মিষ্টি খাওয়ার অধিকার
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
ফারহান শামস 857 বার পঠিত
বেলা দশটা বেজে গেছে। জরুরী কাজের তাড়া। পানি পান করে গ্লাস থেকে বাকি টুকু ফেলে দিতে জানালার কাছাকাছি হলাম। বাইরে স্ত্তপ করে রাখা নতুন ধানের অাঁটি। পাশেই মাড়াইযন্ত্রে ধান মাড়াই করছে শ্রমজীবী দুই মহিলা ও একজন পুরুষ। তীব্র রোদে ওদের চেহারা তামাটেবরণ। দ্রুত পানি ফেলে দিয়ে দৃষ্টি ঘুরাচ্ছিলাম। হঠাৎ চোখ আটকে গেল দৌড়ে আসা ৫-৬ বছরের গোলগাল মায়াবী চেহারার এক ছোট ছেলের দিকে। ঠিক আমার জানালার নিচে ছায়ায় রক্ষিত কাপড়ের থলে ও ঢেকে রাখা পাত্রের পাশে বিচালী গাদার উপর বসে পড়ল সে। কাজে নিমগ্ন সম্ভবত ওর মা-ই এগিয়ে এল। বুঝলাম সকালের নাস্তার খোঁজেই দুরন্ত ছেলেটির হঠাৎ আগমন। বেলা গড়িয়ে গেছে কখন। খেলাধুলার মাঝে বাচ্চাটি ক্ষিধে ভুলে গিয়েছিল হয়ত। ঘর্মাক্ত মহিলাটি মমতা জড়ানো ভঙ্গিতে ছেলেকে খাবার দেখিয়ে দিয়ে আবার কাজে চলে গেল। নড়তে যেয়েও পারলাম না। মায়া পড়ে গেছে বাচ্চাটির উপর। মনে হল একটু দেখে যাই বাচ্চাটির খাওয়ার দৃশ্যটি। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছি ওর প্রতিটি নড়াচড়া। থালার পাশে জগটি টেনে নিয়ে মুখ খুলে দেখল। আমিও তাকালাম। তেলের পাতলা আস্তরণ দেখে মনে হল আধাপূর্ণ জগটিতে ডাল রাখা। দূর থেকেও পানিসদৃশ ডাল ভেদ করে জগটির তলা পর্যন্ত দিব্যি দেখা যাচ্ছে। বাচ্চাটির চেহারায় খুশির ঝিলিক। দূর থেকে মাকে ডেকে জানতে চায় কোথায় পেল ডাল নামক এ মহাসম্পদটি। বিজয়ের হাসিতে মা জানায় সে পেয়েছে কোন এক বাড়ির দয়ালু মহিলার কাছে। পরম আগ্রহে ছেলেটি থালার মুখ খোলে। অর্ধ প্লেট পানতা। এক কোনে এক দলা লবন। খাওয়ার জন্য হাত ধুয়ে প্রস্ত্ততি নেয় সে। বিস্তীর্ণ সদ্য ধান কাটা মাঠের মৃদু বাতাসে মা ও ছেলের স্বর্গসুখের এই অন্তরঙ্গ মুহূর্ত নিবিড়ভাবে দেখতে পেরে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হল। সব ভুলে দেখতেই থাকি ওর সারাদিনের এই শ্রেষ্ঠ মুহূর্তটা। কিভাবে যেন ছেলেটির দৃষ্টি পড়ে গেল আমার উপর। সুযোগ পেয়ে এক ঝলক মুচকি হাসি ছুড়ে দিলাম। বাচ্চাটি আমাকে দেখে যেন হতভম্ব হয়ে গেল। খাওয়া ছেড়ে লজ্জায় আড়ষ্ঠ হাসি ঠোটে লাগিয়ে বিচালির একটা কাঠি খুটতে লাগল। যেন আমাকে সামনে রেখে সে একাকী খেতে চায় না। বিস্মিত হলাম। খুব আদরের কন্ঠে বললাম, বাবু খাও। ও আরো হাসে আর কাঠি খোটে, কোন কথা বলে না, খাচ্ছেও না। এদিকে আমারও দেরী হয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ওর সৌজন্যবোধকে শ্রদ্ধা জানিয়ে শুষ্ক একটা স্নেহের হাসি দিয়ে জানালা থেকে সরে আসলাম। দ্রুত বেরিয়ে পড়লাম গন্তব্যপানে। মন পড়ে রইলো বাচ্চাটির পরম পরিতৃপ্তিমুখর খাওয়ার দৃশ্যে।
-ফারহান শামস্
বালিয়াপুকুর, রাজশাহী।