আত্মশুদ্ধি অর্জনে বর্জনীয় বিষয় সমূহ

মুহাম্মাদ আরীফুল ইসলাম 10813 বার পঠিত

আত্মশুদ্ধি অর্জন নিয়মিত প্রচেষ্টা, নিয়মিত প্রক্রিয়া অবলম্বনের উপর ভিত্তিশীল। এজন্য সৎস্বভাবগুলো আত্মস্থ করার জন্য যেমন নিরন্তর তৎপর থাকতে হয়, তেমনই বদস্বভাব বর্জনে সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকতে হয়। আল্লাহভীতির দৃঢ় অনুভূতি ব্যতীত প্রবৃত্তির সাঁড়াশি আক্রমণ থেকে নিজেকে হেফাযত করা অত্যন্ত কঠিন। উমর (রাঃ) উবাই বিন কা‘বকে বলেন, তুমি কি কখনও কাঁটাপূর্ণ দুর্গম রাসত্মায় চলেছ? তিনি বললেন, হ্যা! উমার (রাঃ) বললেন, সেখানে তুমি কি কর? উবাই (রাঃ) বললেন, আমি আমার কাপড় জড়িয়ে নেই এবং অত্যমত্ম সাবধানতার সাথে চলি। উমার (রাঃ) বললেন, ওটাই তাক্বওয়া (তাফসীর ইবনে কাছীর ১/১৬৪)। কুরআনে ইউসুফ (আঃ)-এর বক্তব্য এসেছে, ‘আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না, নিশ্চয় মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ বিন্তু সে নয়-যার প্রতি আমার পালনকর্তা অনুগ্রহ করেছেন’ (ইউসুফ ৫৩)। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না, যে কেউ শয়তানের পদাংক অনুসরণ করবে, তাকে শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকতো, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারতে না, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পরিশুদ্ধ করেন’ (নূর ২১)

সুতরাং নাফসে আম্মারাহ তথা শয়তানের স্পর্শপ্রাপ্ত অন্তরের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য একদিকে যেমন আল্লাহর অনুগ্রহ প্রয়োজন, অন্যদিকে নিজের অবিরাম প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বলা বাহুল্য, সৎগুণ অর্জনের চেয়ে অসৎগুণ বর্জন করা অধিকতর কঠিন।

আল্লামা ইবনুল কাইয়িম বলেন, মানুষের বদচরিত্র মৌলিকভাবে তিনটি- অহংকার, লজ্জাহীনতা ও হীনমন্যতা। দম্ভ, অকৃতজ্ঞতা, আত্মগর্ব, তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা, হিংসা, অহংকার, অত্যাচার-উৎপীড়ন, কঠোর অন্তর, বিমুখতা প্রদর্শন, আধিপত্য প্রকাশ, নেতৃত্ব ও খ্যাতির মোহ, প্রাপ্য নয় তবুও প্রশংসা পাওয়ার চেষ্টা ইত্যাদি সবই অহংকারজাত। আর মিথ্যা, আমানতের খেয়ানত, লোকপ্রদর্শন, প্রতারণা, লোভ, ভীরুতা, কৃপণতা, অলসতা, অকমর্ণ্যতা, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছে মাথা নত করা, উত্তম চরিত্রের লোকদের উপর দুষ্টচরিত্রের লোকদেরকে স্থান দেয়া ইত্যাদি বদগুণ লজ্জাহীনতা, নীচুতা ও হীনমন্যতা থেকে সৃষ্ট। বদচরিত্রগুলো আগুন তথা জাহান্নামের অনুগামী এবং সেখান থেকেই সৃষ্ট। আগুনের স্বভাব হল উঁচু হওয়া এবং ফাসাদ সৃষ্টি করা অতঃপর নিভে যাওয়া। অবশেষে তা আবর্জনায় পরিণত হওয়া। একই অবস্থা হয় অগ্নিজাত চরিত্রগুলোর ক্ষেত্রে, যখন তা বেপরোয়া ও উত্তেজিত অবস্থায় থাকে তখন তা বড়ত্ব, ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে আর যখন শান্ত ও নিস্তেজ হয়ে যায় তখন তা ভূপাতিত হয়ে নিভৃতে ভগ্নদশায় নিঃশেষ হয়ে যায় (কিতাবুল ফাওয়ায়েদ, পৃঃ ৮৫)

নিম্নে আত্মশুদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সাতটি অবশ্য বর্জনীয় দোষাবলী আলোচিত হল।

  • অহংকার/আত্মগর্ব : আরবী الكبر শব্দটির অর্থ অহংকার বা বড়ত্ব প্রকাশ করা। আর الإعجاب بالنفسশব্দটির অর্থ আত্মগৌরব বা প্রাপ্ত ক্ষমতা ও মর্যাদা নিয়ে স্ফীতভাব পোষণ করা। আত্মগর্ব হ’ল অহংকারের প্রথম ধাপ।

হাদীছের পরিভাষায় অহংকার হল, দম্ভের সাথে সত্যকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে হেয় ও তুচ্ছ মনে করা (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৮)। ইমাম গায্যালী বলেন, ‘অহংকার হল নিজেকে বড় মনে করা এবং নিজের অবস্থানকে অন্যের চেয়ে উন্নততর ভাবা।’ ইবনে হাজার বলেন, ‘অহংকার মানুষের এমন অবস্থার সাথে সংযুক্ত যখন সে নিজের অবস্থান নিয়ে চমৎকৃতবোধ করে অর্থাৎ নিজেকে সে অন্যের চেয়ে বড় মনে করে। এর সর্বোচ্চ স্তর হল অহংকারবশত আল্লাহকে প্রভু বলে স্বীকার না করা এবং তার আনুগত্য করতে অস্বীকার করা ও সত্যকে অবজ্ঞা করা। অহংকার আসে দু’টি কারণে।- ১. নিজের মধ্যে উত্তম কাজের উপস্থিতি যা অন্যের তুলনায় বেশী। এ দিক থেকেই আল্লাহকে বলা হয় ‘আল-মুতাকাবিবর’ বা অহংকারী। ২. নিজের অবস্থান অন্যের চেয়ে উত্তম-এরূপ মিথ্যা ধারণা করা এবং যা নিজের মাঝে নেই তা নিয়ে পরিতুষ্টি বোধ করা (ফাৎহুল বারী, ১০/৪৮৯ পৃঃ)

অহংকার একটি ঘৃণ্য অপরাধ। আল্লাহ বলেন, ‘যারা নিজেদের কাছে আগত কোন দলীল ছাড়াই আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে বিতর্ক করে, তাদের এ কাজ আল্লাহ ও মুমিনদের কাছে খুবই অসন্তোষজনক। এমনিভাবে আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী-স্বৈরাচারী ব্যক্তির অন্তরে মোহর এঁটে দেন’ (মু’মিন ৩৫)।

মানুষের নিকৃষ্টতম স্বভাবগুলোর মধ্যে অহংকার প্রধানতম। অহংকার মানুষকে সত্য ও ন্যায় থেকে বহু দূরে ঠেলে দিয়ে স্বার্থপরতার চূড়ান্ত স্তরে নিয়ে যায়। অন্যান্য বদগুণ সাধারণতঃ হৃদয়ের অভ্যন্তরীণ ভাব হিসাবে অবস্থান করে। কিন্তু অহংকার বাইরে প্রকাশ পায়। অহংকারে স্ফীত হৃদয় অপরকে দেখলে নিজ অপেক্ষা হীন মনে করে। ফলে সে সর্বস্থানে বড়ত্বের প্রত্যাশী হয়। অন্যকে উপদেশ দিতে সে কঠোরতা অবলম্বন করে, কিন্তু তাকে কেউ কোন শিক্ষা দিতে গেলে সে ক্রোধে  ফেটে পড়ে। অহংকারের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হল এটা মানুষের ঈমানকে হরণ করে নেয়। ইবনে তাইমিয়াহ বলেন, ‘অহংকার এমনকি শিরকের চেয়েও নিকৃষ্ট অপরাধ। কেননা অহংকারী ব্যক্তি আল্লাহর দাসত্বের ব্যাপারে অহংকার প্রকাশ করে যেখানে মুশরিক ব্যক্তি অন্তত: আল্লাহর ইবাদত করে যদিও অন্যকে তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করে (মাদারেজুস সালেকীন ২/৩৩২)।’

অহংকারী ব্যক্তি মুত্তাকী হতে পারে না। দিবা-রাত্রি আত্মপূজা ও স্বীয় অবস্থান সমুন্নত রাখার চিন্তায় ব্যাপৃত থাকার কারণে তার অমত্মর থাকে কলুষিত, কঠিন। মিথ্যা, কপটতা, গীবত, ঈর্ষা, ক্রোধ, অতিরঞ্জিত বাক্যালাপ হয়ে যায় তার স্বভাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফলে কোন সৎগুণ তার মাঝে বিস্তৃত হতে পারে না। এরূপ চরিত্রের কারণে সে সমাজ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

এজন্য আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অহংকারীদের সম্পর্কে বার বার হুঁশিয়ারবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘অহংকারীদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়’ (যুমার ৬০)? ‘এবং (আল্লাহ) তোমাদের যা কিছু দিয়েছেন তা নিয়ে উল্লসিত হয়ো না। আল্লাহ কোন উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না’ (হাদীদ ২৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যার অন্তরে সরিষাদানা পরিমাণ অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৭-৮)। জাহান্নামী কারা হবে এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক অনর্থক কথা নিয়ে বিবাদকারী, বদ- মেযাজী ও অহংকারী’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৫১০৬)। হাদীছে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ বলেন, ‘অহংকার আমার চাদর, শ্রেষ্ঠত্ব আমার পরিচ্ছদ। যে ব্যক্তি এর কোন একটি নিয়ে টানাটানি করবে আমি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১১০)। কুরআনের বর্ণনায় পুত্রকে লক্ষ্য করে লোকমান হাকীমের উপদেশবাণী এভাবে এসেছে, ‘তুমি অহংকারবশে মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না’ (লোকমান ১৮)। আল্লাহভীতি ও বিনয় ব্যতীত কোন কিছুতেই অহংকার বিনাশ করা যায় না।

  1. গীবত : الغيبة শব্দটির আভিধানিক অর্থ কারো অনুপস্থিতিতে নিন্দাবাচক কথা বলা। হাদীছের পরিভাষায়- গীবত হল কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে এমন দোষ বর্ণনা করা যা তার মাঝে রয়েছে (ছহীহুল জামে‘ হা/৪১৮৬) অথবা কারো সম্পর্কে এমন কথা বলা যা সে অপছন্দ করে (ঐ হা/৪১৮৭)। রাসূল (ছাঃ) ছাহাবীদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কি জান গীবত কি? তা হল- তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে তোমার এমন কথা বলা যা সে অপছন্দ করে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, আমি যা বলি যদি আমার ভাইয়ের মাঝে তা বিদ্যমান থাকে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমার বলা বিষয়টি যদি তার মধ্যে থাকে তাহলে তুমি গীবত করলে আর না থাকলে তুমি তার নামে মিথ্যা অপবাদ রটালে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২৮)

গীবত একটি হীন স্বভাব। এটা মানুষের নীচু মানসিকতাকেই প্রকাশ করে। মানবসমাজে সর্বাধিক প্রচলিত একটি কুস্বভাবের মধ্যে গীবত একটি। গীবত জিনিসটি এতই ব্যাপক যে, এ থেকে আত্মরক্ষা করাটা দৃঢ় ঈমান ও তাক্বওয়ার অধিকারী হওয়া ব্যতীত এড়ানো কঠিন। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে গীবতকে নিষিদ্ধ করে বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে?’ (হুজরাত ১২) ‘দুর্ভোগ প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য’ (হুমাযাহ ১)। গীবত শোনার পর সম্মতিসূচক মন্তব্য করা বা তা সত্যায়ন করাটাও গীবত। আল্লাহ বলেন, ‘(হে রাসূল!) যদি শয়তান আপনাকে ভুলিয়ে দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পর যালেমদের সাথে উপবেশন করবেন না’ (আন‘আম ৬৮)। এমনকি ইশারার মাধ্যমেও নিন্দা প্রকাশ করলেও গীবত হয়ে যায়। যেমন আয়েশা (রাঃ) একবার এক মহিলার খর্বত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে ইশারা করে দেখালে রাসূল (ছাঃ) তাঁকে বললেন, তুমি তার গীবত করলে। অনুরূপভাবে বিদ্রুপাত্মকভাবে বা ব্যঙ্গ করে কারো কোন কাজ, কথা বা আচরণকে প্রকাশ করলে সেটাও গীবতের পর্যায়ভুক্ত। আল্লামা নববী বলেন, বরং এটা গীবতের চেয়েও বড় অপরাধ। কেননা এতে আরো বেশী মানহানি ঘটে। বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ, তোমাদের সম্মান-মর্যাদা পরস্পরের উপর হারাম (সকল দিনে, সকল মাসে, সকল স্থানে), যেমনভাবে আজকের দিনে, এই মাসে, এই শহরে তা হারাম’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৬৫৯)। মুসলিমের পরিচয় দিতে যেয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুসলিম সে-ই যার যবান (কটুকথা) ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে এবং মুহাজির সে-ই যে আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয় থেকে দূরে থাকে’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৫)। কোন ব্যক্তির গীবত করা হচ্ছে এমন অবস্থায় কেউ যদি গীবতকারীকে বাধা দেয়, তাহলে বাধাদানকারীর জন্য শুভসংবাদ দিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অপর মুসলিম ভাইকে তার অনুপস্থিতিতে বা তার অজান্তে সাহায্য করল, দুনিয়া এবং আখিরাতে আল্লাহও তাকে সাহায্য করবেন’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৬৫৭৬)। 

  1. হিংসা/বিদ্বেষ/ঈর্ষা : الحسد শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল কোন কিছু অপছন্দ করা ও তার বিলুপ্তি কামনা করা। পরিভাষায় হিংসা বলতে বুঝায় কোন ব্যক্তির মাঝে বিদ্যমান কোন গুণ বা নেয়ামত দেখে মনোকষ্ট অনুভব করা এবং তা দুরীভূত হওয়ার জন্য আকাংখা করা, সেটা দ্বীনী বা দুনিয়াবী যে কোন বিষয়েই হোক না কেন।

হিংসাও মানবচরিত্রের প্রায় অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য। ইবনে তাইমিয়াহ বলেন, অতি অল্প মানুষই হিংসার রোগ থেকে মুক্ত। এ জন্য বলা হয়ে থাকে, ما خلا جسد من حسد ، لكن اللئيم يبديه والكريم يخفيه ‘কোন শরীরই হিংসা থেকে মুক্ত নয়, তবে মন্দ ব্যক্তিরা সেটা প্রকাশ করে আর সচ্চরিত্রবানরা তা গোপন রাখে।’ হাসান বসরীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন মুমিন কি হিংসা করে? তিনি বললেন, ‘যদি বল ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইদের মত হিংসার কথা তবে আমি বলব- না, তবে সাধারণতঃ প্রত্যেক মানুষের মাঝে হিংসার রোগটি বিরাজমান, তবে তা ক্ষতি করতে পারে না যদি না সে ব্যক্তি হাত ও জিহবা দ্বারা তা প্রকাশ করে’ (মাজমূউ ফাতওয়া ১০/১২৪-১২৫)

হিংসার ক্ষতি হল- হিংসা মানুষের অমত্মরে গোপন থাকে কিন্তু নানা রোগে আত্মাকে চরমভাবে ভারাক্রামত্ম করে তোলে। জ্ঞানীরা বলেন, তিনটি জিনিস মানুষকে প্রশামত্ম জীবন থেকে বঞ্চিত করে, ঘৃণা-বিদ্বেষ, হিংসা ও দুর্বিনীত আচরণ। হিংসা অবধারিতভাবে মনের মাঝে দুঃসহ আগুন জ্বালিয়ে দেয়। হিংসার কারণে অমত্মরে জমা হতে থাকে ঘৃণা, ঈর্ষা, বিদ্বেষ, ক্রোধ, শত্রুতা, হতাশা, দুঃখ, দুশ্চিমত্মা, তাকদীরের উপর অসমত্মষ্টি, গোপনে পর্যবেক্ষণ, কৌশল উদ্ভাবন, উদ্বেগ, শারিরীক ও মানসিক চাপ প্রভৃতি নেতিবাচক মানসিক অপক্রিয়া। অথচ এসব কোন কিছুই যার প্রতি হিংসা করা হয় তার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারে না, উল্টো হিংসুকেরই নেক আমলগুলোকে নিঃশেষ করে দেয়। কাযী শুরাইহকে জনৈক ব্যক্তি বলেন, বিবাদমান পক্ষগুলোর ব্যাপারে আপনার ধৈর্য ধরা এবং সূক্ষ্ম বিচারে আপনার পারদর্শিতা দেখে আপনার প্রতি আমার খুব হিংসা জাগে। কাযী লোকটিকে বললেন, হিংসায় তোমার যেমন কোন লাভ নেই, আমারও কোন ক্ষতি নেই। জাহিয বলেন, হিংসা শরীরকে নষ্ট করে দেয় এবং সম্প্রীতিবোধকে বিনাশ করে। হিংসার চিকিৎসা হল কষ্ট বা বিপদে পড়া। হিংসুক ব্যক্তির সার্বক্ষণিক সাথী হল অশামিত্ম। এটি একটি অস্পষ্ট প্রবেশপথ এবং অবামত্মর ধ্যান-ধারণার নাম। হিংসা প্রকাশ হয়ে পড়লে তার আর চিকিৎসা নেই। আর গোপন থাকলে তার চিকিৎসা নিহিত কষ্টে বা বিপদ-আপদে পড়ার মধ্যে (রিসালাতুল হাসেদ ওয়াল মাহসূদ, পৃঃ ৮)। হিংসার সবচেয়ে খারাপ দিক হল- হিংসুক সবসময় হিংসা করে মর্যাদাবান ও উত্তম গুণের অধিকারীদেরকে। এজন্য কুরআনে হিংসুকদের হিংসা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে (ফালাক ৫)। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে হিংসুকদের নির্বুদ্ধিতাকে ভৎর্সনা করে বলেন, ‘নাকি তারা মানুষের সাথে হিংসা করে আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে যা কিছু দান করেছেন সেজন্য’ (নিসা ৫৪)? রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা কারো দোষের কথা জানতে চেষ্টা করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকাবাজি করো না, পরস্পরের প্রতি হিংসা রেখ না, পরস্পরের প্রতি শত্রুতাও করো না এবং একে অন্যের পিছনে লেগ না। বরং পরস্পর এক আল্লাহর বান্দা ও ভাই ভাই হয়ে থাক’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৫০২৮)

হিংসার এই রোগ থেকে বাঁচার উপায় হল-রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা নিজেদের অপেক্ষা নিম্ন অবস্থার লোকের প্রতি তাকাও। এমন লোকের দিকে তাকিও না যে তোমাদের চেয়ে উঁচু পর্যায়ের। তাহলে আল্লাহ তোমাকে যে নেয়ামত দান করেছেন তাকে তুমি ক্ষুদ্র মনে করবে না’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৪২)।       

  1. ক্রোধ : الغضب শব্দটির অর্থ শক্ত ও কঠোর হওয়া। পরিভাষায় ক্রোধ হল প্রতিশোধ গ্রহণের ইচ্ছায় অমত্মরের রক্ত ফুঁসে উঠা। মানবস্বভাবের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য ক্রোধ। এটা সর্বাবস্থায় ধৈর্যহীনতার বহিঃপ্রকাশ তা কোন উত্তম ব্যক্তির ক্রোধই হোক (অর্থাৎ যে ক্রোধ তার অবস্থান ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে), অথবা মন্দ লোকের খারাপ, কুপ্রবৃত্তির বশে সৃষ্ট ক্রোধ হোক। ক্রোধ যখন মানুষের অমত্মরে বিজয়ী হয়ে যায় তখন নিজের উপর এবং সমাজের উপর তার কুপ্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। যখন মানুষ ক্রোধে উন্মত্ত হয় তখন সে সত্য ও সঠিক পথ থেকে দূরে সরে যায়, হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সে যা খুশি করে ফেলে। সহিষ্ণুতা, ক্ষমার মহত্তম সুযোগ থেকে সে বঞ্চিত হয়। সে মনে করে যে সে নিজের ক্ষমতা ও বাহাদুরি সমুন্নত রাখতে সমর্থ হল, অথচ চূড়ামত্ম বিচারে তাকে নিতামত্মই নির্বোধ ও অপরিণামদর্শী পাওয়া যায়। এতে নিজেকে যেমন অনুশোচনায় পড়তে হয়, তেমনি দুনিয়া ও আখিরাতে বহু ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য আল্লাহ রাববুল আলামীন মুমিনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘এবং ক্রোধ সংবরণকারী ও মানুষকে মার্জনাকারী’ (আলে ইমরান ১৩৪)। অর্থাৎ ক্রোধ মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য, এটার মূলোচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। কিন্তু ঈমানদার ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য হল ক্রোধকে দমন করা। জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে উপদেশ চাইলে তিনি বললেন, তুমি রাগান্বিত হয়ো না। সে আরো কয়েকবার উপদেশ চাইলে তিনি প্রতিবারই বললেন, তুমি রাগান্বিত হয়ো না’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫১০৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, রাগের সময় ধৈর্যধারণ করা ও মন্দ ব্যবহার ক্ষমা করা- এ নীতি যখন মানুষ অবলম্বন করে আল্লাহ তখন তাদেরকে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবেন এবং শত্রুকে এমনভাবে অনুগত করে দিবেন যেন তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫১১৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ঐ ব্যক্তি শক্তিশালী নয়, যে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলায় পরাসত্ম করে। বস্ত্ততঃ সে ব্যক্তিই প্রকৃত বীর, যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৫১০৫)

উল্লেখ্য যে, ক্রোধ যখন পাপ, কুফরী, মুনাফেকীর প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয় তখন তা ঈমানের পরিচয় সমুন্নত করে। এজন্য মুমিনদের আরেকটি পরিচয় দিতে যেয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তারা কাফিরদের বিরুদ্ধে কঠোর’ (ফাতাহ ২৯)

  1. রিয়া : রিয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ লোকপ্রদর্শন। পারিভাষিক অর্থে রিয়া বলা হয় ঐ ইবাদত ও সৎ আমলকে যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পরিবর্তে জনসম্মুখে নিজের ব্যাপারে সুধারণা দেয়ার জন্য করা হয়। এর দ্বারা পার্থিব সম্মান, প্রশংসা ও অর্থ উপার্জনই তার উদ্দেশ্য হয়।

আল্লাহর ইবাদতে রিয়া বা লোকপ্রদর্শন একটি অমার্জনীয় অপরাধ এবং প্রকারামত্মরে শিরকের পর্যায়ভুক্ত। কেননা এতে আল্লাহর ইবাদত হয় না বরং মানবপূজা করা হয়। নেককার লোকদের অমত্মরে রিয়া অপেক্ষা মারাত্মক ব্যাধি আর নেই। রিয়ার ফলে আমলে খুলূছিয়াত নষ্ট হয়ে যায়। আর যে আমলে খুলূছিয়াত থাকে না তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে’ (বাক্বারা ২৬৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি আমার উম্মতের জন্য ছোট শিরকের বিষয়ে যেমন ভয় করি অন্য বিষয়ে তেমন ভয় করি না। ছাহাবাদের জিজ্ঞাসায় তিনি বললেন, ছোট শিরক হল ‘রিয়া’। কিয়ামতের দিন আল্লাহ রিয়াকারদের লক্ষ্য করে বলবেন, ‘তোমরা যাও! যাদের উদ্দেশ্যে তোমরা ইবাদত করেছ তাদের নিকট গমন কর এবং তাদের নিকট হতেই তোমাদের প্রতিদান চেয়ে নাও’ (আহমাদ, মিশকাত হা/ ৫৩৩৪, সনদ ছহীহ)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুনাম অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন কাজ করে, আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি সমাজে প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য কোন আমল করে আল্লাহ তাআলাও তার সাথে লোক দেখানোর ব্যবহার করবেন (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৫৩১৬)। আলী (রাঃ) রিয়াকারীর তিনটি নিদর্শন বর্ণনা করেন- যখন সে একাকী থাকে তখন অলসতায় কাটায়, মানুষের সামনে প্রাণচঞ্চল, পরিপাটি থাকে, প্রশংসিত হলে আমলে তৎপরতা দেখায় এবং নিন্দিত হলে আমল কমিয়ে দেয়। আমলে খুলূছিয়াত আনার সচেতন প্রয়াসের মাধ্যমে রিয়ার এই দোষটি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। ইউসুফ আর-রাযী বলেন, ইখলাছ অর্জন দুনিয়ার সর্বাধিক কঠিন বিষয়। আমি বহুবার চেষ্টা করেছি অমত্মরকে রিয়া থেকে মুক্ত করার, কিন্তু প্রতিবারই যেন তা বিভিন্ন রূপে আবার জন্ম নেয়। ইবনে রজব বলেন, প্রবৃত্তির জন্য সবচেয়ে বড় আপদ হল ইখলাছ। কেননা তাতে প্রবৃত্তির জন্য কোন অংশ বাকী থাকে না।    

  1. কুপ্রবৃত্তি : কুপ্রবৃত্তি অতি ব্যাপক বিষয়। মানবজাতিসহ প্রাণীকুলের স্থায়িত্ব ও বংশবিসত্মারের জন্য আল্লাহ মানুষের মাঝে আহার, নিদ্রা, কামভাব ইত্যাদি জৈবিক চাহিদা সহজাত করে দিয়েছেন। যখন মানুষ এসব চাহিদাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক তার ব্যবহার ও পরিচর্যা করে তখন তা জীবনধারণের মৌলিক উদ্দেশ্য তথা আল্লাহর দাসত্বের জন্য কল্যাণকর শক্তি হিসাবে কাজ করে। কিন্তু যখন এসব চাহিদাকে সে নিজের আজ্ঞাবহ রাখতে ব্যর্থ হয় এবং শয়তানের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে প্রবৃত্তির দাসে পরিণত হয়, তখন সে পরিণত হয় জৈবিক পশুতে। অনিয়ন্ত্রিত ভোজনস্পৃহা ও কামরিপুর তাড়না মেটাতে সে অনৈতিক পন্থার আশ্রয় নেয় এবং নানা দুনিয়াবী লোভ-লালসার শরণাপন্ন হয়। এখান থেকেই জাগে ধন-সম্পদের লোভ, যা অর্জনের জন্য প্রয়োজন হয় শক্তি, সুখ্যাতি, নেতৃত্ব, প্রভুত্ব ইত্যাদি। এসবের লালসা যখন কাউকে গ্রাস করে ফেলে তখন সে মরিয়া হয়ে সমাজে অন্যায়-অকল্যাণ, দ্বন্দ্ব -কলহ, অশামিত্ম-বিশৃংখলার জন্ম দেয়।

মানুষের প্রায় সকল পাপের উৎস কুপ্রবৃত্তি। যে ব্যক্তি কুপ্রবৃত্তির তাড়না থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সমর্থ হয় এবং তার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলে সে ব্যক্তি অধিকাংশ পাপের হাত থেকে রক্ষা পায়। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং প্রবৃত্তির খেয়াল-খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত রেখেছে, জান্নাতই হবে তার ঠিকানা’ (নাযিআত ৪১)

  1. কুধারণা : কুধারণা বলতে বুঝায়- কোন মানুষ সম্পর্কে দলীল বিহীনভাবে কোন খারাপ ধারণা পোষণ করা। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই কতিপয় ধারনা পাপ (হুজ্রাত ১২)।’ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা কারো সম্পর্কে কুধারণা করা থেকে বেঁচে থাক। কেননা আনুমানিক ধারণা বড় ধরনের মিথ্যা’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৫০২৮)। আর বাসত্মবিকই কোন মানুষ সম্পর্কে আমাদের কুধারণা যে খুব কমই সত্য হয় তা আমরা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাতেই দেখি, অথচ তা আমাদের বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব নষ্ট করতে এবং অমত্মরকে অযথা ভারাক্রামত্ম করতে বিরাট ভূমিকা রাখে। তবে কোন কারণে যদি কুধারণা এসেই যায় তবে এটুকু নিশ্চিত করতে হবে যে, তা যেন বাইরে প্রকাশ না পায় বা তার ভিত্তিতে কোন কিছু বাসত্মবায়ন না করা হয়।    

পরিশেষে বলা যায়, এই মহাবিশ্ব চরাচরের একাধিপতি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞানার্জন ও সর্বস্বত্যাগ করে তাঁর কাছে পূর্ণাঙ্গ আত্মসমর্পণের মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃত মানুষে পরিণত হয়। অপরদিকে আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব ও অজ্ঞতার কারণেই মানুষ পথভ্রষ্ট হয়। ফলে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার তুচ্ছ লোভ-লালসা চরিতার্থ করতে যেয়ে নানা বদউপসর্গ তার মাঝে শক্তভাবে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়, যা তার আত্মা থেকে মনুষত্যের গুণাবলী হরণ করে নেয়। এজন্য ইবনুল কাইয়িম বলেন, ‘যদি মানুষ প্রকৃতঅর্থে তাঁর প্রভুকে চিনত, তাঁর অসীম ক্ষমতা ও গুণাবলী সম্পর্কে ধারণা রাখত এবং নিজের সীমাবদ্ধতা ও অপূর্ণতা উপলব্ধি করতে পারত, তবে সে কখনো অহংকার করত না, কখনো ক্রোধে উন্মত্ত হতো না, কারো সাথে হিংসাও করতে পারত না। কেননা হিংসা প্রকারামত্মরে আল্লাহর সাথেই শক্রতার শামিল। যেহেতু হিংসাপরায়ণ লোক স্বীয় বিরাগভাজন ব্যক্তির উপর আল্লাহর দেয়া নেআমতকে অপছন্দ করে, অথচ আল্লাহ তার জন্য সেটা পছন্দ করেছেন। অর্থাৎ সে আল্লাহ নির্ধারিত বিষয় ও তাঁর পছন্দ-অপছন্দের বিরুদ্ধে শক্রতায় লিপ্ত হয়। আর এ কারণেই ইবলীস আল্লাহর শত্রুতে পরিণত হয়েছিল। কেননা তার পাপ ছিল অহংকার ও হিংসা থেকে উৎসারিত। এ দু’টি অনিষ্টকর গুণই তাকে আল্লাহ সম্পর্কে ভুলিয়ে দিয়েছিল এবং তাঁর আনুগত্যে বাধা সৃষ্টি করেছিল। অন্যদিকে ক্রোধ মানুষকে নিজ আত্মার পরিচয় ভুলিয়ে দেয়। সে নিজের আত্মার কল্পিত প্রশামিত্মর জন্য অন্যকে ক্রোধের আগুনে পুড়িয়ে দেয়। অথচ আত্মা এই হক রাখে না যে তার পরিতুষ্টির জন্য মানুষ ক্রোধ ও প্রতিশোধ ইচ্ছা চরিতার্থ করবে। কেননা তাতে স্রষ্টা আল্লাহর পরিবর্তে সৃষ্টি আত্মার জন্য ক্রোধ ও সন্তুষ্টি প্রকাশ প্রাধান্য পেয়ে যায় (আল-ফাওয়ায়েদ, ১/১৭১ পৃঃ)

আল্লাহ রাববুল আলামীন আমাদের সকলকে আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হওয়ার এবং তার প্রিয় বান্দাদের অমত্মর্ভুক্ত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!!



বিষয়সমূহ: আত্মশুদ্ধি
আরও