আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রাথমিক ইতিহাস
ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম 9131 বার পঠিত
আহলেহাদীছ কোন নতুন দল নয় এবং দ্বাদশ শতকের সমাজ সংস্কারক মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহহাব নাজদী (১১১৫-১২০৬হি.) বা অন্য কোন ব্যক্তি এ দলের প্রতিষ্ঠাতাও নন; বরং এ দলের প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং রাসূলে কারীম মুহাম্মাদ (ছাঃ)। হাফিয ইবনু কাছীর (রহঃ) উল্লেখ করেন যে, هذا شرف لأصحاب الحديث لأن إمامهم النبي صلى الله عليه وسلم- ‘এটি আহলেহাদীছদের সবচেয়ে বড় সম্মান-মর্যাদার বিষয়। কেননা তাদের ইমাম হচ্ছেন নবী করীম (ছাঃ)’ (তাফসীর ইবনে কাছীর, ৩/৭৩পৃ.)। ইমাম চতুষ্টয়ের বহু পূর্ব হতে পৃথিবীতে এ দলের অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু যারা আহলেহাদীছগণকে কয়েক শতাব্দীর নতুন দল বলে গণ্য করতে চান, তারা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে ইতিহাস, মিলাল (বংশ পরিচয়) ও ফিক্বহ গ্রন্থ সম্পর্কে তাদের অনভিজ্ঞতা ও অজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। আবার অনেকে বলে থাকেন যে, আহলেহাদীছ হচ্ছে শুধু হাদীছ বিশারদ বা মুহাদ্দিছগণের নাম। কিন্তু একথা সঠিক নয়; বরং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসারী সকল মুসলিমকে আহলেহাদীছ বলা হয়। আর আহলেহাদীছগণের পরিগৃহীত ও অনুসৃত মাসআলাগুলির প্রায় সবই মাযহাব চতুষ্টয়ের অন্তর্গত কোন না কোন দল কর্তৃক নিশ্চিতরূপে সমর্থিত হয়েছে। তবে আহলেহাদীছগণ প্রচলিত মাযহাবগুলির মধ্যে নির্দিষ্ট কোন একটির অন্তর্ভুক্ত ও অনুসারী নন। তারা সম্পূর্ণ পৃথক ও স্বতন্ত্র। ছাহাবায়ে কেরামের যুগের সকল মুসলমান এবং পরবর্তীকালে সাধারণ মুসলমানদের একটি দল এ নামে পরিচিত ছিলেন। অবশ্য ছাহাবা ও তাবেঈদের ‘আহলুলহাদীছ’ নামকরণ ছিল কেবল বৈশিষ্ট্যগত, স্বতন্ত্র পরিচিতির জন্য নয়। কারণ ভিন্ন পরিচয়ে তখন কোন দলই মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ছিল না। কিন্তু ৩৭ হিজরীর পরে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অভ্যুদয় ঘটতে থাকলে তাদের বিপরীতে যারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের পথ ও পন্থা অনুসরণ করেন তাঁরা ‘আহলুল হাদীছ’ বা ‘আহলুস সুন্নাহ’ নামে পরিচিত হন।
সুতরাং ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনে ইযামের যুগে সবাই আহলেহাদীছ ছিলেন। সে যুগে মাযহাবী ফির্কাবন্দী বা দলীয় বিভক্তি ছিল না। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক বিদ্বান একথা অবগত যে, ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবে‘ তাবেঈনদের কেউ কারো মুকাল্লিদ বা অন্ধ অনুসারী ছিলেন না’ (আল-কাওলুল মুফীদ, পৃ. ১৫)। মুসলমানদের মধ্যে ফিরকাবন্দী বা দলগত ভিন্ন ভিন্ন গন্ডি কায়েম হওয়ার আগে আহলেহাদীছ ও মুসলমান উভয় শব্দের তাৎপর্য এক ও অভিন্ন ছিল। যারা মুসলমান ছিলেন তারা সকলেই ছিলেন আহলেহাদীছ। নিম্নোক্ত হাদীছ এ বিষয়ের প্রোজ্জ্বল প্রমাণ।
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدُرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ كَانَ إِذَا رَأَى الشَّبَابَ قَالَ مَرْحَبًا بِوَصِيَّةِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُوَسِّعَ لَكُمْ فِيْ الْمَجْلِسِ وَأَنْ نُفَهِّمَكُمُ الْحَدِيْثَ، فَإِنَّكُمْ خُلُوْفُنَا وَأَهْلُ الْحَدِيْثِ بَعْدَنَا-
প্রখ্যাত ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) কোন মুসলিম যুবককে দেখলে বলতেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অছিয়ত অনুযায়ী আমি তোমাকে সাদর সম্ভাষণ জানাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে তোমাদের জন্য মজলিস প্রশস্ত করে দেওয়ার এবং তোমাদেরকে হাদীছ বুঝানোর নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা তোমরা আমাদের স্থলাভিষিক্ত ও পরবর্তী আহলেহাদীছ (মুস্তাদরাকে হাকিম, ১/৮৮পৃ.; শারফু আছহাবিল হাদীছ, পৃ. ২১)।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবাগণকে আহলেহাদীছ নামে অভিহিত করেছেন এবং ছাহাবায়ে কেরামের শিষ্যমন্ডলী তাবেঈগনকেও আহলেহাদীছ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সর্বাধিক হাদীছ বর্ণনাকারী প্রসিদ্ধ ছাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) নিজেকে গর্বভরে আহলেহাদীছ বলতেন। তিনি বলতেন, أنا أول صاحب حديث في الدنيا- ‘আমি পৃথিবীর সর্বপ্রথম আহলেহাদীছ’ (আল-ইছাবাহ, ৪/৩৮৬ পৃ.; তাযকিরাতুল হুফ্ফায ১/৩২পৃ.; তারীখু বাগদাদ, ৯/৪৬৭পৃ.)। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাসকেও আহলেহাদীছ বলা হয়েছে (তাবাকাতুয যাহাবী ১/২৩পৃ.; তারীখু বাগদাদ, ৩/২২৭পৃ.)। খায়রুদ্দীন যিকিরলী আবুদ দারদা (রাঃ) (মৃত্যু ৩২হি.)-এর জীবনী আলোচনা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, ‘আহলেহাদীছগণ তাঁর মাধ্যমে ১৭৯টি হাদীছ বর্ণনা করেছেন’ (আল-আ‘লাম, ৫/১০৫পৃ.)।
ইমাম আহমাদ ইবনু তায়মিয়া (৬৬১-৭২৮হি.) বলেন, ইমাম আবু হানীফা, মালেক, শাফেঈ ও আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ)-এর জন্মের বহু পূর্ব হতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের প্রাচীন একটি মাযহাব ছিল। সেটি হল ছাহাবায়ে কেরামের মাযহাব, যাঁরা তাদের নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট থেকে সরাসরি জ্ঞান অর্জন করতেন। আবুল কাসেম হিবাতুল্লাহ লালকাঈ (মৃ. ৪১৮হি.) স্বীয় গ্রন্থে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর হতে ছাহাবা, তাবেঈন ও তৎপরবর্তী যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ও স্থানে তাঁর সময় পর্যন্ত ১৯১ জন নেতৃস্থানীয় আহলেহাদীছ ব্যক্তিত্বের নাম লিপিবদ্ধ করেন। ইমাম আব্দুর রহমান ছাবূনী (৩৭২-৪৪৯হি.) ইমাম মালিক, শাফেঈ ও আহমাদ (রহঃ) থেকে তাঁর যুগ পর্যন্ত ৪৭জন শীর্ষস্থানীয় আহলেহাদীছ নেতৃবৃন্দের নাম উল্লেখ করেছেন। অনুরূপভাবে ইবনু নাদীম (মৃ. ৩৭০হি.) ৬৪ জন আহলেহাদীছ নেতৃবৃন্দের পরিচয় উপস্থাপন করেছেন (আহলেহাদীছ আন্দোলন : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ; দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ, পৃ. ৫১)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ওফাতের পরে ছাহাবায়ে কেরাম ছিলেন কুরআন-হাদীছ তথা অহি-র আলোকে জীবন গড়ার আন্দোলনে প্রথম সারির মানুষ। তাঁরা ইস্পাত কঠিন ঈমানী দৃঢ়তা ও দলীল-প্রমাণের আলোকে ইসলামের উপর আপতিত প্রাথমিক যুগের হামলাগুলি প্রতিহত করেন। একদিকে তাঁরা মুনাফিক, মুরতাদ, যাকাত অস্বীকারকারী ও ভন্ড, মিথ্যা নবীদের রক্তক্ষয়ী আন্দোলন এবং তৎকালীন বিশ্বের দুই পরাশক্তি রোম-ইরানের মুকাবিলা করেন। অপরদিকে কুরআন সংকলন, হাদীছের পঠন-পাঠন ও বর্ণনার মাধ্যমে দ্বীনের ব্যাপক প্রচার-প্রসার আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। ছাহাবায়ে কেরামের হাতে বিজিত তৎকালীন ইসলামী বিশ্বের সর্বত্র তখন কেবল কুরআন-হাদীছের প্রচার-প্রসার চলছিল। সবখানে কুরআন-হাদীছের বাণী গুঞ্জরিত হচ্ছিল। যাকে আহলেহাদীছ আন্দোলনের হৃদস্পন্দন বলা যায়। ইসলামের সর্বাপেক্ষা নির্ভেজাল ও সোনালী ঐতিহ্য মন্ডিত এ যুগ ছিল আক্বীদাগত সকল বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত (ঐ, পৃ. ৮৪)।
আল্লামা খতীব বাগদাদী (মৃত ৪৬৩ হি.) বলেন, তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব তাদের যুগে আহলেহাদীছ নামে অভিহিত হতেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) তাঁর যুগে, ইমাম শা‘বী (রহঃ) তাঁর যুগে এবং সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) তাঁর যুগে’ (তারীখু বাগদাদ, ৩য় খন্ড, পৃ. ২২৭)।
৪৮জন ছাহাবীর নিকট থেকে হাদীছ শ্রবণকারী ও পাঁচশত জন ছাহাবীর দর্শন লাভকারী প্রখ্যাত তাবেঈ বিদ্বান ইমাম শা‘বী (২২-১০৪হি.) সকল ছাহাবায়ে কেরামকে আহলেহাদীছ নামে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ما حدثت إلا بما أجمع عليه أهل الحديث، ‘যে সকল মাসআলায় আহলেহাদীছগণ একমত হয়েছেন, আমি কেবল সেগুলি বর্ণনা করেছি’। হাফেয শামসুদ্দীন আয-যাহাবী বলেন, يعني به الصحابة رضي الله عنهم ‘ইমাম শা‘বী আহলেহাদীছ শব্দ দ্বারা ছাহাবায়ে কেরামের দলের কথা বুঝিয়েছেন’ (তাযকিরাতুল হুফ্ফায ১/৭৭পৃ.)। তাবেঈ শ্রেষ্ঠ এই ইমাম শা‘বী স্বয়ং আহলেহাদীছরূপে প্রসিদ্ধ ছিলেন (তারীখু বাগদাদ, ১/২২৭)।
ইমাম মালিক ও তাঁর শিক্ষক ইমাম যুহরীর ওস্তাদ বনু নাজ্জারের সূর্য সন্তান ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল-আনছারী (মৃত্যু ১৩৪হি.) তৎকালীন যুগে আহলেহাদীছগণের অগ্রণী ব্যক্তি বলে পরিগণিত হতেন (আল-আ‘লাম, ৮/১৪৭পৃ.)। আবু বকর আল-খতীব আল-বাগদাদী বলেন, ‘আবদুল মালিক ইবনু আবী সুলায়মান, আছিম আল-আহওয়াল, ওবায়দুল্লাহ বিন ওমর, ইয়াহইয়াহ ইবনু সাঈদ আনছারী প্রমুখ তাবেঈ আহলেহাদীছ নামে অভিহিত হতেন’ (তারীখু বাগদাদ, ১৪/১০৫পৃ.)।
সুতরাং বুঝা যায় ছাহাবী ও তাবেঈদের যুগে আহলেহাদীছ ছিল, কিন্তু অন্য কোন মাযহাব ছিল না। কেননা ইসলাম ও আহলেহাদীছের আদর্শ এক ও অভিন্ন ছিল। ফলে ইসলামী বিশ্বে ফিরকাবন্দী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অব্যবহিতকাল পূর্ব পর্যন্ত মুসলমানদের প্রতিপালিত মতাদর্শ ছিল আহলেহাদীছ। কিন্তু ৩৭ হিজরীর পরে যখন খারেজী ও শী‘আদের উত্থান ঘটে, ই‘তিযাল ও ইরজার ফিতনার সাথে সাথে কিতাব ও সুন্নাতের স্বচ্ছ সলিলে রায় ও কিয়াসের আবর্জনা মিশ্রিত হতে থাকে, তখন রাসূলে কারীমের অনুসারী ছাহাবায়ে কেরাম নিজেদের আদর্শিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্য আহলেহাদীছ নাম গ্রহণ করেন। সে সময় কিছু লোক তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কুরআনের ব্যাপারে কোন কারসাজি না করলেও হাদীছের মধ্যে কিছু ভেজাল সৃষ্টি করতে থাকে। তখন নির্ভেজাল সুন্নাতের অনুসারীরা ‘আহলেসুন্নাত’ নামে অভিহিত হন। কিন্তু ছাহাবীদের পরবর্তী যুগে যখন দু’টি দল সৃষ্টি হয় তখন একটি দল শুধু সুন্নাতের ব্যাপারে নয়; বরং কুরআনের ব্যাপারেও নিজেদের মনগড়া মত ও রায় চালাতে থাকে। ফলে এই দলের বিপরীত দল যারা কুরআন ও হাদীছ উভয়ের ব্যাপারে নিজেদের মনগড়া মত ও রায় না চালিয়ে কুরআন ও হাদীছে যেমন আছে তাকে ঐভাবে রেখে অনুসরণ করতে থাকেন তাদের নামকরণ হয় আহলে সুন্নাত বা আহলেহাদীছ। এভাবে তখন থেকে কুরআন ও হাদীছের নির্ভেজাল সত্যের অনুসারীরা আহলেহাদীছ নামে আখ্যায়িত হয়ে আসছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তারা এ নামে অভিহিত হবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِيْ مَنْصُوْرِيْنَ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّي تَقُوْمَ السَّاعَةَ- ‘আমরা উম্মতের একটি দল সর্বদা বিজয়ী থাকবে। বিরুদ্ধবাদীরা ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’ (তাদের অপদস্ত করতে পারবে না) (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিছকুল শিরোমণি ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী (রহঃ) বলেন, هم أهل الحديث ‘ঐ দলটি হল আহলেহাদীছ’ (তিরমিযী)। ইমাম বুখারীও অনুরূপ বলেছেন। প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ ইয়াযীদ ইবনু হারূণ ও ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) বলেন, إن لم تكن هذه الطائفة المنصورة أصحاب الحديث فلا أدري من هم؟ ‘ঐ বিজয়ী দলটি যদি আহলেহাদীছ না হয় তাহলে আমি জানি না তারা কারা’? (ফাতহুল বারী)। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) আরো বলেন, أن الطائفة المنصورة التي يرفع الخذلان عنهم إلى قيام الساعة هم أصحاب الحديث- ‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত বিজয়ী বা সাহায্যপ্রাপ্ত দল যাদের থেকে অপমান, লাঞ্ছনা তুলে নেয়া হয়েছে, তারা হচ্ছে আহলেহাদীছ’ (খাছাইছু আহলিল হাদীছ, পৃ. ৫৫)।
উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ছাহাবীগণের কেউ কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন না। অথচ তারা মুসলিম নামের সাথে আহলেহাদীছ নামে পরিচিত হতেন। ছাহাবীদের পরবর্তী যুগে তাবেঈগণের কেউ কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন না। বরং ছাহাবী ও তাবেঈগণ সকলেই আহলেহাদীছ ছিলেন। উল্লেখ্য যে, ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে ইযাম, মুহাদ্দিছীন ও হাদীছপন্থী ফক্বীহগণই কেবল আহলেহাদীছ ছিলেন না; বরং তাঁদের নীতির অনুসারী ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী সাধারণ জনগণও সকল যুগে ‘আহলুল হাদীছ’ নামে অভিহিত হতেন এবং বর্তমান যুগেও হয়ে থাকেন। হিজরী ৫ম শতকের খ্যাতনামা বিদ্বান ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী (মু. ৪৫৬ হি.) বলেন, وأهل السنة الذين نذكرهم أهل الحق ومن عداهم فأهل الباطل فانهم الصحابة رضي الله عنهم وكل من سلك نهجهم من خيار التابعين رحمة الله عليهم ثم أهل الحديث ومن تبعهم من الفقهاء جيلا فجيلا إلى يومنا هذا ومن اقتدي بهم من العوام في شرق الأرض وغربها رحمة الله عليهم- ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত যাঁদেরকে আমরা হক্বপন্থী ও তাঁদের বিরোধীদেরকে বাতিলপন্থী বলেছি, তাঁরা হলেন ছাহাবায়ে কেরাম, তাঁদের অনুসারী শ্রেষ্ঠ তাবেঈগণ, অতঃপর আহলুল হাদীছগণ ও ফক্বীহদের মধ্যে যারা তাদের অনুসারী হয়েছেন যুগে যুগে আজকের দিন পর্যন্ত এবং পূর্ব-পশ্চিমের ঐসকল সাধারণ জনতা, যারা তাঁদের সাধারণ অনুবর্তী হয়েছেন’ (কিতাবুল ফিছাল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নিহাল, ২য় খন্ড, পৃ. ১১৩)।