শাফা‘আত

আসাদুল্লাহ আল-গালিব 10054 বার পঠিত

ভুমিকা : শাফা‘আত পাপীতাপীদের জন্য এক অভাবনীয় প্রাপ্তি। শাফা‘আতের কান্ডারী হ’লেন মুহাম্মাদ (ছাঃ), যিনি রহমাতুল লিল আলামীন হয়ে জগৎবাসীর জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। নিম্নে শাফা‘আত ও শাফা‘আতের হকদারদের সম্পর্কে আলোচনার প্রয়াস পাব।

শাফা‘আত কী? : শাফা‘আত আরবী শব্দ। অর্থ সুফারিশ, মধ্যস্থতা। পরিভাষায় মালিকের নিকট অন্যের প্রয়োজনীয় কিছু আদায়ের জন্য মধ্যস্থতা করা।[1]

শাফা‘আত সম্পর্কে হাদীছ : রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, حَتَّى إِذَا خَلَصَ الْمُؤْمِنُونَ مِنَ النَّارِ فَوَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ بِأَشَدَّ مُنَاشَدَةً لِلَّهِ فِى اسْتِقْصَاءِ الْحَقِّ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ لِلَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لإِخْوَانِهِمُ الَّذِينَ فِى النَّارِ يَقُولُونَ رَبَّنَا كَانُوا يَصُومُونَ مَعَنَا وَيُصَلُّونَ وَيَحُجُّونَ فَيُقَالُ لَهُمْ أَخْرِجُوا مَنْ عَرَفْتُمْ.  ‘শেষ নাগাদ মুমিনরা দোযখ থেকে নাজাত পেয়ে যাবে। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ নিজের অধিকার আদায়ের দাবীতে ততটা অনমনীয় নও, যতটা অনমনীয় হবে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মুমিনরা তাদের সে সব ভাইদের মুক্তির জন্যে যারা কিনা দোযখে চলে গেছে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রভু, তারা আমাদের সাথে ছিয়াম পালন করতে, ছালাত পড়ত এবং হজ্জ করত। তখন তাদেরকে বলা হবে, ‘যাও, তোমরা যাদেরকে চেন, তাদেরকে বের করে নিয়ে আস’।[2]

পবিত্র কুরআনে শাফা‘আত : মহান আল্লাহ বলেন, يَوْمَئِذٍ لَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلًا ‘সেদিন দয়াময় (আল্লাহ) যাকে অনুমতি দিবেন এবং যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন, সে ব্যতীত কারু সুফারিশ কোন কাজে আসবে না’ (ত্বহা ২০/১০৯)। মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ حَتَّى إِذَا فُزِّعَ عَنْ قُلُوبِهِمْ قَالُوا مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ قَالُوا الْحَقَّ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ  (ক্বিয়ামতের দিন) তার নিকটে কারও কোন সুফারিশ কাজে লাগবে না, তবে যাকে তিনি অনুমতি দিবেন তিনি ব্যতীত। অবশেষে যখন তাদের মন থেকে ভয় দূর হবে, তখন তারা বলাবলি করবে, তোমাদের প্রতিপালক কি বললেন? জবাবে তারা বলবে, তিনি সত্য বলেছেন। আর তা এই যে, তিনিই সর্বোচ্চ ও মহান’ (সাবা ৩৪/২৩)

শারঈ দৃষ্টিকোন থেকে রাসূল (ছাঃ)-এর খাছ শাফা‘আত :

(ক) বিশ্বাসীদের জন্য :

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত একদা রাসুলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সামনে গোশত আনা হ’ল এবং তাকে সামনের রান পরিবেশন করা হ’ল। তিনি এটা পছন্দ করতেন এবং তিনি তা থেকে কামড় দিয়ে খেলেন। এরপর বললেন, আমি হব ক্বিয়ামতের দিন মানবকুলের সরদার। তোমাদের কি জানা আছে তা কেন? ক্বিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষ এমন এক ময়দানে সমবেত হবে, যেখানে একজন আহবানকারীর আহবান সকলে শুনতে পাবে এবং সকলেই একসঙ্গে দৃষ্টিগোচর হবে। সূর্য নিকটে এসে যাবে। মানুষ এমনই কষ্ট-ক্লেশের সম্মুখীন হবে, যা অসহনীয় ও অসহ্যকর হয়ে পড়বে।

তখন লোকেরা বলবে, তোমরা কি বিপদের সম্মুখীন হয়েছ তা কি দেখতে পাচ্ছ না? তোমরা কি এমন কাউকে খুঁজে বের করবেনা যিনি তোমাদের রবের কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশকারী হবেন? কেউ কেউ অন্যদের বলবে যে, আদমের কাছে চল। তখন সকলে তার কাছে এসে তাকে বলবে, আপনি আবুল বাশার। আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে স্বীয় কুদরতি হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তার রুহ আপনার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলে তারা আপনাকে সিজদা করেন। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে, আমরা কিসের মধ্যে আছি? আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কি অবস্থায় পৌঁছেছি?

তখন আদম (আঃ) বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হননি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি অমান্য করেছি। নফসি, নফসি, নফসি (আমি নিজেই সুপারিশ প্রার্থী), তোমরা অন্যের কাছে যাও। তোমরা নূহ (আঃ)-এর কাছে যাও।

তখন সকলে নূহ (আঃ)-এর কাছে এসে বলবে, হে নূহ (আঃ)! নিশ্চয়ই আপনি পৃথিবীর মানুষের উদ্দেশ্যে প্রেরিত প্রথম রাসুল। আর আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে পরম কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে অভিহিত করেছেন। সুতরাং আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে  কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হননি, আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আমার একটি গ্রহণীয় দো‘আ ছিল যা আমি আমার কওমের ব্যাপারে করে ফেলেছি। (এখন) নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা ইবরাহীম (আঃ)-এর কাছে।

তখন তারা ইবরাহীম (আঃ)-এর কাছে এসে বলবে, হে ইবরাহীম (আঃ)! আপনি আল্লাহর নবী এবং পৃথিবীর মানুষের মধ্যে আপনি আল্লাহর বন্ধু। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুফারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হন নি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আর আমি তো তিনটি মিথ্যা বলে ফেলেছিলাম। বর্ণনাকারী আবু হাইয়ান তাঁর বর্ণনায় এগুলোর উল্লেখ করেছেন। (এখন) নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা মুসার কাছে।

তারা মুসার কাছে এসে বলবে, হে মুসা (আঃ)! আপনি আল্লাহর রাসুল। আল্লাহ আপনাকে রিসালাতের সম্মান দান করেন এবং আপনার সাথে কথা বলে সমগ্র মানব জাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুফারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হন নি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আর আমি তো এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম। যাকে হত্যা করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়নি। (এখন) নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা ঈসা (আঃ) এর কাছে।

তারা ঈসার কাছে এসে বলবে, হে ঈসা (আঃ)! আপনি আল্লাহর রাসুল এবং কালেমা, যা তিনি মরিয়ম (আঃ)-এর উপর ঢেলে দিয়েছিলেন। আপনি রূহ। আপনি দোলনায় থেকে মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আজ আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুফারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হননি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। তিনি নিজের কোন গুনাহের কথা বলবেন না।  নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা মুহাম্মদ (ছাঃ) এর কাছে।

তারা মুহাম্মদ (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মদ (ছাঃ)! আপনি আল্লাহর রাসুল ও শেষ নবী। আল্লাহ তা‘আলা আপনার আগের ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুফারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কিসের মধ্যে আছি? তখন আমি আরশের নীচে এসে আমার রবের সামনে সিজদা দিয়ে পড়ব।

তারপর আল্লাহ তা‘আলা তার প্রশংসা এবং গুণগানের এমন সুন্দর পদ্ধতি আমার সামনে খুলে দিবেন যা এর আগে অন্য কারও জন্য খুলেন নি। এরপর বলা হবে, হে মুহাম্মদ (ছাঃ)! তোমার মাথা উঠাও। তুমি যা চাও তোমাকে দেওয়া হবে। তুমি সুফারিশ কর, তোমার সুফারিশ কবুল করা হবে। এরপর আমি মাথা উঠিয়ে বলব, হে আমার রব! আমার উম্মত! হে আমার রব! আমার উম্মত! হে আমার রব! আমার উম্মত! তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ (ছাঃ) আপনার উম্মতের মধ্যে যাদের কোন হিসাব নিকাশ হবে না, তাদেরকে জান্নাতের দরজাসমূহের ডান পাশের দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। এ দরজা ছাড়া অন্যদের সাথে অন্য দরজায়ও  তাদের প্রবেশের অধিকার থাকবে’।[3]

(খ) জান্নাতীদের জন্য :

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ يَشْفَعُ فِى الْجَنَّةِ  লোকদের বেহেশতে প্রবেশের জন্যে আমিই তাদের সর্বপ্রথম সুফারিশকারী’।[4]

(গ) চাচা আবু তালিবের জন্য :

‘আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যখন তাঁরই সামনে তাঁর চাচা আবূ তালিবের আলোচনা করা হ’ল, তিনিই বললেন, لَعَلَّهُ تَنْفَعُهُ شَفَاعَتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ  فَيُجْعَلُ فِى ضَحْضَاحٍ مِنَ النَّارِ يَبْلُغُ كَعْبَيْهِ يَغْلِى مِنْهُ دِمَاغُهُ আশা করি কিয়ামতের দিনে আমার সুপারিশ তার উপকারে আসবে। অর্থাৎ আগুনের হালকা স্তরে তাকে নিক্ষেপ করা হবে, যা তার পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পোঁছাবে এবং তাতে তার মগজ বলকাবে’।[5]

রাসূল (ছাঃ)-এর সাধারণ সুফারিশ :

(১) সাধারণ মুসলমান যারা তাদের মন্দ আমলের জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করেছেন, তারা রাসূলের সুফারিশে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবেন। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, عَنْ حُمَيْدٍ قَالَ سَمِعْتُ أَنَسًا رضى الله عنه قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ  صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ شُفِّعْتُ فَقُلْتُ يَا رَبِّ أَدْخِلِ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِى قَلْبِهِ خَرْدَلَةٌ فَيَدْخُلُونَ ثُمَّ أَقُولُ أَدْخِلِ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِى قَلْبِهِ أَدْنَى شَىْءٍ-  ‘নবী (সা)-কে আমি বলতে শুনেছি যে, ক্বিয়ামতের দিন যখন আমাকে সুফারিশ করার অনুমতি দেওয়া হবে তখন আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক! যার অন্তরে এক সরিষা পরিমাণ ঈমান আছে, তাকে তুমি জান্নাতে দাখিল কর। তারপর তাদেরকে জানণাতে দাখিল করা হবে। তারপর আমি বলব, তাকেও জান্নাতে প্রবেশ করাও, যার অন্তরে সামান্য ঈমানও আছে’।[6] 

(২) জান্নাতিদের স্তর বৃদ্ধিতে সুফারিশ :

হাদীছে এসেছে, উম্মে সালামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (ছাঃ) আবু সালামা (রাঃ)-এর কাছে গেলেন। তখন তার চোখগুলো উল্টো রয়েছে। রাসুল (ছাঃ) চোখগুলো বন্ধ করে দিলেন এবং বললেন, রূহ যখন নিয়ে যাওয়া হয়, তখন চোখ তার প্রতি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এ কথা শুনে তার পরিবারের লোকেরা উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলেন। তিনি বললেন, তোমরা নিজেদের জন্য অমঙ্গলজনক কোন দো‘আ কর না। কেননা ফিরিশতাগণ তোমাদের কথার উপর আমীন বলে থাকেন। তিনি তারপর বললেন, قَالَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لأَبِى سَلَمَةَ وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِى الْمَهْدِيِّينَ وَاخْلُفْهُ فِى عَقِبِهِ فِى الْغَابِرِينَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ وَافْسَحْ لَهُ فِى قَبْرِهِ. وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ হে আল্লাহ! তোমরা আবু সালামাকে মাফ করে দাও, হেদায়াহপ্রাপ্তদের মধ্যে তার দরজাকে বুলন্দ করে দাও এবং তার উত্তরাধিকারীদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি নিযুক্ত কর। হে রাববুল আলামীন! আমাদেরকে ও তাকে মাফ করে দাও, তার জন্য কবরকে প্রশস্ত করে দাও এবং তার কবরকে আলোকময় করে দাও’।[7]

রাসূল (ছাঃ) ব্যতীত অন্যদের শাফাআত :

(ক) ফিরিশতাদের শাফাআত :

মহান আল্লাহ বলেন, وَكَمْ مِنْ مَلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى ‘আকাশ সমূহে কত ফেরেশতা রয়েছে। তাদের কোন সুফারিশ কাজে আসবে না যতক্ষণ না আল্ল­াহ যাকে চান ও যার উপর সন্তুষ্ট হন তাকে অনুমতি দেন’ (নাজম ৫৩/২৬)

(খ) নবীদের সুফারিশ :

অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‘ফিরিশতারা, নবীগণ এবং মু’মিনরা সবাই শাফাআত করে অবসর হয়েছে’।[8]  

(গ) মুমিনদের সুফারিশ :

যেমন উপরোক্ত হাদীছে উল্লেখিত হয়েছে।[9] এছাড়া অপর এক হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,لَيَدْخُلَنَّ الْجَنَّةَ بِشَفَاعَةِ رَجُلٍ مِنْ أُمَّتِى أَكْثَرُ مِنْ بَنِى تَمِيمٍ  قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ سِوَاكَ قَالَ سِوَاىَ ‘আমার উম্মাতের এক ব্যক্তির শাফাআতে তামীম গোত্রের জনসংখ্যার চেয়েও অধিক লোক জান্নাতে যাবে। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই ব্যক্তি কি আপনি ব্যতীত অন্য কেউ? তিনি বলেনঃ আমি ব্যতীত’।[10]

 (ঘ) শহীদদের সুফারিশ :

হাদীছে এসেছে, لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللَّهِ سِتُّ خِصَالٍ يُغْفَرُ لَهُ فِى أَوَّلِ دَفْعَةٍ وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَيَأْمَنُ مِنَ الْفَزَعِ الأَكْبَرِ وَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الْوَقَارِ الْيَاقُوتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَيُزَوَّجُ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ زَوْجَةً مِنَ الْحُورِ الْعِينِ وَيُشَفَّعُ فِى سَبْعِينَ مِنْ أَقَارِبِهِ  ‘আল্লাহর কাছে শহীদদের জন্য রয়েছে ছয়টি বৈশিষ্ট্য। রক্ত ক্ষরণের প্রথম মূহূর্তেই তাকে মাফ করা হবে। জান্নাতে তার নির্ধারিত স্থান প্রদর্শন করা হবে। কবরের আযাব থেকে তাকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। সবচেয়ে মহাভীতির দিনে তাকে নিরাপদে রাখা হবে। তাঁর মাথায় সম্মানের তাজ পরিধান করানো হবে। এর একটি ইয়াকুত পাথর দুনিয়া ও এর সবকিছু থেকে উত্তম হবে; বাহাত্তর জন আয়তলোচনা হূরের সঙ্গে তার বিবাহ হবে। তার সত্তর জন নিকট আত্মীয় সম্পর্কে তার সুপারিশ কবুল করা হবে।[11]

(চ) মুমিনদের সন্তানদের সুফারিশ :

হাদীছে এসেছে, আবু হাসসান (রহঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বললাম, আমার দু’টি পুত্র সন্তান মারা গিয়েছে। আপনি কি রাসুল (ছাঃ)-এর তরফ থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করবেন, যাতে আমরা মৃতদের সস্পর্কে আমাদের অন্তরে সান্ত্বনা পেতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাদের জন্য তাদের ছোট সন্তানরা জান্নাতের প্রজাপতি তুল্য। তাদের কেউ কেউ তার পিতার সঙ্গে মিলিত হবে, অথবা তিনি বলেছেন পিতামাতা উভয়ের সঙ্গে মিলিত হবে। এরপর তার পরিধেয় বস্ত্র কিংবা হাত ধরবে, যেভাবে এখন আমি তোমার কাপড়ের আচল ধরছি। এরপর আর পরিত্যাগ করবে না, অথবা তিনি বলেছেন, আল্লাহ তাকে তার বাপ-মাসহ জান্নাতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত ছাড়বে না’।[12]

শেষ কথা : আল্লাহ রাববুল আলামীন কাল কেয়ামতের কঠিন দিনে আমাদের প্রত্যেককে শাফা‘আত লাভে ধন্য করুন, যেদিন রাসূল (ছাঃ)-এর সুফারিশ ব্যতীত কোন ব্যক্তি জান্নাত লাভ করতে পারবে না। আমীন!

[লেখক :  ৪র্থ বর্ষ, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া ও সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, ইবি, কুষ্টিয়া]


[1]. লিসানুল আরাব ৭/১৫১ পৃ.।

[2].  মুসলিম হা/১৮৩।

[3]. বুখারী হা/৪৭১২।

[4]. মুসলিম হা/১৯৬ ।

[5]. বুখারী হা/৩৮৮৫।

[6]. বুখারী হা/৭৫০৯।

[7]. মুসলিম হা/৯২০।

[8]. মুসলিম হা/১৮৩।

[9]. প্রাগুক্ত ।

[10]. তিরমিযী হা/২৪৩৮; ইবনে মাজাহ হা/৪৩১৬; আহমাদ হা/১৫৪৩০, ১৫৪৩১; দারেমী হা/২৮০৮।

[11]. তিরমিযী হা/১৬৬৩; ইবনে মাজাহ হা/২৭৯৯।

[12]. মুসলিম হা/২৬৩৫।



আরও