কাদিয়ানীদের ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস
মুখতারুল ইসলাম
১৯০০ সালে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১২.৪ ভাগ ছিল মুসলিম। ১৯৮০ সালে ছিল ১৬.৫%। ২০০০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯.৫%। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৫ সালে তা ৩০%-এ উন্নীত হবে। ২০০৫ সালে বিশ্বের মোট মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ১৫৬৫.২৮ মিলিয়ন (২৩.৫২%)। ২০০৮ সালে ছিল ১৭৯০ মিলিয়ন (২৬.৭৩%)। islamicpopulation.com-এর মতে ২০০৯ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১৮২৩ মিলিয়ন (২৭.২২%)। জেনারেল সোর্সগুলোর মতে, ১৬৫৭.৬ মিলিয়ন এবং বর্তমান ক্রমধারা (১.৮৪%) অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা শীর্ষস্থানে পৌঁছাবে। বিশ্বের ৩৪টি দেশে মুসলিম জনসংখ্যা ৮৫ ভাগের বেশী যার মধ্যে ২১টি দেশে এ সংখ্যা শতকরা ৯৫ ভাগের বেশী। ইন্দোনেশিয়াতে সর্বাধিক ২১৩ মিলিয়ন মুসলিম বাস করে। বিশ্বের ২৫টি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম।[1] আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরান, মৌরিতানিয়া ও সোমালিয়া ইসলামিক রিপাবলিক দেশ। ওআইসির সদস্য দেশ মোট ৫৭টি। নিম্নে বিভিন্ন মহাদেশে ইসলামের বিস্তার দেখানো হল (উইকিপিডিয়া)।
এশিয়া
এশিয়ায় অবস্থিত ৪৬টি দেশের মধ্যে ২৬টি দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। এর মধ্যে ১৯টি দেশে মুসলিম জনসংখ্যা শতকরা ৮৫ ভাগের বেশী। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ ভাগ মুসলিম। বিশ্বের প্রায় ৭০ ভাগ মুসলিম এশিয়ায় বসবাস করে। বিশ্বের ৩০ শতাংশ মুসলিম ভারত উপমহাদেশের এবং ২০ শতাংশ আরব দেশগুলোর নাগরিক। এছাড়া চীনে ২ কোটি ও ইন্ডিয়ায় ১৬ কোটি মুসলিম রয়েছে।
অঞ্চল | মুসলিম জনসংখ্যা | মোট জনসংখ্যার শতকরা | সমগ্র মুসলিম জনসংখ্যার শতকরা |
মধ্যএশিয়া | ৭৬,১০৫,৯৬২ | ৮২.৭০৭% | ৫.১৫৫% |
পূর্ব এশিয়া | ২০,১৭৫,১৬২ | ১.৩২০% | ২.৬৮৩% |
মধ্যপ্রাচ্য | ২৫২,২১৯,৮৩২ | ৯১.৭৯১% | ১৭.০৮৫% |
দক্ষিণ এশিয়া | ৪৫৬.০৬২.৬৪১ | ২৮.৯৪৭% | ২৮.১৮৪% |
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া | ২৩৯.৫৬৬.২২০ | ৪১.৯৩১% | ১৬.২২৮% |
মোট | ১,০৪৪,১২৯,৮১৭ | ২৬.৭৪৯% | ৬৯.৩৩৬% |
উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যাবিশিষ্ট কয়েকটি দেশ :
দেশ | মুসলিম জনসংখ্যা | শতকরা হার | মুসলিম জনসংখ্যার শতকরা |
সৌদি আরব | ২৮,৬৮৬,৬৩৩ | ১০০% | ২.০% |
আফগানিসত্মান | ২৮,০৭২,০০০ | ৯৯.৭% | ১.৮% |
ইন্দোনেশিয়া | ২০২,৮৬৭,০০০ | ৮৮.২% | ১২.৯% |
ইন্ডিয়া | ১৬০,৯৪৫.০০০ | ১৩.০৪% | ১০.৩% |
পাকিস্তান | ১৭৪,০৮২,০০০ | ৯৬.৩% | ১১.১% |
বাংলাদেশ | ১৫৬,০৫০,৮৮৩ | ৮৯.৬% | ৯.৩% |
মালয়েশিয়া | ১৬,৫৮১,০০০ | ৬০.৪% | ১.১% |
চীন | ২১,৬৬৭,০০০ | ১.৬% | ১.৪% |
আফ্রিকা
আফ্রিকায় অবস্থিত ৫৩টি দেশের মধ্যে ২১টি দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। এর মধ্যে ১৪টি দেশে মুসলিম জনসংখ্যা শতকরা ৮৫ ভাগেরও বেশী। বর্তমানে এ মহাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ ভাগ মুসলিম ও বাকি ৪০ ভাগ খৃষ্টান। বিশ্বের প্রায় ৩০ ভাগ মুসলিম আফ্রিকায় বসবাস করে।
অঞ্চল | মুসলিম জনসংখ্যা | মোট জনসংখ্যার শতকরা | সমগ্র মুসলিম জনসংখ্যার শতকরা |
মধ্য আফ্রিকা | ১৫,৩৪৭,৩৩২ | ১৫.৭১৪% | ০.৮৫২% |
পূর্ব আফ্রিকা | ৮১,৮৯০,৫৬৪ | ২৮.৮৫৯% | ৪.৪৯৭% |
উত্তর আফ্রিকা | ১৭৯,৬২৩,৪৭৭ | ৮৯.৫৭৯% | ১২.১৯৯% |
দক্ষিণ আফ্রিকা | ৮৮৫,৪৭৪ | ১.৬৩৯% | ০.৬০৫% |
পশ্চিম আফ্রিকা | ১৩৪,৫৭৭,৭৮৫ | ৫০.৭৮৩% | ৯.০৭৭% |
মোট | ৪১২,৩২৪,৬৩২ | ৪৫.৭৬২% | ২৭.২৩% |
উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যাবিশিষ্ট কয়েকটি দেশ :
দেশ | মুসলিম জনসংখ্যা | শতকরা হার | মুসলিম জনসংখ্যার শতকরা |
মিসর | ৭৮,৫১৩,০০০ | ৯৪.৬% | ৫.০% |
নাইজেরিয়া | ৭৮,০৫৬,০০০ | ৫০.৪% | ৫.০% |
আলজেরিয়া | ৩৪,১৯৯,০০ | ৯৮% | ২.২% |
মরক্কো | ৩১,৯৯৩,০০০ | ৯৯% | ২.০% |
সুদান | ৩০,১২১.০০০ | ৭১.৩% | ১.৯% |
ইথিওপিয়া | ২৮,৬৩,০০০ | ৩৩.৯% | ১.৮% |
সিরিয়া | ২০,১৯৬.০০০ | ৯২.২% | ১.৩% |
নাইজার | ১৫,০৭৫,০০০ | ৯৮.৬% | ১.০% |
ইউরোপ
জার্মানীর সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট ইসলাম আর্কাইভের ২০০৭ সালের পরিসংখ্যানে ইউরোপের ৩১টি দেশে মুসলিম জনসংখ্যা ৫৩ মিলিয়ন যাদের মধ্যে ১৬ মিলিয়ন বাস করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। ইংল্যান্ডে ২৫ লক্ষ (২.৭%) ও ফ্রান্সে প্রায় ৩৬ লক্ষ (৬.৯%) মুসলিম রয়েছে। বলকান অঞ্চলভুক্ত আলবেনিয়া (৭০%), কসভো ও বসনিয়া-হার্জেগোভিনা (৪৫%) মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। রাশিয়াতে বর্তমানে সোয়া ২ কোটি (১৫%) মুসলিম বসবাস করছে। যাদের মধ্যে কেবল রাজধানী মস্কোতেই রয়েছে ১.৫ মিলিয়ন। সে দেশের উত্তর ককেশাস ও ভলগা অঞ্চলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠী রয়েছে। মেসিডোনিয়া (৩৩.৩%) ও সাইপ্রাসেও ((১৮%) যথেষ্ট পরিমাণ মুসলিম বসবাস করে। সার্বিয়া ও মন্টিনিগ্রোর মধ্যবর্তী অঞ্চল প্রসিদ্ধ ‘সানজাক অব নভিপাজার’ এলাকায় মুসলিমরা বসবাস করছে হাজার বছর পূর্ব থেকে। এছাড়া ১৯৫০ সালের আগে-পরে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রচুর মুসলিম অভিবাসী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। গত ৩০ বছরে এ অঞ্চলে মুসলিম সংখ্যা ৩ গুণ তথা ২৩ মিলিয়ন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। এ হিসাবে ২০২৫ সালে ইউরোপের শতকরা ২০ ভাগ এবং ২১০০ সালে শতকরা ২৫ ভাগ হবে মুসলিম। অন্য এক হিসাবে বলা হয়েছে, ১৯৮৯-৯৮ পর্যন্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে শতকরা ১০০ ভাগ। সে হিসাবে ২০২৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১.৯ বিলিয়ন যা ইউরোপের মোট জনসংখ্যার ২৪ শতাংশ। ফ্রান্সে বর্তমান মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে আগামী ৩৯ বছরে ফ্রান্স মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পরিণত হবে। নেদারল্যান্ডে বর্তমানে ৫০% নবজাতকই মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। সে হিসাবে ১৫ বছরের মধ্যে দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠী মুসলিমে পরিণত হবে। একই হিসাবে ২০৫০ সালের মধ্যে জার্মানীও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে।
অঞ্চল | মুসলিম জনসংখ্যা | মোট জনসংখ্যার শতকরা | সমগ্র মুসলিম জনসংখ্যার শতকরা |
বলকান | ৮,১৬৫,১৩৭ | ১২.৪৮৩% | ০.৫৫৩% |
মধ্য ইউরোপ | ৫২১,২৮৪ | ০.৭% | ০.০৩৫% |
পূর্ব ইউরোপ | ২১,৮২৬,৮২৯ | ১০.২৫৬% | ১.৪৭৯% |
পশ্চিম ইউরোপ | ১৩,৫৭৭,১১৬ | ৩,৬১৩% | ০.৯২% |
মোট | ৪৪,০৯০,৩৬৬ | ৬.০৫২% | ২.৯৮৭% |
উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যাবিশিষ্ট কয়েকটি দেশ:
দেশ | মুসলিম জনসংখ্যা | মোট জনসংখ্যার শতকরা | সমগ্র মুসলিম জনসংখ্যার শতকরা |
তুরস্ক | ৭৩,৬১৯,০০০ | ৯৮% | ৪.৭% |
রাশিয়া | ১৬,৪৮২,০০০ | ১১.৭% | ১.০% |
উজবেকিসত্মান | ২৬,৪৬৯,০০০ | ৯৬.৩% | ১.৭% |
কাজাখসত্মান | ৮,৮২২,০০০ | ৫৬.৪% | ০.৬% |
জার্মানী | ৪,০২৬,০০০ | ৫% | ০.৩% |
ফ্রান্স | ৩,৫৫৪,০০০ | ৬.৯% | ০.২% |
যুক্তরাজ্য | ২,৪২২,০০০ | ২.৭% | ০.১% |
উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা
আমেরিকায় প্রচুর অভিবাসী থাকার কারণে প্রকৃত মুসলিম সংখ্যার সঠিক হিসাব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ২০০১ সালে সকল পরিসংখ্যান একত্রিত করে একটি সংস্থা সিদ্ধান্ত দেয় যে, উত্তর আমেরিকায় এ সংখ্যা ৩.৩ মিলিয়ন। যখন সরকারী হিসাবে বলা হয়েছিলো ৬ মিলিয়ন।
www.islamicpopulation.com-এর মতে ২০০৮ সালের হিসাবে উত্তর আমেরিকায় মুসলিম সংখ্যা ৭.২৬ মিলিয়ন এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ২.৪১ মিলিয়ন। সর্বমোট ৯.৬৭ মিলিয়ন বা ৯০ লক্ষ ৬৭ হাযার, যা মোট আমেরিকার জনসংখ্যার ১.৬%। যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৫০০।
অঞ্চল | মুসলিম জনসংখ্যা | মোট জনসংখ্যার শতকরা | সমগ্র মুসলিম জনসংখ্যার শতকরা |
ক্যারিবিয়ান | ১৫,৮৬০ | ০.০৬৭% | ০.০০১% |
মধ্য আমেরিকা | ৮৪,০৩৫ | ০.১৯৯% | ০.০০৬% |
উত্তর আমেরিকা | ২,৭৫৭,২৬৫ | ০.৬১৮% | ০.৩৪৭% |
দক্ষিণ আমেরিকা | ৮৯০,৪৯৭ | ০.২৩৯% | ০.২৬৯% |
মোট | ৩,৭৪৭,৬৫৭ | ০.৪২৪% | ০.৮২২% |
উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যাবিশিষ্ট কয়েকটি দেশ:
দেশ | মুসলিম জনসংখ্যা | মোট জনসংখ্যার শতকরা | সমগ্র মুসলিম জনসংখ্যার শতকরা |
যুক্তরাষ্ট্র | ২,৪৫৪,০০০ | ০.৮% | ০.২% |
ত্রিনিদাদ ও টোবাগো | ৭৮,০০০ | ৫.৮% | --- |
কানাডা | ৬৫৭,০০০ | ২.০% | --- |
মেক্সিকো | ১১০,০০০ | --- | --- |
আর্জেন্টিনা | ৭৮৪,০০০ | ১.৯% | ০.১% |
ব্রাজিল | ১৯১,০০০ | ০.১% | --- |
ভেনেজুয়েলা | ৯৪,০০০ | ০.৩% | --- |
পানামা | ২৪,০০০ | ০.৭% | --- |
ওশেনিয়া
এ অঞ্চলে ইসলামের আগমন ঘটে ৪০০ বছর পূর্বে ১৬০০ সালের দিকে। পাপুয়া নিউ গিনি ও পশ্চিম পাপুয়ার অধিবাসীরা ব্যবসার উদ্দেশ্যে চীন ও মালয় অঞ্চলে গমন কালে প্রথম ইসলামের সাথে পরিচিত হয়। ওশেনিয়ার উত্তরপ্রামেত্ম ইসলাম অপরিচিত ছিল ১৮০০ সাল পর্যন্ত। যেমন ফিজিতে ইসলামের আগমন ঘটে প্রথম ১৮৭৯ সালে যখন কতিপয় মুসলিম অভিবাসী শ্রমিকদের একটি জাহাজে এ অঞ্চলে আগমন করেন। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৬৫ হাজার (৭%) মুসলিম রয়েছে। অষ্ট্রেলিয়ায় বর্তমানে মুসলিম সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ (১.৭%) ও নিউজিল্যান্ডে প্রায় ৩৭ হাজার (০.৯%)।
অঞ্চল | মুসলিম জনসংখ্যা | মোট জনসংখ্যার শতকরা | সমগ্র মুসলিম জনসংখ্যার শতকরা |
ওশেনিয়া | ৩৭২,৯৬৮ | ০.৫০% | ০.০২৫% |
উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যাবিশিষ্ট কয়েকটি দেশ:
দেশ | মুসলিম জনসংখ্যা | মোট জনসংখ্যার শতকরা | সমগ্র মুসলিম জনসংখ্যার শতকরা |
অষ্ট্রেলিয়া | ৩৬৫,০০০ | ১.৭% | --- |
নিউজিল্যান্ড | ৩৭,০০০ | ০.৯% | --- |
ফিজি | ৬৫,০০০ | ৬.৩% | --- |
[1] . পৃথিবীর ৪২টি রাষ্ট্রের কোন রাষ্ট্রধর্ম নেই। ১৮টি দেশে খৃষ্টান রাষ্টীয় চার্চ রয়েছে। ১৯৬৭ সালে আলবেনিয়া ‘নাস্তিকতা’কে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ঘোষণা করে। তবে ১৯৯১ সালে তা বাতিল করা হয়।