মুসলিম যুবকদের প্রতি আহবান
আসিফ রেযা ও ওবায়দুল্লাহ
আব্দুল্লাহিল কাফী 9207 বার পঠিত
সামুরাহ ইবনে জুনদুব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অভ্যাস ছিল ফজরের ছালাত শেষে প্রায়শই তিনি আমাদের দিকে মুখ করে বসতেন এবং জিজ্ঞেস করতেন, তোমাদের কেউ আজ রাতে কোন স্বপ্ন দেখেছে কি? বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখে থাকলে সে তাঁর নিকট বলত। আর তিনি আল্লাহর হুকুম মোতাবেক তার ‘তা‘বীর’ বা ব্যাখ্যা করতেন। যথারীতি একদিন সকালে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কেউ (আজ রাতে) কোন স্বপ্ন দেখেছে কি? (রাবী বলেন) আমরা বললাম, জী, না। তখন তিনি বললেন, ‘কিন্তু আমি দেখেছি। আজ রাতে দুই ব্যক্তি আমার নিকটে আসল এবং তারা উভয়ে আমার হাত ধরে একটি পবিত্র ভূমির দিকে (সম্ভবতঃ সেটা শাম বা সিরিয়ার দিকে) নিয়ে গেল। দেখলাম এক ব্যক্তি বসে আছে আর অপর এক ব্যক্তি লোহার সাঁড়াশি হাতে দাঁড়ানো। সে তা উক্ত বসা ব্যক্তির গালের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয় এবং তার দ্বারা চিরে গর্দানের পিছন পর্যন্ত নিয়ে যায়। অতঃপর তার দ্বিতীয় গালের সাথে অনুরূপ ব্যবহার করে। ইত্যবসরে প্রথম গালটি ভাল হয়ে যায়। আবার সে (প্রথমে যেভাবে চিরে ছিল) পুনরায় তাই করে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা উভয়ে বলল, সামনে চলুন। আমরা সামনের দিকে চললাম। অবশেষে এমন এক ব্যক্তির কাছে গিয়ে পৌঁছলাম, যে নিকটে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে, আর অপর এক ব্যক্তি একখানা ভারী পাথর নিয়ে তার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার আঘাতে শায়িত ব্যক্তির মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করছে। যখনই সে পাথরটি নিক্ষেপ করে (মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে) তখন সেটা গড়িয়ে দূরে চলে যায়। তখন লোকটি পুনরায় পাথরটি তুলে আনতে যায়। সে ফিরে আসার পূর্বে ঐ ব্যক্তির মাথাটি পূর্বের ন্যায় ঠিক হয়ে যায় এবং সে তা দ্বারা তাকে পুনরায় আঘাত করে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটি কি? তারা উভয়ে বলল, সামনে চলুন। আমরা সম্মুখের দিকে অগ্রসর হ’লাম। অতঃপর একটি গর্তের নিকটে এসে পৌঁছালাম, যা তন্দুরের মত ছিল।
তার উপরের অংশ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশটি ছিল প্রশস্ত। এর তলদেশে আগুন প্রজ্জ্বলিত ছিল। আগুনের লেলিহান শিখা যখন উপরের দিকে উঠত, তখন উক্ত গর্ত হ’তে বাহিরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হ’ত। আর যখন অগ্নিশিখা কিছুটা স্তিমিত হ’ত, তখন তারাও পুনরায় ভিতরের দিকে চলে যেত। তার মধ্যে রয়েছে কতিপয় উলঙ্গ নারী ও পুরুষ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটি কি? তারা উভয়ে বলল, সামনে চলুন। সুতরাং আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হ’লাম এবং একটি রক্তের নহরের নিকটে এসে পৌঁছালাম। দেখলাম, তার মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং নহরের তীরে একজন লোক দ-ায়মান। আর তার সম্মুখে রয়েছে প্রস্তরখ-। নহরে ভিতরের লোকটি যখন বের হওয়ার উদ্দেশ্যে কিনারার দিকে অগ্রসর হ’তে চায়, তখন তীরে দাঁড়ানো লোকটি ঐ লোকটির মুখের উপরে পাথর নিক্ষেপ করে এবং লোকটিকে ঐ স্থানে ফিরিয়ে দেয় , যেখানে সে ছিল। মোটকথা লোকটি যখনই তীরে উঠার চেষ্টা করে তখনই তার মুখের উপর পাথর মেরে সে যেখানে ছিল সেখানে পাঠিয়ে দেয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? সঙ্গীদ্বয় বলল, সামনে চলুন। অতঃপর আমরা সম্মুখে অগ্রসর হয়ে শ্যামল সুশোভিত একটি বাগানে পৌঁছলাম, যেখানে ছিল একটি বিরাট বৃক্ষ। আর উক্ত বৃক্ষটির গোড়ায় উপবিষ্ট ছিলেন একজন বৃদ্ধ লোক এবং বিপুল সংখ্যক বালক। ঐ বৃক্ষটির সন্নিকটে আরেক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম, যার সম্মুখে রয়েছে আগুন, যাকে সে প্রজ্জ্বলিত করছে। এরপর আমার সঙ্গীদ্বয় আমাকে ঐ বৃক্ষের উপর আরোহণ করাল এবং সেখানে তারা আমাকে বৃক্ষরাজীর মাঝখানে এমন একখানা গৃহে প্রবেশ করাল যে, এরুপ সুন্দর ও মনোরম ঘর আমি আর কখনও দেখিনি। এর মধ্যে ছিল কতিপয় বৃদ্ধ, যুবক, নারী ও বালক। অনন্তর তারা উভয়ে আমাকে সেই ঘর হ’তে বের করে বৃক্ষের আরো উপরে চড়াল এবং এমন এক খানা গৃহে প্রবেশ করাল, যা প্রথমটি হ’তে আরো সুন্দর ও উত্তম। এতেও দেখলাম কতিপয় বৃদ্ধ ও যুবক। অনন্তর আমি উক্ত সঙ্গীদ্বয়কে বললাম, আপনারা উভয়েই তো আমাকে আজ সারা রাত ঘুরে ফিরে দেখালেন। এখন উহার তাৎপর্য কি? আমাকে বলুন। তাঁরা উভয়ে বলল (আমরা তা বলব)। ঐ যে এক ব্যক্তিকে দেখেছেন সাঁড়াশি দ্বারা বলুন, আমি যা কিছু দেখেছি উহার তাৎপর্য কি? তখন তারা বলল, হ্যাঁ যার গাল চিরা হচ্ছিল, সে হ’ল মিথ্যাবাদী। সে মিথ্যা বলত এবং তার নিকট হ’তে মিথ্যা রটানো হ’ত। এমনকি উহা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ত। অতএব তার সাথে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঐ আচরণ করা হবে, যা আপনি দেখেছেন। আর যে ব্যক্তির মস্তক পাথর মেরে চূর্ণ করতে দেছেছেন, সে ঐ ব্যক্তি , যাকে আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলেন, কিন্তু সে কুরআন হ’তে গাফেল হয়ে রাতে ঘুমাত এবং দিনের বেলায়ও তার নির্দেশ মোতাবেক আমল করত না। সুতরাং তার সাথে ক্বিয়ামত পর্যন্ত এ আচরণটি করা হবে, যা আপনি দেখেছেন। আর (আগুনের) তন্দুরে যাদেরকে দেখেছেন তারা হ’ল যেনাকার (নারী-পুরুষ)। আর ঐ ব্যক্তি যাকে (রক্তের) নহরে দেখেছেন, সে হ’ল সূদখোর। আর ঐ ব্যক্তি (বৃদ্ধ), যাকে একটি বৃক্ষের গোড়ায় উপবিষ্ট দেখেছেন, তিনি হ’লেন ইবরাহীম (আঃ)। তার চতুষ্পার্শ্বের শিশুরা হ’ল , মানুষের সন্তানাদি। আর যে লোকটিকে অগ্নিকু- প্রজ্জ্বলিত করতে দেখেছেন, তিনি হ’লেন জাহান্নামের দারোগা। আর যে ঘরটিতে আপনি প্রথমে প্রবেশ করেছিলেন, সেটি (বেহেশতের মধ্যে) সর্বসাধারণের গৃহ। আর এই ঘর, যা পরে দেখেছেন, ওটা শহীদদের ঘর। আর আমি হ’লাম জিবরাঈল এবং ইনি হ’লেন মীকাঈল। এবার আপনি মাথা উপরের দিকে তুলে দেখুন। তখন আমি মাথা তুলতেই দেখলাম, যেন আমার মাথার উপর মেঘের মত কোন একটি জিনিস রয়েছে। অপর এক বর্ণনায় আছে, একের পর এক স্তবক বিশিষ্ট সাদা মেঘের মত কোন জিনিস দেখলাম। তারা বললেন, ওটা আপনারই বাসস্থান। আমি বললাম, আমাকে সুযোগ দিন আমি আমার ঘরে প্রবেশ করি। তারা বললেন, এখনও আপনার হায়াত বাকী আছে, যা আপনি এখনও পূর্ণ করেননি। আপনার যখন নির্দিষ্ট হায়াত পূর্ণ হবে, তখন আপনার বাসস্থানে প্রবেশ করবেন।
ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত উক্ত দীর্ঘ হাদীছটি মুমিন জীবনের জন্য একটি মাইলফলক। হাদীছটির মর্মার্থ অনুধাবন করে দৃঢ় পদে ছিরাতে মুসতাক্বীমে চলা সকলের কর্তব্য। হাদীছটি থেকে যে সকল বিষয় শিক্ষণীয় রয়েছে নি¤েœ সংক্ষেপে তুলে ধরা হ’ল -
১. মিথ্যা কথা বর্জন করা :
মিথ্যা মারাত্মক অপরাধ। মিথ্যা কথার জন্যই সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হয়। পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা বৃদ্ধি পায়। যারা সর্বদা মিথ্যা কথা বলে তাদেরকে আল্লাহ হেদায়াতের পথ দেখান না।
আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ مُسْرِفٌ كَذَّابٌ-
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারী ও মিথ্যাবাদীকে সৎ পথে পরিচালিত করেন না’ (মুমিন ৪০/২৮)।
মুনাফিকদের তিনটি আলামতের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মিথ্যা কথা বলা। যদিও ঐ ব্যক্তি ছালাত আদায়কারী, ছিয়াম পালনকারী হয় এবং নিজেকে মুসলমান হিসাবে দাবী করে।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা সত্যবাদী হও । সততা কল্যাণের পথ দেখায় এবং কল্যাণ জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে তাকে আল্লাহর খাতায় সত্যনিষ্ঠ বলে লিখে নেয়া হয়। অপরদিকে তোমরা মিথ্যা বলা থেকে সাবধান থাক। মিথ্যা অনাচারের পথ দেখায় এবং অনাচার জাহান্নামের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাকে আল্লাহর খাতায় মিথ্যুক বলে লিখে নেয়া হয়’।
২. ইলম অনুযায়ী আমল করা :
আল্লাহ যাদেরকে ইলম বা জ্ঞান দান করেন, তাদেরকে ইলম অনুযায়ী আমল করতে হবে এবং সে অনুযায়ী দাওয়াত দিতে হবে। পরিবার পরিচালনা করতে হবে। যেসব আলেম স্বীয় বক্তব্য অনুসারে আমল করে না, পরিবারকে সে অনুসারে পরিচালনা করার চেষ্ট করে না, তাদের অবস্থা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘এক ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিন নিয়ে আসা হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে তার নাড়িভুড়ি বের হয়ে যাবে, আর সে তা নিয়ে ঘুরতে থাকবে, যেমনভাবে গাধা আটা পিষা জাতার সাথে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামীরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কি আমাদেরকে ভাল কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করতেন না? সে বলবে, হ্যাঁ। আমি তোমাদেরেকে ভাল কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু নিজেই তা করতাম না। আর খারাপ কাজ হ’তে তোমাদেরকে নিষেধ করতাম কিন্তু আমি নিজেই তা করতাম’।
৩. যেনা-ব্যভিচার থেকে নিরাপদ থাকা :
বর্তমান সমাজে যেনা-ব্যভিচার একবারেই সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ যেনা একটি বড় ধরনের পাপ। যেনা বা ব্যভিচার করলে ইহকালে যেমন অপমান ও ক্ষতিগ্রস্থ হ’তে হয়, তেমনি পরকালেও ক্ষতিগ্রস্থ হ’তে হয়। সমাজে সবচেয়ে অপমানজনক কাজ দু’টি। একটি চুরি করা, অপরটি যেনা করা। এ যুগে অশ্লীলতার সকল দুয়ার খুলে দেওয়া হয়েছে। শয়তান ও তার দোসরদের চক্রান্তে অশ্লীলতার পথ ও পন্থাগুলি সহজলভ্য হয়ে গেছে। যার ফলে যুবক-বৃদ্ধ বিবাহিত-অবিবাহিত নির্বিশেষে সকল স্তরের লোক যেনায় বা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। এমনকি আজকাল শৈশব থেকেই পিতা মাতা ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক সন্তানদেরকে পরোক্ষভাবে যেনার যাবতীয় উপকরণ শিক্ষার পথ সহজ করে দেয়। তাদেরকে এ বিষয়ে শিক্ষা ও উৎসাহ দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে গান-বাজনা, টিভি-ভিসিপি, সিডি-ভিসিডি ইত্যাদি। যেসব অবিবাহিত লোক যেনা করবে রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে একশত বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর বিবাহিত নারী-পুরুষকে রজম তথা পাথর নিক্ষেপে হত্যা করতে বলেছেন’।
‘যেসব বৃদ্ধ লোক যেনা করবে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তাদের সাথে কথা বলবেন না। পক্ষান্তরে হাশরের দিন চোখ, কান, জিহ্বা, হাত-পা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে। আল্লাহ বলেন,
الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ-
‘আজ আমি এদের মুখে মোহর মেরে দিলাম, এদের হস্ত আমার সাথে কথা বলবে এবং চরণ সমূহ এদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দিবে’ (ইয়াসীন ৩৬/৬৫)।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا-
‘তোমরা যেনা-ব্যভিচারের ধারে-কাছেও যেওনা। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল কাজ এবং অত্যন্ত নিকৃষ্ট পথ’ (বণী ইসরাঈল ১৭/৩২)। যেনার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী নারী ও পুরুষের প্রত্যেককে তোমরা একশত বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর এই বিধান বাস্তবায়নে তাদের প্রতি যেন তোমাদের হৃদয়ে কোনরূপ দয়ার উদ্রেক না হয়। যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের এই শাস্তি প্রত্যক্ষ করে’ (নূর ২৪/২)।
৪. সূদ পরিহার করা :
যারা সূদ খায় তারা ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির ন্যায় দ-ায়মান হবে, যাকে শয়তান আছর করে মোহাবিষ্ট বা পাগল করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ হ’ল তারা বলে, ক্রয়-বিক্রয় তো সূদের মতই । অথচ আল্লাহ তা‘আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সূদ হারাম করেছেন’ (বাক্বারা ২/২৭৫)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُضَاعَفَةً وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সূদ খেয়োনা। আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার’ (আলে ইমরান ৩/ ১৩০)।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা সূদখোরের প্রতি যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ -
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সূদের যা অবশিষ্ট আছে তা পরিত্যাগ কর। যদি তোমরা ঈমানদার হও। আর যদি তোমরা তা না কর, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হ’তে যুদ্ধের ঘোষণা শোন’ (বাক্বারাহ ২/২৭৮, ২৭৯)।
আল্লাহর নিকট সূদ খাওয়া কত মারাত্মক অপরাধ তা অনুধাবনের জন্য উক্ত আয়াতদ্বয়ই যথেষ্ট।
সূদ গ্রহণ ও প্রদান উভয়ই গর্হিত অপরাধ। সূদ মানুষকে অবৈধ পন্থায় অর্থ বৃদ্ধি করার বাসনা জাগায়। মানুষের সম্পদকে সংকুচিত করে। মানুষের মূল সম্পদ ও বর্ধিত সম্পদ উভয়কে ধ্বংস করে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘অভিশাপে তারা সমান’।
কোন ব্যক্তি জেনে শুনে এক দিরহাম বা একটি মুদ্রা সূদ গ্রহণ করলে ছত্রিশ বার যেনা করার চেয়েও কঠিন পাপ হবে। সূদের পাপের ৭০টি স্তর রয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে নি¤œস্তর হচ্ছে আপন মাতার সাথে যেনা করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সাতটি ধ্বংসকারী বস্তু থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তার একটি হ’ল সূদ খাওয়া।
উপসংহার :
মিথ্যা কথা ইসলামী শরী‘আতে বড় ধরনের পাপ। যা মানুষকে ক্রমান্বয়ে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে। পক্ষান্তরে সত্যবাদিতা একটি পুণ্যময় কাজ। যা মানুষকে জান্নাতের পথে নিযে যায়। আর যে সকল আলেম স্বীয় ইলম অনুসারে আমল করে না, ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদের মাথাকে পাথর দ¦ারা ভেঙ্গে চৌচির করা হবে। অতএব আল্লাহ যাকে ইলম দান করেছেন, তার কর্তব্য হবে ইলম অনুযায়ী নিজে আমল করা এবং অপরকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়া।
যেসব বড় পাপের দুনিয়াতেই কঠোর শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে, যেনা তার মধ্যে অন্যতম । দুনিয়াতেই যেদু’টি বড় পাপের বাস্তব প্রতিক্রিয়া খুব নিন্দনীয়, যেনা তার একটি। যেনাকার ইহকালে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পরকালেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আল্লাহর নিকট সূদ খাওয়া মারাত্মক অপরাধ। প্রতিদিনের ঘাম ঝরানো শ্রমের বিনিময়ে যা অর্জিত হয় সূদের অতল গহ্বর পূরণেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে ব্যাপক সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে পড়ে। সম্ভবতঃ এসব কারণেই আল্লাহ্ সূদী কারবারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। যেসব পাপের শাস্তির কথা আল্লাহ তা‘আলা কঠোর ও কঠিনভাবে উল্লেখ করেছেন, সূদের পাপের শাস্তি তার অন্যতম।
অতএব আল্লাহর নিকটে আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের যাবতীয় অশ্লীলতা ও শরী‘আত গর্হিত কাজ হ’তে হেফাযত করেন-আমীন!
[লেখক : কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ]
1 . বুখারী হা/১৩৮৬; মিশকাত হা/৪৬২১।
. বুখারী, মিশকাত হা/২৬৮২।
. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২৪।
. বুখারী হা/৩২৬৭; মুসলিম হা/৭৬৭৪; মিশকাত হা/৫১৩৯।
. মুসলিম হা/৪৫১১; মিশকাত হা/ ২৫৫৮।
. মুসলিম হা/৩০৯, মিশকাত হা/ ৫১০৯।
. মুসলিম হা/১৫৯৭; মিশকাত হা/২৮০৭ ।
. আহমাদ, মিশকাত হা/২৮২৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৬/২৬ পৃঃ ‘সূদ’ অনুচ্ছেদ।
. ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২২৭৪।
. বুখারী হা/৬৪৬৫; মুসলিম হা/২৭২; মিশকাত হা/৫২।