আব্দুর রহমান কাশগড়ীর অভিবাসী হওয়ার করুণ কাহিনী
ড. নূরুল ইসলাম
ড. নূরুল ইসলাম 9550 বার পঠিত
ক. সকল মুসলিমের প্রতি অছিয়ত :
পৃথিবীর প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি বিশেষ করে সালাফে ছালেহীনের অনুসৃত নীতি-পদ্ধতির উপর ভিত্তিশীল দাওয়াতে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর বরকতমন্ডিত দাওয়াতে শরীক আমাদের ভাইগণকে ও আমি নিজেকে প্রথমত আল্লাহভীতি অর্জনের অছিয়ত করছি। অতঃপর উপকারী জ্ঞান অধিকহারে অর্জনের অছিয়ত করছি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَاتَّقُوا اللَّهَ وَيُعَلِّمُكُمُ اللَّهُ ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর তিনিই তোমাদেরকে শিক্ষা দান করেন...’ (বাক্বারাহ ২/২৮২)।
আমি আরও অছিয়ত করছি আমাদের নিকট সংরক্ষিত সেই বিশুদ্ধ জ্ঞান সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য, যা কোনক্রমেই পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্ এবং সালাফে ছালেহীনের মানহাজ থেকে বহির্ভূত নয়। আমি অছিয়ত করছি যেন তারা এই ইলমকে সাধ্যমত বৃদ্ধি করার সাথে সাথে তার সঙ্গে আমলকে সম্পৃক্ত করেন। যাতে এই ইলম তাদের বিরুদ্ধে দলীল না হয়; বরং তাদের পক্ষে সেদিন দলীল হিসাবে গৃহীত হয় ‘যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকারে আসবে না, কিন্তু যে সরল অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে সে ব্যতীত’ (শু‘আরা ২৬/৮৮-৮৯)। অতঃপর আমি তাদেরকে সতর্ক করছি সে সমস্ত লোকের সংস্পর্শ হতে বেঁচে থাকার জন্য যারা সালাফী পথ থেকে অনেক অনেক বিষয়ে বিচ্যুত হয়েছে। যার সমষ্টি হল, মুসলমানদের বিরুদ্ধে ও তাদের জামা‘আত সমূহের বিরুদ্ধে বহির্গত হওয়া। আমরা তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী এই নির্দেশই দিব যে, وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا ‘তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসাবে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫০২৮)।
আমাদের কর্তব্য হল, আমাদের দাওয়াতের বিরোধীদের ব্যাপারে নম্রতা অবলম্বন করা এবং সর্বদা আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীকে স্মরণ করা। মহান আল্লাহ বলেন, أُدْعُ إِلَى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ ‘আপনার পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন প্রজ্ঞার সাথে ও উত্তম উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন উত্তম পন্থায়’ (নাহল ১৬/১২৫)।
এই হিকমত বা প্রজ্ঞা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম হক্বদার ব্যক্তি সেই, যে আমাদের মূলনীতি ও আক্বীদার সর্বাধিক বিরোধী। যাতে আমাদেরকে একই সাথে হক্বের দাওয়াত প্রচারের দায়িত্বভার এবং অন্যদিকে খারাপ আচরণের বোঝা বহন করতে না হয়।
সুতরাং প্রত্যেক মুসলিম দেশের ভাইদের প্রতি আমাদের একান্ত অনুরোধ তারা যেন এসকল ইসলামী শিষ্টাচার পালন করেন। আর এর পিছনে তাদের উদ্দেশ্য যেন হয় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন; মানুষের প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা প্রাপ্তি নয়। সম্ভবত এতটুকুই যথেষ্ট। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।
খ. ছাত্রদের প্রতি নছীহত :
ফিকহ গ্রন্থাবলীর মধ্যে শায়খ সাইয়িদ সাবিক রচিত ‘ফিকহুস সুন্নাহ’ গ্রন্থ অধ্যয়নের জন্য আমি ছাত্রদেরকে নছীহত করছি। এক্ষেত্রে অন্যান্য সহায়ক গ্রন্থ যেমন ‘সুবুলুস সালাম’-এর সহযোগিতা নিবে। আর যদি ‘তামামুল মিন্নাহ্’র প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তাহলে এটি তাদের জন্য বেশী কার্যকরী হবে। অনুরূপভাবে আমি তাদেরকে নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী রচিত ‘আর-রাওযাতুন নাদিইয়াহ’ পড়ার জন্যও নছীহত করছি।
তাফসীর গ্রন্থাবলীর মধ্যে হাফেয ইবনু কাছীর রচিত ‘তাফসীরুল কুরআনিল আযীম’ পড়তে অভ্যস্ত হওয়া ছাত্রদের উচিত। কোন কোন ক্ষেত্রে এতে বিস্তৃত আলোচনা থাকলেও বর্তমানে এটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ তাফসীর। আর মনগলানো উপদেশমালার জন্য ইমাম নববীর ‘রিয়াযুছ ছালেহীন’ পড়া কর্তব্য।
আক্বীদার ক্ষেত্রে ইবনু আবিল ইযয হানাফীর ‘শারহুল আকীদা আত-তাহাবিয়্যাহ’ পড়ার জন্য আমি তাদেরকে নছীহত করছি। এটি অধ্যয়ন করতে গিয়ে আমার টীকা-টিপ্পনী ও ব্যাখ্যার সাহায্য নিবে। অতঃপর তারা শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ ও তদীয় ছাত্র ইবনুল কাইয়িম আল-জাওযিয়্যাহ (রহঃ)-এর রচনাবলী পড়বে। কেননা আমার বিশ্বাস মতে তাঁরা দু’জন ঐ সকল বিরল আলেমদের অন্যতম, যারা তাক্বওয়া ও বিশ্বস্ততার সাথে তাদের ফিকহে সালাফে ছালেহীনের নীতি-পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন।