দৃষ্টির হেফাযত : গুরুত্ব ও উপকারিতা

আব্দুল মুহাইমিন 10704 বার পঠিত

দৃষ্টি বা দর্শনশক্তি মহান আল্লাহর অপার দান, যা মানুষকে সঠিক বা বেঠিক রাস্তা প্রদর্শন করে থাকে। সঠিক পথের দিশা মানুষকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। কিন্তু যদি তা হয় বেঠিক বা অসত্য পথের দিশা, তবে তা মানুষকে চুড়ান্ত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়ে দেয়। নিম্নে আমরা দৃষ্টিশক্তির সদ্ব্যবহার ও উপকারিতা বিষয়ে আলোচনার প্রয়াস পাব।

আল্লাহর আদেশ পালনের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি লাভ :  

দৃষ্টির হেফাযতের ব্যাপারে আল্লাহ বারাংবার আদেশ দিয়েছেন। দৃষ্টি তথা চোখকে অন্যায় অশ্লীলতা হ’তে অবনমিত রাখতে বলেছেন।

মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ- ‘তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে’ (নূর ২৪/৩০)। তাহলে দৃষ্টিশক্তি তথা চক্ষুকে নিম্নগামী করা আল্লাহর আদেশ। এই আদেশ পালনের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।

জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভ :

চক্ষুকে অন্যায় ও অশ্লীলতা হ’তে হেফাযতের মাধ্যমে একজন মানুষ নিজেকে জাহান্নাম হ’তে বাঁচাতে পারে। এ ব্যাপারে হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثلاثةٌ لا تَرَى أعْيُنُهُمْ النَّارَ يَوْمَ القِيامَةِ : عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خِشْيَةِ الله وعَيْنٌ حَرَسَتْ في سَبِيلِ الله وَعَيْنٌ غَضَّتْ عن مَحارِمِ الله- ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হ‘তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তিন শ্রেণীর চক্ষু জাহান্নাম দর্শন করবে না (জাহান্নামে যাবেনা)- ১. যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে। ২. যে চক্ষু আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়। ৩. যে চক্ষু আল্লাহর হারামকৃত বস্তু হ’তে নিম্নগামী হয়’।[1]

জান্নাত লাভ :

জান্নাতে যাওয়ার ৬টি মাধ্যমের মধ্যে অন্যতম হ’ল দৃষ্টিশক্তি বা চক্ষুকে নিম্নগামী করার মাধ্যমে হেফাযত করা। যেমন হাদীছে এসেছে, عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ اضْمَنُوا لِى سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَضْمَنْ لَكُمُ الْجَنَّةَ اصْدُقُوا إِذَا حَدَّثْتُمْ وَأَوْفُوا إِذَا وَعَدْتُمْ وَأَدُّوا إِذَا ائْتُمِنْتُمْ وَاحْفَظُوا فُرُوجَكُمْ وَغُضُّوا أَبْصَارَكُمْ وَكُفُّوا أَيْدِيَكُمْ- উবাদা বিন ছামেত (রাঃ) হ‘তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা আমাকে ৬টি বিষয়ের যিম্মাদারী দাও তাহ’লে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের যিম্মাদার হয়ে যাব। আর তা হ’ল- ১. কথা বললে সত্য বলবে, ২. ওয়াদা করলে তা পূর্ণ করবে। ৩. আমানত রাখা হলে তা পূর্ণরূপে আদায় করবে। ৪. লজ্জাস্থান হেফাযত করবে। ৫. চক্ষু নিম্নগামী করবে এবং ৬. হাতকে সংবরণ করবে।[2]

আল্লাহর পাকড়াও হ’তে মুক্তি লাভ :

দৃষ্টিশক্তির হেফাযতের মাধ্যমে একজন মানুষ আল্লাহর দরবারে এর অপব্যবহারের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا- ‘নিশ্চয়ই কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় প্রত্যেকটির বিষয়ে তোমরা (ক্বিয়ামতের দিন) জিজ্ঞাসিত হবে (ইসরা ১৭/৩৬)

আল্লাহ আমাদের নে‘মত স্বরূপ কর্ণ, চক্ষু, অন্তঃকরণ দান করেছেন তার পথে কাজে লাগানো জন্য। যে এর বিপরীত কাজে তা ব্যয় করবে নিশ্চয় আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন, যার হুঁশিয়ারী উপরোক্ত আয়াতে সুস্পষ্টরূপে উচ্চারিত হয়েছে।

লজ্জাস্থানের হেফাযত :

লজ্জাস্থানের হেফাযত করা একটি মহৎ গুণ ও কষ্টসাধ্য কাজ, তা অর্জন করা যায় চক্ষুকে হেফাযতের মাধ্যমে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,

قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ-

‘তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে’ (নূর ২৪/৩০)। এ আয়াতে আল্লাহ লজ্জাস্থান হেফাযতের পূর্বে দৃষ্টিকে অবনমিত করার আদেশ দেওয়ার মাধ্যমে বুঝা যায় যে, লজ্জাস্থান সংরক্ষণের পূর্ব মাধ্যম হ’ল দৃষ্টিশক্তির সংরক্ষণ।

সৎচরিত্র অর্জন :

মুমিন সর্বদা সৎচরিত্রের অধিকারী হবে। আর সৎচরিত্র অর্জনের পূর্বশর্ত হ’ল দৃষ্টিশক্তির হেফাযত। দৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের চরিত্রের অধঃপতন নেমে আসে। কাজেই সৎচরিত্র অর্জনের ক্ষেত্রে অন্যতম বিষয় হলো দৃষ্টিশক্তির হেফাযত করা।

অন্তরের পরিশুদ্ধিতা অর্জন :

হারাম এবং অন্যায়ের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপের ফলে তা অন্তরে গেঁথে যায়। পরবর্তীতে মানুষ তার কল্পনা জগতের অবাস্তব পাপকে পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। এ ব্যাপারে হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ يَنْظُرُ الرَّجُلُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ وَلاَ الْمَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ-

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন পুরুষ যেন অন্য পুরুষের লজ্জাস্থান না দেখে অনুরূপ কোন নারী যেন অন্য নারীর লজ্জাস্থান না দেখে’।[3] কেননা সে তা দেখার পর তার অন্তর অন্যায় পরিকল্পনা করার মাধ্যমে পাপে লিপ্ত হবে।

চোখের যেনা হ’তে রক্ষা :

অন্যায় ও হারামের প্রতি দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে চোখের যেনা সংঘটিত হয়। চক্ষুকে নিম্নগামী করার মাধ্যমে আমরা এরূপ ভয়াবহ পাপ হতে বাঁচতে পারি। এ মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,  فَالْعَيْنُ زِنْيَتُهَا النَّظَرُ- ‘চোখের যিনা হল তা দিয়ে কিছু দর্শন করা’।[4] কাজেই দৃষ্টির হেফাযতের মাধ্যমে এই যেনা হ’তে বাঁচা যায়।

আমানতদারিতা ও বীরত্বের প্রতীক :

একজন মানুষের আমানতদারিতা ও বীরত্বের প্রকৃতি ফুটে উঠে তার দৃষ্টিশক্তির হেফাযতের মাধ্যমে। যে ব্যক্তি তার চোখের অপব্যবহার রোধ করতে পারে, সে নিঃসন্দেহে আল্লাহ প্রদত্ত চোখের আমানত যথাযথভাবেই আদায় করেছে এবং নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে অন্যায় হ’তে দৃষ্টিশক্তির হেফাযত করা যুদ্ধের চাইতে বড় বীরত্ব প্রদর্শন। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,قَالَتْ إِحْدَاهُمَا يَا أَبَتِ اسْتَأْجِرْهُ إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ- ‘অতঃপর মেয়ে দু’টির একজন বলল, হে পিতা! একে কর্মচারী নিযুক্ত করুন! নিশ্চয়ই আপনার কর্মসহায়ক হিসাবে সেই-ই উত্তম হবে, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত (ক্বাছাছ ২৮/২৬)। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় যে, ‘হযরত শু‘আইব (আঃ)-এর একজন কন্যা মূসা (আঃ)-কে কাজের লোক হিসাবে নিযুক্তির ব্যাপারে সুফারিশ করে মুসা (আঃ)-এর বীরত্ব ও আমানতদারিতার গুণদ্বয় উল্লেখ করেছেন। তখন তার পিতা শু‘আইব (আঃ) তাকে প্রশ্ন করলেন, হে আমার কন্যা! তুমি কিভাবে তার বীরত্ব ও আমানতদারিতা জানতে পারলে? তখন সে উত্তর দিল যে, সে মুসা (আঃ) যখন আমাদের ছাগলগুলোকে কূপ হ’তে পানি উত্তোলন করে পান করাচ্ছিলেন তখন আমি তার বীরত্বের ব্যাপারে অবগত হই। আর সে আপনার পত্র তার হস্তগত না হওয়া পর্যন্ত আমার প্রতি মাথা উত্তোলন করেনি এবং চলার পথে আমাকে পিছনে রেখে চলেছেন। এর মধ্যমে আমি তার আমানতদারিতা সম্পর্কে অবগত হয়েছি। তাই বলা যায় যে, দৃষ্টিশক্তির হেফাযত করা অবশ্যই আমানতদারিতা ও বীরত্বের প্রতীক।[5] মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ ‘তিনি জানেন তোমাদের চোখের চুরি ও অন্তরের লুকানো বিষয়সমূহ’ (মুমিন ৪০/১৯)

নবী-রাসূলগণ (আঃ) ও সালাফদের অন্যতম গুণ অর্জন :

যারা আমাদের পূর্বসূরী নেক ও সৎ ব্যক্তি ছিল তাদের গুণ ছিল সর্বদা দৃষ্টিকে হেফাযত করা। আর তারা তাদের নেক আমল ও আল্লাহর অনুগ্রহে মুক্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। তাই তাদের এই গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে আমরাও মুক্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি। একদা সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ)-এর নিকটে একজন মহিলা এসে কিছু প্রশ্ন করতে চাইলে তিনি তাকে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে পর্দার সাথে প্রশ্ন করতে বললেন’।[6]

অন্তর আলোকিত হওয়া : যারা অন্যায় ও অশ্লীলতা হ’তে তাদের দৃষ্টিকে হেফাযত করবে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে আলোকিত করে দিবেন। শয়তান মানুষকে ধ্বংস করার জন্য যে কয়টি কাজকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেন তন্মধ্যে দৃষ্টিশক্তি অন্যতম। প্রথমে শয়তান মানুষের অন্তরে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা সৃষ্টি করে দৃষ্টিশক্তি বিষের মত কাজে লাগায় এবং সবশেষে তাকে ধ্বংস করে।

একটি দুর্বল বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে, ‘দৃষ্টিশক্তি (চক্ষু) হ’ল ইবলিসের তীর সমূহের একটি অন্যতম তীর। কাজেই যে ব্যক্তি কোন সুন্দরী রমণী হ’তে তাঁর দৃষ্টিকে নিম্নগামী করল আল্লাহ তার অন্তরকে আলোকিত করে দিবেন।[7]

অতএব অন্তরকে আল্লাহ প্রদত্ত নূরের আলোয় আলোকিত করতে হ’লে আমাদের সকলকে দৃষ্টিশক্তির হেফাযত করে চক্ষুকে নিম্নগামী করতে হবে।

অন্তরের খটকা, অশান্তি ও পাপ হ’তে মুক্তি লাভ : 

চক্ষু যা দেখে অন্তর তা-ই বারবার চিন্তা করে ও তা নিয়ে ধোঁকায় নিপতিত হয়। কখনো এমন দৃশ্য চক্ষু দ্বারা আমরা দর্শন করি যা অন্তরের শক্তিকে ছিনিয়ে নিয়ে তাকে বিষাদের ছায়ায় ঢেকে দেয়। আবার মনে নানা খটকার জন্ম দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলে এবং এর মাধ্যমে অন্তরের পাপে আমাদের ধাবিত করে। কাজেই এই সকল পাপ ও মনের খটকা হ’তে বাঁচতে হ’লে দৃষ্টিশক্তির হেফাযতের বিকল্প নাই।

অশ্লীলতার প্রসার রোধ :

আমরা হাযারো অশ্লীলতা উপভোগ করে থাকি। দৃষ্টিশক্তির যথাযথ হেফাযতের মাধ্যমে এই সকল অশ্লীলতা প্রসার রোধ করা যায়। যেনা-ব্যভিচার সহ এই ধরনের সকল পাপের জন্মদাতা হ’ল দৃষ্টির অপব্যবহার। কাজেই দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হ’লে এই সব অশ্লীলতার প্রসার রোধ সম্ভব হবে।

রাস্তার হক আদায় :

ইসলামে রাস্তায় চলাচলেরও বেশকিছু হক (করণীয়) রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হ’ল দৃষ্টিকে নিম্নগামী করা। হাদীছে এসেছে, তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাক। তবে একান্তই বসতে হলে রাস্তার হক (করনীয়) আদায় করে বসবে। ছাহাবাগণ প্রশ্ন করলেন,وَمَا حق الطَّرِيق يَا رَسُول الله؟ قَالَ: غض الْبَصَر ‘রাস্তার হক আবার কি হে আল্লাহর রাসূল? রাসূল (ছাঃ) বললেন, চক্ষুকে নিম্নগামী করা’।[8]

অতএব, রাস্তায় চলাকালে আমাদের দৃষ্টি নিচু করে চলতে হবে যাতে কোন অনাকাংখিত বা অন্যায় বস্ত্ত দেখতে না হয়। তাযকিয়াতুন নাফস হাছিল :

তাযকিয়াতুন নাফস হ’ল অন্তরের পরিশুদ্ধিতা অর্জন। যাবতীয় পাপাচার ও অনর্থক কার্যাবলী হ’তে বেঁচে থাকার মাধ্যমে তা অর্জিত হয়। জান্নাত লাভের পূর্বশর্ত হ’ল তাযকিয়াতুন নাফস বা অন্তরের পরিশুদ্ধিতা অর্জন। আর তা অর্জনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হ’ল দৃষ্টির হেফাযত। আল্লাহ বলেন, قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ-  ‘হে নবী, মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিম্নগামী করে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করে। এর মাধ্যমে তারা পরিশুদ্ধিতা লাভ করতে পারবে’ (নূর ১৭/৩০)

কাজেই তাযকিয়াতুন নাফসের বড় মাধ্যম হ’ল দৃষ্টির হেফাযত। আমাদের সকলের তা অর্জনের চেষ্টা-প্রচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া উচিত।

ক্বিয়ামতের দিনের বিপর্যয় হ’তে রক্ষা :

যারা দৃষ্টিশক্তির যথাযথ হেফাযত করবে তারা ক্বিয়ামাতের মাঠে ক্রন্দন (আযাব) হ’তে রক্ষা পাবে। এ মর্মে একটি দুর্বল বর্ণনায় এসেছে যে, ক্বিয়ামতের দিনে প্রত্যেক চক্ষু ক্রন্দন করবে তবে ঐ চক্ষু ব্যতীত যে চক্ষু আল্লাহর হারামকৃত বস্তুতে নিম্নগামী হয়ে যায়।[9] তাই ক্বিয়ামতের ময়দানের ভয়াবহ আযাব হ’তে রক্ষা লাভের বিশেষ মাধ্যম হ’ল দৃষ্টিশক্তির হেফাযত।

আমল মযবুতকরণ :

একজন মুমিনের সফলতার মাধ্যম যেমন দৃষ্টির হেফাযত, তেমনি ঈমান ও আমলের মযবুতির প্রতিবন্ধকতা হ’ল দৃষ্টির অপব্যবহার। বিধায় দৃষ্টিশক্তির যথাযথ হেফাযতের মাধ্যমে মুমিনের আমল আরো সুদৃঢ় ও মযবুত হয়।

ইসলামের সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ :

ইসলামের চির শাশ্বত অন্যতম বিধান হল দৃষ্টির হেফাযত। এর মাধ্যমে ইসলামের সার্বিক সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তাই এর মাধ্যমে মুমিন যেমন নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পারে তেমনি অন্যান্য ধর্মালম্বীদের নিকটে ইসলামের চিরন্তন ও শাশ্বত সৌন্দর্য তুলে ধরতে পারে। এর অন্যতম প্রমাণ হ’ল অনেক অমুসলিম যুবক ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ধর্মান্তরিত হচ্ছে।

উপসংহার :

সুনযর বা কুনযর মহান আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে নয়। কাজেই দৃষ্টির হেফাযতের উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেককেই গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে এবং আমাদের প্রাত্যহিক যিন্দেগীতে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন- আমীন।

 [লেখক : সাধারণ সম্পাদক, ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ রাজশাহী কলেজ শাখা]


[1]. ত্বাবারানী, মু‘জামুল কাবীর হা/১০০৩, ২০৪১০, ২৬৬১৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/ ২৬৭৩; তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১২৩১

[2]. মুসনাদ আহমাদ হা/২২৭৫৭; মিশকাত হা/৪৮৭০; সিলসিলা ছহীহাহা/১৪৭০

[3]. তুহফাতুল আহওয়াযী হা/২৭৯৩; মুসলিম হা/৩৩৮; ইবনে মাজাহ হা/৬৬১

[4]. বুখারী হা/৬২৪৩, ৬৬১২; মুসলিম হা/২৬৫৭; আবু দাউদ হা/২১৫২; আহমাদ হা/৮২১৫

[5]. নাসাঈ কুবরা হা/১১২৬৩, আবু ইয়ালা হা/২৬১৮, ফাযলু গাযি্যল বাছার, মুহাম্মাদ বারা ইয়াছিন; পৃ. ৪০. www.Alukah.net

[6]. যাম্মুল হাওয়া, আল্লামা ইবনু যাওযী (৫৯৭ হিঃ), পৃ. ১২১; তাহক্বীক মুস্তফা আব্দুল ওয়াহেদ

[7]. গায্যুল বাছার, শায়খ নেদা আবু আহমাদ, পৃ. ১৬ .www.Alukah.net)

[8]. বুখারী হা/৬২২; মুসলিম হা/২১২১; মিশকাত হা/৪৪৩৩

[9]. যাম্মুল হাওয়া, ইবনুল জাওযী, পৃ. ১৪১. www.Alukah.net.



আরও