মাশহুর বিন হাসান বিন মাহমূদ আলে সালমান
মুখতারুল ইসলাম
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 10446 বার পঠিত
ড. ছালেহ ফাওযান (৮৪) একজন প্রখ্যাত সালাফী বিদ্বান এবং সঊদী আরবের স্থায়ী শরী‘আহ বোর্ডের একজন উচ্চ পদস্থ বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর প্রকৃত নাম ছালেহ ইবনুল ফাওযান ইবনু আব্দুল্লাহ, ছালেহ ইবনুল ফাওযান আল-ফাওযান। তবে তিনি ছালেহ আল-ফাওযান নামে অধিক পরিচিত। তাঁর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফতোয়া অন লাইন থেকে জানা যায় যে, তিনি আশ-শামাসীয়াহ বংশের ফাওযান গোত্রের ব্যক্তি হিসাবে তাকে ফাওযান বলা হয়।
ড. শায়খ ছালেহ বিন ফাওযান (হাঃ) আল-কাছীম অঞ্চলের বুরায়দাহ শহরের নিকটবর্তী শামাসীয়ার অধিবাসী। তিনি ১৯৩৫ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর মোতাবেক ১লা রজব ১৩৫৪ হিজরী সালে জন্মগ্রহণ করেন। ছোট থাকতেই তাঁর পিতা মারা যান। অতঃপর তিনি ইয়াতীম অবস্থায় স্বীয় পরিবারে প্রতিপালিত হন। শহরের মসজিদের ইমামের নিকট তিনি কুরআন শিক্ষা করেন। শামাসিয়ায় ১৩৬৯ হিজরী সালে যখন সরকারী মাদরাসা চালু করা হয়, তখন তিনি সেখানে ভর্তি হন। অতঃপর বুরায়দা শহরস্থ ফয়ছালীয়া ইবতেদায়ী মাদরাসায় ১৩৭১ হিজরী সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এ সময় তাঁকে ইবতেদায়ী মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। অতঃপর বুরায়দাতে ১৩৭৩ হিজরী সালে যখন ইসলামিক ইন্সটিটিউট খোলা হয়, তখন তিনি তাতে ভর্তি হন। ১৩৭৩ হিজরী সালে তিনি এখানে শিক্ষা সমাপ্ত করেন। অতঃপর তিনি রিয়াদের মুহাম্মাদ বিন সঊদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কুল্লীয়া শারী‘আহ বা শরী‘আহ বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ১৩৮১ হিজরী সালে লিসান্স ডিগ্রী লাভ করেন। অতঃপর তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে ইসলামী ফিক্হের উপর এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন এবং একই বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রীও অর্জন করেন।
কর্ম জীবন :
শরী‘আহ বিভাগ থেকে ডিগ্রী অর্জন করার পর তিনি রিয়াদস্থ ইসলামিক ইন্সটিটিউটে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। অতঃপর তাঁকে শরী‘আহ কলেজের শিক্ষক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। অতঃপর তাঁকে ইসলামী আকীদাহ বিভাগের উচ্চতর শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। কিছুদিন সেখানে শিক্ষকতার পর তিনি আইন ও বিচার বিষয়ক উচ্চতর ইন্সটিটিউটে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং সেখানকার প্রধান নিযুক্ত হন।
সর্বশেষ তাঁকে ইসলামী গবেষণা ও ফতোয়া বিভাগের স্থায়ী কমিটির সদস্য নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে তিনি এই পদেই বহাল রয়েছেন।
এছাড়াও তিনি সঊদী আরবে সিনিয়র ওলামায়ে কেরামের পরিষদ هيئة كبار العلماء-এর সদস্য, রাবেতার পরিচালনাধীন ইসলামী ফিকাহ একাডেমীর সদস্য, ইসলামী গবেষণা ও ফতোয়া বিভাগের স্থায়ী কমিটির সদস্য, হজ্জ মৌসুমে দাঈদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সদস্য এবং রিয়াদ শহরের মালায এলাকার আমীর মুতইব বিন আব্দুল আযীয আল-সঊদ জামে মসজিদের ইমাম, খতীব ও শিক্ষক। তিনি সৌদি আরব রেডিওতে نور على الدرب নামক প্রোগ্রামে শ্রোতাদের প্রশ্নের নিয়মিত উত্তর প্রদান করেন।
এছাড়াও তিনি পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি, গবেষণা, অধ্যয়ন, পুস্তিকা রচনা, ফৎওয়া প্রদান করাসহ বিভিন্নভাবে ইলম চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। এগুলো একত্র করে কতিপয় পুস্তকও রচনা করা হয়েছে। তিনি মাস্টার্স ও ডক্টরেট শ্রেণীর ছাত্রের বেশ কিছু গবেষণাকর্মও তত্বাবধায়ন করেছেন।
তাঁর শিক্ষকমন্ডলী :
তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন শায়খ আব্দুর রাহমান বিন নাছের আস-সা‘দী, শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায, শায়খ আব্দুল্লাহ বিন হুমায়েদ, শায়খ মুহাম্মাদ আল-আমীন শানক্বীতী, শায়খ আব্দুর রাযযাক আফীফী, শায়খ ছালেহ বিন আব্দুর রাহমান আসু সুকাইতী, ৭. শায়খ ছালেহ বিন ইবরাহীম আল-বুলাইহী, শায়খ মুহাম্মাদ বিন সুবাইল, শায়খ ইবরাহীম বিন উবাইদ, শায়খ হামুদ বিন উকালা আশ শু‘আইবী প্রমুখ। এছাড়াও আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শায়খের কাছ থেকে তিনি হাদীছ, তাফসীর এবং আরবী ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন।
তাঁর ছাত্রগণ :
তাঁর বিশিষ্ট ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম হ’লেন শায়খ ড. আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মাদ আস-সাদহান, শায়খ আলী বিন আব্দুর রাহমান আশ-শিবিল, শায়খ ছাগীর বিন ফালেহ আছ-ছাগীর, মাসজিদুল হারামের ইমাম শায়খ আব্দুর রাহমান বিন সুদাইস, মসজিদে নববীর ইমাম শায়খ আব্দুল মুহসিন আল কাসিম, শায়খ ছালেহ বিন ইবরাহীম আলুস শাইখ, শায়খ আয্যাম মুহাম্মাদ আল-শুআয়ইর। এছাড়াও তাঁর অনেক ছাত্র রয়েছে। তারা নিয়মিত তাঁর মজলিসে এবং নিয়মিত দারসগুলোতে অংশগ্রহণ করতেন।
লেখনীসমূহ :
তাঁর লিখিত গ্রন্থসংখ্যা অনেক। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’ল :
তাঁর সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের মন্তব্য :
সঊদী আরবে যেসব বিজ্ঞ ও প্রসিদ্ধ আলেম এখনো জীবিত আছেন তাদের মধ্যে শায়খ ছালেহ আল-ফাওযান একটি উজ্জ্বলতম নাম। বর্ণিত আছে যে, শায়খ বিন বায (রহ.)-কে যখন জিজ্ঞাসা করা হ’ল, আপনার পরে আমরা কার কাছে দ্বীনের বিষয়াদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব? জবাবে বিন বায (রহ.) বলেন, আপনারা ছালেহ আল-ফাওযানকে জিজ্ঞাসা করবেন।
এমনিভাবে শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন (রহ.)-কে যখন জিজ্ঞাসা করা হ’ল, ‘আমরা আপনার পরে কাকে জিজ্ঞাসা করবো? তিনি জবাব দিলেন যে, আপনারা ছালেহ ফাওযানকে জিজ্ঞাসা করবেন। কেননা তিনি একজন ফকীহ এবং ধার্মিক’।
শায়খ আব্দুল্লাহ আল-গুদাইয়্যান প্রায়ই বলতেন, আপনারা দ্বীনের ব্যাপারে শায়খ ছালেহ আল-ফাওযানকে জিজ্ঞাসা করবেন। আল্লাহ যেন তাঁর আনুগত্যের উপর তাঁর বয়স বৃদ্ধি করেন, তাঁর শেষ পরিণাম যেন ভালো করেন এবং যেন হকের উপর তাঁকে টিকিয়ে রাখেন।
আল্লাহ রাববুল এই জ্ঞানতাপসকে হায়াতে তাইয়েবা দান করুন এবং ইলম থেকে আমাদেরকে ফায়দা হাছিল করার তাওফীক দান করুন। আমীন!