মুসলিম ভ্রাতৃত্বের স্বরূপ
ওমর ফারূক
আহলেহাদীছ একটি বৈশিষ্ট্যবাচক শব্দ, যা ব্যাপক অর্থে এমন একটি আন্দোলন এবং সাধারণ অর্থে এমন একজন ব্যক্তিকে বুঝায় যে আন্দোলন বা যে ব্যক্তি সর্বক্ষেত্রে ইসলামের মূলসূত্র তথা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকজ্জ্বল পথে জীবন পরিচালনার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। রাসূল (ছাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের পর মুসলিম বিশ্ব জুড়ে রাজনৈতিক বিশৃংখলার সাথে সাথে চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে যে বিভ্রাট ঘটে যায় এবং মুসলিম সমাজে ইসলামের বিধি-বিধানসমূহের মধ্যে সংযোজন-বিয়োজনের যে প্রবণতা সৃষ্টি হয় তা থেকে আত্মরক্ষা ও মানবসমাজকে পুনরায় নির্ভেজাল তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাহর দিকে ফিরে যাওয়ার জন্য ছাহাবায়ে কেরাম ও তাঁদের অনুসারী তাবেঈ, তাবে-তাবেঈগণ যে আন্দোলন শুরু করেন তা-ই ইতিহাসে আহলেহাদীছ আন্দোলন নামে খ্যাত। এ সময় যারা বিভিন্ন বাতিল চিন্তাধারা থেকে প্রত্যাবর্তন করে কেবলমাত্র অহির বিধানের প্রতি নিঃশর্তভাবে আনুগত্যের মস্তক অবনত করার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে তারাই অভিহিত হতে থাকলেন আহলেহাদীছ নামে। এককথায় বিশ্বাস, কথা ও কর্মে জীবনের সর্বক্ষেত্রে যারা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সিদ্ধান্তকে সমস্ত কিছুর উপরে স্থান দিয়ে থাকে তাদেরকেই ‘আহলেহাদীছ’ বলা হয়।
নামকরণের কারণ
আহলুল হাদীছ, আহলুল আছার বা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত শব্দগুলো ১ম ও ২য় শতাব্দী হিজরীতে শী‘আ, খারেজী, মুরজিয়া, মু‘তাযিলা প্রভৃতি ভ্রান্ত সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটার পর বিশুদ্ধ আক্বীদাসম্পন্নদের পরিচয় নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হওয়া শুরু হয়। ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ’ ও তাবে‘ তাবেঈগণ অনেকেই এই নামে নিজেদের অভিহিত করতেন।
ইতিহাসক্রম
খলীফা আল-মামূনের আমলে মু‘তাযিলা তথা যুক্তিবাদী সম্প্রদায়ের তৎপরতা সর্বাধিক বৃদ্ধি পায়। স্বয়ং খলীফা এই সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাদের আবিষ্কৃত ‘কুরআন সৃষ্ট’ এই ভ্রান্ত মতবাদ মুসলিম সমাজে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করে। খলীফা মামূন এই তত্ত্বের সমর্থক হওয়ায় বিরোধীদের উপর নেমে আসে সরকারী নির্যাতন। এই সময় আহলেহাদীছগণ এই মতবাদের বিরুদ্ধে জোর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, যার নেতৃত্বে ছিলেন ইমাম আহমদ বিন হাম্বল। এ জন্য তাঁকে ও তাঁর সাথীবর্গকে বহু নির্যাতন সহ্য করতে হয়। শেষ পর্যন্ত পরবর্তী খলীফা আল-মুতাওয়াক্কিল বিল্লাহ-এর নির্দেশে ইমাম আহমাদ ও তাঁর সাথীদেরকে জেলখানা থেকে মুক্তি দেয়া হয়। ফলশ্রুতিতে ‘কুরআনের সৃষ্টতা’ ফিতনার অবসান ঘটে এবং আহলেহাদীছদের গৃহীত মাসলাক জনসাধারণ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ার দ্বার অবারিত হয়। সৃষ্টি হয় মুসলিম সমাজে জেঁকে বসা শিরকী ও বিদ‘আতী চিন্তাধারার অবসানের জন্য একটি সুদৃঢ় আন্দোলন। যার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে যুগে যুগে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এ আন্দোলন বিস্তৃতি লাভ করে। মুসলিম সমাজ যখনই ইসলাম থেকে দূরে সরে গিয়ে নানা বাতিল ধর্মবিশ্বাস ও চিন্তাধারার সাথে মিশে গেছে, তখনই তাদের জন্য ত্রাণকর্তা হিসাবে ইসলামের প্রকৃত বার্তাকে উড্ডীন করার দায়িত্ব নিয়ে আহলেহাদীছ ওলামায়ে কেরাম জানবাজি রেখে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এজন্যই ইমাম আবু দাঊদ বলে গেছেন, ‘এই জামা‘আতটি যদি দুনিয়ায় না থাকত, তাহ’লে দুনিয়া থেকে ইসলাম মুছে যেত’ (শারফু আছহাবিল হাদীছ, পৃ. ২৭)। খত্বীব বাগদাদী বলেন, ‘আহলুল হাদীছগণ কথা ও কর্মের মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ) আনীত শরী‘আতকে গ্রহণ করে নিয়েছেন, তাঁর সুন্নাতকে তারা সংরক্ষণ ও প্রচারের মাধ্যমে পাহারা দিয়েছেন; ফলে সুন্নাত সমাজের বুকে একটি প্রতিষ্ঠিত ভিত্তি লাভ করেছে। মূলত আহলেহাদীছগণই এ মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত এবং তারাই এর অধিকারী। কত ধরনের বেদ্বীন ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে শরী‘আত বহির্ভূত বিষয় অন্তর্ভূক্তির প্রচেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু আল্লাহর রাব্বুল আলামীন আহলেহাদীছদের মাধ্যমে তাদের প্রতিরোধ করেছেন। ফলে তারা এ দ্বীনের হেফাযতকারীতে পরিণত হয়েছেন’ (শারফু আছহাবিল হাদীছ, পৃ. ৩১)।
আহলেহাদীছগণের গৃহীত নীতিমালা
আহলেহাদীছগণ
ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবে‘ঈনের ইযামের অনুসৃত নীতি অনুযায়ী দ্বীনকে অনুসরণ
করেন। কেননা তারাই ছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর সবচেয়ে নিকটতম ও বিশ্বস্ত অনুসারী।
তাই আহলেহাদীছগণের গৃহীত নীতিমালা মূলত সালাফে ছালেহীনের গৃহীত নীতিমালা,
যা আল্লাহ প্রেরিত অহি তথা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর
আহলেহাদীছদের বাহ্যিক নিদর্শন হ’ল এই যে, তারা আক্বীদার ক্ষেত্রে শিরকের
বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে তাওহীদবাদী এবং আমলের ক্ষেত্রে বিদ‘আতের বিরুদ্ধে
আপোষহীনভাবে সুন্নাতপন্থী। নিম্ন- সংক্ষেপে তাদের অনুসৃত মৌলিক নীতিমালা
উল্লেখ করা হ’ল।
১. তাওহীদ : আহলেহাদীছগণ বিশ্বাস করেন যে, তাওহীদ হ’ল
দ্বীনের মূল ভিত্তি। তারা আক্বীদার ক্ষেত্রে নির্ভেজাল তাওহীদকে সর্বাগ্রে
স্থান দেন। বিশেষত তাওহীদে উলূহিয়্যাহ তথা ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার
এককত্বকে মানুষের মনের গভীরে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালান। তারা আল্লাহ্কে
বিশ্বজগতের প্রভু হিসাবে স্বীকার করাকেই যথেষ্ট মনে করেন না; বরং
মানবজীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি ও তাঁর
প্রেরিত শরী‘আতের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নকে অপরিহার্য মনে করেন। একই সাথে
তাওহীদের সাথে সাংঘর্ষিক অর্থাৎ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সার্বভৌমত্ব
খর্বকারী যাবতীয় কর্মকা- ও চিন্তাধারাকে তারা শিরক মনে করেন এবং সর্বপ্রকার
শিরককে তারা চূড়ান্তভাবে ঘৃণ্য মনে করেন। তারা শিরক থেকে নিজে রক্ষা পাওয়া
ও অপরকে রক্ষা করাকে নিজেদের সর্বোচ্চ কর্তব্য মনে করেন।
২.
ইত্তিবায়ে সুন্নাত : আহলেহাদীছগণ রাসূল (ছাঃ) থেকে ছহীহ সূত্রে বর্ণিত
মুতাওয়াতির, আহাদ হাদীছসমূহকে সালাফে ছালেহীনের নীতিমালার আলোকে অনুসরণ
করাকে আবশ্যকীয় মনে করেন। অতঃপর ছাহাবায়ে কেরামের ইজমা তথা ঐক্যবদ্ধ
সিদ্ধান্তকে তারা শারঈ দলীল মনে করেন। এই তিনটি সূত্রকে তারা শরী‘আতের
মানদ- মনে করেন। এই তিনটির উপস্থিতিতে তারা কোন ইজতিহাদী চিন্তাধারাকে
স্বীকৃতি দেন না। নিজস্ব বিবেক ও কিয়াস দ্বারা তাকে খ-ানোর কোনরূপ সুযোগ
রাখেন না। তারা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা মাযহাবের অন্ধ অনুসরণ করেন না।
বরং ইজতিহাদের দুয়ারকে তারা শর্তপূরণ সাপেক্ষে সর্বকালের যোগ্য আলেমদের
জন্য উন্মুক্ত মনে করেন। তারা প্রত্যেক ওলামায়ে মুজতাহিদীন ও অনুসরণীয়
ইমামগণের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করেন এবং তাদের বিশুদ্ধ দলীলভিত্তিক
সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করেন। কিন্তু দলীলবিহীন এবং রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক বর্ণিত
হাদীছের বিপরীত যে কোন সিদ্ধান্তকে তারা সর্বতোভাবে বর্জন করেন।
৩.
মস্তিস্ক প্রসূত জ্ঞান-বিবেকের উপর অহিকে অগ্রাধিকার প্রদান : আহলেহাদীছগণ
নিজস্ব চিন্তাধারার উপরে অহির বর্ণনাকে স্থান দেন। শরী‘আত কি বলে তা জানার
পর নিজস্ব বিচার-বুদ্ধিকে তার প্রতি সমর্পিত করে দেন। কেননা তারা বিশ্বাস
করেন যে, মানুষের বিশুদ্ধ বিচার-বুদ্ধি নিশ্চিতভাবে কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর
সিদ্ধান্তের সাথে সমতা রক্ষা করে। এজন্য শরী‘আতের সিদ্ধান্তের উপর নিজস্ব
যুক্তি-বুদ্ধির প্রয়োগ ঘটিয়ে তার কোনরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন সাধনকে তারা
ঘোরতরভাবে নিষিদ্ধ মনে করেন।
৪. বিদ‘আত বর্জন: তারা দ্বীনের মধ্যে
নবআবিষ্কৃত কোন বিষয়কে কখনই প্রশ্রয় দেন না। দ্বীনের মধ্যে নবআবিষ্কারকে
তারা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নির্দেশনা বহির্ভূত অন্যায় সংযোজন এবং নিজস্ব
কপোলকল্পিত বিষয় দ্বারা শরী‘আত রচনার শামিল মনে করেন। এজন্য তারা সুন্নাতের
অনুসরণে যেমন আপোষহীন তেমনিভাবে সর্বপ্রকার বিদ‘আত বর্জনে কঠোর মনোভাব
পোষণ করেন।
৫. যঈফ ও জাল হাদীছ বর্জন: এ সমস্ত হাদীছ মুসলিম উম্মাহকে
রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ থেকে বাধাগ্রস্ত করছে ও তাদের মাঝে অনৈক্যের অন্যতম
ভিত্তি হিসাবে কাজ করছে। এজন্য তারা এ জাতীয় হাদীছগুলোকে সর্বতোভাবে
পরিত্যাগ করেন।
৬. জিহাদ : আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকে তারা সর্বোত্তম নেক
আমল মনে করেন এবং আল্লাহর কালেমা তথা বার্তাকে বুলন্দ করার জন্য জিহাদ
কিয়ামত পর্যন্ত কায়েম থাকবে বলে বিশ্বাস করেন। তবে তারা কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আকস্মাৎ অস্ত্রধারণকে জিহাদ মনে করেন না।
বরং জিহাদের জন্য সুনির্দিষ্ট শর্তপূরণকে তারা অপরিহার্য মনে করেন।
৭.
তাযকিয়াতুন নাফস বা আত্মশুদ্ধি : আত্মশুদ্ধির জন্য সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা
চালানোকে তারা যরূরী মনে করেন, তবে তা অবশ্যই পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ
বর্ণিত পন্থা অনুযায়ী হ’তে হবে। বিদ‘আতী কোন পন্থাকে তারা আত্মশুদ্ধি
অর্জনের মাধ্যম বলে স্বীকার করেন না; হোক তা ছূফীবাদী বা অন্য কোন দলের
উত্তম কোন আবিষ্কার।
৮. বাতিল ফিরকা সমূহের প্রতিরোধ : ইসলামের নামে
যুগে যুগে আবির্ভূত বিভিন্ন ভ্রান্ত ফিরকার বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ গড়ে
তুলেছেন। মূলতঃ আহলেহাদীছগণের সংগঠিত অগ্রযাত্রা শুরু হয় এসব বাতিল
ফিরকাগুলো প্রতিরোধ করে ইসলামের প্রকৃতরূপকে ফিরিয়ে আনার জন্যই। বর্তমান
যুগের ভ্রান্ত ফিরকাসমূহ যেমন শী‘আ, কাদীয়ানী, ব্রেলভী, বাবী, বাহাইয়াহ
প্রভৃতিসহ ইসলাম সমর্থিত নয় এমনসব সমকালীন বিজাতীয় চিন্তাধারা যেমন
ধর্মরিপেক্ষতাবাদ, গণতন্ত্র, পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ ইত্যাদি
যাবতীয় পথভ্রষ্টকারী ফিরকা ও চিন্তাধারাকে শারঈ পন্থাসমূহ অবলম্বনের
মাধ্যমে প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মোটকথা আহলেহাদীছগণ মনে করেন, জীবনের সর্বক্ষেত্রে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিরঙ্কুশ তাওহীদকে স্বীকৃতিদান এবং রাসূল (ছাঃ) প্রদর্শিত পথ তথা সুন্নাতের পুংখানুপুংখ অনুসরণই একজন মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তি দিতে পারে। এ দু’টি পথ অবলম্বনই যাবতীয় সৎআমল কবুলের পূর্বশর্ত, দুনিয়াবী জীবনে বিজয় ও শক্তি অর্জনের ভিত্তি। ব্যষ্টিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা মানবজীবনের সমগ্র ক্ষেত্রে এ দু’টি পথ অবলম্বনই ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক শর্ত। এজন্য তারা সমাজকে সর্বতোভাবে শিরক ও বিদ‘আত মুক্ত করে নির্ভেজাল তাওহীদ ও সুন্নাতের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকেন। আক্বীদাগত ও আচরণগত দূরীষ্টতা দুরীকরণে নিরন্তর দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়ে থাকেন। দুর্বল ও জাল হাদীছসমূহকে চিহ্নিত করে সমাজকে তা বিরত রাখার প্রয়াস চালান। মুসলিম উম্মাহকে স্ব স্ব পূর্বপুরুষগণ থেকে প্রাপ্ত ইসলামের পথে নয় বরং বিশুদ্ধ ইসলামের পথে পরিচালনার জন্য তারা সর্বশক্তি আত্মনিয়োগ করেছেন।
শেষকথা : পরিশেষে বলা যায়, আহলেহাদীছ আন্দোলন একটি
সামাজিক সংস্কার আন্দোলন হিসাবে মানবসমাজকে ইসলামের আদিরূপে ফিরে নিয়ে
যাওয়ার জন্য প্রাচীন ও চলমান একটি আন্দোলন। এ আন্দোলন যেমনি ইসলামের
মৌলিকরূপকে জনসমাজে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনিভাবে
ইসলামের অভ্যন্তরে যেসব নবাবিষ্কৃত দর্শন, রীতিনীতি ও কুসংস্কারের অবির্ভাব
ঘটেছে যুগে যুগে, প্রতিটির বিরুদ্ধে একটি স্থায়ী প্রতিরোধ শক্তি হিসাবে
ভূমিকা রেখে চলেছে। পৃথিবীর বুকে যতদিন পর্যন্ত একটি কুসংস্কারও জারী থাকবে
ততদিন পর্যন্ত এ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা থাকবে। আর এভাবেই আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন তাঁর দ্বীনকে কিয়ামত পর্যন্ত টিকিয়ে রাখবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল সবসময় সত্যের উপর বিজয়ী থাকবে, তাদের
বিরোধিতাকারীরা তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না কিয়ামত পর্যন্ত (মুসলিম,
মিশকাত হা/৫৫০৭)।