খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ)
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আক্বীদা বা বিশ্বাস :
সালাফে
ছালেহীনের মধ্যে যারা আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ব্যাপারে সঠিক আক্বীদা পোষণ
করেছেন, ইমাম বাগাবী (রহঃ) তাদের অন্যতম। তাঁর গ্রন্থ সমূহের হাদীছগুলি
পর্যালোচনা করলে আমাদের নিকট তা পরিস্ফুটিত হয়ে উঠে। যেমন ইমাম মুসলিম বাব
রচনা করেছেন باب تَصْرِيفِ اللَّهِ تَعَالَى الْقُلُوبَ كَيْفَ شَاء এই
বাবে আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মাঝখানে মানুষের কলবগুলিকে ইচ্ছামত আবর্তনের কথা
বলা হয়েছে। ইমাম বাগাবী তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে এ বিষয়ে পৃথক পৃথক
বাব রচনা করেছেন। আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাতে নববীতে আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর
ব্যাপারে তাবীল করা বা আল্লাহর সাথে কাউকে সাদৃশ্য করা প্রদান থেকে
সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। ইমাম বাগাবী তাঁর شرح السنة গ্রন্থে বলেন,
ويجب أن يعتقد أن الله عز اسمه قديم بجميع أسمائه وصفاته لا يجوز له اسم
حادث ولا صفة حادثة- ‘এটা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে, আল্লাহ তাঁর যাবতীয় নাম ও
গুণাবলীতে চিরন্তন। তাঁর নতুন নাম ও গুণাবলী কল্পনা করা বৈধ নয়’।
ইমাম বাগাবীর সালাফে ছালেহীন-এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে আলেমগণ সাক্ষ্য
প্রদান করেছেন। ইমাম যাহাবী বলেন, على منهاج السلف حلاً وعقداً ‘তিনি
আক্বীদা ও সমাধান তালাশের দিক দিয়ে সালাফে ছালেহীনের মানহাজের উপরে ছিলেন’
।
আল্লামা সুবকী বলেন, سالكا سبيل السلف‘তিনি সালাফে ছালেহীনের পথের অনুসারী ছিলেন’।
ইমাম নুক্বতা বলেন, إمام حافظ ثقة صالح ‘তিনি ছিলেন ইমাম, হাফেয, বিশ্বস্ত ও সৎ’।
মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী মিশকাতের মুকাদ্দামাতে বলেন, انه كان علي طريقة السلف الصالحين ‘তিনি সালাফে ছালেহীনের পথে ছিলেন’।
ইমাম বাগাবী (রহঃ)-এর বৈশিষ্ট্য :
ইমাম বাগাবী (রহঃ)-কে কেউ বলেছেন, ركن الدين (দ্বীনের স্তম্ভ)। কেউ
বলেছেন, قَامِعُ الْبِدْعَة (বিদ‘আতের উৎখাতকারী)। তবে তাঁর গুণাগুণ ও
বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে তাঁর محيي السنة(সুন্নাহর পুনর্জীবনদানকারী)
উপাধিটি তাঁর জীবন চরিতকে সৌন্দর্যম-িত করেছে। ইবনে খাল্লিকান দ্ব্যর্থহীন
কণ্ঠে বলেন, ظهير الدين (তিনি) দ্বীনের সাহায্যকারী। তিনি আল্লাহর
কিতাব ও রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসারী এবং শাফেঈ মাযহাবের
অন্যতম ইমাম। আলেমগণ তাঁর নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করেছেন। তবে ইমাম বাগাবী
তাঁর ইমামের ব্যাপারে কোন পক্ষপাতিত¦ করেননি। বরং তিনি দলীলের অনুসরণ
করেছেন এবং তাদেরকে গ্রহণ করেছেন যারা অভ্রান্ত সত্যের একমাত্র চূড়ান্ত উৎস
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বাণীকে একনিষ্ঠভাবে গ্রহণ করার আহবান
জানিয়েছেন।
মনীষীগণের দৃষ্টিতে ইমাম বাগাবী (রহঃ) :
ইমাম বাগাবী (রহঃ) সম্পর্কে মনীষীগণের অভিমত সমূহ নিম্নে প্রদত্ত হ’ল :
১. হাফেয শামসুদ্দীন যাহাবী (রহঃ) বলেন,
وكان الشيخ الإمام، العلامة القدوة الحافظ شيخ الإسلام، مُحيي السنة سيداً
إماما عالماً علامة زاهداً وله القدم الراسخ في التفسير والباع المديد في
الفقه-
‘শায়খ, ইমাম, সুবিজ্ঞ, আর্দশবান, হাফেয, শায়খুল ইসলাম,
সুন্নাহর পুনর্জীবনদানকারী বাগাবী ছিলেন নেতা, আলেম, দুনিয়া বিমুখ, বিজ্ঞ
প-িত, তাফসীর শাস্ত্রে তাঁর সুদৃঢ় পদচারণা, অগ্রগামীতা এবং ফিক্বহে দক্ষতা
ছিল’।
২. আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) বলেন,
وبورك له في تصانيفه، لقصده الصالح، فإنه كان من العلماء الربانيين، ذا تعبد ونسك، وقناعة باليسير -
‘ইমাম বাগাবী (রহঃ) এর সৎ বা নেক ইচ্ছার জন্য তাঁর রচনার মধ্যে বরকত
প্রদান করা হয়েছে। কেননা তিনি অল্পে তুষ্ট, ধার্মিক, ইবাদতগুযার ও
আল্লাহভীরু আলেমদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন’।
তিনি আরো বলেন,
كان إماماً في التفسير، إماماً في الحديث، إماماً في الفقه-
‘তিনি তাফসীর, হাদীছ ও ফিকহ শাস্ত্রের ইমাম ছিলেন’।
৩. ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, وكان علامة زمانه، ديِّناً، ورعاً، زاهداً،
عابداً، صالحاً ‘তিনি সমকালীন সুবিজ্ঞ আলেম, আল্লাহভীরু, দুনিয়ার প্রতি
উদাসীন, আবেদ ও একজন সৎ ব্যক্তি ছিলেন’।
৪. ইবনু খাল্লিকান (রহঃ) বলেন,كان بحرا في العلوم ‘তিনি ছিলেন জ্ঞানের সমুদ্র সদৃশ’।
৫. ইবনুল ইমাদ হাম্বলী বলেন,
المحدث المفسر صاحب التصانيف، عالم أهل خرسان -
‘তিনি মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, লেখক ও একজন খুরাসানী আলেম’।
ইমাম বাগাবী (রহঃ)-এর ইবাদত ও তাক্বওয়া :
ইমাম
বাগাবী (রহঃ) ছিলেন স্বল্পভোজী, শিষ্যগণের প্রতি অধিক ইহসানকারী এবং
অত্যন্ত পরহেযগার ব্যক্তি। তিনি ছিলেন নীতিবান ও দ্বীনদার। তাঁর পরিধেয়
পোশাক ছিল অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিছন্ন। তিনি অল্পে তুষ্ট ছিলেন। তিনি
পবিত্রতা ছাড়া দারস প্রদান করতেন না। তিনি পোশাকের ক্ষেত্রে অতি সাধারণ
ছিলেন। তিনি সূতী বস্ত্র পরিধান করতেন। তিনি ছোট টুপি বা পাগড়ী ব্যবহার
করতেন।
তিনি আরো বলেন,
وكان مقتصدا في لباسه، له ثوب خام، وعمامة صغيرة-
‘পোশাক-আষাকে তিনি মিতব্যয়ী ছিলেন। তিনি সূতী কাপড় ও ছোট পাগড়ী পরতেন’।
ইবনে খাল্লিকান বলেন, ‘তিনি পবিত্রতা ছাড়া দারস প্রদান করতেন না।
শাযারাতুয যাহাব প্রণেতা বলেন, كان سيدا زاهداً قانعا-
‘তিনি ছিলেন নেতা, দুনিয়াবিমুখ ও অল্পে তুষ্ট’।
ইমাম বাগাবী (রহঃ)-এর মাযহাব :
ইমাম
বাগাবী (রহঃ) কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন তা নিয়ে রিজাল শাস্ত্রবিদগণের
মধ্যে তেমন মতপার্থক্য দেখা যায় না। কেননা অধিকাংশ রিজাল শাস্ত্রবিদগণ তাকে
শাফেঈ মাযহারের অনুসারী বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইমাম যাহাবী বলেন,
أن عقيدته هي عقيدة أهل السنة والجماعة. وأما مذهبه فقد كان شافعياً بل من أئمة المذهب الشافعي
‘তাঁর আক্বীদা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত-এর আক্বীদা। আর তাঁর মাযহাব
হ’ল তিনি শাফেঈ ববং শাফেঈ মাযহাবের ইমামগণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন’।
অবদান :
ইমাম
বাগাবী (রহঃ) তাফসীর, হাদীছ ও ইলমে ফিকহে নানামুখী অবদান রেখে এই পৃথিবী
থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন। তিনি পরবর্তী আলেমদের জন্য এক মহান আদর্শ। তাঁর
রচনাগুলি দলীলের দিক থেকে অত্যন্ত সুদৃঢ় এবং ভাষাগত দিক থেকে অত্যন্ত সহজ।
তিনি ছহীহ দলীলের নিকট আতœসমর্পণকারী। আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) বলেন,
كان يدعو إلى الاعتصام بالكتاب والسنة اللذين هما أصل الدين
‘তিনি পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার দিকে মানুষকে আহ¦ান করতেন। কেননা এই দু’টিই দ্বীনের মূল ভিত্তি’।
তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। নি¤েœ তাঁর গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পেশ করা হ’ল।
১. : এ গ্রন্থটি ইমাম শাফেঈর (রহঃ)-এর ফিকহের উপর রচিত। শাফেঈ মাযহাবের
অন্যতম ও সুপ্রসিদ্ধ গ্র্রন্থ এটি। ইমাম নববী (রহঃ) তাঁরروضة الطالبين
নামক গ্রন্থে ইমাম বাগাবীর উক্ত গ্রন্থ থেকে অনেক কিছু গ্রহণ করেছেন।
গ্রন্থটিকে শিহাব আহমাদ বিন মুহাম্মাদ ইস্কানদারী ৬৯৩ সালে বৃহৎ চার খ-ে
সংক্ষেপায়িত করে ৫৯৯ হিজরীতে ‘দারুল কুতুব আল-মিছরিয়াহ’ থেকে প্রকাশ করেন।
২. ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) বলেন ,
معالم التنزيل وهو تفسير متوسط نقل فيه عن مفسري الصحابة و التابعين و من بعدهم-
‘মা‘আলিমুত তানযীল মধ্যম মানের একটি তাফসীর গ্রন্থ। তিনি এই গ্রন্থে
ছাহাবী, তাবেঈ ও তাদের পরবর্তী মুফাসসিরগণের নিকট থেকে নকল করেছেন’।
ইমাম বাগাবী (রহঃ)-এর উক্ত তাফসীর সম্পর্কে ইমাম ইবনে তাইমিয়াকে জিজ্ঞাসা
করা হয়েছিল যে, কোন তাফসীর কুরআন ও হাদীছের নিকটবর্তী। তিনি উত্তর প্রদান
করে বলেন,
أما التفاسير الثلاثة المسؤول عنها، فأسلمها من البدعة والاحاديث الضعيفة البغوي -
‘জিজ্ঞাসিত তিনটি তাফসীরের মধ্যে বাগাবীর তাফসীর হ’ল বিদ‘আত ও যঈফ হাদীছ
হতে মুক্ত বা নিরাপদ’। ইমাম বাগাবী (রহঃ) তাঁর গ্রন্থে কুরআনের অর্থ বুঝার
জন্য কুরআন দ্বারা অথবা হাদীছ দ্বারা অথবা ছাহাবীগণের কথার দ্বারা অথবা
তাবেঈন ও মুজতাহিদগণের মতামত দ¦ারা আয়াতসমূহের ব্যখ্যা করেছেন। তিনি এ
গ্রন্থে বিভিন্ন ক্বিরাআতের উল্লেখ করেছেন। তিনি এই গ্রন্থে অনেক ইসরাঈলী
বর্ণনা ও প্রদান করেছেন।
৩. شرح السنة : এখানে তিনি প্রায় ৪৪২২টি
হাদীছ সন্নিবেশন করেছেন। এই গ্রন্থে তিনি জটিল ও সন্দেহযুক্ত হাদীছের
বিশ্লেষণ ও সমাধান পেশ করেছেন। দুর্বোধ্য হাদীছের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন
এবং হাদীছের আহকাম বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর এই কিতাবটি ফিক্বহের
ধারাবাহিকতা অনুযায়ী লিপিবদ্ধ। তিনি এই গ্রন্থে আলেমদের মতামত তুলে ধরেছেন।
হাদীছের সনদ উল্লেখ করেছেন। তিনি এই গ্রন্থে ছাহাবী, তাবেঈ, ইমামগণ ও
মুজতাহিদগণের মতামত তুলে ধরেছেন। এই কিতাবের ভূমিকায় ইমাম বাগাবী (রহঃ)
বলেন,
شرح السنة يتضمن ان شاء الله كثيرا من علوم الحديث فوائد الاخبار المروية عن رسول الله صلي الله عليه و سلم من حل مشكلها-
‘শারহুস স্ন্নুাহ গ্রন্থটি প্রচুর হাদীছ সম্বলিত ও সমস্ত সমস্যা নিরসনে
রাসূল (ছাঃ) হাদীছই একমাত্র অবলম্বন হিসাবে সন্নিবেশিত হয়েছে’।
৪.
المصابيح/ مشكاة : এটি হাদীছ শাস্ত্রের একটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ। এই গ্রন্থের
জন্য ইমাম বাগাবীর সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি খ্যাতি লাভ করেন। এই
গ্রন্থে তিনি অনেক হাদীছের সন্নিবেশ ঘটান। তবে সনদ উল্লেখ করেননি। এই
কিতাবে তিনি বিষয়বস্তুর ক্রমানুযায়ী হাদীছ সংকলন করেছেন। প্রতি বাবে
প্রথমে ছহীহ হাদীছ অর্থাৎ ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিম-এর হাদীছ গ্রহণ
করেছেন। তারপর হাসান হাদীছ অর্থাৎ সেই সকল হাদীছ যা সুনানে আবু দাঊদ, জামে
তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহতে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো উল্লেখ করেছেন। তাঁর এই
গ্রন্থে অনেক গরীব হাদীছও রয়েছে। তবে তিনি বিতর্কিত হাদীছ থেকে বিরত
থেকেছেন। বিশেষ করে তিনি হাদীছে মুনকার, মাওযূ হাদীছ সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক
করেছেন।
তাঁর এই গ্রন্থে সর্ম্পকে তাফসীরে বাগাবীতে বলা হয়েছে,
هو كتاب حديث جيد في معناه معتمد علي نقله-
‘এটি হাদীছের একটি সুন্দর ও প্রামাণ্য গ্রন্থ’।
এই কিতাব সম্পর্কে ইমাম বাগাবী আরো বলেন, ‘এই কিতাব লেখার উদ্দেশ্য হ’ল
শরী‘আতপন্থী লোকদের জন্য এমন একটি সম্পদ প্রস্তত করা যা আল্লাহর সন্তুষ্টি
অনুযায়ী জীবন যাপন করার জন্য তাদের সাহায্য করতে পারে’। কিতাবটি বুলাক
(১২১৪ হিঃ) ও কায়রোতে (১৩১৮ হিঃ) মুদ্রিত হয়েছে। খতীব তাবরীযী সম্পাদনা
করেছেন। তিনি প্রায় প্রত্যেক বাবে হাসান হাদীছ সংযোজন করেছেন এবং এর নাম
প্রদান করেছেন মিশকাতুল মাছাবীহ। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ভাষায় গ্রন্থটির
অনেক সংস্করণ বের হয়েছে। ইংরেজী সংস্করণও কলিকাতায় এ.এন. মেথিউস ১৮০৯ সালে
প্রকাশ করেন। সর্বশেষ ১৮৯৯ সালে শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী তাহক্বীককৃত
মিশকাত মাকতাবায়ে ইসলামী বৈরূত থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়াও তিনি
হাদীছ শাস্ত্রের অনেক বই জাতিকে উপহার দিয়েছেন। তন্মধ্যে الأنوار في شمائل
المختار , الجامع بين الصحيحين, الأربعين حديثا বইগুলি অন্যতম।
ইন্তিকাল :
তিনি
খুরাসানের নিকটবর্তী শহর মারবুর রওজ নামক স্থানে শাওয়াল মাসে ৫১৬ হিজরীতে
মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে তাঁর শিক্ষক শায়খ হুসাইন মাক্ববুরাহ আত-তালকান-এর
কবরের পাশে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স মোটামুটি ৭০-এর অধিক হয়েছিল
বলে মুহাদ্দিছগণ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ইবনে খাল্লিকান তাঁর মৃত্যু সাল
৫১০ হিঃ বলে উল্লেখ করেছেন।
সুবকী ৫১৬ হিঃ বলেছেন।
তাযকিরাতুল হুফ্ফাজ প্রনেতা বলেন, তিনি ৮০ বছর অতিবাহিত করেছিলেন।
তাফসীর শাস্ত্রে তাঁর অবদান ঃ
ইমাম
বাগাবী (রহঃ) একজন উচুঁ মানের মুফাসসির। তাফসীরে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
তাঁর তাফসীরে বাগাবীই মূলত মা‘আলিমুত তানযীল একটি মধ্যম মানের তাফসীর
গ্রন্থ।
এ গ্রন্থটি অনেকবার বিভিন্ন ভাষায় মুদ্রিত হয়েছে। সর্বশেষ
বোম্বে থেকে দুই খ-ে ১৩০৯ হিজরী মোতাবেক ১৮৯১ সালে এর একটি সংস্করণ বের হয়।
তিনি এই তাফসীরে ছাহাবী, তাবেঈ ও তাদের পরবর্তী বিখ্যাত মুফাসসিরদের
কথা নকল করেছেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরআনের বাণীকে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা
করেছেন। ছহীহ হাদীছকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।
শায়েখ ড. ছালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযানকে ইমাম বাগাবীর ‘তাফসীরে বাগাবী’ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
هذا كتابٌ جليلٌ، وهو علىٰ مذهب أهل السُّنة والجماعة، فهو تفسيرٌ جليلٌ، ومرجعٌ قيِّمٌ.
‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের পদ্ধতি
অনুযায়ী লিখিত। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তাফসীর ও মূল্যবান
তথ্যভাণ্ডার' (সূত্র : ইন্টারনেট)।
তাফসীর শাস্ত্রে তাঁর পা-িত্য এত অধিক পরিমাণ
ছিল যে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তিনি এমন এক পদ্ধতিতে কুরআনের আয়াতের
তাফসীর করেছেন, যে পদ্ধতি সালাফে ছালেহীন ব্যবহার করেছেন।
তাঁর এই তাফসীর পর্যালোচনা করলে কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন :
১. তিনি এই তাফসীরে অত্যন্ত সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন।
আয়াতের ব্যাখ্যা খোলাছা করার জন্য তিনি দলীল হিসাবে আয়াত, হাদীছ,
ছাহাবীগণের কথা ও তাবেঈন-এর উক্তি উল্লেখ করেছেন।
২. তিনি কোন স্থানে
বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ তাফসীর করেছেন আবার কোন স্থানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
করেছেন। যেমন : আল্লাহ তা‘আলা বলেন (غير المغضوب عليهم) এই আয়াতের
ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, الغضب অর্থাৎ আল্লাহদ্রোহীদেরকে শাস্তি দেয়া’।
৩. আয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট কারণ, কাহিনী ও বিষয়বস্তুকে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন।
৪. তিনি সুন্নাত পালনকারীদের রায় পর্যালোচনা করেছেন এবং যারা সুন্নাতের
বিপরীত মতামত ব্যক্ত করে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য দলীল পেশ করেছেন ।
৫. তিনি আহকাম বর্ণনার ক্ষেত্রে ফকীহদের মতামত উল্লেখ করেছেন। সকল ক্ষেত্রে তিনি শাফেঈ মাযহাবের ফকীহদের প্রাধান্য দিয়েছেন।
৬. তিনি তাঁর তাফসীরে বিভিন্ন তাফসীর থেকে অনেক বর্ণনা এনেছেন। উদ্দেশ্য হ’ল মিথ্যা তাফসীরের ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক।
উপসংহার :
ইমাম
বাগাবী (রহঃ) ছিলেন হিজরী ষষ্ঠ শতাব্দীর অন্যতম হাদীছ সমালোচক, হাফিয,
মুহাদ্দিছ, ইমাম ও ফক্বীহ। তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে হাদীছ পর্যালোচনা
করেছেন। তিনি শিক্ষালাভ করার জন্য অসংখ্য দেশ ভ্রমণ করেছেন। ও শিক্ষকদের
নিকট গমন করেছেন। তিনি অত্যন্ত প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি
অত্যন্ত পরহেযগার ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর সংকলিত মাসাবীহুস সুন্নাহ একটি
বিখ্যাত গ্রন্থ। তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ট গ্রন্থ তাফসীরে বাগাবী। এই গ্রন্থ
দুটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাঁর সকল গ্রন্থ কুরআন ও সুন্নাহ-এর
আকর।
[ লেখক : এম.এ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ]