সফল খতীব হওয়ার উপায়

শরীফুল ইসলাম 9748 বার পঠিত

ভূমিকা :

হে সর্বশ্রদ্ধেয় খতীব! আপনার প্রতি যথাযথ অভিবাদন জ্ঞাপন করছি, কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বাণীসমূহ মানুষের কর্ণকুহরে পোঁছে দেয়ার জন্য আপনাকে নিযুক্ত করেছেন। আর স্বয়ং নবী (ছাঃ) আপনার কথা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। হে খতীব! আপনি প্রতি জুম‘আয় মুছল্লীদের সামনে বিপদগামীদের পথপ্রদর্শন, পাপীদের হেদায়াত ও দ্বীনের নির্দেশিত পথ দেখানোর জন্য নছীহতের ঝুড়ি নিয়ে দন্ডায়মান হন। আপনার প্রতি আমার সশ্রদ্ধ ভালোবাসা ও স্নেহমাখা বার্তা প্রেরণ করছি, সম্ভবতঃ তা আপনার দায়িত্ব পালনে সহায়ক হবে।

খতীবের জন্য আবশ্যকীয় বিষয় :

হে দাঈ ইলাল্লাহ! সর্বপ্রথম আমি আপনাকে আপনার নিয়তের বিশুদ্ধতা ও একনিষ্ঠতার পরিপূর্ণতার অছিয়ত করছি, যতক্ষণ না আপনার কথা ও উপদেশ মানুষের মনে ঐভাবে প্রভাব ফেলে, যেমনভাবে সন্তানহারা শোকাতুর মহিলার মনে ভাড়াটে বিলাপকারী প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। অতঃপর লক্ষ্য করুন! আপনার প্রত্যেক জুম‘আর খুৎবার দৃষ্টান্তমূলক উপদেশমালা ও কথার ফুল্গুধারা জনগণের মাঝে কেমন প্রভাব ফেলেছে।

হে আমার ভাই! যদি আপনি দাঈ ইলাল্লাহার সমস্ত গুণে গুণান্বিত হন, তাহলে ইনশাআল্লাহ্ আপনার দাওয়াত ও আপনার উচ্চ মর্যাদা ত্বরান্বিত হবে। যা আপনাকে আপনার মনোমুগ্ধকর প্রচেষ্টার দিকে আরো বহুগুণে এগিয়ে দিবে। হে ভাই! অবশ্যই আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াতের পথে নিঃস্বার্থ খাদেম হিসাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে এবং সংস্কারমূলক ব্রত নিয়ে সামনে এগাতে হবে। তবেই তা আপনার সমাজ ও জাতি গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে।

হে নবীদের ওয়ারিছ! স্বরণ রাখুন, নিশ্চয় একনিষ্ঠতা আপনার মূলধন, আর দ্বীন প্রচার আপনার ঈমানী স্ফুরণ। সুতরাং আপনি দৃঢ়ভাবে আত্মদ¦ন্দ্ব বিদূরিত করুন, আর নিজেকে ব্যক্তিস্বার্থের উর্দ্ধে রাখুন। তবেই আপনি সম্মানের সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত হবেন। আর আপনার প্রতিটি কথা-কাজের লক্ষ্যই হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এর বিনিময়ে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতার আশা রাখবেন না। কেননা একনিষ্ঠবাদীদের সমস্ত আমল, কথা-বার্তা, দান-খয়রাত, আদেশ-নিষেধ, ভালোবাসা, শত্রুতা, প্রকাশ্য ও গোপন ছাদাকা, আচার-ব্যবহার একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ-

‘আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশই দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন খালেছ অন্তরে একনিষ্ঠভাবে কেবলমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করে (বাইয়েনাহ  ৯৮/৫)।

আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় নবীকে লক্ষ্য করে বলছেন, হে নবী! আপনি বলে দিন, إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ আমার ছালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ, সবই বিশ্বপালক আল্লাহর জন্য...(আন‘আম ৬/১৬২)।

মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়া চায় আমি তাকে দ্রুত দিয়ে দেই, যা আমরা চাই, যার জন্য চাই। তারপর তার জন্য নির্ধারণ করি জাহান্নাম, সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত, বিতাড়িত অবস্থায়’ (ইসরা ১৭/১৮)।

অতএব যে ব্যক্তি আখেরাত ব্যতীত শুধুমাত্র দুনিয়ার তাৎক্ষণিক ফলাফল কামনা করে, তার প্রচেষ্টা শুধু একটাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। কেননা সে পরকালে বিশ্বাসী নয়। আল্লাহ তা‘আলা তার তাক্বদীরে প্রাপ্য কিঞ্চিত পরিমাণ ত্বরিৎগতিতে তাকে প্রদান করেন। পরিশেষে তার জন্য পরকালে জাহান্নাম নির্ধারণ করবেন। ফলে তাকে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে নিন্দিত, লাঞ্চিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। আর এটাই হল আখেরাতবিহীন দুনিয়ামুখী কর্মকা-ের দুঃখজনক পরিণতি। আর ইখলাছশূন্য প্রবঞ্চনামূলক দুনিয়াবী আমলসমূহ চিরদিনই আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত। যেকোন আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হ’ল তিনটি : (১) আক্বীদা বিশুদ্ধ হওয়া (২) সঠিক পদ্ধতিতে হওয়া এবং (৩) কাজটি নিঃস্বার্থভাবে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য হওয়া (যুমার ৩৯/২)।

মহান আল্লাহ হাদীছে কুদসীতে বলেন,أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِى غَيْرِى تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ- ‘আমি শরীকদের শিরক হতে মুক্ত। যদি কোন লোক কোন আমল করে এবং এতে আমি ছাড়া অপর কাউকে শরীক করে, তবে আমি তাকে ও তার শিরকী আমলকে প্রত্যাখ্যান করি’।

পরকালীন শাস্তির ব্যাপারে অত্র হাদীছে সতর্ক করা হয়েছে, যা রাসূল (ছাঃ) ইখলাছ বিহীন আমলকারীর জন্য ভবিষ্যতবাণী করেছেন। এছাড়া যাদের আমলসমূহ আল্লাহর জন্য নিবেদিত ছিলনা, ছহীহ মুসলিমের অপর হাদীছে তা পরিস্কারভাবে এসেছে।  তিন ধরনের মানুষ দ্বারা জাহান্নামকে প্রজ্বলিত করা হবে, আর তারা হলেন-

১. খতীব (দ্বীন প্রচারক)  ২. দানশীল ৩. শহীদ।

খতীব যিনি আল্লাহর কিতাব কুরআন সংরক্ষণ করেছেন। যিনি বিশুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন তেলাওয়াত  করেন এবং তার তাফসীর করেন। রাত্রি জাগরণ করে জ্ঞান অর্জন করেন। তার পান্ডিত্য ও জ¦ালাময়ী বক্তব্যের কারণে জনগণ তাকে খতীব (বক্তা) হিসেবে অভিহিত করে। তারা কি করে আগুনের অভিযাত্রী হবে? দ্বিতীয় ব্যক্তি ঐ দানশীল যাকে আল্লাহ তা‘আলা ধন সম্পদ দিয়েছেন। সে তার সম্পদ দান করে। সমাজের লোকেরা তাকে দানশীল বলে। তবুও তাকে জাহান্নামে প্রবিষ্ট হ’তে হবে। তৃতীয় ব্যক্তি হল যোদ্ধা। দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে দ্বীনের পতাকাতলে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েও কি করে জাহান্নামের অধিবাসী হতে হবে?

সুতরাং এটি কেমন অকল্পনীয় বিষয় যে,  উক্ত তিন শ্রেণী সম্পর্কে যা বর্ণিত হ’ল। তাদের এই পরিণতির  কারণ তাদের ইখলাছশূন্য আমল। নিশ্চয় তারা অনুরূপ যা তাদের সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং অপরিহার্য বিষয় হ’ল ব্যক্তি একনিষ্ঠতার অনুসন্ধান করবে আর ইখলাছ বিধ্বংসী (বিনষ্টকারী) বিষয় হতে সজাগ থাকবে। কেননা কোন হৃদয়ে একসঙ্গে একনিষ্ঠতা ও প্রশংসা, স্তুতি (বাহবা) পাওয়ার আকাংখা একত্রিত হতে পারে না। যেমন কখনোই আগুন,  পানি, অথবা সাপ ও মাছ সহাবস্থান করতে পারে না। যখন ইখলাছের আবশ্যকতা ভবিষ্যত বংশধরের নিকট পরিস্কার হয়ে যাবে, তখন তাদের আগামী দিন চলার পথ পরিস্কার হবে। ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেন,

رب عمله صغير تعظيمه النية ورب عمله كبير تصغيره النية-

‘কোন কোন ছোট আমল নিয়তের খুলূছিয়াতের কারণে মহান হয়, আবার কতক বড় আমল একনিষ্ঠ নিয়তের অভাবে ছোট হয়’। যেমনভাবে হাদীছে এসেছে ,

إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى ، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ-

আমল (এর প্রাপ্য হবে) নিয়ত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে, তবে তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হবে, যে জন্যে সে হিজরত করেছে।  কিলানী বলেন- كن صحيحا فى السر تكن فصيحا فى العلانية ‘আড়ালে সৎ হও, তাহলে প্রকাশ্যে বিশুদ্ধভাষী হতে পারবে’।

সুতরাং জেনে রাখুন হে খতীব! সত্য কথা, স্পষ্ট বর্ণনা,  বেগবান শব্দ, উন্নত কৌশল ব্যতীত আপনার বক্ষকে প্রশস্ত করা হবে না।  পক্ষান্তরে  অস্পষ্ট উচ্চারণ হীন বাক্য প্রয়োগ হলো দূর্গন্ধযুক্ত উষ্ণতা যা মানুষের অন্তর আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং বক্ষকে যখম করে ফেলে। প্রবাদে আছে,

رب قول أشد من جرح سيف-

‘কথার আঘাত তরবারীর আঘাতের চেয়ে বেশি মারাত্মক’।

আর খতীবের উপর আবশ্যকীয় বিষয় হ’ল, আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে জানা ও তাঁর ছিফাতী গুণাগুন সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখা। তাহলে অবশ্যই তিনি ঈমানের স্তরগুলোর এমন স্তরে পৌঁছবেন, যা আল্লাহ তা‘আলা নির্বাচন করেছেন কেবলমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্য। সেই কাংখিত সন্তুষ্টির লাভের জন্য প্রত্যেক প্রত্যাশী বান্দা অগ্রবর্তী হবেন। কেননা ইখলাছ বক্তব্যসমূহকে অবশ্যই চিত্তাকর্ষক করে তোলে এবং দাওয়াতের জন্য দ্রুত গতিশীল করে।

ইবনুল জাওযী (রহঃ) একনিষ্ঠবাদীদেরকে সারিবদ্ধ করেছেন। তাঁর ভাষায়, নিশ্চয় একনিষ্ঠবাদী মুমিন পুরুষ নর-নারীগণকে আল্লাহ তা‘আলা কেবল পৃথিবীতে বাহ্যিকভাবে হেফাযত করবেন তা নয়। বরং তিনি তাদেরকে অদৃশ্যভাবেও হেফাযত করবেন। আর তারা তাদের প্রভুর নিকটে ধারণার চাইতেও অধিকতর মর্যাদার অধিকারী হবেন।

অতএব হে প্রচারক দ্বীনী ভাই! আল্লাহর পথের দিকে ইখলাছের সাথে অগ্রসর হউন, যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে পারেন। অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। যার দরুন আপনাকে প্রভূত পুরস্কারে ভূষিত করবেন, প্রচুর পরিমাণে নে‘আমত দান করবেন  এবং অতি উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন করবেন। এজন্য যখন সৎ কাজ সম্পাদন করা হয় তখন তা অবশ্যই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। 

আর পাপ কর্মসমূহে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। আর যখন আল্লাহকে আহবান করা হয় অর্থাৎ তার নিকটে প্রার্থনা করা হয় তখন তিনি আহবানে সাড়া দেন। আল্লাহ্ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى الْحُرُّ بِا لْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْأُنْثَى بِالْأُنْثَى فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ ذَلِكَ تَخْفِيفٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَرَحْمَةٌ فَمَنِ اعْتَدَى بَعْدَ ذَلِكَ فَلَهُ عَذَابٌ أَلِيمٌ-

‘হে বিশ্বাসীগণ! নিহতদের রক্তের বদলা গ্রহণের বিষয়টি তোমাদের উপর বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীনের বদলে স্বাধীন, দাসের বদলে দাস ও নারীর বদলে নারী। এক্ষণে তার ভাইয়ের পক্ষ হ’তে যদি তাকে কিছু মাফ করে দেওয়া হয়, তবে সেটা যেন সুন্দরভাবে তাগাদা করা হয় এবং তাকে ভালভাবে তা পরিশোধ করা হয়। এটা তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ হ’তে লঘু বিধান ও বিশেষ অনুগ্রহ। অতঃপর যদি কেউ এর পরে বাড়াবাড়ি করে, তবে তার জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি (বাক্বারাহ  ২/১৭৮)।

আল্লাহ আরো বলেন,   سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ

‘তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা ভাল ছিলে। অতএব স্থায়ীভাবে থাকার জন্য এখানে প্রবেশ কর’ (যুমার ৩৯/৭৩)।

সফল খতীবের গুণাবলী :

সফল খতীবের কতিপয় গুণাবলী ও মূল উপাদানসমূহ যা প্রচারকের নিজ স্বজাতির ও সমাজের উপকার সাধনে সহায়ক হবে। তা নি¤েœ উল্লেখ করা হল,

(১) প্রথমতঃ দায়িত্বানুভূতি :

খতীবের এই অনুভূতি থাকবে যে, নিশ্চয় সে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই মানুষের নিকটে দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছে। যদিও দাওয়াত পৌঁছে দেয়া তার চাকুরী হয়। তা’হলে  নিন্দুকরা নিন্দা করবে। ফলে নিন্দাজ্ঞাপন বক্তাকে প্রত্যেক ক্ষেত্রে তার সক্ষমতাকে নিঃশেষ করে দিবে। বরং প্রকৃত খতীব কখনো হতাশ ও নিরাশ হন না। অর্থাৎ নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না। আর প্রকৃতপক্ষে খতীবের অন্তরে সুখানুভূতির পূর্ণতা লাভ করবে, তখনই সাফল্য তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে। প্রকৃত বক্তাকে আল্লাহ সর্বোত্তম মানুষ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।  আল্লাহর বলেন,

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ-

‘আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম? যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই ‘আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (ফুছছিলাত ৪১/৩৩) ।

অর্থাৎ কার কথা দাঈ ইলাল্লাহ চেয়ে উত্তম হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াতের প্রদীপ বহন করে এবং নিজে তার পথে অনুসরণ করে ও সমস্ত বিধান ও শিক্ষা সমূহের পুরোপুরি অনুসরণ করে। আর দাঈ অথবা খতীবের উচিৎ নিজেকে এই বলে পরিচয় ও সম্পর্কযুক্ত করা যে, নিশ্চয় সে মুসলিম অর্থাৎ সংকীর্ণ উপদলীয় থেকে এবং সীমাবদ্ধ চিন্তাভাবনা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। কেননা ইসলাম হ’ল  মূল ও সর্বোত্তম।  আর সকল প্রভাব বিস্তারকারী খতীব হ’লেন তিনি যার বাহন হ’ল ইখলাছ, যার মাধ্যমে তিনি দক্ষতার চূড়ায় পৌঁছেন এবং নশ^র নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের বন্ধনের ভয়ে এর মায়াজালকে বস্তাবন্দী করে রাখেন অর্থাৎ প্রকৃত দ্বীন প্রচারক দুনিয়ার লোভ লালসায় নিজেকে জড়ান না। আল্লাহ বলেন,

وَمَا أُوتِيتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَزِينَتُهَا وَمَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ وَأَبْقَى أَفَلَا تَعْقِلُونَ-

‘আর তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা দুনিয়ার জীবনের ভোগ ও সৌন্দর্য মাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তাই উত্তম ও স্থায়ী। তোমরা কি বুঝবে না? (ক্বাছাছ  ২৮/৬০) ।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

فَمَا أُوتِيتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ وَأَبْقَى لِلَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ-

‘আর তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা দুনিয়ার জীবনের ভোগ্য সামগ্রী মাত্র। আর আল্লাহর নিকট যা আছে তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী তাদের জন্য যারা ঈমান আনে এবং তাদের রবের উপর তাওয়াক্কুল করে’ (শুরা ৪২/৩৬)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا - وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى

‘বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম ও চিরস্থায়ী (আ‘লা ৮৭/১৬-১৭)।

অতঃপর জেনে রাখুন হে খতীব! অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে মনোনীত করেছেন তার দাওয়াত বহন করার জন্যে, তার আমানত সমূহ (দ্বীন ইসলাম) হেফাযত, তার অঙ্গীকারসমূহ রক্ষা করা এবং তার ওয়াদার বাস্তবায়নের জন্যে। সুতরাং মানুষকে আল্লাহর দ্বীন শিক্ষা দিন এবং তাদের দ্বীনকে সহজ করে দিন। আল্লাহর বাণী,

ثُمَّ أَوْرَثْنَا الْكِتَابَ الَّذِينَ اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَا -

অতঃপর আমি এ কিতাবটির উত্তরাধীকারী করেছি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যাদেরকে আমি মনোনীত করেছি। (ফাতির ৩৫/৩২)।

অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেন,

وَلَكِنْ كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُونَ-

‘বরং সে বলবে যে, তোমরা সবাই আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও। কারণ তোমরা মানুষকে আল্লাহর কিতাব শিক্ষা দিয়ে থাক এবং তোমরা নিজেরা তা পাঠ করে থাক (আলে ইমরান ৩/৭৯)।

সুতরাং হে খতীব! আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে আপনার নিজের তুলনায় বেশি কল্যাণ চান। রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَنَّ الْعُلَمَاءَ هُمْ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ ‘নিশ্চয় আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধীকারী’।

(২) দ্বিতীয়তঃ প্রতিভা : বক্তৃতা একটি শিল্পের নাম। এজন্য বক্তৃতায় আগ্রহী ব্যক্তিকে অবশ্যই  প্রতিভার অধিকারী হতে হবে, কেননা প্রতিভা হ’ল বিভিন্ন জ্ঞান বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ আধার। অলংকার শাস্ত্রের সাথে সম্পর্কিত বিষয়। সুতরাং বক্তার দাওয়াতের প্রসার করা, জোরালো ও জ¦ালাময়ী বক্তৃতার মাধ্যমে প্রভাবিত করার সবচেয়ে বড় সহায়ক হ’ল প্রতিভা তথা জ্ঞান।

(আমীর ইবনে মুহাম্মাদ আল মাদরীর বই অবলম্বনে লিখিত)

(চলবে)

[লেখক : ২য় বর্ষ, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া]

 



আরও