মুহতারাম আমীরে জামা‘আত

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 9214 বার পঠিত

 [‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ‘আহলেহাদীছ আনেদালন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীর প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের এই সৃনতিচারণমূলক সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন ‘তাওহীদের ডাক’-এর পক্ষ থেকে মুযাফফর বিন মুহসিন ও নূরুল ইসলাম ]

(৩য় পর্ব)

(৭) নওগাঁ, জোকাহাট : ১৯৮১ সালের সম্ভবত ৪ জানুয়ারী। ড. রহমানী, ড. মুজিবুর রহমান ও মাওলানা আব্দুল মতিন কাসেমীসহ আমরা আত্রাই থেকে নৌকাযোগে জোকাহাট যাচ্ছি। ট্রেন লেইট থাকায় আত্রাই স্টেশনে পৌঁছতে এবং নৌকায় যেতে গিয়ে সম্মেলনস্থলে পৌঁছতে আমাদের রাত হয়ে গেল। ঘাটে নৌকা ভিড়তেই মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন ফযল সাহেবের দরাজ গলার বক্তৃতা কানে এলো। ভাষণের শেষদিকে উনি তখন বলছেন, ‘আমি আজ উনিশটি বছর বাংলার আনাচে কানাচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তৃতা করে ফিরছি। জানি না আমার বক্তব্য শুনে ১৯ বছরে ১৯ জন বেনামাজী ছেলে নামাযী হয়েছে কি-না। কিন্তু ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র গত তিন বছরের তৎপরতায় ইতিমধ্যে বহু তরুণ নামাযী হয়েছে, সৎচরিত্রবান ও সমাজসচেতন হয়েছে। অতএব হে তরুণ সমাজ! তোমরা সবাই ‘যুবসংঘে’ যোগদান কর। আমাদের ভাই গালেব ছাহেব আসছেন, তোমরা তার কাছে সবকিছু জেনে নিবে।’ অতঃপর বক্তব্য শেষ করে ট্রেন ধরার জন্য তিনি বেরিয়ে গেলেন। আমরা খানিকবাদেই পৌঁছলাম। কিন্তু ওনার সাথে দেখা হল না। উনি পোষ্টারে নাম দেখে আমাদের কথা উল্লেখ করছিলেন, কিন্তু আমরা যে উপস্থিত হয়ে গেছি- তা উনি জানতেন না। আমাদের অনুপস্থিতিতে তাঁর এই নির্দেশনা আমাদের জন্য আন্তরিক দো‘আ হিসাবে গ্রহণ করি। আজকে বেঁচে থাকলে তিনি না জানি কত খুশী হতেন!

(৮) নামো শংকরবাটি, চাঁপাই নবাবগঞ্জ : ১৯৮৫ সালের শীতকাল। ১৯৩৯ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এখানকার প্রায় ৪৬ বছরের প্রাচীন হেফযুল উলুম টাইটেল মাদরাসার বার্ষিক সমাবেশের দ্বিতীয় দিনে আমি আমন্ত্রিত হয়েছি। বেশ রাত হলে আমি বক্তব্য দিতে উঠি। মনে পড়ে, আড়াই ঘণ্টার ভাষণের শেষদিকে সেদিন বলেছিলাম, এ মাদরাসার দীর্ঘ ৪৬ বছরে ৪৬ জন যোগ্য আলিম ও মুহাদ্দিছ কেন তৈরী হল না- এ দুর্ভাগ্যের কারণ ও সমাধান কি, নেতৃবৃন্দ সে বিষয়ে কখনো চিন্তা করেছেন কি? অতঃপর এর সমাধান বিষয়ে অনেক কথা সেদিন বলেছিলাম। বক্তব্য শেষে বিশ্রামস্থলের দিকে পা বাড়াতেই স্থানীয় খ্যাতনামা আলেম, মুনাযির ও বাগ্মী মাওলানা মুহাম্মাদ হোসায়েন মওড়ী পথ আগলে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, আমি বক্তাদের ওয়ায বেশীক্ষণ শুনতে পারি না। কিন্তু আজ চলে যেতে পারলাম না। প্যান্ডেলের বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডায় এক ঠায় দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত আপনার বক্তব্য শুনেছি। আপনি যা বলেছেন তার সাথে আমি শতভাগ একমত। আল্লাহ আপনার হায়াত দারায করুন...। একইভাবে তিনি আবেগ প্রকাশ করেছিলেন ১৯৯২ সালে গাইবান্ধার জান্নাতপুর মাদরাসার বার্ষিক জালসায় আমার বক্তব্যের পর, যখন তিনি সেখানে শিক্ষক ছিলেন।

(৯) চকউলি, নওগাঁ : ১৯৮৫ সালের সম্ভবতঃ ৫ ও ৬ নভেম্বর। মান্দা থানাধীন চকউলি হাইস্কুল প্রাঙ্গনে দু’দিনব্যাপী ইসলামী সম্মেলন। ড. আব্দুল বারী, আবু তাহের বর্ধমানী, আব্দুর রঊফ, আব্দুল মতীন সালাফী, আব্দুছ ছামাদ সালাফী ও আমিসহ আরও অনেকে। সম্মেলনের কয়েকদিন পূর্বে ‘মান্দা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে’ শিরোনামে পর পর দু’টো পত্র এলো আমার কাছে অনেকের স্বাক্ষর সহকারে। সারমর্ম এই যে, ‘যদি আপনারা এখানে আসেন তাহলে বৃহত্তর হানাফী সমাজের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা সম্মেলন রুখে দেব’। এছাড়া হুমকিমূলক আরো অনেক বাজে কথা। এসবের কোন তোয়াক্কা না করে আমরা রাজশাহী থেকে নাটোর গেলাম। ওখান থেকে ড. আব্দুল বারী, আব্দুল মতীনসহ একত্রে ট্রেনে সান্তাহার নামলাম। সম্মেলনস্থলে যেয়ে দেখি বিশাল আয়োজন। লোকে লোকারণ্য। কোথায় কে বাধা দেবে? আসলে চিঠিতে হুমকি পাঠিয়ে আমাদের আতঙ্কিত করতে চেয়েছিল বিরোধীপক্ষ। প্রথমদিন অসুস্থতার কারণে বক্তৃতা করতে পারলাম না। পরদিন পেটের পীড়া আরো মারাত্মক আকার ধারণ করলে অনেকগুলো ট্যাবলেট-ক্যাপসুল খেয়ে মঞ্চে গিয়ে বসলাম। গিয়ে দেখি হুমকিদাতাদের প্রধান ব্যক্তি মঞ্চে বসে আছে। আমাকে দেখে ছোট্ট করে সালাম দিল। আমিও আগের ঘটনা না জানার ভঙ্গিতে উত্তর দিলাম। অতঃপর ক্লান্ত, অবসন্ন দেহে বসে বসে বক্তৃতা করলাম। সেদিনের আড়াই ঘণ্টার ভাষণ ছিল আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ভাষণ। সম্মেলনস্থলকে পুরা দেশ এবং স্টেজে বসা মেহমানদেরকে সরকারের সাথে তুলনা করে সেদিন ইসলামী রাষ্ট্রের রূপরেখা তুলে ধরেছিলাম। অতঃপর এ দেশ ধর্মনিরপেক্ষ মতে চলবে, না ইসলামী বিধান অনুযায়ী চলবে। ইসলামের নামে প্রচলিত মাযহাবী ফিকহের উপর চলবে, না ছহীহ হাদীছের বিধান অনুযায়ী চলবে- এর উপর ভোটাভুটি করি। গগণবিদারী আওয়াযে উপস্থিত শ্রোতৃবৃন্দ রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থায় ইসলাম ও ছহীহ হাদীছের বিধানের পক্ষে দৃপ্ত কণ্ঠে শ্লোগান তুলে বলেছিল, ‘কুরআন-হাদীছ যেখানে, আমরা আছি সেখানে’। ‘কুরআন-হাদীছ ছাড়া অন্য কিছু মানি না, মানব না’। বস্ত্তত এ শ্লোগানটি সেদিন আমাদের জনসভায় প্রথম উচ্চারিত হয়। যদিও এ পথ শুধু শ্লোগানের নয়, এ পথ বহু সংগ্রামের, বহু ত্যাগ ও তিতিক্ষার। তবুও জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি এবং আগামী দিনে এর পক্ষে সুদৃঢ় আন্দোলনের স্থায়ী প্লাটফরম সৃষ্টির প্রচেষ্টায় সামান্য হলেও অগ্রসর হতে হয়ত পেরেছি, এ অনুভূতি নিয়ে সেদিন নওগাঁ থেকে ফিরেছিলাম। 

(১০) হারাগাছ, রংপুর : সম্ভবতঃ ১৯৮৫ সালেই হবে। হারাগাছ ইসলামী সম্মেলনে ড. আব্দুল বারী, সাথে আমি ও অন্যান্য বক্তাগণ আছেন। তামাক অধ্যুষিত এলাকা এবং বিড়ি ফ্যাক্টরীতে ভরা পৌর শহর। এইদিন আমি ওঠার আগেই স্থানীয় বিড়ি ফ্যাক্টরীর মালিকদের পক্ষ থেকে আয়োজক কমিটির মাধ্যমে আমাকে অনুরোধ করা হয় যেন আমি তামাকের বিরুদ্ধে কিছু না বলি। বড়ই মুশকিলের কথা। যাইহোক আমি মূল ভাষণ শুরু করেই বললাম, তামাক যে মাদকদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত এবং সে কারণে তামাক-বিড়ি-জর্দা ইত্যাদি যে স্পষ্টভাবে হারাম, তা আমি আজকের সভায় বলব না। সুযোগ পেলে অন্যদিন এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।’ এই বলে বক্তব্যের মূল বিষয়বস্ত্ততে চলে গেলাম। শ্রোতারা যা বোঝার বুঝে ফেলে মুখ টিপে হাসল। এইদিন বক্তব্যের পর প্রশ্নোত্তর ও সাময়িক এক উত্তেজনা প্রশমনের জন্য সভাপতি ড. আব্দুল বারী ছাহেবের নির্দেশে আমি আরো দু’বার বক্তৃতা করতে বাধ্য হই।  

(১১) বগুড়া শহর : ১৯৮৬ সালে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে যেলা জমঈয়তে আহলেহাদীসের বার্ষিক কনফারেন্স। পাশেই হানাফীদের নামকরা প্রতিষ্ঠান জামীল মাদরাসা। তাদের অপচেষ্টায় সম্মেলন বন্ধের জন্য সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডিসি শহীদুল আলম ড. আব্দুল বারী ছাহেবকে না আসার জন্য বলেছেন বলে শুনলাম। যথাসময়ে আমরা ফাৎহ আলী ব্রীজ সংলগ্ন আহলেহাদীছ জামে মসজিদে পৌঁছলাম। অবস্থা যা শুনলাম, রীতিমত তুলকালাম কান্ড। আমাদের মাইকিং-এ বাধা দিয়ে পাল্টা মাইকিং করা হচ্ছে সমাবেশের বিরুদ্ধে। এমতাবস্থায় স্থানীয় জমঈয়ত নেতৃবৃন্দ ভরসা পাচ্ছেন না। মাওলানা আবু তাহের বর্ধমানী বগুড়ায় নেমেই আবার ফিরে গেছেন। মাওলানা মতিউর রহমান রংপুরী বগুড়া রেলস্টেশনে নেমে ছদ্মবেশে কোনমতে এসেছেন। ড. আব্দুল বারী ও আমি হোটেলকক্ষে একান্তে বসলাম। বললাম, স্যার! যদি আমরা সম্মেলন না করে চলে যাই, তাহলে বগুড়ায় আহলেহাদীছদের জন্য চরম বিপর্যয়কর পরিবেশের সৃষ্টি হবে। কেউ না যাক, আপনাকে ও আমাকে যেতেই হবে। চলুন, আল্লাহ ভরসা। উনি রাযী হলেন। ‘যুবসংঘ’-এর ছেলেদের পাহারায় আমাদের জীপ সমাবেশস্থলে পৌঁছলো। অনেক কষ্টে ভিড় ঠেলে মঞ্চে উঠলাম। এমন পরিবেশেও লোকজনের বিপুল উপস্থিতি দেখে আনন্দে আমার বুক ভরে উঠল। মঞ্চে উঠেই ইশারায় শ্রো্তাদেরকে কোনরূপ শ্লোগান দিতে নিষেধ করলাম। পরিস্থিতি বুঝে সভার শুরুতেই সভাপতি ড. আব্দুল বারী উদ্বোধনী ভাষণ দিতে গিয়ে দূরদর্শিতার সাথে বললেন, আজকে আমাদের অনেক বক্তা আছেন। কিন্তু সবাইকে সময় দেয়া যাবে না। কেবলমাত্র আসাদুল্লাহ আল-গালিব বক্তৃতা করবে। এত দ্রুত উঠার জন্য আমি প্রস্ত্তত ছিলাম না। মনে পড়ে রাজশাহী সাহেব বাজারের হকার্স মার্কেট থেকে কেনা ১২০ টাকা দামের ঊলেন চাদরটি তখন আমার গায়ে জড়ানো। এ অবস্থাতেই উঠলাম। হামদ ও ছানা শেষে আপনা থেকেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, ওয়া মান আহসানু ক্বাওলাম মিম্মান...সূরা হা-মীম সাজদার ৩৩ নং আয়াতটি। ইতিপূর্বে এই আয়াতের ভিত্তিতে আমি কোথাও কোন বক্তৃতা করিনি। আয়াত শেষ করতেই ময়দানের পাশ থেকে হানাফী মসজিদের মাইক থেকে বলা হল, ‘আপনারা সভা বন্ধ করুন- আমরা এখন এশার নামায পড়ব।’ আযান শুরু হয়ে গেল। আমি সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বললাম, ‘আপনারা ওযু না থাকলে তায়াম্মুম করে নিজ নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে যান, আমরাও এশার জামা‘আত করব।’ জনতা উঠে কাতারবন্দী হয়ে গেল। ড. আব্দুল বারী বিস্মিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। আমি বললাম, ‘স্যার দো‘আ করুন! সভা এখন আমার হাতে।’ অতঃপর জামা‘আতসহ এশার ছালাত আদায় করে নিলাম। তারপর ভাষণ শুরু করলাম। ৪৫ মিনিটের ভাষণে আহলেহাদীছ আন্দোলনের দাওয়াত যে মূল ইসলামের দাওয়াত এবং তা যে সকল মানুষের চিরন্তন কল্যাণের জন্য-সেটা আমার বক্তব্যে জোর দিয়ে তুলে ধরলাম। ভাষণ শেষ করতেই জনাব ড. আব্দুল বারী উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর মিনিট দশেকের মধ্যে সভাপতির ভাষণ শেষ করে বগুড়ার স্থানীয় অন্ধ হাফেয আব্দুল্লাহ ইবনে কাযেমকে মঞ্চে উঠিয়ে দিয়ে আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠলেন। আমরা হোটেলে চলে এলাম। অতঃপর রাত ১২-টায় নির্বিঘ্নভাবেই সমাবেশ সমাপ্ত হল। এভাবে বিরোধীদের নানামুখী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইতিবাচকভাবে তা মুকাবিলা করার মাধ্যমে আমরা সে যাত্রা উৎরে গেলাম, ফালিল্লাহিল হাম্দ। পরদিন ফৎহ আলী ব্রীজ সংলগ্ন জামে মসজিদে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে যেলা সভাপতি এ্যডভোকেট ওয়াজেদ আলী তরফদার আনন্দের আতিশয্যে জমঈয়ত সভাপতি ছাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন, স্যার! আপনি হাল ধরে থাকুন, ভাই গালেবকে ছেড়ে দিন ময়দান চাষ করার জন্য ও কোদাল মারার জন্য।’

(১২) নানূপুর ইসলামিয়া মাদরাসা, চট্টগ্রাম : সম্ভবতঃ ১৯৮৭ সালের অক্টোবরে হবে। মক্কা শরীফের জনৈক মেহমান আবু ‘আরাব এলেন ঢাকায়। উনার গন্তব্য হল চট্টগ্রামের পটিয়া, নানূপুর, জিরি- প্রভৃতি মাদরাসা। প্রতিবছর নাকি উনি আসেন এসব স্থান পরিদর্শন ও আর্থিক সাহায্য প্রদানের জন্য। আব্দুল মতীন সালাফীর সাথে তাঁর কিভাবে পরিচয় ঘটে জানি না। তবে মেহমানের অনুরোধে তিনি তাঁর সাথে যাচ্ছেন। জমঈয়তের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক উপলক্ষে আমি তখন ঢাকায় ছিলাম। মতীন ভাই আমাকে ধরে বসলেন। ফলে আমাকেও সঙ্গী হতে হল। যথাসময়ে আমরা নানূপুর মাদরাসায় পৌঁছলাম। এখান থেকে মাইজভান্ডারী দরবার খুবই নিকটে। নানূপুর পীর ছাহেবের সাথে মাইজভান্ডারীদের প্রবল বিরোধ ছিল। আমরা গিয়ে মসজিদে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম। সম্ভবতঃ জুম‘আর ছালাতের পরই অনুষ্ঠানটি ছিল। ফলে তা সংক্ষিপ্ত ছিল। পীর ছাহেব মেহমানকে বক্তব্য দানের আহবান জানালেন। আব্দুল মতীন ভাই তার অনুবাদ করলেন। অতঃপর আমাকে আহবান করা হল। আমি মাত্র ১৫ মিনিটে বক্তব্য শেষ করলাম। যতদূর মনে পড়ে দু’টো উদাহরণের মাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছিলাম। পাশেই বসা পীর ছাহেবের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলাম- ধরে নিন আমি রাজীব গান্ধীর মত একজন বড়মাপের হিন্দু যুবক এসেছি পীর ছাহেবের কাছে ‘ইসলাম’ গ্রহণের জন্য। চট্টগ্রাম থেকে আসার পথে রাস্তার ধারে ধারে বড় বড় পীরের দরগাহের বিশাল বিশাল তোরণ দেখলাম। পীর ছাহেবের কাছে মুরীদ হওয়ার পূর্বে আমি এসব দরগাহ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ইসলামের চারটি মাযহাব। আমরা এবং ওরা সবাই হানাফী মাযহাবভুক্ত। তবে ওদের সাথে আমাদের তরীকায় পার্থক্য রয়েছে। নিঃসন্দেহে আমাদের তরীকাই সর্বোত্তম। এখানে মুরীদ হলেই আপনি পরকালে মুক্তি পাবেন। আমি একজন সচেতন ও শিক্ষিত হিন্দু যুবক। আমরাও ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র- চার দলে বিভক্ত। এদের মধ্যেও রয়েছে সাধন-ভজন পদ্ধতির বিস্তর পার্থক্য। রয়েছে প্রবল সামাজিক বৈষম্য। মানুষে মানুষে জাত-পাতের এই পার্থক্য ও পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ আমাকে টেনে এনেছে উদার ও সাম্যের ধর্ম ইসলামের কাছে। কিন্তু বাস্তবে একি দেখছি? হিন্দুরাও চার, মুসলামানরাও চার? তাদের ব্রাহ্মণ-যজমানি, এদের পীর-মুরীদী, ওদের ভেট-নৈবেদ্য, এদের নযর-নেয়ায। ওদের শ্রাদ্ধ, এদের খানা? ওদের পরস্পরে ধর্মীয় বিরোধ, এখানেও একই অবস্থা। প্রবল সন্দেহের জালে আটকে গিয়ে আমি মুরীদ না হয়েই উঠে দাঁড়ালাম। এখন বলুন হে পীর ছাহেব! আমাকে ইসলামে দাখিল করাবার জন্য আপনার কাছে কি বক্তব্য রয়েছে?

দ্বিতীয় উদাহরণ : দেড় হাযার ছাত্র ও ৪০ জনের মত শিক্ষক ছাড়াও জুম‘আয় আগত পার্শ্ববর্তী এলাকার বেশ কিছু লোকও রয়েছেন। হঠাৎই আমার নযরে পড়লো বাইরে দেওয়াল লিখনের দিকে। সেখানে চারটি ইসলামী রাজনৈতিক দলের নাম। সেটিকে সামনে রেখে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললাম, আপনারা সবাই একই পরিবেশে থেকে একই উস্তাযের কাছে একই উদ্দেশ্যে- অর্থাৎ ইসলাম শেখার উদ্দেশ্যে লেখাপড়া করেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সবার একটাই- দেশে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা- সবাই সমস্বরে বলল ‘ঠিক’। এবারে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তাহলে আপনারা এখানে চারটি দল কেন?’ পিনপতন নীরবতা। আমি আবারো বললাম, আপনারা সবাই বলেন, ‘বিশ্ব মুসলিম এক হও’। ‘ভাত-কাপড়-বাসস্থান, ইসলাম দেবে সমাধান’। তাহলে আপনারা নিজেরা কেন এক হতে পারলেন না? আপনাদের অনৈক্যের সমাধান তাহলে ইসলাম কী দিয়েছে? যে ইসলাম আপনাদের দেড় হাযার শিক্ষিত মানুষকে এক করতে পারল না, সে ইসলাম কিভাবে কোটি মানুষকে এক করবে? তাহলে কি ইসলাম অনৈক্য, হিংসা ও হানাহানির ধর্ম? নিশ্চয়ই নয়। তাহলে গলদটা কোথায়? হতবুদ্ধি হয়ে একদৃষ্টে চেয়ে আছে সবাই আমার দিকে। খানিক বিরতি দিয়ে বললাম, হতাশ হবার কিছু নেই। সমাধান ইসলামেই নিহিত আছে। আল্লাহ বলেছেন, وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا অর্থাৎ ‘তোমরা সকলে সমবেতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ কর’। কিন্তু আমরা সেখানে ‘হাবলুল্লাহ’কে (আল্লাহর রজ্জুকে) ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন ‘আব্দুল্লাহ’কে ধরেছি বিভিন্ন অজুহাতে। আল্লাহ বলেছেন, وَلَا تَفَرَّقُوا ‘তোমরা ফের্কায় ফের্কায় বিভক্ত হয়ো না’। আমরা সেখানে ধর্মের নামে অসংখ্য মাযহাব ও তরীকায় বিভক্ত হয়েছি। অন্ততঃ চারটি মাযহাব মান্য করাকে আমরা ‘ফরয’ ঘোষণা করেছি। এই সব মাযহাব ও তরীকার দেওয়াল খাড়া করে আমরা ক্রমেই সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর গন্ডিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি। এর সাথে রয়েছে রাজনৈতিক দলাদলি। টেবিলের চার কোণ থেকে চারজনই বলছি, ‘বিশ্ব মুসলিম এক হও’। অথচ কেউই চার কোণ ছেড়ে মাঝখানে আসছি না। আমরা প্রত্যেকেই স্ব স্ব দল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চাই। তাহলে ঐক্যের পথ কি? নিশ্চয়ই রয়েছে। চলুন আমরা সেপথের সন্ধান করি। আর সে পথ হল এই যে, আমরা নিজেদের ‘রায়’কে নয়, বরং অহীর বিধানকে চূড়ান্ত সত্য হিসাবে গ্রহণ করব। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে একমাত্র সমাধান হিসাবে মেনে নেব। ব্যাখ্যাগত মতভেদ হলে ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের ব্যাখ্যাকে অগ্রাধিকার দেব। এরপরও যদি ছোটখাট কোন মতভেদ থাকে এবং ঈমান ও কুফরের মত বিষয় না থাকে, তাহলে সেজন্য আমরা পরস্পরের প্রতি সহনশীল থাকব। ইনশাআল্লাহ এ পথেই মুসলিম ঐক্য ফিরে আসবে। ইসলাম যে সাম্যের ধর্ম, তা প্রমাণিত হবে। অমুসলিমরা ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হবে।

ছাত্রদের মধ্যে কয়েকজন একসঙ্গে বলে উঠলো- ‘এ ধরনের কোন আন্দোলন কি বাংলাদেশে রয়েছে? আমরা আজই সে আন্দোলনে যোগ দেব।’ বললাম, ‘ব্যস্ত হবেন না ভাইয়েরা। সে আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। আমাদের কেবল খুঁজে নিতে হবে।’ সবাই প্রায় সমস্বরে জানতে চাইলো কোথায় সে আন্দোলনের ঠিকানা, কারা এর নেতা ইত্যাদি। আমি জবাব না দিয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বসে পড়লাম। মতীন ভাই আমার পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘আপনি বোধ হয় জাদু জানেন’।

দুপুরে খানাপিনার পর ছাত্রদের দাবীক্রমে আবার বসলাম মাদরাসার একটি কক্ষে। এরপর তারা ইচ্ছামত প্রশ্ন করতে থাকল। আমি কেবল জবাব দিয়ে গেলাম। তবে ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ বা তার ঠিকানা কিছুই বললাম না। ‘আহলেহাদীছ’-এর সবকিছুই বললাম কেবল ‘আহলেহাদীছ’ শব্দটা উল্লেখ করলাম না। কেননা শব্দটি উল্লেখ করা মাত্র তাদের যাবতীয় প্রশ্ন ও জানার ইচ্ছা নিমিষেই উবে যাবে। কারণ তারা ‘আহলেহাদীছ’কে একটি পৃথক ‘ফের্কা’ হিসাবে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে। তাদেরকে যত্রতত্র লা-মাযহাবী, রাফাদানী, গায়ের মুক্বাল্লিদ এমনকি বেদ্বীন আখ্যা দিতেও তারা মোটেই কুণ্ঠাবোধ করে না। তাই তাদেরকে শুধু আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা বললাম। তখনই ইউসুফ নামে দাওরা ক্লাসের এক ছাত্র ও বিজ্ঞানের একজন শিক্ষক (সম্ভবত আব্দুর রায্যাক) আহলেহাদীছ আক্বীদা কবুল করার ঘোষণা দেন। তারা পরে রাজশাহীতে চিঠিও দিয়েছিলেন। আমি তাদের নামে সম্ভবত বইপত্র পাঠিয়েছিলাম।

(১৩) খাসবাগ, রংপুর : ১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারী। ‘আন্দোলন’-এর রংপুর যেলা সম্মেলন। ‘জমঈয়ত’-এর স্থানীয় নেতৃবৃন্দ রংপুরের প্রাণকেন্দ্র সেন্ট্রাল রোড বা তার আশপাশে আমাদের সম্মেলন হতে দেবেন না। জনাব আব্দুল বাকী তখন আমাদের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক। উনি খাসবাগের বাশিন্দা। প্রতিবেশী হানাফী মসজিদ কমিটি সদস্য। অবশেষে তিনি উক্ত হানাফী মসজিদ কমিটিকে বললে তারা সানন্দে রাযী হয় এবং নিজেরা সম্মেলনের জন্য চাঁদা আদায়ে সহযোগিতা করেন। তাদের উৎসাহ ও সহযোগিতার ফলেই আল্লাহর রহমতে সফলভাবে সম্মেলন করা সম্ভব হয়। ঐদিন হানাফী ভাইদের সহযোগিতার কারণ ছিল এই যে, ইতিপূর্বে এক সম্মেলন থেকে ফেরার পথে খাসবাগে বাকী ছাহেবের ওখানে সাময়িক যাত্রাবিরতি করি। ঐদিন জুম‘আর দিন থাকায় পার্শ্ববর্তী উক্ত হানাফী মসজিদে ছালাত আদায় করতে যাই। মসজিদ কমিটি আমার পরিচয় পেয়ে আমাকেই খুৎবা দিতে অনুরোধ করেন। আমি স্বাভাবিক নিয়মে মাতৃভাষায় সংক্ষিপ্ত খুৎবা দেই। খুৎবায় আমি চার ইমামের উক্তিসমূহ উদ্ধৃত করে নিরপেক্ষভাবে ছহীহ হাদীছ অনুসরণের মাধ্যমে পরকালীন মুক্তি হাছিলের আহবান জানাই। জুম‘আর পর কমিটি ও মুছুল্লীগণ এখানে একটি বড় ধরনের সম্মেলন করার জন্য তখনই অনুরোধ করেন। এ ঘটনার কয়েকমাসের মধ্যেই আমাদের উক্ত সম্মেলনের তারিখ হয়। এভাবে ওনাদের পূর্বের অনুরোধ রক্ষা করা হয়, আমাদের সম্মেলনও সম্পন্ন হয়। ফালিল্লা-হিল হামদ। ঐ দিন এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। সম্মেলনের প্রস্ত্ততিতে ‘যুবসংঘ’-এর যে ছেলেটি সবচেয়ে বেশী ভূমিকা নিয়েছিল, সেই ছেলেটি সম্মেলন শেষে ভোররাতে পীরগাছায় গিয়ে তার বাড়ীতে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু সকালে আর ওঠেনি। ঘুমের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়ে যায়। ইন্না লিল্লাহে.....। সকালে আমরা পীরগাছায় যেয়ে এ ঘটনা শুনে খুবই মর্মাহত হলাম।   

(১৪) খুলনা : ১৯৯৯ সালে খুলনা হাদীস পার্কে যেলা সম্মেলন। সঙ্গে খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকা হয়েছে। সকালে সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করেছি। বিকালে পার্কের সমাবেশে যাব। হঠাৎ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। ব্যাপারটা কিছুই বুঝলাম না। উপায়ান্তর না দেখে তড়িঘড়ি করে প্রেসক্লাব মিলনায়তন ভাড়া করা হল। চারিদিক থেকে কর্মীরা আসতে শুরু করল। ৫-টার মধ্যেই মিলনায়তন ভর্তি হয়ে গেল। বসা বা দাঁড়ানোর কোন স্থান নেই। কিন্তু লোকজন আসছেই। ওদিকে মাগরিবের মধ্যেই মিলনায়তন ছাড়তে হবে। সেভাবেই চুক্তি। অথচ মাগরিবের পর বিশেষতঃ শহরের লোকজন আসবে। এমতাবস্থায় আমার নির্ধারিত বক্তব্য শেষ করে সবাইকে সার্কিট হাউস ময়দানে গিয়ে মাগরিবের ছালাত আদায় করতে বললাম (পূর্বেই সার্কিট হাউসে দু’টি কক্ষ বরাদ্দ নেওয়া হয়েছিল)। স্রোতের মত কর্মীরা চলল সব সার্কিট হাউসের দিকে, যা অচিরেই মিছিলের রূপ ধারণ করল। পুলিশ দৌড়ে এল। কেননা তাদের অনুমতি ছাড়া মিছিল নিষিদ্ধ। এদিকে সালাফী ছাহেব ও যেলা সভাপতি এবং ‘আন্দোলন’-এর নেতারা আমাকে বিরত রাখার চেষ্টা করলেন। আমি বললাম, পুলিশকে আমার কাছে আসতে দিন। আমি গাড়ি নিয়ে মিছিলের মধ্যভাগে যাচ্ছি। আপনারা আসুন। পিকচার প্যালেস মোড় থেকে সার্কিট হাউস খুব দূরে নয়। শ্লোগানমুখর তবে সংযত মিছিল দেখে পুলিশ চড়াও হলো না বরং সাথে সাথেই চলল। আমি আগে গিয়ে হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে দাঁড়ালাম। মিছিলও সেদিকে এল। সবাইকে ইঙ্গিতে কাতার দিতে বললাম। একজনকে আযান দিতে বললাম। পুলিশ কর্মকর্তা এসে জোববাধারী মাওলানা জাহাঙ্গীরকে বিনয়ের সাথে বলল, আপনাদের মিছিল কি এরপরেও চলবে? ডিআইজি থেকে বারবার ওয়ারলেস আসছে মিছিল যেন না হয়। আমাদের চাকুরীটা বাঁচান। আমি তাদেরকে বললাম, ‘ডিআইজিকে বলে দিন এটা আহলেহাদীছের মিছিল। এটা কোন ভাংচুরের মিছিল নয়।’ অতঃপর মাগরিব পড়ে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়ে প্রোগ্রামের সমাপ্তি টানলাম।

তারপর সার্কিট হাউসে আমাদের নির্ধারিত কক্ষে ঢুকলাম। বারান্দায় কর্মী ভরা। ইতিমধ্যে বাগেরহাট যেলা সভাপতি এসে জানালেন, কিছু হানাফী ভাই আহলেহাদীছ হতে চান।

বারান্দায় সবাই লাইন দিয়ে বসলেন। মোট ৪২ জন আহলেহাদীছ হলেন এবং বায়‘আত নিলেন। আলহামদুলিল্লাহ । সবাইকে নছীহত করে বিদায় দিলাম। একটু পরে এমদাদ মামা এসে বললেন, এনডিসি ছাহেব ডিসি ছাহেবের বরাতে বলেছেন, যেন সার্কিট হাউসে আমি রাত্রিযাপন না করি। কেননা এখানে গন্ডগোলের আশংকা রয়েছে। বিষয়টা অাঁচ করতে পেরে আমি সালাফী ছাহেব, (জয়পুরহাটের) মাহফূয ও শফিকুলকে রাত ৯-টার ট্রেন ধরে চলে যেতে বললাম। আমি ইচ্ছা করেই থেকে গেলাম। কেননা চলে গেলে বিরোধী পক্ষ অপব্যাখ্যা করার সুযোগ নেবে। মামাকে বললাম, ‘এনডিসিকে বলে দিন, এখান থেকে আমি কোথাও যাব না। কোন পুলিশ প্রহরা লাগবে না। আমাদের কর্মীরা এখানে থাকবে।’ কর্মীরা বারান্দা ভরে শুয়ে থাকল। পরদিন অন্যান্য সাংগঠনিক প্রোগ্রাম সেরে সাতক্ষীরা গেলাম।

মূল ঘটনা ছিল এই যে, সম্মেলন বানচাল করার জন্য ইতিপূর্বে সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত একজন ব্যক্তি নিজ হাতে লিফলেট লিখে ফটোকপি করে ছড়িয়ে ছিল যে, ‘ড. গালিবকে রুখে দাঁড়ান। তিনি হানাফীদের কাফের বলেন। আপনারা দলে দলে হাদীস পার্কে এসে তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিন’। এ লিফলেট তারা শহরের হানাফী মসজিদগুলোতে বিতরণ করে এবং প্রশাসনের কাছেও সম্মেলন বন্ধের জন্য আবেদন করে ও তাতে লিফলেটটি জুড়ে দেয়। সে মোতাবেক যেলা প্রশাসন হাদীস পার্কের সম্মেলন আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেয় এবং সার্কিট হাউসে আমার না থাকার অনুরোধ করে। তারপরও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিবিধ সমস্যা মুকাবিলা করে মোটামুটি সফলভাবেই প্রোগ্রাম সম্পন্ন হল। ফালিল্লাহিল হাম্দ।                     

(চলবে)



আরও