আহলেহাদীছ আন্দোলনের মূলনীতি

আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কুরায়শী (রহঃ) 813 বার পঠিত

আহলেহাদীছ আন্দোলনের মূলনীতি

৮। ইবনু তায়মিয়াহ, কুশায়রী ও নাবলুসী সাধক স¤্রাট হযরত শায়খ আবুল কাসেম জুনায়েদ বাগদাদীর (২৯৭) উক্তি রেওয়ায়াত করিয়াছেন,
الطرق كلها مسدودة على الخلق إلا على من اقتفى أثر الرسول صلى الله عليه وسلم-
‘আল্লাহর নৈকট্য লাভের যতগুলি পথ ছিল, সমস্তই অবরুদ্ধ হইয়াছে, কেবলমাত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পদাংক অনুসরণ করিয়া আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের পথ মুক্ত রহিয়াছে। জুনায়েদ বাগদাদী আরও বলিয়াছেন,
من لم يحفظ القرآن، ولم يكتب الحديث، لا يقتدي به في هذا الأمر لأن علمنا ومذهبنا مقيد بالكتاب والسنة-
‘যে ব্যক্তি কুরআনের বিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ এবং হাদীছের গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করে নাই, সে তরীকতের পথে নেতৃত্ব করার অধিকারী নয়। আমাদের বিদ্যা আর পরিগৃহীত পন্থা কুরআন ও সুন্নাহ্র ভিতর সীমাবদ্ধ।
৯। ইবনু তায়মিয়াহ ও সোহরাওয়ার্দী হযরত শায়খ আবু ওছমান নিশাপুরীর (-২৯৮ হিঃ) বাচনিক রেওয়ায়াত করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন,
من امر السنة على نفسه قولا  وفعلا، لطق بالحكمة، ومن أمر الهوى على نفسه قولا وفعلا، نطق بالبدعة، لان الله يقول: وان تطيعوه تهتدوا-
‘যে ব্যক্তি কথায় ও কার্যে সুন্নাতকে নিজের শাসক নিয়োজিত করিল সে প্রজ্ঞার অধিকারী হইল, আর যে ব্যক্তি কথায় ও কার্যে প্রবৃক্তিকে প্রভু স্বীকার করিল, সে বিদ‘আতের আশ্রয় লাভ করিল, কারণ আল্লাহ বলিয়াছেন, ‘যদি তোমরা রাসূলুল্লাহ-এর (ছাঃ) আজ্ঞাবহ হও, তবেই সঠিক পথের সন্ধান লাভ করিতে পারিবে’।  
১০। শায়খ জুনায়েদ বাগদাদীর সহযোগী, সিরিয়ার তরীকত পন্থীদের নেতা শায়খ আবু ইসহাক ইবরাহীম ইবনু দাউদ দুক্কী (৩২৬ হিঃ)-এর উক্তি জালালুদ্দীন সুয়ূতী উধৃত করিয়াছেন, علامة محبة الله ايثار طاعته ومتابعة نبيه صلى الله عليه وسلم- ‘আল্লাহ্র  অনুরাগের  সঠিক লক্ষণ।   তাঁহার
আনুগত্যের জন্য সর্বস্ব বিলাইয়া দেওয়া এবং তদীয় নবী (ছাঃ)-এর অনুগমন করিয়া চলা।’   
১১। শায়খ আবু বকর তমাসতানী (৩৪০ হিঃ) বলেন,
الطريق واضح والكتاب والسنة قائم بين أظهرنا وفضل الصحابة معلوم لسبقهم إلى الهجرة ولصحبتهم فمن صحب هذا الكتاب والسنة وتغرب عن نفسه والخلق وهاجر بقلبه إلى الله فهو الصادق المصيب
‘পথ সুস্পষ্ট! আমাদের মধ্যে কুরআন ও হাদীছ বিরাজমান! ছাহাবাগণ হিজরতে অগ্রণী হওয়ায় এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাহচর্যের গৌরব লাভ করায় তাঁহাদের শ্রেষ্ঠত্ব সর্বজনবিদিত। অতএব যিনি কুরআন ও হাদীছের সাহচর্য লাভ করিতে সমর্থ হইলেন, নিজের কাছে ও জনসাধারণের কাছে অপরিচিত হইয়া উঠিলেন এবং আল্লাহর দিকে সর্বান্তঃকরণে হিজরত করিতে সমর্থ হইলেন, তিনিই সত্যবাদী ও সঠিক পথের পথিক’।   
১২। হযরত আবু আমর ইসমাঈল ইবনু নুজায়েদ (২১৬) বলিতেছেন,كل وجد لا يشهد له الكتاب والسنة، فهو باطل! ‘সর্ববিধ দশাপ্রাপ্তি (অনুরাগের উ¤œত্ততা) যাহার সাক্ষ্য কুরআন ও হাদীছে বিদ্যমান নাই তাহা বাতিল’।
أصل التصوف ملازمة الكتاب والسنة وترك الأهواء والبدع وتعظيم حرمات المشايخ ورؤية أعذار الخلق والمداومة على الأوراد وترك ارتكاب الرخص والتأويلات!
১৩। শায়খ আবুল কাসেম নাছিরাবাদী (-৩৬৯ হিঃ) বলেন, ‘তাছাউফের মূল হইতেছে কিতাব ও সুন্নাতকে আঁকড়িয়া থাকা, বিদ‘আতের প্রবৃত্তিকে বর্জন করিয়া লওয়া, গুরুজনের মর্যাদার গুরুত্ব, জনসাধারণের ওজর আপত্তির প্রতি লক্ষ্য রাখা, যিকর আযকারে নিমগ্ন থাকা এবং অপব্যাখ্যার প্রচেষ্টা হইতে বিরত থাকা’।  
১৪। শায়খ আবূ নাছর র্সরাজ তদীয় ‘কিতাবূল-লাম্ম’ নামক গ্রন্থে লিখিয়াছেন,
قال عز رجل: شهد الله انه لا اله الا هو والملائكة واولوا العلم قائما بالقسط و روى عن النبى صلى الله عليه وسلم انه قال: العلماء ورثة الانبياء، وعندى- والله علم- ان اولى العلم القائمين بالقسط الذين هم ورثة الانبياء، هم المقتدون بكتاب الله، المجتهدون فى متابعة رسول الله صلى الله عليه وسلم، المقتدون بالصحابة والتابعين، السالكون سبيل اولياء المتقين وعباد الله الصالحين، هم ثلاثة اصفاف: اصحاب الحديث والفقهاء والصوفية-
‘আল্লাহর নির্দেশ ঃ ‘আল্লাহ স্বয়ং সাক্ষ্য দান করিয়াছেন যে, তিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য প্রভু নাই। ফেরেশতাগণ এবং সৎপথে সুদৃঢ় বিদ্বানগণও এই কথার সাক্ষ্য দিয়াছেন’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাচনিক ইহাও বর্ণিত হইয়াছে যে,   ‘বিদ্বানগণ নবীদের স্থলাভিষিক্ত’। যাহা সঠিক তাহা আল্লাহ অবগত আছেন তবে আমার মনে হয়, যে সকল বিদ্বান সত্যপথে সুদৃঢ় থাকিতে পারিয়াছেন তাঁহারাই প্রকৃতপক্ষে নবীগণের স্থলাভিষিক্ত, এবং তাঁহারাই আল্লাহ্র গ্রন্থকে আঁকড়াইয়া ধরিয়াছেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পবিত্র পদরেখার অনুসরণ করিতে সর্বদা সচেষ্ট রহিয়াছেন, ছাহাবা ও তাবেঈগণের অনুগামী হইয়াছেন এবং মুত্তাকী, ওয়ালীউল্লাহ এবং ন্যায়নিষ্ঠ বান্দাদের রীতি অবলম্বন করিয়াছেন, তাঁহারাই সত্যপথে সুদৃঢ় বিদ্বানের দল এই বিদ্বানগণ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। প্রথম আহলে হাদীছগণ, দ্বিতীয় ফকীহগণ, তৃতীয় মুসলিম তাপসগণ'।   
১৫। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ আল্ গাযালী (-৫০৫ হিজরী) সম্বন্ধে মোল্লা আলী কারী হানাফী বর্ণনা করিয়াছেন,
 مات الغزالى والبخارى على صدر-‘ইমাম গাযালী স্বীয় বুকে ‘সহীহ বুখারী’ গ্র্রন্থ ধারণ করিয়া মৃত্যবরণ করেন’।  
১৬। সাধক চুড়ামণি মাহবুবে সুবহানী হযরত সৈয়দ আব্দুল কাদের জীলানী (-৫৬৯) স্বীয় গ্রন্থে লিখিয়াছেন, ‘কুরআন ও হাদীছকে তোমার নেতারূপে গ্রহণ কর এবং অভিনিবেশ সহকারে উল্লিখিত বস্তু দুইটির প্রতি দৃষ্টি সঞ্চালন করিতে থাক এবং তদানুসারে আমল কর। ইহার উহার কথায়, কিন্তু পরন্তর পিছনে এবং দুরাশার কুহকে প্রলুব্ধ হইয়া ঘোরাঘুরি করিও না’। আল্লাহ বলিয়াছেন, ‘রাসূল (ছাঃ) তোমাদিগকে যাহা প্রদান করিয়াছেন, তাহা গ্রহণ কর এবং যাহা নিষেধ করিয়াছেন তাহা পরিহার কর’ (হাশর ৫৯/৭)। অতএব আল্লাহকে ভয় কর এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ করিওনা। এরুপ যেন না হয় যে, তিনি যে বিধান সহকারে আগমন করিয়াছেন, তোমরা তদনুসারে আমল করা পরিহার করিয়া বস আর আমল ও ইবাদতের নতুন নতুন পন্থা আবিষ্কার করিতে লাগিয়া যাও। যেমন একদল লোক সম্বন্ধে আল্লাহ্ বলিয়াছেন ‘তাহারা সঠিক পথ হইতে ভ্রষ্ট হইয়া পড়িয়াছে’ (মায়েদা ৫/৭৭)। এবং আরও বলিয়াছেন, ‘যে বৈরাগ্যের জন্য আমি তাহাদিগতে নির্দেশ দেই নাই তাহারা সেই বিদ‘আত অবলম্বন করিয়াছে (হাদীদ ৫৭/২৭)।
তারপর ইহাও জানা আবশ্যক যে, আল্লাহ স্বীয় নবীকে সর্বপ্রকার দোষ-ত্রুুটি হইতে বিমুক্ত এবং যাবতীয় মিথ্যাচার হইতে পরিশুদ্ধ করিয়াছেন এবং সাক্ষ্য দিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজের ইচ্ছায় কোন কথা উচ্চারণ করেন না, তিনি যাহা বলেন, আল্লাহর অহি দ্বারা প্রত্যাদিষ্ট হইয়াই উচ্চারণ করিয়া থাকেন (নাজম ৫৩/৩-৪)।  পীরানে পীর বলিতেছেন এই সকল আয়াতের তাৎপর্য এই যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তোমাদিগকে যাহা প্রদান করিয়াছেন তাহা আমার অর্থাৎ আল্লাহর নিকট হইতে গ্রহণ করিয়াই তোমাদিগকে দিয়াছেন, নিজের খেয়াল বা অভিরুচি মত তোমাদিগতে শরী‘আতের কোন আদেশ বা নিষেধ প্রদান করেন নাই। পুনশ্চ আল্লাহ বলিয়াছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রেমাকাংখী হও, তাহা হইলে, হে রাসূল (ছাঃ) আপনি তাহাদিগতে বলুন! তোমরা আমার অনুসরণ কর, তবে তোমরা আল্লাহর প্রণয় অর্জন করিতে পারিবে, নতুবা নয়’ (আলে ইমরান ৩/৩১)। অতএব আল্লাহ স্পষ্ট ভাবেই জানাইয়া দিয়াছেন যে, কথায় ও কার্যে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অনুসরণ করাই হইতেছে আল্লাহর প্রেমের পথ।   
১৭। সাধক প্রবর হযরত আবু হাফস ওমর ইবনু মুহাম্মাদ শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী (৬৫১ হিজরী) স্বীয় গ্রন্থে লিখিয়াছেন, كل من يدعى حالا على غير ما يشهد له الكتاب والسنة فمداع مفتون كذاب- ‘যে ব্যক্তি অনুরাগের এরূপ ভাব প্রদর্শন করিল, যাহার সাক্ষ্য আল্লাহ্র গ্রন্থ এবং হাদীছে বিদ্যমান নাই সে গলাবাজ, ফেৎনা সৃষ্ঠিকারী, মিথ্যুক’।  
১৮। সুলতানুল আওলিয়া ইমাম আবু হাসান শায্লীর (-৬৫৪ হিজরী) উক্তি আল্লামা ইবনুল হাজ্জ মালেকী স্বীয় গ্রন্থে উধৃত করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, ان الله عز وجل ضمن لك العصمة فى جانب الكتاب والسنة ولم يضمنها لك فى الكشف والالهام! ‘কুরআন ও হাদীছের দিক দিয়া আল্লাহ তোমার অভ্রান্তি ও সুরক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছেন, কাশ্ফ ও ইলহামের ভিতরে এরূপ কোন দায়িত্ব তোমার জন্য তিনি স্বীকার করেন নাই’।   
১৯। তাপস স¤্রাট হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তীর (-৬৩২ হিজরী) উক্তি খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার উধৃত করিয়াছেন যে,
هو روز از آسمان دو فرشته فرودمى ايشد، يكے  اسارز بلند لد اكندا كه آد ميان وبرپان  اشنويد وبد هركه فريضة خدائے عز و جل لكزرد از زلهارى خدائے عز و جل بيدون افقد، فرشتة دوم بر قام حظيره رسول الله صلى عليه وسلم بابتد وندا كند: اے  آد ميان بداليد وبشنوبه هر كه سئتائى رسول الله صلى الله عليه وسلم لگزارد يألجاوز كند، از شفاعت بى بهره مألد-
‘প্রত্যেক দিবস দুইজন ফেরেশতা আকাশ হইতে অবতীর্ণ হইয়া থাকেন তন্মধ্যে একজন উচ্চস্বরে ঘোষণা করেন, মানব ও দানবগণ শ্রবণ কর, যে ব্যক্তি আল্লাহর অবশ্যই প্রতিপালনীয় কোন আদেশ লংঘণ করিবে সে আল্লাহ্র হেফাযত হইতে দূরে নিক্ষিপ্ত হইবে। দ্বিতীয় ফেরেশতা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পবিত্র সমাধির গুম্বু^জের উপর দাঁড়াইয়া ঘোষণা করেন যে হে মানবগণ! অবহিত হও, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাতসমূহের অনুসরণ করেনা অথবা সীমা অতিক্রম করিয়া চলে সে শাফা‘আত হইতে বঞ্চিত হইবে। উক্ত গ্রন্থে খাজা সাহেব কর্তৃক বর্ণিত দুইজন ওয়ালীউল্লাহ্র ঘটনাও উল্লিখিত হইয়াছে, তন্মধ্যে একজন ওযুর মধ্যে আঙ্গুল খিলাল করা সুন্নাত বিস্মৃত হইয়াছিলেন এবং অপর ব্যক্তি মসজিদে দক্ষিণ পদের পরিবর্তে প্রথমে বামপদ স্থাপন করিয়াছিলেন এবং এই দুই অপরাধের ফলে তাঁহারা অতিশয় লাঞ্ছিত হইয়াছিলেন’।  
২০। সুলতানুল মাশায়েখ হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশাবন্দী মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ বুখারীর (-৭৯১ হিজরী) উক্তি কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী বর্ণনা করিয়াছেন যে হযরত খাজা আদেশ করিয়াছেন,
هو عبأدت كه موافق سئت امت، ان عبأدت مفيد لاراست برائے ازاله رذائل عناصره تصفية باطن وتزكهة لفس وحصرل قوب الهى، لهذا بدعت فى العادات مثل بدعت قبيحه اجتثاب من كند كه رسول فرمود صلى الله عليه وسلم: كل محدث بدعة وكل بدعة ضلالة، په نتيجه اين حديث آلست كه: كل محدث ضلالة، وبديهى است كه: لاشىئ من الضلالة بهداية فلا شئي من المحدث بهداية!  
‘হাদীছের ব্যবস্থামত যে ইবাদত প্রতিপালিত হয় তাহা ইন্দ্রিয়াদির নীচতার বিমোচন, অন্তর  লোকের শোধন, আধ্যাতিœক বিশুদ্ধতা অর্জন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের পক্ষে অধিকতর ফলপ্রসূ হইয়া থাকে। অতএব জঘন্য বিদ‘আতসমূহের ন্যায় ইবদতের বিদ‘আতসমূহও বর্জন করিয়া চলিতে হইবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলিয়াছেন, সমুদয় নব আবিষ্কৃত কার্য বিদ‘আত এবং সমুদয় বিদ‘আত বিভ্রান্তি গোমরাহী। অতএব এই হাদীছের সারকথা দাঁড়াইল এই যে, সমুদয় নব আবিষ্কৃত বিষয়ই গোমরাহী। আর এ কথাও সুস্পষ্ট যে, গোমরাহীর কোন অংশ বা প্রকরণের হিদায়েতের অবকাশ নাই, অতএব ইহা নিশ্পাদিত হইল যে, নব-আবিষ্কৃত বিষয়ের কোন অংশ বা প্রকরণে হিদায়েতের স্থান নাই। খাজা সাহেব আরও বলিয়াছেন,
ولمز آمده: ان القول لايقبل مالم يعمل به، وكلاهما لايقبلان بدون النية، والقول والعمل والنية لا يقبل مالم بوافق السنة، وپوں اعمال غير مطابقه سنت مقبول لباشد، ثواب برآں مرلب لشود، واگر مشقت رادر حصول دفع رذائل مماخلت بردے، رسول كريم صلى الله علنيه وسلم ازلر منع لفر مودے،-
‘ইহাও কথিত হইয়াছে যে, আমল না করা পর্যন্ত শুধু উক্তি গ্রাহ্য নয়, আবার উক্তি ও আচরণ সংকল্পের বিশুদ্ধতা ছাড়া গ্রাহ্য নয়। পুনশ্চ উক্তি, আচরণ এবং সকলের বিশুদ্ধতা হাদীছের নির্দেশ অনুযায়ী না হওয়া পর্যন্ত গ্রাহ্য নয়। সুতরাং সুন্নাতের প্রতিকূল ইবাদত যখন গ্রাহ্য হয় না, তখন সে ইবাদত ছওয়াবও হইতে পারে না। আতœাশুদ্ধির জন্য কৃচ্ছ্রসাধনাই যদি উপকারী হইত তাহা হইলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কিছুতেই উহা নিষেধ করিতেন না। হযরত খাজা নকশাবন্দী আরও বলিয়াছেন,
اگر كسے گويد كه ما برباضت شاقه  ترقيات مى بينهم ومكا شفات وصفاثے باطن مى بابهم كه الكاراں لمى لارانهم گرد، گفه شودكه كشف كرنيه وخرق عادات وتصرف در عالم كون وفساد از رباضت دست دهد، الهذا حكمائے اشراقمين وجوگيان هيد بدان متصف مى شدلد واين كمالات ازنظر اعتبار اهل الله ساقط است، بجوے  ئمى خوند، چه رذا ئل لفس ودفع وقتل شيطان ووساوس بے ثور سنت ممكن نيت: مخال است سعدى كه راه صفا، توان رفت جزبر بشے مصطفے!
‘যদি কাহারও এরূপ ধারণা হয় যে,আমরা কৃচ্ছ্রসাধনা দ্বারা উন্নতি লাভ করিয়া থাকি এবং কাশ্ফ ও আধ্যাতিœক শোধন অর্জন করিতে পারি আর ইহা এরূপ প্রত্যক্ষীভূত যে, আমরা কিছুতেই এ কথা অস্বীকার করিতে পারিনা। তাহা হইলে একথার উত্তরে তাহাকে বলা হইবে যে, প্রাকৃতিক ব্যাপার সমূহে কাশ্ফ লাভ করা এবং তথাকথিত অপ্রাকৃতিক ঘটনা সংঘটিত করা এবং সংহারশীল ও স্থিতিমান জগতে কোন ব্যতিক্রম সৃষ্টি করা যোগ ও তপস্যার সাহায্যে সম্পূর্ণ সম্ভবপর। গ্রীক ও রোমক দার্শনিক এবং ভারতের যোগসিদ্ধ পুরুষদের এরূপ ক্ষমতা ছিল, কিন্তু মুসলমান সাধক ম-লীর কাছে এ ক্ষমতার কোন মূল্যই নাই, একটি যবের খোসার বিনিময়েও তাঁহারা এ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করিতে চাহেন না। কারণ আতœশুদ্ধি অর্জন এবং শয়তান ও উহার ধোঁকার নিধনসাধন সুন্নাতের নূর ব্যতিরেকে সম্ভবপর নয়- হে সা‘দী, মুছতফা (ছাঃ) পদাংকানুসরণ ছাড়া শোধন মার্গে অগ্রণী হওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব।  
[দ্রষ্টব্য : লেখক প্রণীত ‘আহলেহাদীছ পরিচিতি’ গ্রন্থ, পৃঃ ১৪৩-১৫২]

আরও