মূল্যহীন দুনিয়ার প্রতি অনর্থক ভালোবাসা (৪র্থ কিস্তি)
আব্দুর রহীম
আব্দুর রহীম 11650 বার পঠিত
ছহীহ হাদীছের আলোকে দুনিয়াবী চাকচিক্যের মূল্য :
মূল্যহীন ও তুচ্ছ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে যাতে লোকেরা পরকাল মুখী হয় সেজন্য রাসূল (ছাঃ) পৃথিবীর ধন-সম্পদ ও চাকচিক্যকে পরিহার করতে আদেশ দিয়েছেন। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رضي الله عنهما قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: صَلَاحُ أَوَّلِ هَذِهِ الأُمَّةِ بِالزُّهْدِ وَالْيَقِينِ، وَهَلَاكُ آخِرُهَا بِالْبُخْلِ وَالْأَمَلِ-
আব্দুল্লাহ বিন আমর হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এই জাতির প্রথম কল্যাণ রয়েছে দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ও দৃঢ় থাকার মধ্যে। আর এই জাতির পরবর্তীদের ধ্বংস রয়েছে কৃপণতা ও অধিক আকাঙ্ক্ষার মধ্যে’।[1] আল্লাহর ভালোবাসা ও মানুষের ভালো লাভের দু’টি উপায় রয়েছে। ১. দুনিয়ার চাকচিক্যের লোভ- লালসা ত্যাগ করলে আলাহ ভালোবাসবেন। ২. আর মানুষের কাছে যে ধন-সম্পদ রয়েছে তার প্রতি লোভ-লালসা ত্যাগ করলে মানুষ ভালোবাসবে। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيَّ رضي الله عنه قَالَ: أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ , دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا أَنَا عَمِلْتُهُ أَحَبَّنِي اللهُ وَأَحَبَّنِي النَّاسُ , فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: ازْهَدْ فِي الدُّنْيَا يُحِبَّكَ اللهُ , وَازْهَدْ فِيمَا عِنْدَ النَّاسِ يُحِبَّكَ النَّاسُ-
সাহল ইবনে সা’দ আস-সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আলাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন যা আমি করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন এবং লোকেরাও আমাকে ভালোবাসবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি অবলন্বন করো। তাহ’লে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। মানুষের নিকট যা আছে, তুমি তার প্রতি অনাসক্ত হয়ে যাও, তাহ’লে তারাও তোমাকে ভালোবাসবে’।[2]
কেউ যদি জান্নাত লাভের প্রত্যাশায় তার জীবনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে তাহ’লে সে জান্নাত তো পাবেই পাশাপাশি দুনিয়ার অনেক কিছু লাভ করবে। কিন্তু কেউ যদি দুনিয়া অর্জনের জন্য তার যাবতীয় চেষ্টা ও শ্রমকে নিয়োজিত করে তাহ’লে সে দুনিয়াও ঠিকভাবে পাবেনা। আবার আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে। আল্লাহ বলেন, অতঃপর লোকদের মধ্যে যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে (কেবল) ইহকালে দাও। পরকালে তার জন্য কোন অংশ নেই। আর তাদের মধ্যে যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের ইহকালে কল্যাণ দাও ও পরকালে কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও। ঐসব লোকদের জন্য তাতে পূর্ণ অংশ রয়েছে, যা তারা উপার্জন করেছে (বাকারাহ ২/২০১-২০২)। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم:مَنْ جَعَلَ الْهُمُومَ هَمًّا وَاحِدًا,هَمَّ آخِرَتِهِ كَفَاهُ اللهُ هَمَّ دُنْيَاهُ وَمَنْ تَشَعَّبَتْ بِهِ الْهُمُومُ فِي أَحْوَالِ الدُّنْيَا, لَمْ يُبَالِ اللهُ فِي أَيِّ أَوْدِيَتِهَا هَلَكَ-
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সমস্ত চিন্তাকে এক মাকসুদ, অর্থাৎ- শুধুমাত্র আখিরাতের চিন্তায় নিবদ্ধ করে নিবে- আল্লাহ তার দুনিয়ার যাবতীয় মাকসুদ পূরণ করে দিবেন। অপরদিকে যাকে দুনিয়ার নানা দিক ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে, তার জন্য আল্লাহর কোন পরোয়াই নেই, চাই সে কোন জঙ্গলে (দুনিয়ায় যে কোন অবস্থায়) ধ্বংস হোক না কেন’।[3] কেউ সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে থাকার চেষ্টা করলে আল্লাহর তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন এবং দুনিয়াতে অভাব-অনটন দূর করবেন ও পরকালে জান্নাত দিবেন। কেউ এর বিপরীত করলে তাকে দুনিয়াতে দরিদ্রতার ঘূর্ণিপাকে ঘুরতে হবে এবং পরকালে জাহান্নামে যেতে হবে। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم:إِنَّ اللهَ تَعَالَى يَقُولُ: يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِي أَمْلَأ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدَّ فَقْرَكَ، وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ، مَلَأتُ صَدْرَكَ شُغْلًا وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুলাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা কর, আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব দূর করে দিব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দু’হাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব-অনটন দূর করব না’।[4] অল্পে তুষ্ট থাকা সফলতার চাবিকাঠি। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুতে সন্তুষ্ট থাকা একজন সৎ মানুষের লক্ষণ। যাদের মধ্যে এধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে তারাই সফলকাম। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رضي الله عنهما قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا آتَاهُ–
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আ‘ছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করল, তাকে প্রয়োজন মাফিক জীবিকা প্রদান করা হ’ল এবং তাকে আল্লাহ যা দিয়েছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকল সেই সফলকাম হ’ল’।[5] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: خَيْرُ الرِّزْقِ الْكَفَافُ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, প্রয়োজন মাফিক জীবিকাই উত্তম রিযিক’।[6] পৃথিবীতে দু’টি জিনিস বড়ই অপসন্দনীয়। কিন্তু বাহ্যিক দৃষ্টিতে সে দু’টো জিনিস অপসন্দ মনে হ’লেও সেগুলো মানুষের জন্য কল্যাণকর। ১. মৃত্যু ; এটি সবার নিকট অপসন্দনীয়। কিন্তু বর্তমান ফিৎনার যুগে দ্বীন নিয়ে বেঁচে থাকা বড়ই কষ্টকর। সেজন্য স্বাভাবিক মৃত্যুই উত্তম। ২. ধন-সম্পদ; এটি সবাই অর্জন করতে চাই। কিন্তু ধন-সম্পদের ফিৎনা বড়ই মারাত্মক। দুনিয়াই এর সুষ্ঠু ব্যবহার না করতে পারলে দুনিয়াই মহাচিন্তায় থাকতে হবে। আর পরকালে অধিক সম্পদের হিসাব দিতে বহুকাল পার হয়ে যাবে। ফলে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার হ’লেও গরীবদের তুলনায় পাঁচ শত বছর পর জান্নাত লাভ করা যাবে। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: اثْنَتَانِ يَكْرَهُهُمَا ابْنُ آدَمَ: الْمَوْتُ,وَالْمَوْتُ خَيْرٌ لِلْمُؤْمِنِ مِنْ الْفِتْنَةِ وَيَكْرَهُ قِلَّةَ الْمَالِ, وَقِلَّةُ الْمَالِ أَقَلُّ لِلْحِسَابِ-
মাহমূদ বিন লাবীদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, দু’টি জিনিসকে আদম-সন্তান অপসন্দ করে; (তার মধ্যে প্রথম হ’ল) মৃত্যু, অথচ মুমিনের জন্য ফিতনা থেকে মৃত্যুই উত্তম। আর (দ্বিতীয় হ’ল) ধন-স্বল্পতা, অথচ ধন-স্বল্পতা হিসাবের জন্য কম প্রশ্ন করা হবে’।[7] যারা দুনিয়ার চাকচিক্য ও ধন-সম্পদ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকবে তারা পুরো দুনিয়া কাঁধে নিয়ে পরকালে হাযির হবে। যা বহন করা অসম্ভব। কিন্তু উপায় থাকবে না। রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গিয়ে তারা তাদের পক্ষে সুফারিশ করার আবেদন জানাবে। কিন্তু রাসূল তাদের পক্ষে কোন কিছু করবেন না। কেবল যারা পরহেযগার তারাই রাসূলের সুফারিশে ধন্য হবেন। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: إِنَّ أَوْلِيَائِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُتَّقُونَ، وَإِنْ كَانَ نَسَبٌ أَقْرَبَ مِنْ نَسَبٍ، فلَا يَأتِينِي النَّاسُ بِالْأَعْمَالِ وَتَأتُونَ بِالدُّنْيَا تَحْمِلُونَهَا عَلَى رِقَابِكُمْ، فَتَقُولُونَ: يَا مُحَمَّدُ، فَأَقُولُ هَكَذَا وَهَكَذَا: لَا وَأَعْرَضَ فِي كِلا عِطْفَيْهِ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন আমার বন্ধু হবে মুত্তাকী পরহেজগারগণ। বংশগত সম্পর্ক অপরের তুলনায় অধিক নিকটতর হ’লেও তা উপকারে আসবে না। লোকজন আমার নিকট আসবে তাদের আমল নিয়ে, আর তোমরা আসবে দুনিয়াকে তোমাদের কাঁধে তুলে নিয়ে। তোমরা ডেকে বলবে, হে মুহাম্মাদ, হে মুহাম্মাদ! আর আমি এরূপ এরূপ বলব, আমি কোন কাজে আসব না। আমি সব দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিব’।[8]
মুমিনগণ যাতে অল্পে তুষ্ট থাকে এবং ভোগ-বিলাস তাদেরকে অল্প প্রদান করা হয় সেজন্য রাসূল (ছাঃ) তাদের জন্য দো‘আ করেছেন। এজন্য দেখা যায় আল্লাহওয়ালা মানুষদের সম্পদ কম। পৃথিবীর অধিকাংশ সম্পদ কাফির ও মুশরিকদের দখলে। হাদীছে এসেছে,
عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: اللَّهُمَّ مَنْ آمَنَ بِكَ , وَشَهِدَ أَنِّي رَسُولُكَ، فَحَبِّبْ إِلَيْهِ لِقَاءَكَ، وَسَهِّلْ عَلَيْهِ قَضَاءَكَ وَأَقْلِلْ لَهُ مِنَ الدُّنْيَا، وَمَنْ لَمْ يُؤْمِنْ بِكَ وَلَمْ يَشْهَدْ أَنِّي رَسُولُكَ، فلَا تُحَبِّبْ إِلَيْهِ لِقَاءَكَ وَلَا تُسَهِّلْ عَلَيْهِ قَضَاءَكَ، وَأَكْثِرْ لَهُ مِنَ الدُّنْيَا-
ফুযালাহ বিন ওবাইদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি তোমার প্রতি ঈমান এনেছে এবং আমি তোমার রাসূল বলে সাক্ষ্য দিয়েছে তার জন্য তুমি তোমার সাক্ষাৎ লাভকে প্রিয় কর, তোমার ফয়ছালা তার জন্য সুপ্রসন্ন কর এবং দুনিয়ার ভোগ-বিলাস তাকে অল্প প্রদান কর। আর যে ব্যক্তি তোমার প্রতি ঈমান রাখে না এবং আমি তোমার রাসূল বলে সাক্ষ্য দেয় না, তার জন্য তোমার সাক্ষাৎ-লাভকে প্রিয় করো না, তোমার ফয়ছালা তার জন্য সুপ্রসন্ন করো না এবং দুনিয়ার ভোগ-বিলাস তাকে বেশী বেশী প্রদান কর’।[9] আবার রাসূল (ছাঃ) নিজেকে মিসকীন হিসাবে দেখতে চেয়েছেন এবং দরিদ্র লোকদের সাথে তার যেন হাশর হয় সেজন্য দো‘আ করেছেন। এর দ্বারা তিনি দুনিয়ার চাকচিক্যকে পরিহার করেছেন। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رضي الله عنه قَالَ: أَحِبُّوا الْمَسَاكِينَ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ فِي دُعَائِهِ: اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مِسْكِينًا وَأَمِتْنِي مِسْكِينًا وَاحْشُرْنِي فِي زُمْرَةِ الْمَسَاكِينِ-
আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, তোমরা মিসকীনদের মহববত করবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে তাঁর দো‘আয় বলতে শুনেছি, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মিসকীনরূপে জীবিত রাখো, মিসকীনরূপে মৃত্যুদান করো এবং মিসকীনদের দলভুক্ত করে হাশরের ময়দানে উত্থিত করো’।[10] আব হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জা‘ফর ইবনে আবু তালিব (রাঃ) ফকীর-মিসকীনদের মহববত করতেন, তাদের সাথে ওঠাবসা করতেন এবং তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতেন। আর তারাও তার সাথে আলাপ-আলোচনা করতো। রাসূলুলাহ (ছাঃ) তাকে আবুল মাসাকীন (দরিদ্রদের পিতা) উপাধি দেন’।[11]
সামাজিক পদমর্যাদার চাইতে দ্বীনী মর্যাদার গুরুত্ব বেশী। ইসলামী নেতার কাছে আলাহভীরু গরীবের মর্যাদা আলাহদ্রোহী ধনী ব্যক্তির চাইতে অনেক বেশী। আর মুত্তাক্বীরাই সর্বদা নেতৃত্বের হকদার। যেমন হাদীছে এসেছে,
খাববাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহান আল্লাহর বাণী: আর তুমি তাদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না, যারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করে তার চেহারা অন্বেষণে সকালে ও সন্ধ্যায়। তাদের হিসাবের কোন দায়িত্ব তোমার উপরে নেই এবং তোমার হিসাবের কোন দায়িত্ব তাদের উপরে নেই যে, তুমি তাদেরকে বিতাড়িত করবে। তাহ’লে তুমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে (আন‘আম ৬/৫২)। তিনি উক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেন, আকরা ইবনে হাবেস আত-তামীমী ও উয়াইনা ইবনে হিছন আল-ফাজারী রাসূলুলাহ (ছাঃ)-এর নিকট আসলো। তারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সুহাইব, বিলাল, আম্মার ও খাববাব (রাঃ) প্রমুখ দরিদ্র অসহায় মুমিনদের সাথে বসা ছিলো। তারা নবী (ছাঃ)-এর চারপাশে তাদের উপবিষ্ট দেখে তাদেরকে হেয় জ্ঞান করল। তারা তাঁর সান্নিধ্যে এসে একান্তে তাঁকে বলল, আমরা চাই যে, আপনি আপনার সাথে আমাদের বিশেষ বৈঠকের ব্যবস্থা করবেন, যাতে আরবরা আমাদের মর্যাদা উপলব্ধি করতে পারে। কেননা আপনার নিকট আরবের প্রতিনিধিদলসমূহ আসে। এই দাসদের সাথে আরবরা আমাদেরকে উপবিষ্ট দেখলে তাতে আমরা লজ্জাবোধ করি। অতএব আমরা যখন আপনার নিকট আসবো তখন আপনি এদেরকে আপনার নিকট থেকে উঠিয়ে দিবেন। আমরা আপনার নিকট থেকে বিদায় নেয়ার পর আপনি ইচ্ছা করলে তাদের সাথে বসুন। তিনি বললেন, আচ্ছা! দেখা যাক। তারা বলল, আপনি আমাদের জন্য একটি চুক্তিপত্র লিখিয়ে দিন।
রাবী বলেন, তিনি কাগজ আনালেন এবং আলী (রাঃ)-কে লেখার জন্য ডাকলেন। আমরা এক পাশে বসা ছিলাম। ইত্যবসরে জিব্রীল (আঃ) এই আয়াত নিয়ে অবতরণ করলেন, আর তুমি তাদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না, যারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করে তার চেহারা অন্বেষণে সকালে ও সন্ধ্যায়। তাদের হিসাবের কোন দায়িত্ব তোমার উপরে নেই এবং তোমার হিসাবের কোন দায়িত্ব তাদের উপরে নেই যে, তুমি তাদেরকে বিতাড়িত করবে। তাহ’লে তুমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে (আন‘আম ৬/৫২) অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আকরা ইবনে হাবেস ও উয়াইনা ইবনে হিসন-এর সম্পর্কে নাযিল করেন, আর এভাবেই আমরা তাদের কারু দ্বারা কাউকে পরীক্ষায় ফেলি। যাতে তারা বলে যে, আমাদের মধ্য থেকে আল্লাহ এই লোকগুলির উপরেই কি অনুগ্রহ করেছেন? অথচ আলাহ কি তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাদের সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত নন?[12] (আন‘আম ৬/৫৩) অতঃপর আল্লাহ বলেন, আর যখন তোমার নিকট আমাদের আয়াত সমূহে বিশ্বাস স্থাপনকারীরা আসবে, তখন তাদেরকে (বিশেষ সম্মান দিয়ে) বলবে ‘সালাম’ (তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হৌক)। তোমাদের পালনকর্তা দয়াশীলতাকে তার নিজের উপর বিধিবদ্ধ করে নিয়েছেন (আন‘আম ৬/৫৪)।
রাবী বলেন, এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর আমরা তাঁর এতো নিকটবর্তী হ’লাম যে, আমাদের হাঁটু তাঁর হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের সাথে বসতেন এবং যখন উঠে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন আমাদের ছেড়ে দাঁড়িয়ে যেতেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন, আর তুমি নিজেকে ধরে রাখো তাদের সাথে যারা সকালে ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে আহবান করে তাঁর চেহারার কামনায় এবং তুমি তাদের থেকে তোমার দু’চোখ ফিরিয়ে নিয়ো না পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায় (কাহফ ১৮/২৮)। আর তুমি অভিজাতদের সাথে বসো না এবং যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি তার অনুসরণ করো না। যে নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং কাজেকর্মে সীমা অতিক্রম করে (অর্থাৎ উয়াইনা ও আকরা) তার কৃতকম বরবাদ হয়েছে। অতঃপর তিনি তাদের সামনে দু’ব্যক্তির দৃষ্টান্ত ও পার্থিব জীবনের উপমা পেশ করেন সূরা কাহফের ৩২ নং ও ৪৫ নং আয়াত দ্রঃ) খাববাব (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা নবী (ছাঃ)-এর সাথে বসতাম। যখন তাঁর উঠার সময় হতো তখন আমরা তাঁর আগে উঠে যেতাম, অতঃপর তিনি উঠতেন’।[13]
দরিদ্র মুমিনদের এতো বেশী মর্যাদা যে তারা ধনীদের পাঁচশ বছর পূর্বে জান্নাতে যাবে। কারণ তাদের সম্পদ কম হওয়াই হিসাব কম দিতে হবে। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: يَدْخُلُ فُقَرَاءُ الْمُسْلِمِينَ الْجَنَّةَ قَبْلَ أَغْنِيَائِهِمْ بِنِصْفِ يَوْمٍ , وَهُوَ خَمْسُ مِائَةِ سَنَةٍ وتلَا: وَإِنَّ يَوْمًا عِنْدَ رَبِّكَ كَأَلْفِ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, দরিদ্র মুসলমানগণ জান্নাতে যাবে সম্পদশালীদের চেয়ে অর্ধদিন পূর্বে। এই অর্ধদিন হলো পাঁচ শত বছরের সমান। এরপর তিনি পাঠ করেন, তোমার প্রতিপালকের কাছে একটি দিন তোমাদের গণনার এক হাযার বছরের সমান’।[14]
ঈমানের বহু শাখা-প্রশাখা রয়েছে। সাদাসিধে জীবন যাপন করা ঈমানের অন্যতম অঙ্গ বা শাখা। যেমন,
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ إيَاسِ بْنِ ثَعْلَبَةَ الْأَنْصَارِيِّ رضي الله عنه قَالَ: ذَكَرَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا عِنْدَهُ الدُّنْيَا فَقَالَ: أَلَا تَسْمَعُونَ؟ أَلَا تَسْمَعُونَ؟ إِنَّ الْبَذَاذَةَ مِنْ الْإِيمَانِ إِنَّ الْبَذَاذَةَ مِنْ الْإِيمَانِ-
আবু উমামাহ ইয়াস ইবনু ছা‘লাবাহ আনছারী হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা কি শুনছ না? তোমরা কি শুনছ না? (অর্থাৎ- মনোযোগ দিয়ে শুনার জন্য) সাদাসিধে জীবন-যাপন করাই ঈমানের অঙ্গ, সাদাসিধে জীবন-যাপন করাই ঈমানের অঙ্গ’।[15]
তোমরা কি শুনছ বাক্যাংশটি একাধিকবার বলা দ্বারা এর পরের কথার উপর জোর দেয়া উদ্দেশ্য। আল বাযাযাহ অর্থ হলো খারাপ গঠন বা আকৃতি এবং কাপড়ের জীর্ণতা। তবে এখানে বাযাযাহ দ্বারা পোশাক-পরিচ্ছদে নম্রতা প্রকাশকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ জরাজীর্ণ পোশাক পরিধান করার মাধ্যমে নম্রতা প্রকাশ ঈমানের অঙ্গ। কেউ যদি চায় কখনো কখনো বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ এবং গোপনীয়তা রক্ষার উদ্দেশে সুন্দর নয় এমন পোশাক পরিধান করবে তাহ’লে সেটা করা যেতে পারে। এটাই বাযাযাহ দ্বারা উদ্দেশ্য’।[16]
যদিও উত্তম হচ্ছে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে যে নি‘মত দিয়েছেন তা প্রকাশ করা। এজন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ اللهَ يُحِبُّ إِذَا أَنْعَمَ عَلَى عَبْدٍ نِعْمَةً أَنْ يَرَى أَثَرَ نِعْمَتِهِ عَلَيْهِ যখন আল্লাহ তা’আলা তার কোন বান্দাকে নি’মত প্রদান করেন তখন তিনি তার নি‘মতের আলামত তাঁর বান্দার ওপর দেখতে ভালোবাসেন’।[17]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: اسْتَحْيُوا مِنْ اللهِ حَقَّ الْحَيَاءِ, فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ , إِنَّا نَسْتَحْيِي وَالْحَمْدُ للهِ قَالَ: لَيْسَ ذَلِكَ , وَلَكِنَّ الِاسْتِحْيَاءَ مِنْ اللهِ حَقَّ الْحَيَاءِ أَنْ تَحْفَظَ الرَّأسَ وَمَا وَعَى , وَالْبَطْنَ وَمَا حَوَى, وَلْتَذْكُرْ الْمَوْتَ وَالْبِلَى , وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ , تَرَكَ زِينَةَ الدُّنْيَا, فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ, فَقَدْ اسْتَحْيَا مِنْ اللهِ حَقَّ الْحَيَاءِ –
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে লজ্জা কর। সকলে বলল, হে আল্লাহর নবী! আমরা তো আলহামদু লিল্লাহ আল্লাহকে লজ্জা করে থাকি। তিনি বললেন, না, ঐরূপ নয়। আল্লাহকে যথাযথভাবে লজ্জা করার অর্থ এই যে, মাথা ও তার সংযুক্ত অন্যান্য অঙ্গ (জিভ, চোখ এবং কান) কে (অবৈধ প্রয়োগ হতে) হিফাযত করবে, পেট ও তার সংশিষ্ট অঙ্গ (লিঙ্গ, হাত, পা ও হৃদয়) কে (তাঁর অবাধ্যাচরণ ও হারাম হ’তে) হিফাযত করবে এবং মরণ ও তার পর হাড় মাটি হয়ে যাওয়ার কথা (সর্বদা) স্মরণে রাখবে। আর যে ব্যক্তি পরকাল (ও তার সুখময় জীবন) পাওয়ার ইচ্ছা রাখে, সে ইহকালের সৌন্দর্য পরিহার করবে। যে ব্যক্তি এ সব কিছু করে, সেই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে যথাযথভাবে লজ্জা করে’।[18]
(فليحفظ رأسه) অর্থ যেন আপন মাথাকে হিফাযত করে আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া অন্য কোন কর্মে ব্যবহার হ’তে তথা তিনি ব্যতীত অন্য কারও উদ্দেশ্যে সিজদাহ না করে এবং লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় না করে আর মাথাকে আল্লাহ ছাড়া কারও জন্য বিনয়ী না করে আর মাথাকে আল্লাহর বান্দার জন্য অহংকার উদ্দেশ্যে না উঠায়।
(وَمَا وَعى) আর মাথা তার যাকে সংরক্ষণ করছে তথা যে সমস্তকে মাথা একত্রিত করেছে যেমন জিহবা চক্ষু কান এগুলোকে সংরক্ষণ করেছে যা হালাল না তা হতে।
(وَلْيَحْفَظِ الْبَطْنَ وَمَا حَوى) আপন পেটকে হারাম ভক্ষণ হ’তে রক্ষা করেছে এবং পেটের সাথে সংশিষ্ট বস্ত্তকেও যেমন লজ্জাস্থান দু’পা, দু’হাত এবং হৃদয় আর এদের সংরক্ষণ বা হিফাযতের বিষয় হ’ল এগুলোকে গুনাহের কাজে ব্যবহার করবে না বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে ব্যবহার করবে। ত্বীবী বলেন, তোমরা যা মনে করছ তা প্রকৃত লজ্জা নয় আল্লাহর হ’তে বরং প্রকৃত লজ্জা হ’ল যে নিজেকে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা হিফাযত করা।
প্রতিদিন দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন এবং লোকদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান করে বলতে থাকে যে, নিশ্চয় যা অল্প ও জীবনের জন্য যথেষ্ট তা যা অধিক ও অপ্রয়োজনীয় তা অপেক্ষা উত্তম। যেমন হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: مَا مِنْ يَوْمٍ طَلَعَتْ شَمْسُهُ إِلَّا وَكَانَ بِجَنْبَتَيْهَا مَلَكَانِ يُنَادِيَانِ نِدَاءً يَسْمَعُهُ مَا خَلَقَ اللهُ كُلُّهُمْ غَيْرُ الثَّقَلَيْنِ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، هَلُمُّوا إِلَى رَبِّكُمْ، إِنَّ مَا قَلَّ وَكَفَى , خَيْرٌ مِمَّا كَثُرَ وَأَلْهَى، وَلَا غَرَبَتِ الشَّمْسُ إِلَّا وَكَانَ بِجَنْبَتَيْهَا مَلَكَانِ يُنَادِيَانِ نِدَاءً يَسْمَعُهُ خَلْقُ اللهِ كُلُّهُمْ إِلَّا الثَّقَلَيْنِ: اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا وَأَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا وَأَنْزَلَ اللهُ فِي ذَلِكَ قُرْآنًا فِي قَوْلِ الْمَلَكَيْنِ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ هَلُمُّوا إِلَى رَبِّكُمْ فِي سُورَةِ يُونُسَ: {وَاللهُ يَدْعُو إِلَى دَارِ السَّلَامِ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ} وَأَنْزَلَ فِي قَوْلِهِمَا: اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا , وَأَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا: {وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى , وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّى , وَمَا خَلَقَ الذَّكَرَ وَالْأُنْثَى , إِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتَّى فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى , وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى , فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى , وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى , فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى}-
আবুদ দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, এমন কোন দিন নেই যেদিন সূর্য উদিত হয় আর তার দু’পাশে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন না। তারা উচ্চস্বরে ডাক দিয়ে বলে যা মানুষ ও জিন ব্যতীত সকল সৃষ্টি জীব শুনতে পায়। তারা বলে, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে ধাবিত হও। নিশ্চয় যা কম ও যথেষ্ট তা যা অধিক ও অপ্রয়োজনীয় তা অপেক্ষা উত্তম। আর যখন সূর্য অস্ত যায় তখনও তার দু’পাশে দু’জন ফেরেশতা অবস্থান করে এবং ডাক দিয়ে বলতে থাকে যা মানুষ ও জিন ব্যতীত সবাই শুনতে পায়। হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। ফেরেশতাদ্বয়ের কথার সমর্থনে আলাহ তা‘আলা কুরআন অবতীর্ণ করেন, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে ধাবিত হও; (আল্লাহ শান্তি নিবাসের (জান্নাতের) প্রতি আহবান জানান। আর তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথ প্রদর্শন করেন (ইউনুস ১০/২৫)। আর তাদের উক্তি হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। এর স্বপক্ষে নাযিল করেন, শপথ রাত্রির, যখন সে আচ্ছন্ন করে। শপথ দিবসের, যখন তা প্রকাশিত হয় শপথ, যা তিনি সৃষ্টি করেছেন নর-নারী নিশ্চয়ই তোমাদের প্রচেষ্টা বিভিন্নমুখী। অতঃপর যে ব্যক্তি দান করে ও আল্লাহভীরু হয়, এবং উত্তম বিষয়কে সত্য বলে বিশ্বাস করে, অচিরেই আমরা তাকে সরল পথের জন্য সহজ করে দেব। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কৃপণতা করে ও বেপরোয়া হয়, এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে, অচিরেই আমরা তাকে কঠিন পথের জন্য সহজ করে দেব’।[19]
পৃথিবীতে মুসাফির হিসাবে বসবাস করতে হবে। যেমন একজন মুসাফির অন্য দেশে গেলে সর্বদা চিন্তায় থাকে কখন বাড়িতে ফিরে যাবে। মুমিনের আসল ঠিকানা জান্নাত হওয়াই তাদের চিন্তা সেদিকেই থাকবে। সেজন্য তারা নিজেদের কবরবাসী মনে করবে। যেমন হাদীছে এসেছে,
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رضي الله عنهما قَالَ: أَخَذَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِمَنْكِبِي فَقَالَ: كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ وَعُدَّ نَفْسَكَ مِنْ أَهْلِ الْقُبُورِ وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَقُولُ: إِذَا أَمْسَيْتَ فلَا تَنْتَظِرْ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فلَا تَنْتَظِرْ الْمَسَاءَ وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ , وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ فَإِنَّكَ لاَ تَدْرِى يَا عَبْدَ اللَّهِ مَا اسْمُكَ غَدًا-
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা আমার দুই কাঁধ ধরে বললেন, তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মত থাক এবং নিজেকে কবরবাসী মনে কর। আর ইবনে ওমর (রাঃ) বলতেন, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হ’লে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ কর কারণ হে আব্দুল্লাহ! তুমি জাননা আগামীকাল কি নামে তুমি অভিহিত হবে’।[20]
এই হাদীছের ব্যাখ্যায় আলেমগণ বলেন, দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ো না এবং তাকে নিজের আসল ঠিকানা বানিয়ে নিও না। মনে মনে এ ধারণা করো না যে, তুমি তাতে দীর্ঘজীবী হবে। তুমি তার প্রতি যত্নবান হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করো না। তার সাথে তোমার সম্পর্ক হবে ততটুক, যতটুক একজন প্রবাসী তার প্রবাসের সাথে রেখে থাকে। তাতে সেই বিষয়-বস্ত্ত নিয়ে বিভোর হয়ে যেও না, যে বিষয়-বস্ত্ত নিয়ে সেই প্রবাসী ব্যক্তি হয় না, যে স্বদেশে নিজের পরিবারের নিকট ফিরে যেতে চায়। আর আলাহই তওফীক দাতা।
ছাহাবীগণের জীবনে এত অভাব-অনটন ছিল যে খাদ্যের অভাবে তারা বেহুশ হয়ে যেতেন। মাঝে মধ্যে ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছালাত থেকে পড়ে যেতেন। কিন্তু পরকালে এদেরে জন্যই রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ رضي الله عنه قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا صَلَّى بِالنَّاسِ خَرَّ رِجَالٌ مِنْ قَامَتِهِمْ فِي الصَّلَاةِ لِمَا بِهِمْ مِنْ الْخَصَاصَةِ وَهُمْ مِنْ أَصْحَابِ الصُّفَّةِ حَتَّى يَقُولَ الْأَعْرَابُ: إِنَّ هَؤُلَاءِ مَجَانِينُ. فَإِذَا قَضَى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الصَلَاةَ انْصَرَفَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ لَهُمْ: لَوْ تَعْلَمُونَ مَا لَكُمْ عِنْدَ اللهِ عز وجل لَأَحْبَبْتُمْ أَنْ تَزْدَادُوا فَاقَةً وَحَاجَةً –
ফাযালা ইবনু ওবাইদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন লোকদের সাথে নিয়ে জামা‘আতে ছালাত আদায় করতেন, তখন কিছু লোক অসহনীয় ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছালাতের মধ্যেই দাঁড়ানো অবস্থা হতে পড়ে যেতেন। তারা ছিলেন সুফফার সদস্য। তাদের এ অবস্থা দেখে বেদুঈনরা বলত, এরা পাগল নাকি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাত শেষ করে তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতেন, আল্লাহ তা‘আলার নিকট তোমাদের যে কি মর্যাদা রয়েছে তা তোমরা জানলে আরো ক্ষুধার্ত, আরো অভাব-অনটনে থাকতে পসন্দ করতে’।[21]
যারা দুনিয়ার চাকচিক্য নিয়ে ব্যস্ত থাকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে তাদের সম্মানী মনে হ’লেও তারা আল্লাহর নিকট অতি নগণ্য। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي ذَرٍّ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ صلى الله عليه وسلم يَا أَبَا ذَرٍّ ارْفَعْ بَصَرَكَ فَانْظُرْ أَرْفَعَ رَجُلٍ تَرَاهُ فِي الْمَسْجِدِ , قَالَ: فَنَظَرْتُ فَإِذَا رَجُلٌ جَالِسٌ عَلَيْهِ حُلَّةٌ فَقُلْتُ: هَذَا , فَقَالَ:يَا أَبَا ذَرٍّ , ارْفَعْ بَصَرَكَ فَانْظُرْ أَوْضَعَ رَجُلٍ تَرَاهُ فِي الْمَسْجِدِ, قَالَ فَنَظَرْتُ فَإِذَا رَجُلٌ ضَعِيفٌ عَلَيْهِ أَخْلَاقٌ فَقُلْتُ: هَذَا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ , لَهَذَا أَفْضَلُ عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ مِلْءِ الْأَرْضِ مِنْ مِثْلِ هَذَا فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، فَفُلَانٌ هَكَذَا وَأَنْتَ تَصْنَعُ بِهِ مَا تَصْنَعُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: إِنَّهُ رَأسُ قَوْمِهِ، فَأَنَا أَتَأَلَّفُهُمْ فِيهِ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَفَلا يُعْطَى مِنْ بَعْضِ مَا يُعْطَى الآخَرُ ؟ قَالَ: إِذَا أُعْطِيَ خَيْرًا فَهُوَ أَهْلُهُ، وَإِنْ صُرِفَ عَنْهُ فَقَدْ أُعْطِيَ حَسَنَةً –
আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন, হে আবু যার! দৃষ্টি উচু করে তাকাও তুমি মসজিদে একজন উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন লোককে দেখতে পাবে। আমি তাকালে সুট পরা এক ব্যক্তিকে বসা দেখলাম। আমি বললাম ইনি? তিনি বললেন, হে আবু যার! দৃষ্টি উচু করে তাকাও তুমি মসজিদে একজন নিম্ন মর্যাদা সম্পন্ন লোককে দেখতে পাবে। তিনি বলেন, আমি তাকিয়ে দেখলাম পুরাতন কাপড় পরিহিত একজন দুর্বল ব্যক্তি। আমি বললাম, এই ব্যক্তি? রাসূল (ছাঃ) বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ, এই ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় হবে ঐরূপ ব্যক্তিদের পৃথিবী ভরে যাওয়া থেকে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ওমুকতো এমন। আর আপনি তার ব্যাপারে যা ইচ্ছে তাই বলছেন? রাসূল (ছাঃ) বললেন, সে গোত্রের নেতা। আর আমি তাদের নিকট তার ব্যাপারে সমালোচনা করলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এমনটি কি হয়না যে, একজনকে যা দেওয়া হলো তা অন্যকেও দেওয়া হলো। তিনি বললেন, যদি কাউকে ভালো কিছু দান করা হয় তাহ’লে সে তার উপযুক্ত। আর যদি তাকে বঞ্চিত করা হয় তাহ’লে তাকে ছওয়াব দেওয়া হবে’।[22]
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِىِّ أَنَّهُ قَالَ مَرَّ رَجُلٌ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لِرَجُلٍ عِنْدَهُ جَالِسٍ. مَا رَأْيُكَ فِى هَذَا . فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ أَشْرَافِ النَّاسِ، هَذَا وَاللَّهِ حَرِىٌّ إِنْ خَطَبَ أَنْ يُنْكَحَ، وَإِنْ شَفَعَ أَنْ يُشَفَّعَ . قَالَ فَسَكَتَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ مَرَّ رَجُلٌ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا رَأْيُكَ فِى هَذَا. فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا رَجُلٌ مِنْ فُقَرَاءِ الْمُسْلِمِينَ، هَذَا حَرِىٌّ إِنْ خَطَبَ أَنْ لاَ يُنْكَحَ ، وَإِنْ شَفَعَ أَنْ لاَ يُشَفَّعَ ، وَإِنْ قَالَ أَنْ لاَ يُسْمَعَ لِقَوْلِهِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم هَذَا خَيْرٌ مِنْ مِلْءِ الأَرْضِ مِثْلَ هَذَا –
সাহল ইবনু সা‘দ সাঈদী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পাশ দিয়ে গেলেন। তখন তিনি তাঁর কাছে উপবিষ্ট একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, এ লোক সম্পর্কে তোমার অভিমত কী? তিনি বললেন, এ ব্যক্তি তো একজন সম্ভ্রান্ত বংশের লোক। আল্লাহর কসম! তিনি কোথাও বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণ করা হবে। আর কারো জন্য সুফারিশ করলে তা শুনা হবে। তখন রাসূলুলাহ (ছাঃ) নীরব থাকলেন। অতঃপর আরেক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর পাশ দিয়ে গেলেন। তখন রাসূলুলাহ (ছাঃ) উপবিষ্ট লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার অভিমত কী? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ ব্যক্তি তো এক দরিদ্র মুসলিম। এ ব্যক্তি কোথাও বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গৃহীত হবে না। আর সে সুফারিশ করলে তা কবূলও হবে না। এবং যদি সে কথা বলে, তার কথা শুনাও হবে না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, দুনিয়া ভরা আগের ব্যক্তি চেয়ে এ ব্যক্তি উত্তম’। [23] অন্যত্র এসেছে,
عَنْ أَبِي وَائِلٍ قَالَ عُدْنَا خَبَّابًا فَقَالَ هَاجَرْنَا مَعَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم نُرِيدُ وَجْهَ اللَّهِ ، فَوَقَعَ أَجْرُنَا عَلَى اللَّهِ ، فَمِنَّا مَنْ مَضَى لَمْ يَأْخُذْ مِنْ أَجْرِهِ ، مِنْهُمْ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ، وَتَرَكَ نَمِرَةً فَإِذَا غَطَّيْنَا رَأْسَهُ بَدَتْ رِجْلاَهُ ، وَإِذَا غَطَّيْنَا رِجْلَيْهِ بَدَا رَأْسُهُ، فَأَمَرَنَا النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ نُغَطِّىَ رَأْسَهُ، وَنَجْعَلَ عَلَى رِجْلَيْهِ مِنَ الإِذْخِرِ، وَمِنَّا مَنْ أَيْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ فَهْوَ يَهْدُبُهَا-
আবু ওয়াইল (রাঃ) বর্ণনা করেন। একবার আমরা খাববাব (রাঃ)-এর শুশ্রূষায় গেলাম। তখন তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের জন্য নবী করীম (ছাঃ)-এর সঙ্গে হিজরত করেছি; প্রতিদান আল্লাহর কাছেই আমাদের প্রাপ্য। আমাদের মধ্যে অনেকেই এ শ্রমফল দুনিয়াতে লাভ করার আগেই ইন্তিকাল করেছেন। তন্মধ্যে মুস‘আব ইবনু উমায়ের (রাঃ), যিনি উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন, তিনি শুধু একখানা কাপড় রেখে যান। আমরা কাফনের জন্য এটা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকলে পা বের হয়ে যেত এবং পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যেত। নবী করীম (ছাঃ) আমাদের আদেশ দিলেন, তা দিয়ে মাথাটা ঢেকে দিতে এবং পায়ের উপর ইযখির ঘাস দিয়ে দিতে। আর আমাদের মধ্যে এমনও আছে, যাঁদের ফল পেকেছে এবং তারা তা সংগ্রহ করছেন’।[24]
(ক্রমশ)
[লেখক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ]
[1]. তাবারাণী আওসাত্ব হা/৭৬৫০; ছহীহাহ হা/৩৪২৭; ছহীহুত তারগীব হা/৩২১৫।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/৪১০২; মিশকাত হা/৫১৮৭; ছহীহুত তারগীব হা/৩২১৩।
[3]. ইবনু মাজাহ হা/৪১০৬; মিশকাত হা/২৬৩; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৭১।
[4]. তিরমিযী হা/৪১০৭; মিশকাত হা/৫১৭২; ছহীহাহ হা/১৩৫৯।
[5]. মুসলিম হা/১০৫৪৭; মিশকাত হা/৫১৬৫; ছহীহাহ হা/১২৯।
[6]. ছহীহাহ হা/১৮৩৪; ছহীহুল জামে হা/৩২৭৫।
[7]. আহমাদ হা/২৩৬৭৩ ; মিশকাত হা/৫২৫১; ছহীহাহ হা/৮১৩।
[8]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৮৯৭; ছহীহাহ হা/৭৬৫।
[9]. ইবনু হিববান হা/২০৮; ছহীহাহ হা/১৩৩৮; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪৮৮।
[10]. ইবনু মাজাহ হা/৪১২৬; ছহীহাহ হা/৩০৮; ছহীহুল জামে হা/১২৬১।
[11]. ইবনু মাজাহ হা/৪১২৫, সনদ ছহীহ।
[12]. গরীব মুসলমানদের প্রতি মক্কার নেতারা বিদ্রূপ করে নানা কথা বলত। তারা বলত, আমাদের মত নেতাদের বাদ দিয়ে আলাহ এইসব নিঃস্বদের উপর অনুগ্রহ করেছেন? মুসলমান হ’লে কি আমাদের এইসব লোকদের আনুগত্য করতে হবে? আর এইসব ক্রীতদাসেরা আমাদের সম-মর্যাদা সম্পন্ন হিসাবে গণ্য হবে? (মুসলিম প্রভৃতি)। তার জওয়াবে অত্র আয়াত নাযিল হয়।
[13]. ইবনু মাজাহ হা/৪১২৭; মুজামুল কাবীর হা/৩৬৯৩; আলবানী, ছহীহ সীরাতুন নববী ১/২২৪।
[14]. তিরমিযী হা/২৩৫৪; আহমাদ হা/১০৭৪১; ছহীহুল জামে হা/৮০৭৬।
[15]. আবুদাউদ হা/৪১৬১; মিশকাত হা/৪৩৪৫; ছহীহুত তারগীব হা/২০৭৪।
[16]. আওনুল মাবূদ১১/১৪৬; হাঃ ৪১৬১-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
[17]. আহমাদ হা/১৫৯৩৩; ছহীহাহ হা/১২৯০।
[18]. তিরমিযী হা/২৪৫৮; মিশকাত হা/১৬০৮; ছহীহুত তারগীব হা/১৭২৪।
[19]. শু‘আবুল ঈমান হা/৩৪১২; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৬৭।
[20]. বুখারী হা/৬৪১৬; মিশকাত হা/১৬০৪; ছহীহুত তারগীব হা/৩৩৪১।
[21]. তিরমিযী হা/২৩৬৮; ছহীহুত তারগীব হা/৩৩০৬; ছহীহাহ হা/২১৬৯।
[22]. আহমাদ হা/২১৪৩৩; ছহীহুত তারগীব হা/৩২০৪।
[23]. বুখারী হা/৬৪৪৭; মিশকাত হা/৫২৩৬।
[24]. বুখারী হা/৬৪৪৮; আহমাদ হা/২১১১৪।