দুনিয়াবী জীবন অতি সংক্ষিপ্ত

ফ্রান্সেসকা হ্যামিলটন 9202 বার পঠিত

বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের জীবনযাত্রা পার্থিব কর্মকান্ডের সাথে এমনভাবে জড়িত যেন তারা ভেবে নিয়েছে যে, তারা কখনও মৃত্যুর মুখোমুখি হবে না। ফলে ধর্মের সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও মৃত্যু বা পরকালীন জীবন সম্পর্কিত ভাবনাকে তারা সযত্নে এড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ যে পৃথিবীর সাথে তারা এত প্রবলভাবে অন্তরঙ্গ সেই পৃথিবীর জীবন অতি সংক্ষিপ্ত ও ক্ষণস্থায়ী। এমনকি যারা দীর্ঘ জীবনপথ পাড়ি দিয়ে এসেছে তারাও নিশ্চিতভাবেই জানে যে অবধারিতভাবে তারা মৃত্যুর মুখে পতিত হতে যাচ্ছে। আল্লাহ রাববুল আলামীন পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াতে মানুষকে এ চিরন্তন সত্যের ব্যাপারে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সুরা মু’মিনূনে এসেছে, ‘তোমরা পৃথিবীতে কতদিন অবস্থান করলে বছরের গণনায়? তারা বলবে আমরা একদিন বা দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি। অতএব আপনি গণনাকারীদের জিজ্ঞাসা করুন। আল্লাহ বলবেন, তোমরা তাতে অল্পদিনই অবস্থান করেছ, যদি তোমরা জানতে’! (১১২-১১৪)

সূরা রূমে এসেছে ‘যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন অপরাধীরা কসম খেয়ে বলবে যে, এক মুহূর্তেরও বেশী অবস্থান করিনি। এমনিভাবে (দুনিয়াতে) তারা সত্যবিমুখ হত’ (৫৫)

পূর্বোক্ত আয়াতের এই আলোচনা হচ্ছে এমন লোকদের মাঝে যারা কিয়ামত দিবসে হিসাব প্রদানের জন্য একত্রিত হয়েছে। তাদের  আলোচনা আমাদের এটাই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মৃত্যুর পর মানুষ বুঝতে সক্ষম হবে যে তারা এই পৃথিবীর বুকে খুব অল্প সময়ের জন্যই অবস্থান করেছিল; আর এটা এমনই এক স্বল্প সময় যেটা পার্থিব জীবনে ষাট বা সত্তর মনে হত, অথচ সেদিন তারা তা একদিন বা তারও কম বলে অনুভব করবে। বিষয়টি অনেকটা এমন যে একজন মানুষ স্বপেণ একদিন, একমাস বা একটি বছর পর্যন্ত কাটিয়ে আসে, অথচ ঘুম ভাঙ্গার পর সে বুঝতে পারে যে, সে স্বপ্নে কেবল কয়েকটি সেকেন্ড কাটিয়েছে। আরও উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিস্কার হবে। যেমন- প্রতিটি মানুষ নিজ জীবন সম্পর্কে কিছু পরিকল্পনা করে এবং কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করে। কিন্তু এই পরিকল্পনা গ্রহণ ও লক্ষ্য অর্জন প্রক্রিয়া কখনই শেষ হয় না। আপেক্ষিকভাবে একটা শেষ হলে আরেকটা এসে উপস্থিত হয়। এভাবে প্রক্রিয়াটি অব্যাহতভাবে চলতেই থাকে। সাধারণভাবে একজন ব্যক্তি হাইস্কুল সমাপ্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, অতঃপর কোন একটি চাকুরী গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহে সচেষ্ট হয়। এই পর্যায়গুলোর সবগুলোই কিন্তু এক একটি অস্থায়ী অভিজ্ঞতা। শৈশবে কল্পনা করতে কষ্ট হয় যে, তিরিশ বছর বয়স পর্যমত্ম পেঁŠছব। অথচ দেখতে দেখতেই আমরা চল্লিশের দোরগোড়ায় পেঁŠছে যাই। এভাবে পার্থিব জীবনের এই স্বল্পতা এতই সুস্পষ্ট যে, যে কোন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পূর্বেই তা অনুভব করতে পারে। আল্লাহ এই অস্থায়ী জীবন সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘পার্থিব এ জীবন তো কেবল উপভোগের বস্ত্ত, আর পরকাল হচ্ছে স্থায়ী বসবাসের গৃহ’ (গাফির ৩৯)। ‘নিশ্চয়ই এরা পার্থিব জীবনকে ভালবাসে এবং এক কঠিন দিবসকে পশ্চাতে ফেলে আসে’ (ইনসান ২৭)

(যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্যাল সাইন্সের এই ছাত্রী ২০০৫ সালে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, ফালিল্লাহিল হামদ!) 



আরও