দালান ধসের বিজ্ঞান
শরীফ আবু হায়াত তপু
আফতাবুয্যামান শরীফ 9571 বার পঠিত
অপসংস্কৃতির কৃষ্ণ-কালো ধূম্রকুঞ্জ যে হারে বাংলাদেশের আকাশ-বাতাসকে গ্রাস করে চলেছে তা এক কথায় বর্ণনাতীত। অপসংস্কৃতির অপ্রতিহত বিস্তারের সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবন থেকে অপসৃত হচ্ছে ধর্ম ও সমাজে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে লালিত মূল্যবোধভিত্তিক ধ্যান-ধারণা, নৈতিকতা, আদর্শ ইত্যাদি। আর সে শূন্যস্থান পূরণ করছে নিছক জৈবিক পরিতুষ্টির পাশবিক চিন্তাধারা। যার সুস্পষ্ট প্রভাব পড়ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে। ধর্মহীনতা, নৈতিকতাবিচ্ছিন্ন সংশয়বাদিতা, উন্নাসিকতার সুতীব্র প্লাবনে শিকড়বিহীন কচুরীপানার মত অস্থিরচিত্ত মানুষ ধাবিত হচ্ছে এক অনিশ্চিত অজানা গন্তব্যের পানে।
আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির দেউলিয়াত্ব যে কতটা নিম্নস্তরে অবস্থান করছে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ আমাদের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি। সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্মশিক্ষার পরিবর্তে নৈতিকতা শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর নৈতিকতার শিক্ষার উপকরণ হিসাবে সেখানে সংযোজিত হয় ললিতকলা তথা চিত্রাংকন, নৃত্য-গীত ইত্যাদি বিনোদনমাধ্যম। আমাদের জাতীয় পরিমন্ডলে সংস্কৃতি যে কতটা সংকীর্ণ ও অগৌণ পরিভাষা তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এটি। জাতির পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অন্তরবৃত্তির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অংশ তথা ধর্মকে উপেক্ষা করে শিক্ষানীতিতে এমনসব বিষয়কে মৌলিক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা কি-না কেবল একটি ধর্মহীন, আদর্শহীন, সভ্যতার ছোঁয়াবিহীন জাতির পক্ষেই কামনা করা সম্ভব। বড় আফসোস হয় যেখানে সংস্কৃতি কোন জাতির সভ্যতা-বিশ্বাসের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ তখন একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এতবড় আদর্শহীন, মূল্যবোধহীন শিক্ষানীতি কীভাবে জাতীয় স্বীকৃতি পায়? বলা বাহুল্য, শরীরে ক্যানসারের অনুপ্রবেশ করলে খুব বেশী দিন তা চামড়ার অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকে না। যে কোন সময় অকস্মাৎ আক্রমণে সে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ধরাশায়ী করে ফেলে তার চূড়ান্ত অধঃপতন সুনিশ্চিত করে। নৈতিক অবক্ষয়ও তেমনি একটি সুপ্ত অথচ অতি ধ্বংসাত্মক রোগ, যা মানুষের জীবনে মনুষ্যত্ব নামক শক্তিকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে তদস্থলে পাশবিক শক্তির ভয়ংকর উত্থান ঘটায়। অথচ আমাদের শিশু বয়সের সুকোমল শিক্ষাজীবন যার একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল মনুষ্যত্বের উত্থান সেখানে নৈতিকতার বিষয়টিই সবচেয়ে উপেক্ষিত?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, নাটক-সিনেমা, নৃত্য-গীত, কবিতা-উপন্যাসের প্রচার-প্রসার বাংলাভাষায় নতুন নয়। গত একশত বছরে এসব যে কতগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক পুরস্কারও কম জোটেনি। তারপরও জাতিকে কি প্রত্যাশিত আদর্শবান সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে? সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি সত্যিকার অর্থে নিবেদিতপ্রাণ, দায়িত্বশীল কতজন লোকের উদ্ভব ঘটেছে? যদি বলা হয় যে হয়েছে, তথাপি এটা সুনিশ্চিত যে তা প্রত্যাশিত মাত্রার দূরবর্তী কোন অবস্থানেও নেই। দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলো যেন আজ জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড। বিদ্যার্জনের সাথে সাথে সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজিও ছাত্রতেবর পরিচয় হতে পারে তা ইতিপূর্বে অকল্পনীয় হলেও আজ তা অতি বাস্তব। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না? পৃথিবীর কোটি কোটি বছরের ইতিহাসে সমাজ বিবর্তনের সূত্র ধরে সভ্যতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণের দাবীদার আজ আধুনিক বিশ্ব। অথচ তারপরও শিক্ষার মহোত্তম সেই দুয়ার আজ ধ্বংসের লীলাখেলায় কেন পরিণত হল? কী কারণে আজ ছাত্র-ছাত্রীর দ্বারা শিক্ষক, শিক্ষকের দ্বারা ছাত্র-ছাত্রী অবাধে অবলীলাক্রমে লাঞ্ছিত হচ্ছে? কেন আজ সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার আসনের অধিকারী শিক্ষক স্বীয় (সভ্য?) ছাত্রের হাতের কারুকার্যে বেদনাহত, সম্ভ্রমহীন? কেন অশ্লীলতা, বেলেল্লাপনার দৌরাত্ম্যে সমাজ আজ আপাদমস্তক বিপর্যস্ত? কেন দেশের প্রতিটি সেক্টর আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত? কেন শত-সহস্র মনীষার গৌরবধন্য বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক মতবাদ, জনগণের ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তার চাবিকাঠি গণতন্ত্র (?) আজ ভদ্রমানুষের আলখেল্লা গায়ে চড়ানো নীরব রক্তচোষার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, যার ছত্রছায়ায় সাধারণ জনমানুষ সর্বত্র নিপীড়িত, জর্জরিত, নিষ্পেষিত? দিনে দিনে পরিস্থিতি অবনতির অন্তহীন চোরাগলির দিকেই ধাবমান। সমাজে দুর্নীতিই এখন নীতি, অশ্লীলতাই এখন শ্লীলতা, অসভ্যতা-বর্বরতাই সভ্যতা হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে। আর ন্যায়বিচারের বাণী তো সমাজের সবচেয়ে নিচু তলার বাসিন্দা। সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, সংস্কৃতির যে শ্লোগান ক্ষণে ক্ষণে উচ্চারিত হচ্ছে সেমিনার-মিডিয়ায় সর্বত্র তা অর্থহীন ফাঁপা কিছু বুলি মাত্র। যার বাস্তবতা নেশা ধরানো রং-তামাশা, আনন্দ-উন্মাদনা উপভোগের মত অমৌল বিষয়কে ঘিরেই পরিবৃত্ত, রিপুচর্চাই যার মূখ্য উদ্দেশ্য। মৌলিক যে সংস্কৃতি মানবের মন ও মননের বিকাশ ঘটায়, চেতনারাজ্যকে রুচিবোধ, আত্মমর্যাদা, সৃজনশীলতার আলোকমালায় উদ্ভাসিত করে, সর্বোপরি মানুষকে মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠার প্রেরণায় উজ্জীবিত করে তা দেওয়ার ক্ষমতা প্রচলিত সাহিত্য ও ললিতকলার নেই। এতদসত্ত্বেও নর্দমার কীট-পতঙ্গ যেমন দুর্গন্ধময় আবর্জনার মিশ্রিত গরলে স্বাচ্ছন্দ্যে সাঁতার কাটে; তার মাঝেই আনন্দে অবগাহন করে তৃপ্তিলাভ করে, তেমনি তথাকথিত আধুনিক সংস্কৃতিসেবী নামধারীরা জাতিকে নেশাগ্রস্তের মত এমন এক সংস্কৃতির মাঝে হারিয়ে দিতে চায় যেখানে ভাল-মন্দের পার্থক্য করার প্রয়োজন হয় না; বরং স্বীয় প্রবৃত্তির স্বেচ্ছাচারিতাই পরিণত হয় কর্মের ভিত্তি। যার পরিণাম স্বাভাবিকভাবেই অজপাড়াগাঁয়ের পর্ণকুটির থেকে শুরু করে মেগাসিটির সুউচ্চ অট্টালিকা পর্যন্ত অন্যায়-অনাচার, অশ্লীলতার অপ্রতিরোধ্য প্লাবন। যার বিবরণ উল্লেখ করে পাঠকের শুচি-শুভ্র মননে বৈকল্য ঘটাতে চাই না। পুঁতিগন্ধময় আবর্জনা যেমন মশককুলের নিরাপদ অভয়ারণ্যে পরিণত হয়, তেমনি দেশের প্রতিটি স্তরে দুষ্ট-নোংরা, আদর্শহীন, চেতনাহীন লোকের অবাধ বিচরণ আর দুর্নীতিবাজ-দুষ্কৃতিকারীদের দৌরাত্ম্য, উল্লম্ফন গভীরভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর এ সবকিছু জেনে-বুঝেও চোখ বুজে মেনে নেয়ার জন্য সমাজ, রাষ্ট্র যেন আমাদের প্রতিনিয়ত তাগাদা দিচ্ছে, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে বাধ্য করছে। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি’১০-এর সকরুণ চিত্র আমাদেরকে যেন এই দীক্ষাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
জাতীয় সংস্কৃতির এমন চরম ক্রান্তিকালে যুবসমাজের সিংহভাগ যখন এক অনিশ্চিত গন্তব্যহীন মোহগ্রস্ত জীবনের পথ বেছে নিচ্ছে, এই বস্তাপচা সংস্কৃতির প্রধানতম শিকার হয়ে যখন তারা নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন এই যুবসমাজেরই ধর্মীয় বিচারবুদ্ধি দ্বারা তাড়িত অপর একটি অংশ- যারা শত বাধা মুকাবিলা করে সামাজিক দায়বদ্ধতার শিক্ষাকে নিজেদের মাঝে সুচারুরূপে বপন করতে সক্ষম হয়েছে, তাদের এগিয়ে আসতে হবে ত্রাতার ভূমিকায়। আসমান-যমীনের সৃষ্টিরাজির মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাববুল আলামীন মনোনীত একমাত্র ধর্ম ইসলামের সুমহান বৈপ্লবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতিকে দেখাতে হবে চিরন্তন সত্য ও সুন্দরের বাহক এক সংস্কৃতির সত্যালোক শোভিত রাজপথ। যে সংস্কৃতির তীব্র আলোকচ্ছটায় বিশ্বজাহান আলোকিত হয়ে উঠেছিল মাত্র কয়েক বছরে। যে সংস্কৃতি শেখানোর জন্য কোন রূপকথার গল্প-উপন্যাস, নাটক-সিনেমার প্রয়োজন হয়নি, প্রয়োজন হয়নি তথাকথিত কোন মননবিদ্যার, ললিতকলার। মহান প্রভুর বিস্তৃীর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাজ্যের এক-একজন খলীফা হিসাবে তাদের মাঝে যে সুস্থ চেতনা, রুচিবোধ, আত্মমর্যাদা, ভ্রাতৃত্ববোধের উন্মেষ ঘটেছিল তা ছিল খুবই বাস্তবতাপূর্ণ ও প্রায়োগিক। ভাবের রাজ্যে বিচরণ করে অর্থহীন দিবাস্বপ্ন দেখার কোন জায়গা সেখানে ছিল না। ছিল না কোন বিলাস বাগাড়ম্বর বা নিরর্থক প্রগলভতা। যা ঘটেছিল তা ছিল অতি সরল, স্বাভাবিক ও জটিলতামুক্ত। সত্য, কল্যাণ ও ন্যায়ের চর্চা এবং তার স্বতঃস্ফূর্ত বাস্তবায়নই ছিল সে সংস্কৃতির একমাত্র লক্ষ্য। ফলে সেই মহান সংস্কৃতির ছায়াতলে বেড়ে উঠেছিলেন এমনসব মহৎ পুরুষ যারা আজও পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে চিরস্মরণীয়-বরণীয় হয়ে রয়েছেন। যে সমাজ, যে রাষ্ট্র এ সংস্কৃতির ছায়াতলে প্রতিপালিত হয়ে তাবৎ বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছিল তা আজও পর্যন্ত বিশ্ববাসীর জন্য মডেল হয়ে রয়েছে।
তবে হ্যাঁ, দেশ ও সমাজের পরিস্থিতি দেখে হতাশ হলে চলবে না। সমাজের আলোকোজ্জীবিত উৎকৃষ্ট একটি অংশ এই চরম মুহূর্তে যদি কেবল হতাশা, বেদনা প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হয় তবে সমাজকে পথের দিশা দেখানোর জন্য কে এগিয়ে আসবে? কে তাদেরকে বোঝাবে অনন্ত জীবনের প্রস্ত্ততি গ্রহণের তাৎপর্য? অতএব এগিয়ে আসতেই হবে আলোকের আবাহনে, মুক্তির বার্তা নিয়ে দৃপ্ত শপথে। বস্ত্তবাদী সংস্কৃতির অসারতা, অর্থহীনতাকে মানুষের সামনে সুস্পষ্ট করতে হবে। ইসলামী সংস্কৃতির অর্থপূর্ণ, উদার আলোকময় জগৎকে তাদের চিন্তা-মননের গভীরতম প্রদেশে গেঁথে দিতে হবে। এভাবেই ব্যক্তি থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিশুদ্ধি আসবে। যুথবদ্ধ সামষ্টিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাজে সামগ্রিক পরিবর্তন একদিন আসবেই আসবে। অতএব হে মুসলিম তরুণ প্রজন্ম! নিজেকে অহি-র জ্ঞানালোকে সুশোভিত করো, সে শোভা দিয়ে তোমার পরিপার্শ্বকে সত্য, কল্যাণ ও ন্যায়ের সৌরভ দিয়ে নতুনভাবে ঢেলে সাজাও। নিশ্চিতভাবে জেনে রেখ! তোমার ফোটানো এই ফুল কখনই বৃথা যাবে না। যদিওবা এ ফুলের সৌরভে মেতে না উঠে দুনিয়ার শত-সহস্র প্রাণ, তবু জেনে রেখ পরকালীন যিন্দেগীর নিরুপায় মুহূর্তে এ সৌরভস্নিগ্ধ ফুলই হবে তোমার চক্ষুশীতলকারী মহাসম্পদ; যার তুলনা, যার বিনিময় ইহজীবনের সমস্ত মূল্যেরও অতীত। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন!!
এমন পাপ যা জান্নাতের পথ দেখায়
ইবনুল কাইয়িম আল-জাওযিয়্যাহ বলেন, পাপ কখনও মানুষের জন্য কল্যাণকর বিবেচিত হতে পারে আল্লাহর ইবাদতে ব্যস্ত থাকার চেয়ে, যদি সে পাপ তাকে তওবা করার পথ খুলে দেয়। একজন বিদ্বানের কথায় সেটি আরো স্পষ্ট হয়। তিনি বলেন, ‘কোন কোন মানুষ আছে যারা পাপকাজ করে অথচ তা তাকে জান্নাতে প্রবেশের উপলক্ষ তৈরী করে দেয়। আবার কোন কোন মানুষ সৎআমল করে অথচ তা তার জন্য জাহান্নামে প্রবেশের উপলক্ষ হয়ে যায়।’ এটা এভাবে যে, সে ব্যক্তিটি পাপ করার কারণে সবসময় চিন্তামগ্ন হয়ে থাকে। চলায়-ফেরায়, উঠায়-বসায় সে সবসময় পাপটি স্মরণ করতে থাকে। ফলে সে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়। সে আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা চায় এবং অনুশোচনা করে। ফলে সেটি তার জন্য মুক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অপর দিকে কোন ব্যক্তি কোন উত্তম কাজ সম্পন্ন করার পর তা স্মরণ করতে থাকে, চলায়-ফেরায়, শুয়ে-বসে ঐ সুখস্মৃতিই সে চারণ করতে থাকে যা তার মধ্যে আত্মগর্ব ও অহংকারের সৃষ্টি করে এবং শেষপর্যন্ত তাকে ধ্বংসপ্রাপ্তদের দলভুক্ত করে ফেলে।
সুতরাং পাপ কখনও এমন উপলক্ষও হতে পারে যা ব্যক্তিকে আল্লাহর ইবাদতে পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ করা এবং সৎআমল করার পথ খুলে দেয়; তার আচরণে এমন পরিবর্তন এনে দিতে পারে যার ফলে সে আল্লাহকে ভয় করতে শুরু করে এবং তাঁর সম্মুখে স্বীয় অপকর্মে লজ্জিত ও অবনত হয়। লজ্জায়, অনুশোচনায় মাথা হেট করে সে ক্রন্দনসিক্ত হয়ে পড়ে এবং আল্লাহর কাছে বারবার ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। পাপের পর এ সকল প্রতিক্রিয়ার ফলাফল একজন ব্যক্তির মাঝে অনেক উত্তম প্রভাব ফেলে ঐ ইবাদতগুজার ব্যক্তির চেয়ে, যার ইবাদত তাকে অহংকারে স্ফীত করে এবং সেকারণে সে অন্যদেরকে খাটো নজরে দেখতে থাকে। আর সে মনে করে যেন সে আল্লাহকে সহযোগিতা করছে। এমনকি সে এমন কিছু বলে ফেলে যাতে মনে হয় যেন আল্লাহ তার হৃদয়ের খবর রাখেন না। এসব লোক কখনো মানুষের প্রতি রূঢ় আচরণ করে থাকে অথবা সামনাসামনি তাদেরকে অপমানিত করে দেয় যখন সে তাদের কাছ থেকে উপযুক্ত মর্যাদা পায় না। সে যদি যথার্থভাবে নিজের প্রতি নজর দিত তাহলে সে নিজের এই অবস্থান পরিস্কারভাবে উপলব্ধি করত (মাদরিজুস সালেকীন ১/২৯৯)।