আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব ও শত্রুতা
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
আল-কুরআনুল কারীম :
১ - وَلِلَّهِ
عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلاً وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ-
(১) ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার
সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্জ করা তার জন্য ফরয। আর কেউ প্রত্যাখ্যান করলে,
সে জেনে রাখুক,
নিশ্চয়ই আল্লাহ
বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন’ (আলে ইমরান ৩/৯৭)।
২- وَأَذِّن
فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوْكَ رِجَالاً وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِيْنَ
مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيْقٍ-
(২) ‘আর তুমি জনগণের
মধ্যে হজ্জের ঘোষণা প্রচার করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং
সকল প্রকার (পথশ্রান্ত) কৃশকায় উটের উপর সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত হ’তে’ (হজ্জ ২২/২৭)।
৩- إِنَّ
الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ
بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ-
(৩) ‘নিশ্চয়ই ছাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। অতএব যারা কা‘বা গৃহে হজ্জ বা ওমরাহ করে, তাদের জন্য এ দু’টি প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। আর কেউ যদি স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত কিছু নেকীর কাজ করে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ অশেষ গুণগ্রাহী ও মহাবিজ্ঞ’
(বাক্বারাহ ২/১৫৮)।
৪- وَأَتِمُّوا
الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ حَتَّى
يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ بِهِ أَذًى مِنْ رَأْسِهِ فَفِدْيَةٌ
مِنْ صِيَامٍ أَوْ
صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ فَإِذَا أَمِنْتُمْ فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ
الْهَدْيِ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ تِلْكَ عَشَرَةٌ
كَامِلَةٌ ذَلِكَ لِمَنْ لَمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَاتَّقُوا اللَّهَ
وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ-
হজ্জ
(৪) ‘আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও
ওমরাহ পূর্ণ কর। কিন্তু যদি তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হও, তাহ’লে যা সহজলভ্য হয়, তাই কুরবানী কর। আর তোমরা তোমাদের মাথা মু-ন করো না
যতক্ষণ না কুরবানীর পশু তার যবহের স্থানে পৌঁছে যায়। তবে তোমাদের মধ্যে যদি কেউ পীড়িত হয় বা তার মাথায় (যখম বা উকুনের কারণে) কোন কষ্ট থাকে (এবং সেজন্য মাথা মু-ন করে ফেলে), তাহ’লে তার ফিদ্ইয়া হিসাবে ছিয়াম পালন করবে অথবা খাদ্য ছাদাক্বা করবে অথবা কুরবানী করবে। অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হবে, তখন তোমাদের মধ্যে যে
ব্যক্তি ওমরাহর সাথে হজ্জ পালন করতে চাও, সে যা সহজলভ্য তাই কুরবানী করবে। তবে কেউ যদি কুরবানী না পায়, সে হজ্জের ‘দিনগুলির মধ্যে তিনটি এবং বাড়ীতে ফিরে সাতটি ছিয়াম পালন করবে। এভাবে দশটি (ছিয়াম) পূর্ণ হবে। এ নির্দেশ তাদের
জন্য, যাদের পরিবার-পরিজন মাসজিদুল হারামের আশ-পাশে (মীক্বাতের
অভ্যন্তরে) বসবাস করে না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ কঠিন
শাস্তিদাতা’ (বাক্বারাহ ২/১৯৬)।
৫- الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ
فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ
خَيْرٍ يَعْلَمْهُ
اللَّهُ وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى وَاتَّقُونِ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ-
(৫) ‘হজ্জের মাসগুলি নির্ধারিত। অতএব যে ব্যক্তি ঐ মাস সমূহে হজ্জ-এর
সংকল্প করবে (অর্থাৎ ইহরাম বাঁধবে), তার জন্য হজ্জের সময় স্ত্রী মিলন,
দুষ্কর্ম ও কলহ-বিবাদ
বিধেয় নয়। তোমরা যেসব সৎকর্ম কর, আল্লাহ তা অবগত আছেন, আর তোমরা পাথেয়
সাথে নাও। নিশ্চয়ই সর্বোত্তম পাথেয় হ’ল আল্লাহভীতি। অতএব হে জ্ঞানীগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর’ (বাক্বারাহ ২/১৯৭)।
৬- فَإِذَا أَفَضْتُمْ مِنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللَّهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ-
(৬) ‘আর যখন তোমরা
আরাফাত থেকে (মিনায়) ফিরবে, তখন (মুযদালিফায়) মাশ‘আরুল হারামে পৌঁছে
আল্লাহকে স্মরণ কর। আর তোমরা তাঁকে স্মরণ কর যেভাবে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন’
(বাক্বারাহ ২/১৯৮)।
৭- فَإِذَا
قَضَيْتُمْ مَنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَذِكْرِكُمْ آبَاءَكُمْ أَوْ
أَشَدَّ ذِكْرًا-
(৭) ‘অতঃপর যখন তোমরা
হজ্জের অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত করবে, তখন তোমরা আল্লাহকে এমনভাবে স্মরণ কর
যেভাবে তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাদের স্মরণ কর, বরং তার চাইতেও বেশী স্মরণ
কর’ (বাক্বারাহ ২/২০০)।
হাদীছে নববী :
৮- خَطَبَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
النَّاسَ فَقَالَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ فَرَضَ عَلَيْكُمْ الْحَجَّ فَحُجُّوا فَقَالَ رَجُلٌ فِي كُلِّ عَامٍ،
فَسَكَتَ عَنْهُ حَتَّى أَعَادَهُ ثَلاَثًا فَقَالَ لَوْ قُلْتُ نَعَمْ لَوَجَبَتْ وَلَوْ وَجَبَتْ مَا قُمْتُمْ بِهَا-
(৮) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের সামনে খুৎবা দিলেন। তিনি বললেন, ‘হে লোক সকল! তোমাদের উপর হজ্জ
ফরয করা হয়েছে। (সুতরাং তোমরা হজ্জ কর)। জনৈক ছাহাবী জিজ্ঞেস করল, প্রত্যেক বছর (ফরয)? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
চুপ থাকলেন। এমনকি লোকটি তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি যদি হ্যাঁ
বলতাম, তাহ’লে (তোমাদের উপর প্রত্যেক বছর হজ্জ পালন করা) ফরয হয়ে যেত। আর ফরয হয়ে গেলে তোমরা তা
পালনে সক্ষম হ’তে না’।[১]
৯- مَنْ
حَجَّ للهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمٍ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ -
(৯) আবু হুরায়রা (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লা-হু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করেছে। যার মধ্যে সে অশ্লীল কথা বলেনি
বা অশ্লীল কার্য করেনি, সে হজ্জ হ’তে ফিরবে সেদিনের ন্যায় (নিষ্পাপ অবস্থায়) যেদিন
তার মা তাকে প্রসব করেছিল’।[২]
.১- اَلْعُمْرَةُ
إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِّمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ
لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ-
(১০) আবু হুরায়রা (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন, ‘এক ওমরাহ অপর ওমরাহ পর্যন্ত সময়ের (ছগীরা গোনাহ সমূহের) কাফফারা স্বরূপ। আর কবুল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত
ব্যতীত কিছুই নয়’।[৩]
১১- أَنَّ
الإِسْلاَمَ يَهْدِمُ
مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ-
(১১) আমর ইবনুল আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
তাকে সম্বোধন করে বললেন, ‘ইসলাম, হিজরত এবং হজ্জ (মুমিনের) বিগত দিনের সকল গুনাহ ধ্বসিয়ে দেয়’।[৪]
১২- تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا
يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ
وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ-
(১২) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘তোমরা হজ্জ ও ওমরাহর মধ্যে পারম্পর্য বজায় রাখো (অর্থাৎ সাথে সাথে কর)। কেননা এ দু’টি মুমিনের দরিদ্রতা ও গোনাহ সমূহ দূর
করে দেয়, যেমন স্বর্ণকারের
আগুনের হাপর লোহা, স্বর্ণ ও রৌপ্যের ময়লা ছাফ করে দেয়’।[৫]
১৩- إِنَّ
عُمْرَةً فِىْ رَمَضَانَ تَعْدِلُ حَجَّةً، إنَّ عُمْرَةً فِىْ رَمَضَانَ تَقْضِىْ
حَجَّةً مَّعِىْ-
(১৩) হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই রামাযান
মাসের ওমরাহ একটি হজ্জের সমান।[৬] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘রামাযান মাসে ওমরা
করা আমার সাথে হজ্জ করার ন্যায়’।[৭]
১৪- قَالَتْ
قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ عَلَى النِّسَاءِ جِهَادٌ، قَالَ نَعَمْ عَلَيْهِنَّ جِهَادٌ لاَ قِتَالَ فِيْهِ الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ-
(১৪) হযরত আয়েশা (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহা) একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মহিলাদের উপরে ‘জিহাদ’ আছে কি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ আছে। তবে সেখানে যুদ্ধ নেই। সেটি হ’ল হজ্জ ও ওমরাহ’।[৮]
মনীষীদের বক্তব্য :
ইমাম গাযালী বলেন,
প্রত্যেক হজ্জ ও
ওমরাকারীর জন্য (হজ্জের যাবতীয় প্রস্তুতির পাশাপাশি) এমন
একজন সৎ বন্ধু তালাশ করা উচিত, যে কল্যাণকামী এবং নেকীর কাজে সাহায্যকারী। কারণ এরূপ বন্ধু আল্লাহর যিকিরে তাকে
সাহায্য করবে, ভীত হয়ে পড়লে উৎসাহ যোগাবে, দুর্বল হয়ে পড়লে সহযোগিতা করবে এবং ধৈর্য হারালে ছবরের উপদেশ দিবে (ইহইয়াউ উলূমুদ্দীন ১/২৪৭)।
ভারত গুরু শাহ অলীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী বলেন, হজ্জ একটি দীর্ঘ সফর এবং কষ্টকর কাজ। যা দৈহিক পরিশ্রম ছাড়া
সম্পন্ন হয় না। খালেছ নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ্জ
সম্পাদন করলে তা গোনাহসমূহের জন্য কাফফারা হয়ে যায় এবং ঈমান আনয়নের ন্যায়
পূর্ববর্তী সকল পাপ ধ্বংস করে দেয় (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ ১৫৮ পৃ.)।
সারবস্ত :
1. হজ্জ জান্নাতের মহাসফলতা অর্জন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির সোপান।
2. শরীর ও মন থেকে যাবতীয় পাপের বোঝা ঝেড়ে ফেলার অন্যমত মাধ্যম।
3. হজ্জ যাবতীয় তাগুতের বিরুদ্ধে আল্লাহর একত্ববাদের কালিমাকে সমুন্নীত করা।
4. হজ্জ মুমিন জীবনকে ত্যাগের শিক্ষায় উজ্জীবিত করে।
5. হজ্জের মাধ্যমে বান্দা শয়তানকে বশীভূত করে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।
[১]. মুসলিম হা/৩২৫৭; নাসাঈ হা/২৬৩১; মিশকাত হা/২৫০৫।
[২]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫০৭।
[৩]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫০৮।
[৪]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৮।
[৫]. তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/২৫২৪।
[৬]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫০৯।
[৭]. বুখারী হা/১৮৬৩।
[৮]. আহমাদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৫৩৪।