সাম্প্রতিক মুসলিম বিশ্ব
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 9199 বার পঠিত
গাজায় মানবিক বিপর্যয় চরমে
১৯৪৮ সালে ইসরাইলের দখলদারিত্ব শুরু হওয়ার পর ২০০৮-০৯ সালে ফিলিস্তিনের বুকে সবচেয়ে বেশী রক্তক্ষয় হয়েছে। ২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর গাজায় বর্বর ইসরাইলী হামলা শুরুর পর মোট ১৪১৭ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয় যাদের মধ্যে ৩১৩ জন শিশু ও ১১৬ জন নারীসহ ১১৮১ জনই বেসামরিক। গুরুতর আহত হয় ১১৩৩ শিশু ও ৭৩৫ জন নারীসহ মোট ৪৩৩৬ জন যাদের অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে। ২০০৯ সালে শুরুতে ১৭ জানুয়ারী যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত নিহত হয়েছে আরো ৪০৯ জন। আহত হয়েছে ৭৪১। এক মাসে ২৭টি মসজিদ, ৭২টি কিন্ডার গার্টেন, ৬৭টি স্কুল, ২১৯টি শিল্প-কারখানা, ১৫টি হাসপাতাল ও ৪১টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, ধ্বংসস্ত্তপে পরিণত হওয়া মসজিদ, বাড়ীঘর, স্থাপত্য, কৃষিভূমির সংখ্যা গণনারও অতীত। জাতিসংঘের হিসাবমতে তা অনধিক ১৫ হাজার। বাস্ত্তচ্যূত হয়েছে ৬০ হাজার মানুষ। সেপ্টেম্বর’২০০০ ইন্তিফাযা শুরু হওয়ার পর ২০০৮ সালের শেষ পর্যন্ত ইসরাইলীদের হাতে নিহতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৫২৮৭ জন। আহত হয়েছে হাজার হাজার। যাদের মধ্যে স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করেছে শত শত মানুষ। বর্তমানে গাজার ৮০ ভাগেরও বেশী অধিবাসী অন্ন-বস্ত্রের জন্য ত্রাণ সংস্থাগুলোর উপর নির্ভরশীল। ইসরাঈলের সিমান্ত অবরোধের কারণে চরম খাদ্য, জ্বালানী সংকটে তারা বাধ্য হয়ে গাজা থেকে মিসর সিমান্ত পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার ব্যাপী অঞ্চলে অসংখ্য টানেল বা সুড়ঙ্গপথ তৈরী করে গোপনে তারা মিসর থেকে খাদ্য সংগ্রহ করছে। গাজার বর্তমান অর্থনীতির ৬০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে এসব গোপন সুড়ঙ্গ। সম্প্রতি আমেরিকার চাপে মিসর সরকার সুড়ঙ্গগুলো বন্ধের জন্য সাঁড়াশী অভিযান শুরু করেছে।
চেক প্রজাতন্ত্রে ইসলামের অগ্রযাত্রা
খুব বেশী দিন নয় যখন ইউরোপের দেশ চেক প্রজাতন্ত্র ও ইসলাম ছিল দুই মেরুর বাসিন্দা। এ দুইয়ের একত্রবাস ছিল তখন একবারে অচিন্তনীয়। দুই দশক পূর্বে চেকোস্লোভাকিয়ায় কম্যুনিস্ট শাসনের অবসানের পর এ অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। ২০০৪ সালের দেশটিতে ইসলাম ধর্ম সরকারী স্বীকৃতি পায়। বর্তমানে প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে নবমুসলিমের সংখ্যা। গড়ে উঠছে নতুন মসজিদ ও দা’ওয়াতী সংগঠন। রাজধানী প্রাগের প্রধান মসজিদের পরিচালক ভ্লদিমির উমর সানকা বলেন, পাঁচশত মুসুল্লীর সংকুলান হওয়া এ মসজিদে প্রতি শুক্রবার এত বেশী ভীড় হয় যে, আমাদেরকে প্রায়ই দুটি জামা‘আত ও দুটি খুৎবার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। গতবছর ঈদুল আযহার জামাতে পনেরশ’র অধিক মুসুল্লীর জন্য একটি ক্রীড়াঘর ভাড়া করতে হয়েছিলো। প্রতি সপ্তাহে গড়ে একজন এ সেন্টারে এসে মুসলমান হচ্ছে। ২০০৭ সালের হিসাবে এদেশে মুসলমানের সংখ্যা ১২,০০০। তবে বর্তমানে এ সংখ্যা ২০,০০০ এরও বেশী। গত বছরের জুনে ২১ বছর বয়স্কা নবমুসলিম তরুণী জিটকা কারভিনকোভা ‘মুসলিম অফ চেক রিপাবলিক’ নামক ফেসবুক গ্রুপ খুলেছেন যার সদস্য সংখ্যা বর্তমানে প্রায় সাতশত। গ্রুপ স্বেচ্ছাসেবকগণ ইসলাম সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মকে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। ১৯৯১ সালে সর্বপ্রথম ইসলামী সংগঠন ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ গঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে তাদের উদ্দ্যোগে বার্নো শহরে প্রথম মসজিদ নির্মিত হওয়ার একবছর পর প্রাগের এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। এ দু’টি মসজিদই বর্তমানে চেক মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করছে। অন্যান্য শহরগুলোতেও মসজিদ নির্মাণের জন্য উদ্দ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তবে প্রায়ই স্থানীয় অধিবাসী ও চার্চের বিরোধিতার শিকার হতে হচ্ছে।
আয়ারল্যান্ডে উচ্চ মাধ্যমিক মাদরাসা প্রতিষ্ঠা
সৌদি সরকার আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে একটি বড় আকারের মাদরাসা স্থাপন করতে যাচ্ছে। আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত প্রায় ৪০ হাজার মুসলিম অধিবাসী এ উদ্দ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। ইতিপূর্বে সে দেশে কয়েকটি নিম্ন মাধ্যমিক ইসলামিক স্কুল থাকলেও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল এটাই প্রথম। উল্লেখ্য, সৌদি আরব দীর্ঘদিন যাবৎ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মসজিদ, দা’ওয়াহ সেন্টার, ইসলামী স্কুল প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে।
ইসরাঈলে ইহুদী তরুণীর ইসলাম গ্রহণ
১৭ ডিসেম্বর স্পেনের ‘লা মন্ডে’ পত্রিকা ১৯ বছর বয়সী ইসরাঈলের কারমাইল শহরের এক ইহুদী তরুণীর ইসলাম গ্রহণের খবর ফলাও করে ছেপেছে। মারো নামক এই নবমুসলিম তরুণী ‘লা মন্ডে'কেঁজানান, ‘আমি ইহুদী হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছি, আমার পূর্বপুরুষগণ হলোকষ্টে প্রাণ দিয়েছে অথচ আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। এ কারণে অনেকেই আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করেছে এবং আমি যা করেছি তাকে পাগলামী বলেছে। তবে আমি নিশ্চিত করছি যে, আমি সজ্ঞানে ইহুদী ধর্ম ত্যাগ করেছি এবং আমার পূর্বপুরুষদের কৃতকর্মকে মন থেকে মুছে ফেলেছি’। ডানপন্থী কট্টর ইহুদীবাদী পিতার সন্তান এই তরুণী ইতিমধ্যে ইসলামী শরী‘আতের নীতিমালা পালনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। হিজাব পরা ছাড়াও নিয়মিত কুরআন পাঠ শিক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ১৩ বছর বয়সেই পবিত্র কুরআনের প্রতি আকৃষ্ট হই। সেখানে আমি আমার বহু প্রশ্নে জওয়াব পেয়েছিলাম যা আমার ধর্মে পাইনি। প্রথমবার যেদিন আমি মসজিদের নিকটবর্তী হই তখন আমি অন্তুরে এক অনন্য অসাধারণ পবিত্র অনুভূতির স্পর্শ পাই। এক অনির্বচনীয় নির্ভারতা ও প্রশান্তি আমাকে গ্রাস করে’। ইসলাম গ্রহণের পর স্বীয় পিতা-মাতার হতাশা ও বিশ্বাসঘাতক হিসাবে তার প্রতি দৃষ্টিপাতকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতদস্বত্বেও আমি তাদের সাথে থাকতেই পছন্দ করব যাতে তারা আমার এই নতুন জীবনকে এবং আমার গৃহীত ধর্মকে অনুধাবন করতে পারেন। উল্লেখ্য, ব্যাপক কড়কড়ি স্বত্বেও প্রতিবছর ইসরাঈলে ইসলাম গ্রহণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘মা‘আরীফ’ পত্রিকার ভাষ্যমতে, প্রতিবছরই শতাধিক ইহুদী তাদের ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছে। সর্বশেষ পাঁচ বছরে বৃদ্ধির হার বেড়েছে কয়েকগুণ।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে নির্মিত হচ্ছে সর্বোচ্চ মিনার
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডে মসজিদের মিনার নির্মাণ নিয়ে যখন তুমুল বিতর্ক চলছে ঠিক তখন রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর নির্মাণাধীন কেন্দ্রীয় মসজিদের সাথে নির্মিত হচ্ছে ৭৫ উচু মিনার যা বিখ্যাত ক্রেমলিন প্রাসাদ থেকেও দেখা যাবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সম্প্রতি মস্কোর একটি প্রাচীন মসজিদ পরিদর্শন করেন এবং জুতা খুলে সেখানে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি রুশ ফাৎওয়া কাউন্সিলের প্রধান জনাব রাফায়েল যায়নুদ্দীনের সাথে সাক্ষাত করেন। তার এই সফরের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মসজিদ নির্মাণের জন্য বিধি-নিষেধ শিথিল করে এবং ক্রেমলিন প্রাসাদের মাত্র তিন মাইল দুরে কেন্দ্রীয় মসজিদ স্থাপনের অনুমতি দেয়। মসজিদটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে রুশ ফাৎওয়া কাউন্সিলের প্রধান অফিস এখানেই স্থানান্তরিত হবে। এর অভ্যান্তরভাগে পাঁচহাজার এবং উন্মুক্ত অংশে আরো বিশ হাজার মুছল্লী একত্রে ছালাত আদায় করতে পারবে। তুর্কী সরকারের ২০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তায় ২০১২ সালের মধ্যেই এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে বলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ আশা করছেন।
উল্লেখ্য, মস্কোতে দুই মিলিয়নের অধিক মুসলিম বসবাস করলেও মসজিদ রয়েছে মাত্র ৬টি। এজন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সেখানে আরো দশটি মসজিদ নির্মাণের জন্য সহায়তা দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সমগ্র রাশিয়ায় বর্তমান মুসলিম জনসংখ্যা ২০ মিলিয়নেরও বেশী যেখানে মসজিদের সংখ্যা ৫ হাজারের অধিক। অন্যদিকে মুসলমানদের উপর সরকারী নির্যাতন আগের মতই অব্যাহত রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাষ্যমতে, বর্তমানে সে দেশে সরকারকর্তৃক আটক বন্দীদের তিনভাগের একভাগই মুসলমান। যাদের অধিকাংশই চরমপন্থা অবলম্বনসহ দ্বীনী ও রাজনৈতিক বিষয়ে আপত্তিকর মন্তব্য প্রকাশের অভিযোগে আটক রয়েছে।