কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সদস্য সম্মেলনে প্রদত্ত কেন্দ্রীয় সভাপতির উদ্বোধনী ভাষণ
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব 11472 বার পঠিত
[১৯৮০ সালের ৬ এপ্রিল, রবিবার ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর উদ্যোগে ‘তাওহীদের শিক্ষা ও আজকের সমাজ’ শীর্ষক এক সেমিনার ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের সভাপতি ডঃ মাওলানা আব্দুল বারী সভাপতিত্ব করেন এবং সঊদী সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রদূত ফুয়াদ আব্দুল হামীদ আল-খতীব প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত হন। এই সেমিনারে যুবসংঘ-এর তৎকালীন আহবায়ক জনাব মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উক্ত শিরোনামে যে প্রবন্ধ পাঠ করেন তা দৈনিক আজাদের ৪টি সংখ্যায় (১১,১৮ ও ২৫ এপ্রিল এবং ৯ মে’৮০) প্রকাশিত হয়। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় উক্ত প্রবন্ধটি ‘তাওহীদের ডাক’ পাঠকদের জন্য পত্রস্থ করা হল। ]
তাওহীদের অর্থ :
তাওহীদের অর্থ হল- আল্লাহ এক, তাঁর কোন শরীক নেই, একথা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা। তিনিই আদি তিনিই অন্ত, তিনি চিরস্থায়ী চিরঞ্জীব। তিনিই অন্নদাতা, তিনিই পালনকর্তা, তিনিই বিপদহন্তা, তিনিই আইনদাতা, তিনিই সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস। তিনি ব্যতীত অন্য কেউই আমাদের শর্তহীন আনুগত্য ও উপাসনা পাবার যোগ্য নয়। একমাত্র তিনি ব্যতীত অন্য কারো দরবারে আমাদের উন্নত
মস্তক অবনত হবে না।
তাওহীদের ব্যাখ্যা :
তাওহীদ দুই প্রকার। প্রথম : তাওহীদে রুবুবিয়াত। অর্থাৎ নাম ও গুণাবলীর একত্বসহ আল্লাহর একক সত্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
দ্বিতীয় : তাওহীদে ইবাদত বা ইলাহিয়াত। অর্থাৎ যাবতীয় চাওয়া-পাওয়া, আবেদন-নিবেদন ও আনুগত্যের দাবীদার হিসাবে একমাত্র আল্লাহকেই বিশ্বাস করা।
প্রথম প্রকারের তাওহীদের দলীল হিসাবে আমরা এই আয়াত উলেলখ করতে পারি। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহরই জন্য আসমান ও যমীনের সমস্ত মালিকানা। তিনিই জীবন দান করেন, তিনিই মৃত্যু দান করেন, তিনি সকল কাজের উপর কর্তৃত্বশীল। তিনিই আদি, তিনিই অন্ত, তিনি প্রকাশ্য, তিনি গোপন, তিনি সকল বিষয়ে পূর্ণ পরিজ্ঞাত’ (হাদীদ ৩)।
দ্বিতীয় প্রকারের তাওহীদের দলীল হিসাবে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল পাঠিয়েছি কেবল এই দাওয়াত দেওয়ার জন্য যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহরই আনুগত্য কর এবং তাগূতের আনুগত্য হতে বিরত থাক’ (নাহল ৩৬)।
বলতে গেলে পুরা কুরআন শরীফই উক্ত দ্বিতীয় তাওহীদের আলোচনায় ভরপুর।
তাওহীদে রুবুবিয়াতের আলোচনা :
যিনি যে নামেই ডাকুন না কেন সকল ধর্মের সকল মানুষ এ বিশ্বচরাচরের একজন সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করে নিয়েছেন। এমনকি জড়বাদী দার্শনিকগণ first cause বা ‘প্রথম কারণ’ হিসাবে এ সৃষ্টি জগতের পিছনে একজন ইচ্ছাময় মহাশক্তির অস্তিত্বকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। আল্লাহই এর সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ‘হে রাসূল! আপনি বলে দিন যে, তোমরা আল্লাহ নামে ডাক আর রহমান নামেই ডাক তাতে কিছুই যায় আসে না। কেননা আল্লাহর অনেকগুলি সুন্দর নাম রয়েছে’ (বনী ইসরাঈল ১১০)।
শুধু তাই নয় দুনিয়ার সকল মানুষ আল্লাহকে জীবন-মৃত্যুর মালিক, একমাত্র রুযীদাতা, বিশ্বের পরিচালক ও ব্যবস্থাপক হিসাবেও মেনে নিয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আপনি ওদেরকে জিজ্ঞেস করুন হে নবী! কে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন হতে রূযির ব্যবস্থা করে থাকেন? তোমাদের শ্রবণ ও দর্শনের মালিক কে? কে প্রাণহীন বস্ত্ত হতে জীবন্তকে এবং জীবন্ত হতে মৃত্যুকে বের করে আনেন? কে এই সৃষ্টি জগতের সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন? তারা সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিবে আল্লাহ। আপনি বলুন! তবে কেন তোমরা তাঁকে ভয় করো না?’ (ইউনুস ৩১)।
তবে আল্লাহ নামটিই আল্লাহর সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় নাম। আল্লাহ নিজেই নিজেকে এই নামে অভিহিত করেছেন। সেকালে এটিকে ইসমে আযম বা শ্রেষ্ঠ নাম বলা হত। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ। আমি ব্যতীত দ্বিতীয় কোন উপাস্য নেই। অতএব তুমি কেবল আমারই আনুগত্য করো’ (ত্বহা ১৪)।
আল্লাহ নামের প্রচলন আমরা ইহুদী-নাছারাসহ আরবের পৌত্তলিক এমনকি প্রতিবেশী হিন্দু সমাজের মধ্যেও দেখতে পাই। যেমন অথর্ব বেদে উক্ত হয়েছে।-
হ্রুং হোতার মিন্দ্রো হোতা ইন্দ্রো রামা হাসুরিন্দ্রা:
আল্লো জ্যেষ্ঠং শ্রেষ্ঠং পরমং পূর্ণং ব্রম্মণ অল্লাম \
(অল্ল উপরিষদ ৫ম সুক্ত)।
অর্থ: সেই অল্ল অর্থাৎ পরমাত্মারূপী ইন্দ্র ঈশ্বর অপেক্ষা জ্যেষ্ঠ। অল্লকে গ্রহণ করা ঈশ্বরকে গ্রহণ করা অপেক্ষা কল্যাণকর। কারণ ঈশ্বরও তৎসকাশে পরিমাণে ক্ষুদ্র কিন্তু পরমাত্মা নিত্যপূর্ণ। এই হেতু তিনি ঈশ্বরেরও জননী। অন্যত্র বলা হয়েছে-
ইল্লল্লে বরুণো রাজা পুনর্দ্দদু:।
ইল্লল্লে কবর ইল্লাং কবর ইল্লাং ইল্লেতি ইল্ললে \
অর্থাৎ ক্ষিত্যাদি আকাশ যাবৎ নিখিল দ্যোতমান বস্ত্তই অল্ল কর্তৃক সৃষ্ট..........।’ এমনিভাবে জাহেলিয়াতের যুগের আরবদের মধ্যেও আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের সন্ধান পাই। যেমন মহানবীর (ছাঃ) জন্মবর্ষে ইয়ামনের শাসক আবরাহা যখন কাবা শরীফ ধ্বংস করার জন্য মক্কার উপর চড়াও হয়, তখন উপায়ান্তর না দেখে কাবাঘরের তালা ধরে মুতাওয়াল্লী হিসাবে রাসূলের দাদা আব্দুল মুত্তালিব ফরিয়াদ করে করুণ কণ্ঠে আল্লাহর নিকট যে আকুল প্রার্থনা জ্ঞাপন করেছিলেন তা আজও আমাদের হৃদয়কে অশ্রুসিক্ত করে তোলে। তাঁর প্রার্থনা ছিল- ‘হে প্রভু! শত্রুর বিরুদ্ধে আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করি না। প্রভু হে! তুমি তাদের হাত থেকে তোমার এ পবিত্রভূমিকে রক্ষা কর।’
‘নিশ্চয়ই তোমার এ গৃহের শত্রু কেবল সেই-ই হতে পারে যে তোমার শত্রু। অতএব হে প্রভু ! তুমি তোমার এই জনপদকে শত্রুবাহিনীর ধ্বংস প্রচেষ্টা হতে রক্ষা কর’।
অবশ্য আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ব্যাপারে কিছু পরস্পর বিরোধী মতামত রয়েছে। যেমন বিশ্ববিশ্রুত গ্রীক দার্শনিক এরিষ্টটলের মতে এ বিশ্ব চরাচরে সৃষ্টিকর্তা একটি পূর্ণাঙ্গ সত্তা। তিনি অনাদি অনন্ত, তিনি চির অবিনশ্বর। কিন্তু তার কোনরূপ ইচ্ছা করার কিংবা কাজ করার ক্ষমতা নেই।
এরিষ্টটলের দর্শনের অনুরূপ ইহুদীদেরও ধারণা ছিল যে, আল্লাহ ছয় দিনের মধ্যে সকল কিছু সৃষ্টি করে সপ্তম দিনে আরশে গিয়ে বিশ্রাম নিয়েছেন। এর প্রতিবাদ করে আল্লাহ বলেন, ‘আমরা আসমান ও যমীন এবং উহার মধ্যস্থিত সকল বস্ত্তকে ছয়দিনে সৃজন করেছি। কিন্তু এতে আমাদের কোনরূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি’ (ক্বাফ ৩৮)।
ওদিকে নাছারাগণ কোন কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর মূল সত্তার অংশ বলে ধারণা করত। এর প্রতিবাদে আল্লাহ বলেন, ‘তারা লোকদের মধ্যে কতককে আল্লাহর অংশ বলে সাব্যস্ত করেছে। নিশ্চয়ই মানুষ প্রকাশ্য হঠকারী’ (যুখরুফ ১৫)।
অন্যত্র আল্লাহ প্রকৃতিবাদী দার্শনিকদের লক্ষ্য করে বলেন, ‘তারা বলে যে, আমাদের এই পার্থিব জীবনটাই সবকিছু। আমরা এখানেই মরি, এখানেই বাঁচি এবং প্রাকৃতিকভাবেই আমরা ধ্বংস হই। আসলে এই ব্যাপারে তাদের সঠিক কোন জ্ঞান নেই বরং নিছক অনুমানের উপর ভিত্তি করেই তারা একথা বলে’ (জাছিয়াহ ২৪)।
বিস্মিত হতে হয় এজন্য যে, এসব পন্ডিতগণ প্রজ্বলিত বিজলী বাতিগুলির পিছনে সক্রিয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অস্তিত্ব স্বীকার করেন। কিন্তু কোটি পাওয়ারের সার্চলাইট সদৃশ মহাসূর্য ও জ্যোতির্মন্ডিত নক্ষত্ররাজির পিছনে কোন সক্রিয় কুশলী শিল্পীকে বিশ্বাস করতে পারেন না।
অত:পর আল্লাহর রূপ ও গুণাবলী সম্পর্কে মুসলমানদের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি, ধোঁকা রয়েছে। যারা আল্লাহর হাত, পা, চক্ষু, কর্ণ ইত্যাদি কল্পনা করে নিয়েছে। তবে এ সম্পর্কে আমাদের মত এই যে, আল্লাহ ও তদীয় রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক আল্লাহর নাম, রূপ ও গুণাবলী সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে যেভাবেই বর্ণিত হয়েছে, ঐভাবেই এ বিশ্বাস করা এবং উহাতে কোনরূপ রূপক অর্থের আশ্রয় না নেয়াই বাঞ্ছনীয়। কেননা আল্লাহর রূপ আমাদের কল্পনার বাইরে। যেমন ঘোষণা করা হয়েছে, ‘তার তুলনার মত কিছুই নেই’ (শূরা ১১)।
উপরের আলোচনায় আমরা দেখেছি যে, নাম, গুণাবলীর ব্যাপারে কিছুটা মতপার্থক্য থাকলেও আল্লাহর মূল অস্তিত্বের স্বীকৃতিতে দুনিয়ার প্রায় সকল যুগের মানুষ ঐক্যমত পোষণ করত। তারা সকলেই এই জগতের একজন সৃষ্টিকর্তাকে মানত। তিনি যে রুযীদাতা, পালনকর্তা এবং সকল ক্ষমতার মালিক ছিলেন তাও মানত।
এক্ষণে প্রশ্ন হল, সকল যুগের সকল মানুষ যখন একজন স্রষ্টায় বিশ্বাসী ছিল তখন কোন দাওয়াত নিয়ে আল্লাহ তাদের নিকট যুগে যুগে নবী পাঠিয়েছিলেন? অতএব আমরা সেদিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করব।-
তাওহীদে ইবাদতের আলোচনা :
দুনিয়ার মানুষ সকলে আল্লাহকে একক স্রষ্টা হিসাবে স্বীকার করলেও প্রকৃত প্রস্তাবে কেউই আল্লাহর আনুগত্য করত না। বরং প্রত্যেক যুগে মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক ঈমানদার ব্যতীত বাকী সকলেই জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক এক জন কল্পিত খোদার আনুগত্য করত। এই সব উপখোদারা কখনো রাজনৈতিক ক্ষমতায় বসে, কখনো বা অর্থনৈতিক শোষণের যাতাকলে, কখনও বা অন্য কোন মাধ্যম দিয়ে মানুষের বিবেককে গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ করেছে। ফলে নির্যাতিত মানবতা মুক্তির অন্বেষায় চিরদিন মাথা কুটে মরেছে।
মানুষকে সকল প্রকারের গোলামী হতে মুক্ত করে শুধুমাত্র আল্লাহর গোলামীর মাধ্যমে সত্যিকারের স্বাধীন মানুষে পরিণত করত: বিশ্বমানবতার মিলনতীর্থে জমায়েত করার জন্য যুগে যুগে নবী ও রাসূলগণ তাওহীদে ইবাদতের বিপ্লবী দাওয়াত পেশ করে গেছেন। এই দাওয়াত পৃথিবীর যে অঞ্চলে গিয়ে উপনীত হয়েছে, সেই অঞ্চলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক যাবতীয় ক্ষেত্রে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর মনে তখনই কম্পন শুরু হয়েছে। তাওহীদের কণ্ঠকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য তারা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। ইবরাহীমের (আঃ) বিরুদ্ধে নমরূদের শত্রুতা, মূসার (আঃ) বিরুদ্ধে ফেরাঊনের অভিযান, ঈসার (আঃ) বিরুদ্ধে তার দেশের সম্রাটের হত্যা প্রচেষ্টা, শেষনবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর (ছাঃ) বিরুদ্ধে আবু জেহেল, আবু লাহাবসহ গোটা আরবের কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর সম্মিলিত উত্থান- এ সবকিছুই আমাদেরকে উপরোক্ত কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। বলা বাহুল্য যে, মানব জীবনে তাওহীদে ইবাদত প্রতিষ্ঠা করার জন্যই মূলত: নবীদের আগমন ঘটেছিল।
তাওহীদে ইবাদত অর্থ- জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বপ্রকারের আনুগত্য কেবলমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নিবেদিত করা এবং ত্বাগূতের আনুগত্যকে দূরে ছুড়ে ফেলা। সূরা নাহ্লের ৩৬ আয়াতে ইতিপূর্বেই আমরা তা অবগত হয়েছি।
এখানে ত্বাগূত অর্থ ইমাম মালেক (রহ:) বলেন, ‘আল্লাহ ব্যতীত অন্য যারই আনুগত্য করা হয় তাকেই ত্বাগূত বলা হয়।’
আল্লামা ইবনুল কাইয়িম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কিতাব ও সুন্নাত ব্যতীত অন্য কিছুর নিকট কোন ব্যাপারে মোকদ্দমা পেশ করল সে ত্বাগূতের নিকট তা পেশ করল যা অস্বীকার করার জন্য আল্লাহ স্বীয় মুমিন বান্দাদেরকে নির্দেশ দান করেছেন।’ হাফেয ইবনে কাছীরও (রহ:) অনুরূপ অর্থ ব্যক্ত করেছেন।
আল্লামা আব্দুর রহমান বিন হাসান এর আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন যে, যদি কোন ব্যক্তি অন্যকে নিজের আনুগত্যের প্রতি অথবা কোন গাছ, পাথর, বেদী, কবর বা কোন সাধু ব্যক্তির মূর্তি, কোন ফেরেশ্তা বা অনুরূপ কোন কিছুর প্রতি আনুগত্যের দাবী করে, তবে ঐ সকল কিছুকেই বলা হবে ত্বাগূত। এভাবে আল্লাহ ব্যতীত অন্য যে কোন কিছুর ইবাদত করা হবে তা শয়তানী ক্রিয়াকলাপ এবং তা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র বিরোধী হবে। অতএব তাওহীদ অর্থ হবে যাবতীয় ত্বাগূতকে অস্বীকার করা, আল্লাহকে ছেড়ে যাদের ইবাদত করা হয়।
এই ত্বাগূতসমূহকেই কুরআনে অন্য ইলাহ বলে অভিহিত করা হয়েছে। যেমন হযরত নূহের (আঃ) দাওয়াতকে অস্বীকার করে তাঁর কওম বলেছিল, ‘তারা আপোষে বলল যে, তোমরা নূহের কথায় তোমাদের ওয়াদ, সুয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক, নসর প্রভৃতি ইলাহ উপাস্য মূর্তিগুলোকে পরিত্যাগ করো না’ (নূহ ২৩)। বনি ইসরাঈলগণ মূসাকে (আঃ) বলেছিল, ‘হে মূসা! আমাদের জন্যও একটি ইলাহ বানিয়ে দাও যেমন তাদের বহু ইলাহ রয়েছে’ (আ‘রাফ ১৩৮)। এমনিভাবে ফেরাঊন তার জাতিকে বলেছিল, ‘হে আমার লোকেরা! আমি তোমাদের জন্য আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহকে জানি না’ (ক্বাছাছ ৩৮)। এমনিভাবে আরবদের নিকট যখন আল্লাহর নবী (ছাঃ) তাওহীদের দাওয়াত দিলেন, তখন তারা আশ্চর্য হয়ে বলে উঠল- ‘ইনি কেমন লোক যে সকল ইলাহকে এক ইলাহ বানাতে চান! এটা নিশ্চয়ই বড় তাজ্জবের ব্যাপার’ (ছোয়াদ ৫)। এখানে মক্কার লোকেরা ইলাহ বলতে তাদের মূর্তিসমূহকেই বুঝিয়েছে।
এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, দুনিয়ার সকল যুগের সকল মুশরিকদের উপাস্য দেবতা স্বতন্ত্র হলেও এবং কখনও উহার সংখ্যা দুই, তিন হতে শুরু করে তেত্রিশ কোটিতে গিয়ে ঠেকলেও একটি ব্যাপারে কিন্তু সকল মুশরিক অভিন্ন মত পোষণ করেন যে, এ সকল উপাস্যগুলি কেউই মূল খোদা নয় বরং সকলেই আল্লাহর নিকট অভাব-অভিযোগ পৌছানোর মাধ্যম বা সুপারিশকারী মাত্র। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে এমন কিছুর ইবাদত করে যা তাদের কোন ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না এবং তারা বলে যে, এরা আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশকারী মাত্র’ (ইউনুস ১৮)। লক্ষণীয় যে, এই আয়াতে সুপারিশকারীর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনকে সারসরি ইবাদত বলে অভিহিত করা হয়েছে। ইবাদত বলতে যারা কেবলমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে রুকূ-সিজদা করাকে বুঝাতে চান, সেই সকল পীরপূজারী ও কবরপূজারী এই আয়াত হতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন।
অন্য আয়াতে এই সকল তথাকথিত সুপারিশকারীদেরকে সরাসরি আল্লাহর শরীক বলে অভিহিত করা হয়েছে। যেমন কিয়ামতের দিনের অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আজ আর আমি তোমাদের সাথে কোন সুপারিশকারীকে দেখছি না যাদেরকে তোমরা একদিন শরীক ভাবতে। তোমাদের মধ্যকার সকল সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমাদের সকল ধারণা মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে’ (আন‘আম ৯৪)।
উপরের আলোচনা হতে একথা পরিস্কার হয়ে গেছে যে, আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে কোন প্রকার মাধ্যম মান্য করা প্রকাশ্য শিরক এবং এই মাধ্যমগুলিকেই আরবের লোকেরা ‘ইলাহ’ বলত। এতদ্ব্যতীত অত্যাচারী শাসক ফেরাউন নিজেকে ইলাহ বলেছিল। তাওহীদের কালেমা উপরোক্ত সকল প্রকারের ইলাহ সমূহের বিরুদ্ধে আপোষহীন বিদ্রোহ ঘোষণা করে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে গেছে-‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। ‘নাই কোন ইলাহ আল্লাহ ব্যতীত’। রুবুবিয়াত ও ইবাদত অর্থাৎ প্রভুত্ব ও আনুগত্য দুটিরই দাবীদার একমাত্র আল্লাহ। অন্য কেউ নয়।
তাওহীদের শিক্ষা :
তাওহীদে রুবুবিয়াত ও তাওহীদে ইবাদতের সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর এবার আমরা তাওহীদের শিক্ষার উপরে যৎকিঞ্চিৎ আলোকপাত করতে প্রয়াস পাব।
১. আল্লাহকে জানা : তাওহীদের সর্বপ্রথম ও প্রধান শিক্ষা হল আল্লাহকে জানা। আল্লাহকে জানতে হবে সৃষ্টিকর্তা হিসাবে, পালনকর্তা হিসাবে, রুযীদাতা হিসাবে। জানতে হবে যে, আমি প্রকৃতির সন্তান নই কিংবা বানরের বংশধর নই বা হঠাৎ এ্যাকসিডেন্টের সৃষ্টি নই। আমি আমার ইচ্ছাতে কিংবা আমার বাপ-মায়ের ইচ্ছাতেই কেবল এই দুনিয়ায় আসিনি। বরং আমার সৃষ্টির পিছনে নিশ্চয়ই এক মহান ইচ্ছাময়ের মহৎ ইচ্ছা ক্রিয়াশীল রয়েছে। যার ইচ্ছাতেই আমি মায়ের গর্ভে জীবন লাভ করেছি। অতঃপর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে আলো দিয়ে, বায়ু দিয়ে, জলে-স্থলে- অন্তরীক্ষে অপরিমেয় রূযী সঞ্চিত রেখে আমাকে লালন-পালন করে যাচ্ছেন। অতঃপর জ্ঞান ও চিন্তাশক্তির অমূল্য নেআমত দান করে আমাকে সৃষ্টির সেরা হওয়ার মর্যাদায় ভূষিত করেছেন।
এক্ষণে সেই মহান কারুণিক আল্লাহকে আমরা জানব কেমন করে। স্বয়ং আল্লাহ মেহেরবানী করে তার পাক কালাম মারফত আমাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত করে দিয়ে বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমতের নিদর্শনসমূহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ কর’ (রূম ৫০)। বলাবাহুল্য, এই জগতের প্রতিটি সৃষ্টিই তার স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে। ফুলের সৌরভ নাকে আসলেই আমরা ফুলের অস্তিত্ব অনুভব করি। ফুলটি গাঁদা না গোলাপ তাও বুঝতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে তা যে কোন একটি গাছে ফুটেছে তাও জানতে পারি। এক্ষণে যদি কেউ একটি ছিন্ন ফুল হাতে নিয়ে বলে যে, এটার নাম আছে, গন্ধ আছে ঠিকই কিন্তু তা কোন গাছে ফোটেনি; বরং আপনা-আপনি ফুটে অস্তিত্বময় হয়েছে। তখন তাকে করুণা করা ব্যতীত আর কোন পথ থাকে কি?
আমাদের ঘরের বৈদ্যুতিক বাতিগুলি আমরা সুইচের সাহায্যে জ্বালাতে পারি, নিভাতে পারি। এর অর্থ এই নয় যে, আমিই বিদ্যুতের উৎপাদনকারী। এক্ষণে যদি কেউ নিজ চোখে দেখতে না পাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে পঞ্চাশ মাইল দূরে অবস্থিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রকে অস্বীকার করে বসে তবে তাকে কি বলা যাবে?
অতঃপর ফুলের সৌরভ যেমন তার গুণ, তার নাম ও সঙ্গে সঙ্গে তার মূল গাছটির অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে, তেমনি এই জগতের সৃষ্টিগুণ আল্লাহর স্রষ্টা নাম এবং অবশেষে স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে। অনুরূপভাবে সৃষ্টি জগতের রুযির ব্যবস্থাপনা আল্লাহর রায্যাক নামের, নিত্যদিন জন্ম-মৃত্যুর যে খেলা চলছে তা তার ‘মুহয়ী’ ও ‘মুমীত’ নামের প্রমাণ বহন করে। সৃষ্টির মধ্যে যে দয়া ও ক্ষমাগুণের অনুভূতি রয়েছে তা তার ‘তাওয়াব’ ও ‘গাফ্ফার’ নামের প্রমাণ বহন করে। সঙ্গে সঙ্গে এসব নামের পিছনে একজন ইচ্ছাময়, প্রাণবন্ত মহা পরাক্রমশালী একক ও অবিভাজ্য সত্তার অস্তিত্বের প্রমাণও বহন করে। এবং তিনিই হলেন সেই মহান আল্লাহ।
আল্লাহর গুণাবলীর প্রকাশকে অনেকে একই সত্তার প্রকাশ ধারণা করে থাকেন। বিশ্ববিশ্রুত গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর এই দর্শনে বিশব ও বিশ্বস্রষ্টার সত্তা একই। মৃত্যুর পর সকল প্রাণী স্রষ্টার একক সত্তার সাথে মিশে একাকার হয়ে যাবে।
গ্রীক দর্শনের এই সর্বস্ববাদী মতবাদ মুসলিম ছূফীদের মধ্যে ‘ওয়াহদাতুল ওজুদ’ বা সত্তার একত্ব মতবাদ নামে প্রচলিত। মনসুর হাল্লাজ, ইবনুল আরাবী, কবি হাফিয এমনকি আল-কিন্দী, আল- ফারাবী, ইবনুল মাসকাওয়াইহ, ইবনে সীনার মত দার্শনিকগণও প্লেটোর এই মতের সমর্থক ছিলেন।
যাহোক এটি সম্পূর্ণ তাওহীদবিরোধী মতবাদ। কেননা এই মতবাদে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। স্রষ্টার একটি অংশ হিসাবে মানুষ তখন তার নিজ সত্তার স্বাতন্ত্র্যবোধ হারিয়ে ফেলে। ফলে নিজ প্রবৃত্তির তাড়নায় সে যা-ই করে, তা-ই খোদার করা হচ্ছে বলে নিজেকে আল্লাহর নিকট কৈফিয়তের ঊর্ধ্বে মনে করে। এটি ইসলামী দর্শনের ঘোর বিরোধী।
২. পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য নিবেদন করা : আল্লাহকে চেনার পর তাঁর সৃষ্টি হিসাবে তাঁর ইবাদত বা আনুগত্য করা আমাদের উপর নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। বস্ত্ততঃ আমাদেরকে সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যই হল আল্লাহর ইবাদত করা। যদিও তাঁর ইবাদত করার জন্য সমস্ত সৃষ্টিজগত সর্বদা নিয়োজিত রয়েছে। তথাপি অন্যান্যের ইবাদতের তুলনায় স্বাধীন ইচ্ছাশাক্তির অধিকারী মানুষের স্বেচ্ছাকৃত ইবাদত আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।
দুনিয়ার মানুষ রুবুবিয়াতের ক্ষেত্রে তাওহীদকে স্বীকার করেছে। কিন্তু ইবাদতের ক্ষেত্রে অধিকাংশ লোকই তাওহীদকে অস্বীকার অথবা অমান্য করেছে। আর মূলত: তাওহীদে ইবাদত প্রতিষ্ঠার আহবান জানাতে গিয়েই সকল নবী স্ব স্ব জাতির নিকট লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হয়েছেন। বস্ত্তত: আল্লাহকে একমাত্র প্রভু হিসাবে স্বীকার করলে জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁর আনুগত্য বা ইবাদত করা যে অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়- এ কথা দুনিয়ার মানুষ ইতিপূর্বেও বুঝতে চায়নি, আজও বুঝতে চায় না। অথচ ইবাদত ব্যতীত মুখে কেবল আল্লাহকে প্রভু হিসাবে স্বীকার কবার কোন অর্থই হয় না। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ বলেন, ‘ইবাদত হল রাসূলগণের যবানীতে আল্লাহ যে সকল নির্দেশাবলী পাঠিয়েছেন, তার পূর্ণ আনুগত্য করা। হাফিয ইবনে কাছীর বলেন, ইবাদত অর্থ আল্লাহর হুকুম সমূহ পালন করে ও নিষেধসমূহ হতে বিরত থেকে তাঁর আনুগত্য করা। অতঃপর আল্লাহর আইনের প্রতি আমাদের আনুগত্য হবে পূর্ণাংগ। যেমন আল্লাহ বলেন- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ইসলামের মধ্যে পুরাপুরিভাবে দাখিল হয়ে যাও’ (বাক্বারা ২০৮)।
ত্রুটিপূর্ণ কোন কাজেই যেমন সফলতা আশা করা যায় না, তেমনি আল্লাহর আইনের কোন অংশ ছেড়ে কোন অংশ গ্রহণ করে তা পালন করলে তাকে পূর্ণাংগ ইবাদত বলা যায় না। এতে আশানুরূপ ফললাভ দূরে থাক বরং ক্ষতির আশংকাই বেশী। বলাবাহুল্য, এই একটি মাত্র কারণেই ইহুদী সমাজ আল্লাহর ক্রোধের শিকার হয়েছে। আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘তোমরা কি আমার কিতাবের কিছু অংশ মান্য করবে ও কিছু অংশ অমান্য করবে? যে ব্যক্তি তা করবে তার পরিণতি হল পার্থিব দুনিয়ায় চরম অপমান ও পরকালে মর্মান্তিক শাস্তি। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে গাফেল নন’ ( বাক্বারা ৮৫)।
৩. আল্লাহর সাথে শরীক না করা : তাওহীদের তৃতীয় শিক্ষা হল আল্লাহর সাথে শরীক না করা। বস্ত্ততপক্ষে আল্লাহকে একক প্রভু হিসাবে জানা এবং তার নিকট যাবতীয় আনুগত্য নিবেদন করার পর মন একথা স্বভাবতই বলে দেয় যে, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও শরীক করব না। অন্য কারও গুণাবলীকে তাঁর গুণাবলীর তুল্য মনে করব না। প্রকৃত প্রস্তাবে এটিই সবচাইতে বড় অপরাধ। এই অপরাধ অমার্জনীয়। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী স্থাপন করার অপরাধ কোনক্রমেই ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্য যে কোন অপরাধ ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করতে পারেন’ (নিসা ৪৮, ১১৬)।
হযরত মুআয বিন জাবাল বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে সম্বোধন করে এরশাদ করেছেন যে, ‘তুমি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকেই শরীক করো না। যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় অথবা জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৬১, হাদীছ ছহীহ)।
শিরককে আমরা মোটামুটি পাঁচ ভাগে ভাগ করতে পারি। যথা-জ্ঞানগত শিরক, ভালবাসায় শিরক, ব্যবহারগত শিরক, উপাসনায় শিরক ও অভ্যাসগত শিরক।
১ম : ইশরাক ফিল ইল্ম বা জ্ঞানগত শিরক বলতে আমরা বুঝি, যে সকল বিষয়ের জ্ঞান কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট, সে সকল বিষয়ে অন্যেরও কিছু জ্ঞান আছে বলে বিশ্বাস পোষণ করা। যেমন গায়েবের খবর, অদৃষ্টের খবর ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন, ‘গায়েবের সকল চাবিকাঠি তাঁরই হাতে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউই তা অবগত নয়’ (আন‘আম ৫৯)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে তা একমাত্র আল্লাহই খবর রাখেন। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন এবং একমাত্র তিনিই জানেন মাতৃগর্ভে সন্তানের খবর। কোন ব্যক্তিই বলতে পারে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউই বলতে পারে না কোন মাটিতে তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সর্ববিষয়ে অবহিত’ (লোকমান ৩৪)।
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা একথা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, যে সমস্ত লোক বাতেনী ইলমের দাবীদার এবং যেসব পীর, ফকীর ও গণকঠাকুরের দল গাজি পুথি নিয়ে ফালনামা খুলে, রাশিচক্র গুণে, হস্তরেখা দেখে, টিয়া পাখি উড়িয়ে বিবিধ প্রকারে নানা ভংগীতে মানুষের অদৃষ্ট গণনা করে থাকে, তারা নিঃসন্দেহে শিরকের মহাপাতকে লিপ্ত। অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার ন্যায় এদের অনেক কথা অনেক সময় খেটেও যায়। এটি ইবলীসের কারসাজি। এরা যদি সত্য সত্যই গায়েবের খবর জানত তবে নিজেরা কেন নিজেদের ভাগ্য সম্পর্কে অজ্ঞ? তারা নিজেদের ও নিজেদের সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-বন্ধুদের অবস্থা কেন শুধরিয়ে নিতে পারে না?
আমরা মনে করি যারা এইসব মূর্খের পেতে রাখা ফাঁদে পা দেয় তারাই সবচেয়ে মূর্খ।
২য় : ইশরাক ফিল মুহাববত অর্থাৎ যে ভালোবাসা আল্লাহকে দেওয়া উচিত সেইরূপ ভালোবাসা অন্যকে নিবেদন করা। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘লোকদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যকে শরীক হিসাবে মানে। তারা সেসব উপাস্যদেরকে এমন ভালোবাসে যেমন ভালবাসা কেবল আল্লাহকে দেয়া যায়। তবে যারা প্রকৃত ঈমানদার তারা আললাহকেই সর্বাপেক্ষা বেশী ভালোবেসে থাকে’ (বাক্বারা ১৬৫)।
উক্ত আয়াতে রুবুবিয়াতের ক্ষেত্রে শিরকের কথা বলা হয়নি, রবং মুহাববতের ক্ষেত্রে শিরকের কথা বলা হয়েছে। কেননা অধিকাংশ লোক ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে শিরক করে থাকে। যখন আল্লাহর স্বার্থ ও আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ মুখোমুখি দেখা দেয়, তখন আমরা অনেকেই আল্লাহর স্বার্থকে নীচে রেখে ব্যক্তিগত স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। অথচ আল্লাহর ঘোষণা হল, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের বাপ-দাদা ও ভাই- বেরাদারকে আপন বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। যদি নাকি তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীর প্রতি বেশী আগ্রহী থাকে। মনে রেখ, যে ব্যক্তি এদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে, সে ব্যক্তি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আপনি বলুন, হে নবী! যদি তোমাদের বাপ-দাদা, ভাই-বেরাদার, স্ত্রী-পরিজন, টাকা-পয়সা, ব্যবসা-বাণিজ্য, ঘর-বাড়ী আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা হতে অধিকতর প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে ফায়সালা নেমে আসার অপেক্ষা করো। আল্লাহ হঠকারী ফাসেকদেরকে হেদায়েত করেন না’ (তওবা ২৩, ২৪)।
৩য় : ইশরাক ফিত তাছাররুফ বা ব্যবহারগত শিরক : এর অর্থ আমাদের ব্যবহারিক জীবনে যে সমস্ত কার্জ একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট, সেগুলির উপর অন্যের ক্ষমতা আরোপ করা। যেমন- যথেচ্ছ হুকুম জারি করা, ইচ্ছামত আইন রচনা করা, জীবন-জীবিকার হ্রাস-বৃদ্ধি করা, রোগ মুক্তি দেওয়া, বিপদ হতে রক্ষা করা ইত্যাদি। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সার্বভৌম ক্ষমতা কেবল আল্লাহর জন্য’ (বাক্বারা ১৬৫)।
অন্যত্র তিনি বলেছেন, ‘আদেশ দানের সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর জন্য’ (ইউসুফ ৪০)। এক্ষণে আমরা রাষ্ট্রের প্রতি যে আনুগত্য পোষণ করি, তা আল্লাহর সার্বভৌমত্বের অধীন। যদি তার কোন আইন আল্লাহর আইনের বিরোধী হয়, তবে তা মানতে জনগণকে বাধ্য করা যাবে না। কেননা রাসূলের প্রকাশ্য হুকুম হ’ল, ‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির প্রতি কোন আনুগত্য নাই’ (শারহুস সুন্নাহ, মিশকাত হা/৩৬৯৬, সনদ ছহীহ)।
এমনিভাবে যদি কেউ ওলী-আওলিয়া, পীর-মাশায়েখ, ইমাম-মুজতাহিদদের কথাকে আল্লাহ ও রাসূলের কথার ঊর্ধ্বে স্থান দেয় তবে তাও শিরক হবে। যেমন ইহুদীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘বস্ত্তত: তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের আলিম ও দরবেশদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছে’ (তওবা ৩১)। হযরত আদী বিন হাতেম তাঈ বর্ণিত হাদীছটি এই প্রসংগে স্মরণযোগ্য।
অনেকেই মনে করেন যে, ভক্তের মনের বাসনা পূর্ণ করা, বিপদ হতে রক্ষা করা ইত্যাদি ব্যাপারে ওলী-আওলিয়াদের কিছু হাত আছে। আল্লাহ এর প্রতিবাদ করে বলেন, ‘যদি আল্লাহ তোমাকে কোন কষ্টের সম্মুখীন করেন তবে তা দূর করার ক্ষমতা তিনি ব্যতীত অন্য কারও নেই এবং তিনি যদি তোমার জন্য কোন মঙ্গল ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন, তবে তা রদ করার ক্ষমতাও কারও নেই’ (ইউনুস ১০৭)।
অনেকেই যুক্তি দেখিয়ে বলেন, আমরাতো ওলী-আউলিয়াদের ইবাদত করি না; বরং তাদেরকে আল্লাহর দরবারে সুপারিশকারী বা অসীলা মনে করি। এই যুক্তি আজকের নতুন নয়। ইহুদী ও মুশরিকরাও এই যুক্তি দিয়ে বলত, ‘তারা আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশকারী মাত্র’ (ইউনুস ১৮)।
আল্লাহ এর প্রতিবাদে বলেন, ‘আপনি বলে দিন আল্লাহই যাবতীয় শাফআতের মালিক’ (যুমার ৪৪)। তিনি যাকে ইচ্ছা এর অনুমতি দিতে পারেন। তা কারো এখতিয়ারাধীন নয়।
আশ্চর্যের বিষয়, যে ক্ষেত্রে স্বয়ং আল্লাহর নবীর (ছাঃ) কিছুই করার নেই, সেক্ষেত্রে ওলী-আওলিয়াদের সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য যে কতবড় মূর্খতা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেমন আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবীবকে বলেন, ‘আপনি বলে দিন যে, আমি তোমাদের কোনরূপ ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতা রাখি না’ (জ্বিন ২১)। যেখানে আমাদের নবী (ছাঃ) স্বীয় কন্যার জন্য কিছু করতে পারেননি, সেখানে আমাদের ওলী-আওলিয়া-পীরগণ মৃত্যুর পরও কবরে শুয়ে ভক্তের অভাব-অভিযোগ শ্রবণ করতে পারেন- এটি একটি উদ্ভট কল্পনা ছাড়া কিছুই হতে পারে কি?
আল্লাহর নবী (ছাঃ) স্বীয় কন্যা ফাতেমাকে ডেকে বলেন, ‘হে ফাতেমা! তুমি নিজেকে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচাও। তুমি আমার মাল-সম্পদ হতে যত ইচ্ছা চেয়ে নাও। কিন্তু মনে রেখ, কিয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে আমি তোমার কোন কাজে আসব না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৭৩)। আমরা মনে করি চিন্তাশীল ও ঈমানদার ব্যক্তিদের জন্য এটাই যথেষ্ট।
৪র্থ : ইশরাক ফিল ইবাদত বা উপাসনায় শিরক : কতগুলি সম্মানসূচক কাজ রয়েছে যা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। সেসকল বিষয়ে অন্যকেও শরীক করা। যেমন সিজদা করা, মাথানত করে রুকূ করার ন্যায় দাঁড়ানো, দু’হাত বেঁধে জোড়হাতে দাঁড়িয়ে থাকা, মানত করা, পশু কুরবাণী করা ইত্যাদি। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সিজদার স্থানগুলি কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য। অতএব তোমরা তাঁর সাথে অন্য কাউকেও ডেক না’ (জ্বিন ১৮)।
অপরের নামে উৎসর্গিত পশু হারাম হওয়া সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘শুকুর বা মৃত জীব যেমন হারাম অপরের নামে উৎসর্গিত পশুও তেমনি হারাম’ (মায়েদা ৩)।
অতঃপর স্থান পূজার শিরক সম্পর্কে আল্লাহর নবী বলেন, ‘যে পর্যন্ত আমার উম্মতের মধ্যে কতক সম্প্রদায় মুশরিকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে না যাবে এবং যে পর্যন্ত কতগুলি সম্প্রদায় মূর্তি বা স্থান পূজা না করবে সে পর্যন্ত কিয়ামত আসবে না’ (আবু দাউদ, মিশকাত হা/৫৪০৬) ।
যারা খানকাহ ও দরগাহ পূজায় বিশ্বাসী বা যারা শহীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নিমিত্তে শহীদ বেদীতে ফুল চড়ান, হাদীছটির প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এমনিভাবে কবর পাকা করা, কবরে মসজিদ তৈরী করা, তাতে নাম খোদাই করা, কবরে বাতি দেওয়া, ফুল দেওয়া- এইসব কিছুই শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যেমন হাদীছে বলা হয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষিদ্ধ করেছেন কবর পাকা করতে, তার উপর সৌধ নির্মাণ করতে এবং তার উপর বসতে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৭০)।
অন্য হাদীছে আল্লাহ লানত করেছেন যেমন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অভিসম্পাৎ করেছেন কবর যিয়ারতকারিনী মহিলাদেরকে এবং তাদেরকে যারা কবরে মসজিদ এবং গম্বুজ বানায়’ (আবু দাঊদ, মিশকাত হা/৭৪০, সনদ হাসান)।
৫ম : ইশরাক ফিল আদাত বা অভ্যাসগত শিরক :
এর অর্থ আমরা দৈনন্দিন জীবনে কথায় ও কাজে অভ্যাসবশতঃ অনেক সময় শিরক করে থাকি। যেমন কোন একটি দিন, ক্ষণ বা তিথিকে অশুভ মনে করা, কোন রোগকে সংক্রামক ধারণা করে রোগী হতে দূরে থাকা, বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় পিছন দিক হতে ডাক দেওয়াকে অশুভ মনে করা, স্ত্রীর শপথ, রক্তের শপথ প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করা, কারও মাথার দিব্যি দেওয়া, ভাল লোকের নামে নাম রাখলে বরকত হবে ভেবে ছেলের নাম গোলাম রাসূল, গোলাম নবী, নবী বখ্শ, রাসূল বখ্শ, পীর বখ্শ, মাদার বখ্শ, গোলাম মঈনুদ্দীন প্রভৃতি নাম রাখা।
আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মুখের কথা অনুযায়ী কোন বস্ত্তকে হালাল কোন বস্ত্তকে হারাম সাব্যস্ত করো না, যাতে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ হয়ে থাকে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে তারা সফলকাম নয়’ (নাহ্ল ১১৬)।
আজকের সমাজ
পূর্বের বিস্তারিত আলোচনায় তাওহীদের দৃষ্টিতে আমাদের আজকের সমাজের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে লজ্জায় চক্ষু নিচু হয়ে আসে। আমরা তাওহীদবাদী মুসলিম হওয়ার দাবী করি অথচ তাওহীদ বিরোধী কোন কাজেই আমরা মুশরিকদের হতে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আজ তাওহীদ বিরোধী তৎপরতা ব্যাপক হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে আমরা আজ চরম দেউলিয়াত্বের পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ঘুণ ধরার কারণে আমাদের সমাজদেহ ব্যাধিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।
আমরা আজ চরম বৈষম্যের মাঝে বিরাজ করছি। ফলে আমরা যাকে-তাকে বড় মনে করে যেখানে-সেখানে আনুগত্য নিবেদন করছি। যে ফুল সৃষ্টি হয়েছিল মানুষের মনে আনন্দ প্রদানের জন্য, সেই আজ নিবেদন হচ্ছে অন্যের পদতলে। একদিকে ভক্তির পরাকাষ্ঠা দেখাতে গিয়ে আবার নবীকে নূরের মর্যাদা দিচ্ছি। টুপীতে, বাসের সম্মুখে একদিকে আল্লাহ অন্যদিকে মোহাম্মাদ লিখে আত্মতৃপ্তি লাভ করছি। কখনওবা মিলাদের মাহফিলে তাঁর রূহ হাজির হয়েছে ভেবে সম্মানে উঠে দাঁড়াচ্ছি, অন্যদিকে সমানে তাঁর আদর্শের বিরোধিতা করছি। একদিকে মসজিদে নামাজ পড়ছি, অন্যদিকে কবরের পার্শ্বে দাঁড়িয়ে দে বাবা দে, দে বাবা বলে কাতর মিনতি করছি। এমনকি আজকাল কবরের উপরই মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ। একদিকে আললাহকে সকল ক্ষমতার অধিকারী ভাবছি, অন্যদিকে জনগণকে ক্ষমতার মূল উৎস বলে জোর গলায় ঘোষণা করছি। একদিকে আল্লাহকে বিধানদাতা বলে বিশ্বাস করছি, অন্যদিকে পার্লামেন্টে আইন রচনার ক্ষেত্রে শরীয়তকে বাদ দেওয়ার পায়তারা করছি। লালন সংস্কৃতি আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে ছেয়ে ফেলছে। কি সুন্দর দ্বিমুখী চিন্তা! এই দ্বিমুখী নীতির সংঘর্ষে আমাদের সমাজ আজ বিপর্যস্ত। একদিকে গ্রীক ও হিন্দুদর্শন, অন্যদিকে তাওহীদি দর্শনে মুখোমুখি সমাজ। আমাদেরকে আজ এই দ্বিমুখী নীতি পরিহার করে খাঁটি তাওহীদপন্থী হতে হবে। একমাত্র তাওহীদের বিশ্বাসই মানুষকে সত্যিকারের আত্মবিশ্বাসী ও স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে। যতদিন মুসলমান এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নিকট মাথা নত করেনি ততদিন সারা দুনিয়া তাদের পদতলে ছিল। কিন্তু আজকের মুসলমান আল্লাহকে ছেড়ে অন্যের দয়ার ভিখারী হয়েছে বলেই জগতে লাঞ্ছিত হচ্ছে। আমাদেরকে সকল দিক থেকে একত্ববাদী হতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, একমাত্র তাওহীদের বিশ্বাসই জাতীয় উন্নতি ও জান্নাতের মূল চাবিকাঠি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে খাঁটি তাওহীদবাদী মুসলিম হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!!
আল্লাহ তুমি আমাদের সকল ক্রটি ক্ষমা করো এবং তোমার তাওহীদের পক্ষে আমাদের এই সামান্য খেদমতটুকু কবুল করো। আমীন!!
[সাধু থেকে চলিত ভাষায় রূপান্তরিত ও আধুনিক বানানরীতির সাথে সমন্বয়কৃত]