মুহতারাম আমীরে জামা‘আত

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 1342 বার পঠিত

[‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ‘আহলেহাদীছ আনেদালন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীর প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের এই সৃনতিচারণমূলক সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন ‘তাওহীদের ডাক’-এর পক্ষ থেকে মুযাফফর বিন মুহসিন ও নূরুল ইসলাম ]

*তাওহীদের ডাক : ১৯৭৫ সালে এক নাজুক পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরায় আপনি একটি ইসলামী সেমিনারের আয়োজন করেছিলেন। কিভাবে সম্ভব হয়েছিল সেটা?

আমীরে জামা‘আত : হ্যাঁ! এটা একটি স্মরণীয় ঘটনাই বলা যায়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। ইসলামের নাম নিলেই তখন ‘রাযাকার’ হতে হয়। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের জয়জয়কার। ঐ বৈরী পরিবেশে ইসলামী সমাবেশের নাম তোলাটা ছিল রীতিমত দুঃসাহসিক ব্যাপার। এমনি এক গুমোট পরিবেশে মনটা বিদ্রোহী হ’য়ে উঠল। তবে কি দেশ থেকে ইসলামের নাম মুছে যাবে? বন্ধুবর মৌলবী আব্দুল আযীয সাতক্ষীরা সরকারী গার্লস হাইস্কুলের মৌলভী শিক্ষক। হানাফী হলেও আমার বক্তব্য ও লেখনীর তিনি ভক্ত ছিলেন। সাপ্তাহিক ‘আরাফাত’-এ আমার কোন লেখা বের হলে তা তাঁর দোকানে প্রকাশ্যে রাখতেন। তাকে প্রসত্মাব দিলাম, সাতক্ষীরায় একটি ইসলামী সমাবেশ করতে হবে। ভয়ে মানুষ ওয়ায-মাহফিলের নাম মুখে আনতে চায় না। এ ভয় ভেঙ্গে দিতে হবে। উনি সানন্দে সহযোগিতা করতে রাজী হলেন। দোকানে বসেই পরিকল্পনা করলাম যে, দেশের বড় বড় আলেমদের আমরা ডাকব। আর সাতক্ষীরার সকল দলমতের নেতাদের নিয়ে আয়োজক কমিটি করা হবে। সে মোতাবেক কাজ শুরু হল। মাওলানা ছাহেব সাইকেল নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেন। বুলারাটি আর সাতক্ষীরা একাকার করে ফেললেন। আমি বক্তাদের তালিকা করে ফেললাম। পূর্বধারণা মোতাবেক গোল বাঁধলো অনুমতির ব্যাপারে। ডিসি ছাহেব বললেন, ‘উপরের নির্দেশ ছাড়া পারবো না।’ আমরা তখন চিমত্মা করতে লাগলাম কিভাবে শেখ মুজিবের সাথে যোগাযোগ করা যায়। সিদ্ধামত্ম নিলাম তাঁর একামত্ম শ্রদ্ধাভাজন মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশের সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে। তাই করা হল। মাওলানা তখন অতি বার্ধক্যে শয্যাশায়ী। তিনি শেখ সাহেবকে ফোন করে বলে দিলেন। আল্লাহর রহমতে তাতে কাজ হল এবং সেমিনারের অনুমতি মিলে গেল। সাতক্ষীরার সাতটি থানার অধিকাংশ থানা শহরে সুধী সমাবেশ করে সেমিনার কমিটি করলাম। কমিটিকে দায়িত্ব দিলাম সাধারণ মানুষ ছাড়াও এলাকার সব দলের নেতৃবৃন্দকে সাতক্ষীরা আনতে হবে। তাতে ব্যাপক সাড়া পেলাম। এবার বক্তাদের দাওয়াত দেয়ার পালা। জমঈয়ত সভাপতি ড. বারী ছাহেবকে দাওয়াত দেয়ার জন্য মাওলানা আব্দুল আযীয ঢাকা গেলেন। কিন্তু উনি এ পরিস্থিতিতে মোটেই রাযী হলেন না। কিন্তু নাছোড়বান্দা আব্দুল আযীয সারারাত ঘরের দরজায় পিঠ লাগিয়ে বসে থাকলেন। পরদিন সকালে দরজা খুলতেই ওনাকে দেখে স্যার হতবাক। আব্দুল আযীয পায়ে পড়ে বললেন, ‘স্যার! দাওয়াত কবুল না করা পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ফিরে যাব না।’ অবশেষে তিনি দাওয়াত কবুল করলেন। তারপর ড. আফতাব আহমাদ রহমানী, দেওয়ান মুহাম্মাদ আজরফ, মাওলানা মহিউদ্দিন খান, ড. মুস্তাফীযুর রহমান, জাস্টিস বাকের, আ.ন.ম আব্দুল মান্নান খান, মাওলানা আব্দুল মান্নান (দৈঃ ইনকিলাব), মাওলানা আব্দুল খালেক- আরও অনেককে দু’দিনব্যাপী সেমিনারের বক্তা হিসাবে আনা হল নির্দিষ্ট বিষয়বস্ত্ত দিয়ে। ১৯৭৫-এর মধ্য এপ্রিলে সেমিনারটি হল। সাতক্ষীরায় মানুষের ঢল নামল। ইসলামের নামে মানুষ যেন আবার প্রাণ ফিরে পেল। সাতক্ষীরা ‘চিলড্রেন্স পার্ক’ (বর্তমান আব্দুর রাযযাক পার্ক) লোকে লোকারণ্য। সফল এই প্রোগ্রামের পরের বছর একই সময়ে একই স্থানে পুনরায় দু’দিন ব্যাপী সেমিনার হল। আগের অতিথিগণ এবারও প্রায় সকলে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আমার বক্তব্যের বিষয় ছিল, ‘কুরআনে বিজ্ঞান’। উন্মুক্ত বক্তৃতার মঞ্চে আমার নিয়মিত পদচারণা সম্ভবত তখন থেকেই শুরু হল।         

*তাওহীদের ডাক : ১৯৮০ সালে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর উদ্যোগে সর্বপ্রথম ঢাকায় জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ‘যুবসংঘ’-এর ইতিহাসে এটি একটি বড় ঘটনা। এ বিষয়ে আমরা জানতে আগ্রহী। 

আমীরে জামা‘আত : ‘যুবসংঘ’ গঠনের দু’বছরের মধ্যেই এত সাড়া পাব ভাবিনি। সিদ্ধামত্ম নিলাম জাতীয়ভাবে একটি সম্মেলনের আয়োজন করব এবং তা ঢাকাতেই। সিদ্ধামত্ম নেয়ার সময় পকেটে আমাদের পুঁজি ছিল মাত্র ৬.৮০ টাকা। সিদ্ধামত্ম হলো, কর্মীরা স্ব স্ব খরচে আসবে ও যাবে এবং শহরে আমাদের ৫টি মসজিদে রাত্রি যাপন করবে। কিন্তু বাধ সাধলেন নাযিরাবাজার জামে মসজিদের বৃদ্ধ মোতাওয়াল্লী হাজী নূর হোসেন। আমাকে একপাশে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘বাবা! বাচ্চারা সারাদেশ থেকে আসবে, আমরা তাদের দু’দিন দু’ওয়াক্ত খাওয়াতে পারব না? আপনি আমাদের এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না এটাই আমাদের অনুরোধ।’ আমি সানন্দে মেনে নিলাম। আবার মিটিং করে বাজেট তৈরী করা হল সর্বসাকুল্যে ৫০,০০০ টাকার। যুগ্ম আহবায়ক শামসুদ্দীন সিলেটি ভাই খুব তৎপরতার সাথে  যুবসংঘের ছেলেদের নিয়ে অর্থ সংগ্রহের কাজটি সম্পন্ন করলেন। ছেলে-বুড়া সকলের মধ্যেই একধরনের উচ্ছ্বাস কাজ করছিল। আহলেহাদীছের নামে এরূপ যুবসম্মেলন এই প্রথম হতে যাচ্ছে। মহল্লায় মহল্লায় মিছিল। সে এক অনন্য রূপ। ইতিমধ্যে জানলাম ড. বারী স্যার রাজশাহী থেকে ঢাকা আসছেন। উনি বিদেশ যাবেন। ছুটলাম তাঁর কাছে। নিয়ে এলাম উনাকে এবং সহ-সভাপতি এডভোকেট আয়েনুদ্দীনকে বংশাল মসজিদে। বাদ মাগরিব উনি মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে সম্মেলনকে সফল করার জন্য কিছু কথা বলে চলে গেলেন। দশদিন পর উনি দেশে ফিরে এলে আবার তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং জানিয়ে দিলাম যে, ঐদিন পর্যমত্ম প্রায় ৩০,০০০ টাকা আদায় হয়ে গেছে। শুনে তিনি আমার দিকে কিছুক্ষণ নির্বাক তাকিয়ে থেকে বললেন- ‘গালিব তুমি বলছ কি?’ ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তন রিজার্ভ করার জন্য একটা দরখাসত্ম লিখে নিয়ে গিয়েছিলাম তাতে উনার সুফারিশ নেওয়ার জন্য। কিন্তু না দিয়ে তিনি বললেন, ‘তুমি সম্মেলনটা বংশালেই কর, কারণ এটা আহলেহাদীছ এলাকা।’ উনার নিস্পৃহতা দেখে আমি কিছুটা যিদের স্বরেই বললাম, ‘স্যার আমরা ইফাবা মিলনায়তনেই করতে চাই। কেননা আহলেহাদীছ এলাকার বাইরে আমাদের দাওয়াতকে সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন।’

অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় পোষ্টার মারা হল। ড. মুসত্মাফীয স্যার এনিয়ে আমার সাথে একটু রসিকতাও করলেন। কেননা পোষ্টারে ড. সিরাজুল হকের নাম আছে হানাফী হওয়া সত্ত্বেও। কিন্তু ড. মুসত্মাফিযের নাম নেই। যিনি আমার সবচেয়ে বড় হিতাকাঙ্খী। উনি শুধু এতটুকুই বললেন, ‘কি গালিব! তোমাদের লাল রংয়ের পোষ্টারে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লালে লাল হয়ে গেল!’ পোষ্টার দেখে ঢাবি ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না, ওবায়দুল কাদের প্রমুখ বলে বসল ড. বারী ‘রাযাকার’। ওনাকে ঢাকায় কোন সম্মেলন করতে দেয়া হবে না। মুশকিলে পড়ে গেলাম। শেষমেশ আমার হলের ছাত্রলীগের নেতাদের ও যহুরুল হক হলের সভাপতি যে ছিল আহলেহাদীছ ঘরের সন্তান, তাকে দিয়ে ওদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নিরসত্ম করলাম। শুধু তাই নয়, তাদের মধ্যে আহলেহাদীছ কয়েকজন আমাদের সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বও পালন করেছিল।

১৯৮০ সালের ৫ ও ৬ এপ্রিল। আহলেহাদীছ যুবসংঘের ইতিহাসে বরং আহলেহাদীছ আন্দোলনের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। ১ম দিন বেলা ১০টায় ইফাবা মিলনায়তনে সেমিনার। বিষয়- ‘তাওহীদের শিক্ষা ও আজকের সমাজ’। প্রবন্ধ পাঠক আমি নিজে। ড. বারী স্যার ঢাকায় উনার ছোটভাই ড. আব্দুর রহমান ছাহেবের সায়েন্স ল্যাবরেটরীর সরকারী বাসায় উঠেছেন। সকালে ওনাকে নিতে গেলাম। সেমিনার উদ্বোধন করলেন। হানাফী-আহলেহাদীছ ওলামা ও সুধীবৃন্দের এতবড় সমাবেশ, সেই সাথে আহলেহাদীছ তরুণ ও যুবকদের উৎসাহ-উদ্দীপ্ত বিপুল উপস্থিতিতে আমাদের অমত্মরটা ভরে উঠেছিল। কিন্তু কেন যেন ড. বারী স্যারের চেহারায় উৎসাহের ছোঁয়া পেলাম না। আমার প্রবন্ধ পাঠের পর আরবী উদ্ধৃতিসমূহের দিকে খেয়াল করে এবং শ্রোতাদের উৎসাহ দেখে সঊদী রাষ্ট্রদূত ফুয়াদ আব্দুল হামীদ আল-খত্বীব চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আমার পিঠ চাপড়ে দিলেন। এরপর সভাপতির বক্তব্যের সময় ড. সিরাজুল হক তাঁর বক্তব্যে বললেন, জীবনে দেশে-বিদেশে বহু সেমিনারে যোগদান করেছি। কিন্তু আজ জীবনের প্রথম একটি সেমিনারে এলাম, যেখানে স্রেফ তাওহীদের উপর আলোচনা হল এবং যেখানে হাততালির বদলে বারবার ‘মারহাবা’ ও ‘আলহামদুলিল্লাহ’ শুনলাম। আমি স্নেহাষ্পদ গালিবের জন্য দো‘আ করি, যেন আল্লাহ তার তাওহীদের মিশন সাকসেসফুল করেন।’ মাওলানা মুমত্মাছির আহমান রহমানী, ড. আফতাব আহমাদ রহমানী, আবু তাহের বর্ধমানীসহ প্রত্যেক বক্তাই সেমিনারের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। মুন্তাছির আহমাদ রহমানী উঠে প্রস্তাব করলেন যেন পঠিত নিবন্ধটি ইংরেজী ও আরবীতে অনুবাদ করে পুস্তিকা আকারে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সকলে সমস্বরে তাঁকে সমর্থন করলেন। বস্ত্তত: দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফরে থাকা অবস্থায় যখনই একটু ফাঁক পেয়েছি, তখনই ওটা লিখেছি। এটি এমন আহামরি কিছু ছিল না। কিন্তু তখনকার বিরূপ পরিবেশে এধরনের বিষয়বস্ত্তর উপরে সেমিনার ছিল রীতিমত দুঃসাহসিক ব্যাপার।

সেমিনার শেষে ছেলেরা কয়েকটি ট্রাকে করে গুলিসত্মান থেকে মীরপুর পর্যমত্ম মিছিল করেছিল। কিছু সময়ের জন্য শিরক-বিদ‘আত ও মাযারবিরোধী শ্লোগানে মুখরিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। বায়তুল মুকাররম মসজিদ ঐদিন ‘আমীন’-এর গুঞ্জরণে মুখরিত হল।   সেদিন উক্ত মসজিদের ইমামসহ কয়েকজন মুছল্লী ছেলেদের জিজ্ঞেস করছিলেন এখানে এত লা-মাযহাবী কোথা থেকে এল? জবাবটাও মুখের উপর পেয়ে চুপসে যান তারা। 

পরদিন ৬ এপ্রিল জাতীয় সম্মেলন। স্থানঃ ঢাকা যেলা ক্রীড়া সমিতি মিলনায়তন। ড. বারী স্যার ছিলেন সম্মেলনের সভাপতি এবং ড. আফতাব আহমাদ রহমানী বিশেষ অতিথি। সকাল ৯টায় উদ্বোধন। ৭টার সময় আমি ও এবাদুর রহমান (মহিমাগঞ্জ) বেবীটেক্সী নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এবাদুরকে ট্যাক্সিতে বসিয়ে রেখে আমি উপরে উঠে গেলাম স্যারকে আনার জন্য। সায়েন্স ল্যাবরেটরীর বাসা থেকে স্যারকে অনেক কষ্টে নিয়ে আসলাম। কেননা উনি সেদিন মোটেই আসতে চাচ্ছিলেন না। তখন উনার পাশে এ্যাড. আয়েনউদ্দীন ও ড. আব্দুর রহমান উপস্থিত থাকলেও তাঁরা এলেন না। আমরা বেশ অবাক হলাম। যাইহোক ড. বারী সম্মেলনে পৌঁছলেন এবং অতি সংক্ষেপে সভাপতির উদ্বোধনী বক্তব্য রেখে চলে গেলেন। আমরা প্রোগ্রাম চালিয়ে গেলাম। মুনতাছির আহমাদ রহমানী, ড. আফতাব আহমাদ রহমানী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ প্রায় সারাদিনই আমাদের সাথে থাকলেন। সন্ধ্যার মধ্যেই সম্মেলনের সফল সমাপ্তি ঘটল। সম্মেলনে আহবায়ক কমিটির বদলে নির্বাচিত জাতীয় কমিটি গঠন করা হল এবং সংগঠনের ‘কর্মপদ্ধতি’ অনুমোদিত হল। অভূতপূর্ব উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে যুবসংঘের নেতা-কর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে  গেল। বলা যায় এ সম্মেলন ছিল ‘যুবসংঘ’-এর জন্য অগ্রগতির প্রথম   মাইলফলক।  

*তাওহীদের ডাক : দাওয়াতী কার্যক্রমে দেশের বহু অঞ্চল আপনি সফর করেছেন। স্মরণীয় কিছু সমাবেশের কথা আমাদের বলবেন কী?

আমীরে জামা‘আত : আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর অশেষ রহমত যে দ্বীনের বিশুদ্ধ দাওয়াত প্রচারের জন্য তিনি আমাদেরকে দেশের অধিকাংশ স্থানে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। কত শত স্মৃতি যে সেখানে পুঞ্জিভূত হয়ে রয়েছে। ৭৫/৭৬ -সনের দিকে যখন ‘আরাফাতে’ আমার লেখা প্রকাশিত হ’ত, তখন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রণ আসত। তখনকার দিনে শিরক-বিদ‘আতে পূর্ণ, পীর-মুরিদীর আধিপত্যে পুষ্ট মাযহাবী পরিবেশগুলোতে সংস্কারধর্মী বক্তব্য দেওয়াটা ছিল রীতিমত দুঃসাহসিক। তবে বক্তব্যের পর যে আবেগ-উৎসাহ দেখতাম মানুষের মাঝে, তাতে বরং বিস্ময় বোধ করতাম। হানাফী হওয়া সত্ত্বেও বহু সংস্কারমনা মানুষ আমাদের বক্তব্যকে যেন গোগ্রাসে গিলতেন। প্রথম যৌবনের সেই দিনগুলোতে আমাকে প্রায়ই ৩/৪ ঘন্টা একটানা বক্তব্য দিতে হয়েছে। ‘যুবসংঘ’ গঠনের পরবর্তী কয়েকটি ঘটনা বলি।-

(১) তাহেরপুর সম্মেলন, রাজশাহী। সম্ভবত: ১৯৭৮ সালে তাহেরপুর হাইস্কুল ময়দানে এ সম্মেলনটি হয়। ড. বারী, ড. রহমানীর নাম থাকলেও উনারা আসতে পারেননি। তখন রাজশাহী যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি ছিলেন যিল্লুর রহমান (পরবর্তীতে প্রফেসর, আরবী বিভাগ, রাজশাহী গভ. কলেজ), সহ-সভাপতি এ.কে.এম. শামসুল আলম (পরবর্তীতে প্রফেসর, আরবী বিভাগ, রাবি) এবং সেক্রেটারী মাওলানা মুসলিম। তাঁরা সহ আমি যথাসময়ে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হলাম। প্রথম দিনের বক্তৃতাতেই এলাকায় সাড়া জাগল। পরের দিন বাদ যোহর ‘যুবসংঘ’-এর উদ্যোগে বিশেষ যুবসম্মেলন। সে উদ্দেশ্যে বের হতেই দেখি আমাকে মিছিল সহকারে তাহেরপুর বাজারের উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন। আমাকে সামনে নিয়ে শামসুল আলম ও মাওলানা মুসলিম আগাতে শুরু করলেন। গগণবিদারী তাকবীর ধ্বনিতে ‘যুবসংঘ’-এর ছেলেরা এলাকা মুখরিত করে তুলল। কিন্তু এ আয়োজন আমার বিবেকে বাঁধল। বিব্রত অবস্থায় চট করে পার্শ্বে এক দোকানে ঢুকে পড়লাম। মিছিল চলে গেলে পরে একাকী মঞ্চে হাযির হলাম। ঐ সম্মেলনের দৃশ্যটা আমার এখনও মনে পড়ে।

(২) ১৯৭৮-এর শেষদিকে হবে। ‘যুবসংঘ’-এর একটা টীম নিয়ে তাবলীগী সফরে গিয়েছি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের পাঁচরুখিতে। পাঁচরুখি মাদরাসায় ব্যাগ-ব্যাগেজ রেখে আমরা ৪টি দলে বিভক্ত হয়ে পার্শ্ববর্তী ৪টি মহল্লায় গেলাম। দলগুলোকে বলে দিলাম গ্রামের লোকদের আক্বীদা-আমল দেখে আসার জন্য এবং বিশেষ করে শিরকী কর্মকান্ডগুলি সাথে সাথে দূর করার চেষ্টা চালানোর জন্য। আর আছরের পর গ্রামের লোকদেরকে মাদরাসা ময়দানে অনুষ্ঠিতব্য তাবলীগী সভায় আসার জন্য বলা হল। ঘন্টা দু’য়েকের মধ্যে সবাই মাদরাসায় আবার ফিরে এলাম। সাথীরা কথামত শিরকী কর্মকান্ড দেখে এসেছে এবং সাথে সাথে তাদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে শিরকের নানা উপকরণগুলোও হসত্মাগত করে মাদরাসায় নিয়ে এসেছে। সেগুলো ছিল যেমন- (ক) মরা মহিষের মাথা- যা জ্বীনের আছর থেকে বাঁচার  জন্য ঘরের চালের উপর বাধা ছিল। (খ) তাবীয- যা বালা-মুছীবত, রোগ-ব্যারাম, চোরের উপদ্রব ইত্যাদি থেকে বাঁচার জন্য ঘরের দরজায় এবং বাচ্চা ছেলে-মেয়ে ও বয়স্ক লোকের কোমরে ও গলায় ঝুলানো ছিল। (গ) ঝাটা ও ঝুড়ি- যা বদনজর ও যাবতীয় ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য একটি নির্মাণাধীন বাড়ীর ছাদে লাগানো ছিল। এছাড়া শস্য ক্ষেত থেকে মানুষের মূর্তি ও অন্যান্য অনেক জিনিস তারা হাজির করল যা একজায়গায় ঢিবির মত স্ত্তপ হয়ে গেল। গ্রামের অবস্থা যা দেখা গেল- প্রায় সব বাড়ীই আলগা ও বেড়াবিহিন। পর্দার কোন ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ বাড়ীতে নিজস্ব পায়খানা ও গোসলখানা নেই। নারী-পুরুষ একই সাথে উঠানে ধান ঝাড়ে ও পুকুরে গোসল করে।

সব তথ্য নিয়ে বাদ আছর অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে বক্তৃতা রাখলাম। বললাম, ‘যে গ্রামে এতবড় মাদরাসা আছে, আলেম-ওলামা যেখানে সর্বক্ষণ বর্তমান, সে গ্রামে এ দুরবস্থা থাকবে কেন? স্বয়ং আহলেহাদীছ গ্রামেই যদি শিরক-বিদ‘আতের এই জয়জয়কার হয়, তবে আমরা জবাব দিব কী? মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্রদের অনুরোধ করলাম, সপ্তাহে একদিন পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে তাবলীগী সফর করুন। শুধু মৌখিক উপদেশ নয়, হাতে-নাতে শিরক-বিদ‘আত ও চরিত্রবিধ্বংসী কর্মকান্ড উঠিয়ে দিয়ে আসবেন।’ উপস্থিত সকলে আমাদের উদ্যোগকে সমস্বরে স্বাগত জানালেন এবং দো‘আ করলেন। অতঃপর মাগরিবের ছালাত শেষে আমরা ঢাকায় ফিরলাম।

(৩) মেহেরপুর শহর : ১৯৮০ সালের সম্ভবত: ২০-২১ ফেব্রুয়ারী হবে। দু’দিনব্যাপী ইসলামী সম্মেলন। স্থানটির নাম মনে নেই। মাওলানা আলীমুদ্দীন নদীয়াভী সম্মেলনের উদ্যোক্তা। মূল ঘটনা ছিল, কিছুদিন পূর্বে জনৈক আহলেহাদীছ মুছল্লী শহরের এক হানাফী মসজিদে মাগরিবের ছালাত আদায়ের সময় স্বরবে ‘আমীন’ বলায় মুছল্লীরা তার বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠলে ইমাম ছাহেব মধ্যস্থতা করেন এভাবে যে, তাকে কুয়া থেকে পানি তুলে নিজ হাতে মসজিদ ধুয়ে দিতে হবে।’ বেচারা আহলেহাদীছ মুছল্লী তা করতে বাধ্য হয়। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে আহলেহাদীছদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারই প্রেক্ষিতে এই সম্মেলন। প্রথমদিন অন্যান্যদের মধ্যে মাওলানা আব্দুছ ছামাদ সালাফীর বক্তব্য। সবেমাত্র মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফারেগ হয়ে মাব‘ঊছ হিসাবে দেশে ফিরেছেন। শিরক-বিদ‘আতের বিরুদ্ধে টাটকা জোশ নিয়ে এসেছেন। ফলে পরিবেশ আঁচ করতে না পেরে তিনি মিলাদ প্রসঙ্গে কিছু হক কথা বলায় পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠল। এমনকি আয়োজকদেরকে পুলিশী সাহায্য চাইতে হল। কিন্তু এস.ডি.ও ছাহেব ছাফ বলে দিলেন, ‘ধর্মীয় সভা করতে যদি পুলিশ লাগে, তাহলে সভা বন্ধ করে দিন’। এস.ডি.ও ছিলেন মাওলানা আব্দুল হাই সালাফীর আম্মাপারার ছাত্র। উনি গিয়ে বলাতেও কোন কাজ হল না। এমতবস্থায় দ্বিতীয় দিন সভা আরম্ভ হল। সভাপতি জমঈয়ত সেক্রেটারী আব্দুর রহমান বি.এ.বি.টি মঞ্চে উপস্থিত। এ সময় ময়দানে অনেক শ্রোতার সামনে লাঠির বোঝা দেখা গেল। উদ্যোক্তা মাওলানা আলীমুদ্দীন অনুপস্থিত। বড় বক্তাদেরও কেউ আসেননি। বি.এ.বি.টি ছাহেব ঘাবড়ে গেলেন। অবশেষে আমাকে কাছে ডেকে লাঠির বোঝার দিকে ইঙ্গিত করে আসেত্ম আসেত্ম বললেন, পরিবেশ বুঝতে পারছেন? বড় বক্তাদের কাউকে দেখছি না। আপনি এখানে নতুন। তাই পাঁচ মিনিটের জন্য দাঁড়িয়ে পরিচয় দিয়ে বসে পড়ুন। সভা আমরা এখুনি শেষ করে দেব। অন্যদিকে আব্দুল লতীফ, হাসানুযযামানরা তখন নতুন আহলেহাদীছ। জোশ বেশী। ওরা আমাকে নিজের মত করে বক্তব্য রাখতে উৎসাহ দিল। শেষদিন এমনিতে লোক বেশী তাছাড়া আগের দিনের গরম পরিবেশের সুবাদে এদিন স্বাভাবিকের চেয়ে লোক বেশী হয়েছে। ওসি সাহেবের নেত্বত্বে একদল পুলিশও ছিল মঞ্চের পিছনে। জনসমাবেশের দিকে একবার ভালভাবে তাকিয়ে ধীর-স্থিরভাবে আমি আমার বক্তব্য শুরু করলাম। দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা ধরে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন’ বিষয়টি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করলাম। এতে পরিবেশ ঠান্ডা তো হলই, বরং ওসি ছাহেব মঞ্চে উঠে এসে আমার সাথে কোলাকুলি করে বললেন,  ‘এটাই যদি আহলেহাদীছ আন্দোলন হয়, তবে আমিও এ আন্দোলনে শরীক হব।’ আলহামদুলিল্লাহ মেহেরপুরে আহলেহাদীছ-হানাফী যে মুখোমুখি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, তা দূর হয়ে গেল। এবং তখন থেকে এ যাবত শহরের বুকে নিয়মিত ভাবে আহলেহাদীছের বার্ষিক সম্মেলন হয়ে আসছে।

(৪) খালিশপুর খুলনা : ১৯৮৫ সালের মাঝামাঝি সময় ক্রিসেন্ট জুট মিল্স শ্রমিকদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় ৩ দিন ব্যাপী ইসলামী সেমিনার। লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ। দেশের সেরা ইসলামী ব্যক্তিত্বদের সবাই প্রায় উপস্থিত। মাওলানা আব্দুর রহীম ও আমি একই দিনে আমন্ত্রিত। সময় মত মঞ্চে উপস্থিত হলাম। ওনার পরই আমার বক্তৃতা। আমি যুবসংঘের ছেলেদের মাধ্যমে ওনার কাছে কিছু মৌলিক প্রশ্ন পাঠালাম। বক্তব্যের শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে উনি বেশ কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন। বিশেষ করে ‘চার মাযহাব মান্য করা ফরয’ কি-না- এছাড়াও কিছু প্রশ্ন। মাওলানা আমাকে ভালবাসতেন। আমি কানের কাছে মুখ নিয়ে উক্ত প্রশ্নটির জবাব দেবার জন্য বললে উনি আসেত্ম করে বললেন, ‘এ প্রশ্নের জবাব দিলে ঢাকায় ফেরা যাবে না।’ তাঁর পরে আমার ভাষণ শুরু হল। পূর্বনির্ধারিত বিষয়টি ছিল সম্ভবত: ‘বিশ্বশামিত্ম প্রতিষ্ঠায় ইসলাম।' আমি আমার ভাষণে দেশে প্রচলিত বিভিন্ন শিরকী ও বিদ‘আতী রসম-রেওয়াজের উল্লেখ করে সেগুলো থেকে বিরত থাকার এবং ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার আহবান জানাই। মাওলানা আব্দুর রহীমের এড়িয়ে যাওয়া প্রশ্নের প্রায় সবগুলির জবাব আমার ভাষণে এসে যায়। শ্রোতাদের মধ্যে আগ্রহ ও চাঞ্চল্য দু’টিই লক্ষ্য করলাম। পরে আমার রাত্রি যাপনের নির্ধারিত স্থান বি.এন. খালিশপুরের প্রধান কর্মকর্তার সরকারী বাসভবনে অনেক রাতে সম্মেলন আয়োজক কমিটির চার শ্রমিক নেতা উপস্থিত। তারা আমার ভাষণের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন করলেন ও সব জেনে নিলেন। সবশেষে বলল, স্যার! আমরা আপনার মুরীদ হয়ে ‘আহলেহাদীছ’ হতে চাই। আমি বললাম, ‘দেখুন আমরা পীর-মুরীদীতে বিশ্বাসী নই। আপনারা ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করুন এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হৌন! আমি আপনাদের জন্য দো‘আ করি, আল্লাহ আপনাদের তাওফীক দিন’। আরো বললাম, ‘আপনারা এত দ্রুত মত পরিবর্তন করবেন না। আরও সময় নিন ও যাচাই বাছাই করুন।’ তারা আবেগে বলে ফেলল, স্যার! আপনি যে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন এ পথ ছেড়ে আমরা আর কোথাও যাব না। দো‘আ করুন যেন এই মিলের অসংখ্য শ্রমিকের মধ্যে সঠিক ইসলামের প্রচার-প্রসারে জীবন কাটাতে পারি’। পরে জেনেছি তাদের প্রচেষ্টায় কয়েকশত শ্রমিক কিছুদিনের মধ্যে আহলেহাদীছ হয়ে যায়। ফালিল্লাহিল হাম্দ।

­(৫) খালিশপুর খুলনাঃ ১৯৮৫ সালেই প্লাটিনাম জুট মিল্স শ্রমিকদের উদ্যোগে আরেকটি সম্মেলন হয়। আগের সম্মেলনের প্রভাবেই সম্ভবত: কর্তৃপক্ষ আমাকে দাওয়াত করে। বিষয়বস্ত্ত ছিল ‘কুরআনী সমাজ।' অবসরপ্রাপ্ত জনৈক সেনা কর্মকর্তা ছিলেন সভাপতি। বক্তাদের বিষয়বস্ত্ত ও নিয়মানুবর্তিতার দিকে ওনার খুব কড়া নজর। কিন্তু আমার বেলা ব্যতিক্রম হয়ে গেল। ৪১টি প্রশ্ন জমা হয়েছে। শ্রোতাদের চীৎকার ও দাবী- সবগুলো প্রশ্নের জবাব তারা আমার কাছ থেকেই শুনতে চায়। মাওলানা সাঈদী, এমদাদুল হক, এ.কে.এম ইউসুফ প্রমুখ মঞ্চে উপস্থিত। সভাপতির কিছুই করার নেই। মাওলানা ইউসুফ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আমার ৪৫মিঃ সময় আমি গালিব ছাহেবকে দিলাম। কিন্তু তাতেও কুলায়নি। সর্বসাকুল্যে ঐদিন আমার নির্ধারিত ৪৫ মিনিটের স্থলে আড়াই ঘন্টা বক্তৃতা করতে হয়। আমি একে একে মাযহাব, মীলাদ, শবেবরাত, কুলখানী, চেহলাম, পীর-মুরীদী সবকিছুরই জবাব দিলাম। শেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল জামায়াতে ইসলামী’র সহযোগী সংগঠন ‘ইত্তেহাদুল উম্মাহ’ সম্পর্কে। আদর্শিক কারণে আমাকে আয়োজকদের বিরুদ্ধেই বলতে হল। বললাম, যারা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন মাযহাব ও তরীকায় বিভক্ত হওয়াকে সমর্থন করেন, তারাই যদি ‘ইত্তেহাদুল উম্মাহ’ বা উম্মতের ঐক্যের দাবী নিয়ে ময়দানে উপস্থিত হন, তবে তার কোন মূল্য থাকে কী? এতে ঐ দিন মঞ্চে উপস্থিত ইত্তেহাদ নেতৃবৃন্দ আমার উপর কতটুকু নাখোশ হয়েছিলেন জানি না। কিন্তু লক্ষাধিক শ্রোতার স্থির বিস্মিত দৃষ্টি ছিল আমার দিকেই। যা আজও আমার চোখে ভাসে। বক্তৃতার শেষে মানব রচিত যাবতীয় মাযহাব-মতবাদ ও ইযম ছেড়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ও সে আলোকে সার্বিক জীবন পরিচালনার আন্দোলনে শরীক হবার আহবান জানিয়ে ভাষণ শেষ করি। খুলনার আলহাজ আব্দুল হামীদ ও দৌলতপুরের এ. কে. এম ইয়াকূব আলী প্রমুখের সাথে যখন ফিরে আসি, তখন আমাদের সাথে গাড়ী পর্যন্ত হেঁটে আসা কলেজ ছাত্রদের যে অনাবিল ভালবাসা ও ব্যাপক আকুতি সেদিন দেখেছিলাম, তা আজও মনে পড়ে।

(৬) ঐ সালেরই শেষ দিকে বা ১৯৮৬-এর প্রথমে দৌলতপুর মহসিন হাইস্কুল ময়দানে আমাকে পুনরায় দাওয়াত দেওয়া হয়। 

উল্লেখ্য, পরপর এ তিনটি সেমিনারের প্রতিটিরই আয়োজক ছিলেন হানাফী ভাইয়েরা। এই সেমিনারেই প্রথম সাক্ষাত হয় মাওলানা আবুল কালাম আযাদের সাথে (বর্তমান  টিভি ভাষ্যকার)। মনে পড়ে ঐদিন সাড়ে তিন ঘন্টা বক্তৃতা শেষে মঞ্চ থেকে নামার সময় এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী পায়ে পড়ে তওবা করেছিল, জীবনে আর কোনদিন সন্ত্রাস-ডাকাতি করবে না বলে।  (ক্রমশ)



বিষয়সমূহ: সাক্ষাৎকার
আরও