ডা: জাকির নায়েক : এক নবদিগন্তের অভিযাত্রী
আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব 9670 বার পঠিত
ডা. জাকির আব্দুল করীম নায়েক ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম গবেষক ও বাগ্মীদের অন্যতম। অনন্যসাধারণ প্রতিভাধর ‘দাঈ ইলাল্লাহ’ হিসাবে তিনি সারাবিশ্বে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন। গত শতকের মধ্যভাগে ভারতীয় বংশোদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিক শায়খ আহমাদ দীদাত (১৯১৮-২০০৫) বিভিন্ন ধর্ম ও বস্ত্তগত বিজ্ঞানের সাথে তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ইসলাম প্রচারের এক নতুন ধারার প্রয়াস শুরু করেন। ডা. জাকির নায়েক এই ধারার সফল পরিণতিই কেবল দান করেননি; বরং মুসলিম সমাজে প্রচলিত নানাবিধ কুসংস্কার ও নবাবিষ্কৃত আচার-আচরণ তথা শিরক-বিদ‘আতের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলার সুন্দর ও কার্যকর একটি ধারার সূচনা করেছেন। অতি অল্প সময়ে তিনি ‘পীস টিভি’র মত আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট প্রচারমাধ্যম ও একদল দক্ষ, নিষ্ঠাবান আলিম ও চিন্তাবিদের সমন্বয়ে ইন্ডিয়ার বুকে যে বহুমুখী ইসলামী দা‘ওয়াহ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছেন তা এককথায় অভূতপূর্ব। নিম্নে তাঁর পরিচিতি ও দা‘ওয়াতী কার্যক্রম সম্পর্কে আলোকপাত করা হল-
১৮ অক্টোবর ১৯৬৫ সালে ভারতের মুম্বাই শহরে এক কনকানি[1] মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন মেডিকেল ডাক্তার। সেই সুবাদে মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটারস স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা ও কিষাণচাঁদ কলেজে মাধ্যমিক শিক্ষা লাভের পর চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়নের জন্য টপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। অতঃপর ১৯৯১ সালে এম.বি.বি.এস ডিগ্রী লাভ করে ডাক্তার হিসাবে কর্ণাটকে কর্মজীবন শুরু করেন। ছাত্রজীবনে তিনি বিখ্যাত শৈল্যবিদ ক্রিস বার্নাডের মত সার্জন হবার স্বপ্ন দেখতেন। শৈশব থেকে তোতলামিতে (stammering) আক্রান্ত থাকায় মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার কোন পরিকল্পনা তাঁর মোটেই ছিল না। কিন্তু ১৯৮৭ সালে ২২ বছর বয়সে একটি কনফারেন্সে তৎকালীন শ্রেষ্ঠ তুলনামূলক ধর্মতাত্ত্বিক আলোচক আহমাদ দীদাতের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হলে তিনি গভীরভাবে প্রভাবিত হন। ফলে তাঁর মাঝে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের প্রবল স্পৃহা জাগ্রত হয়। এক নাগাড়ে তিনি পবিত্র কুরআনসহ বর্তমান বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্মের পবিত্র গ্রন্থসমূহ যেমন- খৃষ্টধর্মের কয়েক প্রকার বাইবেল, ইহুদী ধর্মের তাওরাত ও তালমূদ, হিন্দু ধর্মের মহাভারত, বেদ, উপনিষদ, ভগবতগীতাসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ গভীর মনোযোগ সহকারে পাঠ করা শুরু করেন এবং কয়েক বছরের মধ্যেই সেগুলো আয়ত্ব করে ফেলেন। অতঃপর ১৯৯১ সাল থেকে তিনি দাওয়াতী কর্মকান্ডে মনোনিবেশ করেন। পরবর্তীতে ডাক্তারী পেশা ছেড়ে দিয়ে একজন ফুলটাইম ধর্মপ্রচারক হিসাবে মুম্বাইসহ ইন্ডিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে বক্তব্য প্রদান করতে শুরু করেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে তাঁর মুখের জড়তা অর্থাৎ তোতলামীর ভাবও দিনে দিনে কেটে যায়। অতি দ্রুতই তিনি জনমনে বিপুল প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হন। ইন্ডিয়ার বাইরে বিভিন্ন দেশ থেকে তাঁর ডাক আসতে থাকে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাঁর দাওয়াতী কার্যক্রম বিস্তৃত করার লক্ষ্যে বক্তৃতার ভাষা হিসাবে ইংরেজী বেছে নেন। ইতিমধ্যে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইতালী, সঊদী আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, দক্ষিণ আফ্রিকা, বোতসোয়ানা, মৌরিশাস, গায়ানা, ত্রিনিদাদ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, মালদ্বীপসহ বিশ্বের অনেকগুলো দেশে ১৩০০-এরও অধিক লেকচার প্রদান করেছেন। ২০০টিরও বেশী দেশের টিভি চ্যানেলে তাঁর বক্তব্যসমূহ প্রচারিত হয়েছে। এ দিক দিয়ে বর্তমান বিশ্বে ইসলামী আলোচকদের মধ্যে তাঁর অবস্থান প্রশ্নাতীতভাবে শীর্ষে। ২০০৯ সালে ইন্ডিয়ার সর্বাধিক প্রভাবশালীদের তালিকায় তার নাম ছিল ৮২তম স্থানে ও ১০ জন শীর্ষ ধর্মবেত্তাদের তালিকায় বাবা রামদেব ও শ্রী শ্রী রবিশংকরের পরই ছিল তার অবস্থান।
ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর খ্যাতিমান বক্তা আহমাদ দীদাত ১৯৯৪ সালে জাকির নায়েককে "Deedat plus" উপাধিতে ভূষিত করেন। দাওয়াতী ময়দানে অসাধারণ সফলতা অর্জনের জন্য তিনি তাঁকে ২০০০ সালে একটি স্মারক প্রদান করেন যেখানে তাঁর খোদাইকৃত বক্তব্য ছিল "Son what you have done in 4 years had taken me 40 years to accomplish, Alhamdulillah”. ‘বৎস! চার বছরেই তুমি যা করেছ, তা করতে আমার চল্লিশ বছর লেগেছে, আলহামদুলিল্লাহ।’
তিনি বিভিন্ন ধর্মের প্রখ্যাত পন্ডিতগণের সাথে বিতর্ক অনুষ্ঠানেও অংশ নেন। ইতিমধ্যে তিনি ছোট-বড় শতাধিক বিতর্ক অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন। ২০০০ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে প্রখ্যাত খৃষ্টান পন্ডিত ড. উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের সাথে ‘বিজ্ঞানের আলোকে পবিত্র কুরআন ও বাইবেল’ বিষয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠান খৃষ্টান বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ২০০৬ সালে ব্যাঙ্গালোরে লক্ষাধিক শ্রোতার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত শ্রী শ্রী রবিশংকরের সাথে তাঁর আন্তঃধর্ম সংলাপ ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবছর নভেম্বর মাসে মুম্বাইয়ের সুবিশাল সুমাইয়া গ্রাউন্ডে ১০ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পীস কনফারেন্সের আয়োজন করে থাকেন। ইন্ডিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে খ্যাতনামা ইসলামী পন্ডিতগণ এখানে আলোচক হিসাবে উপস্থিত থাকেন। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও সুসজ্জিত ডেকোরেশনে আড়ম্বরপূর্ণ এ আয়োজনে প্রতিবছর কয়েক লক্ষ শ্রোতার আগমন ঘটে। পীস টিভির মাধ্যমে যা সরাসরি সম্প্রচার করা হয় ।
তাঁর বক্তব্যসমূহ সিডি-ভিসিডি এবং বই আকারেও প্রকাশিত হয়েছে এবং বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে তা বিশ্বের নানা জায়গায় প্রচারিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ‘ইসলামিক টিভি’র সৌজন্যে তাঁর অধিকাংশ বক্তব্য বাংলায় ডাবিং করে সিডি-ভিসিডিতে ধারণ করা হয়েছে এবং কয়েকটি প্রকাশনী থেকে তা বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।[2]
তাঁর প্রতিষ্ঠিত মুম্বাইয়ের Islamic Research Foundation (IRF) নামক বহুমুখী ইসলামিক সেন্টারটি ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে সারাবিশ্বে অমুসলিম সমাজে ইসলামের বার্তা পৌঁছানো, ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণাসমূহ নিরসন এবং মুসলমানদের মাঝে আত্মসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানে মহিলাদের মাঝে বিশুদ্ধ জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ দাঈ সৃষ্টির জন্য পৃথক শাখা রয়েছে। শিশুদেরকে অংকুর থেকে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে সুশিক্ষিত করার লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক মানের ইসলামিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া সেখানে ইসলামী গ্রন্থাবলীসহ বিশ্বের অধিকাংশ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থাবলীর এক বিশাল লাইব্রেরী গড়ে তোলা হয়েছে। বলা যায়, বিভিন্ন ধর্মের উপর তাঁর প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহ বর্তমান বিশ্বে সর্বাধিক সমৃদ্ধ।
২০০৬ সালের ২১ জানুয়ারী এ প্রতিষ্ঠানটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ Peace TV নামক একটি ইসলামী টিভি চ্যানেল চালু করে। মুসলিম বিশ্বে এটাই ছিল তখন সর্বপ্রথম এবং একমাত্র ইসলামিক টিভি। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে দক্ষিণ আমেরিকা ব্যতীত আমেরিকা ও কানাডাসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে চ্যানেলটির সম্প্রচার শুরু হয়। বর্তমানে চ্যানেলটি ১৫০টিরও বেশী দেশে সম্প্রচারিত হচ্ছে। এর দর্শক ৫০ মিলিয়নেরও অধিক। ‘The Solution for humanity’ শ্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই ব্যাপকভিত্তিক টিভি চ্যানেলটিকে পবিত্র কুরআন ও হাদীছের প্রামাণিক শিক্ষা অনুসারে ইসলামী আক্বীদা ও নীতি-বিধান প্রচার এবং বিশ্বমিডিয়ায় ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারিত ভুলধারণাগুলোর জবাবদানের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্রে পরিণত করতে প্রতিষ্ঠানটি দৃঢ় প্রত্যয়ী। ইতিমধ্যে এর কার্যক্রম সারাবিশ্বে সাড়া জাগিয়েছে।
এই টিভি চ্যানেলে প্রতিদিন ডা. জাকির নায়েক সহ বিভিন্ন দেশের অর্ধশতাধিক খ্যাতনামা ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ ইসলামের বিশ্বজনীন আদর্শকে পৃথিবীবাসীর সামনে পরিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। একদল নও-মুসলিম ব্যক্তিত্ব এর বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করেছেন। এখানে নিয়মিত যাদের বক্তব্য প্রচারিত হয় তারা হলেন- শায়খ আহমাদ দীদাত (দক্ষিণ আফ্রিকা), আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস (জ্যামাইকা), ডা. ইসরার আহমাদ (পাকিস্তান), আব্দুর রহীম গ্রীন (ইংল্যান্ড), আব্দুল হাকীম কুইক (কানাডা), হুসাইন ইয়ে (মালয়েশিয়া), ইউসুফ এস্টেস (যুক্তরাষ্ট্র), ড. জামাল বাদাভী (কানাডা), শাবিবর আলী (কানাডা), ড. মামদূহ মুহাম্মাদ (সঊদী আরব), জাফর ইদরীস (সুদান), ইউসুফ ইসলাম (ইংল্যান্ড), শায়খ ফয়যুর রহমান (ইন্ডিয়া), আব্দুল করীম পারেখ (ইন্ডিয়া), ডা. শুআইব সাঈদ (ইন্ডিয়া) প্রমুখ। এছাড়া প্রতি বছর অনিয়মিতভাবে বিশ্বের শতাধিক আলোচক এখানে উপস্থিত হন। যাদের একটা বড় অংশই হল নও-মুসলিম।
শিশু ও মহিলাদের জন্যও এখানে বিশেষ প্রোগ্রাম সম্প্রচারিত হয়। এর প্রায় ৭৫ ভাগ প্রোগ্রাম ইংরেজীতে এবং বাকীগুলো উর্দূ ও হিন্দীতে সম্প্রচারিত হয়। জুলাই’০৯ উর্দূ বিভাগ চালুর পর সম্প্রতি বাংলা বিভাগ খোলার জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করেছে চ্যানেলটি। আগামী ডিসেম্বরে তা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২৪ ঘণ্টা সম্প্রচারিত মুম্বাই ভিত্তিক এই টিভি চ্যানেলের অন্তত ৫০ ভাগ সময় তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব তথা ইসলাম ও খৃষ্টধর্ম, ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম, ইসলাম ও ইহুদী ধর্ম, ইসলাম ও শিখ ধর্ম ও অনুরূপ বিষয়বস্ত্ত নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া ইসলাম ও বিজ্ঞান ইত্যাদিসহ শারঈ আহকামসমূহ যেমন ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সমস্ত আলোচনার অধিকাংশই পাবলিক লেকচার তথা অডিটোরিয়ামে উপস্থিত জনসমাবেশ থেকে প্রচারিত হয়। মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সব ধর্মের লোক এই সমাবেশগুলোতে ব্যাপক আগ্রহের সাথে উপস্থিত হচ্ছে। বিতর্ক, সাক্ষাৎকার, ঐতিহাসিক ফিচার ইত্যাদি প্রোগ্রাম মুসলিম-অমুসলিম সকল দর্শক-শ্রোতাকে আকর্ষণ করছে। জাকির নায়েক চ্যানেলটিকে "edutainment channel" অর্থাৎ ‘শিক্ষাবিনোদন চ্যানেল’ বলে আখ্যায়িত করেন। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী নিউজ চ্যানেল সম্প্রচারের উদ্যোগও গ্রহণ করেছে। এছাড়া প্রচলিত সূদী ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিকল্প হিসাবে একটি আন্তর্জাতিক ইসলামিক ফিন্যান্স ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্যও এই প্রতিষ্ঠান চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
জাকির নায়েকের দাওয়াতী কার্যক্রমের নীতি ও ধারাসমূহ :
ডা. জাকির নায়েক পেশায় একজন ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম সম্পর্কে তাঁর গভীর পান্ডিত্য ও গবেষণামূলক ব্যাখ্যা প্রদান এবং সাথে সাথে পবিত্র কুরআন ও হাদীছের রেফারেন্স উপস্থাপনে যে অসাধারণ মেধা ও ধীশক্তির পরিচয় রেখে চলেছেন তা এক বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি পবিত্র কুরআন, ছহীহ হাদীছ ও প্রচলিত অন্যান্য ধর্মগ্রন্থসমূহের আলোকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম ও এর বিধি-বিধান সমূহের যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করে মুসলিম-অমুসলিম সকলের চিন্তার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছেন। তাঁর বিশেষ লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি চাই সেসব শিক্ষিত মুসলিম তরুণদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে যারা স্বীয় ধর্মের ব্যাপারে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এবং ধর্মকে পশ্চাদপদ ভাবতে শুরু করেছে।’ তাঁর লক্ষ্য নির্ধারণ যে ভুল হয়নি তরুণ সমাজে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা থেকে তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। ফালিল্লাহিল হামদ্। তাঁর দাওয়াতী কার্যক্রমে যেসব নীতি বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় তা নিম্নে সংক্ষেপে আলোচিত হল-
১- শিরক থেকে সতর্কীকরণ :
ডা. জাকির নায়েকের বক্তব্যসমূহের মূল ধারা হল জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বিশ্ববাসীকে একেশ্বরবাদী বিশ্বাসের দিকে আহবান জানানো এবং শিরক থেকে সতর্কীকরণ। তিনি প্রধান প্রধান ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি পেশ করে এ কথা প্রমাণ করেন যে, অধিকাংশ ধর্মগ্রন্থই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় সত্তা হিসাবে আখ্যায়িত করেছে এবং সাথে সাথে তাঁর সৃষ্টির ইবাদতকে নিষেধ করেছে। বিভিন্ন ধর্মের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে সাদৃশ্যগুলো যেমন- আল্লাহর একত্ববাদ, শিরক পরিত্যাগকরণ ইত্যাদি বিষয় উল্লেখের মাধ্যমে তিনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে সমন্বয়ী ও যুক্তিগ্রাহ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আহবান জানান। এজন্য তিনি প্রত্যেক বক্তব্যে সাধারণত এ আয়াতটি উদ্ধৃত করেন- ‘হে আহলে কিতাব! একটি বিষয়ের দিকে এস যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না এবং আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না। তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও সাক্ষী থাক যে আমরা মুসলমান’ (আলে ইমরান ৬৪)।
তিনি বলেন, পৃথিবীবাসীর পথভ্রষ্ট হওয়ার মূল কারণ এই যে, তারা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলো পড়ে দেখে না। যদি মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে তাদের স্ব স্ব ধর্মীয় গ্রন্থগুলো পড়ে দেখত, যথার্থভাবে গবেষণা করত, তবে তারা কখনই পথভ্রষ্ট হতো না।
তুলনামূলক আলোচনার কোন অংশেই তিনি নিজের উদ্দেশ্য থেকে বিস্মৃত হন না। বরং নিজ লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে এবং সচেতনভাবে নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে তিনি সতর্ক পদক্ষেপে ইসলামের বার্তা প্রচার করে চলেছেন।
২- ইসলামের বিরুদ্ধে সৃষ্ট সংশয় দূরীকরণ :
অমুসলিম সমাজে প্রচলিত এবং বিশ্ব মিডিয়ায় ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান নিয়ে প্রচারিত সংশয়-বিভ্রান্তি দূর করার জন্য তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠান একটি মাইলফলকের মত কাজ করে যাচ্ছে। ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, ইসলাম ও জঙ্গীবাদ, মুসলিম ভ্রাতৃত্ব, ইসলাম ও নারী, শরী‘আহ আইন ও বিধান, ইসলামিক অর্থনীতি, ইসলাম ও রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে তিনি নিয়মিত আলোচনা রাখেন। বক্তব্য শেষে আকর্ষণীয় প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রোগ্রামগুলোর শিরোনাম যেমন- ‘Truth Exposed’, 'Dare to Ask', 'Let’s Ask Dr. Zakir', 'Izhar-E-Haq', 'Peace Missile', 'Fire of Faith', 'Crossfire' ইত্যাদি থেকেই অনুষ্ঠানগুলোর প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে যে কর্মনিষ্ঠা, বিচক্ষণতা. আত্মবিশ্বাস, সাহসিকতা প্রয়োজন জাকির নায়েক তা সম্যকভাবে লালন করে চলেছেন। পবিত্র কুরআন ও হাদীছের সাথে বিজ্ঞান ও যুক্তির কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন বিভ্রান্তির সাবলীল জবাব দেন। তিনি যুক্তির প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন এ কারণে যে, অমুসলিম ও সেক্যুলার মুসলমানরা ইসলামী বিধিবিধানকে অযৌক্তিক ও আধুনিক যুগের সাথে সাংঘর্ষিক মনে করে ইসলামের ব্যাপারে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। সেক্ষেত্রে তাঁর যুক্তিপূর্ণ আলোচনা সকল ধর্ম ও শ্রেণীর জনগণের বিভ্রান্তি নিরসনের উপযোগী।
৩- মুসলিম জাতিকে এক পতাকাতলে একত্রিত হওয়ার আহবান :
ডা. জাকির নায়েক ও তাঁর প্রতিষ্ঠান বক্তব্য, লেখনী ও ফৎওয়া প্রদানের মাধ্যমে গোটা মুসলিম জাতিকে একক প্লাটফরমে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য চেষ্টিত রয়েছেন। চার মাযহাবের ইমামগণ সম্পর্কে জাকির নায়েক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ইমামগণ সকলেই ইসলামের খিদমতে এক বিরাট অবদান রেখে গেছেন। তাঁদের বিপুল জ্ঞানবত্তা ও দ্বীনের খাতিরে তাঁদের প্রাণান্ত পরিশ্রমের জন্য তাঁরা মুসলিম উম্মাহর নিকট অত্যন্ত শ্রদ্ধাস্পদ। আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং মহান আল্লাহর নিকটে তাঁদের জন্য যথাযথ পুরস্কার কামনা করি। কিন্তু এজন্য এটা সংগত হবে না যে, তাঁদের নামে সৃষ্ট চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাবের অনুসরণ করা অপরিহার্য করতে হবে। পবিত্র কুরআন ও হাদীছের নিরিখে এ বিভক্তি মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। আর মহামতি ইমামগণও সকলেই বলে গেছেন, যদি তাঁদের প্রদত্ত কোন ফৎওয়া বা সিদ্ধান্ত পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিরোধী হয়, তবে তাঁদের ফৎওয়া অবশ্যই পরিত্যাজ্য হবে। সুতরাং সর্বাবস্থায় রাসূলের সুন্নাতকে অগ্রাধিকার দেওয়াই মুসলিম জাতির জন্য অপরিহার্য, যদিও তা ইমামগণের সিদ্ধান্তের বিপরীত হয়। তিনি বলেন, যদি কোন লেবেল দিয়ে নিজেকে পরিচিত করতে হয়, তবে সেই লেবেলে নিজেকে পরিচিত করাই সর্বোত্তম যা আল্লাহ রাববুল আমীন পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ-‘মুসলিম’। সুতরাং যদি কেউ জিজ্ঞেস করে যে, আপনি কে? তবে বলা উচিৎ আমি মুসলিম। যেমন কুরআনে এসেছে, ‘সাক্ষী থাক যে আমরা মুসলমান’ (আলে ইমরান ৬৪)। আর যারা নিজেদের মুসলিম দাবী করে অথচ কুরআন ও হাদীছ অনুযায়ী কর্মকান্ড পরিচালনা করে না তাদেরকে বলা উচিৎ ‘মৌখিক মুসলমান’ (Lip Service Muslim)। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসূল, তাদের জন্য দুঃখ করবেন না, যারা দৌড়ে যেয়ে কুফরে নিপতিত হয়; যারা মুখে বলে, আমরা মুসলমান, অথচ তাদের অন্তর মুসলমান নয়’ (আলে ইমরান ১৭৬)।
এভাবে পৃথিবীর সকল মুসলমানের উচিৎ কেবলমাত্র পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসরণ করা এবং এটা নিশ্চিত করা যে, তারা পরস্পর বিভক্ত নয়। এটাই মুসলিম জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একমাত্র পথ। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা নির্দেশদাতা তাদের। তারপর তোমরা যদি কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পন কর- যদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক থেকে উত্তম’ (নিসা ৫৯)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলে ইমরান ১০৩)।
তাঁর মতে যদি প্রত্যেক মুসলমান অর্থ অনুধাবনসহ কুরআন পড়ত এবং ছহীহ হাদীছের যথাযথ অনুসরণ করত তবে আজ হয়ত মুসলমানদের মাঝে যাবতীয় বিভ্রান্তি ও বিভক্তি দূর হয়ে যেত। আর সেদিন হয়তো এক ও একক মুসলিম উম্মাহ হিসাবে আমরা বিশ্ববাসীর সামনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে পারতাম।
৪- পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসরণ :
তিনি জীবনের সর্বক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসরণ করার জন্য সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, একজন সত্যিকারের মুসলিমের উচিৎ কেবলমাত্র কুরআন ও হাদীছের অনুসরণ করা। মহামতি ইমামগণ কিংবা ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য বা সিদ্ধান্ত অনুসরণযোগ্য তবে যে পর্যন্ত তা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপর ভিত্তিশীল হবে। যদি তাঁদের সিদ্ধান্ত কুরআন ও সুন্নাহের বিরুদ্ধে চলে যায়, তবে অবশ্যই তা পরিত্যাজ্য। তাই মাযহাবী দৃষ্টিকোণে যদি একজন মুসলমানকে কোন মাযহাব অনুসরণ করতেই হয় তবে সেটা হতে হবে একমাত্র নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মাযহাব। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মুক্তিপ্রাপ্ত তারাই যারা অনুসরণ করে সেই নীতি, যেই নীতির উপর আমি এবং আমার ছাহাবীরা রয়েছি’ (তিরমিযী)।
৫- পূর্ণ রেফারেন্সসহ বক্তব্য উপস্থাপন :
তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল পবিত্র কুরআনের প্রতিটি আয়াত এবং প্রতিটি হাদীছ উল্লেখ করার সময় তিনি অপরিহার্যভাবে মূলসূত্র উল্লেখ করেন। হাদীছের বিশুদ্ধতা নিরূপণে তাঁর বিশেষ সতর্কতা লক্ষ্যণীয়। এজন্য সবসময় তিনি ‘Authentic Hadeeth’ বা ছহীহ হাদীছ কথাটি উল্লেখ করে থাকেন। বিস্ময়কর যে, বক্তব্যকালীন সময় তিনি একাধারে প্রত্যেকটি আয়াত ও হাদীছ এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের উদ্ধৃতিসমূহ মূলসূত্র থেকে ক্রমিক নম্বর, এমনকি পৃষ্ঠা ও লাইন নম্বরসহ জড়তাহীনভাবে উল্লেখ করে যান কোন প্রকার লিখিত নোট ছাড়াই। যেন সকল ধর্মগ্রন্থই তাঁর মস্তিষ্কে সংরক্ষিত। তাঁর এই অবিশ্বাস্য ধীশক্তি ও উপস্থাপনা কৌশল বিভিন্ন ধর্মের বড় বড় পন্ডিতদেরকেও হতবাক করেছে। এভাবে তিনি কুরআন ও হাদীছ উপস্থাপনায় বিশুদ্ধতাকে অগ্রাধিকার প্রদান ও পূর্ণাঙ্গ দলীলসহ প্রাঞ্জল বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে দ্বায়িত্বশীলভাবে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে অব্যাহত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
৬- সাহসিকতা :
সদাহাস্য, রসিকতাপূর্ণ, নিরহংকার, সাধাসিধে, নিরীহদর্শন এই ব্যক্তিত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল হক্ব প্রচারে দ্বিধাহীন সাবলীলতা ও দ্বায়িত্বপূর্ণ সাহসিকতা। হক্ব প্রচারে তিনি যে কতটা নির্দ্বিধ তার প্রমাণ মেলে গত ২ ডিসেম্বর’২০০৭ তিনি একটি পাবলিক লেকচারে এক অমুসলিম দর্শকের প্রশ্নের জওয়াবে তিনি ইয়াযিদ বিন মুআবিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে ‘রাযিআল্লাহ’ উচ্চারণ করেন এবং ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতে’র মত অনুযায়ী কারবালার ঘটনায় তাঁকে দোষী না করে বরং এ ঘটনাকে রাজনৈতিক দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। বহু মতবাদ, বিশেষত শী‘আ মতবাদদুষ্ট অঞ্চলে জাকির নায়েকের এ স্পর্শকাতর মতপ্রকাশ খুব একটা সহজ ছিল না। শী‘আ ও শী‘আ মতবাদাচ্ছন্ন মুসলমানরা তার এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ শুরু করলে শান্তভাবে ও সাহসিকতার সাথে তিনি পরিস্থিতি সামাল দেন। তিনি বিভিন্ন আধুনিক জাহেলী মতবাদের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমকালীন মুসলিম বিশ্বের কর্মকান্ড ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন সংশয়হীন চিত্তে। আন্তঃধর্ম সংলাপে এ কথা সুস্পষ্ট করতে তিনি পিছপা হন না যে, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলে এর অর্থ এই নয় যে, অন্য ধর্মকে সত্য বা গ্রহণযোগ্য মনে করতে হবে। বরং ইসলামই আল্লাহর মনোনীত একমাত্র অনুসরণযোগ্য ধর্ম।
তিনি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের একজন দ্ব্যর্থহীন সমালোচক। তিনি মুসলমানদেরকে ডলারের পরিবর্তে অন্য মুদ্রা ব্যবহার এবং ডলার-প্রচলিত ব্যাংকে টাকা জমাদান বা লেনদেন না করার পরামর্শ দিয়েছেন। টুইন টাওয়ারের ঘটনার পশ্চাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ড&&ব্লউ. বুশেরই হাত রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য তিনি বুশকে পয়লা নম্বর সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করেন। (সাক্ষাৎকার, দৈনিক তে ওয়াহা নুই, অকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ৬ সেপ্টেম্বর’ ২০০৪)।
৭. স্বতঃস্ফূর্তভাবে দর্শকদের প্রশ্নের জবাব দান :
প্রচলিত সেমিনার বা কনফারেন্স পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে শ্রোতাদের খুব কাছাকাছি হওয়ার জন্য তিনি বক্তব্যের মঞ্চে ডায়াস বিহীনভাবে উপস্থিত হন। তাঁর প্রতিটি বক্তব্য শেষে একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকে যেখানে দর্শকরা সরাসরি মাইকের মাধ্যমে তাঁকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে। আকর্ষণীয় এ পর্বটি মুসলিম-অমুসলিম সকলের জন্য খুব উপকারী। তিনি সহজ ভাষায় বিভিন্ন উদাহরণ, উদ্ধৃতি দিয়ে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ ও যুক্তি সহকারে উত্তর প্রদান করেন। গভীর জ্ঞানোৎসারিত দর্শন প্রকাশ নয়; বরং অতি সরল-স্বাভাবিক ও সহজবোধ্য উপস্থাপনগুণে তিনি আম জনসাধারণের কাছে সমাদৃত হয়েছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষকসহ উচ্চ পদস্থ আমলা, কূটনীতিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও এসব অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। যখন-তখন কুরআন, হাদীছ ও বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পরিপূর্ণ সূত্রসহ উদ্ধৃতি পেশ করায় তাঁর দক্ষতা প্রশ্নাতীত। এছাড়া অনলাইনে তাঁর প্রতিষ্ঠান আইআরএফ-এর পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক যে কোন বিষয়ে প্রশ্নোত্তর দেওয়া হয়।
৮- আন্তঃধর্ম বিতর্কে অংশগ্রহণ :
চিরন্তন সত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য ব্যাপক ও কার্যকরী মাধ্যম হিসাবে ডা. জাকির নায়েক বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের পন্ডিতদের সাথে আন্তঃধর্ম বিতর্কে অংশগ্রহণ করে থাকেন। ২০০০ সালে আমেরিকার শিকাগোতে ডা. উইলিয়াম এফ ক্যাম্পবেলের সাথে জাকির নায়েক "The Quran & the Bible in the Light of Modern Science" শীর্ষক এক উন্মুক্ত বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন এবং সফলভাবে তাঁর চ্যালেঞ্জ মুকাবিলা করেন। ২০০৬ সালে তিনি ভারতের ব্যাঙ্গালোরে প্রখ্যাত হিন্দু সাধক শ্রী শ্রী রবীশংকরের সাথে ‘The Concept of God in Hinduism and Islam, in the light of sacred scriptures’ শীর্ষক আন্তঃধর্ম সংলাপের আয়োজন করেন। লক্ষাধিক মানুষ এ সমাবেশে উপস্থিত হয়।
২০০৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর খৃষ্টসমাজের প্রধান ধর্মীয় নেতা ভ্যাটিকানের পোপ বেনেডিক্ট (১৬শ) মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে অসম্মানজনক মন্তব্য (জার্মানীর রিজেন্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে ইসলাম ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে পোপ ১৪ শতকের বাইজান্টাইন সম্রাট ম্যানুয়েল (২য়) প্যালেলোগাসের একটি উক্তি নকল করেন- ‘‘তুমি আমাকে দেখাও যে, মুহাম্মাদ কোনটা নিয়ে এসেছেন যাকে নতুন বলা যায়? বরং তুমি সেখানে যা-ই পাবে সবকিছু কেবল অনিষ্ট ও অমানবিক; যেমন ‘তরবারীর মাধ্যমে তাঁর প্রচারিত বিশ্বাসকে বিস্তারের নির্দেশপ্রদান’ করার পর সৃষ্ট ক্ষোভ প্রশমনের জন্য মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করলে ২৯ সেপ্টেম্বর জাকির নায়েক তাঁকে উন্মুক্ত সংলাপের জন্য আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘পোপের ইচ্ছামতো আমি কুরআন ও বাইবেলের যে কোন বিষয়ে বিতর্কে সম্মত আছি। ইটালিয়ান ভিসা পেলে আমি নিজ খরচে রোম বা ভ্যাটিকানে তাঁর নিকটে যাব। আমি সম্পূর্ণ প্রস্ত্তত আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত এই উন্মুক্ত ও পাবলিক ডিবেটে অংশগ্রহণ করতে। বিতর্ক শেষে একটি দর্শকদের জন্য প্রশ্নোত্তর পর্বও থাকবে যাতে সারাবিশ্বের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ ইসলাম ও র্খৃষ্ট ধর্ম সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা লাভ করতে পারে।’ বলা বাহুল্য পোপ ইতিপূর্বে মুসলমানদের সংলাপে বসার আগ্রহ ব্যক্ত করলেও জাকির নায়েকের এই আহবানের পর তিনি নিশ্চুপ হয়ে যান। এমনকি সরব পশ্চিমা মিডিয়াও ছিল এক্ষেত্রে নিশ্চুপ।
ডা. জাকির নায়েকের বক্তব্যের নমুনা :
নিম্নে দু‘টি বিষয়ে তাঁর বক্তব্যের সারাংশ উল্লেখ করা হল-
কুরআনের সত্যতা প্রসংগে :
কুরআনের চিরন্তন সত্যতা ও আল্লাহর কালাম হওয়া প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি ১৪০০ বছর পূর্বে কুরআনে বর্ণিত কয়েকটি বিষয় যেমন- বিগব্যাংগ তত্ত্ব, পৃথিবীর আকার, চাঁদের আলো, গ্রহ-নক্ষত্রের পরিভ্রমণ, পানিচক্র, সমুদ্রে্র লোনা পানি ও মিঠা পানি, ভূ-তত্ত্ব ইত্যাদির অবতারণা করেছেন, যেগুলোর প্রমাণ সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, অবিশ্বাসীরা বলে বসতে পারে এটা ‘হঠাৎ করে মিলে যাওয়া’র মত একটা কিছু। ইংরেজীতে একে বলা হয় ‘Theory of Probablity' বা ‘সম্ভাবনার সূত্র’। উদাহরণস্বরূপ একটি কয়েন যদি টস করা হয় তবে এ সূত্র অনুযায়ী সঠিক দিকটি অনুমান করার সম্ভবনা ½ ভাগ বা ৫০%। অর্থাৎ ‘হেড’ও পড়তে পারে, ‘টেইল’ও পড়তে পারে। আবার যদি দু’বার করা হয় তবে দু’বারই সঠিক অনুমানের সম্ভাবনা ½+½= ¼ ভাগ বা ২৫%। যদি তিন বার করা হয় তবে সম্ভাবনা ½+½+½= ⅛ ভাগ বা ১২.৫%। এভাবে এই থিউরী অনুযায়ী যদি কুরআনকে বিচার করা যায় তবে প্রথমে ধরা যাক পৃথিবীর আকার নিয়ে। একটা মানুষ কোন বস্ত্তর আকার নিয়ে প্রায় ৩০ ধরনের চিন্তা করতে পারে। যেমন- সোজা, বর্তুলাকার, আয়তকার ইত্যাদি। আর অনুমান করে একটা আকার যদি নির্ধারণ করে তবে সূত্র অনুযায়ী তা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা ¹/৩০ ভাগ। চাঁদের আলো নিয়ে কোন অনুমানিক সিদ্ধান্ত সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা ½ ভাগ অর্থাৎ ৫০% । আবার পৃথিবী সৃষ্টির উপাদান নিয়ে যদি অনুমান করা হয় তার যথার্থতার সম্ভাবনা ¹/১০০০০ ভাগ। অতঃপর সামষ্টিকভাবে এই তিনটি আনুমানিক উত্তর সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা ¹/৩০×½× ¹/১০০০০ = ৬০০০০০ ভাগের ১ ভাগ বা .০১৭%। এভাবে ‘সম্ভাবনার সূত্র’ অনুযায়ী তিনটি বিষয়ের আনুমানিক উত্তর সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা যদি মাত্র .০১৭% হয় তবে সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় যে, কুরআনে বিজ্ঞান বিষয়ক যে হাজারটা বর্ণনা এসেছে তা ‘অনুমান করে বলা’ বা ‘আন্দাজে বলা’র সম্ভাবনাও জিরো ভাগ। সুতরাং যদি প্রশ্ন করা হয়, কে এভাবে সুনিশ্চিত সত্য ও প্রামাণ্য তথ্য দিতে পারেন। নিঃসন্দেহে তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন। আর তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা যার পক্ষে এসব তথ্য দেওয়া সম্ভব। এভাবে তিনি অবিশ্বাসীদের নিকট বিভিন্নভাবে বিজ্ঞান ও যুক্তির আলোকে প্রমাণ দিয়েছেন যে, কুরআন আল্লাহর বাণী, তা রাসূল (ছাঃ)-এর প্রখর বুদ্ধিপ্রসূত (!) কিছু নয়।
সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রসংগে :
‘সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ’ প্রসঙ্গে তিনি ২০০৬ সালে মুম্বাইতে একটি সেমিনার করেন। যেখানে ইন্ডিয়ার সুপ্রীম কোর্টের সাবেক বিচারপতি হজবার্ট সুরেশ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন। ৩ ঘণ্টার এই সেমিনারে তিনি ইতিহাস থেকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধর্মের লোকদের হাতে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, পাশ্চাত্য মিডিয়া ও তাদের বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে সর্বাধিক প্রচারিত যে মিথ অর্থাৎ ‘সকল মুসলমান সন্ত্রাসী নয়, তবে সকল সন্ত্রাসী মুসলমান’ তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার। তিনি বলেন যে, সন্ত্রাস যদি কোন ধর্মের বিশেষ করে ইসলামের ‘সম্পদ’ প্রচার করা হয় তবে বলতে হয় অন্য ধর্মের লোকেরা যুগে যুগে যে নৃশংস সন্ত্রাস চালিয়েছে তার তুলনায় মুসলমানরা নিতান্তই শিশুতুল্য।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস কোন ধর্মের সম্পদ নয়, এটা হল রাজনীতিবিদদের পুঁজি। তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে সন্ত্রাসকে সমাজের বুকে জিইয়ে রাখেন। যেভাবে ওসামা বিন লাদেন ৯/১১ হামলার জন্য দায়ী কি-না আজও তার কোন প্রমাণ নেই। এটা শুধুমাত্র হাইপোথেসিস। অথচ একেই উপলক্ষ করে আজ মুসলমানরা আক্রমণের লক্ষবস্ত্ত হয়ে পড়েছে। আফগানিস্তান, ইরাকসহ অন্যান্য মুসলিম দেশে হাজার হাজার নীরিহ মানুষকে প্রতিনিয়ত হত্যা করা হচ্ছে। এসবের কারণ হয় সেটা ভোট ব্যাংকের জন্য অথবা ক্ষমতা ও শক্তিমত্তা প্রকাশের জন্য নতুবা অর্থের জন্য। এটা ওপেন সিক্রেট। কোন ঘটনা ঘটলেই আমেরিকা প্রমাণ ছাড়াই আল-কায়েদাকে ও ইন্ডিয়া লশকর-ই-তাইয়েবাকে দায়ী করে। এসব মূলত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন স্বার্থপ্রণোদিত ‘পলিটিক্যাল গেম’। বৃটিশদের প্রবর্তিত ‘divide & rule’ পলিসিই এখন বর্তমান বিশ্বের নীতি। তিনি বলেন, সন্ত্রাসকে সংজ্ঞায়িত করতে গেলে ভৌগলিক বা ঐতিহাসিক দিক চিন্তা করতে হবে। কারণ আজকে যাকে অন্যরা সন্ত্রাসী বলছেন, আপনাদের কাছে সে মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক! মূলত: পৃথিবী জুড়ে সন্ত্রাসের একমাত্র কারণ ‘অবিচার’। অত্যাচারিত মানুষ যখন বিচার পায় না তখন সৃষ্ট ক্ষোভ থেকে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়।[3] তিনি বলেন, আমি এসব সন্ত্রাসীদের পক্ষাবলম্বন করছি না যেহেতু ইসলাম কখনো বলেনি নিরপরাধ-নীরিহ মানুষকে হত্যা করতে। সুতরাং এটাও অন্যায়। আর আমি বারবার বলি, অন্যায়ের বিচার কখনো অন্যায় দিয়ে করা যায় না। এতে কোনদিন সুবিচার আশা করা যায় না। নীরিহ মানুষ হত্যার পিছনে কোন যুক্তিই পাওয়া যাবে না। কিন্তু মোটের উপর এটা সত্য যে, সমস্ত সন্ত্রাসের কারণ তথা অবিচার বন্ধ না হলে এসব সন্ত্রাসী ঘটনা বন্ধ হবে না। যদি সন্ত্রাস বন্ধ করতে হয় তবে সর্বাগ্রে প্রয়োজন অবিচার-অত্যাচার দূর করা। কেননা এসব সন্ত্রাসীদের পক্ষে যুক্তি রয়েছে। তারা নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, হাজার হাজার মানুষকে তারা নিহত হতে দেখেছে। অপরাধীরা তাদের সামনে ঘুরছে। কিন্তু তাদের কোন বিচার সমাজে হয় না। তাই তারা আইন হাতে তুলে নিয়েছে। আপনি এসব সন্ত্রাসীদের ন্যায়ানুগ শাস্তিবিধান করতে পারেন, কিন্তু তাদের যুক্তিকে অস্বীকার করতে পারেন না। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ১১ জুলাই বোম্বেতে একটি ট্রেনে ৭টি বোমা বিস্ফোরিত হয় যাতে মারা যায় ২০০-এর বেশী নীরিহ লোক, আহত হয় ৮০০-এরও বেশী লোক। সরকারের পক্ষ থেকে দাবী করা হয় এ ঘটনা ঘটিয়েছে লশকর-ই-তাইয়েবা, ২০০২ সালের ফেব্রয়ারীতে গুজরাটের গণহত্যার প্রতিশোধ হিসাবে। এটা যদি সত্যি হয় তবে ঘটনা পরম্পরায় চিন্তা করুন এটা কি বন্ধ করা যেত না? সহজেই যেত। তবে এর জন্য দায়ী কে? (১) সেই রাজনীতিবিদরা যাদের প্লানে গুজরাটের গোধরাতে ট্রেনে আগুন ধরানো হয়েছিল। (২) কেন্দ্রীয় সরকার যারা এটা থামানোর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা করেনি দলীয় স্বার্থে। (৩) গুজরাটের সাধারণ জনগণ যারা উস্কানীপ্রাপ্ত হয়ে মুসলমানদের উপর আক্রমণ চালিয়েছিল। (৪) গুজরাটের পুলিশবাহিনী যারা এই তান্ডব না থামিয়ে নিষ্ক্রিয়ভাবে তা দেখছিল; বরং সন্ত্রাসীদের উল্টো সহযোগিতা করেছিল। (৫) গুজরাটের বিচারবিভাগ যারা এ ঘটনায় কোন ব্যবস্থা নেয়নি। (৬) সর্বশেষে যারা এই অন্যায়ভাবে প্রতিশোধ নিয়েছে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। এরা সকলেই সমানভাবে দায়ী। তবে আমরা যদি প্রথমটি ঠেকাতে পারতাম তবে শেষোক্তগুলো ঘটার সুযোগ পেত না। তিনি বলেন, এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার মুসলিম সাধারণ জনতার উপর চালানো হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে চরম হয়রানী। বাড়ী বাড়ী তল্লাশী হয়। যদি বই পাওয়া যায় জিহাদের উপর। ব্যাস! সেটাই হল প্রমাণ। অথচ একই বই বাজারের বুকস্টলে বহু বছর ধরে পাওয়া যায়। যদি এগুলো সন্ত্রাসের কারণ হয় তবে এসব বুকস্টল কেন বন্ধ করা হচ্ছে না? আর তাই যদি হয় তবে তো কুরআন শরীফ থাকলেই সমস্ত মুসলিমকে গ্রেফতার করতে হয়। আমি বলি, দোষীদের শাস্তি প্রদান করুন, কোন সমস্যা নেই। কিন্তু দিনের পর দিন অজ্ঞাতস্থানে নীরিহ মানুষকে কেন আটকে রাখতে হবে? কেন তাদের অনেকের কাছ থেকে জোর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া অথবা এমন বিষয়ে স্বীকৃতি নেয়া হচ্ছে যা তারা জানে না? এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুম্বাইতে সেমিনার হল। আমন্ত্রিত প্রাক্তন দু’জন পুলিশ অফিসার বললেন, পাকিস্তান ও ভারতের মাদ্রাসাগুলো এর জন্য দায়ী। জনৈক এ্যাডভোকেট তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এমন একটি প্রমাণ কি আপনাদের হাতে আছে। তারা তা দিতে ব্যর্থ হলেন। এভাবেই চলছে মুসলিম জনসাধারণকে হয়রানী। এতে প্রকৃত অপরাধী ধরা পড়ুক বা না পড়ুক নীরিহ মুসলমানদের মধ্যে সৃষ্টি করা হচ্ছে ভীতি আর ক্ষোভ। আর এসব কাজে মূলত ব্যবহার করা হয় মিডিয়াকে। বিশেষ করে রাজনীতিবীদদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া যারা এক নিমিষেই সাদাকে কালো আর কালোকে সাদা, হিরোকে জিরো আর জিরোকে হিরো করতে অভ্যস্ত। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।
তিনি বলেন, অনেক মুসলমান সংশয়-দ্বিধা নিয়ে বলে আমি মৌলবাদী নই, চরমপন্থী নই। আমি বলি, একজন মৌলবাদী হিসাবে আমি গর্বিত। কেননা আমি ইসলামের যাবতীয় মৌলিক নীতিমালাকে মেনে চলার চেষ্টা করি। একজন চরমপন্থী হওয়া অন্যায় কিছু নয়। কেউ কি আমাকে বলতে পারবেন একজন চরম সৎ, একজন চরম ন্যায়পরায়ণ, চরম দয়ালু, চরম ক্ষমাশীল হওয়া অন্যায়? বরং এসব ক্ষেত্রে চরমপন্থী হওয়াটাই কুরআনের নির্দেশ। কারণ আংশিক বা সুবিধামত নীতি মেনে চলা এটা ইসলামের নীতি নয়। আল্লাহ বলেছেন ‘তোমরা ইসলামের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে প্রবেশ কর’। এভাবে আমাদেরকে বাজে মন্তব্য-আলোচনার টেবিল উল্টে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মুসলমানদের উচিৎ ভয় না পেয়ে সত্য প্রকাশে সাহসী হওয়া। তবে সেটাও হতে হবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ও জ্ঞানের সাথে। যেভাবে এসেছে সূরা নাহালের ১২৫ নং আয়াতে। অন্যান্য সময়ের মত এখানেও তাঁর বক্তব্য শেষ করেন Dr. Joseph Adam Pearson-এর একটি উক্তি দিয়ে, ’People who worry that nuclear weaponry will one day fall in the hands of the Arabs, fail to realize that the Islamic bomb has been dropped already, it fell the day MUHAMMED (pbuh) was born’ অর্থাৎ ‘লোকেরা যারা আশংকা করে যে, পরমাণু বোমা একদিন আরবদের হস্তগত হবে, তারা আসলে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে যে, ইসলামিক বোমা অনেক আগেই পৃথিবীতে পড়েছে, আর এটা সেদিনই যেদিন মুহাম্মাদ (ছাঃ) জন্মগ্রহণ করেছেন’।
তাঁর লিখিত বই ও অন্যান্য প্রকাশনা :
তাঁর লেকচারের উপর ভিত্তি করে কয়েকটি বই যেমন- ‘প্রধান প্রধান ধর্ম সমূহে আল্লাহর ধারণা’, ‘কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান- সামঞ্জস্যপূর্ণ না অসামঞ্জস্যপূর্ণ?’, ‘ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের সচরাচরকৃত প্রশ্নসমূহের জবাব’, ‘ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ’, ‘সন্ত্রাসবাদ ও জিহাদ’, ‘ইসলামে নারী অধিকার- সংরক্ষিত না নিগৃহীত?, ‘আল-কুরআন- পাঠের সাথে সাথে অনুধাবন করা কি উচিৎ?’, ‘কুরআন কি আল্লাহর বাণী?’,‘বিজ্ঞানের আলোকে বাইবেল ও কুরআন’, ‘সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব’ প্রভৃতি শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। যার প্রায় সবগুলোই বাংলাভাষায় অনূদিত হয়েছে। এছাড়া তাঁর বিষয়ভিত্তিক ভিডিও ও অডিও লেকচারের শতাধিক সিডি, ডিভিডি ‘আইআরএফ’ সহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ‘ইসলামিক টিভি’ চ্যানেলের সৌজন্যে বাংলা ভাষায় ডাবিংকৃত ভিডিও লেকচারও প্রকাশিত হয়েছে।
এভাবে তিনি অব্যাহত গতিতে সফলভাবে ও নিষ্ঠার সাথে তাঁর কর্মকান্ড পরিচালনা করে চলেছেন। সারাবিশ্বে সৃষ্টি হয়েছে তাঁর লক্ষ-কোটি অনুরক্ত। বহু মানুষ তাঁর দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামের সত্যতা অনুভব করে ইসলাম গ্রহণ করছেন। শুধু তা-ই নয় তাঁর দা‘ওয়াতী পদ্ধতি অনুসরণ করে বিশ্বের আনাচে-কানাচে মুসলিম সমাজেও সৃষ্টি হচ্ছে দক্ষ, প্রজ্ঞাবান দাঈ ইলাল্লাহ। আমাদের দেশে সামাজিক অবক্ষয়ের এই চরম অবস্থাতেও গত কয়েক বছরে বিশেষত তরুণ সমাজে ইসলামের প্রতি সচেতনতা সৃষ্টির হার যে বেশ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তার পিছনে জাকির নায়েকদের অবদান কম নয়।
সমালোচনা :
ডা. নায়েকের গুণগ্রাহীদের মত তাঁর সমালোচকের সংখ্যাও কম নয়। অমুসলিমরা ছাড়াও মুসলমানদের মধ্য থেকেও তার সমালোচক প্রচুর। তথাকথিত উদারপন্থীরা তাকে খুব গোঁড়াপন্থী, অন্যদিকে অনেক আলেম তাঁকে শিথিলপন্থী বলে সমালোচনা করেছেন। আবার অনেকে তাঁর তুলনামূলক দাওয়াতী পদ্ধতিকেই ভুল মনে করেন। স্বঘোষিত মুরতাদ আলী সিনা[4] তাঁকে ‘শ্যোম্যান’ বলে হেয় করতে চেয়েছে। ইন্ডিয়ান লেখক খুশওয়ান্ত সিং জাকির নায়েকের দেয়া বক্তব্য ও যুক্তিসমূহকে ‘বালসুলভ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তার মতে, ডা. নায়েক সস্তা যুক্তি উপস্থাপন করে মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারলেও এতে মুসলমানদের পশ্চাদপদ হওয়ার পথই অবারিত হচ্ছে। দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে ২০০৮ সালের আগষ্ট মাসে ডা. নায়েকের বিরুদ্ধে এক ফৎওয়ায় বলা হয়, ‘জাকির নায়েকের বক্তব্যে এটা সুস্পষ্ট যে তিনি একজন গায়রে মুকাল্লিদের প্রচারক। সুতরাং তাঁর কোন বক্তব্যের উপর নির্ভর করা উচিৎ হবে না।’ হোসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতের ঘটনায় ইয়াযীদকে দোষারোপ না করায় তাঁকে ‘কাফের’ ফৎওয়া দেয়া হয়েছে। এছাড়া ছূফী ও পীরপন্থী বিভিন্ন সংগঠন তাঁর ঘোর বিরোধিতা করে আসছে। তবে ডা. নায়েক এ ব্যাপারে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে এসব ফৎওয়া গুরুত্বহীন। কেননা তাদের বরং ইমাম বুখারীর বিরুদ্ধেই ফৎওয়া জারী করা উচিৎ। ইসলাম সম্পর্কে সীমিত জ্ঞানের অধিকারী কিছু আলেম এসব ফৎওয়া দিচ্ছেন। এর কোন প্রভাব তাঁর উপর পড়বে না।’
সম্প্রতি তিনি তাঁর আসন্ন বৃটেন ও কানাডা সফরে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। পূর্বনির্ধারিত প্রোগ্রাম অনুযায়ী ১৮ জুন বৃটেন যাত্রার প্রস্ত্ততি গ্রহণের প্রাক্কালে ১৭ জুন বৃটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা জারির পত্রটি তাঁর হস্তগত হয়। একই সাথে ড. আবু আমিনা বিলাল ফিলিপসকেও বৃটিশ ভিসা দেওয়া হয়নি। বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তেরেসা মে ১৬ জুন এই নিষেধাজ্ঞা জারীর পর বলেন, ‘বৃটিশ নাগরিকদের জন্য কল্যাণকর নয় এমন কিছু পরিচালনার সুযোগ আমি দিতে পারি না। ডা. নায়েকের বিভিন্ন মন্তব্যে আমার কাছে এটাই প্রতীয়মান হয়েছে যে, তাঁর আচরণ অগ্রহণযোগ্য।’ তাঁর বিভিন্ন সময় প্রদত্ত বক্তব্য থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতি হল- ১. তিনি মুরতাদদের হত্যা করার বিধানকে সমর্থন করেন। ২. তিনি বলেছেন, ‘..যদি ওসামা বিন লাদেন মুসলমানদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন, তাহলে আমি তার সাথে আছি’, ‘..তিনি যদি কোন সন্ত্রাসীকে ভয় দেখান, তিনি যদি আমেরিকার মত সর্ববৃহৎ সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের প্রতি ভীতি প্রদর্শন করেন, তবে আমি তার সাথে রয়েছি..’, ‘...প্রত্যেক মুসলিমেরই সন্ত্রাসী হওয়া উচিৎ...’। ৩. স্ত্রীকে হালকাভাবে প্রহার করার বৈধতা পুরুষের রয়েছে- এমন কথা বলা। ৪. সমকামিতার শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া। ৫. স্বল্প পোষাক পরিধানের মাধ্যমে পশ্চিমা মহিলারা নিজেদের ধর্ষিত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন-এমন মন্তব্য করা) উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ উস্কে দেওয়ার অভিযোগ দেয়া হয়েছে। ডা. জাকির নায়েক এ অভিযোগকে অপ্রাসঙ্গিক আখ্যা দিয়ে বলেন, স্থানীয় মিডিয়া ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর চাপে তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করে তাঁর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তিনি বৃটিশ হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে আপীল করেছেন এবং এ ব্যাপারে ইন্ডিয়া সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ ও শ্রীলংকায় টানা সফর করার পর বৃটেনে ২৭-২৯ জুন এবং কানাডায় ২-৪ জুলাই তাঁর প্রোগাম ছিল। বৃটিশ সরকারের দেখাদেখি কানাডা সরকারও তাঁর প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কানাডার টরেন্টোতে অনুষ্টিতব্য ‘ফেইথ কনফারেন্স’টি আয়োজকদের বর্ণনা মতে উত্তর আমেরিকার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আয়োজন ছিল। এদিকে মুসলিম কানাডিয়ান কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা তারেক ফাতাহ কানাডা সরকারের এই সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা খুবই খুশী যে সরকার ডা. নায়েকের মন্তব্যগুলো সচেতনভাবেই লক্ষ্য করেছে এবং এরূপ একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে’। তারেক ফাতাহ একজন মডারেট ও মুসলিমদের পক্ষে কানাডা সরকারের লবিস্ট হিসাবে পরিচিত। তিনি সম্প্রতি জাকির নায়েকের মন্তব্য সমূহ উদ্ধৃত করে ফেডারেল এমপিদের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক অনেকগুলি ই-মেইল বার্তা প্রেরণ করেন।
শেষকথা : পরিশেষে বলতে হয়, পৃথিবী জুড়ে ইসলাম যেন আজ বড় অসহায়ত্বের শিকার। পাশ্চাত্য বিশ্বের সর্বাত্মক আক্রমণ ও ষড়যন্ত্রে দিশাহারা মুসলিম বিশ্ব একদিকে যেমন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে স্বয়ং মুসলমানদেরই অব্যাহত কাটা-ছেঁড়ায়, যোজন-বিয়োজনে রুগ্ন ইসলাম যেন অন্যের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে বেড়াচ্ছে। নীতিহারা মুসলমানদের অপরিণামদর্শী কর্মকান্ডে খোদ ইসলাম যেন আজ ‘ধর্মান্তরিত’ হয়ে পড়েছে। ফলে ইসলামের বিশ্বজনীন জীবন ব্যবস্থাপনা আজ তথাকথিত আধুনিক বিশ্বে সত্যি সত্যিই অচল, সেকেলে (!) পরিণত। ইতস্তত-বিক্ষিপ্ত মুসলিম চিত্তমানসে এই অন্ধকার যখন দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে তখন ডা. জাকির নায়েকদের মত সুস্থ আক্বীদা ও চেতনাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বদের বলিষ্ঠ আত্মপ্রকাশ সত্যিই আশাব্যঞ্জক। ইতিমধ্যে ৪৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি যা কিছু করেছেন তা এককথায় বর্ণনাতীত। দীর্ঘদিন যাবৎ মুসলিম বিশ্ব চেতনাদৃপ্ত সাহসী একটি নেতৃত্বের অভাবে হাহাকার করছে; যে নেতৃত্ব জাতিগত বেষ্টনী অতিক্রম করে বৈশ্বিক নেতৃত্বের সঞ্চার করবে। অন্যায়, অবিচার, প্রহসন, মিথ্যা, ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কুসংস্কারের মায়া-মরিচিকাপূর্ণ তিমিরজঞ্জাল ছিন্ন করে সারাবিশ্বের মানুষকে একক স্রষ্টার সুমহান মর্যাদাপূর্ণ পতাকাতলে সমবেত করার প্রচেষ্টা চালাবে। বলা বাহুল্য, এই আহবান জানানোর নৈতিক হিম্মতটুকুও যেন দুর্বল চেতনাসম্পন্ন মুসলিম সমাজ এখন হারিয়ে ফেলছে। ডা. জাকির নায়েকদের প্রয়াস তাই আমাদের আশান্বিত করে, বুকে বল নিয়ে আসে, দিগন্তপ্রান্তেনবারূণের স্বপ্ন জাগায়। মহান আল্লাহ তাঁর প্রচেষ্টাকে বরকতমন্ডিত করুন এবং তাঁদের কর্মতৎপরতার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর দুয়ারে ইসলামের সেই সুমহান আদর্শ ও জীবন বিধান আলোকোজ্জ্বল, মহিমামন্ডিত হয়ে উঠুক প্রতিনিয়ত। আমীন!!
৮. ভারতে পশ্চিমাঞ্চলে (মহারাষ্ট্র প্রদেশ) আরব সাগরের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল জুড়ে মালাবার ও কনকান অঞ্চল অবস্থিত। মুহাম্মাদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়ের পূর্বেই এ অঞ্চলে আরব মুসলিম বণিক ও প্রচারকগণ আগমন করেন এবং বসতি স্থাপন করেন। এ অঞ্চলের মুসলমানরা কনকানী ও মোপলা মুসলমান বলে পরিচিত। ভারতবর্ষের ইতিহাসে তারাই সর্বপ্রাচীন মুসলিম জনগোষ্ঠী । এজন্য তাদেরকে ‘The Vanguards of Islam in India’ বলা হয়। আরবী ও ফারসী মিশ্রিত স্থানীয় ভাষায় তারা কথা বলে। সাধারণত তাদেরকে শাফে‘ঈ মাযহাবভুক্ত মনে করা হয়। ১৮ শতকে তারা থানেশ্বর, মুম্বাই, রত্নগিরি প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। (উইকিপিডিয়া, kankani people)।
[2]. এখানে সতর্কতার জন্য বলা প্রয়োজন যে, বিভিন্ন প্রকাশনীর বাংলা অনুবাদসমূহ পরখ করে দেখা গেছে সেখানে বেশ কিছু স্থানে ভুল অনুবাদ করা হয়েছে। আরো উদ্বেগের বিষয় যে, মাসআলাগত বিষয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু যোজন-বিয়োজন করা হয়েছে যা মূল বইয়ে নেই। এজন্য পাঠককে সতর্কতার সাথে বই ক্রয়ের জন্য অনুরোধ করা হল।- লেখক
[3]. অরুন্ধতী রায়ের ভাষায়- ‘ভিকটিম যখন আর ভিকটিম হতে চায় না তখনই সন্ত্রাসের জন্ম নেয়।’
[4]. ইরানের এই শী‘আ লোকটি স্বীয় ধর্ম পরিত্যাগ করে বর্তমানে কানাডায় বসবাস করছে। রাসূল (ছাঃ)-কে সন্ত্রাসের নায়ক ও ইসলামকে সন্ত্রাসের ধর্ম চিহ্নত করে পৃথিবী থেকে এর অনুসারীদের শিকড় উপড়ে ফেলার মিশন নিয়ে সে ২০০৫ সালে একটি ওয়েবসাইট www.faithfreedom.com চালু করে। ইসলামের বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্বেষ ছড়ানোয় সউদী আরবসহ কয়েকটি মুসলিম দেশে এই ওয়েবসাইটটি নিষিদ্ধ। নীতিগতভাবে সকল ধর্মের বিদ্বেষী হলেও যথারীতি ইসলামই তার ও তার অনুসারীদের একমাত্র টার্গেট। সে গর্বভরে নিজেকে ‘এক্স মুসলিম’ পরিচয় দেয় এবং ‘এক্স মুসলিমস্’ নামে মুরতাদদের জন্য একটি ফোরাম গঠন করেছে।