সাংগঠনিক মযবুতির উপায়
শেখ রফিকুল ইসলাম
লিলবর আল-বারাদী 10400 বার পঠিত
৪. ইসলামী পরিবার গঠনে অনুপ্রাণিত হওয়া :
পারিবারিক জীবন ব্যাতিরেকে মানব সভ্যতা কল্পনা করা যায় না। মানুষের
অস্তিত্বের জন্য পারিবারিক জীবন অপরিহার্য। সমাজের শান্তি-শৃংঙ্খলা,
স্থিতিশীলতা, উন্নতি-অগ্রগতি ইত্যাদি সুষ্ঠু পারিবারিক ব্যবস্থার উপরে
অনেকাংশে নির্ভরশীল। পারিবারিক জীবন অশান্ত ও নড়বড়ে হ’লে, তাতে ভাঙ্গন ও
বিপর্যয় দেখা দিলে সমাজ জীবনে নানা অশান্তি ও বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টি হ’তে
বাধ্য। তাই বলা হয়, পরিবার মানব সমাজের মূল ভিত্তি।
উত্তম পরিবারের জন্য চাই উত্তম পরিবার প্রধান। ইসলামী পরিবারে পিতা হ’লেন পরিবার-প্রধান এবং মাতা হ’লেন গৃহকত্রী। সন্তানরা বড় হ’লে তারা হবে পিতা-মাতার সাহায্যকারী ও পরামর্শদাতা। সকলে মিলে পরিবারকে এমনভাবে গড়ে তুলবে, যেন দিবারাত্রি সর্বদা রহমতের ফেরেশতা সেটিকে ঘিরে রাখে। আল্লাহর বিশেষ প্রশান্তি নাযিল হয় এবং যে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করতে পারেন। এজন্য সর্বাগ্রে পরিবার-প্রধান হিসাবে পিতাকে ‘উত্তম আদর্শ’ হ’তে হবে। অতঃপর মাতা, বড় ভাই, বড় বোন সবাইকে সমভাবে। তাই উত্তম পরিবার গঠনে সর্বাপেক্ষা উত্তম আদর্শ হলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)। যেমন আল্লাহ বলেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসকে কামনা করে ও অধিকহারে আল্লাহকে স্মরণ করে’ (আহযাব ৩৩/২১)।
শুধু সমাজ বা রাষ্ট্র নেতারাই নেতা নয়, পরিবারের প্রধানও নেতা বা দায়িত্বশীল। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকে স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’।[1]
জামা‘আতবদ্ধতার
গুরুত্ব হিসাবে পারিবারিক তা‘লীম একটি অমূল্য প্রশিক্ষণ। পারিবারিক ও
সামাজিক জীবনে শান্তি ও শৃংঙ্খলা বিধানের জন্য তাঁর ঘোষিত চিরন্তন মূলনীতি
হ’ল, বড়কে সম্মান করা ও ছোটকে স্নেহ করা। আর সেই ব্যক্তি উত্তম যে বড়দের
সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করে। আর যে তা না করে সে মুসলমানদের দলভুক্ত নয়।
এমর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বড়দের মর্যাদা বুঝে না ও
ছোটদের প্রতি স্নেহ প্রদর্শন করে না, সে মুসলমানের দলভুক্ত নয়’।[2]
মুমিন
পিতা-মাতার মাধ্যমে সৃষ্ট একটি পরিবারকে পারস্পরিক শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ করে।
আর পরিবার হ’ল সমাজের প্রাথমিক ইউনিট। পরিবার যদি সুন্দর হয়, নিঃসন্দেহে
সমাজ ও জাতি সুন্দর হবে। আর পরিবার নষ্ট হলে, অবশ্যই সমাজ ও জাতি নষ্ট হবে।
পরিশেষে ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত হবে। অতএব অবশ্যই প্রথমে উত্তম পরিবার গঠন
করতে হবে। আদর্শ পরিবারের সন্তানের শিক্ষা হলো পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন,
বড়দের প্রতি সম্মান ও ছোটদের প্রতি সেণহ করা। পিতা ও মাতার গুরুত্ব
সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে পিতার
সন্তুষ্টির মধ্যে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যে’।[3]
জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কার প্রতি সর্বাধিক সুন্দর আচরণ
করব? তিনি বললেন, তোমার মায়ের প্রতি (৩ বার)। অতঃপর বললেন, তোমার পিতার
প্রতি। অতঃপর নিকটতমদের প্রতি পর্যায়ক্রমে’।[4]
হাদীছে
কুদসীতে এসেছে, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে হবে। আর এর মাধ্যমে মহান
আল্লাহর রহমত পাওয়া যাবে। এমর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ বলেছেন, আমি
আল্লাহ আমি রহমান। আমি ‘রেহম’ (মাতৃগর্ভ) সৃষ্টি করেছি এবং আমার নাম থেকে
তার নামকরণ করেছি। অতএব যে ব্যক্তি রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা সংযুক্ত রাখবে
আমি তাকে (আমার রহমতের মধ্যে) যুক্ত করে নেব। আর যে ব্যক্তি তা ছিন্ন করবে,
আমিও তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেব’।[5] তিনি বলেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[6]
উত্তম পরিবারের অন্যতম প্রধান নিদর্শন হ’ল উত্তম সন্তানাদি। এদের মাধ্যমেই পরিবারের আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়। পরিবারের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিকশিত হয়। তাই সন্তানকে শিশুকাল থেকেই ইসলামী কৃষ্টি-কালচার অনুযায়ী গড়ে তোলা পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের উপর অপরিহার্য দায়িত্ব। বন্ধুকে দেখে যেমন বন্ধুকে চেনা যায়। তেমনি সন্তানকে দেখে বাপ-মাকে চেনা যায়। অতএব এ বিষয়ে পিতা-মাতা যেমন সজাগ হবেন, সন্তানদেরও তেমনি সজাগ থাকতে হবে। যেন নিজেদের কোন ভুলের জন্য বাপ-মা ও বংশের বদনাম না হয়। পরিবারে একজন বদনামগ্রস্ত হলে পরিবার ও বংশ বদনামগ্রস্ত হয়। সেকারণ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে উত্তম পরিবার গড়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হ’ল সন্তান। সন্তানকে শিশু অবস্থায় গড়ে না তুললে বড় অবস্থায় খুব কমই ফেরানো যায়। আর সন্তান এই শিক্ষা পরিবার ও সমাজ থেকে পেয়ে থাকে। সকল সন্তান ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। সুতরাং সৎ ও চরিত্রবান নাগরিক গড়ার প্রথম ভিত্তি হচ্ছে পরিবার। সুতরাং নিজে ও পরিবারকে দুনিয়াবী বিপর্যয় ও পরকালের জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে হবে। তাই মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যার উপর নিযুক্ত রয়েছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাববিশিষ্ট ফেরেশতাগণ। যারা আল্লাহ যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তাদেরকে যা আদেশ করা হয়, তাই করে’ (তাহরীম ৬৬/ ৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَأَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْأَقْرَبِيْنَ ‘আর তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক কর’ (শু‘আরা ২৬/২১৪)।
এটাই
চিরন্তন সত্য যে, শিশুরা আদর্শবান হয়ে গড়ে ওঠে পরিবার থেকে। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন, كُلُّ مَوْلُوْدٍ يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ
يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ ‘প্রত্যেক সন্তানই
ফিতরাতের (ইসলাম) উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী
বা খৃষ্টান কিংবা অগ্নিপূজক বানায়’।[7] এজন্যই
ইসলামের বিধান হ’ল, مُرُوا أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ
سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِينَ
وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِى الْمَضَاجِعِ ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর
বয়সে ছালাতের নির্দেশ দাও। দশ বছর বয়সে এজন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা
পৃথক করে দাও’।[8]
পরিবারের সবাই যেন নিয়মিত ছালাতে অভ্যস্থ হতে হবে। সে বিষয়ে আল্লাহ বলেন, وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلاَةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لاَ نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى ‘তুমি তোমার পরিবারকে ছালাতের আদেশ দাও এবং এর উপর তুমি নিজে অবিচল থাক। আমরা তোমার নিকট রিযিক চাই না। বরং আমরাই তোমাকে রিযিক দিয়ে থাকি। আর শুভ পরিণাম কেবল আল্লাহভীরুদের জন্য’ (ত্বোয়াহা ২০/১৩২)।
উত্তম পরিবার গঠনের জন্যে মহান আল্লাহর কাছে দো‘আ করতে হবে এই বলে, رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ إِمَامًا ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের স্ত্রীদের ও সন্তানদের মাধ্যমে চক্ষুশীতলকারী বংশধারা দান কর এবং আমাদেরকে আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শ বানাও’ (ফুরক্বান ২৫/৭৪)।
সোনামণিদের বিশুদ্ধ সংগঠনের আশ্রয়ে রাখতে হবে। কারণ শিশুরা অনুকরণ প্রিয় ও অন্যকে দেখে শেখে। এই জন্যে পরিবার প্রধানকে ও তার বন্ধুদেরকে আদর্শবান ও কর্তব্যনিষ্ঠ হতে হবে। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, السَّعِيدُ مَنْ وُعِظَ بِغَيْرِهِ وَالشَّقِىُّ مَنْ شَقِىَ فِى بَطْنِ أُمِّهِ ‘সৌভাগ্যবান সেই, যে অন্যের উপদেশ গ্রহণ করে এবং হতভাগা সেই যে মায়ের পেট থেকে হতভাগা হয়ে ভূমিষ্ট হয়’।[9] লোকমান নবী ছিলেন না। অথচ নির্বোধদের দেখেই তিনি সংযত হন ও সেই প্রজ্ঞা থেকেই তিনি বিশববিখ্যাত জ্ঞানী ব্যক্তিতে পরিণত হন। কুরআনে তার নামে একটি সূরা নাযিল হয়। যেখানে সন্তানদের প্রতি লোকমানের মূল্যবান উপদেশসমূহ বর্ণিত হয়েছে।
৫. সৎ সঙ্গীর সাহচর্য লাভ : একজন ভালো বন্ধু জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। তাই সর্বদা সৎ বন্ধু তালাশ করতে হবে। কোন ব্যক্তিকে জানতে ও বুঝতে চাইলে তার বন্ধুমহল কেমন তা দেখা হয়। যেমন মু‘আল্লাক্বা খ্যাত কবি ত্বরাফাহ আল-বিকরী বলেন, عَنِ الْمَرْءِ لاَ تَسْأَلْ وَسَلْ عَنْ قَرِيْنِهِ + فَكُلُّ قَرِيْنٍ بِالْمُقَارِنِ يَقْتَدِيْ ‘ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না, বরং তার বন্ধু সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর। কেননা প্রত্যেক বন্ধু তার বন্ধুর অনুসরণ করে থাকে’।[10] সত্যবাদী সাথীদের সাথে থাকার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُواْ مَعَ الصَّادِقِيْنَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তওবা ৯/১১৯)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহযোগী। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। ছালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা‘আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী’ (তাওবাহ ৯/৭১)।
তিনি অন্যত্র বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَتُرِيدُونَ أَنْ تَجْعَلُوا لِلَّهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُبِينًا ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দেবে?’ (নিসা ৪/১৪৪)।
অন্য আয়াতে এসেছে জাহান্নামীরা বলবে, يَاوَيْلَتَا لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا ‘হায় আমার দূর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম’ (ফুরকান ২৫/২৮)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ
تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِىٌّ
‘ঈমানদার ব্যতীত কাউকে সাথী বানিও না। আর আল্লাহভীরু ব্যতীত কেউ যেন তোমার
খাদ্য না খায়’।[11]
উত্তম
চরিত্রের অধিকারী সাথীই হ’ল ভাল বন্ধু। তাদের কাছে একে অপরের অধিকার
সুরক্ষিত থাকে। তারা একে অপরের নিকট বিশ্বস্ত হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘কিয়ামতের দিন মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় সর্বাধিক ভারী হবে তার উত্তম চরিত্র।
আর আল্লাহ ক্রুদ্ধ হন অশ্লীলভাষী ও দুশ্চরিত্র ব্যক্তির প্রতি’।[12] তিনি আরো বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় এবং সর্বাপেক্ষা নিকটতর আসনের অধিকারী হবে ঐ সব লোক, যাদের চরিত্র সুন্দর’।[13]
নিজেকে
চরিত্রবান, ধৈর্যশীল, বিনয়ী ও মিষ্টভাষী হ’তে হবে এবং ভালো, উত্তম ও
চরিত্রবান বন্ধু গ্রহণ করতে হবে। পরস্পরকে সালাম করবে, হাসিমুখে কথা বলবে,
ওয়াদা ও চুক্তি রক্ষা করবে, একে অপরকে প্রতি ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিবে।
পারস্পরিক লেনদেনে বিশ্বস্ত থাকবে। ঝগড়ার বিষয়ে আপোষকামী থাকবে।
হাক্কুল্লাহ আদায়ের ব্যাপারে সদা যত্নশীল থাকবে। ছালাত, ছিয়াম, যাকাত,
ছাদাক্বাহ ইত্যাদি যথাযথভাবে আদায় করবে। আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায়
করবে। তার প্রতি সর্বদা ভরসাকারী থাকবে এবং যে কাজ করলে তিনি খুশী হন,
সর্বদা সে কাজে অগ্রণী থাকবে। আর সৎ ব্যক্তি সাথী হ’লে তাকেও ভাল পথে চলার
জন্য বলে থাকে। সুতরাং সৎ ও নেককার ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করা এবং
ভাল মানুষকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা মুমিনের কর্তব্য। শিক্ষার বিষয়বস্ত্ত
যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সন্তানের বন্ধু কারা, সেদিকেও দৃষ্টি রাখাটা
গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মানুষ তার বন্ধুকে অনুসরণ ও অনুকরণ করে। যেমন রাসূল
(ছাঃ) বলেন, الْمَرْءُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ ‘মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠে ।[14] তিনি আরও বলেন, الْمُؤْمِنُ غِرٌّ كَرِيمٌ وَالْفَاجِرُ خِبٌّ لَئِيمٌ ‘মুমিন ব্যক্তি হয় সরল ও ভদ্র। পক্ষান্তরে পাপী ব্যক্তি হয় ধূর্ত ও চরিত্রহীন’।[15] অতএব তোমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত কার সাথে বন্ধুত্ব করবে’।[16]
৬. অসৎ সঙ্গ থেকে দূরে থাকা : অসৎ, চরিত্রহীন ও বিধর্মীদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা উচিৎ নয়। এমনকি যারা মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শত্রু তাদেরকে তো নয়ই। এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। তাদের নিকট তোমরা বন্ধুত্ব পেশ করছ, অথচ তারা তোমাদের নিকট আগত সত্যকে অস্বীকার করছে। তারা রাসূল ও তোমাদেরকে বের করে দিয়েছে এজন্য যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর উপর ঈমান এনেছ। যদি তোমরা বেরিয়ে থাক আমার পথে জিহাদের জন্য এবং আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য, তাহ’লে তাদের প্রতি গোপনে বন্ধুত্ব পোষণ করো না। বস্ত্ততঃ আমি ভালভাবেই জানি যা তোমরা লুকিয়ে রাখ এবং যা তোমরা প্রকাশ কর। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এরূপ করবে, সে ব্যক্তি সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে’ (মুমতাহিনা ৬০/১)।
আর তারা কেবল তাদেরই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে এবং ঈমানদার মুসলমানকে বিতাড়িত করে ও তাদের সাথে যুদ্ধ করে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُمْ مِنْ دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَى إِخْرَاجِكُمْ أَنْ تَوَلَّوْهُمْ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ ‘আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা দ্বীনের কারণে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে ও তোমাদের বহিষ্কারে সাহায্য করেছে। বস্ত্ততঃ তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করে, তারাই যালেম’ (মুমতাহিনা ৬০/৯)।
যখন
কোন ব্যক্তির সাথী অসৎ হয় তখন তাকেও অসৎ পথে চলার পথ দেখায়। যে কোন
ব্যক্তি বন্ধু নির্বাচন করার পূর্বে অবশ্যই যেন লক্ষ্য করে তার দ্বীনের
প্রতি, আমানতের প্রতি ও আক্বীদার প্রতি। যদি দেখতে পায় যে, তার দ্বীন-ধর্ম,
আমানতদারী ও আক্বীদা সঠিক রয়েছে তাহ’লে তাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে
পারে। আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), তাঁর ছাহাবীগণ এবং সালাফে ছালেহীনের প্রতি
লক্ষ্য করি। আর তাঁদের আদর্শে জীবন গড়ি। পক্ষান্তরে ফেরাঊন, নমরূদ, হামানের
মত যারা, তাদের থেকে সাবধান হই। অতএব যে সৎ ব্যক্তিকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ
করবে সে তার ফল পাবে। আর যে অসৎ ব্যক্তিকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে সে
সেদিকেই যাবে যেদিকে তার বন্ধু যাবে। কিন্তু অসৎ বন্ধুর নিকট থেকে
সামান্যতম হ’লেও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মন্দ বন্ধু সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
وَمَثَلُ جَلِيْسِ السُّوْءِ كَمَثَلِ صَاحِبِ الْكِيْرِ إِنْ لَمْ
يُصِبْكَ مِنْ سَوَادِهِ أَصَابَكَ مِنْ دُخَانِهِ- ‘আর অসৎ লোকের সংসর্গ
হ’ল কামারের সদৃশ। যদিও কালি ও ময়লা না লাগে, তবে তার ধোঁয়া থেকে রক্ষা
পাবে না’।[17]
ভালো বন্ধু ও অসৎ বন্ধু সঙ্গ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন,
مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالسُّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الْكِيرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيحًا خَبِيثَةً-
‘সৎ সঙ্গ ও অসৎ সঙ্গের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সুগন্ধি
বিক্রেতা ও কামারের হাপারে ফুঁকদানকারীর মত। সুগন্ধি বিক্রেতা হয়ত তোমাকে
এমনিতেই কিছু দিয়ে দিবে, অথবা ক্রয় করবে, অথবা সুঘ্রাণ গ্রহণ করবে। আর
কামারের হাপরে ফুঁকদানকারী হয় তোমার কাপড় জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিবে নতুবা তার
দুর্গন্ধ ও ছাই তো তুমি অর্জন করবেই’।[18]
মহান আল্লাহ মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেন, الَّذِينَ يَتَّخِذُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَيَبْتَغُونَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا ‘যারা মুসলমানদের বর্জন করতঃ কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে, অথচ যাবতীয় সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য’ (নিসা ৪/১৩৯)।
৭. পারস্পারিক সহমর্মী হওয়া : মুসলমানরা
পরস্পরের মান-ইযয্তের নিরাপত্তা বিধান, দুঃখ-কষ্টে অংশগ্রহণ, গঠনমূলক
সমালোচনা, উপদেশ-নছীহত, একত্রে বসবাসসহ সার্বিক বিষয়ে পরস্পরের সহযোগী হবে
এটাই স্বাভাবিক। আর এ ধরনের পরিবেশ তৈরীতে শারঈ ইমারতের ছায়াতলে থেকে
জামা‘আতবদ্ধতার কোন বিকল্প নেই। মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করলে, দুনিয়ায়
তাঁর বান্দাদের সাহায্য করতে হবে মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَاللهُ فِىْ
عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِىْ عَوْنِ أَخِيْهِ.‘আল্লাহ ততক্ষণ
পর্যন্ত কোন বান্দার সাহায্য করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা তার ভাইয়ের
সাহায্যে নিয়োজিত থাকে’।[19] পরস্পরকে ভালো কাজে
উৎসাহ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। তাছাড়া কোন মুমিন যালিম দ্বারা
অত্যাচারিত হ’লে, এমনকি সে যালিম হ’লেও তাকে অন্যায় থেকে বিরত থাকার
ব্যাপারে সাহায্য করতে হবে মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, انْصُرْ
أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُوْمًا فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ
أَنْصُرُهُ مَظْلُوْمًا، فَكَيْفَ أَنْصُرُهُ ظَالِمًا؟ قَالَ: تَمْنَعُهُ
مِنَ الظُّلْمِ، فَذَالِكَ نَصْرُكَ إِيَّاهُ ‘তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য
কর, চাই সে অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত হোক। তখন এক ব্যক্তি বলল, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! অত্যাচারিতকে তো সাহায্য করব; কিন্তু অত্যাচারীকে কিভাবে
সাহায্য করব? তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তাকে অত্যাচার করা থেকে বিরত
রাখবে। এটিই তাকে তোমার সাহায্য করার নামান্তর’।[20]
পারস্পরিক সহযোগিতার পুরস্কার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, اَلْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لاَيَظْلِمُهُ، وَلاَيُسْلِمُهُ، وَمَنْ كَانَ فِىْ حَاجَةِ أَخِيْهِ كَانَ اللهُ فِىْ حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُّسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না এবং তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার অভাব মোচনে সাহায্য করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহের কোন একটি বড় বিপদ দূর করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন’।[21]
৮. পারস্পারিক সৌজন্য সাক্ষাৎ :
জামা‘আতবদ্ধ মুসলমান অপর দ্বীনী মুসলিম ভাইয়ের সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে
দেখা-সাক্ষাৎ করে। এই সৌজন্য যোগাযোগের মাধ্যমে একদিকে যেমন একে অপরের
প্রতি ভালোবাসা বাড়ে, তেমনি মহান আল্লাহও খুশী হয়। যার প্রতিফল হিসাবে
উভয়েরই জান্নাত লাভের পথ সুগম হয়ে যায়। এমর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘এক
ব্যক্তি অন্য এক গ্রামে তার মুসলমান ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বের
হ’ল। মহান আল্লাহ তার যাবার পথে একজন ফেরেশতা বসিয়ে রাখলেন। লোকটি যখন
সেখানে পৌঁছল, তখন ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, ঐ
গ্রামে একজন ভাই আছে, তার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন,
তার কাছে তোমার কোন অনুগ্রহ আছে কি, যার বিনিময় লাভের জন্য তুমি যাচ্ছ? সে
বলল, না, আমি তাকে একমাত্র আল্লাহর রাযী-খুশীর উদ্দেশ্যে ভালবাসি। তখন
ফেরেশতা বললেন, আমি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তোমার কাছে এই সংবাদ দেওয়ার
জন্য প্রেরিত হয়েছি যে, আল্লাহ তোমাকে অনুরূপ ভালবাসেন, যেরূপ তুমি তাঁর
রাযী-খুশীর উদ্দেশ্যে তাকে ভালবাস’।[22]
৯. রুগ্ন ভাইয়ের প্রতি সহানুভূতিশীলতা : মানব
জীবনে বিপদ-আপদের যতগুলো ক্ষেত্র আছে, তার মধ্যে অসুস্থতা অন্যতম।
দুনিয়াবী জীবনে মানুষ যে কত বড় অসহায়, তার বাস্তব উপলব্ধি ঘটে অসুস্থ
অবস্থায়। এমন পরিস্থিতিতে কোন শত্রুও যদি দেখা করতে আসে বা তার সাহায্যে
এগিয়ে আসে, তবে সে তাকে আর শত্রু মনে করে না। সে তখন তার নিকটে পরম বন্ধুতে
পরিণত হয় এবং তার অন্তরে ঐ শত্রুর জন্য আলাদা একটা স্থানও তৈরী হয়ে যায়।
তাই রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া বা সাধ্যমত তার দেখ-ভাল করা ভ্রাতৃত্ব
বৃদ্ধির একটা বড় উপায়। রুগ্ন ব্যক্তির দেখাশোনার বিষয়টি ইসলামী শরী‘আতও
অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, عُوْدُو الْمَرِيْضَ،
وَاتَّبِعُوا الْجَنَائِزَ، تُذَكِّرُكُمُ الْآخِرَةَ ‘রুগ্ন ব্যক্তিকে
দেখতে যাবে এবং জানাযার অনুসরণ করবে (কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করবে) তাহ’লে তা
তোমাকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে’।[23] একজন
মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের হক্ব বা কর্তব্য সম্পর্কে যে কয়েকটি হাদীছ
বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোর প্রত্যেকটিতে عِيَادَةُ الْمَرِيْضِ তথা ‘রোগীর
পরিচর্যা’র বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। এছাড়াও ক্বিয়ামতের ময়দানে রুগ্ন
ব্যক্তির পক্ষে মহান আল্লাহ নিজেই ফরিয়াদী হয়ে আদম সন্তানকে জিজ্ঞেস করবেন,
‘হে আদম সন্তান! আমি রুগ্ন ছিলাম তুমি পরিচর্যা করনি’।[24]
রুগ্ন ব্যক্তির সেবা করাও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার সহজ উপায়। যতক্ষণ
পর্যন্ত রুগীর পরিচর্যা করা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি রহমতের মাঝে
অবস্থান করে। এমর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ عَادَ مَرِيْضًا خَاضَ
فِى الرَّحْمَةِ، حَتَّى إِذَا قَعَدَ اسْتَقَرَّ فِيْهَا. ‘যদি কোন
ব্যক্তি কোন রুগীর পরিচর্যা করে, সে রহমতের মধ্যে ডুব দেয়, এমনকি সে যখন
সেখানে বসে পড়ে, তখন তো রীতিমতো রহমতের মধ্যেই অবস্থান করে’।[25]
অন্য হাদীছে বলা হয়েছে জান্নাতের ফলমূলের বাগানে অবস্থান করে। এমর্মে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, كَانَ فِىْ خُرْفَةِ الْجَنَّةِ ‘যে ব্যক্তি তার
কোন রুগ্ন ভাইকে দেখতে যায়, সে জান্নাতের ফলমূলের মধ্যে অবস্থান করবে’।[26]
অনুরূপ إِنَّ الْمُسْلِمَ إِذَا عَادَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ لَمْ يَزَلْ
فِىْ خُرْفَةِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَرْجِعَ، قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ
وَمَا خُرْفَةُ الْجَنَّةِ؟ قَالَ جَنَاهَا. ‘মুসলমান যখন তার রুগ্ন
মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়, সে ফিরে না আসা পর্যন্ত জান্নাতের ‘খুরফার’ মধ্যে
অবস্থান করতে থাকে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! জান্নাতের
খুরফা কি? তিনি উত্তর দিলেন, তাঁর ফলমূল’।[27]
রুগ্নকে পরিচর্যাকারী ব্যক্তিকে একজন আহবানকারী ডেকে বলে তোমার জন্য
জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এমর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ
عَادَ مَرِيْضًا أَوْ زَارَ أَخًا لَهُ فِى اللهِ نَادَاهُ مُنَادٍ أَنْ
طِبْتَ وَطَابَ مَمْشَاكَ وَتَبَوَّأْتَ مِنَ الْجَنَّةِ مَنْزِلاً. ‘কোন
ব্যক্তি কোন রুগ্ন ব্যক্তির পরিচর্যা করলে অথবা আল্লাহর উদ্দেশ্যে তার কোন
ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করলে, একজন আহবানকারী (অন্য বর্ণনায় রয়েছে আল্লাহ
তা‘আলা) তাকে ডেকে ডেকে বলে, তুমি উত্তম কাজ করেছ, তোমার পদচারণা উত্তম
হয়েছে এবং জান্নাতে তুমি একটি ঘর তৈরী করে নিয়েছ’।[28]
শুধু
বন্ধু নয়, তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য অসুস্থ হলেও তাদের দেখতে যেতে হবে
এবং তার জন্য সত্তর হাযার ফেরেশতা দো‘আ করবে। এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَا مِنْ مُسلِمٍ يَعُوْدُ مُسْلِمًا غُدْوَةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ
سَبْعُوْنَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُمْسِىَ وَإِنْ عَادَه عَشِيَّةً إِلاَّ
صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُوْنَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُصْبِحَ وَكَانَ لَه
خَرِيْفٌ فِىْ الْجَنَّةِ ‘এমন কোন মুসলমান যেই যে সকাল বেলা কোন মুসলমান
রোগীকে দেখতে যায়, তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাযার ফেরেশতা দো‘আ না
করে। আর সন্ধ্যা বেলা কোন রোগী দেখতে যায় এবং সকাল পর্যন্ত তার জন্য সত্তর
হাযার ফেরেশতা দো‘আ না করে। আর তার জন্য জান্নাতে একটি ফলের বাগান
সুনির্ধারিত কওে দেয়া হয়’।[29] রুগ্ন ব্যক্তিকে
দেখতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই দো‘আ করতেন- أَذْهِبِ الْبَأسَ رَبَّ
النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِىْ لاَشِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً
لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا. ‘হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রভু! রোগ দূর কর,
রোগমুক্তি দান কর। তুমিই রোগমুক্তি দানকারী। তোমার রোগমুক্তি ছাড়া কোন
রোগমুক্তি নেই। এমন রোগমুক্তি কোন রোগ বাকী রাখে না’।[30]
১০. বিপদে সহযোগিতা প্রাপ্তি : ইসলামী
শরী‘আতে মুমিনের পারস্পরিক সম্পর্ক হ’ল একটি দেহের ন্যায়। দেহের একটি অঙ্গ
যেকোন ধরনের বিপদে পড়ার সাথে সাথে অন্য অঙ্গ তাকে সাহায্যের জন্য তৈরী হয়।
অনুরূপ কোন মুসলমান ভাই যখন কোন প্রকার বিপদে পড়ে, তখন অপর মুসলমান ভাইয়ের
কর্তব্য তাকে সাহায্য করা। কেননা যে মানুষকে সাহায্য করে আল্লাহ তাকে
সাহায্য করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা যমীনবাসীর উপর রহম কর,
আসমানবাসী আল্লাহ তোমাদের উপর রহম করবেন’।[31]
অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ ক্বিয়ামতে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ক্রটি গোপন রাখে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ক্রটি গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্য করে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে।[32] অপর এক হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক মুসলমানের উপর ছাদাক্বা করা ওয়াজিব। একজন প্রশ্ন করলেন, যদি কারো সে সামর্থ্য না থাকে, তবে কি হবে? ... ছাহাবীদের পর্যায়ক্রমিক প্রশ্নের উত্তরে এক পর্যায়ে তিনি বলেন, فَيُعِيْنُ ذَا الْحَاجَةِ الْمَلْهُوْفَ ‘তাহ’লে কোন দুঃখে বা বিপদে পতিত ব্যক্তিকে সাহায্য করবে’।[33] উত্তম সমাজে প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রতি দায়িত্বশীল হবে এবং একে অপরের জান-মাল ও ইয্যত রক্ষার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবে। এর বিনিময় সে আল্লাহর কাছে কামনা করবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যা কিছু সৎকর্ম অগ্রিম প্রেরণ করবে, তা তোমরা আল্লাহর নিকট পেয়ে যাবে। আর সেটাই হ’ল উত্তম ও মহান পুরস্কার’ (মুযযাম্মিল ৭৩/২১)।
মুসলিম
ভাইয়ের বৈশিষ্ট্য হ’ল তারা একে অপরের প্রতি দায়িত্ববান। সকলে সকলের প্রতি
দায়িত্ববান ভালো আচরণ করবে। তারা কেউ কাউকে অসম্মান করবে না, যুলুম করবে
না, লজ্জিত করবে না, অযথা রেগে যাবে না। কোন ভাই অসুস্থ হ’লে অন্যের
দায়িত্ব পড়ে যায় তাকে সুস্থ করা ও চিকিৎসা করা, কষ্ট পেলে সান্তনা দেয়া,
বিপদে সাহায্য করা। একজন বন্ধু কোন বিপদে পড়লে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করা।
যদি তার পরিবার বিপদে পড়ে, তবে সামাজিকভাবে সাহায্য করা। যদি কোন মুসলিম
পারস্পারিক ভাবে সাহায্য না করে তবে তার পরকাল ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এমনকি একটা
পশু বিপদে পড়লেও এ সমাজের মানুষের কর্তব্য হ’ল তাকে উদ্ধার করা।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘বিগত যুগে একজন বেশ্যা মহিলা রাস্তা দিয়ে যাবার
সময় একটা পিপাসিত কুকুরকে দেখতে পায়। তখন সে গভীর কুয়ায় নেমে নিজ চামড়ার
মোযায় পানি ভরে এনে তাকে খাওয়ায়। তাতে প্রচন্ড দাবদাহে প্রায় মৃত কুকুরটি
বেঁচে যায়। এতে খুশী হয়ে মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন ও সে জান্নাতবাসী
হয়’।[34] এর বিপরীতে আরেকজন মহিলা একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখে না খেতে দিয়ে কষ্ট দিলে সে মারা যায়। এর ফলে ঐ মহিলা জাহান্নামী হয়।[35]
১১. শক্রতা থেকে নিরাপদ থাকা : হাদীছে
এসেছে, عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :
لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِىْ ظَاهِرِيْنَ عَلَى الْحَقِّ لاَ
يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ وَلاَ مَنْ خَالَفَهُمْ حَتَّى يَأْتِىَ
أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَلِكَ ছাওবান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের একটি দল হকের উপরে বিজয়ী
থাকবে। আল্লাহর নির্দেশ (ক্বিয়ামত) না আসা পর্যন্ত বিরুদ্ধবাদী ও
অপদস্থকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। অথচ তারা সে অবস্থায় থাকবে’।[36]
অপর
একটি হাদীছে এসেছে, عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ: أَنَّ النّبيَّ
صلى الله عليه وسلم قَالَ: لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى
يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ জাবের
বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের একটি দল হকের জন্য লড়াই অব্যাহত রাখবে এবং
তারা বিজয়ী থাকবে’।[37] কুররা ইবনু ইয়াস (রাঃ) হ’তে
বর্ণিত তিনি বলেন, عَنْ قُرَّةَ بْنِ إِيَاسٍ قَالَ: أَنَّ النّبَيَّ صلى
الله عليه وسلم قَالَ : لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِىْ
مَنْصُوْرِيْنَ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ
‘নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা সাহায্যপ্রাপ্ত
হ’তে থাকবে। ক্বিয়ামত পর্যন্ত অপদস্থকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে
না’।[38]
এ হাদীছের পক্ষে মু‘আবিয়া (রাঃ) বর্ণিত নিম্নের হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যেতে পারে- عَنْ مُعَاوِيَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم : لاَ يَزَالُ مِنْ أُمَّتِى أُمَّةٌ قَائِمَةٌ بِأَمْرِ اللهِ، لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ وَلاَ مَنْ خَالَفَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللهِ-মু‘আবিয়া (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের মধ্য থেকে একটি দল আল্লাহর সত্য দ্বীনের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আল্লাহর নির্দেশ (ক্বিয়ামত) আসা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধবাদী ও অপদস্থকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[39] (ক্রমশঃ)
[লেখক : যশপুর, তানোর, রাজশাহী]
[1]. মুসলিম হা/২০১৮।
[2]. তিরমিযী হা/২৮১৯; মিশকাত হা/৪৩৫০।
[3]. তিরমিযী হা/১৮৯৯; মিশকাত হা/৪৯২৭।
[4]. তিরমিযী, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৪৯২৯।
[5]. আবুদাঊদ; তিরমিযী; মিশকাত হা/৪৯৩০।
[6]. বুখারী হা/৫৯৮৪, মুসলিম হা/২৫৫৬; মিশকাত হা/৪৯২২।
[7]. বুখারী হা/১৩৬৫; মুসলিম হা/২৬৫৮; মিশকাত হা/৯০।
[8]. আবুদাঊদ হা/৪৯৫; মিশকাত হা/৫৭২।
[9]. মুসলিম হা/২৬৪৫।
[10]. দীওয়ানে ত্বরাফাহ পৃ. ২০; দরসে হাদীছ : ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, মাসিক আত-তাহরীক, ১৭তম বর্ষ, ১০ সংখ্যা, জুলাই ২০১৪।
[11]. তিরমিযী হা/২৩৯৫; আবুদাঊদ হা/৪৮৩২; মিশকাত হা/৫০১৮।
[12]. আবু দাঊদ হা/৫০৯৫; মিশকাত হা/২৪৪৩।
[13]. বুখারী, মিশকাত হা/৫০৭৪।
[14]. আহমাদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৫০১৯।
[15]. আহমাদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৫০৮৫।
[16]. তিরমিযী হা/২৩৭৮; আবুদাঊদ হা/৪৮৩৩; মিশকাত হা/৫০১৯।
[17]. আবু দাউদ হা/৪৮২৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮৩৯।
[18]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৫৩৪।
[19]. মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪ ‘ইলম’ অধ্যায়।
[20]. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, হা/৪৯৫৭।
[21]. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, হা/৪৯৫৮।
[22]. মুসলিম হা/২৫৬৭; মিশকাত, হা/৫০০৭।
[23]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫১৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯৮১, হাদীছ ছহীহ।
[24]. মুসলিম হা/২৫৬৯; মিশকাত হা/১৫২৮।
[25]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫২২, হাদীছ ছহীহ।
[26]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫২১, হাদীছ ছহীহ ।
[27]. মুসলিম হা/২৫৬৮, বঙ্গানুবাদ রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/৮৯৯।
[28]. তিরমিযী হা/২০০৮, হাদীছ হাসান; মিশকাত হা/৫০১৫।
[29]. তিরমিযী হা/৯৬৯, হাদীছ ছহীহ, আবূদাউদ, বঙ্গানুবাদ রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/৯০০।
[30]. ১২. বুখারী হা/৫৬৭৫, ৫৭৫০; মিশকাত হা/১৫৩০।
[31]. মুসলিম, মিশকাত হা/৩৮০৬; ‘জিহাদ’ অধ্যায়।
[32]. মুসলিম, তিরমিযী হা/১৯৩০; আবুদাঊদ হা/৪৯৪৬।
[33]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/২২৫; মিশকাত হা/১৮৯৫।
[34]. হাকেম ৩/২৬২, ছহীহুল জামে‘ হা/৩০৫৬।
[35]. হাকেম ৩/২৬২, ছহীহুল জামে‘ হা/৩০৫৬।
[36]. বুখারী হা/৩৬৪১; মুসলিম হা/১৯২০; মিশকাত হা/৬২৭৬; ছহীহাহ হা/১৯৫; হাকেম হা/৮৩৯০; তিরমিযী হা/২১৯২; আহমাদ হা/১৮১৬০।
[37]. মুসলিম হা/১৫৬,‘ঈমান’ অধ্যায়; ছহীহাহ হা/১৯৬০।
[38]. তিরমিযী হা/২১৯২, ‘ফিতান’ অধ্যায়; ইবনু মাজাহ হা/০৬; আহমাদ হা/১৫৬৩৫; ছহীহাহ হা/৪০৩; মিশকাত হা/৬২৮৩।
[39]. বুখারী হা/৩৬৪১; মুসলিম হা/১৯২০; ছহীহাহ হা/১৯৫; হাকেম হা/৮৩৯০; ইবনু মাজাহ হা/০৬; তিরমিযী হা/২১৯২; আহমাদ হা/১৮১৬০; মিশকাত হা/৬২৭৬।