْعَمٌ فَبَيْنَمَا مِدْعَمٌ يَحُطُّ رَحْلاً لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ أَصَابَهُ سَهْمٌ عَائِرٌ فَقَتَلَهُ فَقَالَ النَّاسُ هَنِيْئًا لَهُ الْجَنَّةُ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَلاَّ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ إِنَّ الشَّمْلَةَ الَّتِيْ أَخَذَهَا يَوْمَ خَيْبَرَ مِنَ الْمَغَانِمِ لَمْ تُصِبْهَا الْمَقَاسِمُ لَتَشْتَعِلُ عَلَيْهِ نَارًا، فَلَمَّا سَمِعَ ذَلِكَ النَّاسُ جَاءَ رَجُلٌ بِشِرَاكٍ أَوْ شِرَاكَيْنِ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ شِرَاكٌ مِنْ نَارٍ أَوْ شِرَاكَانِ مِنْ نَارٍ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মিদ‘আম নামে একটি গোলাম রাসূল (ছাঃ)-কে হাদিয়া দিয়েছিল। মিদ‘আম এক সময় রাসূল (ছাঃ)-এর উটের পিঠের হাওদা নামাচ্ছিল এমতাবস্থায় একটি অতর্কিত তীর এসে তার গায়ে লাগে এবং সে মারা যায়। ছাহাবীগণ বলেন, তার জন্য জান্নাত। রাসূল (ছাঃ) বললেন, কখনও নয়। ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই যে চাদরটি সে খায়বারের গনীমত বণ্টন করার পূর্বে আত্মসাৎ করেছিল, সে চাদরটি জাহান্নামের আগুন তার উপর উত্তেজিত করছে। এ কথা শুনে একজন লোক একটি জুতার ফিতা বা দু’টি জুতার ফিতা রাসূলের নিকট নিয়ে আসল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, একটি বা দু’টি জুতার ফিতা আত্মসাৎ করলেও জাহান্নামে যাবে’।[20]
৯. খিয়ানত করা :
খিয়ানত মুনাফিকের অন্যতম একটি আলামত। খিয়ানতের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। মহান আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوْا لاَ تَخُونُوا اللهَ وَالرَّسُوْلَ وَتَخُوْنُوْا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা জেনেশুনে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের সাথে খিয়ানাত কর না এবং নিজেদের আমানতের খিয়ানত কর না’ (আনফাল ৮/২৭)। অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেন,وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَنْ يَّغُلَّ وَمَنْ يَّغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُوْنَ- ‘নবীর জন্য শোভনীয় নয় যে, তিনি খিয়ানত করবেন। আর যে লোক খিয়ানত করবে সে ক্বিয়ামতের দিন সেই খিয়ানতকৃত বস্তু নিয়ে উপস্থিত হবে। অতঃপর প্রত্যেকেই পরিপূর্ণভাবে পাবে যা সে অর্জন করেছে। আর তাদের প্রতি কোন অন্যায় করা হবে না’ (আলে ইমরান ৩/১৬১)।
হাদীছে এসেছে, আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে প্রায় খুৎবাতে বলতেন, لاَ إِيْمَانَ لِمَنْ لاَ أَمَانَةَ لَهُ وَلاَ دِيْنَ لِمَنْ لاَ عَهْدَ لَهُ ‘যার আমানাত নেই তার ঈমান নেই। যার অঙ্গীকার নেই তার দিন নেই’।[21]
অন্যত্র তিনি বলেন,
أَدِّ الْأَمَانَةَ إِلَى مَنْ ائْتَمَنَكَ وَلاَ تَخُنْ مَنْ خَانَكَ.
‘যে ব্যক্তি তোমার কাছে আমানত রেখেছে তাকে সময় মত আমানত বুঝিয়ে দাও। আর যে তোমার খিয়ানত করে তার খিয়ানত করো না’।[22]
১০. ঋণ পরিশোধ না করা :
ঋণ রেখে মারা গেলে এবং তা মৃতের পক্ষ থেকে কেউ পরিশোধ না করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
سُبْحَانَ اللهِ مَاذَا نُزِّلَ مِنَ التَّشْدِيْدِ، فَسَكَتْنَا وَفَزِعْنَا فَلَمَّا كَانَ مِنَ الْغَدِ سَأَلْتُهُ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا هَذَا التَّشْدِيْدُ الَّذِى نُزِّلَ فَقَالَ، وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ رَجُلاً قُتِلَ فِى سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ أُحْيِىَ ثُمَّ قُتِلَ ثُمَّ أُحْيِىَ ثُمَّ قُتِلَ وَعَلَيْهِ دَيْنٌ مَا دَخَلَ الْجَنَّةَ حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ دَيْنُهُ-
‘সুবহানাল্লাহ! ঋণ প্রসঙ্গে কী কঠোর বাণীইনা আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন! যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ! ঋণগ্রস্ত অবস্থায় কেউ যদি আল্লাহর পথে শহীদ হয়, তারপর জীবিত হয়, তারপর শহীদ হয়, তারপর জীবিত হয়, তারপর আবার শহীদ হয় তবুও ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।[23]
১১. মুসলমানের হক বিনষ্ট করা :
কোন মুসলমানের হক নষ্ট করা বড় গোনাহ। এটা বান্দার হক। বান্দা ক্ষমা না করলে আল্লাহ এ গোনাহ ক্ষমা করবেন না। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
مَنِ اقْتَطَعَ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِيَمِيْنِهِ فَقَدْ أَوْجَبَ اللهُ لَهُ النَّارَ وَحَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ، فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ وَإِنْ كَانَ شَيْئًا يَسِيْرًا يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ وَإِنْ كَانَ قَضِيْبًا مِّنْ أَرَاكٍ-
‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কসমের মাধ্যমে অন্য মুসলমানকে তার হক থেকে বঞ্চিত করে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করেছেন এবং জান্নাত হারাম করেছেন। একজন ছাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! অল্প বস্তুর জন্য হ’লেও? অর্থাৎ খুব কম হ’লেও? রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘আরাক গাছের একখানা ডাল হ’লেও (এ শাস্তি দেয়া হবে)’।[24]
১২. ব্যভিচার করা :
যেনা-ব্যভিচার পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা, অপমান ও অসম্মানের কারণ, তেমনি পরকালীন জীবনে একাজ জাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيْهِمْ قَالَ أَبُوْ مُعَاوِيَةَ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكٌ كَذَّابٌ وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ.
‘তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না। তাদের তিনি পবিত্রও করবেন না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হচ্ছে- (১) বৃদ্ধ যেনাকার (২) মিথ্যাবাদী শাসক এবং (৩) অহঙ্কারী দরিদ্র ব্যক্তি’।[25]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অবশেষে একটি গর্তের নিকট এসে পৌঁছলাম, যা তন্দুরের মত ছিল। তার উপর অংশ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশটি ছিল প্রশস্ত। তার তলদেশে আগুন প্রজ্বলিত ছিল। আগুনের লেলিহান শিখা যখন উপরের দিকে উঠত, তখন তার ভিতরে যারা রয়েছে তারাও উপরে উঠে আসত এবং উক্ত গর্ত হতে বাইরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হত। আর যখন অগ্নিশিখা কিছুটা শিথিল হত, তখন তারাও পুনরায় ভিতরের দিকে চলে যেত। তার মধ্যে রয়েছে কতিপয় উলঙ্গ নারী ও পুরুষ’।... আর (আগুনের) তন্দুরে যাদেরকে দেখেছেন, তারা হল যেনাকারী (নারী-পুরুষ)।[26]
১৩. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপরে মিথ্যারোপ করা :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপরে মিথ্যারোপ করা জঘন্য পাপ। এর পরিণতি জাহান্নাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,بَلِّغُوْا عَنِّيْ وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوْا عَنْ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ وَلاَ حَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ. ‘আমার একটি কথাও জানা থাকলে অন্যের নিকট পৌঁছে দাও। আর বনী ইসরাঈলের কাহিনীও প্রয়োজনে বর্ণনা কর, এতে কোন দোষ নেই। তবে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করবে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে করে নেয়’।[27] তিনি আরো বলেন, مَنْ يَّقُلْ عَلَىَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ. ‘যে ব্যক্তি আমার উপরে এমন কথা আরোপ করল, যা আমি বলিনি, সে যেন তার স্থান জাহান্নামে বানিয়ে নিল’।[28]
১৪. মিথ্যা বলা :
সততা ও সত্যবাদিতা মানব চরিত্রের এক অনুপম গুণ। যার পুরস্কার জান্নাত। পক্ষান্তরে মিথ্যাচার মানব চরিত্রের দুষ্টুক্ষত, যা পাপের কারণ। এর পরিণতি জাহান্নাম। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّهُ مَعَ الْبِرِّ وَهُمَا فِى الْجَنَّةِ، وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّهُ مَعَ الْفُجُوْرِ وَهُمَا فِى النَّارِ. ‘তোমরা সত্য গ্রহণ কর। সত্য নেকীর সাথে রয়েছে। আর উভয়টি জান্নাতে যাবে। আর মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। মিথ্যা পাপের সাথে রয়েছে। উভয়ই জাহান্নামে যাবে’।[29] অন্যত্র তিনি বলেন,
عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِيْ إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِيْ إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيْقًا وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِيْ إِلَى الْفُجُوْرِ وَإِنَّ الْفُجُوْرَ يَهْدِيْ إِلَى النَّارِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَّابًا-
‘তোমাদের জন্য আবশ্যক হ’ল সত্য কথা বলা। কেননা সততা নেকীর পথ দেখায় এবং নেকী জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে তাকে আল্লাহর খাতায় সত্যনিষ্ঠ বলে লিখে নেয়া হয়। তোমরা মিথ্যা বলা থেকে সাবধান থাক। কেননা মিথ্যা পাপের দিকে পথ দেখায় এবং পাপ জাহান্নামের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তাকে আল্লাহর খাতায় মিথ্যুক বলে লিখে নেয়া হয়’।[30]
১৫. অহংকার করা :
কোন মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। বরং সে অন্যের উপরে নির্ভরশীল। কখনো কোন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করলে, তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। এর জন্য অহংকার করা সমীচীন নয়। কারণ এ শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রতিপত্তি চিরস্থায়ী নয়। যে কোন সময় তা দূরীভূত হয়ে যেতে পারে। পক্ষান্তরে অহংকার গোনাহের কারণ। যার ফলে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হ’তে হয়। আল্লাহ বলেন,
فَأَمَّا الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَيُوَفِّيْهِمْ أُجُوْرَهُمْ وَيَزِيْدُهُمْ مِنْ فَضْلِهِ وَأَمَّا الَّذِيْنَ اسْتَنْكَفُوْا وَاسْتَكْبَرُوْا فَيُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا أَلِيْمًا وَلَا يَجِدُوْنَ لَهُمْ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلِيًّا وَلَا نَصِيْرًا-
‘অতএব যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করে, তাদেরকে তিনি পূর্ণরূপে পুরস্কার দান করবেন এবং স্বীয় অনুগ্রহে আরও বেশী দান করবেন। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর ইবাদতে সংকোচ বোধ করে ও অহংকার করে, তাদেরকে মর্মান্তিক শাস্তি প্রদান করবেন। আর তারা আল্লাহ ব্যতীত কাউকে বন্ধু ও সাহায্যকারী হিসাবে পাবে না’ (নিসা ৪/১৭৩)।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِىْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِّنْ كِبْرٍ. قَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُوْنَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً. قَالَ: إِنَّ اللهَ جَمِيْلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ.
‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তখন এক ব্যক্তি বলল, কেউ তো পসন্দ করে যে, তার পোশাক ভাল হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, (এটাও কি অহংকার)? তিনি বললেন, আল্লাহ নিজে সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকে পসন্দ করেন। অহংকার হ’ল, হককে দম্ভ ভরে পরিত্যাগ করা এবং মানুষকে হীন ও তুচ্ছ মনে করা’।[31]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,قَالَ اللهُ الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِىْ وَالْعَظَمَةُ إِزَارِىْ فَمَن نَازَعَنِىْ وَاحِداً مِنْهُمَا أَدْخَلْتُهُ جَهَنَّمَ. ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অহংকার আমার চাদর আর আত্মম্ভরীতা আমার লুঙ্গী। এই দু’টির কোন একটি কেউ আমার থেকে খুলে নিতে চাইলে আমি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব’।[32] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,
لاَ يَدْخُلُ النَّارَ أَحَدٌ فِيْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِّنْ إِيْمَانٍ وَلاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ أَحَدٌ فِيْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ مِنْ خَرْدَلٍ مِّنْ كِبْرِ-
‘যার অন্তরে সরিষা সমপরিমাণ ঈমান আছে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আর যার অন্তরে সরিষা সমপরিমাণ অহঙ্কার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[33]
১৬. পিতা-মাতার অবাধ্যতা :
পিতামাতা মানুষের দুনিয়াতে আগমনের মাধ্যম। শৈশবে তাদেরই অকৃত্রিম লালন-পালন, আন্তরিক সেবা-যত্ন ও অপত্য স্নেহ-মায়া-মমতা মাখা আদরে বড় হয়ে ওঠে সন্তান। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর সেই পিতামাতার অবাধ্য হওয়া তাদের প্রতি কৃতঘ্ন হওয়ার নামান্তর। এ অপরাধের কারণে পরকালে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হ’তে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,ثَلاَثَةٌ لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ وَالدَّيُّوْثُ وَرَّجْلَةُ النِّسَاءِ. ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না- (১) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (২) বাড়ীতে বেহায়াপনার সুযোগ প্রদানকারী ব্যক্তি (৩) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী’।[34] তিনি আরো বলেন,لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَاقٌّ وَلاَ قَمَّارٌ وَلاَ مَنَّانٌ وَلاَ مُدْمِنُ خَمْرٍ. ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়া ও লটারীতে অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদানকারী এবং সর্বদা মদপানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[35]
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,ثَلاَثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِمُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ الخَمْرِ وََالعَاقُّ وَالدَّيُوْتُ الَّذِيْ يُقِرُّ فِيْ أَهْلِهِ الْخَبَثَ. ‘তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত হারাম করেছেন। (১) সর্বদা মদপানকারী, (২) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান ও (৩) পরিবারে বেপর্দার সুযোগ দানকারী (দায়ূছ)’।[36]
১৭. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা :
মানুষের মাঝে বিভিন্ন কারণে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্ক রক্ষা করা হায়াত ও রিযিক বৃদ্ধি এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ার মাধ্যম। তাই আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা যরূরী। কেননা এ সম্পর্ক ছিন্ন করা জান্নাত থেকে মাহরূম হওয়ার কারণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ. ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[37]
১৮. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া :
প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া মুমিনের জন্য সমীচীন নয়। বরং প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করা মুমিনের কর্তব্য। আর তার সাথে ভাল ব্যবহার করলে জান্নাতে যাওয়া যায়। পক্ষান্তরে তার সাথে অসদাচরণ করা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ. ‘সেই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়’।[38] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ فُلَانَةَ تُذْكَرُ مِنْ كَثْرَةِ صَلَاتِهَا وَصِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا غَيْرَ أَنَّهَا تُؤْذِيْ جِيْرَانَهَا بِلِسَانِهَا، قَالَ هِيَ فِي النَّارِ، قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَإِنَّ فُلاَنَةَ تُذْكَرُ مِنْ قِلَّةِ صِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا وَصَلَاتِهَا وَإِنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَارِ مِنْ الْأَقِطِ وَلَا تُؤْذِيْ بِلِسَانِهَا جِيْرَانَهَا، قَالَ هِيَ فِي الْجَنَّةِ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অমুক মহিলা অধিক ছালাত পড়ে, ছিয়াম রাখে এবং দান-ছাদাক্বাহ করার ব্যাপারে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তবে সে নিজের মুখের দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয়। তিনি বললেন, সে জাহান্নামী। লোকটি আবার বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অমুক মহিলা যার সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে, সে কম ছিয়াম পালন করে, দান-ছাদাক্বাও কম করে এবং ছালাতও কম আদায় করে। তার দানের পরিমাণ হ’ল পনীরের টুকরা বিশেষ। কিন্তু সে নিজের মুখ দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয় না। তিনি বললেন, সে জান্নাতী’।[39] (ক্রমশঃ)
[1]. মুসলিম হা/৯৩; মিশকাত হা/৩৮।
[2]. বুখারী হা/১৩৬৫, ‘আত্মহত্যাকারী সম্পর্কে যা এসেছে’ অনুচ্ছেদ।
[3]. বুখারী হা/১৩৬৩।
[4]. বুখারী হা/১৩৬৫; মিশকাত হা/৩৪৫৪।
[5]. বুখারী হা/৫৭৭৮; মুসলিম হা/১০৯; মিশকাত হা/৩৪৫৩।
[6]. আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ, শরহু সুনানে আবী দাউদ ১৭/৪৪।
[7]. বুখারী হা/৬০৪৭; মিশকাত হা/৩৪১০।
[8]. তিরমিযী হা/১৩৯৮; মিশকাত হা/৩৪৬৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৫২৪৭।
[9]. বুখারী হা/৩১৬৬, হা/৬৯১৪ ‘দিয়াত’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৩৪৫২।
[10]. বায়হাক্বী, মিশকাত/২৭৮৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬০৯।
[11]. আহমাদ, দারেমী, মিশকাত হা/২৭৭২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬০৯।
[12]. বুখারী হা/৭০৪৭।
[13]. ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭১; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৩৩৪; মিশকাত হা/৫৮০।
[14]. ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/২৭৩৮, হাদীছ ছহীহ।
[15]. মুসলিম হা/২০০২; মিশকাত হা/৩৬৩৯।
[16]. ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭৬, হাদীছ ছহীহ।
[17]. বুখারী হা/৩১১৮; মিশকাত হা/৩৭৪৬।
[18]. বুখারী, ইবনু মাজাহ, হা/২৮৪১, মিশকাত হা/৩৯৯৮।
[19]. মুসলিম, মিশকাত হা/৪০৩৪।
[20]. বুখারী হা/৬২১৩, আবু দাউদ হা/২৭১৩; মিশকাত হা/৩৯৯৭।
[21]. বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৩৫ ‘ঈমান’ অধ্যায়, সনদ হাসান।
[22]. তিরমিযী, আবূদাঊদ, দারেমী, মিশকাত হা/২৯৩৪।
[23]. নাসাঈ হা/৪৬৮৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬০০।
[24]. মুসলিম হা/১৩৭; মিশকাত হা/৩৭৬০।
[25]. মুসলিম হা/১০৭; মিশকাত হা/৫১০৯।
[26]. বুখারী, হা/১৩৮৬; মিশকাত হা/৪৬২১।
[27]. বুখারী হা/৩৪৬১; তিরমিযী হা/২৬৬৯; মিশকাত হা/১৯৮ ‘ইলম’ অধ্যায়।
[28]. বুখারী হা/১০৯।
[29]. ইবন মাজাহ হা/৩৮৪৯; ইবনু হিববান হা/৫৭৩৪; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৮৬; আদাবুল মুফরাদ হা/৭২৪, সনদ ছহীহ।
[30]. বুখারী হা/৬০৯৪; মুসলিম ২৬০৭; মিশকাত হা/৪৮২৪।
[31]. মুসলিম হা/৯১; মিশকাত হা/৫১০৮।
[32]. আবুদাউদ হা/৪০৯০; মিশকাত হা/৫১১০; ছহীহাহ হা/৫৪১, সনদ ছহীহ।
[33]. মুসলিম হা/৯১; মিশকাত হা/৫১০৮।
[34]. নাসাঈ হা/২৫৬২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৭৩-৭৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/২০৭০।
[35]. দারেমী, মিশকাত হা/৩৬৫৩, ৪৯৩৩ ‘শাস্তি’ অধ্যায়; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৭০, ৬৭৩, সনদ হাসান।
[36]. নাসাঈ, মিশকাত হা/৩৬৫৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৩৬৬।
[37]. বুখারী হা/৫৯৮৪; মুসলিম হা/২৫৫৬, মিশকাত হা/৪৯২২।
[38]. মুসলিম হা/৪৬; মিশকাত হা/৪৯৬৩।
[39]. আহমাদ হা/৯৬৭৩; মিশকাত হা/৪৯৯২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯০।