নৈতিক দৃঢ়তা
ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 11086 বার পঠিত
কোন আদর্শ
প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজ যেমন নির্ভরযোগ্য মাধ্যম, তেমনি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ
সমাজ বিনির্মাণে যুবসমাজের উপরই নির্ভর করতে হয়। আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে
যুবসমাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করার কারণ হল শক্তি ও দায়িত্বের মধ্যে
পারস্পরিক সামঞ্জস্যতা। মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে এমন কিছু সময় থাকে যা
বিশেষ কোন দায়িত্ব পালনের যোগ্য হলেও সব রকমের দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত হয়
না। কিন্তু এক্ষেত্রে যুবসমাজই যথোপযুক্ত। যৌবনকাল সীমাহীন আশা-আকাংখা,
নিরলস কর্মতৎপরতা এবং রক্তে জোয়ার বয়ে যাবার বয়স। আত্মদান ও আত্মত্যাগের
বয়স। গঠন ও সংস্কারসাধন করার বয়স। যৌবনকালকে গুরুত্ব দেওয়ার আরেকটি কারণ
হচ্ছে এটা কর্মসংশোধন, চরিত্র গঠন এবং হেদায়াত লাভের উপযুক্ত সময়। বৃদ্ধ
বয়সে পূর্ববর্তী কর্ম ও আচার-আচরণ এত শক্তভাবে শিকড় গেড়ে বসে যে, যতই এর
বিপরীত সত্য পরিস্ফূট হোক না কেন শত চেষ্টায়ও তা থেকে বের হয়ে আসা দুরূহ
হয়ে পড়ে। কিন্তু যৌবনকাল এক্ষেত্রেও এক আদর্শ সময়।
আদর্শ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কঠিন দায়িত্ব পালন ও শক্ত বাধা অপসারণে নিবেদিত যুবকদের হতে হবে স্বতন্ত্র গুণাবলী ও অনুপম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। ১. তাদেরকে হতে হবে ঈমানী বলে বলীয়ান। এ বল তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি একনিষ্ঠ বিশ্বাসী করবে। শিরক বিমুক্ত খালেছ তাওহীদী চেতনায় উজ্জীবিত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে সহায়তা করবে। ২. তাদেরকে হতে হবে তাক্বওয়াশীল। কেননা তাক্বওয়া দ্বারা মানুষের মর্যাদা নিরূপিত হয়। এর মাধ্যমে মানুষ সংযমী হয় এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা লাভ করে। তাক্বওয়া মানুষকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। ফলে এটা তাকে মর্যাদাশীল পরিপূর্ণ মানুষ তথা ইনসানে কামেলে পরিণত করে। আর তাক্বওয়াহীনতা সমাজে অকল্যাণ ও ধ্বংস ডেকে আনে। তেমনি তাক্বওয়াহীন যুবকও হয় আদর্শহীন। এ ধরনের যুবক সহজেই শয়তানের খপ্পরে পড়ে বিভ্রান্ত হয়, লিপ্ত হয় বিভিন্ন গর্হিত কাজে। ৩. তাদেরকে হতে হবে পর্যাপ্ত ইসলামী জ্ঞানের অধিকারী। এ জ্ঞান তাকে সঠিক পথের দিশা দিবে। ৪. নিজেদের অজ্ঞাত আয়ুষ্কালের ব্যাপারে সচেতন থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে তাঁর ইবাদতসহ সকল কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করতে হবে। ৫. আমানতদার হতে হবে। এটা তাদের অর্থনৈতিক জীবনে ইনছাফ ও স্বনির্ভরতা আনয়ন করবে। এর ফলে তারা কোন কাজের দায়িত্ব প্রাপ্ত হলে তা আমানতের সাথে পালন করতে পারবে এবং আর্থিক বিষয়েও বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে সক্ষম হবে। এটা সৎ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র কায়েমে সহায়ক হবে। ৬. তাদেরকে আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকারের কাজে সদা সোচ্চার হতে হবে। মূলতঃ সৎকাজের আদেশ দান ও অসৎকাজে বাধা প্রদানই তাদের মূল দায়িত্ব ও কর্তব্য। এজন্য তাদেরকে সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হবে। ৭. তাদেরকে উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও প্রতিভা সম্পন্ন হতে হবে। যাতে সমাজকে কিছু দান করার ও সমাজের জন্য কিছু সৃষ্টি করার যোগ্যতা তাদের থাকে। আর এ যোগ্যতা তাদেরকে নেতৃত্বের আসনে বসাবে, কর্মতৎপর ও কর্মঠ করে তুলবে। তাদেরকে অর্পিত দায়িত্ব পালনে তড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ও বিচক্ষণ-বুদ্ধিমান বানাবে। ৮. তাদেরকে ত্যাগী মানসিকতা সম্পন্ন হতে হবে। যাতে প্রয়োজনে জান, মালসহ সবকিছু কুরবানী করার মানসিকতা তাদের মধ্যে তৈরী হয়। এ বিশেষণ তাদেরকে আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত করবে। ৯. তাদেরকে উদার নৈতিক আদর্শের মূর্তপ্রতীক হতে হবে। তারা তাদের ঔদার্য দিয়ে সকলকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করবে। কখনও অহংকার ও গোঁড়ামি বা যিদের বশবর্তী হয়ে কোন কাজ করবে না। এটা তাদেরকে সর্বমহলে প্রিয়ভাজন করে তুলবে। ১০. নফসে আম্মারা তথা কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত থাকতে হবে। অনর্থক পানাহার, অপ্রয়োজনীয় পোশাক-পরিচ্ছদ ও কথা-বার্তা, নাজায়েয বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ ও অবৈধ জিনিস শ্রবণ থেকে নফসকে বিরত রাখতে হবে। সমাজ সংস্কার ও নির্মাণের পূর্বে নিজের নফস ও ব্যক্তিত্বে সংস্কার নিয়ে আসতে হবে। দুনিয়া হারালেও নিজ নফসের উপর যারা বিজয় অর্জন করতে সক্ষম, তারাই প্রকৃত বিজয়ী। আর যারা দুনিয়া অর্জন করেও নিজ নফসের নিকট পরাজয় বরণ করে তারাই প্রকৃত পরাজিত। ১১. আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জন করতে হবে। অন্তরকে যাবতীয় পাপ-পংকিলতা, শিরক-কুফর, নিফাক, কঠোরতা, নিষ্ঠুরতা থেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করতে হবে। আর এর উপরেই সমস্ত শরীরের পরিশুদ্ধতা নির্ভরশীল।
দেশ ও জাতি আজ তাকিয়ে আছে এমন কিছু যুবকের দিকে যারা সমাজ সংস্কারে ব্রতী হবে, দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রাখবে। আমাদের যুবসমাজ উপরোক্ত গুণাবলী অর্জনে সক্ষম হলে জাতির সেই আশা-আকাংখা পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের যুবসমাজকে এসব গুণাবলী সম্পন্ন হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন।
তাওহীদের ডাক এ মহান লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলেছে। প্রথম সংখ্যা প্রকাশ করার পর সর্বমহল থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। সবাই এটির উত্তরোত্তর উন্নতি-অগ্রগতি ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য জোর তাকিদ দিয়েছেন। সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা এর গতিকে অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। আল্লাহ আমাদের এ প্রত্যাশাকে কবুল করুন-আমীন!