নারী প্রগতি না-কি নারী দুর্গতি?

লিলবর আল-বারাদী 9819 বার পঠিত

সারা বিশ্বে প্রগতির লু হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে। সকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই। প্রগতিশীলদের ধারণা নারী সমাজটা পরিবর্তন করা উচিত। সেকেলের সমাজ ব্যবস্থায় সার্বিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি, বিধায় তা পরিবর্তন করা সমীচীন। এক্ষেত্রে নারী অধিকার অন্যতম। নারী অধিকার মানেই নারীর সার্বিক সম্মান নিশ্চিত করা। সর্বত্র প্রগতিশীল পুরুষ নারীকে দিতে চায় অধিকার এবং নারীও তা গ্রহণে সর্বোচ্চ আগ্রহী। সারা বিশ্বের প্রগতিশীল সমাজ যখন নারী অধিকারের নামে আন্দোলন করছে, ঠিক তখনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল অবলা নারী সমাজও তাদের থেকে পিছিয়ে নেই। নারীকে দেশের সরকারী চাকুরীতে ৬০% এবং ছেলেদেরকে ৪০% অধিকার দেওয়া হয়। বহির্বিশ্বে সন্তান তার মায়ের পরিচয়ে বেড়ে উঠে। কিন্তু বাংলাদেশে তা এখনও হয়নি। তবে পিতার পাশাপাশি মাতার নামের সংযোজন হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব নারীদেরকে পণ্যে পরিণত করেছে। তথাকথিত সুশিক্ষিত সুসভ্য জাতি ও প্রগতির ধ্বজাধারীরা ইসলামে অশ্লীলতা বিস্ফোরণে মূল উপাদান নারীদেরকে দেয়া মান-সম্মান ধূলোয় মিশিয়ে দিয়ে তাদেরকে শুধু ভোগের সামগ্রী হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যার ফলে নানা ধরনের নারী ঘটিত অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিঘিœত হচ্ছে নারী জাতির নিরাপত্তা।
প্রকটভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে অশ্লীলতা। নারীদেরকে সিনেমা, টেলিভিশন, থিয়েটার, বিজ্ঞাপন, পত্র-পত্রিকায় নগ্ন-অর্ধনগ্ন অবস্থায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। নায়ক-নায়িকাদের যৌন আবেদনমূলক অশ্লীল, অশোভন অভিনয়, নাচ-গান, বেহায়াপনা, স্পর্শকাতর গোপন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রর্দশন, উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অঙ্গ-ভঙ্গি করার ফলে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে কুৎসিত চিন্তা-চেতনা জাগ্রত হয়। আর এভাবে যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নারী জাতির এ বেহাল অবস্থা দর্শন করে সর্বস্তরের জনসাধারণ হারিয়ে ফেলছে নারীদেরকে মা-বোনদের মত সম্মান করার মন-মানসিকতা। তারা হারাতে বাধ্য হয়েছে তাদের হৃদয়ের পবিত্রতা। মানুষ কত নীচে নামতে পারে এবং তাদের নগ্নতা ও অশ্লীলতা কিভাবে দুনিয়ার সামনে উপস্থাপন করা যায় তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রীতা টেম্পিলটন নামে জনৈক মহিলা চার সন্তানের জননী, পেশায় একজন লেখিকা। সে তার সন্তানদেরকে নারী শরীর সম্পর্কে ধারণা দিতে নগ্ন হবেন তাদের সম্মুখে। নারী শরীরকে পণ্য করে তোলার প্রতিবাদে রীতার এই অভিনব ভাবনাকে সাধুবাদ জানিয়েছে তথাকথিত বহু প্রগতিশীল মানুষ।
কিছুদিন আগে নয়াদিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা রাত ১০-টা পর্যন্ত হলের বাইরে থাকতে চায়। সেখানে জনৈক ছাত্রী বলে, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা মুরগী নয় যে তারা শিয়ালের ভয়ে হলে ঢুকে পড়বে। আমরা অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই’। এমনকি ছাত্রীরা আন্দোলন  গড়ে তোলে এবং তারা শ্লোগান দেয়, “এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন; হল কোন খোয়াড় নয়, রাত ১০-টার পর ঢুকতে হয়”। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ ই নভেম্বর ২০১৪ ইং রাত ১২-টায় তিনজন ছাত্রী ও চারজন ছাত্র কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে নেশায় আসক্ত হয়ে, অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। সেই সময় প্রীতিলতা হলের এক ছাত্রী অজ্ঞান হ’লে তাকে ছেলেরা ধরে মেয়েদের হলে পৌঁছে দেয়। অথচ বিশ^বিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি রাত ১০-টার মধ্যে সকল গেট বন্ধ করা হবে। একুশে টিভির সূত্র মতে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহরগুলোতে বিউটি পার্লার ও ম্যাসেজ সেন্টার নামে কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যাতে চলছে অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকা-। বিউটি পার্লার ও ম্যাসেজ সেন্টার ভিতরে ছোট ছোট পর্দা দিয়ে আড়াল করে ম্যাসেজের বেড রাখা হয়েছে। যেখানে সুন্দরী ললনারা অপেক্ষমান থাকে তাদের কাস্টমারদের জন্য। এখানে অধিকাংশ কাস্টমার যুবক।
স্কুল-কলেজের প্রগতিশীল শিক্ষকরা তাদের সুন্দরী ছাত্রীদের কু-প্রস্তাব দিতে লজ্জাবোধ করে না। এমনকি তাদের সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে, তা ভিডিও করে তাদেরকে যিম্মী করে কিংবা বেশী নাম্বার প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে চলেছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের দৃশ্য হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। কথার ছলে ছাত্র-ছাত্রীরা বেশ জমিয়ে পিঠ চাপড়াচ্ছে। এগুলো সবই চলছে হাসি-ঠাট্টার ছলে। ছাত্রীরা হয়তো হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে কোন ছাত্রের গায়ে; ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে একে অপরকে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা একে অপরকে দোস্ত বলে সম্বোধন করছে। দেখা যায়, সহপাঠী সকলে মিলে সিগারেট টানছে, তাস খেলছে। এসবই হচ্ছে প্রকাশ্যে। অনেক সময় ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা রেস্টুরেন্টে বা অন্য কোথাও গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। যেখানে রয়েছে খুবই খারাপ পরিবেশ। ছোট ছোট ঘর বানিয়ে অবাধ মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন তাদের সন্তানদের নিয়ে। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অবাধ মেলামেশার সংস্কৃতি যেভাবে দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে তাতে উদ্বিগ্ন সুশীল সমাজও। প্রযুক্তির প্রসার ও সামাজিক যোগাযোগসহ বিভিন্ন মাধ্যমের কারণে তরুণ সমাজে খুব দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড ও দোস্ত কালচার। এমনকি তা গড়িয়ে যাচ্ছে পরকীয়ায়। পর্নোগ্রাফির বিস্তার ও সংস্পর্শে আসার কারণে লজ্জা এবং নৈতিকতার বাঁধন ধীরে ধীরে ঢিলা হয়ে যাচ্ছে। বিপরীতে ছড়িয়ে পড়ছে লজ্জাহীনতা, খোলামেলা ও অবাধ মেলামেশার পরিবেশ। একসময় মা-বাবার উদ্বেগ ছিল ছেলেমেয়েদের মোবাইলে কথা বলা এবং এসএমএস বিনিময়ে সময় ব্যয় করা নিয়ে। কিন্তু এখন স্কাইপ, ট্যাংগো, উইচ্যাট, হটসআপ ইত্যাদি ওয়েবক্যামের কারণে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টি এবং কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি অবারিত হয়েছে। ফলে তরুন শিক্ষার্থীদেরও নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াতের খবরও বের হচ্ছে। গত ৭ই সেপ্টেম্বর দৌলতদিয়া নিষিদ্ধ পল্লীতে খুন হয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ বছরের এক শিক্ষার্থী। রাজধানীর পুরান ঢাকায় পর্নো ভিডিওতে অভিনয়ের সময় ধরা পড়েন দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
রাজধানীর এক কলেজের জনৈক ছাত্রের সাথে প্রণয়ে আসক্ত হন শিক্ষিকা। ইডেন কলেজের এক ছাত্রী পতিতা বৃত্তিতে লিপ্ত হওয়ায় তার পিতা তাকে নিজ বাড়ী শেরপুর নিয়ে যায় এবং পড়াশুনা বন্ধ করে দিতে চায়। কিন্তু মেয়ে তার পিতার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করে। এছাড়া পুরান ঢাকায় বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্রী খুন হওয়ার পর জানা যায়, নিহত ঐ শিক্ষার্থী এক বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাসা ভাড়া নিয়ে লিভটুগেদার করত। নিহত ছাত্রীর মা-বাবা জানতেন সে কলেজের হোস্টেলে থাকে। চীনে এক ব্যক্তি তের জন মহিলার সাথে প্রেমের খেলায় জড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ একদিন সে অসুস্থ হ’লে তের জন একে একে তাকে দেখতে আসে। এঘটনায় পুলিশ তাকে বন্দি করে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার প্রত্যেকেরই সন্তান রয়েছে। রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে স¤প্রতি এ ধরনের একটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটে। দুই সন্তানের জননী লাভলীর সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক হয় নৌবাহিনী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র তানভীর আহমাদের। তাদের ঐ সম্পর্কের কথা লাভলীর স্বামী গিয়াছুদ্দীন জানার পর এ নিয়ে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে লাভলী তানভীরকে দিয়ে স্বামীকে খুন করায়।
গত ৩ই জানুয়ারী শুক্রবার ভোরে ১৬ বছর বয়সী তন্ময় ও মিম মগবাজার প্রভাতী বিদ্যানিকেতনে দশম শ্রেণীর ছাত্র। পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের প্রেমে বাঁধা দিলে হাতিরঝিল ব্রিজের ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। স¤প্রতি বরিশাল বিএম কলেজের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে তার নগ্নভিডিও প্রকাশ হয়ে পড়ায়। গত ফেব্রুয়ারীতে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে ২০ বছরের এক তালাকপ্রাপ্তা নারী ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশ পাওয়ায় আত্মহত্যা করেছে। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঢাকার ঐশীর। সে নেশায় আসক্ত হয়ে বয়ফ্রেন্ডের সহযোগিতায় তার পিতা-মাতাকে হত্যা করে।
এসবের নাম যদি নারী স্বাধীনতা, নারী প্রগতি, নারীর অধিকার রক্ষা ও নারীর উন্নয়ন হয়, তাহলে তা কোন সচেতন ও বোধসম্পন্ন মানুষ মেনে নিতে পারে না।
ভাবতে আবাক লাগে, যারা নারী জাতির বারোটা বাঁজিয়েছে তারাই আবার নারী মুক্তি আন্দোলনের জন্য সভা-সমাবেশ করে আকাশ-বাতাশ প্রকম্পিত করে তুলছে নানা রকম ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক বক্তব্য দিয়ে। নারীর কি মুক্তি চায় তারা? তারা তো তাদের দেশের নারীদেরকে মুক্তভাবে ছেড়ে দিয়ে সর্বনাশের শেষ সীমায় নামিয়ে দিয়েছে।
পাশ্চাত্য সমাজে সাম্যের ভ্রান্ত ধারণায় জন্য অফিস-আদালত কল-কারখানার চাকরী, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অংশ গ্রহণ করে তাদের দাম্পত্য জীবনের গুরুদায়িত্ব, সন্তান প্রতিপালন ও গৃহের সু-ব্যবস্থা প্রভৃতি যাবতীয় করণীয় বিষয়গুলো নারীর কর্মসূচী হ’তে বাদ পড়ছে। তাদের প্রকৃতিগত কাজকর্মের প্রতি ঘৃণা জন্মে গেছে। সংসার জীবনের সুখ-শান্তি ধ্বংস হয়ে গেছে।
কেনইবা হবে না? যে নারী নিজে উপার্জন করে যাবতীয় প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম,যার সাহায্যের প্রয়োজন হয় না, সে শুধু যৌন সম্ভোগের জন্য পুরুষের অধীন থাকবে কেন? বিবাহ ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই মর্মে জার্মান স্যোসাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ইধনবষ স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “পুরুষ ও নারী তো পশুর মতই। পশু দম্পত্তির মধ্যে কি কখনো স্থায়ী বিবাহের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়?”
এ সকল উ™£ট চিন্তার পরিপ্রেক্ষিতে পারিবারিক শান্তি না থাকায় তাদের জীবন তিক্ত হ’তে তিক্ততর হচ্ছে এবং একটি চিরন্তন দুর্ভাবনা তাদেরকে এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি দিতে পারছে না। এটাই ইহলৌকিক জাহান্নাম, যা লোকেরা তাদের নির্বুদ্ধিতা ও লোভ-লালসার উন্মাদনায় ক্রয় করে নেয়।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, নারী হ’ল সম্মানিত জাতি। কিন্তু বর্তমানে তাদেরকে সম্মান প্রদর্শনের নামে অসম্মান করা হচ্ছে। যুগে যুগে নারীরা শয়তানের রশি হিসাবে কাজ করে গোটা সমাজ ও জাতিকে ধ্বংস করেছে। বর্তমানে বিজাতীরা প্রগতির নামে যুবতীতের দিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনে সারা পৃথিবীর বিবেকবান জাতিকে ধ্বংস করার করেছে। তাদের পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম পরিকল্পনা হ’ল পরিবার পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা আমাদের মেয়েদের লজ্জা হরণ করেছে। যার ফলে তারা নির্দ্বিধায় বিভিন্নভাবে যেনায় লিপ্ত হচ্ছে। সম্প্রতি বসনিয়ার এক স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষা সফরে যান। এতে দেখা যায়, তাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৫ জন মেয়ে গর্ভবতী হয়েছে। তাদেরকে এব্যাপারে প্রশ্ন করা হ’লে তারা উত্তরে বলে, বয়ফ্রেন্ডকে না বলতে পারিনি। ফলে সে দেশের সরকার এখন সচেতন যে, ছেলে মেয়েদেরকে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যৌন শিক্ষা দিতে হবে। যাতে করে তারা এমন ভুল না করে। আমাদের প্রতিবেশী ভারতেও অনুরূপ তরুণদেরকে যৌন বিষয়ক শিক্ষা দেয়া অতীব প্রয়োজন বলে ঘোষণা করেছে। সেখানে আইন করেছে কোন যুবতী যদি লিভটুগেদার করে কিংবা দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে এতে কুমারিত্ব নষ্ট হ’লে, পরবর্তীতে নারী নির্যাতন আইনে ধর্ষণ মামলা দায়ের করতে পারবে না। আমাদের বাংলাদেশেও অনুরূপ ঘটনা অহরহ ঘটছে। যাহোক এ সকল সহশিক্ষার কুফল। তারা ভালো করেই জ্ঞাত যে, মুসলমান জাতিকে ধ্বংস করতে হ’লে সর্বপ্রথম তাদের ঈমানী শক্তির উপর আঘাত হানতে হবে। এতে করে তারা তাদের পরিকল্পনা প্রসূত এক শ্রেণীর নারীদেরকে দিয়ে সারা বিশ্বে নগ্নতা ছড়িয়ে দিয়েছে। আর আমরা তা অনুসরণ করে চলেছি। আমাদের নারী সমাজ তথা মা-বোনদেরকে তাদের সঠিক সম্মান থেকে বঞ্চিত করে বিপথে চলতে সহযোগিতা করছি। আমরা এমন জাতি যে, ইসলাম শিক্ষার পরিবর্তে যৌনশিক্ষার পাঠ্যক্রম তৈরী করছি।
একজন সুন্দরী মেয়েকে ঘর থেকে বাইরে এনে দুই পুরুষের মাঝখানে রিক্সায়, পার্কে, নদীর পাড়ে, স্কুল-কলেজে, রেস্টুরেন্টে, অডিটোরিয়ামে বসতে দেয়া কি নারী স্বাধীনতা? বয়ফ্রেন্ডস ও গার্লফ্রেন্ড বা বন্ধু-বান্ধবী ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল শ্লোগান দিতে গিয়ে একজন পুরুষকে জড়িয়ে ধরে ফটোসেশন করা কি নারী স্বাধীনতা? বিলবোর্ড থেকে শুরু করে পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারীর দেহ উপস্থাপন করে পণ্যের মত নারীকেও পণ্য বানিয়ে প্রচারণা চালানো কি নারী স্বাধীনতা? সবচেয়ে বড় কথা যারা নারী স্বাধীনতা নিয়ে চিৎকার করে তাদের চারিত্রিক গুণাবলী দেখলেই বোঝা যায় তারা কেমন নারী স্বাধীনতা চায়! পাগল নিজের ভাল বোঝে। কিন্তু কথিত প্রগতিশীল নারী বোঝে না তার প্রকৃত ইয্যত-সম্মান, নায্য অধিকার, প্রকৃত স্বাধীনতা কে দিতে পারে? আমার বোনদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলে রাখি, এরা যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার শরীরের ব্যবচ্ছেদ করতে পারবে না ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার জন্য নারীবাদী প্রগতিশীল ভালো মানুষ। আর যখন আপনার শরীরের চামড়া ভোঁতা হয়ে যাবে, আপনার রূপের বাহাদুরি হারিয়ে যাবে, তখন তারা আপনাকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে দিবে, বলবে আপনি সেকেলে। তাই কবি আফসোস করে বলেন,
এ এমন নারীবাদী প্রগতির শিক্ষা
যে করে নারীদের অধিকার ভিক্ষা,
সতীত্ব কেড়ে নিয়ে ফেলে রেখে চম্পট
প্রগতির আবরণে লুটে নেয় লম্পট।
আজ খুব প্রয়োজন প্রগতির সংজ্ঞা
সারাক্ষণ ভাবনা কেমনে হবে সেই প্রগতি চাঙ্গা?
নারী প্রগতি মানে নারী দেহ উলঙ্গ
প্রগতির মূলধন সস্তা নারী ভোগ্য পণ্য।
বর্তমান বিশ্বে কোন নারী যদি ধর্ষিতা হয় তবে তার ডাক্তারী পরীক্ষা করেন একজন পুরুষ ডাক্তার, সাথে থাকেন পুরুষ পুলিশ অফিসার। একবার নয় বার বার তার ইয্যত দিতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সরকারী হাসপাতালে পুরুষ ডাক্তার দিয়ে বাচ্চা প্রসব করানো হয়।
হে প্রগতিবাদী নারী সমাজ! এখনো সময় আছে একবার সুস্থ মস্তিষ্কে গভীরভাবে চিন্তা করুন, এটা কি প্রকৃত সুস্থ জীবনে চলার সঠিক পথ? তারা যা চায় তা কি প্রগতির নামে প্রহসনে নারীর সতীত্ব নষ্ট নয়? তাই আসুন! পিছনের সকল পাপ- পঙ্কিলতা পরিহার করে, সুস্থ সঠিক জীবনে ফিরে আসি। ইসলামকে ধারণ করে, নিয়ে একবার গভীরভাবে বুঝার চেষ্টা করি। ইসলাম আপনাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে ইয্যত-সম্মান, প্রতিপত্তি, ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি দিতে পারে।
ইসলাম শাশ^ত সত্য ও শান্তির ধর্ম এবং চিরন্তন প্রগতিশীল ও সার্বজনীন। আর তাই ইসলাম আল্ল¬াহ্র একমাত্র মনোনীত  দ্বীন। বিশ্ব মানবতা ও বিশ্ব নারী সমাজকে একমাত্র ইসলামই পারে শান্তি দিতে এবং তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে। সারা বিশ্বের নির্যাতিত, লাঞ্ছিত ও অবহেলিত নারী সমাজের হরণকৃত অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারে একমাত্র ইসলাম।
বর্তমান যুগে প্রগতিশীল কিছু ব্যক্তি বলে, ইসলাম মেয়েদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে, যেহেতু উত্তরাধিকারের ব্যাপারে ইসলাম ধর্ম মেয়েদেরকে ছেলেদের সমান অধিকার দেয়নি। আসলে মানুষের মাঝে কিছু চতুর লোক রয়েছে যারা মেয়েদেরকে নিয়ে সদা-সর্বদা তাদের কু-প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য চক্রান্ত করছে কেবল তারাই নারী স্বাধীনতার নামে উসকানি দিয়ে তাদেরকে ঘর থেকে বের করে  ধোঁকা দিচ্ছে।
১৪০০ বছর পূর্বে ইসলামী প্রগতির চিরন্তন প্রদীপ্ত সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে তৎকালীন আরব সমাজ ছিল বর্বর জাহিলী সমাজ। সেই সময় নারীরা ছিল সবচেয়ে বেশী অবহেলিত, লাঞ্ছিত ও পদদলিত। নারী সমাজকে সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করা হ’ত না। কোন পরিবারে কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে লজ্জা ও দুর্ভাগ্যের কারণ মনে করা হ’ত। দারিদ্যও অভাবের ভয়ে ভূমিষ্ট শিশুকে মেরে ফেলা হ’ত। জন্মদাতা পিতা শিশু সন্তানের হৃদয় বিদারক চিৎকার উপেক্ষা করে তাকে মাটিতে পুঁতে রাখত। অনেক পিতা দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দিত। সেই যুগে মেয়েদেরকে কিছুই দেয়া হ’ত না এই বলে যে, তারা যুদ্ধ করত না, তারা তলোয়ার ধারণ করত না এবং শত্রুর মোকাবিলা করত না। এই জন্য তারা পিতা-মাতার ধন সম্পদেরও মালিক হ’ত না। তাদের স্বামীর সম্পদে অংশীদার হ’ত না। মেয়েরা এ ভাবেই যুলুম ও নির্যাতনের শিকার হ’ত।
আল্লাহ তা‘য়ালা বিশ্ববাসীর হিদায়াতের লক্ষ্যে চির শাশ^ত ও শান্তিপূর্ণ নির্ভেজাল বিধান দিয়ে বিশ্ব মানবের মুক্তির দূত ও আলোর দিশারী নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে পৃথিবীতে পাঠালেন। তিনি চৌদ্দ শত বছর পূর্বে আল্ল¬াহ্র নির্দেশে নারীর হক নির্ধারণ করলেন যাতে তারা ইযযতের সাথে সসম্মানে তা গ্রহণ করতে পারে। করুণা কিংবা দানের ভিত্তিতে নয়, বরং অংশ হিসাবে আল্ল¬াহ্র পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আল্লাহ বলেন, وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ ‘রমণীদের পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজন যা রেখে গেছে তার মধ্যে তাদের জন্য অংশ রয়েছে’ (নিসা ৭)।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার দ্বারা সমাজে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যার দ্বারা সে তার মর্যাদা অক্ষুণœ রাখতে পারে তা হ’ল অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠা। ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্ম নারীকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দুর্বল করে রেখেছে এবং সমাজে নারীর দাসত্বের কারণই হ’ল তার এ আর্থিক দুর্গতি। ইউরোপ এ অবস্থার অবসান চাইল আর তার জন্য নারীকে উপার্জনশীল হিসাবে তৈরী করল। পক্ষান্তরে ইসলাম নারীকে উত্তরাধিকারের বিরাট অধিকার দান করল। পিতা, স্বামী, সন্তান ও অন্যান্য নিকট-আত্মীয়ের উত্তারাধিকার সে লাভ করল। উত্তরাধিকার আইনে নারীকে পুরুষের অর্ধেক অংশ দেয়া হয়েছে। নারী তার স্বামীর নিকট হ’তে মোহর ও ভরণ-পোষণ পায়। পুরুষ এ সকল হ’তে বঞ্চিত। নারীর ভরণ-পোষণ শুধু স্বামীর উপর ওয়াজিবই নয়, বরং স্বামীর অবর্তমানে পিতা, ভাই, সন্তান তার ভরণ-পোষণ করতে বাধ্য। মেয়েদের সম্পদ লাভ করার মাধ্যমে তার উপর পূর্ণ মালিকানা ও সত্ত্ব কায়েম হয় এবং তা ব্যয় করার কোন অধিকার তার, পিতা, স্বামী কিংবা অন্য কারো নেই। কোন ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগ করলে অথবা নিজ শ্রম দ্বারা কোন অর্থ উপার্জন করলে তারও সে মালিক হবে। এছাড়া তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণ স্বামীর। স্ত্রী যত ধনশালী হোক না কেন, তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব হতে স্বামী মুক্ত হ’তে পারবে না। এভাবে ইসলাম ধর্মে নারীর আর্থিক অবস্থাকে এত সুদৃঢ় করে দেয়া হয়েছে যে, অনেক সময় নারী-পুরুষ অপেক্ষা বেশী ভাল অবস্থায় থাকে।
ইসলামে মেয়েরা সম্পদ গ্রহণ করবে, কিন্তু খরচের ব্যাপারে তাকে বাধ্য করা হয়নি, কোন দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তার লাভ আছে, ক্ষতি নেই। আয় আছে, ব্যয় নেই। জমা আছে, খরচ নেই। আদল ও ইনছাফের কষ্টি পাথরে যদি যাচাই করা হয় তাহ’লে সবার কাছে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হবে যে, পুরুষদের সাথে নারীদের অংশ পার্থক্য করা হয়েছে সার্বিক যুক্তিসংগত, ন্যায়ানুগ ও বিজ্ঞান ভিত্তিক। কিন্তু প্রগতিবাদীরা যে অধিকারের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে চলেছে তা মরীচিকার পিছনে ছুটার নামান্তর বৈ কি?
এছাড়া ইসলাম নারীদেরকে বিভিন্নভাবে সম্মানিত করেছেন। একজন নারী যখন কন্যা সন্তান, তখন সে পিতা-মাতার জন্য জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণ হয়ে যায় (মুয়াত্ত¦া, মিশকাত হা/৪৯৪৯)। আবার নারী যখন স্ত্রী’র দায়িত্ব পালন করে, তখন সে তার স্বামীর অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করতে সহযোগিতা করে (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৩০৯৬; ছহীহুল জামে' হা/৪৩০, ৬১৪৮, সনদ হাসান)। আর যখন ঐ নারী মায়ের ভূমিকায় থাকে, তখন তার পায়ের নীচে সন্তানের জান্নাত থাকে (তিরমিযী; মিশকাত হা/৪৯২৭; নাসাঈ হা/৩১০৪)। সার্বিক বিবেচনা করে এটাই প্রতীয়মান হয়, নারীদের সম্মান ও মর্যাদা এবং প্রগতিশীল সম্মাননা একমাত্র ইসলামই দিয়েছেন ১৪০০ বছর পূর্বে। মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন-আমীন!
[ লেখক : যশপুর, তানোর, রাজশাহী ] 

বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
আরও